বাইবার্স: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৩৬ নং লাইন:
আইন জালুতের যুদ্ধ কেবল মিসর ও ইসলামের ইতিহাসে নয়,বরং সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা। যদি ধ্বংসাত্মক মোঙ্গল শক্তি এ যুদ্ধে জয় লাভ করতো,তাহলে তারা উত্তর আফ্রিকা,স্পেন এবং ইউরোপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যুগপৎ প্রাচ্য ও প্রতিচ্যের ইসলামি ও খৃস্টীয় সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতো। তাই আইন জালুতের যুদ্ধে একই সঙ্গে ইসলাম ও বিশ্বসভ্যতা রক্ষা পেয়েছিল।
 
এদিকে আইন জালুতের চরম প্রতিশোধ নিতে সেই হালাকু খানই আবার ধেয়ে আসে মিসর-সিরিয়া পানে। মহানদী ফোরাত অতিক্রম করে তার অজেয় বাহিনী একসময় আছড়ে পড়ে মামলুক সীমান্তের অভ্যন্তরে। চোখের পলকে হিমস পর্যন্ত শামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল হালাকু খান ফের কব্জা করে নেয়। ১২৬২ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ে শামের বুক চিড়ে আবারও বয়ে চললো রক্ত নদী! কিন্তু না। এবারও তাদের দম্ভ চূর্ণ করলেন দুর্ধর্ষ বীর সুলতান বাইবার্স। অবাক বিশ্ব আবার দেখলো মামলুক চমক! হালাকু বাহিনী ফের টের পেলো এতোদিন কচুকাটা করে আসা কোটি কোটি আয়েশী মুসলিম আর এই মামলুক মুসলিমরা এক নয়। সুলতান বাইবার্স প্রচণ্ড আক্রমণে তাদের পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করালেন। বাধ্য হয়ে তারা শান্তিচুক্তি করতে চাইল। চাতুর সুলতান তাদের গাদ্দারির দীর্ঘ ইতিহাস সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত ছিলেন, তাই তিনি তাদের শান্তি প্রস্তাবে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। প্রতিটি রণক্ষেত্রে তাদের পরাজিত করতে থাকলেন। ১২৭৩ খৃস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে বীরা নামক স্থানে তাদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। একপর্যায়ে তারা এশিয়া মাইনরের রোম্যান সালজুক সালতানাতের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ১২৭৭ সালে মামলুকদের বিরুদ্ধে এক চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এলবিস্তান নামক স্থানে সংগঠিত এই যুদ্ধে সুলতান বাইবার্স শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন মঙ্গোল বাহিনী ও মিত্র সালজুক বাহিনীকে।
 
এছাড়াও সুলতান বাইবার্স আইন জালুত যুদ্ধে মঙ্গোলদের সাহায্যকারী ক্রুসেডারদেরকে বিশেষ করে এন্টিয়কের রাজা ৬ষষ্ঠ বহিমন্ডকে শায়েস্তা করতে চাইলেন। এন্টিয়ক ছিল এশিয়ায় খৃস্টানদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘাঁটি । সুলতান বাইবার্স এন্টিয়ক অবরোধের জন্য একটি বাহিনী প্রেরন করেন এবং দীর্ঘদিন তা অবরোধ করে রাখেন। অবশেষে আর্মেনীয় রাজা হিথম তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসলে সুলতান বাইবার্স অবরোধ তুলে নেন। এরপর ১২৬৩ সালে তিনি ক্রুসেডারদের অন্যতম শক্ত দুর্গ আক্কা অবরোধ করেন। এরপর তিনি একে একে ক্রুসেডারদের সকল দুর্গগুলো গুঁড়িয়ে দিতে থাকেন। ১২৬৫ সালে ক্রুসেডারদের দখলে থাকা জেরুজালেমের নিকটবর্তী কাইসারিয়া ও হাইফা শহরদুটি জয় করেন। বিনা যুদ্ধে জাফাও দখলে নেন। এরপর ৪০ দিনের অবরোধ শেষে আরসুফও দখল করে নেন। ১২৬৬ সালে সাফেদ ও রামলা শহর দুটিও ক্রুসেডারদের দখলমুক্ত করে ফেলেন। এভাবে একের পর রাজ্য হারিয়ে ক্রুসেডাররা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে কোন কোন ক্রুসেড রাজ্য তাদের দখলে থাকা কিছু ভখন্ড স্বেচ্ছায় সুলতান বাইবার্সকে উপহার দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে।
৪৪ নং লাইন:
 
বাইবার্সের রাজত্বকালে হাসান-বিন-সাবাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গুপ্তঘাতক হাশাশিন সম্প্রদায় পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ইতঃপূর্বে হালাকু খান এ সম্প্রদায়কে ভীষণভাবে পর্যুদস্ত করলেও তাদের শক্তিকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় মিসরের জন্য হুমকি সৃষ্টি করলে তিনি তাদের মোকাবিলা করেন। ১২৭০-১২৭৩ সালের মধ্যে বাইবার্স তাদের ৯টি দুর্গই দখল করে উক্ত অঞ্চলসমূহকে তার সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। এই আক্রমণে গুপ্তঘাতকদের ক্ষমতা চিরতরে খর্ব করেন তিনি। এইভাবে যবনিকাপাত হয় ত্রাস ও ষরযন্ত্রে ভরা দীর্ঘ এক শাসনকালের।
১২৭৬ খৃস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে বাইবার্স নুবিয়া অধিকার করেন এবং উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকাও তার করদরাজ্যে পরিণত হয়।
 
==আব্বাসি খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা==
ক্ষমতায় এসেই কায়রোতে আব্বাসীয় খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা সুলতান বাইবার্সের রাজত্বকালের উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। ১২৫৮ খৃস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে বাগদাদে হালাকু খান কর্তৃক আববাসীয় বংশের শেষ খলিফা আল-মুসতাসিম বিল্লাহ নিহত হলে মুসলিম জাহান খলিফাশূন্য পয়ে পড়ে। মামলুক সুলতান বাইবার্স এই খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে মুসলিম বিশ্বের বিরাট উপকার সাধন করেন। তিনি সিরিয়া থেকে আব্বাসি বংশের এক ব্যক্তি আবুল কাসেম আহমাদ বিন মহাম্মাদ জাহের বিআমরিল্লাহকে সসম্মানে ডেকে এনে তার কাছে বাইয়াত করেন। মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টিতে খেলাফতের পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
 
==শিল্প ও সংস্কারে বাইবার্স==
এরপর সুলতান বাইবার্স পবিত্র স্থানসমূহ সংস্কারের কাজে মনোনিবেশ করেন। প্রথমেই তিনি ঐতিহ্যবাহী আল-আজহার মসজিদের সংস্কার করেন এবং নব-উদ্যমে সেখানে লেখপড়া ও খুৎবার ব্যবস্থা করেন। অতঃপর সেখানে শাফি মাযহবের একজন প্রধান বিচারকের অধিনে প্রতিটি মাযহাবের প্রতিনিধি হিসাবে চারজন কাযীকে নিযুক্ত করেন যারা পবিত্র কোরআন ও হাদীস অনুসারে বিচার কার্য পরিচালনা করতেন। এছাড়াও মিশরের বাইরে তিনি বেশি কিছু সংস্কারমূলক কাজ করেন। এর মধ্যে রয়েছে মদিনায় মসজিদে নববীর উন্নয়ন এবং ফিলিস্থিনের আল খালিলে মাসজিদ ইবরাহিমের সংস্কার। ১২৬২ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে তিনি জেরুজালেম পরিদর্শন করেন এবং সেখানেও পবিত্র স্থানসমুহের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সাধন করেন। সাম্রাজ্যের মধ্যে সুন্দর সুন্দর মসজিদ তার স্থাপত্য শিল্পের প্রতি অনুরাগের পরিচয় বহন করে। মসজিদের কলি ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় ও জনহিতকর নানা প্রতিষ্ঠানও তৈরী করেছিলেন। তার আমলের স্থাপত্যের মধ্যে তার নামাংকিত মসজিদ এবং বিদ্যালয় (Al-Madrassa al-Zahiriyy) আজও বিদ্যমান। দামাস্কাসে তার সমাধিক্ষেত্রেই আজকের জাহিরিয়া পাঠাগার তৈরী হয়েছে।
 
==মৈত্রী স্থাপনে বাইবার্সঃ==