সমীর রায়চৌধুরীর জন্ম মামারবাড়ি পাণিহাটিতে ( ২৪ পরগণা )। তিনি কলকাতার আদি নিবাসী [[সাবর্ণ রায়চৌধুরী]] পরিবারের উত্তরপাড়া শাখার সন্তান। বিদ্যাধর রায়চৌধুরী, যিনি [[জব চার্নক|জোব চার্ণক]]কে কলকাতা-সুতানুটি-গোবিন্দপুর গ্রামের ইজারা দিয়েছিলেন, তাঁরতার ৩৯তম বংশধর তিনি। তাঁরতার ঠাকুর্দা লক্ষ্মীনারায়ণ রায়চৌধুরী ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম ভ্রাম্যমাণ ফোটোগ্রাফার-আর্টিস্ট, যিনি নোবেলজয়ী সাহিত্যিক [[Rudyard Kipling|রুডিয়ার্ড কিপিং]]-এর বাবা, তৎকালীন লাহোর মিউজিয়াম-এর অধক্ষ [[John_Lockwood_KiplingJohn Lockwood Kipling|জন লকউড কিপলিং]]-এর কাছে ব্রোমাইড-কাগজ আলোকচিত্র তৈরির কৌশল শিখেছিলেন। তাঁরতার বাবা রঞ্জিত (১৯০৯-১৯৯১)-ও পাটনা শহরের প্রচীনতম ফোটোগ্রাফি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি জ্যাঠামশায় পাটনা শহরের জাদুঘরের চিত্র এবং ভাস্কর্য রক্ষক ছিলেন। সে-কারণে শৈশব থেকে সমীর শিল্প-সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। স্কুল জীবন পাটনায় কাটিয়ে তিনি কলকাতার সিটি কলেজে গিয়ে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন, এবং সেই সূত্রে [[Krittibas_Krittibas (magazine)|কৃত্তিবাস]] গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা কবি দীপক মজুমদারের সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁরতার মা অমিতা (১৯১৬-১৯৮২) ছিলেন ১৯ শতকের [[বাংলার নবজাগরণ|বাঙালির রেনেসঁস]]-প্রভাবিত পরিবারের মেয়ে।
== হাংরি আন্দোলন ==
কলেজ জীবনে কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, ১৯৬১ সালের নভেম্বরে তিনি ছোট ভাই [[মলয় রায়চৌধুরী]], [[শক্তি চট্টোপাধ্যায়]] ও [[দেবী রায়]] (প্রকৃত নাম হারাধন ধাড়া )-এর সঙ্গে [[হাংরি আন্দোলন]] শুরু করে সাড়া ফেলে দেন । [[হাংরি আন্দোলন]]-এর শতাধিক বুলেটিনের অধিকাংস তাঁরইতারই খরচে প্রকাশিত হয়েছিল। [[হাংরি আন্দোলন]]-এর কারণে ১৯৬৪ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন, যদিও তাঁরতার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না থাকায় অচিরে মুক্তি পান। তাঁরতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি তরুণদের বিপথগামী করছেন (ভারতীয় দণ্ড সংহিতার ২৯৪ ধারা)।
== সাহিত্যকর্ম ==
কৃত্তিবাস গোষ্ঠিতে যুক্ত থাকার সময়ে তাঁরতার দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল: '''ঝর্ণার পাশে শুয়ে আছি''' এবং '''আমার ভিয়েৎনাম''' । এই সময়ে নিজ অর্থে তিনি কৃত্তিবাস পত্রিকার সম্পাদক [[সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়]]-এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ '''একা এবং কয়েকজন''' প্রকাশ করে কবিমহলে বিশেস সম্মান অর্জন করেন। কৃত্তিবাস গোষ্ঠী ত্যাগের পর, [[হাংরি আন্দোলন]]-এর কারণে তাঁরতার কবিতায় লক্ষণীয় বাঁকবদল ঘটে, এবং তা প্রতিফলিত হয় তাঁরতার পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ '''জানোয়ার-'''এ। সেই সময়ে তাঁরতার চাইবাসার বাড়িটি, নিমডি নামের সাঁওতাল গ্রামের পাহাড়চূড়ায়, হয়ে উঠেছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকেন্দ্র। ৫০ ও ৬০-এর দশকের বহু কবি ও লেখকের রচনায় চাইবাসার কথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে। গ্রেপ্তারির আপমানের কারণে, এবং ১৯৬৫ সালে [[হাংরি আন্দোলন]] প্রকৃত অর্থে ফুরিয়ে যাওয়ায়, সমীর প্রায় তিন দশক লেখালিখি থেকে দূরে সরে ছিলেন। ৯০ দশকে কলকাতায় নিজের বাড়ি তৈরি করার পর তিনি আবার লেখালিখিতে ফিরে আসেন, এবং তা ছোট-গল্পকার ও ভাবুক রূপে।
== অধুনান্তিক পর্ব ==
নব্বই দশকের শুরুতে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক [[মুর্শিদ এ এম]] -এর সঙ্গে সমীর '''হাওয়া ৪৯''' নামে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। সাহিত্য ও বিজ্ঞানকে একটি মঞ্চে একত্রিত করে তিনি নবতর একটি সাহিত্যচিন্তা প্রণয়ন করেন যার নাম তিনি দেন "অধুনান্তিক"। পরবর্তীকালে পত্রিকাটি সাহিত্যতত্ব ও ভাষাতত্বের পত্রিকা হয়ে ওঠে, এবং তাকে আলোচকরা পোস্টমডার্ন মঞ্চ বলে স্বীকৃতি দেন। এই ধারায় রচিত তাঁরতার ছোটগল্পের সংকলন '''খুল যা সিমসিম''' সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার বাংলা সন্দর্ভ হিসাবে সম্মান করে নিতে পেরেছে। অন্যান্য তরুণ কবি ও লেখক, যাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আগ্রহী, তাঁদের রচনা '''হাওয়া ৪৯-'''এ প্রকাশ ও তাঁদের গ্রন্থ প্রকাশের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন সমীর।