নভেরা আহমেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্প্রসারণ
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৪৮ নং লাইন:
}}
 
'''নভেরা আহমেদ''' (মার্চ ২৯, ১৯৩৯–মে ৬, ২০১৫) ছিলেন একজন [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশী]] ভাস্কর। তিনি বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্যশিল্পের অন্যতম অগ্রদূত এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম বাংলাদেশী আধুনিক ভাস্কর।<ref name="নভেরা">{{সাময়িকী উদ্ধৃতি |লেখক=মেহবুব আহমেদ |তারিখ=জুলাই ২০১৪ |শিরোনাম=নভেরা – নতুন পথের দিশারী |ইউআরএল=http://www.shilpaoshilpi.com/?p=222 |সাময়িকী=[[শিল্পু ও শিল্পী]] |প্রকাশক= |খণ্ড=৩য় |সংখ্যা নং=৩য় |পাতাসমূহ= |সংগ্রহের-তারিখ=মে ০৮, ২০১৫}}</ref><ref name="Highlighting">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |লেখক= |তারিখ=জুলাই ১১, ২০১৩ |শিরোনাম=Highlighting Novera’s life and works |ইউআরএল=http://archive.thedailystar.net/beta2/news/highlighting-noveras-life-and-works/ |সংবাদপত্র=[[দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)|দ্য ডেইলি স্টার]] |অবস্থান=[[ঢাকা]] |সংগ্রহের-তারিখ=মে ০৮, ২০১৫}}</ref> ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে [[বাংলাদেশ সরকার]] তাকে [[একুশে পদক]] প্রদান করে।<ref>মাসিক উত্তরাধিকার, বাংলা একাডেমী, ঢাকা। পৌষ-১৪১৮।</ref> তিনি প্রায় ৪৫ বছর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্যারিসে বসবাস করেন।<ref name="চলে গেলেন"/>
 
== প্রাথমিক জীবন ==
নভেরার জন্ম বাংলাদেশের [[সুন্দরবন|সুন্দরবনে]] মার্চ ২৯, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে ।<ref name="oxford">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.oxfordreference.com/view/10.1093/acref/9780199923014.001.0001/acref-9780199923014-e-2715 |শিরোনাম=অক্সফোর্ড রেফারেন্স |ওয়েবসাইট=oxfordreference.com |প্রকাশক=[[অক্সফোর্ড]] |সংগ্রহের-তারিখ=মে ০৮, ২০১৫}}</ref> চাচা নাম রাখেন নভেরা। [[ফার্সি]] শব্দ ‘নভেরা’র অর্থ নবাগত, নতুন জন্ম। কর্মসূত্রে তার বাবা সৈয়দ আহমেদ কর্মরত ছিলেন সুন্দরবন অঞ্চলে। তবে পৈতৃক নিবাস [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] আসকারদিঘির উত্তর পাড়। পরবর্তীতে তার বাবা চাকরিসূত্রে কিছুকাল [[কলকাতা|কলকাতায়]] অবস্থার করায় নভেরার শৈশব কেটেছে কলকাতা শহরে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তিনি নাচ, গান শেখার পাশাপাশি মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরী (মডেলিং) করতেন।<ref name="নভেরা"/> তিনি কলকাতার [[লরেটা]] স্কুল থেকে প্রবেশিকা (ম্যাট্রিক) পাস করেন।<ref name="চলে গেলেন"/><ref name="প্যারিসে প্রদর্শনী"/><ref name="বিস্মৃত নভেরার"/>
 
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনাধীন [[ভারত বিভাগ|ভারত বিভাগের]] পর তারা [[পূর্ব পাকিস্তান|পূর্ব পাকিস্তানের]] (বর্তমান [[বাংলাদেশ]]) [[কুমিল্লা|কুমিল্লায়]] চলে আসেন। এ সময় নভেরা কুমিল্লার [[কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ|ভিক্টোরিয়া কলেজে]] ভর্তি হন। পিতার অবসরগ্রহণের পর তাদের পরিবার আদি নিবাস চট্টগ্রামে গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করে। এরপর [[চট্টগ্রাম কলেজ|চট্টগ্রাম কলেজে]] ভর্তি হন তিনি। পরবর্তী আইন শিক্ষার জন্য তাকে বাড়ি থেকে লন্ডনে পাঠানো হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে।খ্রিষ্টাব্দে। তবে শৈশব থেকেই নভেরার ইচ্ছা ছিল ভাস্কর্য করার; তাই তিনি সেখানে সিটি অ্যান্ড গিল্ডস্টোন কার্ভিং ক্লাসে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে ভর্তি হন [[ক্যাম্বারওয়েল কলেজ অব আর্টস|ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসে]] ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইনের মডেলিং ও স্কাল্পচার কোর্সে। সেখান পাঁচ বছর মেয়াদের ডিপ্লোমা কোর্স করার পর ১৯৫৫ সালে তিনি ইতালির [[ফ্লোরেন্স]] ও [[ভেনিস|ভেনিসে]] ভাস্কর্য বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন।<ref name="নভেরা"/><ref name="চলে গেলেন"/><ref name="প্যারিসে প্রদর্শনী"/><ref name="বিস্মৃত নভেরার"/>
 
== কর্মজীবন ==
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে নভেরা আহমেদ [[ফ্লোরেন্সে]] গমন করেন। সঙ্গে ছিলেন [[হামিদুর রহমান (চিত্রশিল্পী)|শিল্পী হামিদুর রহমান]]। প্রথমে তারা শিল্পী [[আমিনুল ইসলাম|আমিনুল ইসলামের]] আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং পরে তিনজন একত্রে একটি স্টুডিওতে উঠে যান। নভেরা প্রায় দুই মাস শুধু ঘুরে দেখলেন। ডক্টর ফোগেল [[ভেন্তুরিনো ভেন্তুরির]] নামে এক [[ইতালী|ইতালীয়]] শিল্পীর কাছে নভেরার পরিচিতি দিয়ে করে একটি চিঠি দিয়ে দিয়েছিলেন। এই শিল্পীর সাহচর্যে নভেরা [[দোনাতেল্লো|দোনাতেলো]] সহ প্রাচীন কয়েকজন শিল্পীর কাজের সঙ্গে পরিচিত হন এবং দু’মাস তার কাছে কাজ শেখেন। অতঃপর ফ্লোরেন্স থেকে ভেনিসে গেলেন নভেরা ও হামিদ এবং পরবর্কালে ভেনিস থেকে লন্ডন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দেই [[বড়দিন|ক্রিসমাসের]] ছুটিতে নভেরা ও হামিদ প্যারিসে [[রঁদার]] মিউজিয়াম দেখতে গিয়েছিলেন। ভাস্কর্যের ছাত্রী স্বভাবতই অত্যন্ত অভিভূত হয়েছিলেন রঁদার কাজ দেখে। <ref name="নভেরা"/>
 
===কাজের স্টাইল===
৬৭ নং লাইন:
নভেরা তার শিল্পকর্মে একঘেয়েমি কাটাতে পরবর্তীতে কতগুলো কাজে ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছিলেন। যেমন: নগ্ন নারী মুর্তি, লম্বা গ্রীবা ও মাথার এনাটমিতে বাংলাদেশের ‘কন্যা-পুতুলের’ আঙ্গিকের পাশাপাশি হাত-পা-শরীরের অবস্থান স্থাপনের ক্ষেত্রে [[মদীয়ানির]] ফর্ম ও ড্রইভের সুষমা, স্তন ও শরীরের উপস্থাপনায় মহেঞ্জোদারোর ‘বালিকা-মূর্তির’ প্রাচ্য অভিলাষকে একত্রিত করেছেন। অন্যদিকে প্লাস্টার অব প্যারিসে নির্মিত দু’টি ভাস্কর্যে মুখমন্ডল বহুলাংশে বাস্তবধর্মী, সামান্য [[গান্ধারা শিল্পধারায়]] প্রভাবিত। সম্ভবত এই মস্তক দু’টি বুদ্ধের মস্তকের অনুকরণে অণুকৃতি।
 
নভেরার বেশকিছু ভাস্কর্যে আবহমান বাংলার লোকজ আঙ্গিকের আভাস পাওয়া যায়। তবে লোকজ ফর্মের সাথে সেখানে পাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বয়ও বর্তমান। লোকজ [[টেপা পুতুলের]] ফর্মকে সরলীকৃত করে তাকে দক্ষতার সাথে বিশেষায়িত করেছেন তিনি। এভাবে ঐতিহ্যের সাথে পাশ্চাত্য শিক্ষার স্বার্থক ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা তার আধুনিক চিন্তার লক্ষণ। এক্ষেত্রে তার ভাস্কর্যগুলো আদলে তিনকোনা, চোখ ছিদ্র, লম্বা গ্রীবা অন্যতম বৈশিষ্ঠ্যবৈশিষ্ট্য হিসেবে আসে।
 
১৯৫৮তে সম্পন্ন ''পরিবার'' নামীয় কাজটিতে নভেরা গ্রামীণ একটি বিষয় ব্যবহার করেছেন – এখানে মানুষ ও গরুর পা এবং শরীর একীভূত হয়ে গেছে – এভাবেই গরুর ও মানুষ উভয়ের ওপর উভয়ের নির্ভরশীলতা বোঝানো হয়েছে। ভাস্কর্যটির কিছু কিছু অংশ বৃত্তাকারে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামের]] রেকিট অ্যান্ড কোলম্যান অফিস এবং ঢাকার [[বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন|অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের]] সামনের লনে নভেরার আরো দুটি কাজ আছে। কাজ দুটি আয়তনে তেমন বড় নয়, উচ্চতায় তিন ফুটের মতো। প্রথমটি অ্যাবস্ট্রাক্ট কাজ, দ্বিতীয়টি অ্যাবস্ট্রাকটেড মাতৃমূর্তি। ’৫৯ সালে নভেরা বার্মা (মিয়ানমার) গিয়েছিলেন বৌদ্ধমন্দির দেখার জন্য – সেখান থেকে ফিরে বুদ্ধের আসন বা পিস নামকরণে কয়েকটি কাজ করেছেন এবং কয়েকটি ফর্মে কাজটি করেছেন।<ref name="নভেরা"/>
 
== নির্মিত ভাস্কর্য ==
১৯৬১ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে ''অল পাকিস্তান পেইন্টিং অ্যান্ড স্কাল্পচার এক্সিবিশন'' আয়োজন হয়। সে সময়ে দশ বছর বয়সি একটি ছেলে ঘরের কাজে নভেরাকে সাহায্য করত। এই প্রদর্শনীর জন্য নভেরা তারই একটি আবক্ষমূর্তি তৈরি করলেন এবং নাম দিলেন ''[[চাইল্ড ফিলোসফার]]''। এই ভাস্কর্যের জন্য তিনি সেই প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন।<ref name="ফিরে দেখা"/> অবয়বধর্মী ভাস্কর্য ''[[এক্সট্রিমিনেটিং এঞ্জেল]]'', ছয় ফুটের অধিক উচ্চতাবিশিষ্ট স্টাইলাইজড ভাস্কর্যটিতে বিধৃত হয়েছে শকুনের শ্বাসরোধকারী একজন নারীর অবয়ব; নারীর হাতে অশুভ শক্তি ও মৃত্যুর পরাভবের প্রতীক।
 
তৎকালীন [[পাকিস্তান|পশ্চিম পাকিস্তানে]] ভাস্কর হিসেবে নিজের একটা দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন নভেরা। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের মধ্যে নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বেশ বড় আকারের; ৫ ফুট থেকে শুরু করে এমনকি ৭ ফুট ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতাবিশিষ্ট। একই বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত একাধিক ভাস্কর্যের মধ্যে ''পরিবার'' (১৯৫৮), ''যুগল'' (১৯৬৯), ''ইকারুস'' (১৯৬৯) ইত্যাদি কাজে মাধ্যমগত চাহিদার কারণেই অবয়বগুলি সরলীকৃত। ওয়েলডেড স্টিলের ''জেব্রা ক্রসিং'' (১৯৬৮), দুটি ''লুনাটিক টোটেম'' ইত্যাদির পাশাপাশি রয়েছে ব্রোঞ্জ মাধ্যমে তৈরি দন্ডায়মান অবয়ব। এছাড়া কয়েকটি রিলিফ ভাস্কর্য ও স্ক্রল। ''লুনাটিক টোটেম'' বা ''মেডিটেশন'' (১৯৬৮) এই দুটি ভাস্কর্যে শিল্পীর মরমি অনুভবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কোথাওবা রয়েছে আদিম ভাস্কর্যরীতি থেকে পরিগ্রহণ। তবে একেবারে ভিন্ন রীতির কাজও ছিল এই প্রদর্শনীতে। বস্ত্ততপক্ষে তেত্রিশটি শিল্পকর্মের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ এগারোটিই ছিল পরিত্যক্ত ভাস্কর্য। ইন্দোচীনে ভূপাতিত মার্কিন যুদ্ধবিমানের ভগ্নাবশেষ থেকে তৈরি।
 
২০১৫ খ্রিস্টাব্দখ্রিষ্টাব্দ অবধি বিস্তৃত দীর্ঘ জীবনের তুলনায় নভেরা আহমেদের শিল্পকর্মের সংখ্যা কম। ষাট দশকের শেষভাগের মধ্যেই তার যা কিছু সৃষ্টি ও নির্মাণ। ১৯৭৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্যারিসের স্বেচ্ছানির্বাসনের জীবন পরিধিতি তিনি খুবই কম কাজ করেছেন। এ সময় অবশ্য তিনি কিছু ছবি এঁকেছেন।
 
== অংকিত চিত্রকর্ম ==
১৯৭৩ থেকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দখ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্যারিসের স্বেচ্ছানির্বাসনের সময় তিনি বেশকিছু ছবি এঁকেছেন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পর ৪৩টি চিত্রকর্মের হদিশ পাওয়া গেছে।
 
=== সংগ্রহ ===
নভেরা আহমেদের কাজের সর্ববৃহৎ সংগ্রহ রয়েছে ঢাকাস্থ [[বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর]]। এছাড়া প্যারিসে তার স্বামী গেগ্ররী দ্য ব্রুনোর স্টুডিয়োতে ৯টি ভাষ্কর্য ও ৪৩টি অঙ্কিত চিত্র রয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের লবিতে দীর্ঘকাল রক্ষিত একটি ভাষ্কর্য ২০১৫’র শেষ ভাগে জাতীয় জাদুঘরে সংগ্রহ করা হয়। নভেরা আহমেদের ''পরিবার'' ও আরো একটি কাজ জাতীয় জাদুঘরের ৩৭ সংখ্যক গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হয়। ''পরিবার'' কাজটি ফার্মগটের কাছে জনাব এম আর খানের বাড়ীর উদ্যানে স্থাপিত ছিল যা ২০০১ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে জাতীয় জাদুঘর সংগ্রহ করে এবং ২০১৬র মধ্যভাগ অবধি জাদুঘরের উদ্যানে সংস্থাপিত রাখে। পরে প্রাকৃতিক ক্ষতি এড়ানোর জন্য তা জাদুঘরের মূল ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। চট্টগ্রামের [[রেকিট অ্যান্ড কোলম্যান]]-এর বাংলাদেশ কার্যালয়ে এবং ঢাকার [[বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন|অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের]] সামনের উদ্যানে নভেরার আরো দুটি কাজ সংস্থাপিত আছে।<ref name="নভেরা"/>
 
=== কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা এবং বিতর্ক ===
[[চিত্র:First Shaheed Minar 1952.jpg|thumb|240px|right|১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার যেটি পাকিস্তান পুলিশ ও আর্মি ভেঙে ফেলে।]]
 
শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে নভেরা দেশে ফিরে আসেন। সে সময়ে ঢাকায় [[কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার]] নির্মাণের উদ্যোগ চলছিল। ভাস্কর হামিদুর রহমানের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করেন। এতে নভেরা আহমেদ জড়িত হন। স্থির হয় যে হামিদুর রহমানের নকশায় নির্মিত শহীদ মিনারে নভেরার তৈরী কিছু ভাষ্কর্য সংস্থাপিত হবে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে সামরিক আইন জারী হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।<ref name="ফিরে দেখা"/> ফলস্বরূপ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য ভাষ্কর্য নির্মাণের কাজ নভেরা সম্পন্ন করার সুযোগ লাভ করেননি। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাতা হিসেবে তার নাম আর উচ্চারিত হয়নি। এ নিয়ে মৃদু বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই মনে করেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশাকারী হিসেবে নভেরার অবদান রয়েছে।<ref name="নভেরা"/><ref name="চলে গেলেন"/><ref>[শিল্প ও শিল্পী- চিত্রকলা ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক, ২য় বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর সংখ্যা]</ref> {{Cref2|গ}} {{Cref2|ঘ}}
 
১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে [[পূর্ব পাকিস্তান|পূর্ব পাকিস্তানের]] মুখ্যমন্ত্রী [[আতাউর রহমান খান]] শহীদ মিনারের পরিকল্পনা প্রণয়ন করার অনুরোধ করেন প্রধান প্রকৌশলী জব্বার এবং [[জয়নুল আবেদীন|জয়নুল আবেদিনকে]]। জব্বার সাহেবের অন্যতম সহকর্মী ছিলেন প্রকৌশলী শফিকুল হক, নভেরার বড় বোন কুমুম হকের স্বামী। শহীদ মিনারের নকশার জন্য কাগজে কোনো বিজ্ঞাপন হয়নি। জয়নুল আবেদিন সরাসরি হামিদকে বলেছিলেন স্কেচসহ মডেল পেশ করতে। জাঁ দেলোরা তখন সরকারের স্থাপত্যবিষয়ক উপদেষ্টা। হামিদুর রাহমান শহীদ মিনারের যে মডেল ও স্কেচ উপস্থাপন করেছিলেন দেলোরা তার স্তম্ভগুলোর মাপ পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন।
 
== প্রদর্শনী ==
৯৬ নং লাইন:
নভেরার দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালে ব্যাংককে। এই প্রদর্শনীটি ছিল ব্যাংককে ধাতব ভাস্কর্যের প্রথম মুক্তাঙ্গন প্রদর্শনী। এতে নভেরা ধাতব মাধ্যমে কিছু ভাস্কর্য প্রদর্শন করেন। [[ব্রোঞ্জ]] ছাড়াও এ-পর্বে নভেরা তার ভাস্কর্যের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন শিট মেটাল এবং ঝালাইকৃত বা ওয়েলডেড ও স্টেইনলেস স্টিল। ব্যাংকক আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের আয়োজনে প্রদর্শনী চলেছিল ১৯৭০ সালের ১৪ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত, ২৯ থানন সাথর্ন তাই, আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবনে। প্রদর্শনী আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন থাইল্যান্ডে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত রব, শিল্পাকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলংকারিক শিল্পকলা অনুষদের ডিন যুবরাজ ইয়াৎচাই চিত্রাবংস, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের ডিরেক্টর মাহমুদ-আল-হক। উদ্বোধন করেছিলেন শৌখিন চিত্রকর ও ভাস্কর যুবরাজ কারাবিক চক্রবন্ধু।
 
১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে জুলাই মাসে তার তৃতীয় একক প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল প্যারিসের [[রিভগেস]] গ্যালারিতে। সর্বশেষ ২০১৪ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে তার পূর্বাপর কাজের একশ দিনব্যাপী একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অবস্থানকালে ব্যাংককের আলিয়ঁস ও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস যৌথভাবে তার একটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ৪১ বছর পর ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি প্যারিসের গ্যালারি রিভগেসে নভেরা আহমেদের রেট্রোসপেকটিভ প্রদর্শনী শিল্পকর্মের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।<ref name="বিস্মৃত নভেরার">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |লেখক=রফি হক |তারিখ=মার্চ ০৭, ২০১৪ |শিরোনাম=বিস্মৃত নভেরার ফিরে আসা |ইউআরএল=http://www.jugantor.com/founding-special-issue/2014/03/07/75153 |সংবাদপত্র=[[দৈনিক যুগান্তর]] |অবস্থান=[[ঢাকা]] |সংগ্রহের-তারিখ=মে ০৮, ২০১৫}}</ref> প্রায় একশো দিন ব্যাপী (১৬ জানুয়ারি–২৬ এপ্রিল ২০১৪) প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে তার ১৯৬৯–২০১৪ কালপর্বের ৫১টি শিল্পকর্ম, যার মধ্যে রয়েছে ৪২টি চিত্রকর্ম ও নয়টি ভাস্কর্য।<ref name="প্যারিসে প্রদর্শনী">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |লেখক=আনা ইসলাম |তারিখ=জানুয়ারি ১৭, ২০১৪ |শিরোনাম=প্যারিসে নভেরার প্রদর্শনী |ইউআরএল=http://www.prothomalo.com/art-and-literature/article/124657/প্যারিসে-নভেরার-প্রদর্শনী |সংবাদপত্র=[[দৈনিক প্রথম আলো]] |অবস্থান=[[ঢাকা]] |সংগ্রহের-তারিখ=মে ০৭, ২০১৫ }}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=ফেব্রুয়ারি ২০১৯ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref>
 
২০১৫ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে [[বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর]] নভেরার জীবন ও আদ্যন্ত শিল্পকর্মের ওপর একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ৭ থেকে ১৯ অক্টোবর ২০১৫ এই দুই সপ্তাহব্যাপাী প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী চিত্রশালায়। এতে নভেরার ৩৫টি শিল্প কর্ম প্রদর্শিত হয়।
 
== পুরস্কার এবং স্বীকৃতি ==
১৯৬১ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে ভাস্কর হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি। ''ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব পেইন্টিং স্কাল্পচার এ্যান্ড গ্রাফিক আর্টস'' শিরোনমে এই প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া তার ছ’টি ভাস্কর্যের মধ্যে ''[[চাইল্ড ফিলোসফার]]'' নামে একটি ভাস্কর্য বেস্ট স্কাল্পচারে পুরস্কৃত হয়।<ref name="ফিরে দেখা"/>
 
পরে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা [[একুশে পদক|একুশে পদকে]] ভূষিত হয়েছেন।<ref name="চলে গেলেন"/> তাকে নিয়ে ''নভেরা'' (১৯৯৫) শিরোনামে জীবনী উপন্যাস রচনা করেছেন [[হাসনাত আবদুল হাই]]।<ref name="ফিরে দেখা">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |লেখক=মিলু শামস |তারিখ=জুলাই ২৯, ২০১২ |শিরোনাম=ফিরে দেখা নভেরা আহমেদ |ইউআরএল=http://oldsite.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=13&dd=2012-07-29&ni=104614 |সংবাদপত্র=[[দৈনিক জনকণ্ঠ]] |অবস্থান=[[ঢাকা]] |সংগ্রহের-তারিখ=মে ০৭, ২০১৫}}</ref> নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্য চিত্র ''নহন্যতে'' (১৯৯৯)। এক সময় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি হলের নামকরণ করা হয়েছিল "ভাস্কর নভেরা আহমেদ হল"। বর্তমানে [[বাংলা একাডেমী]]’র একটি হলের নাম ''নভেরা হল''।
 
তার ৮০ তম জন্মদিনে [[গুগল]] ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.google.com/doodles/novera-ahmeds-80th-birthday|শিরোনাম=Novera Ahmed's 80th Birthday|ওয়েবসাইট=www.google.com|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2019-03-29}}</ref>
 
== ব্যক্তিগত জীবন ==
স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে বসবাস করার সময় এক পুলিশ অফিসারের সাথে নভেরার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।<ref name="নভেরা"/><ref name="নভেরা=হাই">{{বই উদ্ধৃতি |লেখক=[[হাসনাত আব্দুল হাই]] |শিরোনাম=নভেরা আহমেদ |ইউআরএল= |সংগ্রহের-তারিখ= |ধরন= |সংস্করণ= |প্রকাশনার-তারিখ= |প্রকাশক= |অবস্থান=[[ঢাকা]] |ভাষা=[[বাংলা ভাষা|বাংলা]] |আইএসবিএন= |পাতা=৩৮৯ |অধ্যায়= |উক্তি= }}</ref> প্যারিসে অবস্থান কালে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে পঁয়তাল্লিশ বৎসর বয়সে তিনি গ্রেগরি দ্য বুনস (Gregoire de Brouhns) বিয়ে করেন। ২০১৫-এ মৃত্যু অবধি এই দম্পতি এক সঙ্গেই ছিলেন।
 
=== শেষ জীবন ===
১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে দেশ ত্যাগ করার পর প্যারিসে বসবাস কালে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন নভেরা, তবে বড় কোন আঘাত পাননি। মৃত্যু অবধি তিনি মানুষের সংসর্গ বাঁচিয়ে চলেছেন। রহস্যময় কারণে তিনি আর কখনো বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন নি। এমনকী বাঙ্গালী সংসর্গ এড়িয়ে চলেছেন। বাংলায় কথা বলতেও তার অনীহা ছিল প্রকট। কিন্তু ২০১০ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে [[স্ট্রোক|স্ট্রোকের]] ফলে হুইলচেয়ারে বসেই তার শেষ জীবন কাটে।<ref name="প্যারিসে প্রদর্শনী"/><ref name="বিস্মৃত নভেরার"/> ১৯৭৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে তার সৃষ্টি ও নির্মাণের সংখ্যা খুব কম।
 
=== মৃত্যু ===
২০১৪ থেকে নভেরা আহমেদ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দেরখ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। মৃত্যুর দুই দিন আগে তিনি কোমায় চলে যান। কয়েকদিন পর ৫ মে, মঙ্গলবার প্যারিসের স্থানীয় সময় ভোর তিনটা থেকে চারটার মধ্যে ৭৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।<ref name="চলে গেলেন">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |লেখক= |তারিখ=মে ০৭, ২০১৫ |শিরোনাম=চলে গেলেন নভেরা আহমেদ |ইউআরএল=http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/521584/চলে-গেলেন-নভেরা-আহমেদ |সংবাদপত্র=[[দৈনিক প্রথম আলো]] |অবস্থান=[[ঢাকা]] |সংগ্রহের-তারিখ=মে ০৭, ২০১৫}}</ref><ref name="আহমেদ মারা গেছেন">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |লেখক= |তারিখ=মে ৭, ২০১৫ |শিরোনাম=ভাস্কর নভেরা আহমেদ মারা গেছেন |ইউআরএল=http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2015/05/150507_rh_novera |সংবাদপত্র=[[বিবিসি বাংলা]] |অবস্থান= |সংগ্রহের-তারিখ=মে , ২০১৫}}</ref>
 
== চিত্রশালা ==