কৃত্তিবাসী রামায়ণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: ২০১৭ উৎস সম্পাদনা
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: তথ্য অপসারণ মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৫৯ নং লাইন:
 
== বৈশিষ্ট্য ও অনন্যতা ==
===শাক্ত ও বৈষ্ণব ভাবাদর্শের ছায়াপাত===
মূল [[বাল্মীকি]] রামায়ণে রাম দেবতা নন — তিনি দেবোপম পুরুষোত্তম, মানুষী শক্তি ও বজ্রকঠোর বীর্যসত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে [[রাম]]চন্দ্র সকলের আরাধ্য [[অবতার]], তুলসীচন্দনে লিপ্ত দেববিগ্রহ। তিনি কোমল করের ইঙ্গিতে সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার করতে পারেন; বংশীধারী কৃষ্ণের মতই তাঁর চক্ষু প্রেমাশ্রুপূর্ণ। এই কাব্যের পুথিগুলিতে রাম ও রাবণের ভীষণ যুদ্ধস্থলকে গৈরিক-রেণু-রঞ্জিত [[হরে কৃষ্ণ|হরিনাম]] সংকীর্তনভূমি বলে ভ্রম হয় এবং যুদ্ধের দামামা-রোল মাঝে-মাঝে বৈষ্ণব খোল-করতালের মৃদুতা গ্রহণ করে। এইভাবে [[সংস্কৃত]] [[রামায়ণ]] পরিবর্তিত হয়ে শাণিত তলোয়ারের চেয়ে বাঙালি ঘরের নয়নাশ্রুর প্রভাবশীল অস্ত্রের উপযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
 
বস্তুত, কৃত্তিবাসী রামায়ণে বাংলার শাক্ত ও বৈষ্ণব পরম্পরার দ্বন্দ্ব অনন্যভাবে ফুটে উঠেছে; উভয় লিপিকরদলের পরিমার্জনা কাব্যটিকে বিভিন্ন রসে পুষ্ট করেছে। [[বৈষ্ণব]] লিপিকরগণ তরণীসেন, বীরবাহু প্রভৃতি রাক্ষসবীরদের দ্বারা বৈষ্ণবীয় ভক্তিতে রামচন্দ্রের স্তবগান করিয়েছেন; অপরদিকে [[শাক্তধর্ম|শাক্ত]] লিপিকরগণ যুদ্ধজয়ের নিমিত্ত (কমলাক্ষ রামের 'কমল-আঁখি'র উৎসর্গ দ্বারা দেবী [[দুর্গা]] কর্তৃক লুক্কায়িত নীলপদ্মের স্থল পূর্ণ করে) শ্রীরামকে দিয়ে 'অকাল-বোধন' [[চণ্ডী]]পূজা করিয়েছেন। এভাবে মূল-অনুবাদটি বর্তমান আকারে পরিণত হয়েছে।
 
প্রতিপক্ষের প্রতি যুদ্ধক্ষেত্রে ভূপতিত হয়ে রাক্ষস [[বীরবাহু]]র বিনীত "অকিঞ্চনে দয়া কর রাম রঘুবর" এবং [[রাক্ষস]]শ্রেষ্ঠ দশানন [[রাবণ|রাবণের]] "অপরাধ মার্জ্জনা করহ দয়াময়" উক্তিতে বাংলার কৌপিনসার শিখাযুক্ত বৈষ্ণবভক্তের রূপ প্রতীয়মান হয়। [[বিভীষণ]]পুত্র [[তরণীসেন]] রামনামের অঙ্গশোভা করে বৈরাগীর সাজে যুদ্ধে গমন করেন এবং বিপক্ষ যোদ্ধা রামচন্দ্রের শরীরে ভগবানের বিশ্বরূপ অবলোকন করেন। সমাগত যুদ্ধার্থীর ভক্তিতে [[রাম]]-[[লক্ষ্মণ]]ও শ্রীচৈতন্য-নিত্যানন্দের মতো বৈষ্ণবোচিত বিনয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে অশ্রুপাত করতে থাকেন। মনে করা হয়, রামায়ণের এইসব পরিবর্তন তখনকার বঙ্গীয় সমাজজীবনের প্রকৃতি (বৈষ্ণব-নীতি) অনুসারেই সংঘটিত হয়েছিল।
 
তবে মূল [[বাল্মীকি]] রামায়ণের প্রতিধ্বনিও কাব্যটির বিভিন্ন পুথিতে অল্পবিস্তর শ্রুত হয়, যেমন:
<poem>
সর্ব্ব সুলক্ষণ যার হয় অধিষ্ঠান।
৭৪ ⟶ ৬৬ নং লাইন:
</poem>
 
রাম ও লক্ষ্মণের সৌহার্দ্য, [[কৌশল্যা]]র শোকসন্তাপ, ক্ষাত্রতেজ ও ব্রহ্মচর্যের চেয়ে [[সীতা]]র গৃহবধূর মত লজ্জাবনত মাধুরী — রামায়ণের কৃত্তিবাসী অনুবাদেই অধিকতর সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে।<ref>[[দীনেশচন্দ্র সেন]], বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, প্রথম খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, কলকাতা-১৩, প্রকাশ: ১৯৮৬, পৃষ্ঠা: ১৩৪-১৩৯</ref>
 
===বিদেশী উপাখ্যানের সঙ্গে সাদৃশ্য ===
দ্বাদশ শতকে [[ইউরোপ]]-এ প্রচলিত অনেক লোকায়ত আখ্যানের সাথে কৃত্তিবাসী রামায়ণের কোনও কোনও কাহিনির মিল পাওয়া যায়, যা বাল্মীকি রামায়ণের মধ্যে দৃষ্ট হয় না।