সিলেটের মরমী সঙ্গীত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Ash wki (আলোচনা | অবদান)
Ash wki সিলেটের মরমী সাহিত্য কে সিলেটের মরমী সঙ্গীত শিরোনামে স্থানান্তর করেছেন: ভুল পরিভাষা
Ash wki (আলোচনা | অবদান)
সংশোধন, রচনাশৈলী
১ নং লাইন:
{{বাংলাদেশের সঙ্গীত}}
'''সিলেটের মরমী সঙ্গীত''' বা '''মরমীবাদী গান''' বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন লোক ঐতিহ্যের অনবদ্য ফসলফসল। মরমী সঙ্গীত বা মরমীবাদের গান।[[মারফতী গান|মারেফতি]] বা ফকিরালী গানের পোশাকী নাম '''"মরমী সাহিত্য'''"। প্রাচীন [[লোকসাহিত্য]] বা লোকঐতিহ্যের একাংশের রুপান্তর মরমী সাহিত্য। উল্লেখ্য যে, মরমী সঙ্গীত ও [[বাউল গান]]কে অধুনা যুগে যদিও এক করে ভাব হয়, কিন্তু এর ইতিহাস সন্ধানি [[সৈয়দ মোস্তফা কামাল]] ও অন্যান্যদের কাছে এর ভাবধারায় ভিন্নতা রয়েছে বলে অভিমত পাওয়া যায়।<ref name="সিলেটের মরমী">সিলেটের মরমী মানস [[সৈয়দ মোস্তফা কামাল]], প্রকাশনায়- মহাকবি সৈয়দ সুলতান সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ, প্রকাশ কাল ২০০৯</ref><ref name="লোকসাহিত্য" >বাংলাদেশের লোকসাহিত্য ও লোকঐতিহ্য 'ডঃ আশরাফ সিদ্দিকী', প্রাকাশক - সাঈদ বারী প্রধান নির্বাহী, সুচিপত্র ঢাকা, প্রকাশকাল ২০০৫ ইংরেজী।</ref> কারণ হিসেবে বলা হয়, মরমী সঙ্গীত হচ্ছে সূফীবাদের বহিরপ্রকাশ। যা মুলত [[তাওহিদ]] (স্রষ্টার একত্ববাদ) রিসালতের (পয়গাম্বরের কাহিনী) উপর ভিত্তি করে রচিত এবং [[বাউল মতবাদ]] হচ্ছে স্রষ্টাই জীব জীবই স্রষ্টা ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রতিষ্টিত। তাই একে ভারতীয় বেদান্তের অদ্বৈত্যবাদ দ্বারা প্রভাম্বিত বলে ডঃ আশরাফ সিদ্দিকী ধারণা করেন।<ref name="লোকসাহিত্য" /> অন্যদিকে বাংলাদেশে সূফীবাদের আগনম কাল তুর্কি বিজয়ের বহু পূর্বে ছিল বলে হিজরি তৃতীয় শতাব্দির বিখ্যাত আরব পর্যটক সোলায়মান ছয়রাফীর ভ্রমণ কাহিনী থেকে জানা যায়। এ দিক দিয়ে ডঃ আশরাফ সিদ্দিকী থেকে পাওয়া যায়, মূল আরবীয় সূফীবাদ-ই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ছিল। খ্রিস্টিয় দশম শতাব্দির পর আরবীয় সূফীবাদ যখন গ্রিক দর্শনে প্রভাম্বিত হয় তখন থেকে এটিতে স্রষ্টার একত্ববাদের সাথে জীববাদ ইত্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটে এবং তুর্কি বিজয়ের মধ্যদিয়ে ভারতে প্রবেশ করে রাজশক্তির হাতে লালিত পালিত হয়ে বৈদান্তিক সাহিত্যের শব্দমালা মিশ্রিত হয়। যার ফলে বৌদ্ধদের কাছে প্রসংশিত হয় এবং বৌদ্ধরা ব্রাহ্মণবাদ থেকে মুক্তির পথ পেয়ে ইলামের আর্দশ গ্রহণ করে।<ref name="লোকসাহিত্য" /> বাংলাদেশে সূফীদের আগমনের পথ ছিল চট্টগ্রামের বিখ্যাত বন্দর । এর মধ্য দিয়ে সুফীরা বাংলায় আসেন এবং [[চট্টগ্রাম]] সহ সিলেটে আস্তানা গড়ে বসবাস করেন। হিজরী সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে সিলেট বিজয়ের মধ্যদিয়ে সর্বোপরি সুফীরা এখানে এসে বসবাস করেন। যার ফলে এ অঞ্চল সুফীবাদের রাজধানীতে পরিণত হয় । পরবর্তিতে এখান থেকে সূফী মতবাদ বিস্পরিত হয় সারা বাংলেদেশে । সে কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সিলেটাঞ্চলের মরমী গীতিকার প্রকারভেদ ভিন্ন বলে অনুমিত। তাই এগুলোকে এ অঞ্চলে সিলেটের মরমী সাহিত্য বলে আখ্যায়িত করা হয়। ইতিহাস অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, মধ্যযুগের শুরু থেকে [[সিলেট]] অঞ্চলে জন্ম হয়েছে প্রখ্যাত, অজ্ঞাত অনেক মরমী সাধকদের। যারা হূদয় বীণার তারের সুরে ছন্দে রচনা করেছেন ঈশ্বর প্রেম সহ সৃষ্টির উপর অসংখ গীত। মানুষের জীবন-জীবিকা, আচার-আচরণ ও সুখ-দুঃখ নিয়ে রচিত এক কালের [[লোকসাহিত্য]] [[ঈশ্বর]] প্রেম, সৃষ্টি তত্ব জীবে জীবে প্রেম ইত্যাদির মুল্যবুদে সৃষ্টি হয়েছে মরমী সাহিত্যের।<ref name="লোকসাহিত্য" /> এ [[পৃথিবী]] নশ্বর বা অনিত্য, এখানের বাসিন্দাদের মিলে মিশে একে অন্যের সাথে জীবনজ্ঞাপন করা নামটিই হচ্ছে [[প্রেম]]। প্রেমকে জাগ্রত করে মানুষের হূদয়ে স্থায়ীত্ব করাটাই হচ্ছে মরমী মতবাদের মূল লক্ষ। এ বিষয়ে মধ্য যুগের কবি [[আলাওল]] তাঁর পদ্মাবতী কাব্যে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেনঃ<Center>প্রেম বিনে ভাব নাই ভাব বিনে রস<br />ত্রিভূবনে যাহা দেখি প্রেম হুনতে (হতে) বশ<br />যার হূদে জন্মিলেক প্রেমের অঙ্কুর<br />মুক্তি পাইল সে প্রেমের ঠাকুর<ref name="সিলেটের মরমী"/><br /></center>
সৈয়দ মোস্তফা কামালের মতে হূদয়ের গভীর এশক, [[মোহব্বত]] বা প্রেমের আধ্যাত্মিক বাণী ও সুর লহরীই মরমী সঙ্গীত। ইসলামের দৃষ্টিতে মরমীবাদকে [[সুফী]] [[সাধনা]] বলা হয়েছে। [[মাওলানা রুমীর]] মতেঃমতে এটি কোন পৃথক মতবাদ নয়। বরং ধর্মীয় চিন্তার একটি প্রকৃতগত পদ্ধতি বিশেষ। যা [[সৃষ্টি]] কর্তার কাছে মানবের আত্মসমর্তনেরই একটি ধারা বুঝায়। মরমী কবি তার অন্তরদৃষ্টি দিয়ে দেখা দুনিয়ার পার্থিব অপার্থিব বিষয় গুলোকে ছন্দে সুরে ব্যক্ত করে যে বাণী মানুষের কাছে পৌছায়, এটিই মরমী সাহিত্য।<ref name="সিলেটের মরমী" /> ডঃ মুমিনুল হক বঙ্গে সুফীবাদ গ্রন্থে বলেছেন; আরবদেশ সূফীবাদের জন্ম দিলেও পারস্য এর লালন পালন করেছে । [[সূফীবাদ]] আরবদেশ ছেড়ে যতই পুর্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে ততই পূর্বদেশীয় ভাবধারার সম্মিলন ঘটতে থাকে। অধ্যাপক আসদ্দর আলীর মতেঃ শ্যামল বাংলায় এর বিকাশ কাল ছিল সপ্তম হিজরীর প্রমথ পাদে। সূফী আউলিয়াগণ দ্বারা এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে [[ধর্ম]] প্রচারের মাধ্যমে। [[শাহজালাল (আওলিয়া)]] (রঃ) সহ ৩৬০ ষাট আউলিয়ার ভূমী সাবেক [[সিলেট জেলা]] বর্তমান [[সিলেট বিভাগ]]ই এর বিকাশ স্থল। এজন্য সিলেটকে বলা হয় বাংলার [[আধ্যাত্মিক রাজধানী]]। যুগ যুগান্তর ধরে সূফী, [[ফকির]], [[পীর]] ও আউলিয়ার ক্রমধারায় সিলেটে জন্ম হয়েছে বেশুমার ভাবুক, কবি ও সাধকদের । যারা সুর মুর্ছনার মধ্য দিয়ে মানুষকে দেখিয়েছে পরমাত্মাকে পাওয়ার পথ।<ref name="সিলেট বিভাগ" >সিলেট বিভাগের ভৌগোলিক ঐতিহাসিক রুপরেখা, সৈয়দ মোস্তফা কামাল, প্রকাশক- শেখ ফারুক আহমদ, পলাশ সেবা ট্রাস্ট সিলেট, প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারি ২০০১১, পৃঃ ১০ ।</ref>
==মরমী সাহিত্যে গোড়াপত্তন==
সিলেট একটি প্রাচীন জনপদ । আর্যদের বহু পূর্বে এ অঞ্চলে অস্ট্রেলীয়, দ্রাবিড় মঙ্গোলীয়সহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বসবাস করত। [[গারো]], [[খাসিয়া]], [[নাগা]], [[কুকি]] প্রভৃতি আধিবাসীদের প্রাচীন কাব্য, ভাষা, ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-উপচারে প্রফুল্লীত সাহিত্যে খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকে মিশ্রণ ঘটে [[আর্য]] সংস্কৃতির। অতপর সাত শত হিজরী থেকে মুসলমানদের আগমনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে [[মুসলিম]] সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে [[শাহ জালাল]] সহ ৩৬০ ষাট আউলিয়ার আগমনে সুফীবাদের প্রচলন শুরু হয়। এখানে আগত সুফী সাধকরা ইসালামিক আদর্শ ছড়িয়ে দিতে এখানকার আদিবাসীদের বিভিন্ন ভাষায় শিক্ষা দেন ইসলামিক পদ্ধতি বা রীতি রেওয়াজ। যার মধ্যে অন্যতম [[আরবী]] ফার্সী ও উর্দু । উল্লেখ্যিত ভাষা গুলোর সমন্নয়ে মরমী সাহিত্য নামে জন্ম নেয় এক নতুন সাহিত্যের । যাকে আজ কাল বলা হয় সিলেটের মরমী সাহিত্য। আরবী, ফার্সী ও উর্দু ভাষায় রচিত কাব্য, পুথি, [[গান]] ও পালা ইত্যাদি নিয়ে মরমী সাহিত্যের যাত্রা শুরু হয় বলে চৌধুরী গোলাম আকবর সহ গবেষকগণ বলে থাকেন। সিলেটের প্রাচীন সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে মদনুল ফওয়ায়েদ নামের ইসলামী গ্রন্থ । লিখেছেন তরফ বিজেতা [[সৈয়দ নাসির উদ্দীন|নাসির উদ্দীনের]] প্র-পৌত্র দিল্লীর সুলতানী দরবার হতে মালেক-উল- উলামা উপাধি প্রাপ্ত শাহ সৈয়দ ইসরাইল, গ্রন্থের [[ভাষা]] [[ফার্সী]]।<ref name="<ref name="সিলেট বিভাগ" /><ref>তরফ বিজেতা [[সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন]] ও মুড়ারবন্দ দরগাহ শরিফ। সৈয়দ মোস্তফা কামাল। প্রকাশনায়-সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন স্মৃতি পরিষদ মুড়ারবন্দ দরগাহ শরিফ। প্রকাশ কাল জানুয়ারি ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ</ref> শ্রীহট্টের পৈলের সৈয়দ বংশের শাহ সৈয়দ রেহান উদ্দীন ফার্সী ভাষায় কবিতা লিখে [[দিল্লী]] হতে 'বুলবুলে বাংলা' উপাধিতে খ্যাত হন। তিনি [[উর্দু]] ভাষায় 'মসনবীয়ে বাকাউলী' '[[খাবনামা]]' গ্রন্থদ্বয় রচনা করেন<ref>শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ, দ্বিতীয় ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড, পঞ্চম অধ্যায়, তরফের কথা গ্রন্থকার - [[অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি]]; প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম; উৎস প্রকাশন, ২০০৪।</ref> আরবী ফার্সী প্রচার ও প্রসারের জন্য এ অঞ্চলে প্রবাদ ছিলঃ<Center>ফার্সী জানে না যে কুমার<br />তারে মুহ করমু না ভাতার'।<br /></center>