পীর গোরাচাঁদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
১ নং লাইন:
'''পীর গোরাচাঁদ''' বা '''হজরত পীর গোরাচাঁদ''' বা '''গোরাই পীর''' হলেন মধ্যযুগে [[ইসলাম ধর্ম]] প্রচারের উদ্দেশ্যে [[সৌদি আরব]] থেকে [[বঙ্গ|বাংলায়]] আগত এক [[সুফি]] সন্ত। চতুর্দশ শতকের গোড়ার দিকে গুরু [[শাহজালাল]]-এর নির্দেশে আরও একুশজন পীরভাইকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ বাংলার সাবেক [[২৪ পরগনা জেলা|চব্বিশ পরগণার]] (এখনকার [[উত্তর চব্বিশ পরগণা]]) বালাণ্ডা পরগনায় (এখনকার [[বেড়াচাঁপা]] ও [[বসিরহাট]] অঞ্চল) তিনি ধর্মপ্রচারে আসেন। লোককথা অনুসারে, অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন এই পীরের স্থানীয় হিন্দু রাজাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে এবং লড়াইয়ে তিনি নিহত হন। বসিরহাটের [[হাড়োয়া]]য় [[বিদ্যাধরী নদী]]র তীরে
==জন্ম-বৃত্তান্ত==
পীর গোরাচাঁদের আসল নাম হল পীর ''হজরত শাহ সৈয়দ আব্বাস আলী রাজী''।
গোরাচাঁদ (সৈয়দ আব্বাস আলী) ছোটবেলা থেকে খুবই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। আধ্যাত্মিক জীবনের উন্নতি সাধনের জন্য অতি অল্প বয়সেই তিনি গৃহত্যাগ করেন। এরপর হজরত [[শাহ জালাল|শাহ জালালের]] শিষ্যত্ব গ্রহণ করে পীরভ্রাতাদের সঙ্গে ভারতে [[ইসলাম ধর্ম]] প্রচারে আসতে মনস্থ করেন। পিতা করিমউল্লাহ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে সুদূর ভারতে ধর্মপ্রচারে যেতে দিতে রাজি হন; সঙ্গে নিজের পালকপুত্র মাহতাবউদ্দীনকে তার দেখাশুনার জন্য প্রেরণ করেন। <ref name=aa>Dr. Gaurishankar de & Prof. Subhradip de, Prasanga: Pratna-Prantar Chandraketugarh, First Edition: 2013, {{আইএসবিএন|978-93-82435-00-6}}</ref>
৯ নং লাইন:
[[শাহ জালাল]] ১২৯৭ খ্রিস্টাব্দের শেষে সশিষ্য তৎকালীন ভারত-রাজধানী [[দিল্লি]]তে উপস্থিত হন এবং ১২৯৮ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে তাদের নিয়ে [[বঙ্গ|বাংলার]] শ্রীহট্ট (বর্তমানে [[সিলেট]]) অভিমুখে রওনা হন। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বমোট ৩৬০ শিষ্যসহ শ্রীহট্টে পৌঁছে তিনি শিষ্যবর্গকে ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ করে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ইসলাম ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন।
বিভক্ত একটি দলের নেতৃত্বভার গ্রহণ করে গোরাচাঁদ ২১ জন পীরভ্রাতাকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ বাংলায় ধর্মপ্রচারে আসেন।
গোরাচাঁদ নিজে 'ভাটিমুল্লুক' বালাণ্ডা পরগনায় হাজির হন। মাহতাবউদ্দীন ওরফে শাহ সোন্দল গোরাচাঁদের মৃত্যুকাল পর্যন্ত সঙ্গে থাকলেও শেষপর্যন্ত 'খেলাফৎ' প্রাপ্ত হয়ে
[[উত্তর চব্বিশ পরগনা]]র [[বারাসাত মহকুমা]]র রায়কোলা নামক গ্রামে আজও "বাইশ আউলিয়ার দরগাহ" নামে একটি [[দরগাহ]] আছে। <ref name="aa"/>
১৭ নং লাইন:
লোককথা অনুসারে, তিনি দেউলিয়ার ('দেবালয়') হিন্দুরাজা চন্দ্রকেতুকে (যার নামে সম্পর্কীত [[চন্দ্রকেতুগড়]] প্রত্নস্থলটি আবিষ্কৃত হয়েছে) ইসলামধর্ম গ্রহণের অনুরোধ করলে রাজা তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তিনি একজন প্রকৃত পীর-ফকির কিনা তা পরীক্ষা করতে নানারকম কৌশল অবলম্বন করেন। গোরাচাঁদ নিজের অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয় দিতে রাজার লোহার কলাকে সত্যিকারের পাকা কলায় রূপান্তরিত করেন এবং রাজপ্রাসাদের চারিদিকে লোহার বেড়ায় চাঁপাফুল ফুটিয়ে তোলেন (যা থেকে পরবর্তীকালে ঐ স্থানের নাম হয় '[[বেড়াচাঁপা]]')। রাজা তাতেও নতি স্বীকার করলেন না। শেষে গোরাচাঁদের কথায় গৌড় বাদশাহ চন্দ্রকেতুকে ধর্মান্তরিত হওয়ার আদেশ দিলে বিরোধ চরমে ওঠে এবং যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
যুদ্ধের আগে রাজা
এরপর গোরাচাঁদ স্থানীয় অনেক লোকজনকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দিয়ে আরও দক্ষিণে অগ্রসর হন।<ref name=M/><ref name=Das>দাস, গিরীন্দ্রনাথ, বাংলা পীর-সাহিত্যের কথা, বারাসত, সাল ১৯৭৬</ref>
===অকানন্দ-বকানন্দের হাতে মৃত্যু===
সুন্দরবনের হাতিয়াগড় পরগনার [[শিব]]ভক্ত অনার্য রাজা মহিদানন্দের দুই পুত্র অকানন্দ (মতান্তরে অক্ষয়ানন্দ<ref name=M/>) ও বকানন্দ ([[বিনয় ঘোষ|বিনয় ঘোষের]] মতে, এরা ছিলেন স্থানীয় চাষী-ধীবরদের সর্দার<ref name=Ghosh/>) গোরাচাঁদের ধর্মান্তরকরণ অভিযান প্রতিরোধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধে পীরসাহেব ভীষণরকম আহত হন; প্রতিপক্ষের বাণাঘাতে
স্থানীয় ফকিরদের লোকায়ত গানে এই লড়াইয়ের বিবরণ পাওয়া যায়:
<poem>
৩৭ নং লাইন:
</poem>
অবশেষে, ১৩৪৫ খ্রীষ্টাব্দের ১২ ফাল্গুন প্রায় আশি বছর বয়সে বালাণ্ডা পরগনার ভার্গবপুরের জঙ্গলে অবসন্ন শরীরে মুমূর্ষু অবস্থায় এসে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শোনা যায়, কালু ঘোষ নামে এক ব্যক্তি নিজ গাভীর অনুসন্ধানে জঙ্গলে প্রবেশ করলে
==পীর গোরাচাঁদের দরগাহ ও নজরগাহ==
৪৩ নং লাইন:
[[File:Pir Gorachand Dargah Haroa Nameplate.jpg|thumb|220px|হাড়োয়ার পীর গোরাচাঁদের সমাধি দরগাহের নামফলক]]
বসিরহাটের হাড়োয়ায় পীর গোরাচাঁদের সমাধি দরগাহে ১২ই ফাল্গুন
ভাষাবিদ পণ্ডিত [[মুহম্মদ শহীদুল্লাহ]]-এর বাবা মাফিজুদ্দিন আহ্মেদ ছিলেন গোরাচাঁদের একজন সেবায়েত।
৫৭ নং লাইন:
===বিভিন্ন নজরগাহ বা স্মৃতিসৌধ===
* সেরপুরের দরগাহ (অশোকনগরের কাছে)।
* বারাসতের চন্দনহাটি গ্রামের পুরাতন তেঁতুলতলা (কথিত, গোরাচাঁদ
* বারাসতের কামদেবপুরের নজরগাহ (হিন্দু সেবায়েত নির্মিত পীরের স্মৃতিমন্দির বিদ্যমান)।
* হাসনাবাদ থানার অন্তর্গত খুড়র গ্রামের নজরগাহ।
|