রুশ–জাপান যুদ্ধ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Himel Rahmon (আলোচনা | অবদান) সম্পাদনা সারাংশ নেই ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
Himel Rahmon (আলোচনা | অবদান) ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা |
||
৫৪ নং লাইন:
১৮৬৮ সালে 'মেইজি পুনর্গঠন'-এর পর জাপানি সরকার পশ্চিমা আদর্শ, প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং যুদ্ধকৌশল আত্মীকরণের প্রচেষ্টা চালায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জাপান একটি আধুনিক শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। জাপানিরা পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে সমতা অর্জনে আগ্রহী ছিল। মেইজি সরকার সবসময়ই জাপানকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইত, কিন্তু পাশ্চাত্য ভাবধারার অনুসারী করতে চায় নি। আর জাপান সবসময়ই একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ছিল এবয সাগর পেরিয়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিল<ref>Storry, Richard ''Japan and the Decline of the West in Asia, 1894-1943'', New York: St. Martins' Press, 1979 pages 15-16.</ref>। ১৮৬৯ থেকে ১৮৭৩ সালে জাপানি অভিজাত সম্প্রদায় ''সেইকান রোন'' বা ''কোরিয়া অধিকার বিতর্ক'' নিয়ে দারুণভাবে বিভক্ত ছিল। তাদের একাংশ তাৎক্ষণিকভাবে কোরিয়া জয় করতে চাইছিল, এবং অপর অংশ জাপান আরো উন্নত হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছিল। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, জাপানি অভিজাতদের কেউই কোরীয়দের স্বাধীন থাকার অধিকার স্বীকার করতে রাজি ছিল না। তাদের মধ্যে বিভেদের একমাত্র কারণ ছিল কোরিয়া দখলের সময়সূচি<ref>Storry, Richard ''Japan and the Decline of the West in Asia, 1894-1943'', New York: St. Martins' Press, 1979 page 16</ref>। ইউরোপীয়রা যেমন [[আফ্রিকা]] ও [[এশিয়া|এশিয়ার]] পশ্চাৎপদতাকে আফ্রিকা ও এশিয়ায় তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের কারণ হিসেবে দেখিয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে জাপানি অভিজাতদেরও বিশ্বাস ছিল, কোরিয়া ও চীনের পশ্চাৎপদতা প্রমাণ করে যে তারা 'নিচু জাত' এবং এটি জাপানিদেরকে এসব ভূখণ্ড দখল করার 'অধিকার' দেয়<ref name="Storry, Richard page 17">Storry, Richard ''Japan and the Decline of the West in Asia, 1894-1943'', New York: St. Martins' Press, 1979 page 17.</ref>। ১৮৮৭ সালে জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইনোউয়ে কাওরু একটি ভাষণে বলেন যে, "আমাদের অবশ্য কর্তব্য হলো আমাদের সাম্রাজ্য এবং আমাদের জনগণকে পরিবর্তন করা, সাম্রাজ্যকে ইউরোপের দেশগুলোর মতো এবং জনগণকে ইউরোপের জনগণের মতো করে তোলা"। তিনি এমনকি এও বলেন যে চীনা এবং কোরীয়রা আধুনিকায়ন না করে নিজেদের স্বাধীন থাকার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে<ref name="Storry, Richard page 17"/>। আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে 'যোগ্যতমের জয়' সংক্রান্ত ডারউইনিয়ান মতবাদ ১৮৮০-এর দশকে জাপানে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এছাড়া অনেক সাধারণ জাপানি আধুনিকায়নের জন্য সরকার কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া করের বোঝা নিয়ে ক্ষুদ্ধ ছিল এবং তাদের ত্যাগের বিনিময়ে 'সমুদ্রের ওপারে উপনিবেশ' জাতীয় প্রতিদানের দাবি জানায়<ref>Storry, Richard ''Japan and the Decline of the West in Asia, 1894-1943'', New York: St. Martins' Press, 1979 pages 18-19.</ref>। ১৮৮৪ সালে জাপান কোরিয়ায় একটি জাপানপন্থী সংস্কারবাদী দলকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে উৎসাহিত করে এবং এর ফলে কোরিয়ার রক্ষণশীল সরকার চীনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। ফলশ্রুতিতে [[সিউল|সিউলে]] চীনা ও জাপানি সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়<ref name="Storry, Richard page 20">Storry, Richard ''Japan and the Decline of the West in Asia, 1894-1943'', New York: St. Martins' Press, 1979 page 20.</ref>। এসময় [[টোকিও]] চীনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত মনে করছিল না, ফলে সঙ্কটটি তিন্তসিনের চুক্তির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। এই চুক্তির ফলে কোরিয়ায় চীনা আধিপত্য আরো বিস্তৃত হয়, যদিও এটি জাপানিদেরও কোরিয়ায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার দেয়<ref name="Storry, Richard page 20"/>। ১৮৮০-এর দশকে এবং ১৮৯০-এর দশকের প্রথম দিকে জাপানি সরকার কোরিয়ায় 'যথেষ্ট আক্রমণাত্মক না হওয়া'র জন্য জাপানিদের দ্বারা তীব্রভাবে সমালোচিত হয়<ref name="Storry, Richard page 20"/>।
তখনকার একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি জারশাসিত রাশিয়ার প্রাচ্যে সাম্রাজ্য বিস্তারের উচ্চাভিলাষ ছিল। ১৮৯০-এর মধ্যে রাশিয়ার প্রভাব [[মধ্য এশিয়া|মধ্য এশিয়ার]] মধ্য দিয়ে [[আফগানিস্তান]] পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল এবং এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ায় অঙ্গীভূত হয়ে যায়। রুশ সাম্রাজ্য পশ্চিমে [[পোল্যান্ড]] থেকে পূর্বে [[
=== চীন–জাপান যুদ্ধ (১৮৯৪–১৮৯৫) ===
৬৬ নং লাইন:
=== রুশ সম্প্রসারণ ===
{{আরো দেখুন|লি–লোবানভ চুক্তি}}
১৮৯৭ সালে পোর্ট আর্থারে একটি রুশ নৌবহর স্থাপিত হয়। তিন মাস পরে ১৮৯৮ সালে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীন রাশিয়ার কাছে পোর্ট আর্থার, তালিয়েনওয়ান এবং পার্শ্ববর্তী জণাভূমিসমূহ ইজারা দেয়। পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে চুক্তিটির মেয়াদ সম্প্রসারণের বিষয়েও দুই পক্ষ একমত হয়। রুশরা পরিষ্কারভাবে এরকম সম্প্রসারণ প্রত্যাশা করছিল, কারণ তারা কোনো সময় নষ্ট না করে অঞ্চলটি দখল করে নেয় এবং পোর্ট আর্থারে দুর্গ নির্মাণ আরম্ভ করে দেয়। পোর্ট আর্থার ছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে রাশিয়ার একমাত্র উষ্ণ-জলীয় বন্দর, যার ফলে এর কৌশলগত গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। এক বছর পর রুশরা তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য [[হারবিন]] থেকে [[মুকদেন|মুকদেনের]] মধ্য দিয়ে পোর্ট আর্থার পর্যন্ত একটি নতুন রেলপথ নির্মাণ আরম্ভ করে, যেটি দক্ষিণ মাঞ্চুরীয় রেলপথ নামে পরিচিত হয়<ref name="Jukes, Geoffrey page 9"/>। রেলপথটির উন্নতি ঘটনাচক্রে [[বক্সার বিদ্রোহ|বক্সার বিদ্রোহের]] একটি অন্তর্নিহিত কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এবং বিদ্রোহের সময় বক্সার বাহিনী রেলপথটির কয়েকটি স্টেশন জ্বালিয়ে দেয়<ref>Connaughton, pp. 19–20</ref>।
৭৪ ⟶ ৭৫ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|বক্সার বিদ্রোহ}}
[[File:Troops of the Eight nations alliance 1900.jpg|thumb|১৯০০ সালে আট-জাতির মিত্রজোটের সৈন্যরা। বাম থেকে ডানে: ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, ব্রিটিশ ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া,
বক্সার বিদ্রোহ দমন এবং চীনা রাজধানী [[বেইজিং]]-এ বিদেশি দূতাবাসগুলোকে অবরোধ থেকে মুক্ত করার জন্য ১৯০০ সালে যে আট-জাতির আন্তর্জাতিক বাহিনী প্রেরণ করা হয়েছিল তাতে জাপান ও রাশিয়া উভয়েই সৈন্য প্রেরণ করে। রাশিয়া ইতোমধ্যেই [[মাঞ্চুরিয়া|মাঞ্চুরিয়ায়]] তার নির্মীয়মাণ রেলপথগুলো রক্ষা করার জন্য ১,৭৭,০০০ সৈন্য প্রেরণ করেছিল। চীনা সৈন্যরা এবং বক্সার বিদ্রোহীরা এত বিশাল সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারে নি, এবং রুশ সৈন্যরা তাদেরকে মাঞ্চুরিয়া থেকে বহিষ্কার করে। বক্সার বিদ্রোহের পর রাশিয়া মাঞ্চুরিয়ায় ১,০০,০০০ সৈন্য মোতায়েন করে<ref>Jukes, Geoffrey ''The Russo-Japanese War 1904–1905'', London: Osprey 2002 page 11</ref>। রুশ সৈন্যরা সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করতে থাকে<ref>Connaughton, pp. 7–8.</ref> এবং সঙ্কট কেটে যাওয়ার পর অঞ্চলটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিলেও ১৯০৩ সালের মধ্যে রুশরা সৈন্য প্রত্যাহারের কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় নি<ref>Paine, p. 320.</ref>। বরং তারা মাঞ্চুরিয়ায় তাদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করে তোলে।
৮০ ⟶ ৮১ নং লাইন:
=== যুদ্ধ-পূর্ব আলোচনা ===
জাপানি রাষ্ট্রনায়ক ইতো হিরোবুমি রুশদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। তিনি মনে করতেন, জাপান রাশিয়াকে সামরিকভাবে পরাজিত করতে পারবে না। এজন্য তিনি কোরিয়ার উত্তরাঞ্চলে জাপানি আধিপত্যের বিনিময়ে মাঞ্চুরিয়ায় রুশ আধিপত্য স্বীকার করে নেয়ার প্রস্তাব করেন। ইতোমধ্যে ১৯০২ সালে জাপান ও ব্রিটেনের মধ্যে [[ইঙ্গ–জাপানি মৈত্রীজোট]] স্থাপিত হয়। ব্রিটেন রাশিয়ার সঙ্গে নৌ প্রতিযোগিতা হ্রাস করতে চাইছিল এবং রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রবন্দর
এদিকে ১৮৯০ এবং ১৯০০-এর দশকে জার্মান সরকারের 'পীত আতঙ্ক' প্রচারণা চরমে ওঠে। জার্মান সম্রাট [[দ্বিতীয় উইলহেলম]] প্রায়ই তাঁর চাচাতো ভাই রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাসকে 'শ্বেতাঙ্গ জাতির রক্ষাকর্তা' হিসেবে প্রশংসা করে তাঁর কাছে চিঠি লিখতেন এবং রাশিয়াকে এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তারে উৎসাহ দিতেন<ref name="McLean pages 119-141">McLean, Roderick "Dreams of a German Europe: Wilhelm II and the Treaty of Björkö of 1905" pages 119-141 from ''The Kaiser'' edited by Annika Mombauer and Wilhelm Deist", Cambridge: Cambridge University Press, 2003 page 121.</ref><ref name="Fiebi-von Hase pages 143-175">Fiebi-von Hase, Ragnhild "The uses of 'friendship': The 'personal regime' of Wilhelm II and Theodore Roosevelt, 1901-1909" pages 143-175 from ''The Kaiser'' edited by Annika Mombauer and Wilhelm Deist", Cambridge: Cambridge University Press, 2003 page 165.</ref>। ১৮৯৪ সালের নভেম্বর থেকে উইলহেলম নিকোলাসকে 'পীত আতঙ্ক' থেকে ইউরোপের রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রশংসা করে তাঁর কাছে চিঠি লিখতেন এবং জারকে আশ্বাস দিততেন যে, ঈশ্বর স্বয়ং তথাকথিত এশীয় হুমকি থেকে ইউরোপকে রক্ষা করার জন্য রাশিয়াকে 'বেছে নিয়েছেন'<ref>Röhl, John ''Wilhelm II: Into the Abyss of War and Exile, 1900-1941'', Cambridge: Cambridge University Press, 2014 page 182.</ref>। ১৯০২ সালের ১ নভেম্বর উইলহেলম নিকোলাসের কাছে লেখেন যে, 'প্রাচ্যের বেশকিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ প্রদর্শন করে যে, জাপান ক্রমেই একটি অস্থির গ্রাহকে পরিণত হচ্ছে' এবং 'প্রতিটি নিরপেক্ষ ব্যক্তির কাছেই এটি সুস্পষ্ট যে কোরিয়া অবশ্যই রাশিয়ার'<ref name="McLean pages 119-141"/>। উইলহেলম তাঁর চিঠির শেষে চীন ও জাপান শীঘ্রই ইউরোপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে বলে সতর্ক করেন; তিনি লেখেন: ''সুযোগ্য জাপানি অফিসারদের নেতৃত্বাধীন খ্রিস্টধর্মের প্রতি ঘৃণায় পরিপূর্ণ বিশ থেকে ত্রিশ লক্ষ চীনা সৈন্য এবং আধডজন জাপানি ডিভিশন - ভবিষ্যতের এরকম চিত্র উদ্বেগজনক এবং সেটা অসম্ভবও নয়। বরং এটি পীত আতঙ্কের বাস্তব রূপ, যেটি আমি কয়েক বছর আগে বর্ণনা করেছিলাম এবং যে কারণে অধিকাংশ লোক আমার সমালোচনা করেছিল...তোমার অনুগত বন্ধু এবং ভাই, উইলি, আটলান্টিকের অ্যাডমিরাল''<ref>Röhl, John ''Wilhelm II: Into the Abyss of War and Exile, 1900-1941'', Cambridge: Cambridge University Press, 2014 page 183.</ref>। ১৮৯৪ সাল থেকে রাশিয়ার মিত্ররাষ্ট্র ফ্রান্স এশিয়ায় রাশিয়ার সম্প্রসারণবাদের পক্ষে ছিল না, এজন্য উইলহেলম এশিয়ায় রাশিয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আক্রমণাত্মকভাবে উৎসাহিত করেন। বার্লিনের কর্তাব্যক্তিরা বিশ্বাস করতেন যে, রাশিয়ার প্রতি জার্মান সমর্থনের ফলে রাশিয়া রুশ-ফরাসি মৈত্রীজোট ভেঙে নতুন একটি রুশ-জার্মান মৈত্রীজোট গঠন করতে পারে<ref name="McLean pages 119-141"/>। ফ্রান্স (১৮৯৪ সাল থেকে রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র) এটি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিল যে, তারা এশিয়ায় নিকোলাসের সম্প্রসারণ নীতি সমর্থন করে না, এবং ফরাসি প্রধানমন্ত্রী [[মরিস রভিয়ের]] জনসম্মুখে ঘোষণা করেন যে, রুশ-ফরাসি মৈত্রীজোট কেবল ইউরোপের জন্য, এশিয়ার জন্য নয়, এবং জাপান রাশিয়া আক্রমণ করলে ফ্রান্স নিরপেক্ষ থাকবে<ref>Röhl, John ''Wilhelm II: Into the Abyss of War and Exile, 1900–1941'' Cambridge: Cambridge University Press, 2014 pages 252-253</ref>। মার্কিন প্রেসিডেন্ট [[থিওডোর রুজভেল্ট]] রুশ-জাপান বিতর্কের সমাধানে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, উইলহেলমের 'পীত আতঙ্ক' প্রচারণা ইঙ্গিত দেয় যে জার্মানি রাশিয়ার সমর্থনে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে পারে এবং এটি রুশদের হঠকারী মনোভাবকে উৎসাহিত করছে<ref>Fiebi-von Hase, Ragnhild "The uses of 'friendship': The 'personal regime' of Wilhelm II and Theodore Roosevelt, 1901-1909" pages 143-175 from ''The Kaiser'' edited by Annika Mombauer and Wilhelm Deist", Cambridge: Cambridge University Press, 2003 page 163.</ref>। ১৯০৫ সালের ২৪ জুলাই ব্রিটিশ কূটনীতিক [[সিসিল স্প্রিং-রাইস|সিসিল স্প্রিং-রাইসের]] কাছে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, উইলহেলম এই যুদ্ধের জন্য আংশিকভাবে দায়ী কারণ "তিনি এটি ঘটানোর জন্য যা কিছু করা সম্ভব সবই করেছিলেন"। তিনি অভিযোগ করেন যে, 'পীত আতঙ্ক' সম্বন্ধে উইলহেলমের নিয়মিত সতর্কবাণী রুশদেরকে সমঝোতায় নিরুৎসাহী করে তুলেছিল, কারণ নিকোলাস ধারণা করেছিলেন জাপান রাশিয়া আক্রমণ করলে জার্মানি হস্তক্ষেপ করবে<ref>Fiebi-von Hase, Ragnhild "The uses of 'friendship': The 'personal regime' of Wilhelm II and Theodore Roosevelt, 1901-1909" pages 143-175 from ''The Kaiser'' edited by Annika Mombauer and Wilhelm Deist", Cambridge: Cambridge University Press, 2003 pages 163-164.</ref>। উইলহেলমের 'পীত আতঙ্ক' সম্পর্কিত বক্তৃতাগুলোতে এবং জার নিকোলাসের কাছে লেখা চিঠিগুলোতে জার্মান সমর্থনের প্রচ্ছন্ন আশ্বাস [[সেন্ট পিটার্সবার্গ|সেন্ট পিটার্সবার্গের]] অনেক কর্তাব্যক্তিকে বিশ্বাস করিয়েছিল যে দূর প্রাচ্যে রাশিয়ার সামরিক দুর্বলতা (যেমন- ট্রান্স-
১৯০৩ সালের ২৮ জুলাই সেন্ট পিটার্সবার্গে জাপানি রাষ্ট্রদূত [[কুরিনো
৩ অক্টোবর জাপানে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত [[রোমান রোজেন]] জাপানি সরকারের কাছে আলোচনার জন্য পাল্টা রুশ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এতে রাশিয়া মাঞ্চুরিয়ায় রুশ আধিপত্যকে স্বীকার করে নেয়া এবং কোরিয়ার উত্তরাঞ্চলকে জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে 'বাফার জোন' হিসেবে রাখার প্রস্তাব করে এবং বিনিময়ে কোরিয়ায় জাপানের 'বিশেষ অর্থনৈতিক অধিকার' স্বীকার করে নিতে রাজি হয়<ref>Text in ''Correspondence Regarding Negotiations ... (1903–1904)'' pp. 23–24.</ref>।
রুশ-জাপান আলোচনা চলতে থাকে, বিন্তু ১৯০৪ সালের জানুয়ারিতে জাপানি সরকার বুঝতে পারে যে মাঞ্চুরীয় বা কোরীয় সমস্যা সমাধানে রাশিয়া আগ্রহী নয়, বরং রাশিয়ার উদ্দেশ্য সামরিক প্রস্তুতির প্রয়োজনীয় সময় অর্জনের জন্য কূটনীতির মাধ্যমে কালক্ষেপন করা<ref name=HighBeam>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Koda |প্রথমাংশ=Yoji |ইউআরএল=http://www.highbeam.com/doc/1P3-840737501.html |শিরোনাম=The Russo-Japanese War: Primary Causes of Japanese Success |তারিখ=1 April 2005 |সাময়িকী=[[Naval War College Review]] |সংগ্রহের-তারিখ=6 April 2015 |সদস্যতা=yes |মাধ্যম=HighBeam}}</ref>। ১৯০৩ সালের ডিসেম্বরে উইলহেলম রুশ-জাপান সম্পর্ক শীতলীকরণে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে একটি কূটনৈতিক নোটে লিখেছিলেন: ''১৮৯৭ সাল থেকে আমার কখনো রাশিয়াকে এ বিষয়ে সন্দেহে রাখিনি যে যদি রাশিয়া দূরপ্রাচ্যে বড় ধরনের নীতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এর ফলে যদি সামরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়, তাহলে আমরা ইউরোপে তাকে রক্ষা করব (আমাদের পূর্ব সীমান্ত থেকে বিশাল রুশ সেনাবাহিনীর চাপ ও ভীতি দূর করার জন্য!)। এরপর রাশিয়া যখন পোর্ট আর্থার দখল করে নিল এবং আমাদেরকে 'বিশ্বাস করে' বাল্টিক থেকে তার নৌবহর সরিয়ে নিল এবং এর মাধ্যমে নিজেকে সাগরপথে 'আমাদের কাছে অরক্ষিত' করে ফেলল।
১৯০৪ সালের ১৩ জানুয়ারি জাপান প্রস্তাব করে যে, মাঞ্চুরিয়া জাপানি প্রভাবের বাইরে থাকবে এবং কোরিয়া রুশ প্রভাবের বাইরে থাকবে। কিন্তু ১৯০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাপান কোনো আনুষ্ঠানিক উত্তর পায় নি, ফলে ৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় জাপানি রাষ্ট্রদূত কুরিনো শিনিচিরোকে জাপানে ডেকে পাঠানো হয়<ref>Connaughton, p. 10.</ref> এবং জাপান রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে<ref name=HighBeam/>।
কিছু পণ্ডিত মনে করেন যে, জার দ্বিতীয় নিকোলাস [[রুশ জাতীয়তাবাদ|রুশ জাতীয়তাবাদের]] পুনর্জাগরণ ঘটানোর জন্য এই যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, যদিও এই ধারণার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই<ref>{{সাময়িকী উদ্ধৃতি |প্রথমাংশ=Raymond |শেষাংশ=Esthus |শিরোনাম=Nicholas II and the Russo-Japanese War |সাময়িকী=Russian Review |খণ্ড=40 |সংখ্যা নং=4 |বছর=1981 |jstor=129919 |পাতাসমূহ=411 }}</ref>। জারের উপদেষ্টারা যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না, কারণ ইউরোপীয় রাশিয়া থেকে প্রাচ্যে সৈন্য ও রসদপত্র পরিবহনের সমস্যা তাঁরা উপলব্ধি করেছিলেন<ref>{{বই উদ্ধৃতি |প্রথমাংশ=Robert W. |শেষাংশ=Tolf |শিরোনাম=The Russian Rockfellers |প্রকাশক=Hoover Press |পাতা=156 |আইএসবিএন=0-8179-6583-1 |বছর=1976 |ইউআরএল=https://books.google.com/?id=3DmsQLtWq1wC&pg=PA267 }}</ref>। কিন্তু নিকোলাস বিশ্বাস করতেন যে, রাশিয়ার বিশাল শক্তির সামনে জাপান আত্মসমর্পণ করবে, এবং তাঁর এই ভ্রান্ত বিশ্বাস যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল।
== যুদ্ধ ঘোষণা ==
|