খ্রিস্টধর্ম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

[অপরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সম্প্রসারণ
৪ নং লাইন:
ঐতিহাসিকভাবে [[নাজারেত|নাসরতের]] যিশু প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের প্রদেশ জুদেয়াতে বসবাসকারী একজন ধর্মপ্রচারক ও নৈতিক শিক্ষক ছিলেন। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে পারতেন, এমনকি মৃত মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারতেন। যিশুর পালক বাবা [[যোসেফ]] ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রী। কিন্তু যিশুর অনুসারীরা অর্থাৎ খ্রিস্টানেরা বিশ্বাস করেন যে যিশু স্বয়ং ঈশ্বরের একমাত্র সন্তান। স্থানীয় রোমান প্রশাসক পোন্তিউস পিলাতের আদেশে যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। <ref>[[Tacitus]] tells about this in his Annales: [http://www.perseus.tufts.edu/cgi-bin/ptext?lookup=Tac.+Ann.+15.44 ''Perseus''-Project: Annales 15,44] In the passage, Tacitus talks about the burning of Rome, which [[Nero]] attributed to the Christians: ''Christus, from whom the name had its origin, suffered the extreme penalty during the reign of Tiberius at the hands of one of our procurators, Pontius Pilatus, and a most mischievous superstition, thus checked for the moment, again broke out not only in Judaea, the first source of the evil, but even in Rome, where all things hideous and shameful from every part of the world find their centre and become popular''.</ref> যিশুর জীবন ও তাঁর অনুসারীদের কাহিনী [[নতুন নিয়ম]] নামক পুস্তকমালায় লিপিবদ্ধ আছে। এই নতুন পুস্তকটি খ্রিস্টানদের পবিত্র ধর্মপুস্তক বাইবেলের একটি অংশ। বাইবেল নতুন নিয়ম ও পুরাতন নিয়ম উভয় নিয়ে গঠিত।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |ইউআরএল=http://www.bbc.co.uk/religion/religions/christianity/ |শিরোনাম=''BBC - Religion & Ethics - 566, Christianity'' |সংগ্রহের-তারিখ=2008-10-01 |কর্ম=[[BBC]] }}</ref> নতুন নিয়মের প্রথম চারটি পুস্তককে একত্রে সুসমাচার নামে ডাকা হয়; এগুলিতে যিশুর জীবন, তাঁর মৃত্যু এবং মৃত অবস্থা থেকে তাঁর পুনরুত্থানের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
 
খ্রিস্টানেরা বিশ্বাস করে একজন মাত্র ঈশ্বর স্বর্গ ও মর্ত্যের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। অর্থাৎ ঈশ্বর জগতের পিতা। পিতারূপী ঈশ্বর প্রতিটি মানুষকে সন্তানের মতো ভালোবাসেন এবং তার সাথে সম্পর্ক রাখতে চান। কিন্তু প্রতিটি মানুষ পাপ করার প্রবণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে (যার উৎস প্রথম মানব আদমের আদিপাপ)। এই সব ছোট-বড় পাপের কারণে মানুষ ও জগতের পিতা ঈশ্বরের মাঝে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। খ্রিস্টানেরা বিশ্বাস করে যে যিশুখ্রিস্ট ঈশ্বরেরই দ্বিতীয় একটি রূপ; তিনি ঈশ্বরের একমাত্র প্রকৃত পুত্র। ঈশ্বরের তৃতীয় আরেকটি রূপ হল পবিত্র আত্মা। পবিত্র আত্মা বিভিন্ন নবী বা ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে মানবজাতির সাথে যোগাযোগ করেছে। পবিত্র আত্মারূপী ঈশ্বর মানব কুমারী মেরির গর্ভে পুত্ররূপী ঈশ্বর তথা যিশুখ্রিস্টের জন্ম দেন, যার সুবাদে যিশুখ্রিস্ট রক্তমাংসের মানুষের রূপ ধারণ করে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসেন। পবিত্র আত্মারূপী ঈশ্বরের সুবাদে পুত্ররূপী ঈশ্বর যিশুখ্রিস্ট পৃথিবীতে বহু অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেন। শেষ পর্যন্ত যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে যন্ত্রণাভোগ করে মৃত্যুবরণ করে সমগ্র মানবজাতির পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেন।<ref name="McGrath4">McGrath, ''Christianity: An Introduction'', p. 4-6.</ref> কিন্তু তিন দিন পরে তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করে পুনরুজ্জীবিত হন এবং স্বর্গে আরোহণ করেন যেখানে তিনি পিতারূপী ঈশ্বরের ডান পাশের আসনে অধিষ্ঠিত হন। ঈশ্বর উপহার হিসেবে সবাইকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। সময়ের যখন সমাপ্তি হবে, তখন যিশু আবার পৃথিবীতে ফেরত আসবেন এবং শেষ বিচারে সমস্ত মানবজাতির (মৃত বা জীবিত) বিচার করবেন। যারা যিশুখ্রিস্টে বিশ্বাস আনবে এবং ঈশ্বরের ক্ষমা গ্রহণ করবে, তারাই ভবিষ্যতে শেষ বিচারের দিনে পরিত্রাণ পাবে ও স্বর্গে চিরজীবন লাভ করবে। পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলিতে যে [[মসিহ]] বা ত্রাণকর্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে যিশুই সেই ত্রাণকর্তা। তারা যিশুকে একজন নৈতিক শিক্ষক, অনুকরণীয় আদর্শ এবং প্রকৃত ঈশ্বরকে উদ্ঘাটনকারী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করে।
বর্তমানে খ্রিস্টধর্ম বেশ কিছু শাখায় বিভক্ত। এদের মধ্যে বৃহত্তম দলগুলি হল রোমান ক্যাথলিক গির্জার অনুসারীগণ, পূর্বী প্রথানুবর্তী গির্জার অনুসারীগণ, প্রতিবাদী গির্জাসমূহের অনুসারীগণ। এদের বাইরেও বিশ্বের সর্বত্র ভিন্ন ভিন্ন মতের অনেক গির্জা রয়েছে।
 
খ্রিস্টধর্ম প্রথমে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলিতে [[ইহুদিধর্ম|ইহুদিধর্মের]] একটি উপ-সম্প্রদায় হিসেবে যাত্রা শুরু করে।<ref name="Robinson">Robinson, ''Essential Judaism: A Complete Guide to Beliefs, Customs and Rituals'', p. 229.</ref><ref name="Esler">Esler. ''The Early Christian World''. p. 157f.</ref> কয়েক দশকের মধ্যে খ্রিস্টে বিশ্বাসী অনুসারীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ৪র্থ শতকে এসে এটি সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান ধর্মে পরিণত হয়। ইথিওপিয়ার আকসুম সাম্রাজ্য প্রথম সাম্রাজ্য হিসেবে খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে। মধ্যযুগে এসে ইউরোপের বাকি অংশগুলিরও খ্রিস্টধর্মায়ন ঘটে। সে সময় খ্রিস্টানরা মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং ভারতের অংশবিশেষেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বাস করত।<ref>McManners, ''Oxford Illustrated History of Christianity'', p. 301-303.</ref> আবিষ্কারের যুগের পরে উপনিবেশ স্থাপন ও জোরালো ধর্মপ্রচারণার সুবাদে খ্রিস্টধর্ম সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং বিশ্বের অন্যত্র (যেমন পূর্ব এশিয়া বিশেষত ফিলিপাইন) ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে খ্রিস্টধর্ম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত অঞ্চলব্যাপী বিরাজমান প্রধান ধর্ম।
খিস্টীয় ৪র্থ শতকে নিকায়েয়ার প্রথম সম্মেলনে বাইবেলে বর্ণিত ঈশ্বর-পিতা, ঈশ্বর-পুত্র ও পবিত্র আত্মা এই তিন সত্তাই যে একই ঈশ্বরের তিন রূপ, এই [[ত্রিত্ববাদ]] ধারণাটি গৃহীত হয়। বর্তমানে সিংহভাগ খ্রিস্টান গির্জা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী; তবে মূলধারার বাইরে অনেক ছোট ছোট গির্জা এতে বিশ্বাস করে না।
 
বর্তমানে খ্রিস্টধর্ম বেশ কিছু শাখায় বিভক্ত। এদের মধ্যে বৃহত্তম দলগুলি হল রোমান ক্যাথলিক গির্জার অনুসারীগণ, পূর্বী প্রথানুবর্তী গির্জার অনুসারীগণ, প্রতিবাদী গির্জাসমূহের অনুসারীগণ। এদের বাইরেও বিশ্বের সর্বত্র ভিন্ন ভিন্ন মতের অনেক গির্জা রয়েছে। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকে নিকায়েয়ার (বর্তমান তুরস্কের [[ইজনিক]] শহর) প্রথম সম্মেলনে বাইবেলে বর্ণিত পিতারূপী ঈশ্বর, পুত্ররূপী ঈশ্বর (যিশু) ও পবিত্র আত্মারূপী ঈশ্বর - এই তিন সত্তাই যে একই ঈশ্বরের তিন রূপ, এই [[ত্রিত্ববাদ]] ধারণাটি গৃহীত হয়। বর্তমানে সিংহভাগ খ্রিস্টান গির্জাগোষ্ঠী ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী; তবে মূলধারার বাইরে অনেক ছোট ছোট গির্জাগোষ্ঠী এতে বিশ্বাস করে না।
খ্রিস্টানেরা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। যিশু হলেন কুমারী [[মেরি, যিশুর মাতা|মরিয়মের]] মানব সন্তান এবং একই সাথে ঈশ্বরের স্বর্গীয় সন্তান। তারা মনে করে যে যিশু মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তি দিতে কষ্টস্বীকার করেন ও মৃত্যুবরণ করেন<ref name="McGrath4">McGrath, ''Christianity: An Introduction'', p. 4-6.</ref> এবং পরবর্তীতে মৃত অবস্থা থেকে পুনরুজ্জীবিত হয়ে ফেরত আসেন। এরপর তিনি স্বর্গে আরোহণ করেন। সময়ের যখন সমাপ্তি হবে, তখন যিশু আবার পৃথিবীতে ফেরত আসবেন এবং শেষ বিচারে সমস্ত মানবজাতির (মৃত বা জীবিত) বিচার করবেন। যারা যিশুতে বিশ্বাস এনেছে, তারা চিরজীবন লাভ করবে। পবিত্র আত্মা হল ঈশ্বরের আত্মা যা বিভিন্ন নবী বা ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে মানবজাতির সাথে যোগাযোগ করেছে। পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলিতে যে [[মসিহ]] বা ত্রাণকর্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে যিশুই সেই ত্রাণকর্তা। তারা যিশুকে একজন নৈতিক শিক্ষক, অনুকরণীয় আদর্শ এবং প্রকৃত ঈশ্বরকে উদ্ঘাটনকারী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করে।
 
খ্রিস্টধর্ম প্রথমে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলিতে [[ইহুদিধর্ম|ইহুদিধর্মের]] একটি উপ-সম্প্রদায় হিসেবে যাত্রা শুরু করে।<ref name="Robinson">Robinson, ''Essential Judaism: A Complete Guide to Beliefs, Customs and Rituals'', p. 229.</ref><ref name="Esler">Esler. ''The Early Christian World''. p. 157f.</ref> কয়েক দশকের মধ্যে খ্রিস্টে বিশ্বাসী অনুসারীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ৪র্থ শতকে এসে এটি সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান ধর্মে পরিণত হয়। ইথিওপিয়ার আকসুম সাম্রাজ্য প্রথম সাম্রাজ্য হিসেবে খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে। মধ্যযুগে এসে ইউরোপের বাকি অংশগুলিরও খ্রিস্টধর্মায়ন ঘটে। সে সময় খ্রিস্টানরা মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং ভারতের অংশবিশেষেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বাস করত।<ref>McManners, ''Oxford Illustrated History of Christianity'', p. 301-303.</ref> আবিষ্কারের যুগের পরে উপনিবেশ স্থাপন ও জোরালো ধর্মপ্রচারণার সুবাদে খ্রিস্টধর্ম সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং বিশ্বের অন্যত্র (যেমন পূর্ব এশিয়া বিশেষত ফিলিপাইন) ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে খ্রিস্টধর্ম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত অঞ্চলব্যাপী বিরাজমান প্রধান ধর্ম।
 
==টীকা==