রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
[পরীক্ষিত সংশোধন] | [পরীক্ষিত সংশোধন] |
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ সংশোধন |
|||
৮৬ নং লাইন:
{{রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পার্শ্বদণ্ড}}
'''রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর''' {{post-nominals|country=GBR|list=[[Fellows of The Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland|FRAS]]}} ({{IPA-bn|Rabīndranātha ṭhākura|lang|Tagor.ogg}}; (৭ই মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১)<ref name = datebirthdeath/> (২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২শে শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)<ref name = datebirthdeath>"সংক্ষিপ্ত রবীন্দ্র-বর্ষপঞ্জি", ''রবীন্দ্রজীবনকথা'', প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, [[আনন্দ পাবলিশার্স]], [[কলকাতা]], ১৩৮৮ ব. সংস্করণ, পৃ. ১৯১ ও ১৯৭</ref> ছিলেন অগ্রণী [[বাঙালি]] কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক।<ref>''সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ'', অধ্যাপক শুভঙ্কর চক্রবর্তী সম্পাদিত, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, ১৪১২ ব., পৃ. ৭</ref>
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [[কলকাতা|কলকাতার]] এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান [[ব্রাহ্মধর্ম|ব্রাহ্ম]] [[পিরালী ব্রাহ্মণ]] [[ঠাকুর পরিবার|পরিবারে]] জন্মগ্রহণ করেন।<ref name="Kumar_2003_2">{{citation |last1=Datta |first1=Pradip Kumar |title=Rabindranath Tagore's The Home and the World: A Critical Companion |year=2003 |publisher=Orient Longman |isbn=8-1782-4046-7 |chapter=Introduction |page=2 }}</ref><ref name="Kripalani_1971_2–3">{{citation |last1=Kripalani |first1=Krishna |title=Tagore: A Life |year=1971 |publisher=Orient Longman |isbn=8-1237-1959-0 |chapter=Ancestry |pages=2–3 }}</ref><ref name="Kripalani_1980_6,8">{{citation |last1=Kripalani |first1=Krishna |title=Dwarkanath Tagore |year=1980 |pages=6, 8 |edition=1st |reprint=2002 isbn=81-237-3488-3 }}</ref><ref name="Thompson_1926_12">{{harvnb|Thompson|1926|p=12}}</ref> বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই
রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা।<ref>''বঙ্গসাহিত্যাভিধান'', তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ৪৯-৫০</ref> রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক।<ref>''বঙ্গসাহিত্যাভিধান'', তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ৫০</ref> ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন
== জীবন ==
৯৭ নং লাইন:
==== শৈশব ও কৈশোর (১৮৬১ - ১৮৭৮) ====
[[চিত্র:Rabi16Gaganendra.JPG|thumb|220px|কিশোর রবীন্দ্রনাথ, ১৮৭৭; [[জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর|জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের]] স্কেচ অবলম্বনে [[গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর]] কর্তৃক অঙ্কিত]]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [[কলকাতা|কলকাতার]] [[জোড়াসাঁকো]] [[জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি|ঠাকুরবাড়িতে]] জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে।<ref name = sarbanajer8/> পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে।<ref name="Thompson_1926_20">{{harvnb|Thompson|1926|p=20}}</ref><ref>রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ''জীবনস্মৃতি'' (অধ্যায়: "ভৃত্যরাজক তন্ত্র"), বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, পৃ. ২১-২৪</ref> শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার [[ওরিয়েন্টাল সেমিনারি]], নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং [[সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুল|সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে]] কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন।<ref name = sarbanajer7>''সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ'', পৃ. ৭</ref> কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে
১৮৭৩ সালে এগারো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের [[উপনয়ন]] অনুষ্ঠিত হয়েছিল।<ref name = rabindrajibankatha191>''রবীন্দ্রজীবনকথা'', পৃ. ১৯১</ref> এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন।<ref name = rabindrajibankatha191/> প্রথমে
==== যৌবন (১৮৭৮-১৯০১) ====
[[চিত্র:Rabindranath-Tagore-Mrinalini-Devi-1883.jpg|thumb|220px|left|alt=Black-and-white photograph of a finely dressed man and woman: the man, smiling, stands akimbo behind a settle with a shawl draped over his shoulders and in Bengali formal wear. The woman, seated on the settle, is in elaborate Indian dress and shawl; she leans against a carved supporting a vase and flowing leaves.| স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, ১৮৮৩]]
১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে [[ইংল্যান্ড|ইংল্যান্ডে]] যান রবীন্দ্রনাথ।<ref name = rabindrajibankatha18-19>''রবীন্দ্রজীবনকথা'', পৃ. ১৮-১৯</ref> প্রথমে তিনি [[ব্রাইটন|ব্রাইটনের]] একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন।<ref name = rabindrajibankatha18-19/> ১৮৭৯ সালে [[ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন|ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে]] আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চার আকর্ষণে সেই পড়াশোনা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি।<ref name = rabindrajibankatha18-19/> ইংল্যান্ডে থাকাকালীন [[উইলিয়াম শেকসপিয়র|শেকসপিয়র]] ও [[ইংরেজি সাহিত্য|অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের]] রচনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। এই সময় তিনি বিশেষ মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন ''[[রিলিজিও মেদিচি]]'', ''[[কোরিওলেনাস]]'' এবং ''[[অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা]]''।<ref name="Thompson_1926_31">{{harvnb|Thompson|1926|p=31}}</ref> এই সময়
১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর (২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা [[মৃণালিনী দেবী|ভবতারিণীর]] সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়।<ref name = mrinalinidevi>"জীবনপঞ্জি: মৃণালিনী দেবী", ''চিঠিপত্র'', প্রথম খণ্ড, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ১৪০০ সং, পৃ. ১৭৯-৮১</ref> বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী (১৮৭৩–১৯০২ )।<ref name = mrinalinidevi/> রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর সন্তান ছিলেন পাঁচ জন: মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), [[রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর|রথীন্দ্রনাথ]] (১৮৮৮–১৯৬১), রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩), মীরা (১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭)।<ref name = mrinalinidevi/> এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে।<ref name="Dutta_1995_373">{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|p=373}}</ref>
১১১ নং লাইন:
[[চিত্র:Robi Kuthibari0002.JPG|thumb|220px|[[শিলাইদহ|শিলাইদহ কুঠিবাড়ি]], বর্তমান চিত্র]]
১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে [[নদিয়া জেলা|নদিয়া]] (নদিয়ার উক্ত অংশটি অধুনা [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[কুষ্টিয়া জেলা]]), [[পাবনা জেলা|পাবনা]] ও [[রাজশাহী জেলা]] এবং [[ওড়িশা|উড়িষ্যার]] জমিদারিগুলির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ।<ref>''শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ'', প্রমথনাথ বিশী, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৯৫ সংস্করণ, পৃ. ১৮</ref> কুষ্টিয়ার [[শিলাইদহ|শিলাইদহের]] কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। [[জমিদার]] রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে "পদ্মা" নামে একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাবর্গের কাছে খাজনা আদায় ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে যেতেন। গ্রামবাসীরাও
১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথের অপর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ''[[:s:মানসী|মানসী]]'' প্রকাশিত হয়। কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে
=== মধ্য জীবন (১৯০১–১৯৩২) ===
১২১ নং লাইন:
১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে [[শিলাইদহ]] ছেড়ে চলে আসেন [[বীরভূম জেলা|বীরভূম জেলার]] [[বোলপুর]] শহরের উপকণ্ঠে [[শান্তিনিকেতন|শান্তিনিকেতনে]]।<ref>''রবীন্দ্রজীবনকথা'', পৃ. ৫৬-৫৭</ref> এখানে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৮ সালে একটি আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটি ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।<ref>"শান্তিনিকেতন", প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, ''ভারতকোষ'', পঞ্চম খণ্ড, পৃ. ৪৭৮-৭৯</ref> আশ্রমের আম্রকুঞ্জ উদ্যানে একটি গ্রন্থাগার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চালু করলেন "[[বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়|ব্রহ্মবিদ্যালয়]]" বা "ব্রহ্মচর্যাশ্র" নামে একটি পরীক্ষামূলক স্কুল।<ref name="Dutta_1995_133">{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|p=133}}</ref> ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান।<ref>''রবীন্দ্রজীবনকথা'', পৃ. ৫৯-৬০</ref> এরপর ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কন্যা রেণুকা,<ref>''রবীন্দ্রজীবনকথা'', পৃ. ১৯৩</ref> ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর<ref name = rabindrajibankatha194>''রবীন্দ্রজীবনকথা'', পৃ. ১৯৪</ref> ও ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।<ref name = rabindrajibankatha194/>
এসবের মধ্যেই ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ [[বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)|বঙ্গভঙ্গ]]-বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন।<ref>''রবীন্দ্রজীবনকথা'', পৃ. ৬৩-৬৬</ref> ১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ
এই সময় শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে অর্থসংকট তীব্র হয়ে ওঠে। পাশাপাশি পুত্র ও জামাতার বিদেশে পড়াশোনার ব্যয়ভারও রবীন্দ্রনাথকে বহন করতে হয়।<ref name = rabindrajibankatha69/> এমতাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীর গয়না ও পুরীর বসতবাড়িটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন।<ref name="Dutta_1995_139-140">{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|pp=139–140}}</ref>
ইতোমধ্যেই অবশ্য বাংলা ও বহির্বঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯০১ সালে ''[[:s:নৈবেদ্য|নৈবেদ্য]]'' ও ১৯০৬ সালে ''[[:s:খেয়া|খেয়া]]'' কাব্যগ্রন্থের পর ১৯১০ সালে
১৯২১ সালে [[শান্তিনিকেতন|শান্তিনিকেতনের]] অদূরে [[সুরুল]] গ্রামে মার্কিন কৃষি-অর্থনীতিবিদ লেনার্ড নাইট এলমহার্স্ট, [[রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] এবং শান্তিনিকেতনের আরও কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রের সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ "[[শ্রীনিকেতন|পল্লীসংগঠন কেন্দ্র]]" নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।<ref name = srinikatanergorarkatha>''শ্রীনিকেতনের গোড়ার কথা'', সত্যদাস চক্রবর্তী, সুবর্ণরেখা, কলকাতা, ২০০১, পৃ. ২-১২</ref> এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল কৃষির উন্নতিসাধন, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগ নিবারণ, সমবায় প্রথায় ধর্মগোলা স্থাপন, চিকিৎসার সুব্যবস্থা এবং সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি করা।<ref name = srinikatanergorarkatha/> ১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথ এই সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখেন "[[শ্রীনিকেতন]]"।<ref>অনাথনাথ দাস, ''শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন: সংক্ষিপ্ত পরিচয়'', আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৮৮, পৃ. ৫৩</ref> শ্রীনিকেতন ছিল [[মহাত্মা গান্ধী|মহাত্মা গান্ধীর]] প্রতীক ও প্রতিবাদসর্বস্ব স্বরাজ আন্দোলনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীর আন্দোলনের পন্থা-বিরোধী ছিলেন।<ref name="Dutta_1995_239-240">{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|pp=239–240}}</ref> পরবর্তীকালে দেশ ও বিদেশের একাধিক বিশেষজ্ঞ, দাতা ও অন্যান্য পদাধিকারীরা শ্রীনিকেতনের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য পাঠিয়েছিলেন।<ref name="Dutta_1995_242">{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|p=242}}</ref><ref name="Dutta_1995_308-309">{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|pp=308–309}}</ref>
১৩৫ নং লাইন:
[[চিত্র:Bundesarchiv Bild 102-01073, Rabindranath Tagore.jpg|thumb|right|alt=An old bearded man garbed in a dark mantle is reading from a slim book perched in his hands. He is sitting at a dark-toned desk cleared of everything but a neat stack of papers at left; in the background is a light-coloured curtain.|১৯৩০ সালে বার্লিনে রবীন্দ্রনাথ]]
জীবনের শেষ দশকে (১৯৩২-১৯৪১) রবীন্দ্রনাথের মোট পঞ্চাশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।<ref>''রবীন্দ্রজীবনকথা'', পৃ. ২০৬-০৮</ref>
জীবনের এই পর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্রতম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ [[বিহার]] প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে গান্ধীজি "ঈশ্বরের রোষ" বলে অভিহিত করলে, রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজির এহেন বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে
জীবনের শেষ চার বছর ছিল
== বিশ্বভ্রমণ ==
{{মূল নিবন্ধ|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রমণ}}
[[চিত্র:Einstein and Tagore Berlin 14 July 1930.jpg|thumb|alt=A moustached man in a lounge suit and necktie (left) sits next to a white-haired, bearded man dressed in robes (right). Both look toward the camera.|আইনস্টাইনের সঙ্গে, ১৯৩০]]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট বারো বার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন।<ref name = sarbajaner20-22>''সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ'', পৃ. ২০-২২</ref> ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন।<ref name=Dutta_1995_374-376>Dutta & Robinson 1995, pp. 374–376</ref> প্রথম জীবনে দুই বার (১৮৭৮ ও ১৮৯০ সালে) তিনি [[ইংল্যান্ড|ইংল্যান্ডে]] গিয়েছিলেন।<ref name = sarbajaner20-22/> ১৯১২ সালে ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য তৃতীয়বার ইংল্যান্ডে গিয়ে [[উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস|ইয়েটস]] প্রমুখ কয়েকজন ইংরেজ কবি ও বুদ্ধিজীবীদের কাছে সদ্যরচিত ''[[গীতাঞ্জলি]]'' কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করে শোনান।<ref name = sarbajaner20-22/> কবিতাগুলি শুনে
[[চিত্র:Tagore Iran.jpg|thumb|left|alt=Group shot of dozens of people assembled at the entrance of an imposing building; two columns in view. All subjects face the camera. All but two are dressed in lounge suits: a woman at front-center wears light-coloured Persian garb; the man to her left, first row, wears a white beard and dark-coloured oriental cap and robes.|তেহরানের [[ইরানের মজলিশ|মজলিশে]], ১৯৩২<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.flickr.com/photos/nima_flickr/125239520/in/set-909995/ |শিরোনাম=Photo of Tagore in Shiraz |অবস্থান=29.616445; 52.542114 |প্রকাশক=Flickr.com |তারিখ= |সংগ্রহের-তারিখ=2010-03-20}}</ref>]]
১৯২৭ সালে [[সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়]]সহ চার সঙ্গীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ গিয়েছিলেন [[দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া]] সফরে। এই সময় তিনি ভ্রমণ করেন বালি, [[জাভা দ্বীপ|জাভা]], [[কুয়ালালামপুর]], [[মালাক্কা]], [[পেনাং]], [[সিয়াম]] ও [[সিঙ্গাপুর]]।<ref name=Chakravarty_1961_1>Chakravarty 1961, p. 1</ref> ১৯৩০ সালে কবি শেষবার ইংল্যান্ডে যান [[অক্সফোর্ড|অক্সফোর্ডে]] হিবার্ট বক্তৃতা দেওয়ার জন্য।<ref name = sarbajaner20-22/> এরপর তিনি ভ্রমণ করেন [[ফ্রান্স]], [[জার্মানি]], [[সুইজারল্যান্ড]], [[সোভিয়েত রাশিয়া]] ও [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র]]।<ref name=Dutta_1995_289-292>Dutta & Robinson 1995, pp. 289–292</ref><ref name=Dutta_1995_303-304>Dutta & Robinson 1995, pp. 303–304</ref><ref name=Dutta_1995_292-293>Dutta & Robinson 1995, pp. 292–293</ref> ১৯৩২ সালে [[ইরাক]] ও [[ইরান|পারস্য]] ভ্রমণে গিয়েছিলেন কবি।<ref name = sarbajaner20-22/> এরপর ১৯৩৪ সালে [[শ্রীলঙ্কা|সিংহলে]] যান রবীন্দ্রনাথ। এটিই ছিল
রবীন্দ্রনাথ যেসকল বইতে
== সৃষ্টিকর্ম ==
{{মূল|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম}}
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত এক কবি। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কাব্যরচনা শুরু করেন।
=== কবিতা ===
[[চিত্র:Tagore handwriting Bengali.jpg|thumb|left|alt=Three-verse handwritten composition; each verse has original Bengali with English-language translation below: "My fancies are fireflies: specks of living light twinkling in the dark. The same voice murmurs in these desultory lines, which is born in wayside pansies letting hasty glances pass by. The butterfly does not count years but moments, and therefore has enough time."|220px| কবির হস্তাক্ষরে কবিতা, হাঙ্গেরিতে লিখিত, ১৯২৬: বাংলা ও ইংরেজিতে]]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জীবনে ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তীর (১৮৩৫-১৮৯৪) অনুসারী কবি।<ref>"বিহারীলাল ও রবীন্দ্রনাথ", অলোক রায় সম্পাদিত বিহারীলাল চক্রবর্তীর ''সারদামঙ্গল ও সাধের আসন'', পৃ. ৫৫-৫৬</ref>
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় মধ্যযুগীয় [[বৈষ্ণব পদাবলি]], [[উপনিষদ্]], [[কবীর|কবীরের]] দোঁহাবলি, [[লালন|লালনের]] বাউল গান ও [[রামপ্রসাদ সেন|রামপ্রসাদ সেনের]] শাক্ত পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব লক্ষিত হয়।<ref name=Roy_1977_201>Roy 1977, p. 201</ref><ref name=Stewart_2003_94>Stewart & Twichell 2003, p. 94</ref><ref name=Urban_2001_18>Urban 2001, p. 18</ref> তবে প্রাচীন সাহিত্যের দুরূহতার পরিবর্তে তিনি এক সহজ ও সরস কাব্যরচনার আঙ্গিক গ্রহণ করেছিলেন। আবার ১৯৩০-এর দশকে কিছু পরীক্ষামূলক লেখালেখির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা ও বাস্তবতাবোধের প্রাথমিক আবির্ভাব প্রসঙ্গে নিজ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছিলেন কবি।<ref name=Dutta_1995_281>Dutta & Robinson 1995, p. 281</ref> বহির্বিশ্বে
=== ছোটগল্প ===
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার।<ref>''বাংলা সাহিত্য পরিচয়'', ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তুলসী প্রকাশনী, কলকাতা, ২০০৮, পৃ. ৫১২</ref><ref>''ছোটগল্পের কথা'', ভূদেব চৌধুরী, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, পৃ. ২০০০ মুদ্রণ, পৃ. ৫৬</ref> মূলত ''হিতবাদী'', ''সাধনা'', ''ভারতী'', ''সবুজ পত্র'' প্রভৃতি মাসিক পত্রিকাগুলির চাহিদা মেটাতে তিনি
রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র, নাটক ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মিত হয়েছে।
=== উপন্যাস ===
[[চিত্র:Rabindranath Tagore Ra-Tha seal initials.jpg|thumb|left|alt=Black-and-white close-up photograph of a piece of wood boldly painted in unmixed solid strokes of black and white in a stylized semblance to "ra" and "tha" from the Bengali syllabary.|220px| কাঠের সিলে খোদিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের আদ্যক্ষরদ্বয় ("র-ঠ")। প্রাচীন [[হাইদা]] খোদাই লিপির সঙ্গে এর শৈলীগত মিল লক্ষণীয়। রবীন্দ্রনাথ প্রায়ই তাঁর পাণ্ডুলিপিগুলিতে এই ধরণের নকশা অঙ্কন করতেন।<ref name="Dyson_2001">{{citation |last1=Dyson |first1=KK |year=2001 |month=July |day=15 |title=Rabindranath Tagore and his World of Colours |journal=Parabaas |url=http://www.parabaas.com/rabindranath/articles/pKetaki2.html |accessdate=13 August 2009 }}</ref>]]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট তেরোটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন।<ref name = sarbajaner30-31/> এগুলি হল: ''বৌ-ঠাকুরাণীর হাট'' (১৮৮৩), ''[[রাজর্ষি]]'' (১৮৮৭), ''চোখের বালি'' (১৯০৩), ''নৌকাডুবি'' (১৯০৬), ''প্রজাপতির নির্বন্ধ'' (১৯০৮), ''গোরা'' (১৯১০), ''ঘরে বাইরে'' (১৯১৬), ''চতুরঙ্গ'' (১৯১৬), ''যোগাযোগ'' (১৯২৯), ''শেষের কবিতা'' (১৯২৯), ''দুই বোন'' (১৯৩৩), ''মালঞ্চ'' (১৯৩৪) ও ''চার অধ্যায়'' (১৯৩৪)।<ref name = sarbajaner30-31/> ''বৌ-ঠাকুরাণীর হাট'' ও ''রাজর্ষি'' ঐতিহাসিক উপন্যাস। এদুটি রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস রচনার প্রচেষ্টা।<ref name = sarbajaner30-31/> এরপর থেকে ছোটগল্পের মতো
''চোখের বালি'' উপন্যাসে দেখানো হয়েছে সমসাময়িককালে বিধবাদের জীবনের নানা সমস্যা।<ref name = sarbajaner30-31/> ''নৌকাডুবি'' উপন্যাসটি আবার লেখা হয়েছে জটিল পারিবারিক সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করে।<ref name = sarbajaner30-31/> ''গোরা'' রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।<ref name = sarbajaner30-31/> এই উপন্যাসে দেখানো হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের হিন্দু ও ব্রাহ্মসমাজের সংঘাত ও ভারতের তদানীন্তন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলি।<ref name = sarbajaner30-31/> ''ঘরে বাইরে'' উপন্যাসের বিষয়বস্তু ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের জটিলতা।<ref name="Mukherjee_2004">{{citation |last1=Mukherjee |first1=M |year=2004 |month=March |day=25 |title=Yogayog (Nexus) by Rabindranath Tagore: A Book Review |journal=Parabaas |url=http://www.parabaas.com/rabindranath/articles/brMeenakshi.html |accessdate=13 August 2009 }}</ref><ref name="Dutta_1995_154-155">{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|pp=154–155}}</ref><ref name="Dutta_1995_192-194">{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|pp=192–194}}</ref> স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জটিলতা আরও সূক্ষ্মভাবে উঠে এসেছে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য [[সত্যজিৎ রায়|সত্যজিৎ রায়ের]] ''[[ঘরে বাইরে (চলচ্চিত্র)|ঘরে বাইরে]]''<ref>''সত্যজিৎ রায়: তথ্যপঞ্জি'', পৃ. ৩০</ref> ও [[ঋতুপর্ণ ঘোষ|ঋতুপর্ণ ঘোষের]] ''[[চোখের বালি]]''।
=== প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্য ===
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন।<ref name = sarbajaner32>''সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ'', পৃ. ৩২</ref> এইসব প্রবন্ধে তিনি সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন।<ref name = sarbajaner32/> রবীন্দ্রনাথের সমাজচিন্তামূলক প্রবন্ধগুলি ''সমাজ'' (১৯০৮) সংকলনে সংকলিত হয়েছে।<ref name = sarbajaner32/> রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সময়ে লেখা রাজনীতি-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি সংকলিত হয়েছে ''কালান্তর'' (১৯৩৭) সংকলনে।<ref name = sarbajaner32/> রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও আধ্যাত্মিক অভিভাষণগুলি সংকলিত হয়েছে ''ধর্ম'' (১৯০৯) ও ''শান্তিনিকেতন'' (১৯০৯-১৬) অভিভাষণমালায়।<ref name = sarbajaner32/> রবীন্দ্রনাথের ইতিহাস-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি স্থান পেয়েছে ''ভারতবর্ষ'' (১৯০৬), ''ইতিহাস'' (১৯৫৫) ইত্যাদি গ্রন্থে।<ref name = sarbajaner32/> ''সাহিত্য'' (১৯০৭), ''সাহিত্যের পথে'' (১৯৩৬) ও ''সাহিত্যের স্বরূপ'' (১৯৪৩) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যতত্ত্ব আলোচনা করেছেন।<ref name = sarbajaner32/> রবীন্দ্রনাথ ধ্রুপদি ভারতীয় সাহিত্য ও আধুনিক সাহিত্যের সমালোচনা করেছেন যথাক্রমে ''প্রাচীন সাহিত্য'' (১৯০৭) ও ''আধুনিক সাহিত্য'' (১৯০৭) গ্রন্থদুটিতে।<ref name = sarbajaner32/> ''লোকসাহিত্য'' (১৯০৭) প্রবন্ধমালায় তিনি আলোচনা করেছেন বাংলা লোকসাহিত্যের প্রকৃতি।<ref name = sarbajaner32/> ভাষাতত্ত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা লিপিবদ্ধ রয়েছে ''শব্দতত্ত্ব'' (১৯০৯), ''বাংলা ভাষা পরিচয়'' (১৯৩৮) ইত্যাদি গ্রন্থে।<ref name = sarbajaner32/> ছন্দ ও সংগীত নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন যথাক্রমে ''ছন্দ'' (১৯৩৬) ও ''সংগীতচিন্তা'' (১৯৬৬) গ্রন্থে।<ref name = sarbajaner32/> বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক পত্রসাহিত্য আজ পর্যন্ত উনিশটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।<ref name = sarbajaner34-35/> এছাড়া ''ছিন্নপত্র'' ও ''ছিন্নপত্রাবলী'' (ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে লেখা), ''ভানুসিংহের পত্রাবলী'' (রানু অধিকারীকে (মুখোপাধ্যায়) লেখা) ও ''পথে ও পথের প্রান্তে'' (নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা) বই তিনটি রবীন্দ্রনাথের তিনটি উল্লেখযোগ্য পত্রসংকলন।<ref name = sarbajaner34-35/>
১৮৫ নং লাইন:
=== নাট্যসাহিত্য ===
[[চিত্র:Balmiki Pratibha Barisha Udayan Palli 2010 Arnab Dutta.JPG|thumb|250px|''বাল্মীকি-প্রতিভা'' নাটকের দৃশ্য, কলকাতার একটি দুর্গাপূজা মণ্ডপের দেওয়ালচিত্রে]]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা।<ref name = sarbajaner26-27>''সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ'', পৃ. ২৬-২৭</ref> [[জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি|জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির]] পারিবারিক নাট্যমঞ্চে মাত্র ষোলো বছর বয়সে অগ্রজ [[জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর]] রচিত ''হঠাৎ নবাব'' নাটকে (মলিয়ের ''লা বুর্জোয়া জাঁতিরোম'' অবলম্বনে রচিত) <ref name="Lago_1976_15">{{citation |last1=Lago |first1=M |title=Rabindranath Tagore |series=Twayne's world authors series |year=1976 |volume=402 |publisher=Twayne Publishers |isbn=0-8057-6242-6 |page=15 }}</ref> ও পরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই ''অলীকবাবু'' নাটকে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।<ref name = sarbajaner26-27/> ১৮৮১ সালে
গীতিনাট্য রচনার পর রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি কাব্যনাট্য রচনা করেন।<ref name = sarbajaner26-27/><ref name = bangalasahityeritihas192/> [[উইলিয়াম শেকসপিয়র|শেকসপিয়রীয়]] পঞ্চাঙ্ক রীতিতে রচিত
কাব্যনাট্যের পর রবীন্দ্রনাথ প্রহসন রচনায় মনোনিবেশ করেন।<ref name = sarbajaner26-27/> এই পর্বে প্রকাশিত হয় ''গোড়ায় গলদ'' (১৮৯২), ''বৈকুণ্ঠের খাতা'' (১৮৯৭), ''হাস্যকৌতুক'' (১৯০৭) ও ''ব্যঙ্গকৌতুক'' (১৯০৭)।<ref name = sarbajaner26-27/> ''বৈকুণ্ঠের খাতা'' নাটকে রবীন্দ্রনাথ কেদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।<ref name = sarbajaner26-27/> ১৯২৬ সালে তিনি ''প্রজাপতির নির্বন্ধ'' উপন্যাসটিকেও ''চিরকুমার সভা'' নামে একটি প্রহসনমূলক নাটকের রূপ দেন।<ref name = sarbajaner26-27/><ref>''বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস'', পৃ. ২০৮-০৯</ref>
১৯৫ নং লাইন:
১৯০৮ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ রূপক-সাংকেতিক তত্ত্বধর্মী নাট্যরচনা শুরু করেন।<ref name = sarbajaner26-27/> ইতিপূর্বে ''প্রকৃতির প্রতিশোধ'' (১৮৮৪) নাটকে তিনি কিছুটা রূপক-সাংকেতিক আঙ্গিক ব্যবহার করেছিলেন।<ref name = sarbajaner26-27/> কিন্তু ১৯০৮ সালের পর থেকে একের পর এক নাটক তিনি এই আঙ্গিকে লিখতে শুরু করেন।<ref name = sarbajaner26-27/> এই নাটকগুলি হল: ''শারদোৎসব'' (১৯০৮), ''রাজা'' (১৯১০), ''ডাকঘর'' (১৯১২), ''অচলায়তন'' (১৯১২), ''ফাল্গুনী'' (১৯১৬), ''মুক্তধারা'' (১৯২২), ''রক্তকরবী'' (১৯২৬), ''তাসের দেশ'' (১৯৩৩), ''কালের যাত্রা'' (১৯৩২) ইত্যাদি।<ref name = sarbajaner26-27/> এই সময় রবীন্দ্রনাথ প্রধানত শান্তিনিকেতনে মঞ্চ তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অভিনয়ের দল গড়ে মঞ্চস্থ করতেন।<ref name = sarbajaner26-27/> কখনও কখনও কলকাতায় গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করতেন তিনি।<ref name = sarbajaner26-27/> এই সব নাটকেও একাধিক চরিত্রে অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ।<ref name = sarbajaner26-27/> তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ১৯১১ সালে ''শারদোৎসব'' নাটকে সন্ন্যাসী এবং ''রাজা'' নাটকে রাজা ও ঠাকুরদাদার যুগ্ম ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৪ সালে ''অচলায়তন'' নাটকে অদীনপুণ্যের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৫ সালে ''ফাল্গুনী'' নাটকে অন্ধ বাউলের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৭ সালে ''ডাকঘর'' নাটকে ঠাকুরদা, প্রহরী ও বাউলের ভূমিকায় অভিনয়।<ref name = sarbajaner26-27/> নাট্যরচনার পাশাপাশি এই পর্বে ছাত্রছাত্রীদের অভিনয়ের প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথ পুরোন নাটকগুলি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ করে নতুন নামে প্রকাশ করেন।<ref name = sarbajaner26-27/> ''শারদোৎসব'' নাটকটি হয় ''ঋণশোধ'' (১৯২১), ''রাজা'' হয় ''অরূপরতন'' (১৯২০), ''অচলায়তন'' হয় ''গুরু'' (১৯১৮), ''গোড়ায় গলদ'' হয় ''শেষরক্ষা'' (১৯২৮), ''রাজা ও রাণী'' হয় ''তপতী'' (১৯২৯) এবং ''প্রায়শ্চিত্ত'' হয় ''পরিত্রাণ'' (১৯২৯)।<ref name = sarbajaner26-27/>
১৯২৬ সালে ''নটীর পূজা'' নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নাচ ও গানের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।<ref name = sarbajaner26-27/> এই ধারাটিই
=== সংগীত ও নৃত্যকলা ===
২০৬ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|রবীন্দ্রসংগীত}}
[[চিত্র:Tagore manuscript6 c.jpg|thumb|right|200px|"[[গীতবিতান]]" সংকলনের ‘স্বদেশ’ পর্যায়ভুক্ত ‘[[বিধির বাঁধন কাটবে তুমি]]’ গানটির পাণ্ডুলিপি। এই গানটি একটি জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত।]]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৫টি [[রবীন্দ্রসংগীত|গান]] রচনা করেছিলেন।<ref name =ganersankhya/> ধ্রুপদি ভারতীয় সংগীত, বাংলা লোকসংগীত ও ইউরোপীয় সংগীতের ধারা তিনটিকে আত্মস্থ করে তিনি একটি স্বকীয় সুরশৈলীর জন্ম দেন।<ref name=Dasgupta_2001>Dasgupta, A. (2001-07-15), "[http://www.parabaas.com/rabindranath/articles/pAnirban1.html Rabindra-Sangeet As A Resource For Indian Classical ''Bandishes'']", ''Parabaas''. Retrieved 2009-08-13.</ref> রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের সময় বাংলার শিক্ষিত পরিবারে নৃত্যের চর্চা নিষিদ্ধ ছিল।<ref name="sarbajaner37-38"/> কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর পাঠক্রমে সংগীত ও চিত্রকলার সঙ্গে সঙ্গে নৃত্যকেও অন্তর্ভুক্ত করেন।<ref name = sarbajaner37-38/> ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকনৃত্য ও ধ্রুপদি নৃত্যশৈলীগুলির সংমিশ্রণে তিনি এক নতুন শৈলীর প্রবর্তন করেন।<ref name = sarbajaner37-38/> এই শৈলীটি "রবীন্দ্রনৃত্য" নামে পরিচিত।<ref name = sarbajaner37-38/> রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যগুলিতে গানের পাশাপাশি নাচও অপরিহার্য।<ref name = sarbajaner37-38/> বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী [[উদয় শংকর]] যে আধুনিক ভারতীয় নৃত্যধারার প্রবর্তন করেছিলেন, তার পিছনেও রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা ছিল।<ref name = sarbajaner37-38/>
২১২ নং লাইন:
=== চিত্রকলা ===
[[চিত্র:Rabindranath Tagore Untitled Dancing Girl.jpg|thumb|right|link=|alt=A painting, dominated by angry or fiery strokes of red and orange, of a stylised depiction of (from bottom) feet and legs, a woman's dress, a bust, and a head partly obscured by wavy tapering lines—arms—reaching upward. The figure is alive with motion; a mostly brown background behind.|"ড্যান্সিং গার্ল", রবীন্দ্রনাথ অঙ্কিত একটি তারিখবিহীন চিত্র]]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় সত্তর বছর বয়সে।<ref name = sarbajaner41-42/> চিত্রাঙ্কনে কোনো প্রথাগত শিক্ষা
== রাজনৈতিক মতাদর্শ ও শিক্ষাচিন্তা ==
{{মূল নিবন্ধ|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক মতাদর্শ}}
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করতেন।<ref name=Dutta_1997_127>{{harvnb|Dutta|Robinson|1997|p=127}}</ref><ref name=Dutta_1997_210>{{harvnb|Dutta|Robinson|1997|p=210}}</ref><ref name=Dutta_1995_304>{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|p=304}}</ref> ১৮৯০ সালে প্রকাশিত ''[[:s:মানসী (কাব্যগ্রন্থ)|মানসী]]'' কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়।<ref>{{citation |last1=Scott |first1=J., |year=2009. |title=Bengali Flower |page=10 |{{আইএসবিএন|1-4486-3931-X}}}}</ref> [[হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র|হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলার]] তথ্যপ্রমাণ এবং পরবর্তীকালে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ [[হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র|গদর ষড়যন্ত্রের]] কথা শুধু জানতেনই না, বরং উক্ত ষড়যন্ত্রে জাপানি প্রধানমন্ত্রী তেরাউচি মাসাতাকি ও প্রাক্তন প্রিমিয়ার ওকুমা শিগেনোবুর সাহায্যও প্রার্থনা করেছিলেন।<ref name=Brown>{{harvnb|Brown|1948|p=306}}</ref> আবার ১৯২৫ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে [[স্বদেশী আন্দোলন|স্বদেশী আন্দোলনকে]] "চরকা-সংস্কৃতি" বলে বিদ্রুপ করে রবীন্দ্রনাথ কঠোর ভাষায় তার বিরোধিতা করেন।<ref name=Dutta_1995_261>{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|p=261}}</ref> ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ
[[চিত্র:Gandhi-Tagore-cropped.jpg<!--File:Gandhi Shantiniketan 1940.jpg-->|thumb|right|alt=At a formal function, an aged bald man and an old women are humbly dressed and seated side-by-side with legs folded on a rug-strewn dais at right; the man looks at a bearded, robed, and garlanded old man seated on another dais at left, who is reading from a sheet of paper held in his left hand. In the foreground, various dishes and ceremonial objects are arrayed; in the background, a half-dozen dignitaries and dozens of ordinary people observe.| শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের আতিথেয়তায় [[মহাত্মা গান্ধী]] ও তাঁর পত্নী কস্তুরবা গান্ধী, ১৯৪০।]]
রবীন্দ্রনাথের এই ধরনের মতাদর্শ অনেককেই বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ১৯১৬ সালের শেষ দিকে সানফ্রান্সিসকোয় একটি হোটেলে অবস্থানকালে একদল চরমপন্থী বিপ্লবী রবীন্দ্রনাথকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ উপস্থিত হওয়ায় তাঁদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল।<ref name=Dutta_1995_204>{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|p=204}}</ref> [[ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন|ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে]] রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯১৯ সালে [[জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড|জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের]] প্রতিবাদে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন।<ref name=Dutta_1995_215-216>{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|pp=215–216}}</ref> নাইটহুড প্রত্যাখ্যান-পত্রে লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, "আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।" রবীন্দ্রনাথের "[[:s:চিত্ত যেথা ভয়শূন্য|চিত্ত যেথা ভয়শূন্য]]" ও "[[:s:যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে|একলা চলো রে]]" রাজনৈতিক রচনা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। "একলা চলো রে" গানটি [[মহাত্মা গান্ধী|গান্ধীজির]] বিশেষ প্রিয় ছিল।<ref name=Chakraborty_2001>{{citation |last1=Chakraborty |first1=SK |last2=Bhattacharya |first2=P |title=Leadership and Power: Ethical Explorations |year=2001 |publisher=Oxford University Press |isbn=0-1956-5591-5 |page=157 }}</ref> যদিও মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। হিন্দু নিম্নবর্ণীয় জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গান্ধীজি ও [[ভীমরাও রামজি আম্বেডকর|আম্বেডকরের]] যে মতবিরোধের সূত্রপাত হয়, তা নিরসনেও রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে গান্ধীজিও
রবীন্দ্রনাথ
== প্রভাব ==
[[চিত্র:Praha, Dejvice - Thakurova busta v Thakurove ulici.jpg|thumb|200px|alt=A cylindrical wood-trimmed plinth supports a bust of a bearded man in his sixties. On the plinth, a plate reads "Rabindranath Thakur".| প্রাগের রবীন্দ্রমূর্তি]]
বিংশ শতাব্দীর বাঙালি সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তথা দার্শনিক [[অমর্ত্য সেন]] রবীন্দ্রনাথকে এক "হিমালয়প্রতিম ব্যক্তিত্ব" ও "গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক ও বহুমাত্রিক সমসাময়িক দার্শনিক" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।<ref name=Hatcher_2001/> বত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত ''[[রবীন্দ্র রচনাবলী]]'' বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়। রবীন্দ্রনাথকে "ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি" হিসেবেও বর্ণনা করা হয়ে থাকে।<ref name=Kämpchen_2003>{{citation |last1=Kämpchen |first1=M |year=2003 |month=July |day=25 |title=Rabindranath Tagore In Germany |journal=Parabaas |url=http://www.parabaas.com/rabindranath/articles/pMartin1.html |accessdate=13 August 2009 }}</ref> রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী "[[পঁচিশে বৈশাখ]]" ও প্রয়াণবার্ষিকী "বাইশে শ্রাবণ" আজও বাঙালি সমাজে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে। এই উপলক্ষে [[জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি]], [[শান্তিনিকেতন|শান্তিনিকেতন আশ্রম]] ও [[শিলাইদহ|শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে]] প্রচুর জনসমাগম হয়। শান্তিনিকেতনের [[বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়|বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে]] রবীন্দ্রনাথ-প্রবর্তিত ধর্মীয় ও ঋতুউৎসবগুলির মাধ্যমেও
[[চিত্র:Jorasanko Thakur Bari.jpg|thumb|left|alt=A brick-red mansion in the background, shaded by a row of large trees; in the foreground, a manicured lawn with a perimeter of trimmed round bushes.|[[জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি]], বর্তমানে কবির নামাঙ্কিত [[রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়|রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের]] প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন]]
জীবদ্দশাতেই ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ায় প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ইংল্যান্ডে ডার্টিংটন হল স্কুল নামে একটি প্রগতিশীল সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি।<ref name=Farrell_1999_162>{{citation |last1=Farrell |first1=G |title=Indian Music and the West |publisher=Oxford University Press |series=Clarendon Paperbacks Series |edition=3 |year=1999 |isbn=0-1981-6717-2 |page=162 }}</ref> অনেজ জাপানি সাহিত্যিককে তিনি প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে [[ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা|ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার]] নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।<ref name=Dutta_1995_202>{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|p=202}}</ref> রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থাবলি অনূদিত হয় ইংরেজি, ওলন্দাজ, জার্মান, স্প্যানিশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। চেক ভারততত্ত্ববিদ ভিনসেন্স লেনসি সহ একাধিক ইউরোপীয় ভাষায়
[[File:Samadhi of Rabindranath Tagore Arnab Dutta.jpg|thumb|রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাধিস্থল, [[নিমতলা মহাশ্মশান]], কলকাতা।]]
চিলিয়ান সাহিত্যিক [[পাবলো নেরুদা]] ও [[গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল]], মেক্সিকান লেখক [[অক্টাভিও পাজ]] ও স্প্যানিশ লেখক হোসে অরতেগা ওয়াই গ্যাসেৎ, [[থেনোবিয়া কামপ্রুবি আইমার]], ও হুয়ান রামোন হিমেনেথ প্রমুখ স্প্যানিশ-ভাষী সাহিত্যিকদেরও অনুবাদের সূত্রে অনুপ্রাণিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৪ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে হিমেনেথ-কামপ্রুবি দম্পতি রবীন্দ্রনাথের বাইশটি বই ইংরেজি থেকে স্প্যানিশে অনুবাদ করেছিলেন। ''দ্য ক্রেসেন্ট মুন'' (''শিশু ভোলানাথ'') সহ রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু রচনার বিস্তারিত পর্যালোচনা ও স্প্যানিশ সংস্করণ প্রকাশও করেছিলেন
রবীন্দ্রনাথের মূল বাংলা কবিতা পড়েননি এমন বহু পাশ্চাত্য সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব অস্বীকারও করেছিলেন। [[গ্রাহাম গ্রিন]] সন্দিগ্ধচিত্তে মন্তব্য করেছিলেন, "ইয়েটস সাহেব ছাড়া আর কেউই রবীন্দ্রনাথের লেখাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন না।"<ref name=Sen_1997>{{harvnb|Sen|1997}}</ref> রবীন্দ্রনাথের সম্মানের কিছু পুরনো লাতিন আমেরিকান খণ্ডাংশ সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। নিকারাগুয়া ভ্রমণের সময় [[সালমান রুশদি]] এই জাতীয় কিছু উদাহরণ দেখে অবাক হন।<ref name=Dutta_1995_255>{{harvnb|Dutta|Robinson|1995|p=255}}</ref>
|