বাংলাদেশের ইতিহাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Habibshohag123 (আলোচনা | অবদান)
অনির্ভরযোগ্য উৎস বাতিল
১৫ নং লাইন:
বাংলাদেশে সংগঠিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজগুলি ভারতীয় উপমহাদেশের NBPW যুগের (৭০০-২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) নিদর্শন প্রকাশ করে। [[ভারতীয় উপমহাদেশ|ভারতীয় উপমহাদেশে]] লৌহ যুগের সংস্কৃতি প্রায় ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয় এবং ৫০০-৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। উত্তর ভারতের ১৬টি মহা রাজ্য বা মহাজনপদের উত্থান এবং [[মৌর্য সাম্রাজ্য|মৌর্য সাম্রাজ্যের]] পরবর্তী উত্থানের মধ্যবর্তী সময়ে এই যুগ বিরাজমান ছিল।<ref name=shaffer>Shaffer, Jim. 1993, "Reurbanization: The eastern Punjab and beyond." In ''Urban Form and Meaning in South Asia: The Shaping of Cities from Prehistoric to Precolonial Times'', ed. [https://en.wikipedia.org/wiki/Howard_Spodek Howard Spodek] and D.M. Srinivasan.</ref> প্রাচীণ ভারতের পূর্বাঞ্চল, বর্তমান সময়ের বাংলাদেশ বা প্রাচীণ [[বঙ্গ (প্রাচীন রাজ্য)|বঙ্গ রাজ্য]] এই মহাজনপদগুলির অংশ ছিল, যা ষষ্ঠ শতকে সমৃদ্ধ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।<ref name=singh>{{cite book|last=Singh|first=Upinder|title=A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century|url=https://books.google.com/books?id=H3lUIIYxWkEC&pg=PA260&dq=Great+States+Upinder+singh&hl=en&ei=tu6ITPDYMoG6vQO9uannCg&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=1&ved=0CC4Q6AEwAA#v=onepage&q&f=false|year=2008|publisher=Pearson Education|location=Delhi|isbn=978-81-317-1120-0|pages=260–4}}</ref>
 
ভাষাগতভাবে, এই ভূখণ্ডের প্রাচীনতম জনগোষ্ঠী হয়তো [[দ্রাবিড় ভাষাসমূহ|দ্রাবিড় ভাষায়]] কথা বলত যেমন কুরুক্স, বা সম্ভবত [[অস্ট্রো-এশীয় ভাষাসমূহ|অস্ট্রো-এশীয় ভাষায়]] কথা বলত যেমন সাঁওতাল। পরবর্তীকালে, তিব্বতী-বার্মানের মতো অন্যান্য ভাষা পরিবারের লোকেরা বাংলায় বসতি স্থাপন করে। সপ্তম খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল [[মগধ|মগধের]] অংশ হিসেবে ইন্দো-আর্য সভ্যতার অংশ হয়ে উঠেছিল।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni |url=https://www.rokomari.com/book/48237/বাংলার-ইতিহাস?ref=null|pages=33}}</ref> নন্দ রাজবংশ হচ্ছে প্রথম ঐতিহাসিক রাষ্ট্র যা ইন্দো-অার্য শাসনের অধীনে বাংলাদেশকে একত্রিত করেছিল। পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মের উত্থানের পর অনেক পুরোহিত ধর্ম বিস্তারের জন্য এখানে বসতি স্থাপন করেছিল এবং [[মহাস্থানগড়|মহাস্থানগড়ের]] মতো অনেক স্তম্ভ স্থাপন করেছিল।
 
===বিদেশী উপনিবেশকরণ===
২৪ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|নন্দ সাম্রাজ্য}}
 
[[নন্দ সাম্রাজ্য]] ছিল বাংলার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় যুগ। এই যুগে বাংলার শক্তিমত্তা ও প্রাচুর্য শীর্ষে অারোহন করে। এই যুগে বাংলা সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। নন্দ রাজাদের জন্ম হয়েছিল বাংলায়। তারা বাংলা থেকে [[মগধ]] (বিহার) দখল করে এবং উভয় রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গ-মগধ নামে একটি নতুন সাম্রাজ্যের পত্তন করে। প্রাচীণ গ্রীক ইতিহাসে বাংলাকে [[গঙ্গাঋদ্ধি|গঙ্গারিডাই]] এবং মগধকে প্রাসি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রীক ইতিহাসে এই সংযুক্ত রাজ্যকে গঙ্গারিডাই ও প্রাসি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।<ref>{{citation |last=Islam |first=Kabedul |title=Prachin Banglar Jonopod o Jonojati goshthi |date=2006 |publisher=Mowla Brothers |isbn=978-9843108043 |p=124 |url=https://www.amazon.com/Prachin-Banglar-Jonopod-Jonjatigoshthi-Kabedul/dp/9843108043 }}</ref> নন্দ রাজাগণ ছিলেন [[জৈন ধর্ম|জৈন ধর্মের]] অনুসারী। এবং তারা ছিলেন জৈন ধর্মের অাজীবিক শাখার অনুসারী।
 
[[মহাপদ্ম নন্দ]] ছিলেন নন্দ বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। তিনি সমগ্র ভারতবর্ষ ব্যাপী ব্যাপক সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি কোশল ([[উত্তরপ্রদেশ|উত্তর প্রদেশ]]), কুরু ([[পাঞ্জাব, ভারত|পূর্ব পাঞ্জাব]]), মৎস্য ([[রাজস্থান|রাজপুতানা]]), চেদী (মধ্য প্রদেশ ও বিহারের মধ্যস্থিত জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চল),অবন্তী (মধ্য প্রদেশ) প্রভৃতি অঞ্চল জয় করেন। দিগ্বিজয়ার্থে মহাপদ্ম এক বিশাল সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করেন। তৎকালীন ইতিহাস অনুসারে মহাপদ্মের অধীনে ২,০০,০০০ পদাতিক, ২০,০০০ অশ্বারোহী, ৪,০০০ যুদ্ধরথ ও ২,০০০ হস্তীবাহিনী ছিল। মতান্তরে তার নিকট ২,০০,০০০ পদাতিক, ৮০,০০০ অশ্বারোহী, ৮,০০০ যুদ্ধরথ ও ৬,০০০ হস্তীবাহিনী ছিল।<ref>{{citation |last=Gabriel |first=Richard A. |title=The great armies of antiquity |date=30 November 2002 |publisher=Praeger |location=Westport, Conn. [u.a.] |isbn=9780275978099 |p=218 |edition=1.udg. |url=https://www.amazon.com/gp/search?index=books&linkCode=qs&keywords=9780275978099 }}</ref>
 
"কথাসরিৎ সাগর" থেকে জানা যায় তিনি [[দক্ষিণ ভারত|দক্ষিণ ভারতেরও]] বিরাট অংশ জয় করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ ভারতের কলিঙ্গ ও অশ্মক এ রাজ্য দুটো জয় করেছিলেন। অশ্মক হচ্ছে [[মহারাষ্ট্র|মহারাষ্ট্রের]] পূর্ব অংশে একটি প্রাচীণ রাজ্যের নাম। এটি দক্ষিণ ভারতে অার্যদের একটি বিখ্যাত উপনিবেশ ছিল। কলিঙ্গ হচ্ছে [[উড়িষ্যা|উড়িষ্যার]] প্রাচীণ নাম। কলিঙ্গের হস্তিগুম্ফা শিলালিপি থেকে জানা যায় মহাপদ্ম কলিঙ্গে জল সেচের জন্য একটি বিরাট জল প্রণালী নির্মাণ করেছিলেন। তিনি কলিঙ্গ থেকে একটি জৈন [[তীর্থঙ্কর|তীর্থঙ্করের]] মূর্তিও রাজধানীতে নিয়ে যান। মহাপদ্ম ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হন। সমগ্র ভারতবর্ষ জয় করে তিনি একরাট উপাধি গ্রহণ করেন। পরে তাকে অনুসরণ করে পশ্চিম ভারতের রাজারা বিরাট ও দক্ষিণ ভারতের রাজারা সম্রাট উপাধি গ্রহণ করে।<ref>{{citation |last=Shahnawaz |first=A.K.M |title=History of South Asia |date=2003 |publisher=Abasar prokashona |isbn=984-446-074-3 |p=130 |url=http://www.porua.com.bd/books/দক্ষিণ-এশিয়ার-ইতিহাস-১৫২৬-খ্রিস্টাব্দ-পর্যন্ত }}</ref>
 
মহাপদ্ম নন্দের পর ক্ষমতায় অাসীন হন তার পুত্র [[ধননন্দ|উগ্রনন্দ]]। উগ্রনন্দের সময় রাজ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখা দেয়। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ৯৯০ মিলিয়ন স্বর্ণখণ্ডের অধিকারী ছিলেন। উগ্রনন্দের সময়ে পাটালিপুত্রে পাঁচটি ধর্মস্তূপ নির্মিত হয়েছিল। প্রাচীণ ভারতের বিভিন্ন ইতিহাসে উগ্রনন্দকে অর্থপিপাসু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকে ধননন্দ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে উগ্রনন্দ এবং তার পিতা মহাপদ্ম বিপুল পরিমাণ রাজ্য দখল করেছিলেন এবং তারা উক্ত রাজ্যের পরাজিত রাজন্যবর্গের ওপর কর অারোপ করেছিলেন। কাজেই এইসব অভিযোগ উক্ত পরাজিত রাজন্যবর্গের বিষোদ্গার হতে পারে।<ref>{{citation |last=Shahnawaz |first=A.K.M |title=History of South Asia |date=2003 |publisher=Abasar prokashona |isbn=984-446-074-3 |p=130 |url=http://www.porua.com.bd/books/দক্ষিণ-এশিয়ার-ইতিহাস-১৫২৬-খ্রিস্টাব্দ-পর্যন্ত }}</ref>
 
উগ্রনন্দের সময় গ্রীক সম্রাট [[মহান আলেকজান্ডার|অালেকজাণ্ডার]] ভারতবর্ষ অাক্রমণ করেন। কিন্তু উগ্রনন্দ একটি বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে অালেকজাণ্ডারের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হন। [[প্লুটার্ক]] বলেছেন, [[রাজা পুরুষোত্তম|পোরাসের]] সাথে যুদ্ধের পর [[মেসিডেনীয় সভ্যতা|মেসিডোনিয়ার]] সৈন্যরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, এবং ভারতবর্ষের অভ্যন্তরে অারও প্রবেশের জন্য অনিচ্ছুক হয়ে পড়ে। তারা জানতে পারে গঙ্গা নদী যা ২৩০ স্টেডিয়া বিস্তৃত ছিল এবং ১০০০ ফুট গভীর ছিল, তার পাশের সমস্ত তীর সমস্ত তীর সশস্ত্র যোদ্ধা, ঘোড়া এবং হাতি দ্বারা সম্পূর্ণভাবে আবৃত ছিল। গঙ্গারিডাই ও প্রাসি এর রাজা তার (আলেকজান্ডার) জন্য ২,০০,০০০ পদাতিক, ৮০,০০০ অশ্বারোহী বাহিনী, ৮,০০০ যুদ্ধরথ ও ৬,০০০ হস্তিবাহিনী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।<ref>{{citation |last=Majumdar |first=R.C. |title=The Classical Accounts of India |date=1960 |publisher=FIRMA K.L.M |p=198 |url=http://www.worldcat.org/title/classical-accounts-of-india/oclc/467176 }}</ref>
৩৯ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|গৌড়}}
 
ষষ্ঠ শতকের মধ্যে উত্তর ভারত শাসনকারী বিশাল [[গুপ্ত সাম্রাজ্য]] বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এগুলোর মধ্যে মগধ (বিহার) ও মালব (মধ্য প্রদেশ) এ রাজ্য দুটি গুপ্ত বংশের দুটি শাখা দ্বারা শাসিত ছিল। অপর দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ছিল উত্তর প্রদেশের মৌখরী রাজ্য এবং পাঞ্জাবের পুষ্যভূতি রাজ্য। [[শশাঙ্ক]] ছিলেন মগধের গুপ্ত সম্রাট মহাসেন গুপ্তের একজন সীমান্তবর্তী মহাসামন্ত। মহাসেন গুপ্তের পর তিনি বাংলার ক্ষমতা দখল করেন এবং গৌড়ের কর্ণসূবর্ণে তার রাজধানী স্থাপন করেন। শশাঙ্ক ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যা অাক্রমণ করেন এবং সেখানকার শৈলোদ্ভব বংশীয় রাজাকে পরাজিত করে উড়িষ্যা দখল করেন । এ সময় উত্তর ভারত দখলের জন্য বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা শুরু হয়। মালবের রাজা দেবগুপ্ত মৌখরী রাজা গ্রহবর্মণকে পরাজিত করে কনৌজ দখল করেন। কিন্তু একই সময় পুষ্যভূতির রাজা রাজ্যবর্ধন দেবগুপ্তকে অাক্রমণ করে তাকে পরাজিত করেন। এ সময় শশাঙ্ক কনৌজ অাক্রমণ করেন। তিনি কনৌজের অধিকারী রাজ্যবর্ধনকে পরাজিত ও নিহত করে ক্ষমতা দখল করেন।<ref>{{cite book | author=Nitish Sengupta |date=2008 | title=History of Bengal and Bengali people| url=https://www.rokomari.com/book/73383/বঙ্গভূমি-ও-বাঙালির-ইতিহাস?ref=null |publisher=Dey's Publishing | pages=36}}</ref> রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তার ভাই ও উত্তরাধিকারী [[হর্ষবর্ধন]] এক বিপুল বাহিনী গঠন করেন। শশাঙ্ক হর্ষবর্ধনের সাথে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করেন। কিন্তু হর্ষবর্ধন ছিলেন অত্যধিক শক্তিশালী যোদ্ধা। ছয় বৎসর ধরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করার পর শশাঙ্ক শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন। হর্ষবর্ধন বাংলার রাজধানী গৌড় দখল করে নেন। এভাবে বাংলার ক্ষণস্থায়ী গৌড় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
 
===পাল রাজবংশ===
৪৬ নং লাইন:
[[পাল সাম্রাজ্য|পাল সাম্রাজ্যের]] যুগ ছিল বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল যুগ। এ সময় বাংলার ইতিহাসে আবার দিগ্বিজয়ের সূচনা হয়। পাল রাজাগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন উত্তরবঙ্গের [[বরেন্দ্র]] অঞ্চলে। একারণে পাল শিলালিপিতে বরেন্দ্রকে জনকভূ বা রাজ্যাম পিত্রাম বলা হয়েছে। পাল সাম্রাজ্যের রাজাগণ ছিলেন [[বৌদ্ধ ধর্ম|বৌদ্ধ ধর্মের]] অনুসারী। পাল রাজাগণ ছিলেন প্রথমত বৌদ্ধধর্মের [[মহাযান]] ও পরবর্তীতে [[তন্ত্র|তান্ত্রিক শাখার]] অনুসারী। পাল বংশীয় রাজাগণ উত্তর ভারতের রাজনৈতিক কেন্দ্রভূমি [[কনৌজ]] দখলের জন্য রাজপুতানার [[গুর্জর]] এবং দক্ষিণ ভারতের [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূটদের]] সাথে এক প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই ভয়ঙ্কর ও [[ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ]] পরবর্তী দুই শত বৎসর অব্যাহত থাকে।
 
পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা [[প্রথম গোপাল|গোপাল]]। তিনি ৭৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা দেশ শাসন করেন।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni |url=https://www.rokomari.com/book/48237/বাংলার-ইতিহাস?ref=null|pages=65}}</ref> গোপালের অাগমনের পূর্বে বাংলাদেশ পাচটি খণ্ডে বিভক্ত ছিল যথা- [[অঙ্গ]], [[বঙ্গ (প্রাচীন রাজ্য)|বঙ্গ]], [[গৌড়]], [[সুহ্ম]] ও [[সমতট]]। গোপাল এই সমস্ত খণ্ডকে ঐক্যবদ্ধ করেন ও বাংলাদেশে শান্তি শৃঙ্খলা অানয়ন করেন।<ref name="Nitish2011">{{cite book |last=Sengupta |first=Nitish K. |date=2011 | title=Land of Two Rivers: A History of Bengal from the Mahabharata to Mujib | url=https://books.google.com/books?id=kVSh_TyJ0YoC&pg=PA40 | publisher=Penguin Books India | page=40 | isbn=978-0-14-341678-4}}</ref> গোপাল বিহার, উড়িষ্যা ও কামরূপও দখল করেন। এরপর গোপাল উত্তর ভারতের রাজধানী [[কনৌজ]] অক্রমণ করেন। তিনি কনৌজের অায়ুধ বংশীয় রাজা বজ্রায়ুধকে পরাজিত করে কনৌজ দখল করেন।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni |url=https://www.rokomari.com/book/48237/বাংলার-ইতিহাস?ref=null|pages=66}}</ref>
কিন্তু গুর্জর রাজা বৎসরাজের নিকট তিনি পরাজিত হন। বৎসরাজ পরবর্তীতে [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূট]] রাজা ধ্রুব ধারাবর্ষের নিকট পরাজিত হন। ফলে গোপাল তার সাম্রাজ্য রক্ষা করতে সক্ষম হন।
 
গোপালের পুত্র [[ধর্মপাল]] (৭৯০-৮১০) ছিলেন একজন সুদক্ষ ও পরাক্রমশালী সম্রাট। তিনি উত্তর ভারতে অাক্রমণ করেন এবং [[গুর্জর]] রাজা নাগভট্টকে পরাজিত করে কনৌজ দখল করেন। তিনি সমগ্র উত্তর ভারতব্যাপী বিশাল সামরিক অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। খালিমপুর তাম্রশাসন থেকে জানা যায় তিনি মদ্র ([[পাঞ্জাব]]), গান্ধার ([[খাইবার গিরিপথ|খাইবার প্রদেশ]]), মৎস্য ([[রাজস্থান|রাজপুতানা), যদু([[গুজরাট]]), অবন্তী ([[মধ্যপ্রদেশ|মধ্য প্রদেশ]]) প্রভৃতি অঞ্চল বিজয় করেছিলেন।<ref>{{cite book | author=George E. Somers | date=1977 | title=Dynastic History of Magadha | url=https://books.google.com/books?id=gYO25eaDrqUC&pg=PA185 | publisher=Abhinav Publications | pages=185 | isbn=978-81-7017-059-4}}</ref> কিন্তু এ অঞ্চলগুলো তিনি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেন নি। ধর্মপাল সেনাপতি লাউসেনের নেতৃত্বে [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূট]] রাজাকে পরাজিত করে উড়িষ্যা পুনর্দখল করতে সক্ষম হন। এই ঘটনাটি তৎকালীন বিখ্যাত মহাকাব্য [[ধর্ম মঙ্গল|ধর্ম মঙ্গলে]] উল্লেখ অাছে।
 
ধর্মপালের সুযোগ্য পুত্র [[দেবপাল]] (৮১০-৮৫০) পুনরায় সমগ্র ভারতব্যাপী তার অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতে কম্বোজ (কাশ্মীর) পর্যন্ত তার সমরাভিযান পরিচালনা করেন। দেবপাল গুর্জর রাজা রামভদ্রকে পরাজিত করে তাকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন। বিন্ধ্যা পার্বত্য অঞ্চল বিজয় করে তিনি মালব ও গুজরাট দখল করেন।<ref name="Sailendra1999">{{cite book | author=Sailendra Nath Sen | date=1999 | title=Ancient Indian History and Civilization | url=https://books.google.com/books?id=Wk4_ICH_g1EC&pg=PA278 | publisher=New Age International | pages=277–287 | isbn=978-81-224-1198-0}}</ref> কিন্তু এ অঞ্চলগুলো পরবর্তীতে তিনি মিহির ভোজ|মিহির ভোজের কাছে হারিয়ে ফেলেন। দেবপালের দাক্ষিণাত্য অভিযান সফল হয়েছিল। তার নির্দেশে ভ্রাতা জয়পাল [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূট]] রাজা অমোঘবর্ষকে পরাজিত করে উড়িষ্যা পুনর্দখল করেন। এরপর উড়িষ্যা চিরস্থায়ীভাবে পাল সাম্রাজ্যের শাসনাধীনে ছিল।<ref>{{cite book | author=Rajanikanta Chakrabarti | date=1999 | title=History of Gaur | url=https://www.amazon.in/GOURER-ITIHAS-RAJANIKANTA-CHAKRABORTY/dp/8129526905/258-3550273-9959211?_encoding=UTF8&%2AVersion%2A=1&%2Aentries%2A=0&portal-device-attributes=desktop |publisher=Dey's Publishing | pages=74 | isbn=81-7612-444-3}}</ref><ref>{{cite book | author=Nitish Sengupta |date=2008 | title=History of Bengal and Bengali people| url=https://www.rokomari.com/book/73383/বঙ্গভূমি-ও-বাঙালির-ইতিহাস?ref=null |publisher=Dey's Publishing | pages=43}}</ref><ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal| url=https://www.rokomari.com/book/48237/বাংলার-ইতিহাস?ref=null |publisher=Ononna prokashoni | pages=74}}</ref>
 
পাল সম্রাটগণ বহু বৌদ্ধবিহার ও ধর্মীয় পীঠস্থান নির্মাণ করেছিলেন। বিক্রমশীল, ওদন্তপুরী ও জগদ্দল প্রভৃতি বৃহদায়তন মহাবিহার পাল স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। পাল সম্রাটগণ প্রথমত "[[মহাযান]]" বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। পরবর্তীতে পালগণ হিন্দুদের বৌদ্ধধর্মে অাকৃষ্ট করার জন্য [[তন্ত্র|তান্ত্রিক]] বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন করেন। বহু হিন্দু দেবদেবীকে এই ধর্মে স্থান দেওয়া হয়। পাল সম্রাটগণ [[সংস্কৃত]] বা [[পালি]] ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। পাল রাজাদের সময়ই বাংলা সাহিত্যের প্রাচীণতম নিদর্শন [[চর্যাপদ|চর্যাপদসমূহ]] রচিত হয়। তাই পাল রাজবংশকে অনেক সময় বাংলা সাহিত্যের জনক মনে করা হয়।
৫৮ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|সেন রাজবংশ}}
 
[[সেন রাজবংশ|সেন রাজবংশের]] প্রতিষ্ঠাতা বিজয়সেন প্রাথমিক জীবনে পাল রাজাদের অধীনে দক্ষিণবঙ্গের এক সামন্তপ্রভু ছিলেন। পরে তিনি নিজ বাহুবলে সাম্রাজ্য বিস্তার করে পূর্ববঙ্গের [[বর্মণ রাজবংশ|বর্মণ রাজাদের]] পরাজিত করেন। তিনি উত্তরবঙ্গের এক যুদ্ধে পাল সম্রাট মদনপালকে পরাজিত করে রাজধানী [[গৌড়]] দখল করেন। তিনি ত্রিহুত (উত্তর বিহার) ও কামরূপও (পশ্চিম অাসাম) জয় করে নেন।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal| url=https://www.rokomari.com/book/48237/বাংলার-ইতিহাস?ref=null |publisher=Ononna prokashoni | pages=108}}</ref> তবে তিনি দক্ষিণ বিহার জয় করতে ব্যর্থ হন। পাল রাজাগণ এখানে গাহড়বাল সাম্রাজ্যের সহায়তায় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। বিজয়সেন [[শৈব ধর্ম|শৈব ধর্মের]] ধর্মের অনুসারী ছিলেন। তার সময় কনৌজ, অযোধ্যা ও হরিদ্বার থেকে যেসমস্ত কায়স্থ এদেশে অাসেন তারাই মূলত বাঙালী কায়স্থদের অাদিপুরুষ।
 
[[বল্লাল সেন]] বিজয়সেনের পর বাংলার সিংহাসনে অাসীন হন। বল্লাল সেন তার রাজ্যের প্রায় ১,০০০ [[ব্রাহ্মণ|ব্রাহ্মণকে]] চিহ্নিত করেন। এদেরকে রাজ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সংবদ্ধ করা হয় এবং এদের উচ্চ পদ মর্যাদা প্রদান করা হয়। এই মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ রাজ্যে কুলীন নামে পরিচিত হয়। বল্লাল সেন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি দানসাগর ও অদ্ভূতসাগর নামে দুইটি গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থ দুটো থেকে তার অভূতপূর্ব প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal| url=https://www.rokomari.com/book/48237/বাংলার-ইতিহাস?ref=null |publisher=Ononna prokashoni | pages=112}}</ref> বল্লাল সেনের সময় বঙ্গদেশে [[শৈব]], [[বৈষ্ণব]], [[তন্ত্র|তান্ত্রিক]] প্রভৃতি বিভিন্ন মতবাদ দেখা দেয়। বল্লালসেন ব্যক্তিগতভাবে তান্ত্রিক মতের পৃষ্ঠপোষকতা করেন, যদিও তার পিতা বিজয়সেন শৈব মতের অনুসারী ছিলেন।
 
বল্লাল সেনের পর তার পুত্র [[লক্ষ্মণসেন|লক্ষণ সেন]] সিংহাসনে অাসীন হন। পিতার মত লক্ষণ সেনও সাহিত্য ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। তার সময়ে রাজ্যে বহু প্রতিভাবান কবির অাবির্ভাব হয়। যেমন শরণ, হলায়ুধ, উমাপতিধর প্রমুখ। ধর্মীয় মতের দিক থেকে লক্ষণ সেন ছিলেন বৈষ্ণব। অানুলিয়ায় প্রাপ্ত তাম্র শাসনে লক্ষণ সেনকে পরমবৈষ্ণব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। লক্ষণ সেনের সময় [[ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী|বখতিয়ার খিলজী]] বাংলা অাক্রমণ করেন। এসময় লক্ষণ সেন [[নদীয়া|নদীয়ার]] একটি তীর্থকেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজী অতর্কিতে নদীয়া অাক্রমণ করেন যার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। লক্ষণ সেন [[পূর্ব বঙ্গ|পূর্ব বঙ্গে]] অাশ্রয় গ্রহণ করেন, মুসলমানরা পূর্ববঙ্গ জয় করতে ব্যর্থ হয়।
২৪৯ নং লাইন:
১৯৬৮ সালের গোড়ার দিকে শেখ মুজিব ও অন্যান্য ৩৪ জন নেতার বিরুদ্ধে [[আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা]] দায়ের করা হয়। অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ ভারতবর্ষের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করছিল। যাইহোক এই বিচারের ফলে একটি গণ আন্দোলন সংগঠিত হয় এবং সকল বন্দীদের মুক্ত করার অাহ্বান জানানো হয়। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে একজন বিদ্রোহী, জহুরুল হককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর ফলে অান্দোলন অারও বেগবান হয় এবং পরবর্তীতে ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। গণআন্দোলন পরবর্তীকালে [[ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান|'৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে]] রূপ লাভ করে।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=293 | isbn=9780521861748}}</ref>
 
১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চ [[আইয়ুব খান]] জেনারেল [[ইয়াহিয়া খান]] কে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। পরবর্তীকালে নতুন রাষ্ট্রপতি দেশের সব ধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত করে দেন। যাইহোক কিছু সংখ্যক ছাত্র গোপনীয়তার সাথে আন্দোলন বজায় রাখে। সিরাজুল আলম খান এবং কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বাধীন '১৫ ফেব্রুয়ারি বাহিনী' নামে একটি নতুন দল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে, ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৫ই অক্টোবরের জন্য একটি নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=293 | isbn=9780521861748}}</ref> পশ্চিমের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে সাফল্যজনক নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানে অাওয়ামী লীগকে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত করে।
 
=== স্বাধীনতার প্রস্তুতি ===
 
অাওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের বেশিরভাগ অংশে [[পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০|১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে]] জয়লাভ করে এবং পাকিস্তান সরকার সাংবিধানিক প্রশ্নে অাওয়ামী লীগের সাথে অালোচনা শুরু করে। কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রদেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বন্টন হয়, সেইসাথে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হয়। তবে ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ পাকিস্তানী রাষ্ট্রপতি [[ইয়াহিয়া খান]] পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দেন, যা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভের সূচনা করে।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=298 | isbn=9780521861748}}</ref> ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের এক ছাত্র নেতা [[আ.স.ম. আবদুর রব|অা স ম আবদুর রবের]] নির্দেশে বাংলাদেশের নতুন ([[বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা|জাতীয় পতাকা]] উত্থাপিত হয়।
 
অান্দোলনকারী ছাত্রনেতারা দাবী করে যে [[শেখ মুজিবুর রহমান]] অবিলম্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করুন, কিন্তু মুজিবুর রহমান এই দাবীতে সম্মত হতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। বরং তিনি ৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য একটি জনসভায় তার পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ৩রা মার্চ ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজ স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের নির্দেশে [[পল্টন ময়দান|পল্টন ময়দানে]] এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সামনে স্বাধীনতার ইস্তেহার পাঠ করেন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=302 | isbn=9780521861748}}</ref>৭ মার্চ তারিখে [[সোহরাওয়ার্দী উদ্যান|সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে]] একটি জনসাধারণের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর চলমান স্বাধীনতা অান্দোলনের অগ্রসরতা সম্পর্কে জন সাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন।
 
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরবর্তীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৭ই মার্চ এর ভাষণে, পাকিস্তানী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি অাসন্ন যুদ্ধের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানান।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=302 | isbn=9780521861748}}</ref>যদিও তিনি সরাসরি স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেননি, কারণ তখনও অালোচনা চলছিল, তিনি তাঁর শ্রোতাদেরকে কোনও এক সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত থাকার জন্য অাহ্বান জানান। শেখ মুজিবুর রহমানের [[সাতই মার্চের ভাষণ|৭ মার্চের ভাষণকে]] স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চাবিকাঠি বলে মনে করা হয়, এবং এ ভাষণের বিখ্যাত উক্তি ছিল:
 
:: '' এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম অামাদের মুক্তির সংগ্রাম। ''
২৬৬ নং লাইন:
২৬ মার্চের প্রথমার্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সামরিক অভিযান শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং রাজনৈতিক নেতারা বহুবিভক্ত হয়ে যান। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার আগে, শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাক্ষরিত নোট প্রেরণ করেন যা [[বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র]] হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এই নোটটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এর বেতার ট্রান্সমিটার দ্বারা প্রচারিত হয়। বাংলাদেশী আর্মি অফিসার মেজর [[জিয়াউর রহমান]] কালুরঘাট রেডিও স্টেশন দখল করেন এবং ২৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন। <ref name="bdnews24">{{cite web|url=http://arts.bdnews24.com/?p=2769|publisher=arts.bdnews24.com|title=arts.bdnews24.com » সংযোজনস্বাধীনতার ঘোষণা: বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাৎকার|accessdate=6 January 2017}}</ref>
 
সামরিক উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে ১১ জন কমান্ডারের অধীনে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=316 | isbn=9780521861748}}</ref>এই অাঞ্চলিক বাহিনীগুলোর সাথে সাথে যুদ্ধের জন্য অারও তিনটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়ঃ [[জেড ফোর্স (বাংলাদেশ)|জেড ফোর্স]], [[এস ফোর্স (বাংলাদেশ)|এস ফোর্স]] এবং [[কে ফোর্স (বাংলাদেশ)|কে ফোর্স]]। এই তিনটি বাহিনীর নাম উক্ত বাহিনীর কমান্ডারদের নামের প্রথম অক্ষর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। মেহেরপুর সরকার কর্তৃক প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ বেশিরভাগ অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল, যা ভারত কর্তৃক সমর্থিত ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং বাংলার [[মুক্তি বাহিনী]] এর মধ্যে যুদ্ধের সময় আনুমানিক এক কোটি বাঙালী, প্রধানত হিন্দু, ভারতের অাসাম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আশ্রয় নেয়।
 
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি ভারতের সহানুভূতি ছিল এবং ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর [[ভারত]] বাংলাদেশীদের পক্ষে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করে। এর ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুই সপ্তাহের একটি সংক্ষিপ্ত এবং ব্যাপক বিধ্বংসী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট জেনারেল [[আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী|এ.এ.কে. নিয়াজী]] এবং পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষগণ ভারত ও বাংলাদেশের মিত্রবাহিনীর নিকট অাত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকালে শুধুমাত্র কয়েকটি দেশ নতুন রাষ্ট্রকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। [[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের]] পর পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৯০ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পন করে।<ref name="dailytimes1912005">{{cite news |title=54 Indian PoWs of 1971 war still in Pakistan |url=http://www.dailytimes.com.pk/default.asp?page=story_19-1-2005_pg7_28 |newspaper=DailyTimes |date=19 January 2005 |archive-url=https://archive.is/20121221143602/http://www.dailytimes.com.pk/default.asp?page=story_19-1-2005_pg7_28 |archive-date=21 December 2012 |access-date=11 October 2011 |deadurl=yes |df=dmy-all }}</ref><ref name=BBC1971>{{cite news|title=The 1971 war|url=http://news.bbc.co.uk/hi/english/static/in_depth/south_asia/2002/india_pakistan/timeline/1971.stm |work=BBC News |accessdate=11 October 2011}}</ref>
২৭৯ নং লাইন:
====শেখ মুজিব প্রশাসন====
 
বামপন্থী দল [[আওয়ামী লীগ]] যারা ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জিতেছিল, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর প্রথম সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ নেতা [[শেখ মুজিবুর রহমান]] ১৯৭২ সালের ১লা জানুয়ারী বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধাণমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হন এবং ব্যাপকভাবে দেশটির স্বাধীনতার নায়ক এবং জাতির পিতা হিসেবে গণ্য হন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=324 | isbn=9780521861748}}</ref>তার শাসনামলে বাঙালী জাতীয়তার গঠন ছিল মূলত ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে। ১৯৭২ সালে [[কামাল হোসেন]] এর রচিত [[বাংলাদেশের সংবিধান|সংবিধানটি]] মূলত একটি উদার গণতান্ত্রিক [[সংসদীয় প্রজাতন্ত্র]] গঠন করে, যার ওপর সমাজতন্ত্রের কিছুটা প্রভাব ছিল।
 
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, মুজিব এবং ভারতীয় প্রধাণমন্ত্রী [[ইন্দিরা গান্ধী]] ২৫-বছর মেয়াদী ইন্দো-বাংলাদেশী বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তির স্বাক্ষর করেন। আমেরিকান ও [[সোভিয়েত ইউনিয়ন|সোভিয়েত]] নেতাদের সাথে আলোচনা করার জন্য ওয়াশিংটন ডিসি ও মস্কোতে মুজিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের দিল্লী চুক্তিতে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তির জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করে।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=325 | isbn=9780521861748}}</ref>এই চুক্তিটি পাকিস্তানে অাটকে পড়া বাঙালী কর্মকর্তাদের এবং তাদের পরিবারদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করে। তার পাশাপাশি ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথ প্রশস্ত করে।
 
স্থানীয়ভাবে, মুজিবের শাসনামলে [[একনায়কতন্ত্র|কর্তৃত্ববাদী]] শাসন ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান হয়ে ওঠে। প্রতিক্রিয়াশীল সমাজতান্ত্রিক দল [[জাসদ]] এর একটি বিদ্রোহ ছিল, পাশাপাশি বাণিজ্যগোষ্ঠী এবং রক্ষণশীল শক্তিবর্গের একটি আন্দোলন ছিল, যারা মনে করত আওয়ামী লীগ সমগ্র মুক্তি অান্দোলনের মুনাফা একচেটিয়াভাবে গ্রহণ করে। বিক্ষোভ দমনের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে তিন মাসের জরুরী অবস্থা জারি করেন। তিনি [[জাতীয় রক্ষীবাহিনী|জাতীয় রক্ষী বাহিনী]] গঠন করেন, যা [[মানবাধিকার|মানবাধিকার অপব্যবহারের]] ব্যাপারে অভিযুক্ত হয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেকেও জাতীয় রক্ষী বাহিনী দ্বারা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। <ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=325 | isbn=9780521861748}}</ref>
 
===সামরিক অভ্যুত্থান ও প্রেসিডেন্সিয়াল শাসন===
==== প্রথম সামরিক আইন এবং জিয়া প্রশাসন ====
 
জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি এবং [[প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক|সিএমএলএ]] এর পদ গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরে জিয়া তার রাষ্ট্রপতিত্ব ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষকে গণতান্ত্রিক রূপ প্রদানের জন্য একটি রাজনৈতিক দল, [[বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল]] (বিএনপি) গঠন করেন। দেশীয় মুসলিম ঐতিহ্যের উপর জোর দিয়ে জিয়া একটি [[বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ]] ধারণার প্রথাকে তুলে ধরেন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=332 | isbn=9780521861748}}</ref>১৯৭৯ সালে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিএনপি ভূমিধ্বসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পরিণত হয়।
 
রাষ্ট্রপতি জিয়া সংবিধানে [[মুক্ত বাজার|মুক্ত বাজার অর্থনীতি]] পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন, সমাজতন্ত্রকে "অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার" হিসেবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করেন এবং একটি বৈদেশিক নীতিমালা প্রণয়ন করেন যা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং [[সার্ক|দক্ষিণ এশীয় অাঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার]] সাথে সহযোগিতার ওপর জোর প্রদান করে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার অধীনে দেশে দ্রুত অর্থনীতি ও শিল্পায়নের উদ্যোগ বৃদ্ধি পায়। সরকার দেশের প্রথম [[মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল|রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল]] গুলো তৈরি করে, একটি জনপ্রিয় খাদ্য-কর্মসূচী পরিচালনা করে, খামারগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় এবং বেসরকারী খাতের উন্নয়নকে উৎসাহিত করা হয়। <ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=332 | isbn=9780521861748}}</ref>
 
জিয়া তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে একুশটি অভ্যুত্থানের মোকাবিলা করেছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল বিমানবাহিনী দ্বারা। তাঁর এক সময়কার সহকারী কর্নেল [[আবু তাহের|আবু তাহেরকে]] দেশদ্রোহের চেষ্টায় গ্রেফতার করা হয় এবং মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীতে তার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে অনেকেরই এই রকম পরিণতি দেখা যায়। তবে চূড়ান্ত অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টায় ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড ঘটে। মেজর জেনারেল [[আবুল মঞ্জুর]] -এর প্রতি বিশ্বস্ত সৈন্যদের হাতে জিয়া নিহত হন, যখন ১৯৮১ সালের ৩০ মে তারা চট্টগ্রামে তার সরকারী বাসভবনে হানা দেন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=333 | isbn=9780521861748}}</ref> সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল [[হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ]] এই বিদ্রোহকে দমন করেন।
 
==== সাত্তার প্রশাসন ====
 
জিয়াউর রহমানের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন উপরাষ্ট্রপতি [[আবদুস সাত্তার (রাষ্ট্রপতি) | আব্দুস সাত্তার]]। অাবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত হন, যদিও তার প্রতিদ্বন্দ্বী [[কামাল হোসেন]] তাকে কারচুপির জন্য অভিযুক্ত করেন। ক্ষমতাসীন বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে সাত্তারের প্রেসিডেন্সী মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাসন করে ও উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন [[মির্জা নূরুল হুদা]]।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=334 | isbn=9780521861748}}</ref>উত্তরপূর্ব ভারতে বিদ্রোহ এবং বার্মায় মুসলিম সহিংসতাগুলোর প্রেক্ষাপটে একটি [[সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ | জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ]] গঠন করা হয়। অাবদুস সাত্তার বয়স্কতার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যার ভোগেন। ১৯৮২ সালের সামরিক অভ্যুত্থান রাষ্ট্রপতি সাত্তার এবং তার বেসামরিক সরকারকে বহিষ্কার করে। বাংলাদেশের সামরিক অভ্যুত্থানের পিছনে কারণ হিসাবে খাদ্য সংকট, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক অপব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
 
==== দ্বিতীয় সামরিক আইন এবং এরশাদ প্রশাসন ====
 
সাত্তারকে প্রধান বিচারপতি [[আফম আহসানউদ্দিন চৌধুরী|এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরী]] পদচ্যুত করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল [[হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ]] সামরিক আইন ঘোষণা করেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। তিনি মন্ত্রিপরিষদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ডেপুটি মার্শাল ল' অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানদের নিয়োগ করেন। এরশাদের মার্শাল ল' শাসনের অধীনে রাজনৈতিক নিপীড়ন ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। যাইহোক, সরকার প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি সুসংঘবদ্ধ কাঠামো প্রণয়ন করে। দেশের আঠার জেলাকে ৬০ টি জেলায় বিভক্ত করা হয়। দেশে উপজেলা ব্যবস্থাও প্রবর্তন করা হয়।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=336 | isbn=9780521861748}}</ref>
 
এরশাদ [[সোভিয়েত ইউনিয়ন|সোভিয়েত]] বিরোধী জোটের পক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি আরও জোরদার করেন। ১৯৮৩ সালে এরশাদ অানুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। তার প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে ছিল মূলত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অর্থনীতি (৭০% পর্যন্ত শিল্প রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছিল) এবং হালকা উৎপাদন, কাঁচামাল এবং সংবাদপত্র সহ ভারী শিল্পে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। বিদেশী কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের শিল্পে বিনিয়োগ করতে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং উৎপাদন রক্ষা করার জন্য কঠোর ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=337 | isbn=9780521861748}}</ref>দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অান্দোলনের জন্য জন্য মৃত্যুদণ্ডের অাইন জারি করা হয় এবং সমস্ত রাজনৈতিক দল ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়।
 
এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন এবং ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন।
সব প্রধান বিরোধী দল এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে এবং দাবী করে যে সরকার স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন অায়োজন করতে অসমর্থ হয়েছে। ক্ষমতাসীন [[জাতীয় পার্টি (এরশাদ)|জাতীয় পার্টি]] ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৫১ টি আসন লাভ করে। ১৯৮৮ সালের জুন মাসে সংসদ সহস্রাধিক বিল পাস করে, একটি বিতর্কিত সংশোধনীতে ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম এবং ঢাকার বাইরের শহরগুলিতে উচ্চ আদালতের বেঞ্চ গঠন করতে বিধান জারি হয়। যদিও ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে বজায় থাকে, তবে ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণের বিধান সুপ্রীম কোর্টের রায় কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। <ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=337 | isbn=9780521861748}}</ref>
 
===গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও বর্তমান যুগ===
৩১১ নং লাইন:
==== প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার (১৯৯০-১৯৯১) ====
 
এরশাদ সামরিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত [[গণতন্ত্র|গণতন্ত্রপন্থী]] আন্দোলন সমগ্র দেশকে অাচ্ছাদিত করে এবং এতে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত উভয় শ্রেণীর জনগণ অংশগ্রহন করে। প্রধান বিচারপতি [[শাহাবুদ্দিন আহমেদ]] ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং দেশে প্রথম [[তত্ত্বাবধায়ক সরকার]] গঠন করেন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=338 | isbn=9780521861748}}</ref>শাহাবুদ্দিন এরশাদকে গ্রেফতার করেন এবং ১৯৯১ সালে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হন।
 
==== খালেদা প্রশাসন (১৯৯১-১৯৯৬) ====
 
মধ্য ডানপন্থী দল [[বিএনপি]] বহুসংখ্যক অাসনে জয়লাভ করে এবং ইসলামী দল [[বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী|জামায়াত-ই-ইসলামির]] সমর্থনে সরকার গঠন করে, জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী [[খালেদা জিয়া|খালেদা জিয়াকে]] প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। জাতীয় পার্টি-এর প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে বন্দী ছিলেন। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=339 | isbn=9780521861748}}</ref>সংবিধানে আরও বেশি পরিবর্তন এনে সাংসদরা সম্মিলিতভাবে একটি সংসদীয় পদ্ধতি পুনর্নির্মাণ করেন এবং বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের মৌলিক সংবিধান অনুযায়ী অাবার প্রধানমন্ত্রী শাসিত শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আসে।
 
অর্থমন্ত্রী [[সাইফুর রহমান|সাইফুর রহমান]] একটি উদার অর্থনৈতিক সংস্কারের ধারাবাহিকতা শুরু করেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং [[ভারত]], [[পাকিস্তান]] ও [[শ্রীলঙ্কা|শ্রীলঙ্কায়]] একটি মডেল হিসেবে দেখা হয়। <ref name="dhakatribune">{{cite web|url=http://www.dhakatribune.com/opinion/op-ed/2016/09/06/remembering-budget-wizard/|publisher=dhakatribune.com|title=Remembering the budget wizard &#124; Dhaka Tribune|accessdate=6 January 2017}}</ref> মার্চ ১৯৯৪ সালে একটি সংসদীয় উপনির্বাচনে বিতর্ক দেখা দেয়, যাতে বিরোধী দল দাবী করে যে সরকার অবৈধ উপায়ে ক্ষমতায় এসেছে। সমগ্র বিরোধী দল অনির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সংসদ বয়কট করে। বিরোধীদল এও দাবী করে যে খালেদা জিয়ার সরকার পদত্যাগ করুক এবং তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য, বার বার সাধারণ হরতালের একটি কর্মসূচি প্রনয়ণ করে।
 
[[কমনওয়েলথ]] সচিবালয়ের সহায়তায় বিতর্কের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে আরেকটি সমঝোতা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে সংসদ থেকে বিরোধী দল পদত্যাগ করে। তারপর সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য তারা মিছিল, বিক্ষোভ ও হরতালের প্রচারণা চালায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে বয়কটের অঙ্গীকার করে। ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার পর, সংসদ একটি সংবিধান সংশোধন করে, একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক ক্ষমতা গ্রহণ এবং নতুন সংসদীয় নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য অনুমতি প্রদান করে।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=342 | isbn=9780521861748}}</ref>
 
==== দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার (১৯৯৬) ====
 
প্রধান বিচারপতি [[মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান]] দেশের সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অভিষিক্ত হন। এই সময়ে, রাষ্ট্রপতি [[আবদুর রহমান বিশ্বাস]] সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল [[আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম|অাবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমকে]] রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বরখাস্ত করেন, যার ফলে সেনাবাহিনীর মধ্যে অাকস্মিক অভ্যুত্থান দেখা দেয়।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=342 | isbn=9780521861748}}</ref>বরখাস্ত সেনা প্রধান নাসিম বগুড়া, ময়মনসিংহ ও যশোরের সৈন্যদলসহ ঢাকায় যাওয়ার জন্য তার অনুগত বাহিনীকে নির্দেশ দেন।
 
তবে সাভারের সামরিক কমান্ডার দেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষে যোগদান করেন এবং রাজধানী ও তার আশেপাশের মহাসড়কে ট্যাংক মোতায়েন করেন, এবং অভ্যুত্থান বাহিনীকে দমন করার জন্য অপারেশনের অংশ হিসেবে ফেরী চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে লেঃ জেনারেল নাসিমকে ঢাকা সেনানিবাসে গ্রেপ্তার করা হয়।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=342 | isbn=9780521861748}}</ref>প্রধান উপদেষ্টা সফলভাবে ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন তারিখে একটি স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন। আওয়ামী লীগ সংসদে ১৪৬ টি আসনে জয়লাভ করে এবং একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিএনপি ১১৬ টি আসন এবং জাতীয় পার্টি ৩২ টি আসন লাভ করে।
 
==== হাসিনা প্রশাসন (১৯৯৬-২০০১) ====
 
[[শেখ হাসিনা]] ১৯৯৬ সালের জুন মাসে "জাতীয় ঐকমত্যের সরকার" নামক একটি সরকার গঠন করেন, যার মধ্যে ছিল জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী এবং জাতীয় সামাজতান্ত্রিক দল ([[জাসদ]]) এর একজন মন্ত্রী।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=343 | isbn=9780521861748}}</ref> জাতীয় পার্টি কোনও আনুষ্ঠানিক জোটে প্রবেশ করেনি এবং পার্টির প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে লীগ সরকারের কাছ থেকে তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে কেবল তিনটি দলেরই ১০ জনের অধিক সদস্য নির্বাচিত হয়: এই তিনটি দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারীতে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।
 
আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, ১৯৯৬ সালের জুন নির্বাচন মুক্ত এবং ন্যায্য ছিল এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি এই নতুন সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়। হাসিনা প্রশাসন পরিবেশগত ও আন্তঃজাতিগত চুক্তির ক্ষেত্রে মাইলফলক কৃতিত্ব অর্জন করে। এগুলো হল ভারতের সাথে গঙ্গার পানি ভাগ চুক্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত বিদ্রোহীদের সাথে [[পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি|শান্তি চুক্তি]]। <ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=344 | isbn=9780521861748}}</ref> ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় এক বিরল ও অভূতপূর্ব ত্রিপক্ষীয় সম্মেলনের আয়োজন করেন, যাতে অংশগ্রহণ করেন- ১. পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী [[নওয়াজ শরীফ]], ২. ভারতের প্রধানমন্ত্রী [[আই. কে. গুজরাল]] এবং ৩.অামেরিকার রাষ্ট্রপতি [[বিল ক্লিনটন]]।
 
১৯৯৯ সালের জুন মাসে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো আবার সংসদে উপস্থিত হতে বিরত থাকে। ১৯৯৭ সালে "ছয় দিনের" [[হরতাল]] থেকে শুরু করে ১৯৯৯ সালে "২৭ দিনের" হরতাল পর্যন্ত; বিরোধীদলের পক্ষ থেকে ব্যাপক সংখ্যক হরতালের সৃষ্টি হয়।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=346 | isbn=9780521861748}}</ref>১৯৯৯ সালের শুরুতে গঠিত চার-দলীয় বিরোধী জোট ঘোষণা করে যে, নির্বাচনী বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারী নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ না পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এবং এর ফলে বিএনপি পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯ সালে পৌর পরিষদের নির্বাচন, বেশ কয়েকটি সংসদীয় উপনির্বাচন এবং ২০০০ সালের [[চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন]] নির্বাচন বর্জন করে।
 
==== তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার (২০০১) ====
 
প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সহিংসতা দমনের ক্ষেত্রে সাফল্যের পরিচয় দেয়। ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর তারিখে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি-নেতৃত্বাধীন জোটের বিপুল বিজয় দেখা দেয়, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল [[বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী|জামায়াত-ই-ইসলামী]] এবং [[ইসলামী ঐক্য জোট]]। বিএনপি ১৯৩ টি লাভ করে এবং জামায়াত ১৭ টি আসনে জয়লাভ করে। <ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=348 | isbn=9780521861748}}</ref>
 
====খালেদা প্রশাসন (২০০১-২০০৬)====
 
২০০১ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং নির্বাচন পরিদর্শক দলের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে ঘোষণা সত্ত্বেও, শেখ হাসিনা বিগত নির্বাচনের নিন্দা করেন এবং সংসদ বর্জন করেন। ২০০২ সালে তিনি অবশ্য তার দলকে [[জাতীয় সংসদ|জাতীয় সংসদে]] নেতৃত্ব দেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ আবার ২০০৩ সালের জুন মাসে একজন রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী এবং [[স্পিকার|সংসদীয় স্পিকারের]] পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা এবং সেই সাথে অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায়।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=349 | isbn=9780521861748}}</ref>জুন ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ তাদের দাবী পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও সংসদে ফিরে আসে। ২০০৫ সালের [[জাতীয় বাজেট|বাজেট]] অধিবেশনের সময় সামগ্রিক বয়কটের ঘোষণা দেবার আগে তারা অনিয়মিতভাবে সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
 
খালেদা জিয়ার প্রশাসন উন্নত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সেই সাথে দুর্নীতির অভিযোগ এবং দেশের [[ধর্মনিরপেক্ষতা|ধর্মনিরপেক্ষ]] ও রক্ষণশীল শক্তির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষের দ্বারা চিহ্নিত হয়। [[উইকিলিকস]] কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত আমেরিকান কূটনৈতিক মিডিয়াগুলোতে তার ছেলে [[তারেক রহমান|তারেক রহমানকে]] "গোপনীয়তার জন্য বিখ্যাত এবং বারংবার সরকারি ক্রয়কর্ম ও রাজনৈতিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষের জন্য" বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। <ref name="wikileaks">{{cite web|url=https://wikileaks.org/plusd/cables/08DHAKA1143_a.html|publisher=wikileaks.org|title=Cable: 08DHAKA1143_a|accessdate=6 January 2017}}</ref>আফগানিস্তানে [[তালেবান|তালেবানদের]] উৎখাত হওয়ার পর বাংলাদেশ ত্রাণ তৎপরতার ক্ষেত্রে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়, যার মধ্যে "ব্র্যাক" যুদ্ধবিমুখ দেশটির বৃহত্তম উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়।
 
হাই প্রোফাইলের একটি সিরিজ গুপ্তঘাতক গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় নেতাদের হত্যার হুমকি প্রদান করে। ২০০৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামান্যর জন্য ঢাকায় গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা পান। ২০০৫ সালে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা চালায়।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=351 | isbn=9780521861748}}</ref> লীগ বিএনপি ও জামায়াতকে [[বাংলাদেশে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণ|জঙ্গীবাদের]] উত্থানের সাথে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চচলীয় বিদ্রোহীদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে, এমন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভারতের সাথে সম্পর্ক প্রকট অাকার ধারণ করে। খালেদা জিয়া [[চীন|চীনের]] সাথে কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রকাশ করেন এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
 
==== চতুর্থ তত্ত্বাবধায়ক সরকার (২০০৬-২০০৮) ====
 
বিএনপির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একটি বড় রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়, কারণ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার জন্য নিরপেক্ষ প্রার্থীকে দাবী করে। বহু সপ্তাহ ব্যাপী হরতাল, বিক্ষোভ এবং অবরোধের কারণে দেশটি পঙ্গু হয়ে যায়। রাষ্ট্রপতি [[ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ]] প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, কিন্তু একটি সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী নির্বাচনের ভীতি দূর করতে ব্যর্থ হন। ১১ জানুয়ারী ২০০৭ তারিখে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল [[মঈন ইউ আহমেদ]] এর চাপের মুখে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডঃ [[ফখরুদ্দীন আহমদ]] তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। <ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=354 | isbn=9780521861748}}</ref>
 
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করে, যার মধ্যে ১৬০ জন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং আমলাকে গ্রেফতার করা হয়। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাসহ খালেদা জিয়ার দুই ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=355 | isbn=9780521861748}}</ref>ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিক্ষোভকারীগণ ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবী জানায়, কিন্তু কারফিউ দ্বারা অান্দোলন দমন করা হয়। ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা মুক্তি পান। জরুরী অবস্থা দুই বছর ধরে অব্যাহত থাকে। ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে, যার মধ্যে জাতীয় পার্টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
 
==== হাসিনা প্রশাসন (২০০৯-বর্তমান) ====
 
কার্যনির্বাহী সভার দুই মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারকে [[২০০৯-এর বিডিআর বিদ্রোহ|বিডিঅার বিদ্রোহের]] মোকাবেলা করতে হয়, যা সেনা বিভাগের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহীদের হিংস্রতা ও ক্রুদ্ধ ব্যক্তিদের মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার ব্যাপক সফলতার পরিচয় দেন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=356| isbn=9780521861748}}</ref>১৯৭১ সালে গণহত্যার অন্যতম কারিগর পাকিস্তানপন্থী নেতাদের বিচারের জন্য তিনি [[আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল]] গঠন করেন। ট্রাইব্যুনাল তার সুুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতার ব্যাপারে সমালোচনার সম্মুখীন হয়। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতা, বাংলাদেশ দলের স্বাধীনতার বিরোধিতা ও গণহত্যার সময় পাকিস্তানকে সহায়তার অভিযোগে অভিযুক্ত।
 
২০১০ সালে সংবিধানের মৌলিক নীতি হিসেবে বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। অান্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে জনমত পরিচালিত করে, যা প্রকাশিত হয় মার্চ [[২০১৩-র শাহবাগ আন্দোলন|২০১৩ শাহবাগ প্রতিবাদের]] মাধ্যমে। মে ২০১৩ সালে [[হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ|হেফাজত-ই-ইসলামের]] নেতৃত্বে একটি ইসলামপন্থী সংগঠনও পাল্টা বিরাট সমাবেশ পরিচালনা করে। ২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর এবং পাশ্চাত্যবাসী, [[ব্লগ|ব্লগার]], [[প্রকাশনা|প্রকাশক]] ও [[নাস্তিক্যবাদ|নাস্তিকদের]] ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। [[ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট]] অনেক গুলো হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে, যদিও হাসিনা সরকার স্থানীয়দের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দায়ী করেন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=358 | isbn=9780521861748}}</ref>
 
অাওয়ামী লীগ ও বিনপির মধ্যে সংঘাতকে প্রায়ই বেগমদের যুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয়। হাসিনা সরকার বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অাইন বিলুপ্ত করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে একে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে অাওয়ামী লীগের পক্ষে দুর্নীতিযুক্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়। লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ জীবনে সহিংসতা বেড়ে যায়। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে হিংস্রতম নির্বাচন।<ref>{{cite book |last=Van Schendel |first=Willem |date=2009 | title=A History of Bangladesh | url=https://www.bookdepository.com/History-Bangladesh-Willem-Van-Schendel/9780521861748 | publisher=Cambridge University Press | page=359 | isbn=9780521861748}}</ref>২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে বিএনপি বয়কট করে ; যেখানে জামায়াতকে নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক মিডিয়ায় নির্বাচনের সমালোচনা করা হয়। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেন।
 
== তথ্যসূত্র ==