রক্তদহ নদী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Sakhawat Emon (আলোচনা | অবদান)
সংযোজন
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Sakhawat Emon (আলোচনা | অবদান)
সংযোজন
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬ নং লাইন:
| location = [[বগুড়া]]
| coords = {{স্থানাঙ্ক|24.52|N|89.22|E|dim:50000_region:BD|display=inline,title}}
| type = অন্যতম বৃহৎ বিল
| inflow = [[আত্রাই]] সহ আরও ৪৬টি নদনদী<ref name = "Railways">{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ১=Srinivasan |প্রথমাংশ১=Roopa |শেষাংশ২=Tiwari |প্রথমাংশ২=Manish |শেষাংশ৩=Silas |প্রথমাংশ৩=Sandeep |তারিখ=2006 |শিরোনাম=Our Indian Railway: Themes in India's Railway History |ইউআরএল=http://books.google.com/books?id=O2-eHnajWxIC&pg=PA176 |অবস্থান=New Delhi |প্রকাশক=Foundation Books |আইএসবিএন=81-7596-330-1 |সংগ্রহের-তারিখ=2007-11-29}}</ref>
| outflow =
| catchment =
৩৬ নং লাইন:
 
ঐতিহাসিকদের মতে, ১৭ শতাব্দীর শেষের দিকে ফকির মজনু শাহ আদমদীঘিসহ আশে পাশের এলাকায় ইংরেজদের দোসর জমিদারদের হাত থেকে বাঁচাতে আবারও তৎপরতা শুরু করেন। সে সময় প্রজারা জমিদার ও ইংরেজদের দ্বারা প্রনিয়ত অর্থনৈতিক ও শারিরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতো। তাদের উপর এমনভাবে কর ধার্য করা হতো, যা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বশ্ন্তা হতে হতো। ফলে প্রজাদের বাধ্য হয়ে জমিদারদের নায়েব গোমস্তা এমনকি ইংরেজদের সাধারণ সিপাহী ও কর্মচারীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত সুদে টাকা ধার নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। এই ধার দেওয়া টাকা সুদ আদায় করতে শক্তি প্রয়োগ করা হতো। এভাবে প্রজাশোষণ যখন চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে ঠিক সেই সময় অর্থাৎ ১৭৮৬ সালে এই এলাকায় অস্ত্রধারী সন্নাসী ও ফকিরদের সাথে নিয়ে ফকির মজনু শাহ এর আগমন ঘটে। সে সময় আদমদীঘির অধিকাংশ এলাকা ছিল গহীন অরণ্যাবৃত এলাকা। তারা এ সব অরণ্য থেকে বের হয়ে এসে ইংরেজ শাসকদের ও তাদের এদেশীয় দোসর জমিদারদের উপর হামলা চালাতে শুরু করেন। যেখানেই প্রজা নিপীড়ন হতো সেখানেই মজনু বাহিনীর উপস্থিতি ঘটত। প্রজাদের সমর্থন নিয়ে ফকির মজনু বাহিনীর অভিযানে ইংরেজ ও জমিদারদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। মজনু বাহিনী জমিদারদের কাছ থেকে নির্ধারিত চাঁদা আদায় করে গরীব প্রজাদের বিলিয়ে দিতেন। তৎকালীন জমিদারদের মধ্যে কয়েকজন জমিদারকে অপহরণ করে আদমদীঘির কড়ই গ্রামের গভীর অরণ্যে লুকিয়ে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে আবার ছেড়ে দিতেন। এক সময় কড়ই জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী মজনু শাহ এর ভয়ে ভীত হয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে ময়মনসিহে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আদমদীঘির ছাতিয়ানগ্রামের জমিদারের কন্যা রানী ভবানী যখন নাটোরের জমিদার ছিলেন তখন ফকির মজনু শাহ এর বাহিনী শুধু মাত্র রানী ভবানীকে অত্যন্ত সমীহ করতেন। বিভিন্ন গ্রন্থে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় ফকির মজনু নিজ হাতে রানী ভবানীর নিকট পত্র লিখে তার সফলতা কামনা করেছিলেন। যখন জমিদার ও ইংরেজ সরকার এদের দমন করার জন্য সেনা নায়ক লেফটেন্যান্ট আইনস্টাইনের নেতৃত্বে একটি বড় আকারের বাহিনী প্রেরণ করেন। এ সংবাদ পাওয়ার পর দুর্ধর্ষ ফকির বাহিনীর সদস্যরা ২৪ ঘন্টার নোটিশে কড়ই জঙ্গল এলাকায় সমবেত হন। এদিকে ইংরেজ সৈন্যরা আত্রাই নদী হয়ে নৌকাযোগে বিল ভোমরা দিয়ে গোপনে কড়ই জঙ্গল ঘেরা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। এ সংবাদ পেয়ে মজনু বাহিনী এগিয়ে এসে বিল ভোমরায় তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষ প্রচন্ড যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের প্রচুর লোক হতাহত হওয়ায় বিল ভোমরার পানি রক্তের জোয়ারে লাল রং ধারণ করে সেই থেকে বিল ভোমরা ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল নাম ধারণ করে আসছে। ঐ যুদ্ধে মজনু শাহ এর একজন শীর্ষ সহযোগী শহীদ হন। তার লাশ ঐ বিলের মধ্যেই একটু উঁচু স্থানে দাফন করা হয়। সেখানে একটি বটগাছ সর্বক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। প্রবীন লোকদের মতে, যত বড় বন্যা হোকনা কেন ঐ কবরে কখনও পানি উঠে না অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল সংস্কারের অভাবে দিন দিন তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ফাল্গুণ চৈত্র মাসে সেখানে আর পানি দেখা যায় না।
বগুড়ার আদমদীঘির ঐতিহাসিক রক্তদল বিল এখন শুকিয়ে পানিশূন্য হয়েছে। ফাল্গুনের শুরুতেই রক্তদহ বিলের তলায় আগাছায় পরিপূর্ণ হলেও চারপাশে এখন ইরি-বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। বিলের বটগাছের চারপাশে ইরি ধান গাছ সবুজে সমারোহ হয়ে উঠেছে। বিল এলাকা পানিশূন্য হয়ে পড়ায় এলাকায় মাছের তীব্র আকাল দেখা দিয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে বিল এলাকার ২০/২৫ গ্রামের প্রায় ৪ হাজার মৎস্যজীবী মানুষ। কোন কাজ কর্ম ও ব্যবসা বাণিজ্য না থাকায় এই বিপুলসংখ্যক মৎসজীবী পরিবারে এখন চরম দুর্দিন যাচ্ছে।
 
বিশেষ করে আদমদীঘির মাছের ভান্ডার নামে বহুল পরিচিত ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল ও তৎসংলগ্ন ১৩টি খাল দীর্ঘ দিন যাবৎ সংস্কার না করায় প্রতি বছর শুকনো মৌসুমের শুরুতেই শুখিয়ে যায়। সংস্কার না করার কারণে এই খাল বিলগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
 
প্রায় ৯শত একর এলাকাজুড়ে বিশ্রিত ঐতিহাসিক রক্তদহ বিলে একসময় পানি পরিপূর্ণ হয়ে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এ বিল থেকে এলাকায় মাছের চাহিদা পূরণ করে বগুড়া, নাটোর, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার দক্ষিণ পূর্ব এলাকার মাছের চাহিদা পূরণ করতো এই রক্তদহ বিল। এ বিলে বোয়াল, চিতল, আইড়, গজার, পবদাসহ মাছের সুক্ষাতি আজও ছড়িয়ে রয়েছে। রক্তদহ বিলপারে ২০/২৫ গ্রামের মৎস্যজীবী বিল থেকে মাছ শিকার করে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাত। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে মৎস্যজীবীদের সেই সুখ স্বাচ্ছন্দ্য। এখন বিলে আর পানি সংরক্ষণ হয় না তাই মাছও পাওয়া যায় না।
 
বর্তমানে রক্তদহ বিলের চারি পার্শ্বে পানিশূন্য হওয়ার কারণে তলায় আগাছায় পরিপূর্ণ ও চারপাশে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এনজিও সংস্থা ব্র্যাক এই বিলের সংস্কার ও মাছ চাষের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বিলটি শুখিয়ে যাওয়ায় মাছ চাষ করা সম্ভব হয়নি।
 
বিল পারের কয়েকটি গ্রামের মৎস্যজীবীরা জানান, সরকারিভাবে রক্তদহ বিলটির সংস্কার করা হলে এলাকার মৎসজীবীরা যেমন পৈতৃক পেশা ফিরে পাবে তেমনি এলাকার মাছের চাহিদা পূরণ করেও দেশের অন্যান্য এলাকায় মাছ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।