খ্রিস্টধর্ম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

[অপরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সম্প্রসারণ
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সম্প্রসারণ
১ নং লাইন:
{{Christianity}}
'''খ্রিস্টধর্ম''' একটি [[আব্রাহামীয় ধর্ম|অব্রাহামীয়]] [[একেশ্বরবাদ|একেশ্বরবাদী]] ধর্ম। অনুসারীর সংখ্যা অনুযায়ী এটি বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলির একটি। এই ধর্মের অনুসারীদের খ্রিস্টান বলা হয়। ২১শ শতকের প্রারম্ভে বিশ্বে ২২০ কোটি খ্রিস্টধর্মের অনুসারী ছিল, যা তৎকালীন বিশ্ব জনসংখ্যার (৬৭০ কোটি) ৩৩.২ শতাংশ।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.adherents.com/Religions_By_Adherents.html |শিরোনাম=Major Religions Ranked by Size |সংগ্রহের-তারিখ=2008-10-01 |কর্ম= }}</ref><ref name="World">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/xx.html|শিরোনাম=World|প্রকাশক=CIA world facts}}</ref> খ্রিস্টধর্ম একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম, অর্থাৎ খ্রিস্টানরা কেবল এক ঈশ্বরের উপাসনা করেন।<ref name="Monotheism">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.newadvent.org/cathen/10499a.htm |শিরোনাম=Monotheism |সংগ্রহের-তারিখ=2008-10-01 |কর্ম=[[Catholic Encyclopedia]] }}</ref> [[মধ্যপ্রাচ্য|মধ্যপ্রাচ্যের]] (বর্তমান [[ইসরায়েল]] রাষ্ট্রের উত্তরভাগে অবস্থিত) ঐতিহাসিক [[গালীল]] অঞ্চলের [[নাসরত]] শহর থেকে আগত ইহুদী বংশোদ্ভূত ধর্মীয় নেতা [[যিশু|যিশুখ্রিস্টের]] জীবন ও শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে খ্রিস্টীয় ১ম শতকে ধর্মটির উৎপত্তি হয়। "খ্রিস্ট" ([[গ্রিক ভাষা|গ্রিক]] Χριστός খ্রিস্‌তোস্‌) শব্দের অর্থ "(ঈশ্বরের) নির্বাচিত"।<ref group="টীকা">[[আরবি]] ও [[হিব্রু ভাষা]]র অনুকরণে বাংলা ভাষাতে কখনও কখনও যিশুখ্রিস্টকে "ঈসা মসীহ" নামেও ডাকা। ঈসা অর্থ "যিশু" আর মসীহ অর্থ "নির্বাচিত, অভিষিক্ত"।</ref>
 
ঐতিহাসিকভাবে [[নাসরত|নাসরতের]] যিশু প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের প্রদেশ যিহূদিয়াতে বসবাসকারী একজন ধর্মপ্রচারক ও নৈতিক শিক্ষক ছিলেন। যিশুর পালক বাবা [[যোসেফ]] ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রী। কিন্তু যিশুর অনুসারীরা অর্থাৎ খ্রিস্টানেরা বিশ্বাস করেন যে যিশু স্বয়ং ঈশ্বরের একমাত্র সন্তান। খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থগুলিতে বর্ণিত কাহিনী অনুযায়ী তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে পারতেন, এমনকি মৃত মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারতেন। এসব অলৌকিক ঘটনা সম্পাদনের প্রেক্ষিতে যিশুকে ইহুদীদের রাজা হিসেবে দাবী করা হয়। এই উপাধি ব্যবহার ও নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে দাবী করার দোষে জেরুসালেমের ইহুদী নেতাদের নির্দেশে যিশুকে জেরুসালেমে গ্রেপ্তার করা হয়। ইহুদীদের সর্বোচ্চ আদালতে তাঁর বিচার হয় ও যিহূদিয়ার স্থানীয় রোমান প্রশাসক পোন্তিউস পীলাতকে অনুরোধ করে যেন যিশুকে মৃত্যদণ্ড দান করা হয়। পীলাত প্রথমে যিশুকে নিরপরাধ গণ্য করলেও পরবর্তীতে যাজকদের প্ররোচণায় উন্মত্ত ইহুদী জনতার ইচ্ছাপূরণ করতে যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করান।<ref>[[Tacitus]] tells about this in his Annales: [http://www.perseus.tufts.edu/cgi-bin/ptext?lookup=Tac.+Ann.+15.44 ''Perseus''-Project: Annales 15,44] In the passage, Tacitus talks about the burning of Rome, which [[Nero]] attributed to the Christians: ''Christus, from whom the name had its origin, suffered the extreme penalty during the reign of Tiberius at the hands of one of our procurators, Pontius Pilatus, and a most mischievous superstition, thus checked for the moment, again broke out not only in Judaea, the first source of the evil, but even in Rome, where all things hideous and shameful from every part of the world find their centre and become popular''.</ref>
১১ নং লাইন:
 
খ্রিস্টধর্ম প্রথমে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলিতে [[ইহুদিধর্ম|ইহুদিধর্মের]] একটি উপ-সম্প্রদায় হিসেবে যাত্রা শুরু করে।<ref name="Robinson">Robinson, ''Essential Judaism: A Complete Guide to Beliefs, Customs and Rituals'', p. 229.</ref><ref name="Esler">Esler. ''The Early Christian World''. p. 157f.</ref> খ্রিস্টের মৃত্যুর পরে তাঁর আদি বারো শিষ্য জেরুসালেম থেকে বাইরে ছড়িয়ে পড়েন। কয়েক দশকের মধ্যে খ্রিস্টে বিশ্বাসী অনুসারীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
বারো শিষ্যের বাইরে খ্রিস্টধর্মের বাণীর আদি প্রচারকদের মধ্যে [[সন্ত পৌল]] (৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ- আনু. ৬৭ খ্রিস্টাব্দ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য; বাইবেলের নতুন নিয়মের ২৭টি পুস্তকের মধ্যে ১৩টিই তিনি রচনা করেন। খ্রিস্টীয় ১ম শতকেই বারো শিষ্যদের সবার মৃত্যু হয়। এরপর ২য় ও ৩য় শতকে খ্রিস্টের বারো শিষ্যের উত্তরসূরী ধর্মবিদেরা খ্রিস্ট ধর্মের তত্ত্ব নির্মাণ ও প্রচার অব্যাহত রাখেন; তাদের রচনার অংশবিশেষ নতুন নিয়মের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এসময় খ্রিস্টধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ অ-ইহুদী ধর্ম হিসেবে রোমান সাম্রাজ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। একই সাথে ধর্মটি মধ্যপ্রাচ্য, ইথিওপিয়া (আকসুম সাম্রাজ্য) ও আন্তঃককেশিয়ার বিশাল অংশে এবং এশিয়ার কিয়দংশে ছড়িয়ে পড়ে। আকসুম সাম্রাজ্য প্রথম সাম্রাজ্য হিসেবে খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে। ৪র্থ শতকে রোমান সম্রাট কোনস্তানতিন খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং তিনি ৩১৩ খ্রিস্টাব্দে মিলানের রাজকীয় অধ্যাদেশবলে খ্রিস্টধর্মকে আইনবিরুদ্ধ হিসেবে গণ্য করা বন্ধ করেন। এর প্রেক্ষিতে এটি সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান ধর্মে পরিণত হয়। ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট কোনস্তানতিনের আহুত নিকায়েয়া-র (বর্তমান তুরস্কের [[ইজনিক]] শহর) ধর্মীয় সম্মেলনে খ্রিস্টধর্মের ধর্মীয় বিশ্বাসের সারসংক্ষেপ প্রথমবারের মত রচিত হয়। এতে বাইবেলে বর্ণিত [[পিতারূপী ঈশ্বর]], [[পুত্ররূপী ঈশ্বর]] (যিশু) ও [[পবিত্র আত্মারূপী ঈশ্বর]] - এই তিন সত্তাই যে একই ঈশ্বরের তিন রূপ, এই [[ত্রিত্ববাদ]] ধারণাটি গৃহীত হয়। বর্তমানে খ্রিস্টান গির্জাগোষ্ঠীগুলির সিংহভাগ ঈশ্বরের ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী; তবে মূলধারার বাইরে অনেক ছোট ছোট গির্জাগোষ্ঠী এতে বিশ্বাস করে না। ৫ম শতকে খ্রিস্টান গির্জার নেতৃস্থানীয় ধর্মযাজকেরা ধর্মগ্রন্থসমগ্র বাইবেলের সংকলন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন। মধ্যযুগে এসে ইউরোপের বাকি অংশগুলিরও খ্রিস্টধর্মায়ন ঘটে। সে সময় খ্রিস্টানরা মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং ভারতের অংশবিশেষেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বাস করত।<ref>McManners, ''Oxford Illustrated History of Christianity'', p. 301-303.</ref> আবিষ্কারের যুগের পরে উপনিবেশ স্থাপন ও জোরালো ধর্মপ্রচারণার সুবাদে খ্রিস্টধর্ম সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং বিশ্বের অন্যত্র (যেমন পূর্ব এশিয়া বিশেষত ফিলিপাইন) ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে খ্রিস্টধর্ম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত অঞ্চলব্যাপী বিরাজমান প্রধান ধর্ম।
 
অনুসারীর সংখ্যা অনুযায়ী খ্রিস্টধর্ম বিশ্বের বৃহত্তম ধর্ম।<ref>{{cite news |title=Study: Christian population shifts from Europe |author=Zoll, Rachel |url=https://www.theguardian.com/world/feedarticle/10003271|newspaper=Associated Press |date=19 December 2011 |accessdate=25 February 2012}}</ref><ref name="PewDec2012">{{cite web|url=http://www.pewforum.org/2012/12/18/global-religious-landscape-exec/|title=The Global Religious Landscape|publisher=Pew Research Center|date=December 2012|accessdate=5 November 2018}}</ref> সারা বিশ্বে প্রায় ২৪০ কোটি খ্রিস্টধর্মের অনুসারী আছে, ,<ref name="World">33.39% of ~7.2&nbsp;billion world population (under the section 'People') {{cite web|url=https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/xx.html|title=World|website=The World Factbook|publisher=CIA}}</ref><ref name="gordonconwell.edu">{{cite web|url=http://www.gordonconwell.edu/resources/documents/1IBMR2015.pdf|title=Christianity 2015: Religious Diversity and Personal Contact|publisher=gordonconwell.edu|date= January 2015 |accessdate=29 May 2015}}</ref><ref name="Global Christianity">{{cite web|author=ANALYSIS |url=http://www.pewforum.org/Christian/Global-Christianity-exec.aspx |title=Global Christianity |publisher=Pew Research Center |date=19 December 2011 |accessdate=17 August 2012}}</ref> যা বিশ্ব জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রে খ্রিস্টধর্ম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম।<ref name="Global Christianity"/> বর্তমান যুগে খ্রিস্টধর্ম বেশ কিছু শাখা বা গির্জাসম্প্রদায়ে বিভক্ত। এদের মধ্যে চারটি প্রধান শাখা হল হল [[রোমান ক্যাথলিক গির্জা]] (১৩০ কোটি অনুসারী), [[প্রতিবাদী গির্জা]] (৯২ কোটি অনুসারী), [[পূর্বী প্রথানুবর্তী গির্জা]] (২৬ কোটি অনুসারী<ref name=BBC>{{cite news|last=Peter|first=Laurence|title=Orthodox Church split: Five reasons why it matters|url=https://www.bbc.com/news/world-europe-45877584|publisher=[[BBC]]|date=October 17, 2018|accessdate=October 17, 2018}}</ref>) এবং [[প্রাচ্যদেশীয় প্রথানুবর্তী গির্জা]] (৮ কোটি ৬০ লক্ষ অনুসারী)। এদের বাইরেও বিশ্বের সর্বত্র ভিন্ন ভিন্ন মতের অনেক গির্জাগোষ্ঠী রয়েছে।
বর্তমানে খ্রিস্টধর্ম বেশ কিছু শাখায় বিভক্ত। এদের মধ্যে বৃহত্তম দলগুলি হল [[রোমান ক্যাথলিক গির্জা]]গোষ্ঠী, [[পূর্বী প্রথানুবর্তী গির্জা]]গোষ্ঠী, [[প্রতিবাদী গির্জা]]গোষ্ঠী। এদের বাইরেও বিশ্বের সর্বত্র ভিন্ন ভিন্ন মতের অনেক গির্জাগোষ্ঠী রয়েছে। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকে নিকায়েয়ার (বর্তমান তুরস্কের [[ইজনিক]] শহর) সম্মেলনে বাইবেলে বর্ণিত [[পিতারূপী ঈশ্বর]], [[পুত্ররূপী ঈশ্বর]] (যিশু) ও [[পবিত্র আত্মারূপী ঈশ্বর]] - এই তিন সত্তাই যে একই ঈশ্বরের তিন রূপ, এই [[ত্রিত্ববাদ]] ধারণাটি গৃহীত হয়। বর্তমানে খ্রিস্টান গির্জাগোষ্ঠীগুলির সিংহভাগ ঈশ্বরের ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী; তবে মূলধারার বাইরে অনেক ছোট ছোট গির্জাগোষ্ঠী এতে বিশ্বাস করে না।
 
==টীকা==