নবান্ন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Navid Ibne Shazed Nirjon (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Navid Ibne Shazed Nirjon (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
[[চিত্র:নবান্ন৩.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|ধান থেকে ময়লা  আলাদা করতে ধানগুলো কুলা দিয়ে বাতাশে উড়ানো হচ্ছে। আলোকচিত্রী: নাভিদ ইবনে সাজিদ নির্জন]]
{{বাংলার সংস্কৃতি}}
'''নবান্ন''' [[পশ্চিমবঙ্গ]] ও [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম।<ref name="lokbiswakosh">''বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ'', ড. দুলাল চৌধুরী সম্পাদিত, আকাদেমি অফ ফোকলোর, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ৩২১-২২</ref> "নবান্ন" শব্দের অর্থ "নতুন অন্ন"।<ref name="lokbiswakosh" /> নবান্ন উৎসব হল নতুন [[আমন ধান]] কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব।<ref name="lokbiswakosh" /> সাধারণত [[অগ্রহায়ণ]] মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।<ref name="lokbiswakosh" /> কোথাও কোথাও [[মাঘ]] মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে।<ref name="bharatkosh">"নবান্ন", চিন্তাহরণ চক্রবর্তী, ''ভারতকোষ'', চতুর্থ খণ্ড, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতা, ১৯৭০, পৃ. ১৬০</ref> নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর<ref name="lokbiswakosh" /> গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড় সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন।<ref name="bharatkosh" /> নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, [[কাক|কাকের]] মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে "কাকবলী"।<ref>''বাংলার লোক-সংস্কৃতি'', আশুতোষ ভট্টাচার্য, ন্যাশানাল বুক ট্রাস্ট, ইন্ডিয়া, নতুন দিল্লি, ২০০৫, পৃ.৭০-৭১</ref> অতীতে [[পৌষ সংক্রান্তি|পৌষ সংক্রান্তির]] দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল।<ref name="bharatkosh" />
 
নবান্ন উৎসব হিন্দুদের একটি প্রাচীন প্রথা। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে।<ref name="lokbiswakosh" /> হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ে নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়।<ref name="lokbiswakosh" />
[[চিত্র:নবান্ন৫.jpg|থাম্ব|380x380পিক্সেল|ধান থেকে ময়লা  আলাদা করতে ধানগুলো কুলা দিয়ে ঝাড়া হচ্ছে। আলোকচিত্রী: নাভিদ ইবনে সাজিদ নির্জন]]
 
একদা অত্যন্ত সাড়ম্বরে নবান্ন উৎসব উদযাপন হত, সকল মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিলো।কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলায়,ঐতিহ্যবাহী এই নবান্ন উৎসব বিলুপ্তপ্রা্য। তবে এখনও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু এলাকায় নবান্ন উৎসব অত্যান্ত উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার আদমদিঘি উপজেলার শালগ্রাম সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে আবহমানকাল ধরে নবান্ন উৎসব অত্যান্ত উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়ে আসছে। ১৯৯৮ সন থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব উদযাপন শুরু হয়েছে। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ প্রতিবছর পহেলা অগ্রহায়ণ তারিখে নবান্ন উৎসব উদ্যাপন করে। ইদানীং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আনুষ্ঠানিক নবান্ন উৎসব উদ্যাপিত হচ্ছে।
যেমন মুর্শিদাবাদ,বীরভূম, বর্ধমান এসব জেলা গুলিতে ।
৯ নং লাইন:
== নবান্ন উৎসব<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.dailynayadiganta.com/amar-dhaka/367011/নবান্ন-উৎসব|শিরোনাম=নবান্ন উৎসব|ওয়েবসাইট=Daily Nayadiganta|ভাষা=bn|সংগ্রহের-তারিখ=2019-01-28}}</ref> ==
ঋতুবৈচিত্র্যে হেমন্ত আসে শীতের আগেই। কার্তিক আর অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে হেমন্ত ঋতু। অগ্রহায়ণের নবান্ন নিয়ে আসে খুশির বার্তা। নতুন ধান ঘরে উঠানোর কাজে ব্যস্ত থাকে কৃষাণ কৃষাণীরা। আর ধান ঘরে উঠলে পিঠে পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। পাড়ায় পাড়ায় চলে নবান্ন উৎসব। গ্রাম বাংলায় নতুন এক আবহের সৃষ্টি হয়। নবান্ন উৎসবের সাথে মিশে আছে বাঙালিয়ানার হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সং¯ৃ‹তির নানা দিক। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি জাতি ধর্ম বর্ণকে উপেক্ষা করে নবান্নকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠে। একে অন্যের মধ্যে তৈরি হয় এক সামাজিক মেলবন্ধনের।
[[চিত্র:নবান্ন৬.jpg|থাম্ব|383x383পিক্সেল|জমি থেকে ধান কেটে ঘরে নিয়ে আসছেন একজন কৃষক। আলোকচিত্রী: নাভিদ ইবনে সাজিদ নির্জন]]
 
 
অগ্রহায়ণের শুরুতেই আমাদের গ্রাম বাংলায় চলে নানা উৎসব, নানা আয়োজন। নতুন ধান কাটা আর সেই সাথে প্রথম ধানের অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় এই উৎসব। বাঙালির বার মাসে তের পাবর্ণ- এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো গাঢ় করার উৎসব। হেমন্ত এলেই দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ ছেয়ে যায় হলুদ রঙে। এই শোভা দেখে কৃষকের মন আনন্দে নেচে ওঠে। নতুন ফসল ঘরে ওঠার আনন্দ। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির জীবনে অগ্রহায়ণ কৃষকের নতুন বার্তা নিয়ে আগমন ঘটে। নবান্ন হচ্ছে হেমন্তের প্রাণ। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক নানা রকম খাবার। সুস্বাদু খাবারের গন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ। সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর বাঙালির বিশেষ অংশ নবান্ন ঘিরে অনেক কবি-সাহিত্যিকের লেখায় উঠে এসেছে প্রকৃতির চিত্র। কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় লিখেছেন- আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরেÑএই বাংলায়/মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্কচিল শালিখের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়। কবির কবিতার লাইনের মতোই নবান্নে চিরায়ত বাংলার রূপ।[[চিত্র:New crop.jpg|thumbnail|right|ফসলে তোলার প্রস্তুতি|382x382পিক্সেল]]অগ্রহায়ণ এলেই কৃষকের মাঠজুড়ে ধানকাটার ধুম পড়ে যায়। অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটান এ সময়ে কৃষাণ-কৃষাণীরা। ধান ভাঙার গান ভেসে বেড়ায় বাতাসে, ঢেঁকির তালে মুখর হয় বাড়ির আঙিনা। অবশ্য যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় এখন আর ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ খুব একটা শোনা যায় না। অথচ খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, ঢেঁকি ছাঁটা চাল দিয়েই হতো ভাত খাওয়া। তার পরও নতুন চালের ভাত নানা ব্যঞ্জনে মুখে দেয়া হয় আনন্দঘন পরিবেশ। তৈরি হয় নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর- পায়েসসহ নানা উপাদান। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে চলে খাওয়া দাওয়ার ধুম।
 
নবান্ন আর পিঠেপুলির উৎসবে আনন্দে মাতোয়ারা হয় সবাই। তাই অগ্রহায়ণ এলেই সর্বত্র বেজে ওঠে নতুন ধ্বনি। যেহেতু নবান্ন ঋতুকেন্দ্রিক একটি উৎসব তাই প্রতি বছর ঘুরেফিরে আসে নবান্ন উৎসব। হেমন্তে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় এই উৎসব পালন করা হয়। হাজার বছরের পুরনো এই উৎসবটি যুগ যুগ ধরে একইভাবে পালন হয়ে আসছে। নবান্ন উৎসবে গ্রামগঞ্জে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ মেলার। এসব মেলায় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ঢল নামে। আনন্দ দেখা যায় ছোটবড় সব বয়সের মানুষের মধ্যে। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ এই উৎসব ভিন্নভাবে পালন করে। মেলার এককোণে রাতভর চলে গানের উৎসব। এই উৎসবে উপস্থিত থাকেন নবীন প্রবীণ সবাই। হরেক রকমের বাহারি সব খাবারের দোকানের পসরা দিয়ে বসানো হয় গ্রামীণ মেলা। তবে গ্রামীণ মেলা এখন আর শুধু গ্রামেই হয় না, শহরের মানুষও এখন নবান্নের স্বাদ নিয়ে থাকে।