বেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
নিলয় সরকার (আলোচনা | অবদান)
ভাষা
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
কিছু বেদ বিক্রেতাদের অপপ্রচার আর সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা পরিষ্কার করা হলো।
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৫১ নং লাইন:
 
এসব ছাড়া বেদে অনেক সামাজিক বিধিবিধান, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, চিকিৎসা ইত্যাদির কথাও আছে। এমনকি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথাও আছে। বেদের এই সামাজিক বিধান অনুযায়ী সনাতন হিন্দু সমাজ ও হিন্দুধর্ম রূপ লাভ করেছে। হিন্দুদের বিবাহ, অন্তেষ্টিক্রিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও বৈদিক রীতিনীতি যথাসম্ভব অনুসরণ করা হয়।ঋগ্বেদ থেকে তৎকালীন নারীশিক্ষা তথা সমাজের একটি পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়। অথর্ববেদ থেকে পাওয়া যায় তৎকালীন চিকিৎসাবিদ্যার একটি বিস্তারিত বিবরণ। এসব কারণে বেদকে শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই নয়, প্রাচীন ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও ইতিহাসের একটি দলিল হিসেবেও গণ্য করা হয়।
 
=সংক্ষিপ্ত বেদ পরিচয়=
"বেদ" শব্দটি 'বিদ্' ধাতু থেকে নিষ্পন্ন।বিদ্' ধাতুর অর্থ - জানা।সেজন্য বেদ শব্দের ধাতুগত অর্থ - জ্ঞান বা বিদ্যা।বিদ্যা দুই প্রকার পরা ও অপরা।
"বিদ্' ধাতুর চারপ্রকার অর্থ হয়--
বেত্তি বেদ বিদ জ্ঞানে,
বিন্তে বিদ বিচারণে।
বিদ্যতে বিদ সত্তায়াং,
লাভে বিন্দতি বিন্দতে।
এই চার প্রকার অর্থ হচ্ছে --- জানা,বিচার করা,অবস্থান করা ও লাভ করা।
★ মহর্ষি ব্যাসদেব বেদকে চারভাগে করে তাঁর নিজের শিষ্য পৈলকে ঋগ্বেদ, বৈশম্পায়ন কে যজুর্বেদ, জৈমিনিককে সামবেদ এবং সুমন্ত কে অথর্ববেদ প্রচারের জন্য নির্বাচন করেন।
বেদ অপৌরুষেয় এবং নিত্য অর্থাৎ কোন পুরুষ বা মানুষের রচিত নয়।ঋক্‌বেদে পুরুষ সূক্ত বলেন --- বেদ পরমেশ্বরের রচিত নহে।শ্বাস প্রশ্বাসের। মত বেদমন্ত্র স্বতঃ নির্গত। এইজন্য বেদ নিত্য ও অপৌরুষেয়।
★বেদের বিভিন্ন নাম শ্রুতি, ত্রয়ী,নিগম ইত্যাদি। শ্রু ধাতুর অর্থ শ্রবণ করা, সৃষ্টির প্রারম্ভ থে আজ পর্যন্ত যাতে মানুষ সমস্ত সত্যবিদ্যা শ্রবণ করতে পারে তাঁর নাম শ্রুতি
তাছাড়া বেদ পূর্বে গুরুশিষ্য পরম্পরাক্রমে যুগ যুগ ধরে শ্রুত হয়ে ঋষি সমাজে প্রচলিত ছিল বলে বেদের অপর না শ্রুতি। আর বেদমন্ত্র তিন শ্রেণীতে বিভক্ত --ঋক্‌, যজু,সাম অর্থাৎ পদ্য,গদ্য ও গীতি।যেজন্য বেদকে ত্রয়ী বলা হয়।আর নিগম শব্দের অর্থ নিশ্চিতরূপে গমন করানো, যে শাস্ত্র পাঠে জনমানবের নিশ্চিতরূপে পরমেশ্বরের নিকট গমন করায় বা নিয়ে যায় তাই নিগম বা বেদ ।
 
প্রতি বেদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত - মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ, মন্ত্রভাগের অপর নাম সংহিতা। এতে প্রধানত যাগ যজ্ঞাদি ক্রিয়ার বিধি নিষেধ, মন্ত্র ও অর্থবাদ প্রভৃতি বিষয়গুলি উল্লেখিত আছে আর সংহিতা ভাগে যে সব গূঢ় রহস্য প্রচ্ছন্নভাবে নিহিত আছে,সেই সব অপ্রকাশিত অর্থ শ্রুতি নিজেই যে অংশে প্রকাশ করেছে, সেই অংশের নাম ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ ভাগে প্রধানত স্তোত্র,ইতিবৃত্ত, উপাসনা ও ব্রহ্মবিদ্যা বিষয় উল্লেখ আছে।এই অংশ গুলি গদ্যে রচিত।
★এই ব্রাহ্মণাংশের অংশবিশেষকে "আরণ্যক " বলে। কারন এতে বানপ্রস্থাশ্রমে অরণ্যবাসীদের পাঠ্য ছিল।বানপ্রস্থ অরণ্যবাসীদের পক্ষে যাগযজ্ঞ কষ্টসাধ্য হওয়ায় এবং উচ্চতর জ্ঞানলাভের জন্য তাদের হৃদয় ব্যাকুল হওয়ায় আত্মোপলবদ্ধির জন্য ধ্যান জপ, প্রার্থনা, উপাসনা ছিল তাদের মুখ্য কাজ
যাগযজ্ঞ ছিল গার্হস্থজীবনের প্রাধান কাজ।আরণ্যকও গদ্যে রচিত।
★বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ অংশ হলো উপনিষৎ। উপনিষৎ ব্রহ্মবিদ্যাই বিশেষ ভাবে ব্যাখ্যা করেছে।ব্রহ্মবিদ্যাই বেদের সারবস্তু,সেজন্য এর নাম বেদান্ত। অজ্ঞান নিবৃত্তি ও ব্রহ্মপ্রাপ্তির উপায় তাই বেদান্তের অপর নাম উপনিষৎ। উপনিষদের অর্থই ব্রহ্মবিদ্যা। সংহিতা ও ব্রাহ্মণ এই দুই উপনিষদের মধ্যে রয়েছে তাই তারা সংহিতোপনিষৎ বা ব্রাহ্মণোপনিষৎ নামেও উল্লেখিত হয়ে থাকে।
বেদের এই চারটে ভাগ সংহিতা,ব্রহ্মাণ,আরণ্যক ও উপনিষৎ এদের মধ্যে একটি ক্রমপর্যায় আছে। যেমন প্রথমে সংহিতা, তারপর ব্রাহ্মণ, তারপর আরণ্যক ও সর্বশেষ উপনিষৎ।
★সমস্ত বেদকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় - কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড।এরমধ্যে সংহিতা ও ব্রাহ্মণে প্রধানত কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। আর আরণ্যক ও উপনিষৎ জ্ঞানকাণ্ডেরর অন্তর্গত। এতে উপাসনা ও ব্রহ্মবিদ্যার উল্লেখ আছে।কর্মকাণ্ড জীবকে অভ্যুদয় ধনরত্নাদি ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এবং পারলৌকিক স্বর্গাদি ফল প্রদান করে।কিন্তু জ্ঞানকাণ্ড মানুষের চিত্তশুদ্ধি দ্বারা মুক্তি মোক্ষ দান করে।কর্মকাণ্ড মানুষকে প্রবৃত্তি মার্গে আর জ্ঞানকাণ্ড মানুষকে নিবৃত্তি মার্গে চালনা করার প্রেরণা দিয়ে মানুষের জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করে।
 
★বেদমন্ত্র গুলি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত পদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম ঋক গদ্যাত্মক মন্ত্রের নাম যজু এবং গানাত্মক মন্ত্রের নাম সাম।সেজন্য বেদের অপর এক নাম ত্রয়ী।ব্যাসদেব যজ্ঞে ব্যবহার্য এক এক শ্রেণীর মন্ত্রগুলিকে এক এক স্থানে বিভক্ত করে ঋক,যজু,সাম এই তিনটি বেদ গ্রন্থাকারে বিভক্ত করেছিলেন। আর যজ্ঞে ব্যবহার্য নয় অবশিষ্ট মন্ত্রগুলি যে বেদের অন্তর্ভুক্ত করলেন তাকে অথর্ববেদ বলা হয়।
পবিত্র বেদ অনাদি ও অনন্ত, এর জ্ঞানরাশি অনাদি অনন্ত। ঋগ্বেদের ১০/১৯০/৩ উল্লেখ আছে "অউম সূর্যাচন্দ্রমসৌ ধাতা যথা পূর্বমকল্পয়ৎ"প্রত্যেক সৃষ্টির পূর্বে আর একটি সৃষ্টি ছিল।অতএব যেহেতু সৃষ্টি অনাদি,সুতরাং সৃষ্টির পূর্ববর্তী বেদও অনাদি।
★বেদই হিন্দুর ধর্ম, বেদই হিন্দুর কর্ম,বেদই হিন্দুর হিন্দুত্ব।এক কথায় যিনি বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করেন বর্তমানে তিনিই হিন্দু নামে অভিহিত হন।বেদ না মানলে তিনি হিন্দু নহেন।বেদে সকল শ্রেণীর সকল হিন্দুর সর্বরকম উপাসনার সার সামগ্রী নিহিত আছে।বৈদিক পরবর্তিকালে জগতে যত কিছু উপাসনা পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে সবি বৈদিক উপাসনার অনুকৃত মাত্র।সেজন্য দেখিতে পাই বৈদিক ঋষিরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ তৃণ থেকে নিরাকার নির্গুণ পরব্রহ্মের পর্যন্ত উপাসনা করেগেছেন।বেদের মতে " সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম" "ঈশা বাস্যামিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।। "জগতে চেতন অচেতন যত কিছু বস্তু আছে সমস্ত কিছুর মধ্যেই ব্রহ্ম বিদ্যমান। এই পৃথিবীতে যত জাতি যত ধর্ম সসম্প্রদায় উৎপত্তি হয়েছে, সব জাতির সকল ধর্মের সার সামগ্রী বৈদিক ধর্মের অন্তর্ভুক্ত।
বেদমন্তেগুলির মধ্যে একটা নিজস্ব দুর্বার শক্তি নিহিত। তা না হলে কয়েক হাজার বছর ধরে অসংখ্য ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়েও এগুলি আমাদের কাছে পৌঁছোলো নিভাবে???
(এই সকল বক্তব্য সকলি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে উল্লেখ করলাম, তথ্য গুলি বৈদিক সাহিত্য থেকে নেওয়া)।
 
এইবার আশা যাক বাস্তবিক এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বেদের আলোচনাতে, যে আলোচনা কেবল ঈশ্বর আলোচনা নয়, যে আলোচনায় উঠে আসবে আমাদের পূর্বপুরুষের গৌরবময় ইতিহাস।
 
যখনি নিজেদের নিয়ে কিছু লিখতে চাই, ঠিক তখনি গুলিয়ে যাই ঠিক কোথাথেকে শুরু করবো বুঝে পাইনা, যেহেতু শুরুটা সঠিকভাবে কেউই জানা নেই সেহেতু শুরু দিয়ে শুরু করলামনা, বরং সেখান থেকে আধুনিক সময়ের বিভ্রান্তি শুরু সেখান থেকেই শুরু করলাম, আমি একজন সামান্য মানুষ তাই আমার কথার গুরুত্ব তেমন নেই, তবুও পাঠকদের কাছে অনুরোধ করবো অবশ্যই নিজেদের চেষ্টায় নিজেদের ইতিহাস নিয়ে সচেতন হতে।
 
আমাদের কাছে কোনটা বেশি ভয়ঙ্কর ১) একটি বিষাক্ত ভাইরাস যেকিনা ভয়াবহ মহামারী ঘটিয়ে বহু মানুষের জীবন কে শেষ করে দিতে পারে। নাকি ২) এমন একটি মারণ ব্যাধি যা মানব দেহের মধ্যে খুব শান্তিতে অবস্থান করে, ধীরেধীরে সমগ্র মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়।
 
প্রথমটির ক্ষেত্রে আগের থেকে নিজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে রাখলে মহামারী হবার সুযোগ নেই বরং মহামারী সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব।কারণ এই ভাইরাসটির গতিবিধি আমাদের জ্ঞাত।দরকার কেবল ক্লীবতা মূক্ত জীবন আদর্শ।
 
কিন্তু দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের আত্মসচেতনতা আর নিজেদের নিজেদের বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান ও নিজেদের উপর বিশ্বাস বৃদ্ধিই একমাত্র বেঁচে থাকার ঔষধ, কারণ এই ব্যাধি রূপ বদল করে নানাভাবে আমারে চেতন ও অবচেতন শরীরে আক্রমণ করতে সক্ষম, তাই একদম প্রথম থেকেই সচেতন থাকতে হবে।
 
প্রথম ভাইরাসের নাম যদি বর্বর আরবিয় সংস্কৃতির আগ্রাসন হয়, তবে দ্বিতীয়টির নাম ইয়োরোপীয় খ্রিষ্টীয় মিথ্যাচারী কূটনীতি।
 
আরবিয় প্রোপাগান্ডা ঘোষিত, তারা দ্বিধাহীন ভাবে বিধর্মীদের নিকেশ করতে চায়, সুতরাং নিজের অস্তিত্ব কে টিকিয়ে রাখতে গেলে ইসলামের চোখে ইসলামকে দেখতে হবে, সচেতনতা আর রক্ষণশীলতাই এই রোগের ঔষধ।
 
কিন্তু খ্রিষ্টীয় প্রোপাগান্ডা এতটাই সুচতুর এবং সুগভীর নিপুণ মহাশক্তিধর যাকিনা আমাদের মত মানুষের চর্মচক্ষুতে বোঝবার উপায় নেই, খ্রিষ্টীয় মিশনারিরা আমাদের সভ্যতার ইতিহাস যেভাবে বিকৃত করে গেছে, যার ফলে এত বিভেদ, কিন্তু এই চক্রান্ত আমাদের জানা নেই, যার ফলে অন্তর থেকে নিত্যদিন আমাদের ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিনা, সবথেকে অবাক করা ব্যাপার এইযে মিশনারিদের ভারতীয় ইতিহাস বিকৃতির অন্যতম কারণ ছিল ভারতে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার, সেটা যখন সফল হলো না, তখন সেই বিকৃত ইতিহাসের প্রচারের উত্তর দায়িত্ব তারা ভারতীয় বামপন্থিদের উপর দিয়ে গেল, যার ফল এখন বিভেদের মাধ্যমে ভারতবাসী ভুগছে।
 
তবে এইসব রোগ আমাদের মধ্যে বেশি প্রভাবের কারণ আমাদের অশিক্ষা, বস্তুতান্ত্রিক চিন্তাধারা, প্রচলিত ধর্মাচরণ পরিচালনা করছে কিছু অশিক্ষিত অপদার্থ যারা নিজেরই অন্তঃসারহীন যার ফলে আমরাদেরও পুষ্টিসাধন হচ্ছেনা, তাই আমরা উদাসীন,জাত্যভিমান শূন্য কাপুরুষ ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেঁচে আছি।
 
আমরা খালি অপেক্ষায় থাকি শেষ বয়সের উদ্ধারের, আর অবতারে অবতারণের,,,,
 
সে এক কঠিন সময়ে কোম্পানির হাত ধরে খ্রিষ্টান মিশনারিরা ভারতে প্রবেশ করল পাকাপাকি ভাবে।যেসময়ে ভারতের চারদিকে ভ্রান্তপুরাণ আর বৌদ্ধতন্ত্রের বাড়বাড়ন্ত, সম্প্রদায়গত বিভেদের কারণে ভারতের গৌরব ইতিহাস তখন শীতঘুমে, তার সঙ্গে তালেতালে চলছে ইসলামিক আগ্রাসন, ভারতের ইতিহাস তখন পুরাণকারদের হাতে বিকৃত, তবুও ভারত টিকে ছিল বৈদিক চেতনারর ভিত্তিমূলের কারণে।
 
অশিক্ষা, অন্ধবিশ্বাস ভারতের জনমানব কে তমসাবৃত করে রেখেছিল, যেটুকু জ্ঞানের আলোক তখনো কিছুটা প্রজ্বলিত ছিল, সেটাছিল আদি শংকরের বেদান্তের আলোক, যদিও স্বার্থের তাগিদে সেই জ্ঞানযোগেরও বিকৃতি শুরু হয়ে গেছিল সেই সময়।
 
কোম্পানি এল আর অল্পদিনের মধ্যেই ভারতের ভাগ্যবিধাতা হয়ে উঠল ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতবাসীর মনে দাস মনোভাব বা হীনতাবোধ সৃষ্টি করে স্থায়ী ভাবে ভারত শাসন করা, তাই তারা শুরু করল এক নতুন খেলা, সৃষ্টি হল এক নূতন মিথ্যা তত্ত্বের যা ভারতের ইতিহাস কেবল বিকৃত করল তাই নয় আরেক নূতন বিভেদের বীজবপন করে দিল বিজাতীয় আর্য জাতী, যারা নাকি ভেড়া চরাতে চরাতে য়ুরোপ থেকে ভারতে এসে সংস্কৃত ভাষার সৃষ্টি করেছিল।
 
খ্রিষ্টান ধর্মগুরুদের বৃহত্তর ভারতে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার ও প্রসারের ইচ্ছাকে, ইংল্যান্ডের রাজপ্রাসাদের বদান্যতায়, ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির প্রচেষ্টায়, ভারত সভ্যতার ধ্বংসের কাজ শুরু হয়।
 
এইকাজের রূপকার ছিলেন লর্ড মেকলে, আর এর বাস্তবায়ন করেন ফ্রিডরিশ মাক্স মূলর, রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ এবং মিথ্যা ধর্ম ব্যবসা প্রতিষ্ঠার এরা আর্য শব্দের অপব্যাখ্যা এক কাল্পনিক জাতী সৃষ্টিকরে স্বেচ্ছাকৃত বেদ বিকৃতি করে।
 
বেদে কোথাও আর্য শব্দকে জাতী হিসাবে দেখানো হয়নি, আর্য শব্দটি বাস্তবে একটি সামাজিক সংস্কৃতি সূচক, আর্য বলতে এক ভাষা সংস্কৃতির মানুষকে বোঝানো হয়, সেই মানুষ গুলি কৃষক, যোদ্ধা, ব্রাহ্মণ, যোগী, যাজ্ঞিক, যাযাবর অস্ত্রব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবই হতে পারে, তবে তাদের সংস্কৃতিগত ভাষা একছিল। আর্য অর্থে কখন মনুষ্যজাতিকে নয়, একটা ভাষা সংস্কৃতিকেই বোঝানো হয়।
 
ঋক বেদে আর্য শব্দের মোট ৩২ বার প্রয়োগ রয়েছে, কিন্তু কোথাও এই শব্দ জাতি বা ভাষা অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। মধ্যযুগীয় ভাষ্যকার ঐ ৩২টি ব্যবহারের মোট ৯টি অর্থ করেছিলেন১.বিজ্ঞ যজ্ঞানুষ্ঠাতা,২.বিজ্ঞ স্তোতা,৩.বিজ্ঞ, ৪.সর্ব গন্তব্য,৫.উত্তমবর্ণ,৬.ত্রৈবর্ণিক,৭.মণু,৮দেবোপাসক,৯.কর্মানুষ্ঠানের নিমিত্ত শ্রেষ্ঠ। এই ব্যাখ্যা ছাড়াও আর্য শব্দের আরও দুটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কৃষক, বৈশ্য।
 
ঋগ্বেদে ৪/২৬/২৩ অহং ভূমিমদ দামার্যায়াহং বৃষ্টিং দাশুতে মর্ত্যায়।।
 
ইন্দ্র বলেছেন, আমি আর্যগণকে (অর্থাৎ কৃষকগণকে)ভূমি দান করি, হবি দানকারী মানুষদের আমি বৃষ্টি দান করি।
 
কিন্তু মেকলে এবং মূলারে উদ্দেশ্য ছিল অসৎ তাই তারা শুরু করল ভারতীয় সভ্যতার ধ্বংসের খেলা, যদিও তারা তাদের উদ্দেশ্যর কথা বহুবার স্বীকার করেছে, তবুও কেন জানিনা আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে।
 
১৮৩৬ এর ১২ অক্টোবর মেকলে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, it is my belief that if our plans of education are followed up, there will not be a single idolator among the respectable castes in Bengal thirty years hence,( The life and letters of lord Macaulay by Rt,Hon'ble Sir George Otto Trevelayan, from the book 'Max Muller Exposed)
 
বাস্তবে plan of education এর একটি পরিকল্পনা হল আর্য জাতির আবিষ্কার। আবার ব্রহ্মদত্ত ভারতীর লেখা Max Muller Exposed বইতে, স্ত্রীকে লেখা মাক্স মূলরের একটা চিঠি আছে ১৮৬৬ তে সেখানে তার উদ্দেশ্যের যথেষ্ট আভাষ পাওয়া যায় "আমার অনূদিত বেদ ও তার সংস্করণ ভবিষ্যতে ভারতের ভাগ্যকে ব্যাপক ভাবে নির্ধারণ করবে।কারণ এটাই হল তাদের ধর্মের উৎস এবং তাতে রয়েছে তাদের ধর্মের মূল কী।আমি নিশ্চিত বুঝতে পারছি এই হল একমাত্র পদ্ধতি যা তাদের তিন হাজার বছরের সমস্ত ধ্যানধারণাকে নির্মূল করে দেবে(life and letters of Friedrich Max Muller, from Max Muller Exposed)
 
ধীরেধীরে সেই মিথ্যাই আমাদের মস্তিষ্কে স্থান পেল, এখন এমন অবস্থা ভারতে ভাগ্যবিধাতারা মিথ্যাবাদী মূলারের জন্মদিনে শ্রদ্ধা অর্পণ করে কারণ তাদের নিজেদের সভ্যতা সংস্কৃতি নিয়ে মাথা ব্যথা নেই আছে কেবল ক্ষমতা নিয়ে।
 
হরপ্পা মহেঞ্জোদারো যখন আবিষ্কার হল তখন সভ্যজগৎ মিশনারিদের পরিকল্পনা অনেকটাই বুঝতে পারলেন, সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ স্পৃহা নিয়ে কিছু ভারতীয় ক্ষমতার দালালদের ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতার সামান্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলিকে ধ্বংসের নিমিত্তে ভারত থেকে আলাদা করে দিল, তাই আজো দীর্ঘকালীন পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য মেকল আর মূলারে পাপবিদ্ধ প্রেত অপেক্ষা করে আছে যেযার কবরে।
 
এইবার বেদে উল্লেখকৃত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
★অপৌরুষবেদ চিন্তনঃ-
বেদ নিয়ে আমাদের জিজ্ঞাসার শেষ নেই, কিন্তু সেই জিজ্ঞাসা মেটাবার যথেষ্ট উপাদান আমাদের নেই, অপরপক্ষে নিত্যদিন নানানরকম প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের হতে হচ্ছে, কিন্তু আমরা নিরুত্তর।
 
আবার পরিতাপের ব্যাপার এইযে তথাকথিত হিন্দু সংগঠন গুলি নিজেদের সভ্যতা সংস্কৃতির সঠিক জ্ঞান প্রচারের বদলে নিজেদের কল্পনাপ্রসূত নানান অলিক অপদার্থ অর্বাচীন বিষয় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে নিজের স্বার্থে, আর আমরা নিজেদের সভ্যতা সংস্কৃতি থেকে তত দূরে চলে যাচ্ছি।
 
বাস্তবতা এইযে বেদ বুঝতে হলে যে ধরণের মানসিকতা প্রয়োজন খালি মানসিকতাই বা বলি কেন বেদার্থ নির্ণয়ের যে শিক্ষা ও জ্ঞানের দরকার তা আমাদের নেই, এবং যেসব বিদেশী পণ্ডিতদের অনুসরণ করে আমার বেদ চর্চা করি তাদের কাছেও এই শিক্ষা ও জ্ঞানের আশা রাখা যায়না।
 
আসলে আমাদের গলদটা শুরু হয়েছিল মধ্যযুগেই, পণ্ডিত কুলচূড়ামণি সায়াণাচার্যের ভাষ্যের সময় থেকেই, সায়ণ বেদকে কেবল কর্মকাণ্ডের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন যার ফলে বেদ হয়ে গেল একেবারেই একপেশে আর বিদেশি পণ্ডিতরা সায়ণের ভাষ্যের উপর অনুসরণ করেই নানান প্রশ্ন তুলতে লাগল, আর স্বদেশী পণ্ডিতরা তা সাক্ষীগোপালের কাজটা করে গেলেন, কিন্তু কেউই বেদার্থ নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান জীবন্ত মহাগ্রন্থ যাস্কাচার্য প্রণীত মহাকোষ নিরুক্ত এবং নিঘন্টুর সাহায্য নিলেননা, এটাই আশ্চর্যের বিষয়!!!।সন্ধ্যার ভাষার বেদার্থ বিকৃত হয়েছে যখন বেদ ঋষিদের হাত থেকে পুরোহিতন্ত্রের কুক্ষিগত হয়েছে, ঠিক তখন থেকেই বেদ কেবল ক্রিয়াকাণ্ডবহুল কতগুলি বাহ্যিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়ে গেল সায়ণ ভাষ্য সেই যুগেরই উর্বর ফল।
 
বেদ শব্দের ধাতু, বুৎপত্তি এইগুলি নিয়ে সবাই জানেন, আজ বেদ কেন অপৌরুষেয় তাই নিয়ে একটু বৈদিক ভাবধারার কথা উল্লেখ করি।
 
আমি যেই মুহূর্তে বেদ কে অপৌরুষেয় লিখেছি ঠিক তখনি যুক্তিবাদী বেদপন্থীরা আমাকে সেমিটিক চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ একজন ধর্ম বিশ্বাসী হিসাবে তাকমা লাগিয়ে দিয়েছে, এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
 
তাহলে সামান্য খুলেই বলি কেন বৈদিক ঋষিরা বেদ কে অপৌরুষ বলতেন যা চিরন্তন সত্য, যেই বেদবাক্য অস্বীকার করলে সত্যকে অস্বীকার করা হবে।
 
#অপৌরুষেয় বেদ
বেদের প্রতিটি মন্ত্র ঋষিদের জীবনব্যাপী সাধনার অপরোক্ষানুভূতি(Direct Realization) ফল। এই অর্থেই বেদকে বলা হয় অপৌরুষেয়।
 
সমগ্র ঋষিদের সামগ্রিক অনুভূতির সমষ্টিপ্রকাশ,সেই সামগ্রিক জ্ঞানের নাম যদি বেদ হয় তাহলে তা কোন পুরুষবিশেষের দৃষ্ট বা সৃষ্ট একথা বলা যায় না।কাজেই কোন বিশেষ লোক নিজেকে বেদমন্ত্রে রচয়িতা হিসাবে দাবী করতে পারে না।পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা সায়ণের ভাষ্য অনুসরণ করে অপৌরুষেয় অর্থে কোন লোকের দ্বারা রচিত নয়,,,,,,, এই ভেবে এই তথ্যকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখেছেন।
তাদের যদি প্রশ্ন করা হয় মানব সভ্যতা বলতে কি কোন বিশেষ মানুষের অবদানকে বোঝায়? তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন যুগ যুগ ধরে দেশে দেশে কালে কালে সংস্কৃতি এবং কৃষ্টির ক্ষেত্রে সমগ্র মানবসমাজের যে অবদান, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিগত যে প্রগতিশীল প্রবহমানতা তারই নাম যদি মানব সভ্যতা হয়, তা যেমন কোন বিশেষ মানুষের দ্বারা সৃষ্ট নয় তেমনি মানবীয় জ্ঞানের সামগ্রিক রূপের নামই বেদ, এই অর্থেও বেদ অপৌরুষেয়।
 
সকলের মতামত কামনা করি। আর সবার সুবিধার্থে একটা ছবি দিচ্ছি, যেটা দেখলে আমাদের ভুল অনেকটা কেটে যাবে, বৈদিক সংস্কৃত এবং বর্তমান প্রচলিত তফাৎ টা বুঝতে পারবেন।
 
★গোধন ও তাঁর মর্যাদাঃ-
প্রথমেই আমাদের জেনে রাখা উচিৎ যে বৈদিক ঋষিরা গোখাদক ছিলেন না, বেদে অশ্ব বা গো হত্যার কথা কোথাও নেই।
 
বেদ বুঝতে হলে যেমন অনুশীলন, স্বাধ্যায়ের প্রয়োজন হয়, তেমনি মহর্ষি পাণিনির ব্যাকরণ, মহামুনি যাস্কের নিরুক্ত, নিঘন্টু ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলি গুরুজনদের কাছে পড়তে হয়, নাহলে বৈদিক শব্দের মর্ম বোঝা যায় না।পাশ্চাত্ত্য পন্ডিতরা, ছাগল নায়করা বা রাম বাবুদের মত লোকরা যখন ভারতীয় সংস্কৃতি কে হেয় করার জন্য সায়ণ, মহীধর, উবটের বিকৃত বেদব্যাখ্যার আশ্রয় নেন, তখন বুঝতে হবে তারা যতই পণ্ডিত হোকনা কেন তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।
 
এটা ভারতবর্ষ এখানে গো কে সভ্যতার অন্যতম সম্পদ হিসাবে মান্য করা হয়, তার প্রতিদানের জন্য মানুষরা গো'কে ভগবতী জ্ঞানে পূজা করেন, যুগযুগের এই সংস্কারকে যারা বিদ্রূপ বা বিকৃত করে তারা আমাদের চোখে ম্লেচ্ছ, যবন ছাড়া আর কিছুই না।
 
প্রাচীনকালে আমাদের দেশে অশ্বমেধ, গোমেধ যজ্ঞ করা হত। তাই বিকৃতকামী পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিত এবং তাদের উচ্ছিষ্টভোজী রামশ্যাম বাবুরা মনে করেন যে, ঐসব যজ্ঞকালে যথেচ্ছভাবে অশ্বহত্যা ও গোহত্যা করা হত। এই অপদার্থদের যদি জিজ্ঞসা করা হয়, আমাদের শাস্ত্রে তো পিতৃযজ্ঞ ও অতিথি যজ্ঞের উল্লেখ আছে তাহলে কি বুঝতে হবে ঐ সব যজ্ঞে মাবাপ এবং অতিথিবর্গকে হত্যা করা হত?
 
নিঘন্টুতে যজ্ঞের একটা প্রতিশব্দ হচ্ছে অধ্বর(৩/১৭) অধ্বর শব্দের নিরুক্তি করতে গিয়ে যাস্ক লিখেছেন " অধ্বর ইতি যজ্ঞানাম্।ধ্বরতি হিংসাকর্মা, তৎপ্রতিষেধ, তৎপ্রতিষে।১/৮
এর অর্থ হল, অধ্বর শব্দটি দুটিভাগ,, অধ্বর। "অ" এর অর্থ নিষেধ, "ধ্বর " এর অর্থ হিংসা করা।কাজেই অধ্বর শব্দের অর্থ হল হিংসা না করা।কাজেই যজ্ঞ শব্দের সার্থক প্রতিশব্দ "অধ্বর" ব্যবহার করে যজ্ঞকালে প্রাণী হত্যা বা যে কোন রকমের হিংসা যে নিষিদ্ধ তা বৈদিক ঋষিরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।তাছাড়া যজুর্বেদ ১৩/৪২ নং মন্ত্রে উল্লেখ আছে "অশ্বং না হিংসীঃ"।কাজই অশ্বমেধ যজ্ঞ মানে যে অশ্ব বধ নয় তা প্রমাণিত হল, আসলে অশ্বমেধ হল রাজশক্তি সূচক, এইনিয়ে অন্যসময় আলোচনা করবো।
 
এখন দেখাযাক ঋষিরা গরু খেতেন কিনা, সেই নিয়ে বিচার করা যাক্।
 
নিঘুন্টু অনুসারে 'গো' শব্দের প্রতিশব্দ যা পাওয়াযায়,,অঘ্ন্যা,অদিতি,উস্ত্রা,উস্ত্রিয়া,মহী,জগতি ইত্যাদি(২/১১), এইবার অদিতি শব্দের মানে দেখা যাক,,,নদ্যতি অখণ্ডনীয়, অর্থাৎ যার অঙ্গ ছেদন অনুচিত। অ+দিতি অখণ্ডনীয়া।"গো" শব্দের প্রতিশব্দ হিসাবে অদিতি শব্দের প্রয়োগ মনে রেখে এবার যজুর্বেদের দুটি মন্ত্র দেখা যাক।
"গাং মা হিংসীরদিতিং বিরাজম্।১৩/৪৩
মানে, গরু অদিতি, তা বধের অযোগ্যা, তাকে হিংসা কোর না।
 
আবার, ঘৃতং দুহানামদিতিং জনায়াগ্নে মা হিংসী পর মে ব্যোমন্।১৩/৪৬
মানে মানুষকে যে ঘৃতদান করে তার নাম অদিতি, কাজেই তাকে হিংসা কোরো না।
 
আবার নিরুক্ত ২/৫ গো শব্দের অর্থ পাওয়া যায় প্রত্যক্ষ ভাবে, অর্থাৎ বেদে গো শব্দটি গরুর একদেশ অর্থাৎ দুধ সম্মন্ধে প্রযুক্ত, যাস্ক গোভিঃ শ্রীণীতমৎসরম মন্ত্রভাগ উপস্থিত করেছেন, যার মানে, গো অর্থাৎ দুধের সঙ্গে সোম পাক কর।এইটা আয়ুধ সূচক, এবার যদি কোনো বিকৃতকামী গরুর মাংসের সঙ্গে মদ রান্না বোঝায় তাহলে, বুঝে দেখুন।
 
অপদার্থরা ঋগ্বেদের ১০/৮৫/১৩ মন্ত্র, সূর্যায়া বহতুঃ প্রাগাৎ সবিতা যমবাসৃজৎ।অঘাসু হন্যতে গাবো অর্জুন্যোঃ পর্যু্যহ্যতে।এই মন্ত্রে হন্যতে দেখেই পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিত এবং তাদের উচ্ছিষ্টভোজী চামচারা প্রমাণ করতে চায় যে বৈদিক দেবতারা গুষ্টিসুদ্ধ মিলিত ভাবে গরু খেতেন।।
বাস্তবে এই মন্ত্রের দেবতা সূর্য এটি সূর্যসুক্তের অন্তরগত মন্ত্র এখানে সূর্য, পৃথিবী প্রভৃতির আকর্ষণ বিকর্ষণ এবং নানা বৈজ্ঞানিক তথ্য মানুষের সামাজিক, বিবাহদি প্রথার কর্তব্যের ব্যাপারে উল্লেখ আছে।
 
আর "হন" ধাতু কেবল বৈদিক অর্থে বোঝায় না, হন্ ধাতু অর্থ গতি(নিঘন্টু২/১৪) জ্ঞান, গমন,চালনা করা, তাড়না করা,প্রেরণা দান প্রভৃতিও বুঝায়।
 
'অঘাসু হন্যতে গাবঃ এই মন্ত্র উচ্চারণের সঙ্গে আমার পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতদের উচ্ছিষ্টভোজী রামবাবুদের কথা মনে আসে, যারা বৈদিক বিবাহে গরুর মাংস খাবার প্রথার উল্লেখ করে অপদার্থের মত।
 
অঘাসু হন্যতে গাবঃ কথাটার লৌকিক সরল অর্থ হল, বৈদিক যুগে গরুই ছিল আর্যদের প্রধান সম্পদ, বিবাহাদিতে যৌতুক হিসাবে গরুই দান করা হত। মঘা নক্ষত্রে সূর্যের কিরণ মন্দীভূত হয়, কাজেই কন্যার পিতৃপ্রদত্ত গবাদি পশু ঐ সময়েই বরের গৃহে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হত আর অর্জুন্যো পর্য্যুহ্যতে মানে ফাল্গুনী নক্ষত্রে কন্যা স্বামী গৃহে যাত্রা করতেন।
 
আশা করি বুঝতে পারছেন গোঘ্নঃ শব্দেরটিও গোহত্যা না, অঘ্ন শব্দের অর্থই ন হন্তব্য, যা নিধনের যোগ্য নয়। যাস্ক অঘ্ন্যা শব্দের অর্থ কেরছেন, অঘ্ন্যা অহন্তবা (নিরুক্ত)।কাজেই গো শব্দের সঙ্গে অঘ্ন্য যুক্ত আছে বলেই বরং গোহত্যার কথা স্বপ্নেও কল্পনায় আনা উচিৎ নয়।
 
এবার দেখুন মাতা রুদ্রাণাং বসূনাং স্বমাদিত্যনামমৃ তস্য নাভিঃ
প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায়,মা গামনাগামদিতিং বধিষ্ট।( ঋ ৮/১০১/১৫)
 
এর অর্থ হল গরু হল বসু, রুদ্র আদিত্যদের কন্যা, মা ও ভগিনীর সমান।গরু দুধ অমৃত দান করে।সকলে জেনে রাখ গরু,,যার অদিতি,তাকে বধ করো না।মা বধিষ্ট।
 
এইবার ভাবুন বৈদিক যুগে সমাজ গোমাংসভোজী ছিল, এটা যারা প্রচার করে তারা কতখানি গর্দভ অপদার্থ পাষণ্ড।
 
এর সঙ্গে বেদের শাসনবাক্য শুনুন
 
অন্তকায় গোঘাতম। (গোঘাতকের দণ্ড বিধান যজু ৩০/১৮)
 
আরে তে গোদনমুত পুরষঘ্নম।(গোহত্যাকারী ও নরহত্যাকারী দূর হও।।ঋ ১/১১৪/১০
 
★বহিরাগত আর্যঃ-
#বহিরাগত_আর্য_একটি_বিকৃত_অপপ্রচার।
 
আর্ষরা ভারতের একটি বহিরাগত জাতি, বেদ "চাষার গাণ" "বালকোচিত উন্মত্ত প্রলাম এইসব অপপ্রচারের মূল প্রাণপুরুষ প্রবক্তা হলেন মিশনারি মক্ষ্মুলার সাহেব।
 
খ্রিষ্টান মিশনারিদের দানে পুষ্ট মক্ষ্মুলার সাহেবের প্রচেষ্টা ছিল অসামান্য, অলিক, অবান্তর ও অপদার্থতার চরম প্রতিরূপ। কিন্তু তার নির্লজ্জতার সীমাপরিসীমা ছিলনা তাই আজীবন তিনি পৃথিবীর সুপ্রাচীন ইতিহাস কে বিকৃত করে গেছেন এবং নিজের রক্তবীজ ভারতে বপন করে গেছেন।
 
আর্যদের বৈদেশিক প্রমাণের জন্য মক্ষ্মুলার সাহেব যেসমস্ত বেদর বিকৃত করে তার তত্ত্বকে সত্য প্রমানের চেষ্টা করেছিলেন, সেইসমস্ত মন্ত্র ভাষ্য দেখলেই বোঝা যায় তিনি উৎকৃষ্ট শ্রেণীর অর্বাচীন ছাড়া আর কিছুনা।
 
একটি উদাহরণ দেখা যাক।
ঋকবেদ ১/সূ২২/১৭ মন্ত্র
 
ইদং বিষ্ণুর্বিচক্রমে ত্রেধা নি দধে পদম্।
সমূঢ়মস্য পাংসুরে।
 
এই মন্ত্রের ভাষ্য করতে গিয়ে মক্ষ্মুলার বিষ্ণুকে একজন মানুষ বলে মনন করেন (The sacred books of east, vol xxxii, vedic hymns translated by Max Muller) এবং তিনি বলেন বিষ্ণু একজন ব্যক্তি যিনি মধ্য এশিয়া থেকে দলবল সহ এ দেশে (ভারতে) এসেছিলেন, তখন পথে তিন স্থানে বিশ্রাম করেছিলেন এবং তাঁর চরণধূলিতে জগৎ পরিব্যাপ্ত হয়েছিল।তাই প্রমাণ হয়যে আর্যরা বর্হিরাগত।
 
এই কথা শ্রবণ মাত্রই তৎকালীন রাজানুগ্রেহে পুষ্ট ভারতীয় বিজ্ঞজনেরা নিজেদের বগল বাজিয়ে রাজানুগ্রহের আনুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন, যা এখন চলছে।
 
আসলে মক্ষ্মুলারের অপকর্মের প্রেরণা বেদের সায়ণ ভাষ্য।
 
মধ্যযুগের ভাষ্যকার সায়নাচার্য্য পুরাণের কিংবদন্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যে শব্দগত বেদ ভাষ্য করে গেছেন তাতেই মূল বিপত্তি।উনি ঐ ঋকে " ত্রেধা বিচক্রমে, পদং নিদধে পাংসুরে সমূঢ়ং এই বাক্য তিনটির প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি না করেই শব্দগত অর্থ করে অনর্থ ঘটিয়ে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের বিকৃতি করবার সুযোগ দিয়ে গেছেন।
 
ত্রেধা শব্দে তিনবার, বিচক্রমে শব্দে ভ্রমণ, পদং শব্দে পা, পাংসুরে শব্দে ধূলিকণা এবং সমূঢ়ং পদে সমাবৃত করবার ফলে উনি সর্বত্র ব্যাপক পরমাত্মা সূচক বিষ্ণু শব্দ কে দেবতা বুঝিয়েছেন, তেমনি সায়নের পথ ধরেই মোক্ষ্মুলার বিষ্ণুকে একটি মধ্য এশিয়ার ব্যক্তি বানিয়ে ছেড়েছেন।
 
== তথ্যসূত্র ==
'https://bn.wikipedia.org/wiki/বেদ' থেকে আনীত