রেল পরিবহন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
উইকিসংযোগ যোগ
১ নং লাইন:
[[File:Canadian National diesels southbound on the Norfolk Southern near Polaris Mall in Columbus, Ohio (2092116881).jpg|thumb|ডিজেলচালিত ইঞ্জিনে টানা রেলগাড়ি]]
'''রেল পরিবহন''' বলতে সমান্তরালভাবে[[সমান্তরাল]]ভাবে পাতা [[ইস্পাত|ইস্পাতের]] পাত (রেল) দিয়ে তৈরি পথের (রেলপথ) উপর দিয়ে বিশেষ ধাতব চাকাযুক্ত গাড়ি ([[রেলগাড়ি]]) চালনার মাধ্যমে [[যাত্রী]][[মালপত্র]] [[পরিবহন|পরিবহনের]] উপায়কে বোঝায়। [[সড়ক পরিবহন|সড়ক পরিবহনে]] যানবাহনগুলি প্রস্তুতকৃত সমতল পৃষ্ঠতলের উপরে চলাচল করে, আর তার বিপরীতে রেলগাড়িগুলি যে রেলপথের উপর দিয়ে চলে, সেই রেলপথ দ্বারা নির্দিষ্ট দিকে চলাচল করে। রেলপথে ইস্পাতের তৈরি সমান্তরাল রেলগুলিকে ধরে রাখার জন্য কাঠের বাঁধুনি বা [[স্লিপার]] ব্যবহার করা হয়, আর বাঁধুনি ও রেলগুলি নুড়িপাথরের [[প্রভার]] বা পরিস্তরণ (ব্যালাস্ট) দিয়ে তৈরি ভিত্তির উপর বসে থাকে। তবে কিছু কিছু রেলপথে রেলগুলিকে [[কংক্রিট|কংক্রিটের]] ভিত্তির উপরেও বসানো হতে পারে।
ইস্পাতের তৈরি সমান্তরাল রেলগুলিকে ধরে রাখার জন্য কাঠের বাঁধুনি বা স্লিপার ব্যবহার করা হয়, আর বাঁধুনি ও রেলগুলি নুড়িপাথরের প্রভার বা পরিস্তরণ (ব্যালাস্ট) দিয়ে তৈরি ভিত্তির উপর বসে থাকে। তবে কিছু কিছু রেলপথে রেলগুলিকে কংক্রিটের ভিত্তির উপরেও বসানো হতে পারে।
 
রেল পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যবহৃত রেলযানগুলি[[রেলযান]]গুলি (ইংরেজিতে রোলিং স্টক) সাধারণত সড়কযান অপেক্ষা কম ঘর্ষণজনিত[[ঘর্ষণ]]জনিত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়, তাই যাত্রীবাহী রেলগাড়ি ও মালবাহী রেলগাড়িগুলিকে একটির পর একটি লাগিয়ে লম্বা রেলগাড়ি বা [[ট্রেন]] বানানো সম্ভব। একটি [[রেল কোম্পানি]] কোনও [[রেল পরিবহন ব্যবস্থা]] পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। কোম্পানিটি দুইটি [[রেলস্টেশন]] বা বিরতিরবিরতিস্থলের মধ্যে যাত্রী ও মালপথমালপত্র কিংবা কোনও নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছে মালপত্র পরিবহনের কাজ পরিচালনা করে। রেলগাড়িগুলিকে টানার জন্য বিশেষ [[ইঞ্জিনগাড়ি]] থাকে, যেগুলি সাধারণত নিজস্ব [[ডিজেল]] নামক জ্বালানি তেল পুড়িয়ে অথবা [[রেল বৈদ্যুতায়নবিদ্যুতায়ন ব্যবস্থা]] থেকে [[বিদ্যুৎশক্তি]] আহরণ করে শক্তির চাহিদা পূরণ করে। বেশিরভাগ রেলপথের সাথে [[রেল সংকেত ব্যবস্থাওব্যবস্থা]]ও বিদ্যমান থাকে। পরিবহনের অন্যান্য উপায়ের তুলনায় রেল পরিবহন অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।<ref group="টীকা">[http://www.railwatch.org.uk/backtrack/rw94/rw094p06.pdf রেইলওয়াচ ডট অর্গ] অনুযায়ী ({{webarchive|url=https://web.archive.org/web/20101011093930/http://www.railwatch.org.uk/backtrack/rw94/rw094p06.pdf |date=11 October 2010 }}), মাইলপ্রতি ও ঘন্টাপ্রতি হিসেবে রেলওয়ে সবচেয়ে নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা।</ref> রেল পরিবহনে উচ্চসংখ্যায় যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে শক্তির দক্ষ ব্যবহার হয়, তবে এটি তৈরি করতে অনেক পুঁজির[[পুঁজি]]র দরকার হয় এবং এটি সহজে পরিবর্তনযোগ্য নয়।
 
১৬শ শতকের মাঝামাঝি থেকে জার্মানিতে[[জার্মানি]]তে ঘোড়ায়[[ঘোড়া]]য় চালিত রেলগাড়ির প্রচলন ছিল। [[যুক্তরাজ্য|যুক্তরাজ্যে]] বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের উদ্ভাবনের পরে ১৯শ শতকের শুরুতে আধুনিক রেল পরিবহনের ইতিহাস শুরু হয়। [[যুক্তরাজ্যের রেলব্যবস্থা]] তাই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন রেলব্যবস্থা। ১৮২৫ সালে স্টকটন অ্যান্ড ডার্লিংটন রেলপথের উপর দিয়ে প্রথমবারের মত একটি সরকারী রেলপথে যাত্রীদের পরিবহন করা হয়; এর বাষ্পচালিত ইঞ্জিনগাড়িটির নাম ছিল লোকোমোশন নম্বর ১ এবং এর নির্মাতা ছিল জর্জ স্টিভেনসন ও তার পুত্র রবার্ট স্টিভেনসনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বাষ্পচালিত ইঞ্জিনে টানা রেলগাড়ি ও রেলপথগুলি ছিল [[শিল্প বিপ্লব|শিল্প বিপ্লবের]] এক অন্যতম নিয়ামক উপাদান। রেলপথে নৌপথে প্রেরণের চেয়ে খরচ কম হত, মালপত্র কম খোয়া যেত, কেননা নৌপথে মাঝে মাঝে জাহাজডুবির আশঙ্কা ছিল। রেলপথের দ্রুততার কারণে পণ্যসমূহের দাম শহরভেদে মোটামুটি একই থাকে এবং এক ধরনের দেশব্যাপী বাজারের সৃষ্টি হয়। যুক্তরাজ্যে গ্রিনিচ মান সময়কে আদর্শ ধরে প্রস্তুতকৃত রেলগাড়ির সময়তালিকাগুলি দেশব্যাপী সময়ের প্রমিতকরণ ঘটায় (যার নাম ছিল রেল সময়)। যুক্তরাজ্যে রেল পরিবহনের উদ্ভাবন ও বিকাশ ছিল ১৯শ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনগুলির একটি। ১৮৬৩ সালে লন্ডনে বিশ্বের সর্বপ্রথম পাতালরেলটি[[পাতালরেল]]টি (মেট্রোপলিটান রেলওয়ে) জনসাধারণের জন্য চালু করা হয়।
 
১৮৮০-র দশকে বিদ্যুৎচালিত রেলগাড়ির উদ্ভাবন হয়। ফলে দ্রুতগামী জনপরিবহন ব্যবস্থা ও ট্রামগাড়িগুলির বৈদ্যুতায়ন ঘটে। ১৯৪০-র দশকের শুরুর দিকে বাষ্পচালিত রেলগাড়ির বদলে ডিজেলচালিত ইঞ্জিনগাড়ি ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৬০-র দশকে [[জাপান|জাপানে]] বিদ্যুতায়িত উচ্চগতির রেলব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। বর্তমানে জাপান ছাড়াও [[চীন]], [[তাইওয়ান]], [[দক্ষিণ কোরিয়া]], [[ফ্রান্স]], [[জার্মানি]], [[স্পেন]], [[ইতালি]], [[বেলজিয়াম]], [[নেদারল্যান্ডস]], [[যুক্তরাজ্য]][[স্ক্যান্ডিনেভিয়া|স্ক্যান্ডিনেভীয়]] দেশগুলিতেও উচ্চগতির রেলব্যবস্থা আছে। বর্তমানে অনেক দেশই পরিবেশগত কারণে তাদের ইঞ্জিনগাড়িগুলিকে ডিজেলচালিত থেকে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে রূপান্তর করার চেষ্টা করছে। ঐতিহ্যবাহী রেলগাড়ি ছাড়াও [[মনোরেল]] (একটিমাত্র রেললাইন) ও [[ম্যাগলেভ]] (চৌম্বকীয় উত্তোলন) ধরনের রেলব্যবস্থা সীমিত আকারে কিছু কিছু দেশে চালু হয়েছে।
 
২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে মোটরগাড়ির[[মোটরগাড়ি]]র সাথে প্রতিযোগিতার কারণে রেল পরিবহনে ভাঁটা পড়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলিতে সড়কপথে [[যানজট]] ও জ্বালানির খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে রেল পরিবহন আবারও জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার [[ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধিরবৃদ্ধি]]র আশঙ্কা থেকে [[কার্বন ডাই -অক্সাইড]] গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে রেলব্যবস্থাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা শুরু করেছে।
 
==টীকা==