বাংলাদেশের নারী শিল্পীগণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্প্রসারণ, অনুবাদ
সম্প্রসারণ, অনুবাদ
৭৪ নং লাইন:
[[কামিনী সুন্দরী পাল]] হলেন শশীভূষণ পালের স্ত্রী, যিনি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মহেশ্বরপাশা স্কুল অফ আর্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কামিনী দেবী সূচীশিল্পের শিক্ষিকা হিসেবে ওই স্কুলে যোগদান করেন। এমব্রয়ডারি চিত্রশিল্পের জন্যে তিনি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেনিং ছিলনা। তিনি খুলনার খালিশপুরে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম রাইচন দাস। তাঁর চিত্রশিল্পের বিষয় ছিল বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি এবং পলাশির যুদ্ধের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগের পর, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্ট নামে পরিচিত, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সেটা 'গভর্নমেন্ট ইন্সটিটিউট অফ আর্টস' নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে এই প্রতিষ্ঠানে প্রথম যে পাঁচজন নারী ভরতি হয়েছিলেন তাঁরা হলেন: তাহেরা খানম, রওশন আরা, হাসিনা আলি, জুবেইদা আখতার খাতুন এবং সয়িদা ময়ীনা এহসান। ময়ীনা এহসান ছাড়া সকলেই তাঁদের পাঁচ বছরের শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ করেছিলেন। জুবেইদা আখতারকে বাদ দিয়ে এই সকল নারীই শহরের এবং শিক্ষিত পরিবারসমূহ থেকে এসেছিলেন। এটা জানা যায় যে, তাঁদের শিল্পজগতে প্রবেশের ব্যাপারে তাঁদের পরিবারবর্গ থেকে কোনোরকম বাধা আসেনি। তাহেরা খানম পরবর্তীতে স্বনামধন্য শিল্পী কায়ুম চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং অঙ্কনকার্য জারি রাখেন (চিত্র 1.15)। এটা মানতেই হয় যে, এই নারীরা খুবই সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, কেননা, তৎকালীন সমাজের ছুঁৎমার্গকে উপেক্ষা করে তাঁরা এরকম অস্বাভাবিক একটা অধ্যয়নের বিষয় নির্বাচন করেছিলেন। এটাও সত্যি যে, পরবর্তীকালে যে নারীগণ শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ নিয়েছিলেন তাঁরা তাঁদের সৃষ্টিশীল কাজের মধ্যে নিজেদের শিক্ষার দৃশ্যমান প্রয়োগ করেননি। অনেকে তাঁদের শিক্ষাক্রমের অধ্যয়ন সম্পূর্ণ করতে পারেননি। শিল্পাভ্যাসের মূলস্রোতের সঙ্গে সামাজিক এবং পারিবারিক দায়িত্বকে মেলানো নারীদের পক্ষে খুব সহজ কাজ ছিলনা। আসলে যে সমস্ত নারী সমাজ ও পরিবারের কাজকর্ম সম্পূর্ণ করে সময় বের করতে পারতেন তাঁরাই মূলস্রোতের শিল্পে অবদান রাখতেন। এব্যাপারে এদেশে [[নোবেরা আহমেদ]] হলেন একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ভাস্কর্যে ডিপ্লোমা অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। তিনি যে ভাস্কর্য অভ্যাস করতেন তা শুধু প্রচারই হোত না; এমনকি ধর্মীয় বিতর্কও দেখা দিত। তাঁর ঐকান্তিকতা এবং আত্মোৎসর্গের ফলে তাঁর ভাস্কর্য এগিয়ে চলে। তিনি সিমেন্ট এবং লোহার রডের মতো অসাধারণ সব জিনিস নিয়ে গবেষণা করতেন। যাই হোক, তিনি লোকবিষয় এবং ধারা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছিলেন (চিত্র 1.14)। প্রথম ভাস্কর্য প্রদর্শনী, প্রথম বহির্দ্বার ভাস্কর্য এবং ঢাকায় এক গণমঞ্চে প্রথম সৃষ্ট দেওয়াল ভাস্কর্য সবই তাঁর পক্ষে গিয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মারকস্তম্ভ, জাতীয় শহিদ মিনার সৃষ্টিতেও তিনি যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৬ এবং ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ঢাকায় এই সমস্ত বৈপ্লবিক ঘটনার কারণে এবং উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তিনি তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। যাই হোক, লোকপ্রবণতা এবং আন্তর্জাতিকতাবাদের সংমিশ্রণে সাম্প্রতিক পশ্চিমি শিল্প সম্পর্কে তাঁর স্বচ্ছ ধারণা তাঁকে নতুন শিল্প সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করার পথে দৃঢ় পদক্ষেপ করতে সহায়ক হয়েছিল। সম্ভবত যেহেতু তিনি এক প্রকৃত আন্তর্জাতিক এবং উজ্জ্বল পরিবেশে বড়ো হয়েছিলেন, তাঁর পরিচয় এবং তাঁর দেশপ্রমিক ধরণা কখনোই নিকৃষ্টতার বন্ধনে বোঝা হয়ে থাকেনি। তবুও, সামাজিক স্বীকৃতি এবং পেশাদারি সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে নারী হিসেবে তাঁকে চাপে পড়তে হয়নি। সম্ভবত যে জন্যে তিনি ধারাবাহিকভাবে তাঁর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক ভাস্কর।