মহাবিষুব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
১৪৩ নং লাইন:
|}
 
==তারামণ্ডল==
বছরে দুবার, মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাসে সূর্য বিষুবরেখা অতিক্রম করে থাকে। বিষুবরেখা একটি কাল্পনিক রেখা। একে অতিক্রমের সময় রেখাটির ওপর সরাসরি সূর্যের সবটুকু আলো পতিত হয় এবং তাই দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয়ে থাকে- প্রায় ১২ ঘণ্টামেয়াদি, ঠিক ১২ ঘণ্টা নয়। অথচ ল্যাটিন শব্দ ইকুইনক্সয়ের অর্থ সমমাপের রাত। মার্চ মাসে সূর্য যখন বিষুবরেখাকে অতিক্রম করে, তখন তাকে বলা হয় মহাবিষুব। একে বসন্তকালীন বিষুব, মার্চ বিষুব ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। আর সেপ্টেম্বর মাসের অতিক্রমকে বলা হয় জল বিষুব। এরও একাধিক নাম রয়েছে- হেমন্তকালীন বিষুব, সেপ্টেম্বর বিষুব ইত্যাদি। বিষুবরেখা যেহেতু পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ- দুই গোলার্ধে বিভক্ত করে রেখেছে, তাই বিষুবরেখার উত্তরে যখন মহাবিষুব, দক্ষিণে তখন জল বিষুব।
==তথ্যসূত্র==
২০১৫ সালে সার্বজনীন সমন্বিত সময় (ইউনিভার্সাল কো-অর্ডিনেটেড টাইম, সংক্ষেপে ইউটিসি) অনুযায়ী উত্তর গোলার্ধে বসন্তকালীন বা মহাবিষুব ঘটছে মার্চ মাসের ২০ তারিখে, সন্ধ্যা ১০টা ৪৫ মিনিটে। যেমন লন্ডনে ঠিক এ সময়টিতে সূর্য বিষুবরেখা অতিক্রম করছে। এ হিসাব মতো ঢাকা ও আমাদের কাছের প্রতিবেশী শহর কলকাতায় অতিক্রম করছে শনিবার ২১ মার্চ সকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে, ব্যাংককে ১ ঘণ্টা বাদে, আবার একই দেশ হলেও দিল্লিতে সকাল ৪টা ১৫ মিনিটে। ইউটিসির সময়মতো সূর্য শুক্রবার দিন বিষুবরেখা অতিক্রম করছে ৮০টি স্থানে এবং শনিবার দিন করছে ৬৫টি স্থানে (যুক্তরাষ্ট্র, মধ্য আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা উত্তর গোলার্ধের অন্তর্ভুক্ত)।
{{সূত্রতালিকা}}
পৃথিবী তার অক্ষরেখাকে কেন্দ্র করে (প্রায় ২৩.৫ ডিগ্রি কোণ করে) ঘোরার সময় সূর্যের চারদিকে ঘুরছে বা আবর্তিত হচ্ছে। এ আবর্তনের সময় সে কখনও বা সূর্যের দিকে সামান্য ঝুঁকে থাকে, আবার কখনও বা সূর্য থেকে সরে থাকে। কিন্তু মহাবিষুব ও জল বিষুবের সময়ে পৃথিবী সূর্যের দিকে ঝুঁকে বা সূর্য থেকে সরে থাকে না, থাকে উল্লম্বভাবে এবং সূর্য ঠিক যে মুহূর্তে কাল্পনিক বিষুবরেখাকে অতিক্রম করে, ঠিক সেই মুহূর্তটিতে গোলার্ধভেদে মহা ও জল বিষুব ঘটছে। বিষুবীয় মাস দুটি সব সময় ঠিক থাকছে; কিন্তু তারিখটি সুনির্দিষ্টভাবে নির্দিষ্ট থাকে না। যেমন মার্চ মাসের ১৯, ২০ বা ২১ তারিখে মহাবিষুব হতে পারে এবং ২০১৫ সালের মহাবিষুব হচ্ছে ২০ তারিখে।
আসলে দিন কতটুকু বড় হবে, সেটি নির্ধারণ করে অক্ষাংশ নামক বিষুব রেখাভিত্তিক কৌণিক দূরত্বটি। অর্থাৎ অক্ষাংশের উপর নির্ভর করছে বলে মহা ও জল বিষুবের সঠিক তারিখটিতে ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কয়েক সপ্তাহের এদিক ওদিক হয়ে অনেক প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হতে পারে এবং হয়েও থাকে। যেমন সূর্য যখন ৬০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে থাকে, তখন ১৮ মার্চ ও ২৫ সেপ্টেম্বর প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হচ্ছে। আবার ৫৫ ও ৫০ ডিগ্রিতে থাকাকালে ১৭ মার্চ ও ২৫ সেপ্টেম্বর প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হচ্ছে। ৪৫ ও ৪০ ডিগ্রিতে ১৭ মার্চ ও যথাক্রমে ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হয়।
এভাবে উত্তর অক্ষাংশের পরিমাণ কমতে থাকলে, যেমন ১০ ডিগ্রিতে, প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হয় ৮ মার্চ ও ৪ অক্টোবর। অথবা ৫ ডিগ্রিতে, প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হয় ২৪ ফেব্র“য়ারি ও ২৭ অক্টোবর। একইভাবে, দক্ষিণ অক্ষাংশের পরিণামের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হয়। যেমন সূর্য যখন ৫৫ ও ৫০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে থাকে, তখন ২৩ মার্চ ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হয়। বা ৪৫ ও ৪০ ডিগ্রিতে প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হয় ২৩ মার্চ ও ১৯ সেপ্টেম্বর। এভাবে ১০ ডিগ্রিতে প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি ঘটে ১ এপ্রিল ও ১০ সেপ্টেম্বর। এবং ৫ ডিগ্রিতে প্রায় সমমাপের দিন-রাত্রি হয় ১৪ এপ্রিল ও ২৯ আগস্ট। ঠিক বিষুবরেখা বরাবর, সারা বছরই দিন-রাতের দৈর্ঘ্য প্রায় সমমাপেরই থাকে, তবে সূর্যালোকের প্রতিসরণসহ আরও কিছু কারণে দিনের মাপটি সব সময়ই ১২ ঘণ্টার বেশি বলে মনে হয়।
বিষুবীয় দিনে কী হচ্ছে দেখা যাক। এ দিনটিতে সূর্যের জ্যামিতিক কেন্দ্র দিগন্তের ওপর ১২ ঘণ্টা স্থায়ী সময় অবস্থান করে। তাই হয়তো মনে হতেও পারে যে দিনের পরিমাণটুকুও একই হবে। কিন্তু চাকতি কাকার সূর্যের ঊর্ধ্বস্ত প্রান্তটি ঠিক যে মুহূর্তে দিগন্তের ওপর দৃশ্যমান হচ্ছে, আসলে সেটিই সূর্যোদয়। অর্থাৎ সূর্যের কেন্দ্র দৃশ্যমান হওয়াটি নয়। ঠিক একইভাবে, যে মুহূর্তে সূর্যের ঊর্ধ্বস্ত প্রান্তটি দিগন্তের নিচে তলিয়ে যায়, সেই মুহূর্তে সূর্যাস্ত হচ্ছে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত নামক ঘটনা দুটি ঘটার সময় সূর্যের কেন্দ্রটি দিগন্তের নিচে থাকে এবং তাই মহা বা জল বিষুবের দিনটি ১২ ঘণ্টার চেয়ে দীর্ঘ মনে হয়। আরও একটি কারণ রয়েছে- প্রতিসরণ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সূর্যালোককে প্রতিসরিত করে আমাদের দৃষ্টিবিভ্রম ঘটায়। সূর্যের ঊর্ধ্বস্ত প্রান্তটি দিগন্তের ওপর উঠে আসার কয়েক মিনিট আগেই প্রতিসরণের কারণে পৃথিবী থেকে সূর্যকে দেখা যায়। আবার সন্ধ্যাকালীন সূর্যাস্তের সময়ও, সূর্য ডুবে গেলেও কয়েক মিনিট সময় পর্যন্ত সূর্যকে আমরা দেখি। তাই মহা বা জল বিষুবের দিনটিকে সামান্য দীর্ঘ মনে হয়। সূর্যালোকের প্রতিসরণের ব্যাপ্তি নির্ভর করে থাকে বায়ুমণ্ডলের চাপ এবং তাপমাত্রার পরিমাণের ওপর। অবশ্য সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ের হিসাব-নিকাশ করতে, মান হিসেবে ১০১.৩২৫ কিলোপ্যাস্কাল বায়ুচাপ এবং ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ব্যবহার হয়।
এ বছরের মহাবিষুবীয় দিনটি আরেকটি কারণে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ২০ মার্চের দিনটিতে সুপারমুন বা মহা-চাঁদ সূর্যের পূর্ণ সূর্যগ্রহণ ঘটাচ্ছে। অমাবস্যার চাঁদ এবং পূর্ণিমার চাঁদ যখন পৃথিবীর খুব কাছে, যা অনুভূতে বা ইংরেজিতে পেরিজিতে চলে আসে, সেই চাঁদকে অমাবস্যার মহা-চাঁদ ও পূর্ণিমার মহা-চাঁদ বলা হয়। রিচার্ড নোলের দেয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী আমাদের পৃথিবী ও চাঁদের কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮৩৬ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে হলেই অনুভূত অমাবস্যা ও অনুভূত পূর্ণিমার চাঁদ মহা-চাঁদের মর্যাদা পায়। এ সংজ্ঞা অনুযায়ী ২০ মার্চের অমাবস্যার চাঁদটি ২০১৫ সালের তৃতীয় এবং সর্বশেষ অনুভূত চাঁদ তথা মহাচাঁদ এবং প্রথম মহাবিষুবীয় অমাবস্যা এবং এই শতাব্দীর প্রথম মহাবিষুবীয় পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। মাহাত্ম্যটি এখানেই।
২০ মার্চের অমাবস্যার আগমন ঘটবে ইউটিসি সময় অনুযায়ী সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে, অর্থাৎ ১৯ মার্চ ইউটিসি সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে চন্দ্র অনুভূতে (পেরিজী) পৌঁছানোর প্রায় ১৪ ঘণ্টা বাদে তার আগমন ঘটছে, চলে আসছে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে, বা সূর্যগ্রহণ ঘটানোর মধ্য দিয়ে। এ শতাব্দীতে, পরবর্তী মহাবিষুবীয় অমাবস্যার চাঁদে (ও মহা-চাঁদ) সূর্যগ্রহণ ঘটবে ২০৩৪ সালের ২০ মার্চ। শতাব্দীর বাকি দুই মহাবিষুবীয় সূর্যগ্রহণ ও মহা-চাঁদ দেখা দেবে ২০৫৩ ও ২০৭২ সালে। সূর্যগ্রহণ কেবল অমাবস্যার চাঁদেই সম্ভব; কিন্তু সব মহাবিষুবীয় অমাবস্যার চাঁদে সূর্যগ্রহণ হয় না। তাই যেমন ২০৯ বছরের চক্র অনুযায়ী ২২২৪ সালের ২০ মার্চ মহাবিষুব এবং অমাবস্যা দুই-ই একসঙ্গে ঘটবে; কিন্তু সূর্যগ্রহণ হবে না। অর্থাৎ সূর্যগ্রহণের গ্যারান্টি দিতে মহাবিষুব অক্ষম।
যা হোক, ২০১৫ সালের প্রথম মহাবিষুবীয় পূর্ণ সূর্যগ্রহণের শুরু হচ্ছে ইউটিসি সময় সকাল ৯টা ৯ মিনিটে। পূর্ণগ্রহণ দেখা যাবে প্রধানত যুক্তরাজ্য ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে। এর সামান্য দক্ষিণে ইউরোপ, উত্তর-পূর্ব এশিয়ার, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা, আটলান্টিক মহাসাগর, সুমেরু ইত্যাদি অঞ্চলে হবে আংশিক গ্রহণ। ভারতীয় উপমহাদেশ, চীনের বিরাট অংশ থাকছে গ্রহণের বাইরে।
মহাবিষুবের সঙ্গে বসন্তকালীন প্রচুর উৎসব জড়িত রয়েছে। যেমন- ইহুদিদের পাসোভার, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার বা বড়দিনের উৎসব।<ref>[https://www.jugantor.com/old/sub-editorial/2015/03/20/237532 মহবিষুব]</ref>
 
==মূলসূত্র==