গণেশ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
|||
৩৪ নং লাইন:
* Pal, p. x.</ref>
গণেশ
প্রাক-বৈদিক ও [[বেদ|বৈদিক]] যুগের দেবতাদের মধ্যে গণেশের গুণাবলি বিদ্যমান ছিল। কিন্তু সেই গুণাবলি গণেশের উপর আরোপ করে পৃথক দেবতা রূপে
==নাম-ব্যুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম==
৪৮ নং লাইন:
* {{Harvnb|Śāstri|1978}} for text of ''{{IAST|Amarakośa}}'' versified as 1.1.38.</ref> ‘গণেশ’ নামের আটটি সমার্থক শব্দ পাওয়া যায়। এগুলি হল: ‘বিনায়ক’, ‘বিঘ্নরাজ’ (যা ‘বিঘ্নেশ’ নামেরও সমার্থক), ‘দ্বৈমাতুর’ (যাঁর দুইজন মাতা),<ref>Y. Krishan, ''{{IAST|Gaṇeśa}}: Unravelling an Enigma'', 1999, p. 6): "Pārvati who created an image of {{IAST|Gaṇeśa}} out of her bodily impurities but which became endowed with life after immersion in the sacred waters of the Gangā. Therefore he is said to have two mothers—Pārvati and Gangā and hence called dvaimātura and also Gāngeya."</ref> ‘গণাধিপ’ (যা ‘গণপতি’ ও ‘গণেশ’ নামেরও সমার্থক), ‘একদন্ত’ (যাঁর একটি দাঁত, এখানে গণেশের হস্তীমুণ্ডের বাইরের দাঁতের কথা বলা হয়েছে), ‘[[হেরম্ব]]’, ‘লম্বোদর’ (যাঁর স্ফীত উদর) ও ‘গজানন’ (যাঁর হাতির মতো মাথা)।<ref>Krishan p.6</ref>
‘বিনায়ক’ ({{lang|sa|विनायक}}; ''{{IAST|vināyaka}}'') নামটি গণেশের একটি বহুল-পরিচিত নাম। এই নামটি [[পুরাণ]] ও বৌদ্ধ তন্ত্রগুলিতে বহু বার উল্লিখিত হয়েছে।<ref name="Thapan">Thapan, p. 20.</ref> [[মহারাষ্ট্র|মহারাষ্ট্রের]] আটটি বিখ্যাত গণেশ মন্দিরের নামকরণের ক্ষেত্রেও এই নামটির প্রতিফলন লক্ষিত হয়। এই আটটি মন্দিরকে ‘[[অষ্টবিনায়ক]]’ ({{lang-mr|अष्टविनायक}}, {{IAST|aṣṭavināyaka}}) মন্দির বলা হয়।<ref>For the history of the ''{{IAST|aṣṭavināyaka}}'' sites and a description of pilgrimage practices related to them, see: Mate, pp. 1–25.</ref> ‘বিঘ্নেশ’ ({{lang|sa|विघ्नेश}}; ''{{IAST|vighneśa}}'') ও ‘বিঘ্নেশ্বর’ ({{lang|sa|विघ्नेश्वर}}; ''{{IAST|vighneśvara}}'') (বিঘ্নের ঈশ্বর)<ref name="Vighnesha">These ideas are so common that Courtright uses them in the title of his book, ''Ganesha: Lord of Obstacles, Lord of Beginnings''. For the name ''Vighnesha'', see: {{Harvnb|Courtright|1985|pp= 156, 213}}</ref> নাম দুটি থেকে বোঝা যায় যে, হিন্দুধর্মে
[[তামিল ভাষা|তামিল ভাষায়]] গণেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল ‘পিল্লাই’ ({{lang-ta|பிள்ளை}}) বা ‘পিল্লাইয়ার’ ({{lang|ta|பிள்ளையார்}})।<ref>Martin-Dubost, p. 367.</ref> এ. কে. নারায়ণের মতে, ‘পিল্লাই’ শব্দের অর্থ ‘শিশু’ এবং ‘পিল্লাইয়ার’ শব্দের অর্থ ‘মহান শিশু’। তিনি আরও বলেছেন যে, [[দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠী|দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠীতে]] ‘পাল্লু’, ‘পেল্লা’ ও ‘পেল্ল’ শব্দগুলির মাধ্যমে ‘দাঁত বা হাতির দাঁত’ বোঝায়।<ref>Narain, A. K. "{{IAST|Gaṇeśa}}: The Idea and the Icon". Brown, p. 25.</ref> অনিতা রাইনা থাপান বলেছেন যে, ‘পিল্লাইয়ার’ নামটির মূল ‘পিল্লে’ শব্দটির আদি অর্থ সম্ভবত ‘হস্তীশাবক’। কারণ, [[পালি ভাষা|পালি ভাষায়]] ‘পিল্লাকা’ শব্দের অর্থ তাই।<ref>Thapan, p. 62.</ref>
[[বর্মী ভাষা|বর্মি ভাষায়]] গণেশ ‘মহা পেইন্নে’ ({{my|မဟာပိန္နဲ}}, {{IPA-my|məhà pèiɴné|pron}}) নামে পরিচিত। এই নামটির উৎস [[পালি]] ‘মহা বিনায়ক’ ({{my|မဟာဝိနာယက}}) নামটি।<ref>{{Citation |title=Myanmar-English Dictionary |year=1993 |publisher=Dunwoody Press |location=Yangon |isbn=1-881265-47-1 |url=http://sealang.net/burmese/dictionary.htm |accessdate=2010-09-20}}</ref> [[থাইল্যান্ড|থাইল্যান্ডে]] গণেশের জনপ্রিয় নামটি হল ‘ফ্রা ফিকানেত’।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|লেখক=Justin Thomas McDaniel|শিরোনাম=The Lovelorn Ghost and the Magical Monk: Practicing Buddhism in Modern Thailand|ইউআরএল=http://books.google.com/books?id=tMWrAgAAQBAJ |বছর=2013 | প্রকাশক=Columbia University Press |আইএসবিএন=978-0231153775|পাতাসমূহ=156–157}}</ref> অধুনা [[ইন্দোনেশিয়া]],<ref>Robert L. Brown (1987), [http://www.jstor.org/stable/3351212 A Note on the Recently Discovered Gaṇeśa Image from Palembang, Sumatra], Indonesia, No. 43, Issue April, pages 95-100</ref> থাইল্যান্ড, [[কম্বোডিয়া]] ও [[ভিয়েতনাম]] ভূখণ্ডে প্রাচীনতম যে সব মূর্তি ও উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে, তা খ্রিস্টীয় ৭ম ও ৮ম শতাব্দীর সমসাময়িক।{{Sfn|Brown|1991|pp=176, 182, Note: some scholars suggest adoption of Ganesha by late 6th-century CE, see page 192 footnote 7}} এগুলিতে ভারতের ৫ম শতাব্দী বা তার পূর্ববর্তী গণেশ মূর্তি ও
[[শ্রীলঙ্কা|শ্রীলঙ্কার]] সিংহল বৌদ্ধ অঞ্চলগুলিতে গণেশ ‘গণ দেবিয়ো’ নামে পরিচিত। সেখানে [[গৌতম বুদ্ধ|বুদ্ধ]], [[বিষ্ণু]], [[কার্তিকেয়|স্কন্দ]] ও অন্যান্য দেবতার সঙ্গে গণেশের পূজাও প্রচলিত আছে।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|লেখক=John Clifford Holt |শিরোনাম=Buddha in the Crown : Avalokitesvara in the Buddhist Traditions of Sri Lanka: Avalokitesvara in the Buddhist Traditions of Sri Lanka |ইউআরএল=http://books.google.com/books?id=aT3AMR8g1gEC|বছর=1991|প্রকাশক=Oxford University Press |আইএসবিএন=978-0195362466|পাতাসমূহ=6, 100, 180–181}}</ref>
৬০ নং লাইন:
* Martin-Dubost, for a comprehensive review of iconography abundantly illustrated with pictures.
* Chapter X, "Development of the Iconography of {{IAST|Gaņeśa}}", in: {{Harvnb|Krishan|1999|pp=87–100}}, for a survey of iconography with emphasis on developmental themes, well-illustrated with plates.
* Pal, for a richly illustrated collection of studies on specific aspects of Ganesha with a focus on art and iconography.</ref> দণ্ডায়মান, নৃত্যরত, দৈত্যনাশে উদ্যত, শিশুরূপে পরিবারের সঙ্গে ক্রীড়ারত, মাটিতে বা সিংহাসনে উপবিষ্ট অবস্থায় অথবা বিভিন্ন ধরনের আধুনিক অবস্থানে
খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে [[ভারত|ভারতের]] বিভিন্ন অঞ্চলে গণেশের মূর্তি নির্মাণ প্রাধান্য লাভ করেছিল।<ref>Brown, p. 175.</ref> [[গাণপত্য ধর্ম|গাণপত্য]] সম্প্রদায়ে একজন স্বাধীন দেবতা রূপে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর খ্রিস্টীয় ৯০০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে যে সব গণেশ মূর্তি নির্মিত হয়েছিল, সেগুলি ছিল ১৩শ শতাব্দীতে নির্মিত গণেশ ভাস্কর্যের আদর্শস্থানীয়। গণেশের কয়েকটি সাধারণ ভাস্কর্য বৈশিষ্ট্য এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। পল মার্টিন-ডাবোস্ট খ্রিস্টীয় ৯৭৩ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ের একটি প্রায় অনুরূপ মূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন।<ref>Martin-Dubost, p. 213. In the upper right corner, the statue is dated as (973–1200).</ref> প্রতাপাদিত্য পালও খ্রিস্টীয় ১২শ শতাব্দীর আর একটি অনুরূপ মূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন।<ref>Pal, p. vi. The picture on this page depicts a stone statue in the [[Los Angeles County Museum of Art|Los Angeles County Museum]] of Art that is dated as c. 12th century. Pal shows an example of this form dated c. 13th century on p. viii.</ref> গণেশের মাথাটি হাতির এবং
For the human-headed form of Ganesha in:
* [[Cambodia]], see Brown, p. 10
৭১ নং লাইন:
* Martin-Dubost, pp. 197–198.
* photograph 9, "Ganesh images being taken for immersion", in: Pal, pp. 22–23. For an example of a large image of this type being carried in a festival procession.
* Pal, p. 25, For two similar statues about to be immersed.</ref> গণেশের নৃত্যরত মূর্তিটিও বেশ জনপ্রিয়। এই মূর্তিতেও
<ref>
* Pal, pp. 41–64. For many examples of Ganesha dancing.
৮১ নং লাইন:
‘গণপতি’র প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীনতম হিন্দু ধর্মগ্রন্থ [[ঋগ্বেদ|ঋগ্বেদে]]। দুটি ঋক মন্ত্রে ‘গণানাম গণপতিম হবামহে...’ <ref>ঋগ্বেদ, ২।২৩।১</ref> ও ‘বিষু সীদা গণপতে...’<ref>ঋগ্বেদ, ১০।১১২।৯</ref> বাক্যবন্ধগুলি বৈদিক গণপতির একটি ধারণা দেয়। যদিও এই গণপতি ও বর্তমান কালে পূজ্য পৌরাণিক গণপতি এক নয়। তবে একথা অনেকেই স্বীকার করেন বেদোত্তর যুগে ঋগ্বেদের ‘গণপতি-ব্রহ্মণস্পতি’ থেকেই পৌরাণিক ‘গজবদন-গণেশ-বিঘ্নেশ্বর’-এর ধারণাটি বিবর্তিত হয়েছে।<ref>Hindu Gods and Goddesses, Swami Harshananda, Sri Ramakrishna Math, Chennai, 1981, p.125</ref>
ঋগ্বৈদিক গণপতির অপর নাম ছিল 'বৃহস্পতি' বা 'বাচস্পতি'। তিনি জ্যোতির্ময় দেবতা।
অন্যমতে, ভারতের আদিম অধিবাসীদের পূজিত হস্তিদেবতা ও লম্বোদর যক্ষের মিশ্রণে গণেশ কল্পনার উদ্ভব। অথবা এমনও হতে পারে গণেশ সম্পূর্ণ অনার্য দেবতা, পরে যাঁর আর্যীকরণ ঘটে। গণেশের বাহন ইঁদুর এই আদিম কোনও সংস্কারের প্রতীক। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম থেকে ষষ্ঠ শতকের মধ্যবর্তী কোনও সময়ের লেখা [[বৌধায়ন ধর্মসূত্র|বৌধায়ণ ধর্মসূত্রে]] গণেশের উল্লেখ নেই। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে [[কালিদাস]], খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে [[ভারবি]], খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে [[পঞ্চতন্ত্র]] বা [[ভরত নাট্যশাস্ত্র]]ও গণেশের সাক্ষ্য দেয় না। গুপ্ত যুগের শেষভাগে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক থেকেই এঁর একক পূজা প্রচলিত হয়।
'মানবগৃহ্যসূত্র' ও 'যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি'-তে শাল, কটঙ্কট, উষ্মিত, কুষ্মাণ্ড রাজপুত্র ও দেবযজন ইত্যাদিকেও বিনায়ক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহাভারতে এঁরাই বিনায়ক। এঁদের কাজ বিঘ্ন উৎপাদন করা। এই সব বিনায়ক মিলে পরে বিঘ্নরাজ গণপতির রূপ নেয়। যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি অনুসারে একজন বিনায়ক [[দুর্গা|অম্বিকার]] পুত্র। এখানেই গণেশকে প্রথমবার দুর্গার সন্তান বলে উল্লেখ করা হয়। বহু পুরাণে
'যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা'-য় বিনায়ক ও গণপতির পূজার বিবরণ পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে রচিত ললিত মাধব-এও গণেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। <ref>পৌরাণিকা (বিশ্বকোষ হিন্দুধর্ম), প্রথম খণ্ড, ফার্মা কেএলএম প্রাইভেট লিমিটেড, [[কলকাতা]], [[২০০১]] দ্রঃ</ref>
== পৌরাণিক উপাখ্যান ==
গণেশ পৌরাণিক [[হিন্দু ধর্ম|হিন্দুধর্মে]] সর্বাগ্রে পূজ্য ও সেই কারণে অন্যতম প্রধান দেবতা। স্বাভাবিক কারণেই
[[চিত্র:Ganesh Janani.jpg|thumb|left|300px|অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর অঙ্কিত 'গণেশ-জননী']]
=== জন্মকথা ===
* '''শিবপুরাণ''' – ''শিবপুরাণ''-এ উল্লিখিত উপাখ্যান অনুসারে, [[পার্বতী]] একদিন [[নন্দী|নন্দীকে]] দ্বারী নিযুক্ত করে স্নান করতে যান। এমন সময় শিব সেখানে উপস্থিত হলে, তিনি নন্দীকে তিরষ্কার করে পার্বতীর স্নানাগারে প্রবেশ করেন। এতে পার্বতী অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হন। অবশেষে সখী জয়া ও বিজয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি জল থেকে পাঁক তুলে একটি সুন্দর পুত্রের মূর্তি নির্মাণ করেন ও সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে নিজের বিশ্বস্ত অনুচর নিয়োগ করেন। এরপর একদিন এই কুমারকে দ্বারী নিয়োগ করে পার্বতী স্নানে গমন করলে শিব তথায় উপস্থিত হন। কুমার শিবকে যেতে বাধা দেন। এতে প্রথমে প্রমথগণের সঙ্গে তার বিবাদ ও পরে পার্বতীর ইঙ্গিতে যুদ্ধ হয়। প্রমথগণ, শিব ও সকল দেবতা এই যুদ্ধে পরাজিত হন। তখন [[নারদ|নারদের]] পরামর্শে [[বিষ্ণু]] কুমারকে মোহাচ্ছন্ন করেন ও শিব শূলের দ্বারা
* '''স্কন্দপুরাণ''' – ''স্কন্দপুরাণ''-এ গণেশের জন্ম বিষয়ে একাধিক উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। এই পুরাণের গণেশ খণ্ডে আছে, সিন্দূর নামে এক দৈত্য পার্বতীর গর্ভে প্রবেশ করে গণেশের মস্তক ছিন্ন করে। কিন্তু এতে শিশুটির মৃত্যু ঘটে না, বরং সে মুণ্ডহীন অবস্থাতেই ভূমিষ্ট হয়। জন্মের পরে, নারদ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গণেশ
* '''বৃহদ্ধর্মপুরাণ''' – ''বৃহদ্ধর্মপুরাণ'' মতে, পার্বতী পুত্রলাভে ইচ্ছুক হলে শিব অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। অগত্যা পার্বতীর পীড়াপীড়িতে শিব পার্বতীর বস্ত্র টেনে সেটিকেই পুত্রজ্ঞানে চুম্বন করতে বলেন। <ref>বৃহদ্ধর্মপুরাণ, ৩০।২৪</ref> পার্বতী সেই বস্ত্রকে পুত্রের আকার দিয়ে কোলে নিতেই সেটি জীবিত হয়ে ওঠে। তখন শিব পুত্রকে কোলে নিয়ে বলেন, এই পুত্র স্বল্পায়ু। উত্তরদিকে মাথা করে শায়িত এই শিশুর মস্তকও তৎক্ষণাৎ ছিন্ন হয়ে যায়। পার্বতী শোকাকুল হন। এমন সময় দৈববাণী হয় যে উত্তরদিকে মাথা করে শুয়ে আছে এমন কারোর মাথা এনে জুড়ে দিলে তবেই এই পুত্র বাঁচবে। পার্বতী তখন নন্দীকে মস্তকের সন্ধানে পাঠান। নন্দী ইন্দ্রের বাহন ঐরাবতের মাথা কেটে আনেন। দেবতারা বাধা দিয়েও ব্যর্থ হন। এই মাথাটি জুড়ে শিব পুত্রকে জীবিত করেন। শিবের বরে, ইন্দ্র ঐরাবতকে সমুদ্রে ফেলে দিলে সে আবার মস্তক প্রাপ্ত হয়।
[[চিত্র:Ganesha Kangra miniature 18th century Dubost p51.jpg|thumb|right|300px|শিব ও পার্বতী গণেশকে স্নান করাচ্ছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর কাংড়া চিত্রকলা]]
* '''ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ''' – ''ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ'' মতে, শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী [[কৃষ্ণ]]কে দেখে মুগ্ধ হয়ে পার্বতী অনুরূপ একটি পুত্রকামনা করেন। কৃষ্ণও
* '''পদ্মপুরাণ''' – ''পদ্মপুরাণ'' মতে, হরপার্বতী ঐরাবতের বেশে বনে বিহার করছিলেন,
* '''লিঙ্গপুরাণ''' – ''লিঙ্গপুরাণ'' মতে, দেবগণ শিবের নিকট উপস্থিত হন ও ব্রহ্মা অসুরদের হাত থেকে নিরাপত্তা চান। শিব তখন নিজ দেহ থেকে গণেশের জন্ম দেন। <ref>লিঙ্গপুরাণ, ১০৫।৪৯</ref>
* '''বরাহপুরাণ''' – ''বরাহপুরাণ'' মতে, দেব ও ঋষিগণ রুদ্রের নিকটে বিঘ্নোপসারণকারী এক নতুন দেবতা চাইলে হাস্যময় শিবের সম্মুখস্থ আকাশে শিবের [[গণ]]-যুক্ত একটি কুমারের জন্ম হল। এই শিশুর রূপে দেবগণ, এমনকি স্বয়ং পার্বতী মুগ্ধ হয়ে গেলেন। কিন্তু শিব ক্রুদ্ধ হলেন ও অভিশাপ দিলেন যে এই কুমারের গজমুখ, লম্বোদর ও নাগ উপবীত হবে। এই ক্রুদ্ধ হবার সময় শিবের পদনিঃসৃত ঘাম থেকে অসংখ্য গজমুখ বিনায়ক গণ জন্ম নিলেন। কুমার গণেশ হলেন এঁদের অধিপতি। <ref>বরাহপুরাণ, ২।১৬।১৮</ref> এখানে কুমার গণেশ ও গণেরা বিঘ্নকর ও গজাস্য বলে উল্লিখিত।
[[চিত্র:Ganapati1.jpg|thumb|left|300px|রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত 'ঋদ্ধি সিদ্ধি' চিত্রে সস্ত্রীক গণেশ]]
* '''দেবীপুরাণ''' – ''দেবীপুরাণ'' মতে, শিবের রাজসিক ভাব দেখা দিলে
* '''মৎসপুরাণ''' – ''মৎস্যপুরাণ'' মতে, পার্বতী চূর্ণক বা বেসম দিয়ে নিজের গাত্রমার্জনা করছিলেন। সেই সময় এই চূর্ণক দিয়ে একটি গজানন মূর্তি নির্মাণ করে তা গঙ্গাজলে ফেলে দেন। পুতুলটি বিরাট হয়ে পৃথিবী পূর্ণ করতে উদ্যত হলে পার্বতী ও [[গঙ্গা]] একে পুত্র সম্বোধন করেন ও ব্রহ্মা একে গণাধিপতি করে দেন।
* '''বামনপুরাণ''' – ''বামনপুরাণ'' মতে, পার্বতী স্নানের সময় নিজের গাত্রমল দিয়ে চতুর্ভূজ গজানন মূর্তি নির্মাণ করলে মহাদেব তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। বলেন, যেহেতু “ময়া নায়কেন বিনা জাতঃ পুত্রকঃ” (আমাকে ছাড়াই পুত্রের জন্ম হয়েছে) সেহেতু এ বিনায়ক নামে প্রসিদ্ধ হবে এবং বিঘ্ননাশকারী হবে।
=== অন্যান্য উপাখ্যান ===
* '''ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ''' – ''ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ'' অনুযায়ী, পরশুরাম একুশবার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করে কৈলাসে শিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে, দ্বাররক্ষক গণেশ
* '''শিবপুরাণ''' – ''শিবপুরাণ'' অনুসারে, গণেশ ও কার্তিকেয় বিবাহের জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন। তখন স্থির হয়, উভয়ের মধ্যে যে আগে বিশ্বপরিক্রমা করে আসতে পারবে তার বিবাহ আগে হবে। কার্তিকেয় ময়ূরে আরোহণ করে বিশ্বপরিক্রমায় বের হন; কিন্তু গণেশ শিব ও পার্বতীকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে বলেন, শাস্ত্রমতে তিনি শতবার বিশ্বপরিক্রমা করলেন। এরপর বিশ্বরূপের দুই কন্যা সিদ্ধি ও বুদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিবাহ হয়। সিদ্ধির পুত্র হয় লক্ষ্য ও বুদ্ধির পুত্র লাভ। কার্তিক নারদের কাছ থেকে বিবাহের সংবাদ পেয়ে ফিরে আসেন ও মনের দুঃখে ক্রৌঞ্চ পর্বতে গিয়ে বাস করতে থাকেন। অন্য একটি মতে, তুলসী নামে এক নারী গণেশকে বিবাহ করতে চাইলে ব্রহ্মচর্যব্রতী গণেশ অসম্মত হন। তিনি তুলসীর চিত্ত বৈকল্যের জন্য তাকে শাপ দেন দানবপত্নী হওয়ার। তুলসীও তাকে শাপ দেন। ফলে পুষ্টি নামে এক নারীকে গণেশ বিবাহ করতে বাধ্য হন।
* '''তন্ত্র''' – তন্ত্রমতে [[লক্ষ্মী]] ও [[সরস্বতী]] গণেশের স্ত্রী। এছাড়াও তীব্রা, জ্বালিনী, নন্দা, সুভোগদা, কামরূপিনী, উগ্রা, তেজোবতী, সত্যা ও বিঘ্ননাশিনী নামে
* '''মহাভারত''' – [[মহাভারত]] মতে, কৌরব ও পাণ্ডবদের মৃত্যু হলে [[ব্যাস]] ধ্যানে বসেন। মহাভারতের সমস্ত ঘটনা
=== গণেশ চতুর্থী ===
[[ভাদ্র]] ও [[মাঘ]]মাসের শুক্লাচতুর্থীকে গণেশ চতুর্থী বলা হয়। হিন্দু বিশ্বাসে এই দিনটি গণেশের জন্মদিন। গণেশ চতুর্থী সংক্রান্ত একটি কিংবদন্তী হিন্দুসমাজে প্রচলিত, একবার গণেশ চতুর্থীতে প্রতি বাড়িতে মোদক ভক্ষণ করে ভরা পেটে ইঁদুরে চেপে ফিরছিলেন গণেশ। পথে ইঁদুরের সামনে একটি সাপ এসে পড়লে সে ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। এতে গণেশ পড়ে যান ও
[[চিত্র:Mahadevi.jpg|thumb|right|300px|সপরিবার গণেশ, দুর্গোৎসব চিত্র, ১৯২৫-৩৫|সংযোগ=Special:FilePath/Mahadevi.jpg]]
১২৫ নং লাইন:
* '''গণেশ পুরাণ''' – ''গণেশ পুরাণ''-এ উল্লিখিত গণেশের চার অবতার সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগে অবতীর্ণ হন। এঁরা হলেন –
** '''মহোৎকট বিনায়ক''' – ইনি দশভূজ ও রক্তবর্ণ। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় এঁর বাহন হয় হাতি নয় সিংহ। ইনি সত্য যুগে কশ্যপ ও অদিতির সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেই কারণে কাশ্যপেয় নামে পরিচিত হন। <ref>গণেশ পুরাণ, ১।৪৬।২৮</ref> এই অবতারে তিনি নরান্তক ও দেবান্তক নামে দুই অসুরভ্রাতা ও ধূম্রাক্ষ নামে এক দৈত্যকে বধ করেন।
** '''ময়ূরেশ্বর''' – ইনি ষড়ভূজ ও শ্বেতবর্ণ। বাহন ময়ূর। ত্রেতা যুগে শিব ও পার্বতীর পুত্ররূপে এঁর জন্ম। এই অবতারে তিনি সিন্ধু নামে এক দৈত্যকে বধ করেন। অবতারকাল সমাপ্ত হলে ময়ূরটি তিনি
** '''গজানন''' – ইনি চতুর্ভুজ ও রক্তবর্ণ। বাহন ইঁদুর। ইনি দ্বাপর যুগে শিব ও পার্বতীর পুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সিন্দুর নামে এক দৈত্যকে তিনি এই অবতারে বধ করেন। এই অবতারেই রাজা বরেণ্যর নিকট তিনি গণেশ গীতা প্রকাশ করেন।
** '''ধূম্রকেতু''' – দ্বিভূজ অথবা চতুর্ভূজ ও ধূম্রবর্ণ। বাহন নীল ঘোড়া। ইনি কলি যুগের শেষে অবতীর্ণ হবেন ও অনেক দৈত্য বধ করবেন। এই অবতার বিষ্ণুর শেষ অবতার [[কল্কি]]র অনুসরণে কল্পিত।
১৪২ নং লাইন:
[[চিত্র:Ganesha Nurpur miniature circa 1810 Dubost p64.jpg|thumb|left|250px|১৮১০ সালে অঙ্কিত নুরপুর ঘরানার গণেশ চিত্র, চণ্ডীগড় মিউজিয়ামে রক্ষিত]]
ভারতীয় শিল্প ও চিত্রকলায় গণেশ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় মূর্তিকল্প। গণেশের নানা রূপের বর্ণনা যেমন পুরাণ ও ইতিহাসে পাওয়া গেছে, তেমনি
[[চিত্র:MahA gaNapati.jpg|thumb|right|250px|শক্তিসহ মহাগণপতি, উনিশ শতকীয় কন্নড় চিত্রকলা]]
=== রূপ ===
ভারতীয় শিল্পকলায় প্রথম থেকেই গণেশ গজানন, একদন্ত ও লম্বোদর। গণেশের ধ্যান, প্রার্থনা ও প্রণাম মন্ত্রেও
<poem style="margin-left: 2em">
“খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং প্রস্যন্দন্মদ্গন্ধলুব্ধমধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্।
১৬৬ নং লাইন:
অর্থাৎ, “দেবরাজ ইন্দ্রের মস্তকে বিরাজিত মন্দারপুষ্পের পরাগসমূহের দ্বারা রক্তিম হেরম্বের পাদপদ্মের রেণুসমূহ আমার বিঘ্নহরণ করুক।” <ref name="ReferenceA"/>
গণেশের প্রথম দিকের মূর্তিগুলিতে দেখা যায়, গণেশ
=== রূপভেদ ===
১৭৫ নং লাইন:
* '''মহাগণপতি''' – মহাগণপতি গণেশের একটি তান্ত্রিক রূপ। এঁর সঙ্গে শক্তি বিরাজমান এবং পরস্পর পরস্পরের উপস্থ স্পর্শ করে আছেন। এই মূর্তি শক্তিগণপতি বা বিরিগণপতির মতো আদিরসাশ্রিত।
* '''হেরম্ব-গণপতি''' – হেরম্ব-গণপতি ''তন্ত্রসার''-এ উল্লেখিত। তিনি পঞ্চানন। মধ্যের মাথাটি আকাশের দিকে ঊর্ধ্বমুখ। হাতে বর, অভয় , মোদক, নিজদন্ত, টাঙ্গি, মুণ্ডমালা, মুদগর, অঙ্কুশ ও ত্রিশূল। হেরম্ব শব্দের অর্থ দীন পালক। বাহন সিংহ। যদিও [[নেপাল|নেপালে]] হেরম্ব-গণপতির বাহন ইঁদুরই।
* '''নৃত্যগণেশ''' – নৃত্যগণেশ আটহাতে নৃত্যরত।
* '''বিনায়ক গণেশ''' – বিনায়ক গণেশের উল্লেখ আছে ''অগ্নিপুরাণ'' গ্রন্থে। এই গণেশের পাঁচটি বিশিষ্ট রূপ – চিন্তামণি বিনায়ক, কপর্দী বিনায়ক, আশা বিনায়ক, গজবিনায়ক ও সিদ্ধিবিনায়ক। যদিও যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি অনুসারে বিনায়ক একজনই, এবং তিনি অম্বিকাপুত্র।
* '''বৌদ্ধ গণেশ''' – বৌদ্ধ গণেশের উল্লেখ মেলে ''বৌদ্ধ সাধনমালা''-তে। তিনি দ্বাদশভূজ।
[[চিত্র:13th century Ganesha statue.jpg|thumb|right|200px|কর্ণাটকে প্রাপ্ত দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীর উপবিষ্ট গণেশমূর্তি, হৈসল শাসনকালে নির্মিত]]
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম থেকে খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের মধ্যে মির্মিত শ্রীলঙ্কার মিহিনটালে প্রাপ্ত শিলাফলকে গুড়ি মারা গজমুণ্ড ও রদবিশিষ্ট মূর্তিটিকে গণেশের প্রাচীনতম শিল্পরূপ বলে মনে করা হয়। [[উত্তর প্রদেশ|উত্তর প্রদেশের]] ফররুখবাদ জেলায় প্রাপ্ত আনুমানিক চতুর্থ
প্রথম দিকের গণেশ মূর্তিগুলি দ্বিভূজ ও উপবিষ্ট। হাতে কুঠার ও মোদক। দেবতা গজানন, একদন্ত ও লম্বোদর। কয়েকটি মূর্তিতে চতুর্ভূজ গণেশও দেখা যায়। ''বৃহৎসংহিতা'' গ্রন্থ অনুসারে, গণেশ দ্বিভূজ এবং এখানেও
[[চিত্র:Ganesha ink.jpg|thumb|left|300px|কর্ণাটকের মাইসোরের মিউজিয়ামে রক্ষিত ভাগবত পুথির অলংকরণে গণেশ]]
বিগ্রহ রূপেও গণেশের নানা মূর্তি প্রচলিত ছিল। এই সব মূর্তি সবই গুপ্তোত্তর যুগে নির্মিত হয়নি। গুপ্তযুগের প্রথম দিকে মথুরাতে প্রাপ্ত বেলেমাটির গণপতি ও ভিতরগাঁও-এর ইষ্টকনির্মিত মন্দিরে প্রাপ্ত পোড়ামাটির গণপতির মূর্তিটি গণেশ মূর্তির বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যবহন করছে। উল্লেখ্য মথুরায় গণেশমূর্তিতে ইঁদুরের উপস্থিতি দেখা যায় না এবং ভিতরগাঁওতেও ঠিক দেবতার আকারে গণেশ চিত্রিত হননি, সেখানে তিনি উড্ডীয়মান। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ভূমারা শিবমন্দিরে প্রাপ্ত গণেশ মূর্তি গণেশ-বিবর্তনের শেষ নিদর্শন। প্রথম যুগের মূর্তিগুলি নগ্ন ও দণ্ডায়মান। এগুলিকে দেখে দেবতা বলে বোধ হয় না। এছাড়া গুপ্তযুগের প্রথম ভাগে ভিলসা উদয়গিরির চন্দ্রগুপ্ত গুহায় গণেশের যে উৎকীর্ণ চিত্রটি পাওয়া যায়, সেটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই মূর্তি অনুসারে গণেশ পর্যঙ্ক আসনে উপবিষ্ট, বাম হাতে
পরবর্তীকালে তান্ত্রিকতা ও শক্তিপূজার সঙ্গে গণেশ ধারণা বিশেষ ভাবে জড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন তান্ত্রিক গণেশ মূর্তিতে শক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেতে থাকে। যেমন – শক্তিগণেশ, লক্ষ্মীগণেশ (লক্ষ্মীগণেশের লক্ষ্মী ঐশ্বর্যের দেবী নন), উচ্ছিষ্টগণেশ ইত্যাদি। দাক্ষিণাত্যে উচ্ছিষ্টগণেশের কয়েকটি মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলি বামাচারে পূজিত। জব্বলপুরের কাছে গজমুণ্ডবিশিষ্ট একটি দেবীমূর্তিও পাওয়া গেছে। সম্ভবত ইনি তন্ত্রোল্লিখিত গণেশ-পত্নী গণেশানী।
২০৭ নং লাইন:
=== মহারাষ্ট্রে গণেশ মহোৎসব ===
ভারতের [[মহারাষ্ট্র]] রাজ্যে অনুষ্ঠিত [[গণেশ চতুর্থী]] গণেশের নামে উৎসর্গিত বৃহত্তম উৎসব। প্রতিবছর অগস্ট মাসের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে ভাদ্রমাসের শুক্লাচতুর্থী তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দশদিন ধরে মহারাষ্ট্রে এই উৎসব চলে। অতঃপর অনন্ত চতুর্দশীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জনের মাধ্যমে উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। মহারাষ্ট্রে এই উৎসব পূর্বে ছিল পারিবারিক গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ এক ক্ষুদ্র পর্বমাত্র। [[১৮৯৩]] সালে লোকমান্য [[বাল গঙ্গাধর তিলক]] এই উৎসবকে মহারাষ্ট্রের এক জাতীয় উৎসবে পরিণত করেন।
== শাস্ত্র ==
[[চিত্র:Ganesha Basohli miniature circa 1730 Dubost p73.jpg|thumb|left|200px|১৭৩০ সালে অঙ্কিত বাসহলি গণেশচিত্র, নয়াদিল্লির জাতীয় সংগ্রহালয়ে সংরক্ষিত]]
ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের প্রধান পাঁচজন দেবতার একজন রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার পর কিছু ব্রাহ্মণ গণেশকেই
''গণেশ পুরাণ ও'' ''মুদ্গল পুরাণ'' গ্রন্থদুটির রচনাকাল প্রসঙ্গে মতভেদ আছে। সাধারণভাবে এই দুই পুরাণের রচনাকাল ১১০০
* '''গণেশ পুরাণ''' – ''গণেশ পুরাণ'' গণেশের কাহিনি ও পূজাপদ্ধতি সংক্রান্ত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপপুরাণদুটির মধ্যে একটি। এই পুরাণ দুটি খণ্ডে বিভক্ত – ''উপাসনাখণ্ড'' ও ''ক্রীড়াখণ্ড'' বা ''উত্তরখণ্ড''। উপাসনাখণ্ডের অধ্যায়সংখ্যা ৯২; ক্রীড়াখণ্ডের ১৫৫। উপাসনাখণ্ডের ৩৬ অধ্যায়ের একটি স্তোত্র অবলম্বনে প্রসিদ্ধ ''গণেশ সহস্রনাম'' স্তোত্রটি রচিত হয়েছিল। আজও দেশের বিভিন্ন গণেশ মন্দিরে এই স্তোত্রটি পঠিত হয়ে থাকে। অন্যদিকে ক্রীড়াখণ্ডের ১৩৮-৪৮ অধ্যায়গুলি ''গণেশ গীতা'' নামে পরিচিত। রাজা বরেণ্য ও গণেশাবতার গজাননের মধ্যে সংলাপের আকারে রচিত এই ''গণেশ গীতা'' [[ভগবদ্গীতা]]র ধারা অনুসরণকারী। কৃষ্ণের আদলেই গণেশকে এখানে ভগবৎতত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে দেখা যায়। ক্রীড়াখণ্ডে গণেশের চার অবতারেরও বর্ণনা আছে।
* '''মুদ্গল পুরাণ''' – গণেশের কাহিনি সংক্রান্ত দুটি প্রধান উপপুরাণের একটি। এই পুরাণে গণেশের আটটি অবতারের বর্ণনা রয়েছে।
* '''গণপতি অথর্বশীর্ষ''' – ''গণেশ অথর্বশীর্ষ'' বা ''গণেশ অথর্বশীর্ষোপনিষদ'' একটি গণেশ সংক্রান্ত শাস্ত্র ও অপ্রধান [[উপনিষদ]]। এর অপর নাম ''গণপতি উপনিষদ''। মহারাষ্ট্রে এই গ্রন্থটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। রঞ্জনগাঁও-এর অষ্টবিনায়ক মন্দিরের প্রবেশ তোরণের উপর এই উপনিষদের সমগ্র অংশটি খোদিত। গাণপত্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ছত্রছায়ায় রচিত এই গ্রন্থে গণেশকে সকল দেবতার উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং
== মন্দির ==
[[চিত্র:Ganesh with flower.jpg|thumb|right|150px|পুষ্পিত গণেশমূর্তি]]
হিন্দু মন্দিরে গণেশের উপস্থিতি দুইভাবে হয়ে থাকে – প্রথমত ‘পরিবার-দেবতা’র ‘পার্শ্বদেবতা’ রূপে; অথবা মন্দিরের প্রধান দেবতা রূপে। পুরাণে কথিত পার্বতীর দ্বাররক্ষক গণেশের স্মরণে, পূজাসিদ্ধির দেবতারূপে মন্দিরদ্বারের উপরে
== বাংলা সাহিত্যে গণেশ ==
মধ্যযুগীয় ও আধুনিক কালের বাংলা সাহিত্যে গণেশের উপস্থিতি অনেকাংশেই উজ্জ্বল। মধ্যযুগীয় সাহিত্যে গণেশ বিঘ্ননাশক দেবতা এবং সেই সূত্রে কাব্যের প্রারম্ভে
=== কৃত্তিবাসী রামায়ণে গণেশ ===
[[চিত্র:Prambanan-ganesha.jpg|thumb|left|300px|ইন্দোনেশিয়ার প্রামবানানে প্রাপ্ত গণেশ মূর্তি]]
[[বাল্মীকি]] রচিত মূল রামায়ণে গণেশের জন্মোপাখ্যানের বদলে স্থান পেয়েছিল কার্তিকেয়ের জন্মকথা। কৃত্তিবাস সেই কাহিনি পরিহার করে ''ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ'' ও ''বৃহদ্ধর্ম পুরাণে''-এ উল্লিখিত কাহিনির মিশেলে গণেশের জন্মবিষয়ক একটি উপাখ্যান
রাজা [[দশরথ]] শনির ভবনে গমন করলে শনি প্রীত হলেন। কিন্তু তিনি রাজার দিকে দৃষ্টিপাত না করেই বাক্যালাপ করতে লাগলেন। দশরথ এর কারণ জানতে চাইলে শনি বললেনঃ
<poem style="margin-left: 2em">
২৩৭ নং লাইন:
যেমতে শিবের পুত্র হৈল গজানন।।
</poem>
গৌরীর সন্তান হলে সকল দেবগণ
=== মঙ্গলকাব্যে গণেশ ===
|