অ
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
(১টি উৎস উদ্ধার করা হল ও ০টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল।) #IABot (v2.0) |
|||
'''ভাষাবিজ্ঞান''' বলতে একটি সংশ্রয় (system) হিসেবে [[ভাষা|ভাষার]] প্রকৃতি, গঠন, ঔপাদানিক একক ও এর যেকোনো ধরনের পরিবর্তন নিয়ে [[বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি|বৈজ্ঞানিক]] গবেষণাকে বোঝায়। <ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=On Language and Linguistics|প্রথমাংশ=Michael A.K.|শেষাংশ=Halliday|লেখক-সংযোগ=Michael Halliday] Noam Chomsky] |লেখক২=Jonathan Webster|প্রকাশক=Continuum International Publishing Group|বছর=2006|আইএসবিএন=0-8264-8824-2|পাতা=vii}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=Elements of General Linguistics|শেষাংশ=Martinet|প্রথমাংশ=André|লেখক-সংযোগ=André Martinet|অন্যান্য=Tr. Elisabeth Palmer Rubbert (Studies in General Linguistics, vol. i.)|অবস্থান=London|প্রকাশক=Faber|বছর=1960|পাতা=15}}</ref> যারা এ বিষয়ে গবেষণা করেন তাদেরকে [[ভাষাবিজ্ঞানী তালিকা|ভাষাবিজ্ঞানী]] বলা হয়।
ভাষাবিজ্ঞানীরা নৈর্ব্যক্তিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষাকে বিশ্লেষণ ও বর্ণনা করেন; ভাষার সঠিক ব্যবহারের কঠোর বিধিবিধান প্রণয়ন তাদের উদ্দেশ্য নয়।
ভাষাসমূহের বৈজ্ঞানিক বিবরণ ছাড়াও এগুলির উৎপত্তি কীভাবে হয়, শিশুরা কীভাবে ভাষা অর্জন করে এবং প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা কীভাবে মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য নতুন [[ভাষা]] শেখে, সেগুলিও ভাষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। আবার ভাষাসমূহের নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক এবং সময়ের সাথে সাথে এগুলির পরিবর্তন নিয়েও এই শাস্ত্রে অধ্যয়ন করা হয়। কোনও কোনও [[ভাষাবিজ্ঞানী]] ভাষাকে একটি মানসিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করেন এবং ভাষা উৎপাদন ও উপলব্ধি করার যে বিশ্বজনীন মানবিক ক্ষমতা,সেটির একটি তত্ত্ব দাঁড় করাতে চেষ্টা করেন। আবার অন্যান্য কিছু ভাষাবিজ্ঞানী সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ভাষাকে দেখেন এবং মানুষের কথা বলার ভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করে বোঝার চেষ্টা করেন মানুষ কীভাবে পরিবেশ ভেদে কর্মস্থলে, বন্ধুদের সাথে বা পরিবারের সদস্যদের সাথে যথাযথভাবে একই ভাষার বিভিন্ন রূপ প্রয়োগ করে। আবার কিছু ভাষাবিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন ভাষার [[মানুষ]] একসাথে হলে কী ঘটে, তা নিয়ে [[গবেষণা]] করেন। এছাড়া [[ভাষা শিক্ষণ]] ও শিখনের ব্যাপারেও তারা তত্ত্ব দিতে পারেন।
== ভাষাবিজ্ঞানের উৎস ==
পাশ্চাত্যে [[খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী|খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর]] [[গ্রিক]] দার্শনিকেরা প্রথম ভাষার তত্ত্বের ব্যাপারে আগ্রহী হন। ভাষার উৎস ও গ্রিক ভাষার ব্যাকরণগত কাঠামো ছিল তাদের মূল বিতর্কের বিষয়। [[প্লাতো]] ও [[আরিস্তোত্ল্]] ভাষার অধ্যয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ধারণা করা হয় প্লাতো-ই প্রথম বিশেষ্য ও ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য করেন। [[খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দী|খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে]] [[দিয়োনিসিয়ুস থ্রাক্স]] প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রিক ব্যাকরণ রচনা করেন। এই প্রভাবশালী ব্যাকরণটিকে পরবর্তীতে রোমীয় বা লাতিন ব্যাকরণবিদেরা মডেল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং অনুরূপে
পাশ্চাত্যের বাইরে ভারতীয় উপমহাদেশে ভাষাবিষয়ক গবেষণার একটি স্বতন্ত্র ধারা অতি প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান ছিল। সংস্কৃত ব্যাকরণবিদেরা উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যে পার্থক্য করেন, এবং গ্রিক ব্যাকরণবিদদের মত বিশেষ্য ও ক্রিয়াপদ ছাড়াও অনুসর্গ ও অব্যয় নামের দুটি পদ আবিষ্কার করেন। ভারতীয় ব্যাকরণবিদদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন [[পাণিনি]] (খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী)। তবে
== ১৯শ শতক ও তুলনামূলক ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান ==
অনেকেই [[১৭৮৬]] সালকে ভাষাবিজ্ঞানের জন্মবছর হিসেবে গণ্য করেন। ঐ বছরের [[২৭শে সেপ্টেম্বর]] তারিখে ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ [[উইলিয়াম জোন্স (ভাষাতাত্ত্বিক)|স্যার উইলিয়াম জোন্স]] কলকাতার [[রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটি|রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির]] এক সভায় একটি গবেষণাপত্র পাঠ করেন, যাতে তিনি উল্লেখ করেন যে [[সংস্কৃত]], গ্রিক, [[লাতিন]], [[কেল্টীয়]] ও [[জার্মানীয় ভাষা|জার্মানীয়]] ভাষাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রকমের গাঠনিক সাদৃশ্য রয়েছে এবং প্রস্তাব করেন যে এগুলো সবই একই ভাষা থেকে উদ্ভূত। জোন্সের এই আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে সমগ্র ১৯শ শতক জুড়ে ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানীরা তুলনামূলক কালানুক্রমিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বিভিন্ন ভাষার ব্যাকরণ, শব্দভাণ্ডার ও ধ্বনিসম্ভারের মধ্যে তুলনা করার চেষ্টা করেন এবং ফলশ্রুতিতে আবিষ্কার করেন যে প্রকৃতপক্ষেই লাতিন, গ্রিক ও সংস্কৃত ভাষাগুলো পরস্পর সম্পর্কিত, ইউরোপের বেশির ভাগ ভাষার মধ্যে বংশগত সম্পর্ক বিদ্যমান এবং এগুলো সবই একটি আদি ভাষা [[প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা]] থেকে উদ্ভূত। [[রাস্মুস রাস্ক]], [[ফ্রান্ৎস বপ]], [[ইয়াকপ গ্রিম]], প্রমুখ ইউরোপীয় ভাষাবিজ্ঞানী
একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাষাবিজ্ঞানের আরেকটি ধারা স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছিল। মার্কিন নৃতাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানীরা আমেরিকান ইন্ডিয়ান ভাষাসমূহের ওপর কাজ করতে শুরু করেন। এগুলোর অধিকাংশই ছিল বিলুপ্তির পথে, এবং এগুলোর কোন লিখিত দলিলও ছিল না। ফলে ঐতিহাসিক রচনাসমূহের তুলনা করে নয়, মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানীরা মাঠে গিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করে ভাষা বিশ্লেষণ করতেন।
== ২০শ শতক, সোস্যুর, এককালিক ভাষাবিজ্ঞান ও সংগঠনবাদ ==
[[চিত্র:Ferdinand de Saussure.jpg|thumb|130px|right|সুইস ভাষাবিজ্ঞানী [[ফের্দিনঁ দ্য সোস্যুর]]-কে সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানের রূপকার হিসেবে গণ্য করা হয়।]]
১৯শ শতকের শেষে [[সুইজারল্যান্ড|সুইস]] ভাষাবিজ্ঞানী [[ফের্দিনঁ দ্য সোস্যুর]] ভাষা গবেষণার গতিধারায় পরিবর্তন আনেন। সোস্যুর-ই প্রথম এককালিক ও কালানুক্রমিক ভাষাবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য করেন। ফলে ভাষাবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাষার তুলনামূলক ঐতিহাসিক বিচারের পরিবর্তে যেকোন একটি ভাষার একটি নির্দিষ্ট কালের বিবরণের ব্যাপারে দৃষ্টিনিক্ষেপ করেন। সোস্যুর আরও প্রস্তাব করেন যে, ভাষা (''langue'', ''লংগ্'') ও উক্তি (''parole'', ''পারোল'') দুটি ভিন্ন সত্তা।
== চম্স্কি ও আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান ==
[[চিত্র:Cgisf-tgg.png|thumb|left|250px|চম্স্কীয় পদ্ধতিতে বৃক্ষচিত্রের মাধ্যমে একটি অর্থহীন বাক্যের গঠন বর্ণনা]]
[[১৯৫০]]-এর দশকেই কিছু কিছু ভাষাবিজ্ঞানী সংগঠনবাদের দুর্বলতা আবিষ্কার করেন।
[[File:Noam Chomsky (1977).jpg|thumb||130px|right|[[নোম চম্স্কি]] (১৯৭৭)]]
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান মূলত চম্স্কি প্রস্তাবিত রূপান্তরমূলক ব্যাকরণের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তাবিত বিভিন্ন ধরনের ব্যাকরণিক কাঠামোর গবেষণা। চম্স্কি [[বাক্যতত্ত্ব|বাক্যতত্ত্বকে]] ভাষাবিজ্ঞানের মূল ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ৫০ ও ৬০-এর দশকের প্রাথমিক প্রকাশের পর চম্স্কির নিজস্ব তত্ত্বের বিবর্তন ঘটেছে বেশ কয়েকবার: "মান তত্ত্ব" থেকে শুরু করে "সম্প্রসারিত মান তত্ত্ব", "শাসন ও বন্ধন তত্ত্ব", "নীতি ও পরামিতি", এবং সর্বশেষ "ন্যূনতমবাদী প্রকল্প"। এছাড়া চম্স্কীয় তত্ত্বের অনুসরণে কিছু তত্ত্ব গড়ে উঠেছে, যেগুলি ভাষাবিজ্ঞানের লক্ষ্য-সংক্রান্ত চম্স্কীয় মতবাদ ও স্বতঃসিদ্ধগুলো অনেকাংশেই মেনে নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। এদের মধ্যে "কারক ব্যাকরণ", "সাধারণীকৃত পদ সংগঠন ব্যাকরণ", "সৃষ্টিশীল অর্থবিজ্ঞান", "মস্তক-চালিত পদ সংগঠন ব্যাকরণ", "আভিধানিক কার্যমূলক ব্যাকরণ", "সম্পর্কমূলক ব্যাকরণ" ও "সর্বোচ্চ সন্তুষ্টিবিধান তত্ত্ব" অন্যতম। চম্স্কীয় মূলধারার বাইরে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে শ্রেণীকরণবাদী একটি ধারা আছে, যে ধারার অনুসারী ভাষাবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাষাকে তাদের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে শ্রেণীকরণ করার চেষ্টা করেন।
|