দুর্যোগ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Khadem Ashraful Alam (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Khadem Ashraful Alam (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৯ নং লাইন:
ইংরেজি হ্যাজার্ড শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে বিভিন্ন জন বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করেছেন। কেউ হ্যাজার্ডের বাংলা করেছেন দুর্যোগ, কেউ করেছেন আপদ, কেউ বিপদ, আবার কেউ তিনটিই অর্থাৎ, আপদ/বিপদ/দুর্যোগ সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। আমরা প্রায়শ বিপদ-আপদ যুগল শব্দ হিসেবে ব্যবহার করি, যেমন- ঘর-বাড়ি, মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর ইত্যাদি। বিপদ-আপদ যখন একসাথে ব্যবহৃত হয়, তখন জান-মালের ক্ষতির আশঙ্কা বা সম্ভাবনা আছে এরূপ কোনো প্রক্রিয়াকে বোঝায়। একইভাবে বিপদ ও আপদ শব্দ দুটি যখন পৃথকভাবে ব্যবহার করা হয়, তখন এরা পৃথক পৃথক অর্থ প্রকাশ করে। আবার বিপদ ও দুর্যোগ সমার্থক শব্দ। দুর্যোগ শব্দটি প্রকৃতি বা মানবসৃষ্ট কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনায় মানুষের জান-মালের ক্ষতির সম্ভাবনা বা আশঙ্কা আছে এরূপ ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঝড়-বৃষ্টিপূর্ণ অন্ধকার রাতে কেউ বাইরে যেতে চাইলে আমরা বলি, এরূপ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বাইরে যেও না। ঝড়, বৃষ্টি ও অন্ধকারের মধ্যে ক্ষতির সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে, আর দুর্যোগ শব্দটি দ্বারা তারই আশঙ্কা বা সম্ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু আপদ শব্দটি সাধারণত তুচ্ছার্থে বা হীনার্থে ব্যবহার করা হয়। আপদ শব্দটি ক্ষতির সম্ভাবনা প্রকাশ করে না, বরং, বিরক্তি বা ঘৃণা প্রকাশ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সকালবেলা এক প্রতিবেশি টাকা ধারের জন্য এসে হাজির, অথচ পূর্বে ধার নেওয়া টাকা এখনো তিনি পরিশোধ করেননি। এরূপ অবস্থায় আপনি মনে মনে বলতেই পারেন- আপদটা এখন বিদায় হলেই বাঁচি। এখানে আপদ শব্দটি দ্বারা বিরক্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
 
== শব্দের উৎসউত্স ও পার্থক্য ==
দুর্যোগ শব্দটির বু্ত্পত্তি হচ্ছে দুঃ + যোগ = দুর্যোগ। অর্থাৎঅর্থাত্, সংস্কৃত ‘দুঃ’ উপসর্গের সাথে ‘যোগ’ যুক্ত হয়ে দুর্যোগ শব্দটি গঠিত। দুর্যোগ শব্দটি সন্ধি দ্বারা নিষ্পন্ন। আর আপদ শব্দটির বু্ত্পত্তি হচ্ছে আ + পদ্√পদ্ + ক্কিপ; অর্থাৎঅর্থাত্, আ উপসর্গ + পদ্√পদ্ ধাতু + ক্কিপ প্রত্যয়যোগে ‘আপৎ’‘আপত্’ বা ‘আপদ’ শব্দের উত্পত্তি। অপরদিকে, বিপদ শব্দটির বু্ত্পত্তি হচ্ছে= বি +পদ্ √পদ্ + ক্কিপ; অর্থাত্ ‘বি’ উপসর্গ + পদ্√পদ্ ধাতু + ক্কিপ প্রত্যয়যোগে ‘বিপৎ’‘বিপত্’ বা ‘বিপদ’ শব্দের উত্পত্তি।
ইংরেজি disaster শব্দটি মধ্য ফ্রান্সের desastre শব্দ থেকে, কারো কারো মতে প্রাচীন ইতালিয়ান ফরংধংঃৎড়disastro থেকে, আবার কারো কারো মতে গ্রিক শব্দ dus ইংরেজি bad অর্থ বা মন্দ/খারাপ এবং গ্রিক aster ইংরেজি star অর্থ তারা থেকে উদ্ভুত হয়েছে, যার অর্থ মন্দ তারার প্রভাব। এ শব্দটির মূল গ্রিক শব্দ ডিজাস্টার জোতির্বিজ্ঞানীয় ধারণা থেকে এসেছে, যার অর্থ গ্রহের ফেরে দুর্দৈব বা বিপর্যয় বা চরম দুর্দশা।
ইংরেজি হ্যাজার্ড (hazard) শব্দটির সংজ্ঞা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে দিলেও এর সার কথা হলো- হ্যাজার্ড বা দুর্যোগ হচ্ছে প্রকৃতি বা মানবসৃষ্ট এমন একটি প্রপঞ্চ যাতে মানুষের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে যদি মানুষের জান-মালের ক্ষতি না করে, তাহলে তা দুর্যোগই (hazard) থেকে যায়; কিন্তু যখন মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি করে, তখন তাকে বলা হয় ডিজাস্টার (disaster)। বিভিন্ন বিজ্ঞ জন প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে যার বাংলা প্রতিশব্দ‘বিপর্যয়’শব্দটিই মানানসই। প্রকৃতপক্ষে দুর্যোগ ও বিপর্যয় একই কার্যকারণের ভিন্ন ভিন্ন ফলাফলের নাম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঘূর্ণিঝড় যত শক্তিশালীই হোক, তা যখন গভীরসমুদ্রে অবস্থান করে, তখন তাকে আমরা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বলি, কিন্তু যখন ঐ ঘর্ণিঝড়টি জনবহুল উপকূলে আছড়ে পড়ে মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে ফেলে, তখন তাকে আমরা বিপর্যয় (disaster) বলি। একইভাবে বিজন মেরু বা মরু এলাকায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও প্রাণহানির আশঙ্কা নগণ্য, কিন্তু তা যদি কোনো ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চলে ঘটে তাহলে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। এজন্যই বলা যায়, দুর্যোগ ও বিপর্যয় একই কার্যকারণের ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল। যেমন- ভূঅভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত পদার্থকে আমরা ম্যাগমা বলি, কিন্তু তা যখন ভূপৃষ্ঠের বাইরে চলে আসে, তখন তাকে আমরা লাভা বলি। লাভা ও ম্যাগমা একই বস্তু দ্বারা গঠিত হলেও অবস্থানগত কারণে ভিন্ন ভিন্ন নাম। তথাপি, লাভা ও ম্যাগমার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে। অনুরূপভাবে দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মধ্যেও বৈশিষ্ট্যগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন-
দুর্যোগ হলো এমন অবস্থা যেখানে জীবনের, স্বাস্থ্যেও, পরিবেশের বা সম্পদ নাশের হুমকী রয়েছে। অপরদিকে, বিপর্যয় হলো এমন ঘটনা যা একটি সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করে। এটি একটি সম্প্রদায়ের মানবিক, অর্থনৈতিক ও পারিবেশিক ক্ষতিসাধন করে যা ঐ সম্পদায় নিজেদের সামর্থ দিয়ে পূরণ করতে পারে না।
দুর্যোগ হচ্ছে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট প্রপঞ্চ যা আমাদের গ্রহের একটি বৈশিষ্ট্য এবং যা প্রতিহত করা যায় না। সুপ্তাবস্থায় দুর্যোগ জীবন ও সম্পদের প্রতি কেবল হুমকীর ভান করে। পক্ষান্তরে, দুর্যোগ তখনই বিপর্যয় হিসেবে অভিহিত করা হয় যখন এটি মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। যখন একটি দুর্যোগ সক্রিয় হয়ে উঠে এবং এটি কেবল হুমকী থাকে না, তখন এটি বিপর্যয়ে রূপ নেয়।
 
ইংরেজি হ্যাজার্ড (hazard) শব্দটির সংজ্ঞা বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে দিলেও এর সার কথা হলো- হ্যাজার্ড বা দুর্যোগ হচ্ছে প্রকৃতি বা মানবসৃষ্ট এমন একটি প্রপঞ্চ যাতে মানুষের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। দুর্যোগ সংঘটিত হয়ে যদি মানুষের জান-মালের ক্ষতি না করে, তাহলে তা দুর্যোগই (hazard) থেকে যায়; কিন্তু যখন মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি করে, তখন তাকে বলা হয় ডিজাস্টার (disaster)। বিভিন্ন বিজ্ঞ জন প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে যার বাংলা প্রতিশব্দ‘বিপর্যয়’শব্দটিইপ্রতিশব্দ মানানসই।হিসেবে ‘বিপর্যয়’শব্দটিই অধিক মানানসই এবং গ্রহণযোগ্য। প্রকৃতপক্ষে দুর্যোগ ও বিপর্যয় একই কার্যকারণের ভিন্ন ভিন্ন ফলাফলের নাম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঘূর্ণিঝড় যত শক্তিশালীই হোক, তা যখন গভীরসমুদ্রে অবস্থান করে, তখন তাকে আমরা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বলি, কিন্তু যখন ঐ ঘর্ণিঝড়টি জনবহুল উপকূলে আছড়ে পড়ে মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে ফেলে, তখন তাকে আমরা ঘূর্ণিঝড়জনিত বিপর্যয় (disaster) বলি। একইভাবে বিজন মেরু বা মরু এলাকায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও প্রাণহানির আশঙ্কা নগণ্য, কিন্তু তা যদি কোনো ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চলে ঘটে তাহলে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। এজন্যই বলা যায়, দুর্যোগ ও বিপর্যয় একই কার্যকারণের ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল। যেমন- ভূঅভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত পদার্থকে আমরা ম্যাগমা বলি, কিন্তু তা যখন ভূপৃষ্ঠের বাইরে চলে আসে, তখন তাকে আমরা লাভা বলি। লাভা ও ম্যাগমা একই বস্তু দ্বারা গঠিত হলেও অবস্থানগত কারণে ভিন্ন ভিন্ন নাম। তথাপি, লাভা ও ম্যাগমার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে। অনুরূপভাবে দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মধ্যেও বৈশিষ্ট্যগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন-
পার্থক্য :
দুর্যোগ হলো এমন অবস্থা যেখানে জীবনের, স্বাস্থ্যেওস্বাস্থ্যের, পরিবেশের বা সম্পদ নাশের হুমকী রয়েছে। অপরদিকে, বিপর্যয় হলো এমন ঘটনা যা একটি সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করে। এটি একটি সম্প্রদায়ের মানবিক, অর্থনৈতিক ও পারিবেশিক ক্ষতিসাধন করে যা ঐ সম্পদায় নিজেদের সামর্থ দিয়ে পূরণ করতে পারে না।
দুর্যোগ হচ্ছে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট প্রপঞ্চ যা আমাদের গ্রহের একটি বৈশিষ্ট্য এবং যা প্রতিহত করা যায় না। সুপ্তাবস্থায় দুর্যোগ জীবন ও সম্পদের প্রতি কেবল হুমকীর ভান করে। পক্ষান্তরে, দুর্যোগ তখনই বিপর্যয় হিসেবে অভিহিত করা হয় যখন এটি মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। যখন একটি দুর্যোগ সক্রিয় হয়ে উঠে এবং এটি কেবল হুমকী থাকে না, তখন এটি বিপর্যয়ে রূপ নেয়। এ দিক থেকে বলা যায়, দুর্যেোগের গর্ভে বিপর্যয় লুকিয়ে থাকে।
== শ্রেণীবিভাগ ==
[[গবেষক|গবেষকগণ]] দূর্যোগ নিয়ে শতাব্দীকাল ধরে অধ্যয়ন চালিয়ে গেছেন। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে [[গবেষণা]] করে যাচ্ছেন। অধ্যয়নে একটি সাধারণ বিষয় হিসেবে মানুষের সৃষ্ট কর্মকাণ্ডেই দূর্যোগের প্রতিফলন ঘটেছে বেশী। মানুষ [[দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা|দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায়]] যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি।<ref>B. Wisner, P. Blaikie, T. Cannon, and I. Davis (2004). At Risk – Natural hazards, people's vulnerability and disasters. Wiltshire: Routledge, {{আইএসবিএন|0-415-25216-4}}</ref> তারা এ সকল দূর্যোগকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষতিকর বিষয়াবলী নিয়মিত আকার ধারণ করে ''প্রাকৃতিক'' কিংবা ''মনুষ্য-সৃষ্ট'' - এ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় জটিল আকারের দূর্যোগগুলো কোন কারণ ছাড়াই সৃষ্ট হয় ও তা উন্নয়নশীল দেশসমূহে প্রায়শঃই দেখা যায়। সাধারণ দূর্যোগও অনেক সময় ধীরে ধীরে বৃহৎ আকার ধারণ করে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন: ভূমিকম্পের ফলে [[সুনামি|সুনামি’র]] কারণ হয়ে দাঁড়ায় ও উপকূলীয় এলাকায় বন্যার সৃষ্টি করে।