লিজে মাইটনার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৩৪ নং লাইন:
<i>যারা ১৮৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন, পদার্থবিজ্ঞানের জন্য তাঁরা মূলত, পূর্বনির্ধারিত এবং এদের মধ্যে লিজে মাইটনারকে অবশ্যই গণনা করা হবে যদিও তিনি জন্মেছিলেন একটি ছোট্ট, কৌতূহলদ্দীপ্ত মেয়ে হিসেবে ১৮৭৮ সালের ৭ নভেম্বর অর্থাৎ যে সময়ে তার আসা উচিত ছিল সে সময়ের জন্য তিনি অপেক্ষা করতে পারেন নি।}}
[[চিত্র:Lise Meitner 1900.jpg|thumb|right|260px|১৯০০ খ্রিস্টাব্দে লিজে মাইটনার]]
বিংশ শতাব্দীর নারী বিজ্ঞানীদের মধ্যে [[মেরি কুরি|মেরি কুরির]] পরেই তাঁরতার নাম উচ্চারিত হয়ে থাকে। অবশ্য [[নোবেল পুরস্কার]] লাভের সৌভাগ্য তাঁরতার হয়নি যদিও তা তার প্রাপ্য ছিল। অটো হান এবং তিনি একসাথেই প্রায় সকল গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু নোবেল পান অটো হান একা। ইহুদি হওয়ার কারণে তাকে জার্মানিও ছাড়তে হয়েছিল। বিজ্ঞানের প্রতি অবদানের তুলনায় স্বীকৃত পেয়েছেন বেশ কম। অবশ্য [[আইইউপিএসি]] ১০৯ টি রাসায়নিক মৌলের একটিকে তার নামে নামাঙ্কিত করেছে: [[মাইটনারিয়াম]]।<ref>{{cite pmid|11206992}}</ref><ref>{{cite pmid|7014939}}</ref><ref>{{cite pmid|4573793}}</ref>
 
== জীবনী ==
৪০ নং লাইন:
লিজে মাইটনার [[অস্ট্রিয়া|অস্ট্রিয়ার]] রাজধানী [[ভিয়েনা|ভিয়েনাতে]] [[১৮৭৮]] খ্রিস্টাব্দের [[নভেম্বর ৭|৭ নভেম্বর]] জন্মগ্রহণ করেন।<ref name="Sime">[http://www.washingtonpost.com/wp-srv/style/longterm/books/chap1/lisemeitner.htm Sime, Ruth Lewin (1996) ''Lise Meitner: A Life in Physics''] (Series: ''California studies in the history of science'' volume 13) University of California Press, Berkeley, California, page 1, {{আইএসবিএন|0-520-08906-5}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.orlandoleibovitz.com/Lise_Meitner_and_Nuclear_Fission.html |শিরোনাম=Lise Meitner and Nuclear Fission |প্রকাশক=Orlandoleibovitz.com |তারিখ= |সংগ্রহের-তারিখ=9 April 2012}}</ref> ভিয়েনাতেই তার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। একই সাথে কিছু ব্যক্তিগত পড়াশোনা শেষে তিনি [[১৯০১]] সালে ভিয়েনাতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। [[১৯০২]] সাল থেকেই একাধারে [[পদার্থবিজ্ঞান]], [[রসায়ন]] এবং [[গণিত|গণিতশাস্ত্রের]] উপর বিস্তারিত পড়াশোনা শুরু করেন। এ সকল বিষয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন [[ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়|ভিয়েনা]] এবং [[বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়|বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে]]। পড়াশোনার ক্ষেত্রে সে সময় তার সহযোগী এবং শিক্ষক ছিলেন [[লুডভিগ বোল্ট্‌জম্যান]] এবং [[ফ্রাঞ্জ এক্সনার]]। এঁদের দুই জনের বাসও ছিল ভিয়েনাতে। [[১৯০৬]] সালে মাইটনার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তখন তার বয়স ছিল ২৮ বছর। তিনি দ্বিতীয় নারী যিনি জার্মানিতে এই ডিগ্রি অর্জন করে। প্রথম হলেন [[মারি ক্যুরি|মাদাম কুরি]] (মেরি কুরি)। [[১৯০৭]] খ্রিস্টাব্দে মাইটনারের শিক্ষক বোল্ট্‌জম্যান আত্মহত্যা করেন যা তার জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তখনই প্রথম অস্ট্রিয়া ত্যাগ করে জার্মানির [[বার্লিন|বার্লিনে]] চলে যান।
 
বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তার সাথে [[১৯০৭]] সালেরই ২৮ নভেম্বর তার সাথে জার্মান পরমাণু বিজ্ঞানী অটো হানের পরিচয় হয়। এখান থেকে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন [[এমিল ফিশার রাসায়নিক ইনস্টিটিউট|এমিল ফিশার রাসায়নিক ইনস্টিটিউটে]] যোগদানের মাধ্যমে। এই প্রতিষ্ঠানে হান এবং মাইটনার দীর্ঘ ৩০ বছর একসাথে একই বিষয়ের উপর গবেষণা করেছেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকলেও বন্ধুত্বের ঘাটতি ছিল না। রাজনৈতিক আগ্রাসনের কবলে পড়েই তাঁরাতারা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়ে হিসেবে বিজ্ঞানী মহলে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে নেয়া সহজ ছিল না। হান এক্ষেত্রে মাইটনারকে সহায়তা করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা এমিল ফিশার মানসিকভাবে বিজ্ঞান জগতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সহাবস্থানের বিষয়টিতে অভ্যস্ত না হলেও যথেষ্ট উদারতা প্রদর্শন করেছেন। আর প্লাংকের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফলেই মাইটনার অটো হানের কারপেন্টারি শপে কাজ করার অনুমতি পান। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের ছাত্রদের গবেষণাগারে প্রবেশের অধিকার তার ছিল না। অবিবাহিত এবং সুন্দরী হওয়ায় কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল তার উপস্থিতি ছাত্রদের গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটাবে। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিরাচরিত মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। মাইটনার তা মোটামুটি জয় করতে পেরেছিলেন বলা যায়।
 
=== কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটে ===
৪৮ নং লাইন:
 
=== বার্লিনে অধ্যাপনা ===
মাইটনার তাঁরতার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এ সময় তেজস্ক্রিয়তার অন্যতম প্রধান অংশ বিটা রশ্মির বর্ণালির উপর একটি গবেষণাপত্র জমা দেন। একই সাথে লাউয়ে সুইজারল্যান্ডের শিক্ষা অনুষদে একটি সুপারিশমূলক পত্র লিখে পাঠান যাতে তিনি মাইটনারকে পৃথিবীর একজন নেতৃস্থানীয় গবেষক বলে উল্লেখ করেন। তাই তাঁরতার যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে তিনি সুইজারল্যান্ডীয় শিক্ষা অনুষদকে অনুরোধ জানান। অবশেষে মাইটনার সেই শিক্ষা অনুষদে নিজের স্থান করে নিতে সমর্থ হন। এ সময়েই মূলত মাইটনারের একাডেমিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। তিনি [[১৯২৬]] সালে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং [[১৯৩৩]] সাল পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি গবেষণাও চলতে থাকে। [[১৯২৯]] সালে [[বিটা-বিলয়]] ধর্মের সূক্ষ্ম পরিমাপ করতে সমর্থ হন। এই আবিষ্কারটি বিশেষ গুরুত্বের দাবীদার, কারণ এর মাধ্যমেই তেজস্ক্রিয় নিউক্লীয় রুপান্তর চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়েছে।
 
[[১৯৩০]] সালের [[ডিসেম্বর ৪]] তারিখে জার্মানির টুবিঙ্গেনে [[হান্‌স গেইগার]] এবং লিজে মাইটনারের যৌথ উপস্থিতিতে তেজস্ক্রিয়তার উপর একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সুইজারল্যান্ডীয় পদার্থবিজ্ঞানী [[ভোল্‌ফগ্যাং পাউলি]] [[জুরিখ]] থেকে এসে আর এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন নি। কিন্তু তিনি একটি চিঠি পাঠান যাতে তিনি তেজস্ক্রিয়তার জগতে [[নিউট্রিনো]] নামক একটি নতুন বস্তুকণার উপস্থিতির চমকপ্রদ অনুসিদ্ধান্ত পেশ করেছিলেন। এই চিঠিটি পড়ে মাইটনার বিশেষ উৎসুক হয়ে ওঠেন এবং চিঠিটি অনেকদিন পর্যন্ত সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। এ সময় অটো হান বার্লিনে মাইটনারের তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ে তাদের আবিস্কার এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় বসেন। নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার তাগিদে তাঁরাতারা বেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ শুরু করেন। কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটের লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তারা তাদের বক্তৃতাগুলো পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতেন না। তাদের কাজের ধারাটিকে নিজেরা খুব উপভোগ করতেন। একই সাথে মাইটনার সফলভাবে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন। কিন্তু [[১৯৩৩]] সালে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। কারণ তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে তথা বংশের দিক দিয়ে বিশুদ্ধ [[আর্য]] ছিলেন না। আসলে এই সালেই [[এডল্‌ফ হিটলার]] জার্মানির চ্যান্সেলর হয় এবং হিটলারের কট্টর জাতীয়তাবাদ ও আর্য রক্তের পূজার কারণেই মিটনারসহ আরও অনেক বিজ্ঞানী ও শিক্ষককে তাদের কাজ ছেড়ে দিতে হয়।
 
=== জার্মানিতে শেষ দিনগুলি ===
অধ্যাপনা করতে না পারলেও গবেষণা কর্মে তিনি ছিলেন অটল। [[১৯৩৪]] সালে হানের সাথে মিলে [[ইউরেনিয়াম-উত্তর মৌল]] পৃথকীকরণের উপর কাজ করেন। এছাড়া কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউটের রসায়ন বিভাগেরও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অস্ট্রীয় হওয়ার কারণেও তাকে ভুগতে হয়েছে। সমাজবিদদের সাম্প্রদায়িক নীতিই ছিল এর কারণ। তার ওপর তিনি ছিলেন নারী। সব মিলিয়ে মাঝে মধ্যেই তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়েপড়তেন। [[১৯৩৬]] সালে ফন লাউয়ে, নোবেল কিমিটির কাছে প্রস্তাব করেন মাইটনার ও অটো হানকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার প্রদাণের জন্য। মাক্স প্লাঙ্কও এ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিলেন। লাউয়ের বিশ্বাস ছিল নোবেল পুরস্কার মাইটনারের জীবনে ভালো ফল বয়ে আনবে এবং তাঁরতার চারদিকে নিরাপত্তার একটি বেষ্টনী তৈরি করবে। নোবেল বিজয়ী মাইটনার হয়তো তাঁরতার জীবনকে নতুনভাবে আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করতে পারবে। মাইটনারও তাঁরতার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকু পরিশ্রম করতে চেষ্টা করেছেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যাঁতাকলে পড়ে অনেক কিছুই তাঁরতার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। [[১৯৩৭]] সালে কাইজার ভিলহেল্‌মের নতুন সভাপতি এবং কর্মকর্তাদের সাথেও মাইটনারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। একা নারী হয়েও সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছেন। কিন্তু অবশেষে তাকে নোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হয়। একই সময়ে তাঁকেতাকে জার্মানি ত্যাগেও বাধ্য করা হয়। তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তার ছিল না। তিনি তাই নতুন আবাসনের চিন্তা শুরু করেন। [[১৯৩৮]] সালে কমনওয়েল্‌থ অভ্যন্তরীন সচিবের কাছে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন পত্র প্রেরণ করেন। দীর্ঘ এক মাস পর পত্রের না-বোধক উত্তর আসে। এ কারণে দেশ ত্যাগ করে অন্য কোথাও স্থায়ী হতেও তার কষ্ট হয়। অনেক কষ্টে পরিশেষে দেশ ত্যাগ করেন। দেশত্যাগী মাইটনার প্রথমে [[নেদারল্যান্ড]] ও পরে [[সুইডেন|সুইডেনে]] যান। সুইডেনের রাজধানী [[স্টকহোম|স্টকহোমে]] অধ্যাপনা শুরু করার মাধ্যমে আবার কিছুটা স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করেন।
 
=== শেষ জীবন ===