হের্মান এমিল ফিশার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
১৮ নং লাইন:
}}
 
'''হারম্যান এমিল ফিসার''' ([[অক্টোবর ৯]], [[১৮৫২]] - [[জুলাই ১৫]], [[১৯১৯]]) একজন [[জার্মানি|জার্মান]] রসায়নবিদ। তিনি [[শর্করা|কার্বহাইড্রেট]] সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ১৯০২ সালে [[রসায়নে নোবেল পুরস্কার]] লাভ করেন। ফিসার এস্টারিফিকেশন আবিষ্কারের কারণে তিনি সমধিক পরিচিত। ১৮৭৫ সালে তিনি ফিনাইল হাইড্রাজিন প্রস্তুত করেন যা [[অ্যালডিহাইড]] ও [[কিটোন|কিটোনের]] সাথে বিক্রিয়া করে নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বিশিষ্ট হাইড্রাজোন উৎপন্ন করে। তিনি এ বিকারক ব্যবহার করে সুগার রসায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সুগারের গাঠনিক সংকেত নির্ণয়ে ও সংশ্লেষণে তাঁরতার ব্যাপক অবদানের জন্য তাকে “সুগার রসায়নের জনক” হিসেবে অভিহিত করা হয়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.britannica.com/EBchecked/topic/208392/Emil-Fischer |শিরোনাম=''Emil Hermann Fischer'' |প্রকাশক=[[এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা]]|সংগ্রহের-তারিখ=২০১০.০১.০৮}}</ref> তিনি প্রোটিন ও রঞ্জক পদার্থের রসায়নেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
 
== জীবনী ==
=== প্রাথমিক জীবন ===
হারম্যান এমিল ফিসার জার্মানির ইউস্কিরচেনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরতার বাবা ছিনেল একজন ব্যবসায়ী। স্নাতক শেষ করার পর তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান পড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরতার বাবা তাকে পরিবারের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করে। এরপর ১৮৭২ সালে ফিসার বন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিছুদিন না যেতেই তিনি আবার স্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যাললয়ে ভর্তি হন। ১৮৭৪ সালে ফিসার ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তার চাকরিজীবন শুরু করেন।
 
=== কর্মজীবন ===
২৮ নং লাইন:
 
=== গবেষণাকর্ম ===
[[মিউনিখ|মিউনিখে]] অবস্থানকালে ফিসার তাঁরতার চাচাত ভাই অটো ফিসার হাইড্রাজিনের উপর গবেষণা করেন। তাঁরাতারা ট্রাইফিনাইল মিথেন থেকে প্রাপ্ত বিশেষ রঞ্জক পদার্থের গঠনসংক্রান্ত নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেন এবং তা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন। এর্লাঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকাকালে ফিসার চা, কফি এবং কোকোয়া এর গঠন সম্পর্কিত গবেষণা করেন এবং এওসকল পদার্থের গঠনের উপর এক নতুন সাংশ্লেষনিক ধারা প্রতিষ্ঠা করেন। তবে পিউরিন এবং সুগার রসায়নের উপর গবেষণার জন্য ফিসার সর্বাধিক খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮৮২ হতে ১৯০৬ সালের মধ্যে তিনি এই গবেষণা করেন। এই গবেষণাই প্রমাণ করলো যে উদ্ভিদে প্রাপ্ত অ্যাডেনিন, জ্যানথিন, ক্যাফেইন, প্রাণীর বিষ্ঠায় প্রাপ্ত ইউরিক এসিড, গুয়ানিন-সমস্তই একই সমগোত্রীয় শ্রেণীর। এগুলোর যেকোন একটি থেকে অপরগুলো পাওয়া যায়। এরা নাইট্রজেন চক্রের মাধ্যমে গঠিত এক মৌলিক ব্যবস্থা যাতে ইউরিয়ার ন্যায় আণবিক গঠন বিদ্যমান, সেই ব্যবস্থার অন্তর্গত বিভিন্ন হাইড্রক্সিল ও অ্যামিনের সাথে সদৃশ। প্রথমে প্রাপ্ত এই মৌলিক ব্যবস্থাকেই ১৮৮৪ সালে তিনি '''পিউরিন''' নামকরণ করেন এবং ১৮৯৮ সালে সংশ্লেষণ করেন। ১৮৮২ হতে ১৮৯৬ সালের মধ্যে তাঁরতার গবেষণার মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে ঘটিত পদার্থের সাথে কম-বাশি সদৃশ এরকম অসংখ্য কৃত্রিম পদার্থ উদ্ভূত হয়।
 
১৮৮৪ সালে ফিসার তাঁরতার বিখ্যাত সুগার রসায়ন সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করেন, যা এসকল পদার্থ সম্পর্কিত জ্ঞানকে এক নতুন মাত্রা প্রদান করে এবং এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। ১৮৮০ সালের আগেও গ্লুকোজের অ্যালডিহাইড সংকেত বিজ্ঞানীদের জানা ছিল, কিন্তু ফিসার একে রুপান্তর ধারা মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন। যেমন এ্যালডোনিক এসিডে অক্সিডেশন ও ফিনাইল-হাইড্রাজিনের ক্রিয়া যা তিনিই আবিষ্কার করেছিলেন এবং এটি ফিনাইল-হাইড্রাজোনের গঠনকে সম্ভবপর করে তোলে। এছাড়া ১৮৮৮ সালে তিনি [[গ্লুকোজ]], [[ফ্রুক্টোজ]] ও ম্যানোজের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন।১৮৯০ সালে তিনি গ্লুকোনিক ও ম্যানোইক এসিডের এপিমেরিজেশনের মাধ্যমে সুগারের সমাণু ও স্টেরিও রসায়ন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯১ হতে ১৮৯৪ সালের মধ্যে ফিসার পরিচিত সকল সুগারের স্টেরিও রাসায়নিক বিন্যাস বের করেন এবং বিজ্ঞানী জ্যাকোবাস হেনরিকাসের অপ্রতিসম [[কার্বন]] [[পরমাণু]] তত্ত্বের সুপ্রযুক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে সঠিকভাবে এদের সমাণুর ভবিষ্যদ্বাণী করতে সমর্থ হন। এক্ষেত্রে তাঁরতার সবচেয়ে বড় সাফল্য হছে গ্লিসারল হতে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও ম্যানোজ সংশ্লেষণ।
 
সুগার রসায়নের উপর ফিসারের গবেষণা অমর কীর্তি স্বরূপ প্রতীয়মান। গ্লুকোসাইড সংক্রান্ত গবেষণা এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ।
 
১৮৯৯ থেকে ১৯০৮ সালের মধ্যে প্রোটিন সম্পর্কিত জ্ঞানের জগতে ফিসার ব্যাপক অবদান রাখেন। সে পৃথক পৃথক অ্যামিনো এসিডের বিচ্ছেদ, শনাক্তকরনের ক্ষেত্রে কার্যকর ও বিশ্লেষনিক পদ্ধতি অনুসন্ধান করেছিল। এ কাজ করতে গিয়ে তিনি প্রোলিন ও অক্সিপ্রোলিন নামক দুইটি নতুন ধরণের চাক্রিক কাঠামোর অ্যামিনো এসিড আবিষ্কার করেন। তিনি বিভিন্ন অ্যামিনো এসিডসমূহকে একত্র করার জন্য প্রোটিনের সংশ্লেষণ সম্বন্ধে গবেষণা করেছিলেন। তিনি এমন একটি বন্ধন আবিষ্কার করেছিলেন যা প্রোটিনসমূহকে একত্রে শিকল কাঠামোতে যুক্ত করে। এ বন্ধনটির নাম পেপ্‌টাইড বন্ধন। এর মাধ্যমে তিনি পরবর্তিতে ডাই-পেপ্‌টাইড, ট্রাই-পেপ্‌টাইড ও পলি-পেপ্‌টাইড বন্ধন আবিষ্কার করেন। ১৯০১ সালে ফিসার ডাই-পেপ্‌টাইডের গ্লাইসিল-গ্লাইসিন সংশ্লেষণ করতে সমর্থ হন। এই বছরে তিনি দুধের ননীর হাইড্রোলাইসিসের উপর তাঁরতার গবেষণা প্রকাশ করেন। এই গবেষণা ও এ সংক্রান্ত তাঁরতার পরবর্তি গবেষণার ফলে [[প্রোটিন|প্রোটিনের]] গঠন আরও ভালভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হল। তাঁরতার এ গবেষণাই প্রোটিনের উপর পরবর্তি অন্যান্য গবেষণার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে।
 
উল্লিখিত গবেষণা ছাড়াও ফিসার এনজাইম ও লাইকেনে উপস্থিত রাসায়নিক পদার্থ সম্পর্কে গবেষণা করেন। চামড়া পাকা করার কাজে ব্যবহৃত ট্যানিনের রাসায়নিক গঠন সম্পর্কেও তিনি গবেষণা করেন। জীবনের শেষভাগে ফিসার চর্বি সম্পর্কেও গবেষণা করেন। ১৮৯০ সালে এনজাইমের পারস্পারিক ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করার জন্যে “লক এন্ড কী মডেল” প্রস্তাব করেন, যদিও এ সংক্রান্ত পরবর্তি গবেষণা তাঁরতার মডেলকে সব এনজাইমের ক্ষেত্রে সমর্থন করেন। সুগার রসায়ন, গ্লুকোজের জৈব সংশ্লেষন,<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি | শিরোনাম = Synthese des Traubenzuckers | পাতাসমূহ = 799–805 | প্রথমাংশ = Emil | শেষাংশ = Fischer | ডিওআই = 10.1002/cber.189002301126 | সাময়িকী = Berichte der deutschen chemischen Gesellschaft | বছর = 1890 | খণ্ড = 23}}</ref> পিউরিনের উপর গবেষণার জন্য ফিসার বিখ্যাত হয়ে আছেন।
 
== ব্যক্তিগত জীবন ==
১৮ বছর বয়সে, বন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পূর্বে ফিসার পাকাশয় প্রদাহে ভুগছিলেন। এর ফলে এর্লাঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের চেয়ারম্যান পদে আর বহাল থাকতে পারেননি। এছাড়া এই কারণে জুরিখের ফেডারেল টেকন্নিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক জার্মান রসায়নবিদ, ভিক্টোর মেয়ারের পদে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলে তাকে তা প্রত্যাখ্যান করতে হয়। এই প্রদাহের কারণে ১৮৮৮ সালে উর্জবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পূর্বে তিনি এক বছরের ছুটি নেন। জীবনব্যাপী ফিসার ছিলেন অসাধারণ মেধাশক্তির অধিকারী। এজন্য তিনি যেসব বক্তৃতা লিখেছিলেন, সবগূলোর পাণ্ডুলিপি তাঁরতার মুখস্থ ছিল; যদিও তিনি ভাল বক্তৃতা দিতে পারতেন না।
উর্জবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে ফিসার পাহাড়ের পাদদেশে এবং জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্টে ঘুরে বেড়াতে খুব ভালবাসতেন। তিনি রসায়ন ও বিজ্ঞানের যেসব শাখায় গবেষণা করেছিলেন, তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্যশীল। বৈজ্ঞানিক সমস্যার প্রতি ফিসারে গভীর অনুরাগ, সত্যের প্রতি আকর্ষণ, অন্তর্জ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক প্রস্তাবস্মূহের নিরীক্ষামূলক প্রমাণের প্রতি তার নির্বন্ধতা তাকে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানিদের অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
 
১৮৮৮ সালে ফিসার এর্লাঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমির অধ্যাপক জোসেফ ভন গার্লেচের কন্যা অ্যাগনেস গার্লেচকে বিয়ে করেন। বিয়ের মাত্র হাত বছরের মাথায় ফিসারের স্ত্রী মারা যান। তাদের তিনটি ছেলে ছিল, যাদের একজন [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধে]] মারা যায় এবং আরেকজন ২৫ বছর বয়সে বাধ্যতামূলক মিলিটারি প্রশিক্ষণের সময় আত্মহত্যা করে। ১৯১৯ সালে ফিসার বার্লিনে তাঁরতার ছেলের মত আত্মহত্যা করেন।<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি |শেষাংশ১=Sachi |প্রথমাংশ১=Sri Kantha |বছর=2000 |শিরোনাম=Suicide: a Socratic revenge |সাময়িকী=Ceylon Medical Journal |সংখ্যা নং=45 |পাতাসমূহ=25-28 |ইউআরএল=http://www.cmj.slma.lk/cmj4501/25.htm}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | শিরোনাম=Emil Fischer | ইউআরএল=http://www.nndb.com/people/703/000091430/ | কর্ম=The Notable Names Database| তারিখ=2008 | সংগ্রহের-তারিখ=2008-09-18}}</ref> বড় ছেলে হারম্যান অটো লরেঞ্জ<ref>Poster next to bust of Fischer, Biosciences Library, UC Berkeley</ref> ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ সালে তাঁরতার মৃত্যু পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বার্কলে) প্রাণরসায়নের অধ্যাপক ছিলেন।
 
== সম্মাননা ও পুরস্কার ==