প্রস্তর যুগ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Salim Khandoker (আলোচনা | অবদান)
→‎প্রাচীন প্রস্তর যুগ: ব্যাকরণ ঠিক করা হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
Elias khan bd (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৮ নং লাইন:
* [[মধ্য প্রস্তর যুগ]] বা [[মেসোলিথিক]]
* [[নব্য প্রস্তর যুগ]] বা [[নিওলিথিক]]
প্রত্নপ্রস্তর যুগ :
 
পৃথিবীতে মানুষ এসেছে এিশলক্ষ বছর আগে | এই এিশলক্ষ বছরের মধ্যে শেষদিকের মাএ সাতহাজার বছর বাদ দিলে সবটাই প্রত্নপ্রস্তর যুগ ( palaeolithic )
 
প্রত্নপ্রস্তরযুগের হিমযুগ এসেছে চারবার আর পর পর দুই হিমযুগের মাঝখানের সময়ে উষ্ণযুগ তিনবার | এক-একটি হিমযুগে পৃথিবীর কতটা অংশ হিমবাহের নিচে ঢাকা পড়েছিল আর কতটা অংশ মানুষের বসবাসের যোগ্য ছিল তার একটা সীমানা বিজ্ঞানীরা মোটামোটি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন | সে-সময়ের মানুষের চলাফেরার জন্য খুব যে জায়গা ছিল তা নয় | নতুন নতুন জায়গায় আস্তানা পাততে হয়েছিল মানুষকে | আস্তানা মানে ঘরবাড়ি নয় | শীতের হাত থেকে বাচবার জন্য মানুষকে বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল গুহার মধ্যে | হিমযুগ পার হতেই মানুষ গুহা ছেড়ে বাইরের ফাঁকা জায়গায় | পরের হিমযুগে আবার গুহা | আবশ্য কথাগুলি যতো সহজে বলা যাচ্ছে , আসলে ব্যাপারটা ততো সহজে ঘটে নি | হাজার হাজার বছর পার হয়ে তবে এক-একবার আস্তানা বদলের পালা এসেছে | তবে বিজ্ঞানীদের একদিকে সুবিধে হয়েছিল এই যে তারা একই জায়গা থেকে নানা সময়ে মানুষের নিদশন খুজে পেয়েছেন |
প্রত্নবিদরা এমন হাতিয়ারও খুঁজে পেরেছিলেন যা প্রথম হিমযুগের আগেকার কালের | হাতিয়ার গুলো এমন যে চোখের দেখায় চকমকি পথরের টুকরো ছাড়া কিছু মনে হয় না | বড়ো একখন্ড পাথর নানা প্রাকৃতিক কারনে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে | এসব টুকরোই কখনো বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার হয়েছিল | কাজেই বলা শক্ত হাতিয়ার, কোনটি হাতিয়ার নয় | কিন্তু দেখা যায় যে , পাথরের ভাঙচুর এলোমেলো নয় , কেউ এমন ভাবে ভেবেচিন্তে পথরকে ভেঙেছে যেন তা দিয়ে কাটা , চাঁছা, খোড়া-খোঁড়া বা এ-ধরনের কোনো কাজ করা সম্ভব , তাহলে সেটি অবশ্যই হাতিয়ার |
 
প্রত্নপ্রস্তরযুগের একেবারে গোড়ার দিকের হাতিয়ার সম্পকে সন্দেহ থাকতে পারে | কিন্তু এই যুগে খানিকটা পুরোনো হবার সঙ্গে নিশ্চিত প্রমান পাওয়া যায় , মানুষের হাতিয়ার তৈরি করতে ও ব্যবহার করতে শিখেছে | পিকিং-মানুষ ও জাভা-মানুষের কথা আগে বলছি ! হাতিয়ার তৈরি করা ও ব্যবহার করা ছাড়াও তারা আগুনকে বশে এনেছিল |
 
কিন্তু হাতিয়ার আগুনের কথা বলার আগে মানুষের অন্য একটা কৃতিত্বের কথা আগে বলা দরকার | তা হচ্ছে-- ভাষা -- মুখের কথায় একজনের মনের ভাব আরেকজনের কাছে কাছে প্রকাশ করার ক্ষমতা |
ভাষা :
 
ভাষা নিয়ে মানুষ জন্মায় না | জন্মের পরে শিশুর গলা দিয়ে যে আওয়াজ বের হয় তা ভাষা না | ভাষা তাকে শিখতে হয় | বড়দের মুখের ভাষা শুনে সে ভাষা শিখে |
কিন্তু সেই আদিম মানুষকে ভাষা শিখিয়েছিল কে ?
এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিতে হলে বলতে হয় আদিম মানুষকে ভাষা শিখিয়েছিল মানুষের হাত |
কথাটা ব্যাখ্যা করা দরকার |
বাচাঁর তাগিদে মানুষকে চিরকাল দল বাঁধতে হয়েছে | একা থাকা তার পক্ষে কখন নিরাপদ ছিল না | হিংস জন্তুজানোয়ারের আক্রমন ঠেকাতে হলে আর খাদ্যের জন্য শিকার করতে হলে দশ হাত এক হওয়া দরকার | আর মিলে মিশে কাজ করতে হলে গোড়াতেই দরকার নিজেদের মধ্যে একটা বোঝাপোড়ার ব্যবস্হা -- একজনের ভাবনাকে দশজনের ভাবনা করে তোলে | তার মানে , ভাবের আদান প্রদান করা |
কিন্তু তখনও ভাষা আবিষ্কার হয়নি |
ভাষার গোড়াতেই এই অঙ্গভঙ্গি | অঙ্গভঙ্গি থেকেই ভাষার জন্ম | যখন শিকার করতে যেত তারা তখন সংকেত(signal) ব্যবহার করতো |
মানুষের ভাষাকেও বলা হয় সংকেতের সংকেত | আদিম মানুষদের ভাষা ছিল না তাই ছিল না কিন্তু তারা সংকেতের সংকেত দিত গলা দিয়ে , বোবাদের আওয়াজ বার করে আর হাত পা নেড়ে |
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে , ভাষা জন্মেরও একটা ইতিহাস আছে | সেই ইতিহাসকে খুজতে হবে মানুষের বাস্তব জীবনযাএার মধ্যে , বেঁচে থাকার তাগিদে তার দল বাধা ও হাতিয়ার তৈরি করার মধ্যে |
অন্যদিকে , ভাষা তৈরি না হলে মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা হত না | চিন্তা করার ক্ষমতা না হলে মানুষের বুদ্ধিবৃওির বিকাশ হত না | হাত আর হাতিয়ারকে ঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে এই বুদ্ধিবৃওি সে অজন করেছে | মানুষকে তৈরি করেছে মানুষের শ্রম |
আগুন :
 
প্রত্নপ্রস্তরযুগের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার -- আগুন | জীবজগতে একমাএ মানুষ ছাড়া আর সকলের কাছেই আগুন একটা ভয়ের ব্যাপার | আগুনের ধারেকাছে কেউ ঘেঁষতে চায় না | আগ্নেয়গিরি থেকে যখন দমকে দমকে আগুন বেরিয়ে আসে বা আকাশ থেকে যখন বাজ পড়ে গোটা একটা গাছ দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে বা মাটি ফুঁড়ে জলন্ত গ্যাস আগুনের ফোরার মতো ছিটকে বেরোয় - সব জায়গাতেই আগুনের চেয়ারাটা এমন বুনো আর হিংস্র আর ভয়ংকর যে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক | কিন্তু এই ভয় পাওয়াটাকে বশে আনায় দুজয় সাহস মানুষের হয়েছিল | এ এক বিরাট কৃতিত্ব |
আগে বলেছি যে , জীবজগতে একমাএ মানুষই যে কোনো পরিবেশের সঙ্গে খাপ খইয়ে চলতে পারে |
ঠিক কোন সময়ে আগুন আবিষ্কার করেছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় নি | তবে পিকিং মানুষ যে আগুনের ব্যবহার জানত তা প্রমান পিকিং মানুষের গুহায় পাওয়া গিয়েছে |
পরবতীকালে বিজ্ঞানের যে শাখাটি রসায়ন বিদ্যা হিসেবে গড়ে উঠেছে তার সূএপাতও এই আগুন আবিষ্কারের মধ্যে |
গোড়ার দিকে আদিম মানুষ আগুন তৈরি করতে জানত না | বাইরে থেকে আগুন সংগ্রহ করে এনে গুহার মধ্যে জীইয়ে রাখত | আগুনকে নিবতে দেওয়া হত না কখনো | চকমকি পথর ঠুকে বা কাঠে কাঠ ঘষে আগুন তৈরির কায়দাটা শিখেছিল অনেক পরে শেষ হিমযুগের সময়ে |
যাইহোক , যদিও সেই আদিম যুগে বিজ্ঞানের জন্ম হয়নি , কিন্তু আগুনের আবিষ্কারকে একটা বড় রকমের বৈজ্ঞানীক আবিষ্কারের সঙ্গে তুলনা করা চলে | এতখানি অভিজ্ঞতা , পযবেক্ষন ও জ্ঞানের মধ্য দিয়ে যে আবিষ্কার তাকে নিশ্চয়ই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মযাদা দেওয়া চলে |
শিকার সংগ্রহ :
 
প্রত্নপ্রস্তরযুগে মানুষ খাদ্য তৈরি করতে শিখে নি | খাদ্যের জন্য হয় তাকে আঁতিপাতি করে ফলমুল খুঁজে বেরাতে হত | কিংবা দল বেঁধে শিকারে বেরত | খাদ্যসংস্থানের আর কোনো তৃতীয় উপায় ছিল না | কাজেই প্রত্নপ্রস্তরযুগকে শিকার ও সংগ্রহের যুগও বলা চলে |
অনুমান করা চলে , খাদ্যসংস্থানের জন্য যদি শুধু শিকার ও সংগ্রহের ওপর নিভর করতে হয় তাহলে খাদ্যে ব্যাপারে খুব একটা নিশ্চয়তা থাকে না | সে অবস্হার মুখের গ্রাসের ব্যবস্হা করার জন্যই মানুষের সবসময়ের মনোযোগ ও প্রচেষ্টা নিবদ্ধ রাখতে হয় |
একটু আগেই বলেছি , প্রত্নপ্রস্তরযুগে মানুষের সমস্ত মনোযোগ ও প্রচেষ্টা নিবদ্ধ ছিল শিকার ও সংগ্রহের কাজে | কিন্তু এমন দেখা যাচ্ছে , এই শিকার ও সংগ্রহের কাজের মধ্যেে দিয়ে তার চিন্তাজগতে নতুন জ্ঞানের সূএপাত হয়েছিল | কথাটা সব যুগের পক্ষেই সত্যি | মানুষের ধ্যানধারনা, জ্ঞান বিজ্ঞান , কোনো কিছু মানুষের মগজের মধ্যে আচমকাই গজিয়ে ওঠে না | বাস্তব অবস্থার মধ্যে , জীবনযাএার ধরনের মধ্যে এমন কতগুলো কারন তৈরি হয় যা থেকে ধ্যানধারনা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের সূএপাত | একটু পরেই আমরা শিল্প ও সংগীত সম্পকে আলোচনা করব | সেখানেও এই একই কথা | কিন্তু তার আগে প্রত্নপ্রস্তরযুগের হাতিয়ার সম্পকে কিছুটা আলোচনা সেরে নেওয়া দরকার |
হাতিয়ার :
 
হাতিয়ার তৈরি করতে গিয়ে মানুষকে প্রথমে ভাবতে হয়েছে কোন জিনিস দিয়ে সবচেয়ে বেশি পাকাপোক্ত হাতিয়ার তৈরি হতে পারে | বাশঁ , কাঠ , বা এ-ধরনের পলকা জিনিস দিয়েও নিশ্চই হাতিয়ার তৈরি হয়েছিল | কিন্তু হাজার বা লক্ষ বছর পরে সে সব হাতিয়ারের কোনো রকম নিদশনই পাবার উপায় নেই , কারন বাশঁ , কাঠ অল্প সময়ের মধ্যেই ধুলো হয়ে মাটির সাথে মিশে যায় | কিন্তু আজ পযন্ত আদিম মানুষের হাতিয়ারের যে-সমস্ত নিদশন পাওয়া যায় তা সবই পাথরের |
কিন্তু পাথর মানে যে কোনো পাথর তা নয় | আদিম মানুষের অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে জানতে হয়েছিল , ঠিক কোন ধরনের পাথর সবচেয়ে ভালো ছিল | পৃথিবীর সব জায়গায় মানুষ হাতিয়ার তৈরির জন্য বাছাই করেছে -চকমকি পাথর ( flint tools) | যা ছিল মূল পাথরের হাতিয়ার ( core tools ) |একখন্ড চকমকি পাথরকে নিদিষ্ট আকারে ভাঙা ছিল অনেক কঠিন ব্যাপার |
গোড়ার দিকে বড় পাথরকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে নিত | কিন্তু প্রত্নপ্রস্তরযুগের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে হাতিয়ার তৈরির কাজে কারিগরি দক্ষতা এসেছে | এরা বড় একখন্ড পাথর থেকে পাতলা পরত খসিয়ে নিত | এধরনের হাতিয়ারের নাম - পরত পাথরের হাতিয়ার ( flake tools) | পরত- পাথরের হাতিয়ার পাওয়া গিয়েছে হিমযগে ইউরোপে ও ইউরোশিয়ার উওরাঞ্চলে ( আল্পস , বলকান , ককেসাস , হিন্দকুশ , হিমালয় পবতমালাকে যদি একটা রেখা হিসেবে ভাবা হয় তাহলে তার উওরদিকের অঞ্চল ) | মুল পাথরের হাতিয়ার পাওয়া যায় আফ্রিকার সমস্ত অঞ্চলে , পশ্চিম ইউরোপে , দক্ষিন ভারতবষে |
চীন , উওরভারতের সোহন উপত্যকা ও মলয় উপদ্বীপ থেকে তৃতীয় আরেক ধরনের হাতিয়ার পাওয়া যায় যা পরত পাথরেরও নয় , মূল পাথরের ও নয় , যাকে বলা চলে নুড়ি পাথরের হাতিয়ার |
পরবতিতে তারা বশা তৈরি করে | বশা এমন একটা হাতিয়ার যা মানুষের হাতকে অনেকখানি লম্বা আর হাতের নখকে ভিষন ভাবে ধারালো করে তুলেছিল | ফলে হিংস্র জন্তু মানুষকে আর নাগালের মধ্যে পেত না , তার আগেই মানুষের এই ' লম্বা ও ধারালো হাতটি ' এসে বিঁধত তার বুক |
মানুষ শারিরীক গঠনের দিক দিয়ে নিয়ানডাটার | সাধারনভাবে এদের নাম দেওয়া হয়েছে মুস্তেরীয় ( mousterians ) |
তারপর প্রত্নপ্রস্তরযুগের তাক লাগানো আবিষ্কার -- তীরধনুক | এই তীরধনুক আবিষ্কারের পর থেকে আকাশের উড়ন্ত পাখিও মানুষের নাগালে এসে গিয়েছিল |
এমনিভাবে মানুষের হাত হয়েছিল এমেই লম্বা , জোরালো |
আচ্ছাদান ও আস্তানা :
 
খাদ্য ও হাতিয়ার বয়ে নিয়ে যাবার জন্য মানুষকে নিজের শরীরটাকে নানাভাবে কাজে লাগাতে হত | আদিমযুগের মানুষ পালক , হার , চামড়া‌ , ও রং বেরঙের পাথর দিয়ে তৈরি করত তাদের সজ্জা | এগুলো এমেই হয়ে উঠেছিল পোশাক ও অলংকার | ঘন পশমওলা চামরা দিয়ে শরীরটাকে ঢেকে রাখলে শীতের সময় শরীর গরম থাকে - এ আবিষ্কার করতে খুব দেরি হয়নি | তারা সেলাই করার জন্য ব্যবহার করত হাড়ের তৈরি সূঁচ আর শক্ত গাছের বাকল দিয়ে তৈরি সুতো |
বেচেঁ থাকার তাগিত থেকেই‌ মানুষ পোশাক ও অলংকার বযবহার করতে শিখেছে | একই তাগিদ থেকে শিখেছিল আস্তানা গড়তে | প্রথমে মস্ত বড় একটা গত খুড়ে নেওয়া হত | গতের্র মুখে দেওয়া হত বাশঁ , আর ডালপালা দিয়ে তৈরি করত চাল | রান্না , শোওয়া , খাওয়া , বসা ও কাজ করার জায়গা সব ই ছিল গতের্র মধ্যে |
সুতো কাটা , কপড় বোনা , মাটির পাএ তৈরি করা - এসব কাজের ধরন এমন যে অস্হির যাযাবর জীবনে তাদের স্থান নেই |
 
==প্রাচীন প্রস্তর যুগ==