আবদুল হামিদ খান ভাসানী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Hasan Nahiyan Nobel (আলোচনা | অবদান)
→‎১৯৭০-১৯৭১: বানান সংশোধন
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১৬ নং লাইন:
}}
 
'''মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী''' (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ - ১৭ নভেম্বর ১৯৭৬) ছিলেন বিংশশতকী [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]] অন্যতম তৃণমূল [[রাজনীতি|রাজনীতিবিদ]] ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট [[পাকিস্তান]] ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[রাজনীতি|রাজনীতিতে]] বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] মানুষের কাছে “'''মজলুম জননেতা'''” হিসাবে সমধিক পরিচিত। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে [[যুক্তফ্রন্ট]] গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি মাওপন্থী কম্যুনিস্ট, তথা বামধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার অনুসারীদের অনেকে এজন্য তাকে "লাল মওলানা" নামেও ডাকতেন। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা এবং পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের [[কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলন|কাগমারী সম্মেলনে]] তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের 'ওয়ালাকুমুসসালাম' বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন।
 
== জীবনী ==
২২ নং লাইন:
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর [[সিরাজগঞ্জ জেলা|সিরাজগঞ্জের]] ধানগড়া পল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী। হাজী শারাফত আলী ও বেগম শারাফত আলীর পরিবারে ৪ টি সন্তানের জন্ম হয়। একটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে। মোঃ আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ছেলে-মেয়ে বেশ ছোট থাকা অবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে বেগম শারাফত ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট শিশু আব্দুল হামিদ খান।
 
পিতৃহীন হামিদ প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকেন। ওই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে ১৮৯৩ সালে তিনি [[জয়পুরহাট]] জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদ্রাসার মোদাররেসের কাজ করেন এবং জমিদারের ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে [[আসাম]] গমন করেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ইসালামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে দেশবন্ধু [[চিত্তরঞ্জন দাস]] ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অণুপ্রাণিত হন।<ref name=ds>http://thedailystar.net/story.php?nid=11919</ref> ১৯১৯ সালে [[ভারতীয় জাতিয় কংগ্রেস|কংগ্রেসে]] যোগদান করে [[অসহযোগ আন্দোলন|অসহযোগ আন্দোলনে]] অংশগ্রহণ করে দশ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ''স্বরাজ্য পার্টি'' গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন মহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি তার সহধর্মিণী আলেমা খাতুনকে নিয়ে আসাম গমন করেন এবং আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সুত্রপাত ঘটান। ১৯২৯-এ আসামের [[ধুবড়ী জেলা|ধুবড়ী জেলার]] ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় "ভাসানীর মাওলানা"।<ref name=ds/> এরপর থেকে তার নামের শেষে '''ভাসানী''' শব্দ যুক্ত হয়।
 
=== ১৯৩০-১৯৫৯ ===
১৯৩১-এ সন্তোষের [[কাগমারী]]<nowiki/>তে, ১৯৩২-এ সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় ও ১৯৩৩-এ [[গাইবান্ধা জেলা|গাইবান্ধায়]] বিশাল কৃষক সম্মেলন করেন। ১৯৩৭-এ মওলানা ভাসানী কংগ্রেস ত্যাগ করে [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগে]] যোগদান করেন। সেই সময়ে আসামে '[[লাইন প্রথা]]' চালু হলে এই নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। এসময় তিনি "আসাম চাষী মজুর সমিতি" গঠন করেন এবং ধুবরী, গোয়ালপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৪০ সালে [[আবুল কাশেম ফজলুল হক|শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের]] সঙ্গে [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগের]] [[লাহোর]] সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫-৪৬ সালে আসাম জুড়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে "[[বাঙ্গাল খেদাও]]" আন্দোলন শুরু হলে ব্যাপক দাঙ্গা দেখা দেয়। এসময় বাঙালিদের রক্ষার জন্য ভাসানী বারপেটা, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান। [[পাকিস্তান]] আন্দোলনে অংশ নিয়ে [[১৯৪৭]] সালে আসামে [[গ্রেফতার]] হন। [[১৯৪৮]]-এ মুক্তি পান। এরপর তিনি [[টাঙ্গাইল জেলা|টাঙ্গাইলের]] সন্তোষে ফিরে আসেন। <br />১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতায় [[পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভা]]<nowiki/>র সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের [[১৭ মার্চ]] ব্যবস্থাপক সভার কার্যাবলি বাংলায় পরিচালনা করার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানান এবং এই দাবি নিয়ে পীড়াপীড়ি করেন। [[মার্চ ১৯|১৯ মার্চ]] বাজেট বক্তৃতায় অংশ নিয়ে বলেন, যেসব কর কেন্দ্রীয় সরকার [[পূর্ববঙ্গ|পূর্ববঙ্গ প্রদেশ]] থেকে সংগ্রহ করে তার শতকরা ৭৫% প্রদেশকে দিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্রিটিশ আমলে বঙ্গপ্রদেশ জুটেক্স ও সেলসট্যাক্স রাজস্ব হিসেবে আদায় করত এবং এই করের ভাগ কেন্দ্রীয় সরকারকে দিতে হতো না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গ সরকারের হাত থেকে এই কর ছিনিয়ে নিয়ে নিজেরাই আদায় করতে থাকে যার ফলে পূর্ববঙ্গ সরকার আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই সময় পূর্ববঙ্গ সরকারের বার্ষিক বাজেট ছিল মাত্র ৩৬ কোটি টাকা। যাই হোক, মুসলিম লীগ দলের সদস্য হয়েও সরকারের সমালোচনা করায় মুসলিম লীগের ক্ষমতাসীন সদস্যরা মওলানা ভাসানীর ওপর অখুশী হয় এবং তার নির্বাচনে ত্রুটি ছিল এই অজুহাত দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে এবং মওলানা ভাসানীকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে।<ref name=tds>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি |ইউআরএল=http://www.thedailysangbad.com/details.php?news=23&action=main&menu_type=&option=single&news_id=4909&pub_no=55 |সংগ্রহের-তারিখ=৩ ডিসেম্বর ২০১৮ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20160401055515/http://www.thedailysangbad.com/details.php?action=main&menu_type=&news=23&news_id=4909&option=single&pub_no=55 |আর্কাইভের-তারিখ=১ এপ্রিল ২০১৬ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref> পরিশেষে মওলানা ভাসানী ব্যবস্থাপক সভার সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতদসত্ত্বেও পূর্ববঙ্গের তৎকালীন গভর্নর এক নির্বাহী আদেশ বলে মওলানা ভাসানীর নির্বাচন বাতিল করেন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের জনবিরোধী কার্যকলাপের ফলে মওলানা ভাসানী [[১৯৪৯]] সালের ২৩-২৪ জুন [[ঢাকা|ঢাকার]] টিকাটুলিতে রোজ গার্ডেনে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন আহ্বান করেন। ২৩ জুন ওই কর্মিসম্মেলন অণুষ্ঠিত হয়। সারাদেশ থেকে প্রায় ৩০০ কর্মী সম্মেলনে যোগদান করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন [[আতাউর রহমান খান]]। মওলানা ভাসানী ছিলেন প্রধান অতিথি। ২৩ জুন পূর্ববঙ্গের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল [[পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ]] গঠিত হয়। মওলানা ভাসানী সর্বসম্মতিক্রমে এই দলের সভাপতি নির্বাচিত হলেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন [[শামসুল হক (রাজনীতিবিদ)|শামসুল হক]]। ২৪ জুন আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা অণুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালের মধ্যভাগে পূর্ববঙ্গে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ১১ অক্টোবর [[আরমানীটোলা]] ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের একটি জনসভা অণুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য পূর্ববঙ্গ মন্ত্রিসভার পদত্যাগ দাবী করা হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মওলানা ভাসানী ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। ভূখা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ১৯৪৯-এর ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবরণ করেন।<ref name=tds/>
 
[[১৯৫০]] সালে সরকার কর্তৃক রাজশাহী কারাগারের [[খাপরা ওয়ার্ড]] এর বন্দীদের উপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে [[ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার|ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে]] অনশন ধর্মঘট পালন করেন এবং ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে [[১৯৫২|১৯৫২-র]] ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলার বার লাইব্রেরি হলে তার সভাপতিত্বে অণুষ্ঠিত এক সভায় [[সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ]] গঠিত হয়। [[রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন|রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে]] সহযোগিতার কারণে গ্রেফতার হয়ে ১৬ মাস কারানির্যাতনের শিকার হন। অবশ্য জনমতের চাপে [[১৯৫৩]] সালের ২১ এপ্রিল মওলানা ভাসানীকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়।<ref name=tds/> পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯৫৩ সালের ৩ ডিসেম্বর [[কৃষক-শ্রমিক পার্টি]]র সভাপতি [[আবুল কাশেম ফজলুল হক|শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক]] এবং [[হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী|হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীকে]] সঙ্গে নিয়ে [[যুক্তফ্রন্ট]] নামক নির্বাচনী মোর্চা গঠন করেন। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে ২৩৭ টির মধ্য ২২৮ টি আসন অর্জনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। [[আবুল কাশেম ফজলুল হক|ফজলুল হকের]] নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর ২৫শে মে [[১৯৫৪]] মওলানা ভাসানী [[বিশ্ব শান্তি সম্মেলন|বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে]] যোগদানের উদ্দেশ্যে [[সুইডেন|সুইডেনের]] রাজধানী স্টকহোমে যান এবং সেখানে বক্তব্য প্রদান করেন।<ref name="petercusters.nl">http://www.petercusters.nl/file/4</ref> ৩০ মে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে গভর্ণরেরগভর্নরের শাসন জারি করে এবং মওলানা ভাসানীর দেশে প্রত্যাবর্তনের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। ১১ মাস [[লন্ডন]], [[বার্লিন]], [[দিল্লী]] ও [[কলকাতা|কলকাতায়]] অবস্থান করার পর তার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলে [[১৯৫৫|১৯৫৫-র]] ২৫ এপ্রিল দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। পূর্ব বাংলায় খাদ্যজনিত দুর্ভিক্ষ রোধের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৫০ কোটি টাকা আদায়ের দাবিতে [[১৯৫৬|১৯৫৬-র]] ৭ মে ঢাকায় অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। সরকার দাবি মেনে নিলে ২৪ মে অনশন ভঙ্গ করেন। একই বছর ১২ সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে [[আওয়ামী লীগ-রিপাবলিকান পার্টির কোয়ালিশন সরকার]] গঠিত হলে মাওলানা ভাসানী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতা করে নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করার জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করেন।
 
১৯৫৬তে পাকিস্তান গণপরিষদে যে খসড়া শাসনতন্ত্র বিল পেশ করা হয় তাতে পাকিস্তানকে ইসলামিক রিপাবলিক বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল,তখন মওলানা ভাসানী পল্টনের জনসভায় তার বিরোধিতা করে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছিলেন৷<ref>সিরাজুল হোসেন খান, উপমহাদেশের সামাজিক রাজনৈতিক ইতিবৃত্ত, ঢাকা, ২০০২, পৃ ১১৯</ref>
কাগমারী সম্মেলনে [[১৯৫৭]] খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অণুষ্ঠিত হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি ডক্টর [[কাজী মোতাহার হোসেন|কাজী মোতাহার হোসেনের]] সভাপতিত্বে অণুষ্ঠানটি আরম্ভ হয়।<ref name=tds/> এই সভায় মওলানা ভাসানীও বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তিনি বলেন, পূর্ববাংলা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকদের দ্বারা শোষিত হতে থাকলে পূর্ববঙ্গবাসী তাদের সালামু ওআলায়কুম জানাতে বাধ্য হবে।<ref name=tds/> এছাড়া [[কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলন|কাগমারী সম্মেলনে]] ভাসানী [[পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি]] বাতিলের দাবি জানান। [[প্রধানমন্ত্রী]] [[হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী|সোহ্‌রাওয়ার্দী]] সেই দাবি প্রত্যাখান করলে ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। একই বছর ২৫ জুলাই তার নেতৃত্বে ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে '[[ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি]]' (ন্যাপ) গঠিত হয়। ন্যাপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভাসানী প্রকাশ্যে বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং এর পর থেকে সবসময় বাম ধারার রাজনীতির সাথেই সংশ্লিষ্ট ছিলেন।<ref name=ba/> ১৯৫৭-র ৭ অক্টোবর দেশে [[সামরিক শাসন]] জারি হলে [[আইয়ুব খান]] ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১২ অক্টোবর মওলানা ভাসানীকে কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকায় ৪ বছর ১০ মাস কারারুদ্ধ থাকেন।
 
=== ১৯৬০-১৯৬৯ ===
৫৬ নং লাইন:
== মৃত্যু ==
[[File:মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার.JPG|thumb|মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার]]
[[১৯৭৬]] খৃস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের [[নভেম্বর ১৭|১৭ই নভেম্বর]] [[ঢাকা মেডিকেল কলেজ]] হাসপাতালে এই দেশ বরেণ্য নেতা মৃত্যুবরণ করেন। তাকে [[টাঙ্গাইল জেলা|টাংগাইল জেলার]] [[টাঙ্গাইল সদর উপজেলা|সদর উপজেলার]] উত্তর-পশ্চিমে [[সন্তোষ, বাংলাদেশ|সন্তোষ]] নামক স্থানে পীর শাহজামান দীঘির পাশে সমাধিস্থ করা হয়। সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাযায় অংশগ্রহণ করে।
 
== সমাজ সংস্কার ==