বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
103.68.118.26 (আলাপ)-এর সম্পাদিত 3133661 নম্বর সংশোধনটি বাতিল করা হয়েছে ট্যাগ: পূর্বাবস্থায় ফেরত |
|||
২৫ নং লাইন:
'''বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব''' বলতে বিশ্বব্যাপী [[ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি|জলবায়ু পরিবর্তনের]] ফলে [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশে]] যে অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী নেতিবাচক এবং ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার যাবতীয় চুলচেরা বিশ্লেষণকে বোঝাচ্ছে। [[:en:United Nations Framework Convention on Climate Change|UNFCCC]] বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে মানুষের কারণে সৃষ্ট<ref>[http://unfccc.int/cop9/se/present/jenkins.pdf Climate Change, an Introduction] (UNFCCC Climate Kiosk at CoP9), pg 32, 11 December 2003, UNFCCC</ref>, আর [[জলবায়ু|জলবায়ুর]] বিভিন্নতাকে অন্য কারণে সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন বোঝাতে ব্যবহার করে। কিছু কিছু সংগঠন মানুষের কারণে সৃষ্ট পরিবর্তনসমূহকে মনুষ্যসৃষ্ট (anthropogenic) জলবায়ুর পরিবর্তন বলে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, বিশ্বব্যাপি জলবায়ুর পরিবর্তন শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই নয়, এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও সামিল। এই নিবন্ধে "বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন" বলতে শ্রেফ ''প্রাকৃতিক কারণে'' জলবায়ু পরিবর্তনকে বোঝানো হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের বিপর্যয়ের এই ঘটনাকে [[গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার|বাংলাদেশ সরকারের]] [[বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়]] কর্তৃক নব্বইয়ের দশকে প্রণীত ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ্যাকশন প্ল্যান (NEMAP)-এ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।<ref name="Islam">{{বই উদ্ধৃতি |
:১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ
:২. কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে
:৩. সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোথায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে
:৪. ক্ষতিগ্রস্থ দেশটি ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্য এরই মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, [[হিমালয়|হিমালয়ের]] বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক অনেক বেশি। [[মালদ্বীপ]], [[টুভ্যালু]], [[ত্রিনিদাদ ও টোবাগো|টোবাগো]] -এদের সবার ক্ষেত্রেই এই সবগুলো মানদন্ডই কার্যকর নয়। তাছাড়া মালদ্বীপের মোট জনসংখ্যা বাংলাদেশের অনেক জেলার জনসংখ্যার চেয়েও কম।<ref name="PAMinistry">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ''জার্মান ওয়াচ''-এর ২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (CRI) অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্থ দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে [[বাংলাদেশ]]। এই সমীক্ষা চালানো হয় ১৯৯০ থেকে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৯৩টি দেশের উপর। উল্লেখ্য, উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত ২০০৭ এবং ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ।<ref name="KK2011">''"[http://www.dailykalerkantho.com/~dailykal/?view=details&archiev=yes&arch_date=29-11-2010&feature=yes&type=gold&data=Mobile&pub_no=354&cat_id=3&menu_id=0&news_type_id=3&index=1 জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ]"'', বাংলানিউজ২৪.কম। দৈনিক কালের কণ্ঠ। নভেম্বর ২৯, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ। পরিদর্শনের তারিখ: এপ্রিল ১৪, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।</ref><ref name="Ittefaq2011">''"[http://www.ittefaq.com.bd/content/2011/01/17/news0439.htm জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় এড়াতে বৈশ্বিক তহবিলে বাংলাদেশের দ্রুত প্রবেশ প্রয়োজন]"'', হাসান আলী; দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারি ১৭, ২০১১; পরিদর্শনের তারিখ: এপ্রিল ১৪, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।</ref> জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্থতার বিচারে বিশ্বব্যাপী গবেষকগণ বাংলাদেশকে ''পোস্টার চাইল্ড'' (''Poster Child'') হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।<ref name="Ittefaq2011"/>
৩৭ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|বাংলাদেশের ভূগোল}}
[[চিত্র:LocationBangladesh.svg|thumb|330px|বাংলাদেশের অবস্থান]]
[[বাংলাদেশ]], [[দক্ষিণ এশিয়া|দক্ষিণ এশিয়ার]] একটি দেশ, যা ২৬° ৩৮' উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২০° ৩৪' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮° ০১' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯২° ৪১' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দেশটির পশ্চিম, উত্তর, আর পূর্ব সীমান্ত জুড়ে রয়েছে [[ভারত]]। পশ্চিমে রয়েছে ভারতের [[পশ্চিমবঙ্গ]] রাজ্য। উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, [[আসাম]], [[মেঘালয়]] রাজ্য। পূবে আসাম, [[ত্রিপুরা]], [[মিজোরাম]]। তবে পূর্বদিকে ভারত ছাড়াও [[মিয়ানমার|মিয়ানমারের]] (বার্মা) সাথে সীমান্ত রয়েছে। দক্ষিণে রয়েছে [[বঙ্গোপসাগর]]। ভূতাত্ত্বিকভাবে, দেশটি থেকে উত্তর দিকে রয়েছে সুউচ্চ [[হিমালয়]] পার্বত্যাঞ্চল, যেখান থেকে বরফগলা পানির প্রবাহে সৃষ্ট বড় বড় নদী ([[গঙ্গা]], [[ব্রহ্মপুত্র]], [[মেঘনা]] ইত্যাদি) বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবহমান এবং নদীগুলো গিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। বর্ষাকালে নদীবাহিত পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে নদী উপচে পানি লোকালয়ে পৌঁছে যায়, এবং দেশটি এভাবে প্রায় প্রতি বছরই বন্যায় আক্রান্ত হয়।<ref name="WorldBank">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |
== জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব ==
৭৩ নং লাইন:
=== বৃষ্টিপাত হ্রাস ===
[[ভারত|ভারতের]] আবহাওয়া দপ্তরের ১৯৫১ থেকে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের সংগৃহীত উপাত্তের ভিত্তিতে [[নয়াদিল্লি|নয়াদিল্লির]] ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক সায়েন্সেস বিভাগের উদ্যোগে বৃষ্টিপাতের ব্যাপ্তি, বর্ষা মৌসুমের ব্যাপ্তি ও বৃষ্টির পরিমাপ ইত্যাদি উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে যে, ভারতীয় উপমহাদেশে [[বৃষ্টি|বৃষ্টিপাত]] কমছে। দেখা গেছে, চারদিনের বেশি সময় ধরে কমপক্ষে ২.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ঘটনা কমে গেছে। যদিও স্বল্প সময়ের জন্য বৃষ্টিপাত বেড়েছে। কিন্তু এতে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের চক্র দূর্বল হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি এজন্য আশঙ্কাজনক যে, এই উপমহাদেশের কৃষিকাজ দীর্ঘমেয়াদি বৃষ্টির উপযোগী।<ref name="PARain">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
ইতোমধ্যেই (২০০৯) বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে, [[ধান|ধানের]] ফুল আসার সময় থেকে বীজ বের হওয়ার মাঝখানের সময়টুকুতে প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় টি-আমন জাতের ধানের উৎপাদন কমে আসছে।<ref name="PAGov"/> এমনকি ভরা বর্ষায় [[জয়পুরহাট জেলা|জয়পুরহাটের]] [[কালাই উপজেলা|কালাই উপজেলায়]] অনাবৃষ্টিতে [[আমন]] ধানের বিশাল খেত রোদে পুড়ছে (২০১০)। যেখানে আমন ধান রোপনের অন্তত ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত পানি ধরে রাখা নিশ্চিত করতে হয়, নাহলে কুশি বাড়ে না; সেখানে পানির অভাবে জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে।<ref name="PAAmon">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে (৪৭,৪৪৭ মিলিমিটার), বিগত ১৫ বছরের তুলনায় (১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের পরে) সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে, এমনকি এই পরিমাণ শ্রেফ ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের তুলনায়ই ৯,০০০ মিলিমিটার কম।<ref name="PALessRain">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
==== লবণাক্ততা বৃদ্ধি ====
বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নদ-নদীর পানিপ্রবাহ শুকনো মৌসুমে স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে না। ফলে নদীর পানির বিপুল চাপের কারণে সমুদ্রের লোনাপানি যতটুকু এলাকাজুড়ে আটকে থাকার কথা ততটুকু থাকে না, পানির প্রবাহ কম থাকার কারণে সমুদ্রের লোনাপানি স্থলভাগের কাছাকাছি চলে আসে। ফলে লবণাক্ততা বেড়ে যায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুল এলাকায়। দক্ষিণ-পশ্চিম [[যশোর জেলা|যশোরে]] এমনটা দেখতে পাওয়া যায়, সেখানে শুষ্ক মৌসুমে [[গঙ্গা|গঙ্গার]] পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়<ref name="Islam"/>। সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যায়, দেশের দাকোপসহ দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র ভূভাগের অনেক ভিতর পর্যন্ত লোনাপানি ইতোমধ্যেই (২০০৯) ঢুকে পড়েছে<ref name="PAHealth"/>। এই সমস্যা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে [[যশোর জেলা|যশোর]], [[কুষ্টিয়া জেলা|কুষ্টিয়া]], [[ফরিদপুর জেলা|ফরিদপুর]] এবং [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লা]] পর্যন্ত উত্তর দিকে বিস্তৃত হয়েছে (২০১০), এবং আরো উত্তরে বিস্তৃত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।<ref name="NDsalt"/> ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে দেশে লবণাক্ত ভূমির পরিমাণ ছিল ৮,৩০,০০০ হেক্টর, আর ২০০১ খ্রিস্টাব্দে এসে তা হয়েছে ৩০,৫০,০০০ হেক্টর।<ref name="PArefugee">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার সমস্যা দিনে দিনে আরো প্রকট হয়ে উঠবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।<ref name="NDsalt">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
[[বরিশাল]] ও [[পটুয়াখালী জেলা|পটুয়াখালীতে]] লবণাক্ততার পরিমাণ ২ পিপিটি (লবণাক্ততা পরিমাপক মাত্রা) থেকে বেড়ে ৭ পিপিটি হয়ে গেছে (প্রেক্ষিত ২০০৯)। [[চট্টগ্রাম]] শহর সন্নিকটের [[হালদা নদী|হালদা নদীর]] পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে ৮ পিপিটি হয়ে গেছে (২০০৯)।<ref name="PAGov"/><ref name="PADev"/>
৮৯ নং লাইন:
=== অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ===
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও বিগত কয়েক বছরে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ সেই পরিচিতি ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় এলাকায় সর্বোচ্চ ৪২.৩° সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয় ৪৫.১° সেলসিয়াস, [[রাজশাহী|রাজশাহীতে]]। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে এসে নথিভুক্ত করা হয় ৪৩° সেলসিয়াস। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ এপ্রিল নথিভুক্ত করা হয় বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২° সেলসিয়াস, [[যশোর|যশোরে]]।<ref name="NewsBanglaTemp">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
তাপমাত্রার এই পরিসংখ্যানে আপাতদৃষ্টিতে যদিও মনে হচ্ছে তাপমাত্রা কমছে, কিন্তু বস্তুত, অতীতের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিলো কম, অথচ বর্তমানে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি। কেননা, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড বা WWF-এর গবেষণায় দেখা যায়, শুধু [[ঢাকা]] শহরেই [[মে]] মাসের গড় তাপমাত্রা ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ঐ মাসের তুলনায় বেড়েছে ১° সেলসিয়াস ([[২০০৯]] প্রেক্ষিত)৷ [[নভেম্বর]] মাসে এই তাপমাত্রা ১৪ বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ০.৫° সেলসিয়াস৷<ref name="DWDhaka">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
আবহাওয়া অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায় গত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ০.৫%।<ref name="NewsBanglaTemp"/> এমনকি ২০৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বাংলাদেশের তাপমাত্রা গড়ে ১.৪° সেলসিয়াস এবং ২১০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ২.৪° সেলসিয়াস বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।<ref name="CHRDHS">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |
তাপমাত্রা বাড়ার ঘটনাটি অনেকটা সম্পুরক হারে ঘটবে। কেননা বাড়তি তাপমাত্রার কারণে পানির বাষ্পীভবন বেড়ে যাবে এবং বাতাসে [[জলীয় বাষ্প|জলীয় বাষ্পের]] পরিমাণ বাড়িয়ে দিবে।<ref name="Research">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |
বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া মানে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়া। আর্দ্র বাতাসের প্রভাবে প্রকৃত তাপমাত্রা না বাড়ালেও অনুভূত তাপমাত্রা (feels like) বেড়ে যাবে। ফলে তাপমাত্রার তুলনায়ও বেশি গরম অনুভূত হবে। ইতোমধ্যেই একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আর্দ্রতার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া ২০৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০-১৫ ভাগ এবং ২০৭৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তা প্রায় ২৭ ভাগ বেড়ে যাবে।<ref name="PAGov"/> ফলে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেড়ে যাবে চরম হারে। এই আর্দ্রতা গরম বাড়িয়ে দিবে। উল্লেখ্য, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO)-র মতে, [[২০১০]] খ্রিস্টাব্দ ছিল ২৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের উষ্ণতম বছর, আর [[২০০১]] থেকে [[২০১০]] সময়টুকু ছিল বিশ্বের উষ্ণতম কাল।<ref name="PA2011"/>
১০৪ নং লাইন:
==== ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস ====
বিভিন্ন স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস পেয়ে দেখা দিচ্ছে স্থায়ী মরুকরণ। [[রাজশাহী|রাজশাহীর]] বরেন্দ্র এলাকায় বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নেমে যাচ্ছে পানির স্তর।<ref name="PADeserts">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
যদিও এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণ, বিশেষ করে ভারতের [[ফারাক্কা বাঁধ|ফারাক্কা বাঁধের]] প্রভাবও দায়ী<ref name="Shomokal">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
তবে অনাবৃষ্টির দরুন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সুপেয় পানির অভাবে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যাপক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায়ও ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাচ্ছে।<ref name="PAGov"/>
=== সুপেয় পানির অভাব ===
[[২০০৯]] খ্রিস্টাব্দের [[মার্চ]] মাসে [[জাতিসংঘ|জাতিসংঘের]] আন্তঃসরকার জলবায়ু পরির্বতন-সংক্রান্ত প্যানেলের (IPCC) পানিসম্পদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ সমুদ্রতীরের বেশ কটি দেশে সামনের দিনে মিঠা পানির তীব্র সংকট দেখা দেবে। ২০২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ নেবে।<ref name="PASalt">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস পাওয়ায় অনেক এলাকায় দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির অভাব। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে এই অভাব প্রকট। [[নওগাঁ জেলা|নওগাঁ জেলার]] ১১টি উপজেলার মধ্যে পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর, ধামইরহাট, পত্নীতলা -এই পাঁচটি উপজেলা নিয়ে যে বরেন্দ্রভূমি, সেখানকার সরকারি-বেসরকারি ৫৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সবকটিতেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস পাওয়ায় স্বাভাবিক নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে, ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট (পরিপ্রেক্ষিত ২০১০)।<ref name="KKWater">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই যেখানে পানির স্তর হ্রাস পায়, তার উপর ঐসময় গাছপালার [[প্রস্বেদন]] বেড়ে যাওয়ায় ভূগর্ভের সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে।<ref name="NDsalt"/> অন্যদিকে লোনা পানির আগ্রাসনে উপকূলীয় এলাকায় দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, [[নভেম্বর|নভেম্বরের]] মাঝামাঝি সময় থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ নদীর পানি লোনা হতে থাকে। [[ডিসেম্বর]]-[[জানুয়ারি|জানুয়ারির]] মধ্যে তা পুরোপুরি লোনা হয়ে যায়। তথন নদীর পানি মুখেও তোলা যায় না। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর পানি আরো আগেভাগেই লোনা হয়ে গেছে।<ref name="PASalt"/> চট্টগ্রাম শহরের খাবার পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস [[হালদা নদী|হালদা নদীর]] পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে ৮ পিপিটি (লবণাক্ততা পরিমাপক মান) হয়ে গেছে (২০০৯)। পরিশোধন-অযোগ্য এই বিপদের ফলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রামে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ওয়াটার মডেলিং (IWM)-এর গবেষকগণ।<ref name="PAGov"/><ref name="PADev"/>
১৩৯ নং লাইন:
|}
{{সহায়ক নিবন্ধ|প্রাকৃতিক দুর্যোগ}}
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তন্মধ্যে ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা, নদীভাঙন এবং ভূমিধ্বসের মাত্রাবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। আগে ১৫ কিংবা ২০ বছর পরপর বড় ধরণের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে ২ থেকে ৩ বছর পরপরই বড় ধরণের দুর্যোগ হানা দিচ্ছে৷<ref name="DWRefugee"/> এমনকি, ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ''ম্যাপলক্র্যাফ্ট''-এর তালিকায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার আগে।<ref name="ND">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচ-এর প্রতিবেদন (২০১০) অনুযায়ী ১৯৯০ থেকে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে বড় ধরণের প্রায় ২৫৪টি দুর্যোগ আঘাত হেনেছে।
১৬৭ নং লাইন:
[[চিত্র:Cyclone Sidr - US Navy Aid.jpg|thumb|330px|ঘূর্ণিঝড় সিডর আক্রান্ত প্রত্যন্ত এলাকায় নৌকায় ত্রাণ বিতরণ]]
{{সহায়ক নিবন্ধ|জলোচ্ছাস}}
[[জলোচ্ছাস]] বা সাইক্লোন যদিও স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জন্য একটি নৈমিত্তিক ঘটনা, কেননা [[ভারত মহাসাগর|ভারত মহাসাগরের]] উত্তর দিকের এই অঞ্চলটি যথেষ্টই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অঞ্চল। প্রায় প্রতি বছরের [[এপ্রিল]], [[মে]], [[জুন]] এবং [[সেপ্টেম্বর]], [[অক্টোবর]], [[নভেম্বর|নভেম্বরে]] বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় ও তা জল-ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।<ref name="CurrentAffairsJan08">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে [[বঙ্গোপসাগর]] ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে। [[২০০৮]] খ্রিস্টাব্দের [[জানুয়ারি ৭|৭ জানুয়ারি]] থেকে [[২০০৯]] খ্রিস্টাব্দের [[নভেম্বর ১০|১০ নভেম্বর]] পর্যন্ত সাগরে ৬টি জল-ঘূর্ণিঝড় এবং ১০৭টি [[লঘুচাপ|লঘু]] ও [[নিম্নচাপ]] সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তসূত্রে জানা গেছে আবহাওয়া খারাপ হবার সম্ভাবনা দেখা দিলে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত থেকে শুরু করে বিপদসংকেত পর্যন্ত দেয়া হয়। জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্র দিনে দিনে বিক্ষুব্ধ হয়ে যাওয়ায় [[২০০৯]] খ্রিস্টাব্দের [[জুলাই ১২|১২]] থেকে [[জুলাই ২১|২১ জুলাই]] টানা ৯ দিন [[চট্টগ্রাম বন্দর|চট্টগ্রাম]] ও [[মংলা বন্দর|মংলা]] বন্দরকে এবং [[কক্সবাজার]] সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে হয়েছিলো। এসময় কোনো জেলের পক্ষে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া সম্ভব হয়নি।<ref name="PACox'sBazar"/> এছাড়া জলোচ্ছাসের কারণে সমুদ্র থেকে আসা লোনা পানি উপকূলীয় এলাকার স্বাদু পানিকে লোনা করে দেয়।<ref name="DWSouth">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
===== স্থায়ী জলাবদ্ধতা =====
১৭৬ নং লাইন:
==== শিলাবৃষ্টি ====
{{সহায়ক নিবন্ধ|শিলাবৃষ্টি}}
দিনে দিনে শিলাবৃষ্টি বেড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। প্রতি [[বৈশাখ|বৈশাখে]] সাধারণত প্রাকৃতিক স্বাভাবিক কারণেই মাঝে মাঝে শিলাবৃষ্টি হয় এদেশে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর থেকে (পরিপ্রেক্ষিত [[২০১০]]) বাংলাদেশে শিলাবৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেছে।{{সত্যতা}} তাছাড়া ইদানিং শিলাবৃষ্টির শিলার আকৃতিও দিনে দিনে বড় হয়ে যাচ্ছে। যেমন: [[২০১০]] খ্রিস্টাব্দের [[মার্চ ২৭|২৭ মার্চ]] রাতে প্রচন্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টি বয়ে যায় [[লালমনিরহাট সদর উপজেলা|লালমনিরহাটের]] [[কালীগঞ্জ উপজেলা|কালীগঞ্জ]] ও [[হাতিবান্ধা উপজেলা|হাতীবান্ধা উপজেলার]] উপর দিয়ে। ঐ রাতের প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী শিলাবৃষ্টিতে কালীগঞ্জ উপজেলার লতাবর, সতীরপাড়, বোতলা, খামারভাতি, চন্দ্রপুর, শিয়ালখাওয়া, চাকলা, গোড়ল, বলাইরগহাট, মদাতী, বুড়িরহাট, চামটা, ও হাতীবান্ধা উপজেলার জাওরানী, দক্ষিণ জাওরানী, ভেলাগুঁড়ি, কাদমা ও কাশিমবাজার এলাকার অধিকাংশ টিন ও খড়ের ঘরের চাল পর্যন্ত বিধ্বস্থ হয়ে যায়। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ছোট শিলার ওজন আধা কেজির কম হবে না আর বড়গুলো দেড় কেজির মতো। কেউ কেউ ওজন করে দেখেছেন বলেও দাবি করেন। এতো বড় বড় শিলাবৃষ্টির আঘাতে অনেকের টিনের ঘর ঝাঁঝরা হয়ে যায়। লোকজন ও গবাদি পশু আহত হয়। নষ্ট হয়ে যায় [[লিচু|লিচুর]] আবাদ, ক্ষতিগ্রস্থ হয় [[গম]], [[তামাক]], [[ভুট্টা]] আর [[বোরো ধান|বোরো]]ক্ষেত। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এর আগে এতো বড় শিলার আঘাত তারা কষ্মিনকালেও শোনেননি।<ref name="KKShila">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
==== অতিবৃষ্টি ও তীব্র বন্যা ====
{{সহায়ক নিবন্ধ|বন্যা}}
[[বিশ্বব্যাংক]] প্রকাশিত তালিকায় বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম (১ম)।<ref name="PAlist"/> বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে [[হিমালয়|হিমালয়ের]] বরফগলা পানিসহ উজানের [[নেপাল]] ও [[ভারত|ভারতের]] বৃষ্টিপাতের পানি, বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদ-নদী হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০৯৪ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং প্রতি বছরই প্রায় ১৫ লক্ষ হেক্টর চাষের জমি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে থাকে। এদিকে পূর্বানুমান করা হয়েছে যে, শুধু [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশেই]] [[২০৩০]] খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০-১৫ ভাগ এবং [[২০৭৫]] খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তা প্রায় ২৭ ভাগ বেড়ে যাবে।<ref name="PAGov"/> এই বাড়তি পানি বাংলাদেশের উপর দিয়ে সমুদ্রে যাবার সময় সৃষ্টি করবে তীব্র বন্যা। এমনকি [[২০১০]] খ্রিস্টাব্দে বিগত ১৫ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হলেও উত্তরাংশের [[সিলেট বিভাগ|সিলেট]] ও [[রাজশাহী বিভাগ|রাজশাহীতে]] বিগত ২ বছরের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায়<ref name="PALessRain"/> [[হাকালুকি হাওর]]সহ উত্তরাঞ্চলের বিপুল নিচু এলাকা প্রায় ৭ মাস ধরে প্লাবিত রয়ে যায়।<ref name="PAHakalukiKulaura">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
==== নদীভাঙন ====
{{সহায়ক নিবন্ধ|নদীভাঙন}}
[[চিত্র:River Erosion Padma River Bangladesh Monpura Dec 2009.jpg|thumb|250px|নদীভাঙনের কবলে [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] দক্ষিণাঞ্চলের [[পদ্মা]] নদীসংলগ্ন মনপুরা চর]]
বাংলাদেশে, সাধারণত বর্ষাকালে [[উজান|উজানে]] প্রচুর বৃষ্টিপাতের দরুন নদীর পানি বেড়ে যায় এবং তা প্রচন্ড গতিতে সমুদ্রের দিকে ধাবিত হয়। এসময় উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসংলগ্ন স্থলভাগে পানির তীব্র তোড়ে সৃষ্টি হয় নদীভাঙনের। বাংলাদেশে এটা স্বাভাবিক চিত্র হলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় তা আর স্বাভাবিক বলে পরিগণিত হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, [[পদ্মা]]-[[ব্রহ্মপুত্র]]-[[মেঘনা]] অববাহিকার প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন অব্যাহত আছে। আরও প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিতে পারে। এতে কৃষি জমির এক বিরাট অংশ নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে।<ref name="PAGov">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
===== ভোলা =====
[[চিত্র:Hatiya and Bhola.svg|thumb|330px|উপগ্রহের তথ্যানুযায়ী তৈরি করা হাতিয়া ও ভোলার ভূমিগঠন ও ভাঙনের চিত্র]]
বাংলাদেশের [[পানি উন্নয়ন বোর্ড|পানি উন্নয়ন বোর্ডের]] সহযোগী প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (CEGIS) [[কৃত্রিম উপগ্রহ|উপগ্রহের]] মাধ্যমে সংগৃহীত উপাত্ত বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে যে, [[১৯৭৩]]-[[২০০৮]] খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত [[ভোলা|ভোলার]] মূল ভূভাগ থেকে ২৪০ বর্গ কিলোমিটার জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপগ্রহচিত্রে দেখা যায় ভোলার উত্তর-পূর্ব দিকে ভাঙনের প্রবণতা বেশি। যদিও একই সময়ে ৭০ বর্গ কিলোমিটার নতুন চর ভোলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, কিন্তু ভাঙনের তুলনায় তা যৎসামান্য। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা যায়, [[২০০৪]]-[[২০০৮]] -এই চার বছর ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে, আর [[২০০৯]] খ্রিস্টাব্দে তা সর্বোচ্চ হয়েছে।<ref name="PAHatiyaVola">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
[[কোপেনহেগেন|কোপেনহেগেনে]] জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ([[২০০৯]]) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনগুলির একটিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী [[পদ্মা]]-[[ব্রহ্মপুত্র]]-[[মেঘনা নদী|মেঘনা]] অববাহিকায় প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন অব্যাহত আছে। এবং আরও প্রায় ৫০০ কিলোমিটার জুড়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দিতে পারে।<ref name="PAHatiyaVola"/>
২০২ নং লাইন:
====== নিঝুম দ্বীপ ======
{{সহায়ক নিবন্ধ|নিঝুম দ্বীপ}}
[[নিঝুম দ্বীপ|নিঝুম দ্বীপে]] সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা বন ধ্বংসের পথে। নদীভাঙন ছাড়াও [[ঘূর্ণিঝড় আইলা|ঘূর্ণিঝড় আইলায়]] মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এই কৃত্রিম উপকূলীয় বনটি। দিনে দিনে বনটি ছোট হয়ে আসছে। এই বন বিলুপ্ত হলে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ [[বঙ্গোপসাগর|বঙ্গোপসাগরের]] আগ্রাসনে টিকতে পারবে না দ্বীপের ২২,০০০-এরও বেশি মানুষ, আর ২০,০০০-এর মতো [[হরিণ]]।<ref name="PAClimate">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
==== ভূমিধ্বস ====
{{সহায়ক নিবন্ধ|ভূমিধ্বস}}
ভূমিধ্বস ([[:en:Landslide|Landslide]]) বিশ্বের অন্যান্য দেশে বেশ পরিচিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উঁচু পাহাড়-সংলগ্ন এলাকায় এই দুর্যোগ ইদানীং বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। [[ভারত|ভারতের]] [[মেঘালয়]] পাহাড়ের পাদদেশের [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[সুনামগঞ্জ জেলা|সুনামগঞ্জের]] [[তাহিরপুর উপজেলা|তাহিরপুর উপজেলার]] বেশ কয়েকটি গ্রামে ইদানিং দেখা দিচ্ছে এই ভূমিধ্বস বা ল্যান্ডস্লাইড। এই এলাকায় [[২০০৭]] খ্রিস্টাব্দে যে ভূমিধ্বস হয় তা শ্রেফ পানি, বালু আর মাটিই না, সাথে করে নিয়ে আসে বড় বড় পাথর খন্ড। এমনকি কয়েক ফুট ব্যাসের পাথরখন্ডও নেমে এসেছে পাহাড় থেকে। এজাতীয় ভূমিধ্বসের স্বীকার হয়েছে এই উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের চানপুর, টিলাপাড়া, নয়াছড়া, পাহাড়তলী, কড়ইগড়া গ্রামের প্রায় ৯৫% আদিবাসী বাসিন্দা। এলাকার বিভিন্ন বাড়ির উঠান আর পুকুর বালি-পাথরে ঢাকা পড়েছে, মরে যাচ্ছে গাছপালা। এমনকি মেঘালয় পাহাড়ের মনাই, কড়ইগড়া<ref name="KKLandslide">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
==== ভূমিকম্প বৃদ্ধি ====
{{সহায়ক নিবন্ধ|ভূমিকম্প}}
[[চিত্র:Earthquake risk increases in Bangladesh (বাংলাদেশে বেড়েছে ভূমিকম্প ঝূঁকি).png|400px|thumb|right|বাংলাদেশে, ১৭ বছরের ব্যবধানে ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকার পরিমাণ বৃদ্ধি]]
প্রাকৃতিকভাবেই [[কার্বন চক্র|কার্বন চক্রের]] প্রভাবে [[ভূমিকম্প]] হয়ে থাকে, বাংলাদেশেও তার ব্যতয় হয়না। এদেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তি এলাকার বিগত প্রায় ২৫০ বছরের ভূমিকম্পের নথিভুক্ত তালিকা পাওয়া যায়। এ তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, [[১৯০০]] খ্রিস্টাব্দের পর থেকে [[২০০৪]] পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে ১০০'রও বেশি ভূমিকম্প; তন্মধ্যে ৬৫টিরও বেশি ঘটেছে [[১৯৬০]] খ্রিস্টাব্দের পরে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিগত ৩০ বছরে (পরিপ্রেক্ষিত [[২০০৪]]) ভূমিকম্প সংঘটনের মাত্রা বেড়েছে।<ref name="BanglapediaEarthquake">{{বই উদ্ধৃতি |
বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে, যথা: বগুড়া চ্যুতি এলাকা, রাজশাহীর তানোর চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি এলাকা, সীতাকুন্ড-টেকনাফ চ্যুতি এলাকা, হালুয়াঘাট চ্যুতির ডাওকী চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাওকি চ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা।<ref name="Bruneifm!"/> বাংলাদেশ, [[ভারত|ভারতীয়]], ইউরেশীয় এবং বার্মার ([[মায়ানমার|মায়ানমারের]]) [[টেকটনিক প্লেট|টেকটনিক প্লেটের]] মধ্যে অবস্থান করছে। ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি ([[১৯৩৪]] খ্রিস্টাব্দের পর থেকে) দীর্ঘদিন যাবত [[হিমালয়|হিমালয়ের]] পাদদেশে আটকা পড়ে আছে, অপেক্ষা করছে বড় ধরণের নড়াচড়ার,<ref name="IndiaeNews"/> অর্থাৎ বড় ধরণের ভূ-কম্পনের। এছাড়াও পৃথিবীর মোট ১১টি মূল টেকটনিক প্লেটের ৭ নম্বর প্লেটটি মেঘালয়-মিয়ানমার-পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। বঙ্গোপসাগরের তলদেশে মিয়ানমারের কাছেই সমুদ্রোপকূলবর্তী অঞ্চলে প্লেটটি আরেকটি প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে এবং সেখানে একটি চ্যুতি (''রাখাইন চ্যুতি'') তৈরি হচ্ছে, যা ৬.৫ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে।<ref name="IttefaqTsunami"/>
[[১৯১৮]] খ্রিস্টাব্দে [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[শ্রীমঙ্গল|শ্রীমঙ্গলে]] ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়<ref name="BanglapediaEarthquake"/><ref name="Tiwari">''STATUS OF SEISMICITY IN THE NORTHEAST INDIA AND EARTHQUAKE DISASTER MITIGATION'', by R.P. Tiwari, Department of Geology, Pachhunga University College, Mizoram University, Aizawl 796001, Mizoram; Research Work</ref> এবং [[২০০৭]] খ্রিস্টাব্দের [[নভেম্বর]] মাসে হয় ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্প<ref name="SBEarthquake">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |
[[চিত্র:Bangladesh earthquake zones.jpg|200px|thumb|right|বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের তীব্রতার ভিত্তিতে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। (তথ্যসূত্র:GSB)]]
[[বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়|বুয়েটের]] গবেষকদের প্রস্তুতকৃত ভূ-কম্পন-এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৪৩% এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে (জোন-১), ৪১% এলাকা মধ্যম (জোন-২) এবং ১৬% এলাকা নিম্ন ঝুঁকিতে (জোন-৩) রয়েছে। যেখানে [[১৯৯৩]] খ্রিস্টাব্দের ভূ-কম্পন মানচিত্রে ২৬% উচ্চ, ৩৮% মধ্যম এবং ৩৬% নিম্ন ঝুঁকিতে ছিল।<ref name="IndiaeNews"/> নতুন মানচিত্র অনুযায়ী, মাত্রাভেদে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অবস্থান নিম্নরূপ:<br />
:'''জোন-১''': [[পঞ্চগড় জেলা|পঞ্চগড়]], [[রংপুর জেলা|রংপুর]], [[গাইবান্ধা জেলা|গাইবান্ধা]], [[কুড়িগ্রাম জেলা|কুড়িগ্রাম]], [[জামালপুর জেলা|জামালপুর]], [[শেরপুর জেলা|শেরপুর]], [[ময়মনসিংহ জেলা|ময়মনসিংহ]], [[নেত্রকোনা জেলা|নেত্রকোনা]], [[সুনামগঞ্জ জেলা|সুনামগঞ্জ]], [[কিশোরগঞ্জ জেলা|কিশোরগঞ্জ]], [[মৌলভীবাজার জেলা|মৌলভীবাজার]], [[সিলেট জেলা|সিলেট]], [[হবিগঞ্জ জেলা|হবিগঞ্জ]], [[ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা|ব্রাহ্মণবাড়িয়ার]] সম্পূর্ণ অংশ, এবং [[ঠাকুরগাঁও জেলা|ঠাকুরগাঁও]], [[সিরাজগঞ্জ জেলা|সিরাজগঞ্জ]], [[টাঙ্গাইল জেলা|টাঙ্গাইল]], [[রাঙামাটি জেলা|রাঙামাটি]], [[খাগড়াছড়ি জেলা|খাগড়াছড়ি]] ও [[কক্সবাজার জেলা|কক্সবাজারের]] অংশবিশেষ।<ref name="Bruneifm!">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
:'''জোন-২''': [[রাজশাহী জেলা|রাজশাহী]], [[নাটোর জেলা|নাটোর]], [[মাগুরা জেলা|মাগুরা]], [[মেহেরপুর জেলা|মেহেরপুর]], [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লা]], [[ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা|ব্রাহ্মণবাড়িয়া]], [[ফেনী জেলা|ফেনী]] এবং [[ঢাকা জেলা|ঢাকা]]।<ref name="Bruneifm!"/>
:'''জোন-৩''': [[বরিশাল জেলা|বরিশাল]], [[পটুয়াখালী জেলা|পটুয়াখালী]], এবং সব [[দ্বীপ]] ও [[চর]]।<ref name="Bruneifm!"/>
===== জোন-১ =====
জোন-১-এ অবস্থিত বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। কারণ [[সিলেট]]-[[সুনামগঞ্জ]] ও [[ভারত|ভারতের]] [[শিলং|শিলংকে]] বিভক্ত করেছে [[ডাওকি নদী]], আর এই ডাওকি নদী [[ডাওকি চ্যুতি]] ([[:en:Dauki fault|Dauki fault]]) বরাবর অবস্থান করছে, আর ভূতাত্ত্বিক চ্যুতিগুলোই বড় ধরণের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।<ref name="SBEarthquake"/> সিলেটের সীমান্ত এলাকাবর্তী এধরণের চ্যুতিগুলোর কোনো কোনোটিতে সাব-ডাউন ফল্ট রয়েছে, যেগুলো ভূমিকম্প ঘটালে [[বড়লেখা উপজেলা|বড়লেখার]] পাথারিয়া পাহাড় সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।<ref name="বড়লেখা">{{বই উদ্ধৃতি |
===== জোন-২ =====
জোন-২-এ অবস্থিত [[রাজশাহী জেলা]], ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রীয় ভূমিকম্প এলাকায় অবস্থিত এবং তাই [[১৮৯৭]] খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।<ref name="GISRajshahi">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |
জোন-২-তে থাকা রাজধানী শহর [[ঢাকা|ঢাকায়]] সে হিসেবে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা বা ফল্টলাইন নেই। তবে ঢাকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা রয়েছে। সরকারি তথ্যসূত্রমতে, ঢাকায় রাতের বেলায় ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৯০,০০০ লোক হতাহত হবে। দিনের বেলায় হলে হতাহতের সংখ্যা হবে ৭০,০০০। [[ঢাকা সিটি কর্পোরেশন]] অঞ্চলের ৩,২৬,০০০ ভবনের উপর পরিচালিত সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, এমন তীব্রতার ভূমিকম্পে প্রায় ৭২,০০০ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে, আরও ৮৫,০০০ ভবন মাঝারি ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু দালান ভাঙার কারণে ক্ষয়ক্ষতি হবে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য সম্পদ।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
এছাড়াও [[জাপান|জাপানের]] ''টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি'' (টিআইটি)-র সহায়তায় [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] ভূতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এক সাম্প্রতিক (২০১০) গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার ভূমিতে বিভিন্ন প্রকারের মাটি (লাল মাটি, নরম মাটি ইত্যাদি) রয়েছে। ঢাকার সম্প্রসারিত অংশে জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা আবাসন এলাকা রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় নরম মাটি ও ভরাট করা এলাকার মাটি ভূমিকম্পের কম্পন তরঙ্গকে বাড়িয়ে দেয়, ফলে ভূমিকম্পের তীব্রতা বাড়ে। মাটির বৈশিষ্ট্যের সাথে যোগ হয় ভবনের বা স্থাপনার কাঠামো। এই দুইয়ের সম্মিলনে ভূমিকম্পের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাব্যতা বাড়ে-কমে। গবেষকরা তাই ঢাকার বর্ধিতাংশের আলগা মাটিসমৃদ্ধ জনবসতিকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন।<ref name=PADhakaEQ>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
==== সুনামির সম্ভাবনা ====
২৩৯ নং লাইন:
=== সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি (SLR) ===
:''মূল নিবন্ধ:[[সমুদ্রস্তরের উচ্চতাবৃদ্ধি#.E0.A6.AC.E0.A6.BE.E0.A6.82.E0.A6.B2.E0.A6.BE.E0.A6.A6.E0.A7.87.E0.A6.B6|সমুদ্রস্তরের উচ্চতাবৃদ্ধি:বাংলাদেশ]]''
[[বঙ্গোপসাগর|বঙ্গোপসাগরের]] সাথে বাংলাদেশের রয়েছে ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলভাগ থাকায় দিনে দিনে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ডুবে যাবার আশঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ।<ref name="CHRDHS"/> UNFCCC'র দেয়া তথ্যমতে, বিংশ শতাব্দিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ১০-২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে এবং ২০১১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আরো ১৮-৫৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়লে [[মালদ্বীপ]]সহ তলিয়ে যাবে উপকূলবর্তী দেশ [[বাংলাদেশ]]ও।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |
জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেল-এর তথ্যমতে [[২০৫০]] খ্রিস্টাব্দে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ [[মিটার]] বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অন্তত ১৭% ভূমি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে৷<ref name="DW">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
<ref name="PANegative">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
'দ্যা সায়ন্টিফিক কমিটি অন এন্টার্কটিক রিসার্চ' (SCAIR) জানিয়েছে, যে হারে [[এন্টার্কটিকা|এন্টার্কটিকার]] বরফ গলছে, তাতে [[২১০০]] খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৫ ফুট। বিগত দিনের পরিসংখ্যানের প্রায় দ্বিগুণ এই হিসাবের প্রেক্ষিতে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা DFDI এপরিমাণ উচ্চতাবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের প্রায় এক পঞ্চমাংশ সমুদ্রে তলিয়ে যাবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।<ref name="DWOcean">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
[[বিশ্বব্যাংক]] প্রকাশিত তালিকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম।<ref name="PAlist">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
এরকম অকষ্মাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে [[২০৫০]] খ্রিস্টাব্দ নাগাদ দেশের প্রায় ৮%-এরও বেশি নিম্নাঞ্চল ও প্লাবনভূমি আংশিক এবং/অথবা স্থায়ীভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়বে।<ref name="PAMushfiq"/> এছাড়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড বা WWF-এর মতে সমৃদ্রস্তরের উচ্চতাবৃদ্ধিতে [[ঢাকা|ঢাকাও]] আক্রান্ত হতে পারে।<ref name="DWDhaka"/> এইসব ভবিষ্যত সংশ্লিষ্টতার প্রেক্ষিত পেরিয়ে বর্তমানেই (২০০৯) [[সুন্দরবন|সুন্দরবনে]] সর্বপ্রথম, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অনুভূত হয়।<ref name="PASunderban">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
কারণ [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] সমুদ্রবিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্যমতে, ২০০০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত সমুদ্র, প্রতি বছর ৩ মিলিমিটার (০.১২ ইঞ্চি) করে বাড়ছিল, কিন্তু পরবর্তি দশকেই প্রতি বছর ৫ মিলিমিটার (০.২ ইঞ্চি) করে বাড়া শুরু হয়েছে।<ref name="APIndia">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
এদিকে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির হারের চেয়েও আরো বেশি হারে ডুবে যাচ্ছে। কারণ প্রতি বছর [[বঙ্গোপসাগর]] উপকূলের এলাকাসমূহের মাটি দেবে, বসে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই একটি গবেষণা থেকে [[ভারত|ভারতের]] [[কলকাতা]] শহরে, মাটি বসে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে।<ref>[http://www.ias.ac.in/currsci/jul102007/85.pdf "Assessment of land subsidence phenomenon in Kolkata city, India"], by RC Lakhera; July 10, 2007; Research Work; 6pages.</ref>
এছাড়া আরো দুটি গবেষণায় ভবিষ্যতে [[লখনৌ]]<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
এবং [[পাটনা|পাটনার]]<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
ভূমি বসে যাবার সম্ভাব্যতা দেখানো হয়েছে। যদিও বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে, ভূমি, প্রতি বছর ৫মিলিমিটার বসে গেলেও, পলি জমে আরো ৭মিলিমিটার উঁচু হয়ে যায় ভূত্বক। কিন্তু মানবসৃষ্ট বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে নদীর পানি বা বন্যার পানি সর্বত্র পৌঁছাতে পারে না, ফলে পলি পৌঁছতে পারছে না সেসব স্থানে। আর তাই ভূমি বসে যাবার তুলনায় সব স্থানে ভূমি উঁচু হচ্ছে না। এ গবেষণা সঠিক হলে, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির হারের চেয়ে অতিরিক্ত হারে বাংলাদেশ ডুবে যাবে; এতে যেমন মানুষের হস্তক্ষেপ আছে, তেমনি আছে প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন।
২৫৮ নং লাইন:
=== প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস ===
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানারকম প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে বাংলাদেশে। অনেক প্রজাতিই হারিয়ে যেতে বসেছে। গাছ, মাছ, পাখি, ফুল, ফল সবকিছুতেই এই প্রভাব পড়ছে। [[ইউনেস্কো|ইউনেস্কোর]] ''"জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ"'' শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের ৭৫% ধ্বংস হয়ে যেতে পারে৷<ref name="DWSunderban">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
==== মৎস্যসম্পদ হ্রাস ====
অভ্যন্তরীন মৎস্য আহরণে (Inland fishing) বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকারী দেশ। মাছ চাষের ক্ষেত্রে এদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশ, বছরে ৩,০০০ কোটি টাকার মাছ রপ্তানি করে। এদেশের জাতীয় আয়ের ৩.৭০ ভাগ এবং রপ্তানি আয়ের ৪.০৪ ভাগ আসে মৎস্য খাত থেকে।<ref name="PAAnwaranew">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
বাংলাদেশে এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টিতে পুকুর-ডোবাতে পানি জমে। এসময় মৎস্যজীবিরা পোনা মজুদ করেন।<ref name="PAAnwaranew"/> জমে থাকা পানিতে মাছের পোনা মজুদের দুই-তিন মাস পরে মাছ বাজারে আসার আকৃতি হওয়ার আগেই তীব্র তাপে শুকিয়ে যাচ্ছে পানি। ফলে ছোট ছোট মাছ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় মৎসজীবির। মৎস্যজীবিদের অভিমত, অসময়ে [[কুয়াশা]], আকাশ মেঘলা থাকাও মাছ চাষকে ব্যাহত করছে। অনেক ক্ষেত্রে স্বাদু পানির মাছ চাষে লোনা পানি ঢুকে পড়ে বাধাগ্রস্থ করছে মাছ চাষ; যেমন: [[মৃগেল]] মাছ লোনা পানি সহ্য করতে পারে না, [[রুই]]-[[কা/ref> এবং ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে [[সার্ক|সার্কের]] ''"আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র"''(SMRC)-এর একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, [[হিরণ পয়েন্ট]], চর চাঙ্গা, এবং [[কক্সবাজার উপজেলা|কক্সবাজারে]] জোয়ারের পানির স্তর প্রতি বছর, যথাক্রমে ৪.০ মিলিমিটার, ৬.০ মিলিমিটার এবং ৭.৮ মিলিমিটার বেড়েছে।/ref> এবং ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে [[সার্ক|সার্কের]] ''"আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র"''(SMRC)-এর একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে, [[হিরণ পয়েন্ট]], চর চাঙ্গা, এবং [[কক্সবাজার উপজেলা|কক্সবাজারে]] জোয়ারের পানির স্তর প্রতি বছর, যথাক্রমে ৪.০ মিলিমিটার, ৬.০ মিলিমিটার এবং ৭.৮ মিলিমিটার বেড়েছে।তলা]] আশানুরূপ আকৃতি পায় না।<ref name="PAAnwara"/>
২৬৭ নং লাইন:
বাংলাদেশে, রুইজাতীয় মাছের চারটি ভান্ডার রেয়েছে, যার মধ্যে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ভান্ডার [[ভারত|ভারতের]] বিভিন্ন স্থানে ডিম ছাড়ে। একমাত্র নদী [[[[হালদা নদী]]]], যেখানে প্রাকৃতিকভাবে রুইজাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে। পৃথিবীতে হালদাই একমাত্র নদী, যেখান থেকে রুইজাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম আহরণ করা হয়।<ref>হালদা নদী</ref> সাধারণত [[বৈশাখ]] মাসের প্রচন্ড তাপের পর একাধারে ৮-১০ ঘণ্টা বজ্রসহ ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার পর নদীর দুই পাশ ছাপিয়ে পানি পার্শ্ববর্তি নিচু প্লাবনভূমিতে যায়, প্রচন্ড বিদ্যুৎ চমকায়, নদীর বাঁকগুলোতে স্রোতসহ পানি ঘুর্ণায়মান থাকে, তাপমাত্রা ২৬-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে; তখনই রুইজাতীয় মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। সাধারণত [[অমাবস্যা]] বা [[পূর্ণিমায়]] সবকিছুর শুভ সংযোগ ঘটে, আবহাওয়ার অনুঘটকগুলো মিলে যায় একে অপরের সাথে আর তার প্রভাবে মাছ ডিম ছাড়ে। পরবর্তিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ধীরে ধীরে প্রজননক্ষম মাছের ডিমের পরিপক্কতা এগিয়ে আসে। কিন্তু হালদার ডিম উৎপাদনের চিত্র আর আগের মতো নেই। বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সময় দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে করে মাছের জৈবিক অবস্থার সঙ্গে বৃষ্টিঘন সময়ের অমিল দেখা দিচ্ছে। অতীতে হালদায় ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ কেজি পর্যন্ত রুইজাতীয় মাছের ডিম পাওয়া যেতো, ৭০-এর দশকে ডিম উৎপাদন হাজার কেজি ছিলো, [[২০০৪]] খ্রিস্টাব্দে এসে তা মাত্র ২০ কেজিতে নেমে আসে। যদিও জরুরি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় [[২০০৮]] খ্রিস্টাব্দে তা আবার বেড়ে ১৭০ কেজি যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে আবহাওয়ার এসব অস্বাভাবিক মেজাজ-মর্জির দরুন আরো কমে যাবে রুইজাতীয় মাছের উৎপাদন।<ref name="PAAnwaranew"/>
[[চাঁদপুর|চাঁদপুরের]] [[মতলব উত্তর উপজেলা|মতলব উত্তর]] ও [[মতলব দক্ষিণ উপজেলা|মতলব দক্ষিণ উপজেলায়]] [[২০১০]] খ্রিস্টাব্দের ভরা বর্ষায়ও ([[আগস্ট]]) দেখা যায়নি [[ইলিশ]] মাছ। এসময় [[মেঘনা]] নদীতে ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে আসে। কিন্তু ভরা বর্ষায়ও বৃষ্টি, বজ্রপাত না থাকায় ইলিশ মাছ স্বাভাবিক নিয়মে সাগর ছেড়ে আসছে না। এতে ইলিশের উৎপাদনে যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তা খুবই স্বাভাবিক।<ref name="ADHilsa">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
===== সিলেটের হাওরাঞ্চল =====
[[চিত্র:BD Surma 11.jpg|250px|right|thumb|[[সিলেট|সিলেটের]] [[সুনামগঞ্জ জেলা|সুনামগঞ্জ জেলায়]] অবস্থিত "আলির হাওর"।]]
বাংলাদেশে প্রাপ্ত ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৩০ প্রজাতির মাছই পাওয়া যায় হাওরাঞ্চলে।<ref name="P.Alo New">''"৬২ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে"'', সুমনকুমার দাশ, বিশেষ প্রতিবেদন, দৈনিক প্রথম আলো, ৩ ডিসেম্বর ২০১০ খ্রিস্টাব্দ; পরিদর্শনের তারিখ: মার্চ ২৩, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ; পৃষ্ঠা ৯ (২৪)।</ref> বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি [[হাওর]] আছে [[সিলেট বিভাগ|সিলেট অঞ্চলে]]। সিলেটের [[মৌলভীবাজার জেলা|মৌলভীবাজারের]] [[হাকালুকি হাওর]] এলাকায় অধিকাংশ [[বিল]] ভরাট হয়ে গেছে। দুটি জরিপ থেকে জানা যায় (পরিপ্রেক্ষিত [[২০০৯]]): ২৮১টি বিলের মধ্যে সম্পূর্ণ ও আংশিক ভরাট হয়ে গেছে ২৩৩টি বিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে [[বৃষ্টি]] কমে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে হাওরাঞ্চলের বিলগুলোতে পানির পরিমাণ। ফলে যে বিলগুলো এখনও টিকে আছে, সেগুলোতে পানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ায় হুমকির মুখে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রাপ্তিযোগ্যতা। এছাড়া সময়মতো বৃষ্টি হয় না, বা যখন হয়, তখন একসাথে [[বৃষ্টি|অতিবৃষ্টি]] হওয়ার ফলে হাওর পানিতে ভরে গেলেও তা স্থায়ী হয় না, ফলে মাছ আসে না। এতে মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। অভিজ্ঞদের বক্তব্য থেকে এর বিস্তারিত কারণ যা জানা যায় তা হলো, সময়মতো পানি না হলে মাছ ডিম ছাড়তে পারে না। বৃষ্টি হলে পানির তাপ কমে, এসময় মাছ ডিম ছাড়ে। বদ্ধ পানিতে উত্তাপ বেশি থাকে, তাই সময়মতো বৃষ্টির খুব বেশি দরকার।<ref name="PAHaor">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
===== কিশোরগঞ্জ =====
[[কিশোরগঞ্জ উপজেলা|কিশোরগঞ্জ উপজেলার]] তাড়াইলে [[২০০৯]] খ্রিষ্টাব্দের [[জ্যৈষ্ঠ]]-[[আষাঢ়]] মাসে (মাছের প্রজনন মৌসুম) পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্থ হয়, ফলে নদ-নদী, খাল-বিল ও হাওরে পানি ছিলো না এবং মৎসজীবিরা মাছের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত মাছ পাননি। এলাকাবাসীর থেকে জানা যায় উপজেলার নরসুন্দা, সুতি, বেতাই, ফুলেশ্বরী, বর্মি নদী এবং মান্দারা, ফুলিয়া, বামিহা, গজারিয়া, দিগবাইতসহ বিভিন্ন হাওড় ও খাল-বিলে [[রুই]], [[কাতলা]], [[মাগুর]], [[কই]], [[পুঁটি]], [[টাকি]], [[পাবদা]], [[গজার]]সহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সংকট দেখা দিয়েছে ঐ বছর।<ref name="PAKishorgonj">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
দুটি জরিপ থেকে জানা গেছে (পরিপ্রেক্ষিত [[২০০৯]]): হাকালুকি হাওরের ১০৭ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৩২ প্রজাতিই এখন হুমকির মুখে। স্থানীয়দের থেকে জানা যায় হাওড়ে আগে যেখানে [[পাবদা]], [[চিতল]], [[কালিবাউশ|কালবাউশ]] সহজেই মিলতো, ছোটখাটো একটা গর্তে [[শিং]], মাগুর পাওয়া যেতো, এখন সেখানে [[চিংড়ি]] পাওয়াও মুশকিল।<ref name="PAHaor"/>
২৮০ নং লাইন:
===== সিরাজগঞ্জ-পাবনা-নাটোরের চলনবিল =====
[[চিত্র:Chalan Beel Natore Bangladesh (7).JPG|thumb|250px|নাটোরের [[চলনবিল]]।]]
[[সিরাজগঞ্জ|সিরাজগঞ্জের]] তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া, [[পাবনা|পাবনার]] চাটমহর ও ভাঙ্গুরা এবং [[নাটোর জেলা|নাটোরের]] সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রামসহ নয়টি উপজেলার প্রায় ১২০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেশের বৃহত্তর বিল [[চলনবিল|চলনবিলে]] ভরা মৌসুমেও মাছের আকাল দেখা দিয়েছে ([[জানুয়ারি]], [[২০১০]])। দেশের এই বিশাল চলনবিল মাছের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর এই বিল থেকে টনকে টন মাছ ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া প্রতি মৌসুমে প্রায় ১০০ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ দেশ বিদেশে রফতানি হয়। প্রতি বছর সব মিলে দেড় থেকে ২শ' কোটি টাকার মাছ আহরণ করা হলেও [[২০১০]] খ্রিস্টাব্দে চলনবিলের দৃশ্য ভিন্নরকম। উৎপাদন কম হওয়ায় যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে তাতে সংসার চলছে না মৎসজীবীদের। চাহিদানুগ সরবরাহ কম হওয়ায় মাছের দাম চড়া। এদিকে উৎপাদন কম হওয়ায় দেশের বৃহৎ এই চলনবিলে [[২০১০]] খ্রিস্টাব্দে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মৎস্য আহরণ কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা। [[২০১০]] খ্রিস্টাব্দে বন্যা না হওয়ায় চলনবিলের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ কম হয়। বিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি কম হওয়ার কারণে সূর্যের তাপে পানি গরম হয়ে দেশীয় প্রজাতিসহ সব ধরনের পোনা মাছ বিনষ্ট হয়। এতে চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় ১০,০০০ জেলে বেকার হয়ে পড়েছে। বাজারে মাছের সরবরাহ কম হওয়ায় বরফের ব্যবসায়ে লোকসান যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় [[২০১০]] খ্রিস্টাব্দে চলনবিলে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মাছের উৎপাদন কম হয়েছে এবং এই পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০,০০০ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।<ref name="ShomokalShirajgonj">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
===== সাতক্ষীরা-খুলনার সুন্দরবন =====
সুন্দরবনের সামগ্রিক মাছের ওপর পূর্বাপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। ফলে মাছের বর্তমান অবস্থা, বিলুপ্ত মাছ, বিলুপ্তপ্রায় মাছের ওপর উপাত্তনির্ভর তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু, মানুষ যেসব মাছ খায় এবং যেসব মাছ রপ্তানি উপযোগী, সেসব মাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে শিরদাঁড়াওয়ালা মাছ রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির। সাইডেনস্টিকার ও হাই-এর (পরিপ্রেক্ষিত [[১৯৭৮]]) মতে, এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছ ১২০ প্রজাতির; অবশ্য বার্নাকসেকের মতে, ([[২০০০]]) বাণিজ্যিক মাছ ৮৪ প্রজাতির, [[কাঁকড়া]]-[[চিংড়ি]] ১২ প্রজাতির ও ৯ প্রজাতির [[শামুক]] রয়েছে।<br />
সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সব মাছ মিলিয়ে হয় সাদা মাছ, বাকিরা বাগদা, গলদা, কাঁকড়া।<ref name="P.Alo">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
আশির দশকে চিংড়ির পোনা ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে যায়। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণিজ প্রোটিন ৮০ শতাংশ মেটাতো মাছ। এখন মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য এলাকার খুব কম লোকের ভাগ্যে জোটে। সুন্দরবনে কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট পাওয়া যায়। আগে এদের খালিশপুর এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতো, এখন (২০১০) অনেক দক্ষিণে সরে গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনে এদের উৎপাত বেশি। এরা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে কালা হাঙর প্রায় দেখাই যায় না। ৯ প্রজাতির শাঁকজ বা শাপলাপাতা মাছের অধিকাংশই এখন (২০১০) সুন্দরবনের খাঁড়ি এলাকায় দেখা যায় না।<ref name="P.Alo"/>
৩০৪ নং লাইন:
==== জীবজন্তুর অবলুপ্তি বা সংখ্যাগত বিপুল তারতম্য ====
[[চিত্র:Panthera tigris tigris.jpg|thumb|250px|[[রয়েল বেঙ্গল টাইগার]]]]
সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে হারিয়ে যাবে, বা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে দেশের বিপুল পরিমাণ জীবজন্তু। সমুদ্রের লোনা জলের উচ্চতা বাড়লে [[খুলনা|খুলনার]] [[সুন্দরবন|সুন্দরবনের]] [[রয়েল বেঙ্গল টাইগার|রয়েল বেঙ্গল টাইগারের]] বিচরণোপযোগী বনভূমি কমে যাবে। এতে বাঘের শিকার কমে যাবে, ফলে স্বভাবতই বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। গাঙে বিচরণকারী [[শুশুক]] কমে যাবে। [[মায়া হরিণ]] চিরতরে হারিয়ে যাবে। [[চিত্রা হরিণ]]ও কমে যাবে। [[শঙ্খচূড় সাপ]] কমে যাবে। মাস্কড কিনফুট একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে। পলাশ ফিশ ঈগলও নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞের ধারণা।<ref name="PASunderban"/> ইতোমধ্যেই ([[২০১০]]) নদীতে বিচরণকারী শুশুক কমে এসেছে।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে [[বানর]] এবং [[ভোঁদড়|ভোঁদড়ের]] সংখ্যায় তেমন হেরফের হবে না। মাটির তলাবাসী, চরবাসী প্রাণসম্পদ বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞের ধারণা। তবে কীটপতঙ্গ, যেমন: [[মশা|মশার]] সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কীটপতঙ্গের সংখ্যাবৃদ্ধি মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।<ref name="PASunderban"/>
৩১৪ নং লাইন:
==== পক্ষী প্রজাতির বিলুপ্তি ====
বাংলাদেশে, পাখি শুমারির হিসেবমতে, [[২০০২]] খ্রিষ্টাব্দে মোট ১৬০ প্রজাতির পাখি দেখা গেলেও [[২০১০]] খ্রিষ্টাব্দে এসে তার সংখ্যা মাত্র ৬৮৷ সংখ্যা হ্রাসের পাশাপাশি পাখিদের প্রজাতিগুলোও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে জলচর পাখিরা।<ref name="DWBirds">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
=== কৃষিভিত্তিক উৎপাদন হ্রাস বা ধ্বংস ===
৩২১ নং লাইন:
এদেশের মৌসুমী বৃষ্টিপাত এবং নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার কারণে এদেশের প্রধান অর্থকরি ফসল হলো [[ধান]]। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবে দিনে দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ধানচাষ। ধান চাষের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ১৮°-৩৫° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। ফসলের ফুল ধরার সময় তাপমাত্রা ১৮° সেলসিয়াসের থেকে কমে গেলে ধানের বীজ হলদেটে ও দুর্বল হয়ে পড়ে, আবার ৩৫° সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি হলে বীজ কালচে হয়ে যেতে পারে।<ref name="PAGov"/> তাপমাত্রা ছাড়াও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে, কিংবা প্রবল শিলাবৃষ্টিতে, কিংবা অসময়ে বন্যায় ধানচাষের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
বাংলাদেশের সোনালী আঁশ, [[পাট|পাটের]] উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাষীরা পাট চাষে বিমুখ হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের কৃষি তথ্য সার্ভিসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়: এদেশে [[১৯৭২]]-[[১৯৮১]] খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাটচাষের জমি ছিলো গড়ে ১,৭৭৯ একর (গড় উৎপাদন ৯৫৩ টন)। সেখানে [[২০০১]]-[[২০০৭|'০৭]] পর্যন্ত সময়কালে চাষের জমি মাত্র ৮৬৪ একর (গড় উৎপাদন ৯১২ টন)। পাট চাষের এই ক্রমাবনতির জন্য বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করে থাকেন। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনগত সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে দেশী জাতের পাট চাষ করা হয় না, হয় তোষা জাতের পাটের চাষ। আগে নিচু এলাকায় পাটের চাষ হলেও এখন উঁচু এলাকায় হচ্ছে। আগে দেশের পূর্বাঞ্চলে ভালো পাট জন্মালেও এখন পাট চাষ উত্তরাঞ্চলে সরে এসেছে।<ref name="DW">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
[[রাজশাহী|রাজশাহীর]] বরেন্দ্র অঞ্চলের "বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা" সংগঠনের মাধ্যমে জানা যায়, এলাকার চারঘাট, বাঘা ও [[চাঁপাইনবাবগঞ্জ|চাঁপাইনবাবগঞ্জের]] ভোলাহাটে সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় [[২০০৯]] খ্রিস্টাব্দে [[রেশম|রেশমের]] [[আষাঢ়|আষাঢ়ী]] মৌসুমের পুরোটাই, কোনো গুটি না হওয়ায় মার খেয়েছে। [[নওগাঁ জেলা|নওগাঁ জেলার]] [[মান্দা উপজেলা|মান্দা উপজেলার]] নলতৈড়, কালীনগর, চকদেবীরাম, দৌডাঙ্গি, ছোটমুল্লুক, চকগোবিন্দ, থানতলা ও রামনগর গ্রামে বিগত চার বছর (পরিপ্রেক্ষিত [[২০০৯]]) ধরে অপ্রতুল বৃষ্টিপাতের দরুন, এই এলাকার প্রধান [[অর্থকরী ফসল]] বর্ষাকালীন [[মরিচ|মরিচের]] চাষ ঠিকমতো হচ্ছে না।<ref name="PADeserts"/>
৩৪০ নং লাইন:
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশনির্ভর উপজীবিরা তাদের জীবিকা হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়বে। এতে দেশে বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। যেমন মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় স্বাদু পানির মৎসজীবি, সমুদ্রগামী জেলে, উপকূলীয় জেলে ও তাদের পরিবারগুলো জীবিকার উৎস হারাবে।<ref name="PAAnwaranew"/> এরকম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন [[কক্সবাজার|কক্সবাজারেরই]] ১,০০,০০০ জেলে।<ref name="DWFisherman"/> ইতোমধ্যেই ([[২০১০]]) [[চাঁদপুর|চাঁদপুরের]] [[মতলব উত্তর উপজেলা|মতলব উত্তর]] ও [[মতলব দক্ষিণ উপজেলা|মতলব দক্ষিণ উপজেলায়]] ভরা বর্ষায়ও [[মেঘনা]] নদীতে [[ইলিশ]] মাছের দেখা না পাওয়ায় মেঘনা উপকূলীয় ষাটনল জেলেপাড়া, ষটাকী, মোহনপুর, আমিরাবাদ ও কানুদী অঞ্চলের জেলেরা হতাশায় ভুগছেন, মৎস্যহীন হয়ে পড়েছে মৎস্য আড়তগুলো।<ref name="ADHilsa"/> এছাড়া ঘন ঘন বন্যা বা দীর্ঘমেয়াদি বন্যা মানুষের কাজের সুযোগ কমিয়ে দেয়। শহরাঞ্চলে দুর্বল পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থার কারণে জলাবদ্ধতায় কম আয়ের মানুষের আয়ের সুযোগ সীমাবদ্ধ করে তোলে।<ref name="PArefugee"/>
[[২০০৯]] খ্রিস্টাব্দের [[জুলাই ১২|১২]] থেকে [[জুলাই ২১|২১ জুলাই]] টানা ৯ দিন উত্তাল সমুদ্রের কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসময় কোনো জেলের পক্ষেই সমুদ্রে মাছ ধরতে নামা সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির দেয়া তথ্যমতে, ঐ বছর [[আগস্ট]] মাসে জেলেরা মাত্র ৫ দিন, [[সেপ্টেম্বর]] মাসে মাত্র ৬ দিন এবং [[অক্টোবর]] মাসে মাত্র ১২ দিন সাগরে মাছ ধরতে নামতে পেরেছেন।<ref name="PACox'sBazar"/> [[২০১০]] খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসেও অনুরূপভাবে টানা ৮দিন উত্তর [[বঙ্গোপসাগর|বঙ্গোপসাগরে]] লঘুচাপ থাকায় ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
এছাড়াও জলোচ্ছাসে ধুয়ে নিয়ে যায় উপকূলবর্তী মানুষের উপার্জনের একমাত্র সহায় গবাদি পশু, পাখি, ও ফসলের জমি। অনেক প্রান্তিক চাষী ঋণ করে জন্মানো ফসল হারিয়ে হয়ে পড়েন নিঃসম্বল। এছাড়া শিল্পভিত্তিক উপার্জনকারীরা নিজেদের শিল্পকারখানা ধ্বংসের কারণে জীবিকার উৎস হারান।
=== স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ ===
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। শ্বাসকষ্ট, হীটস্ট্রোক বা গরমজনিত মৃত্যু কিংবা তীব্র ঠান্ডাজনিত মৃত্যু ইত্যাদি এখন খুব সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকী ''ল্যানসেট'', বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-প্রভাব নিয়ে করা তাদের গবেষণা রিপোর্টে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে যেসব রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে, সে সম্বন্ধে উল্লেখ করেছে: সংক্রমণ ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগের ধরণে পরিবর্তন আসবে; তাপপ্রবাহে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে; জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে সরাসরি জখমের সংখ্যাও বাড়বে।<ref name="PAHealth">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
==== অপুষ্টি ====
৩৫১ নং লাইন:
==== রোগব্যাধি ====
খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসূত্রে জানা গেছে ঘূর্ণিঝড় [[সিডর]], [[আইলা]] এবং জলাবদ্ধতাসহ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে কয়রা, সাতক্ষীরা প্রভৃতি এলাকার বাস্তুহারা মানুষের মধ্যে হতাশা (Mass Psychosis Illness) নামক মানসিক ব্যাধি দেখা দিচ্ছে। স্থায়ী বসতিতে ফিরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে না পারলে এই রোগের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে চিকিৎসকগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন ([[২০০৯]])।<ref name="PADam">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
[[বাংলাদেশ|বাংলাদেশে]], [[ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ|আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের]] (ICDDR,B) গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনে, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে [[উদরাময়|ডায়রিয়ার]] জীবাণুর বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে এবং ডায়রিয়ায় বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে। সংস্থাটির, [[১৯৯৪]] খ্রিস্টাব্দের গবেষণায় বেরিয়ে আসে: ডায়রিয়া বা কলেরার জীবাণু নীলাভ-সবুজ শ্যাওলা আঁকড়ে পানিতে ভাসে, এবং তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে শ্যাওলা বাড়ার সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে [[এপ্রিল]]-[[মে]] -এই দুই মাসে এবং [[সেপ্টেম্বর]]-[[ডিসেম্বর]] এই চার মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। [[২০০২]] খ্রিস্টাব্দের [[ডিসেম্বর]] থেকে [[২০০৫]] খ্রিস্টাব্দের [[জানুয়ারি]] পর্যন্ত গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে শ্যাওলা বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এছাড়া, আকাশে মেঘ কম থাকলে প্রখর সূর্যের আলো [[সালোকসংশ্লেষণ|সালোকসংশ্লেষণে]] সহায়ক বলে শ্যাওলা আরো বেড়ে যায়।<ref name="PAHealth"/> এছাড়া বিশুদ্ধ পানির অভাবে ট্র্যাকোমা-জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে; ট্র্যাকোমা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।<ref name="Independent">''"Climate change impacts on human health"'', Rafiq Hasan; The Daily Independent, Bangladesh; pg. 11; April 7, 2011. Retrieved on: April 14, 2011.</ref>
৩৬১ নং লাইন:
=== জলবায়ু উদ্বাস্তু বৃদ্ধি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন ===
[[চিত্র:Bangladesh-climate refugee.jpg|thumb|330px|বাংলাদেশের জলবায়ু উদ্বাস্তু]]
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যাওয়া অঞ্চল থেকে [[২০৫০]] সাল নাগাদ ৩ কোটি মানুষ গৃহহীন হতে পারে৷<ref name="PAGov"/> ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির সংবাদ মতে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১-১.৫ কোটি মানুষ বড় বড় শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে।<ref name="NatGeoBD">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
[[খুলনা|খুলনার]] [[সুন্দরবন]] এলাকার পশ্চিমাঞ্চলের আংটীহারা গ্রামে, শাকবাড়িয়া নদীর পাড়ে [[১৯৯৬]] খ্রিস্টাব্দে দেখতে পাওয়া একগ্রাম মুন্ডা থাকলেও, [[২০০৬]] খ্রিস্টাব্দের [[নদীভাঙন|নদীভাঙনে]] উদ্বাস্তু হয়ে গেছে তারা। তাদের পুরো গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে।<ref name="PASunderban"/>
এসকল উদ্বাস্তুর কারণে বড় বড় শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়েছে রাজধানী শহর [[ঢাকা|ঢাকায়]]। [[১৯৭৪]] খ্রিস্টাব্দে যেখানে ঢাকার জনসংখ্যা ছিলো ১,৭৭,০০০, সেখানে [[২০০৬]] খ্রিস্টাব্দে ঢাকার জনসংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১,৬০,০০,০০০। [[বিশ্ব ব্যাংক|বিশ্ব ব্যাংকের]] হিসাবমতে, [[২০২০]] খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ঢাকার জনসংখ্যা হবে ২ কোটি।<ref name="DWRefugee">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
এছাড়াও মুহুর্মুহু নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বাংলাদেশের উপকূলবর্তি পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে অসময়ে বাবা-মাকে হারিয়ে এতীম হয়ে যায় অনেক শিশু। আর্থিক অনটন ও জীবন-জীবিকার উৎস হারিয়ে পড়া সেসব পরিবারের শিশুরা ভোগে নানা রোগে-শোকে। বন্ধ হয়ে যায় তাদের লেখাপড়া, জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে যেতে যেতে হারিয়ে যেতে বসে সেসব শিশুরা।<ref name="DWChildren"/>
৩৭২ নং লাইন:
=== সামাজিক অবক্ষয় ===
ভূমণ্ডলীয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রভাবিত হবে [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] সমাজব্যবস্থা। উপকূলীয় এলাকায় বর্ধিত হারের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। এসকল আশ্রয়হীন উদ্বাস্তুরা আশ্রয় নিচ্ছে নিকটবর্তি বড় শহরগুলোতে, কিংবা রাজধানী শহরে। ফলে বাড়ছে সেসব শহরের জনসংখ্যা। বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সামলাতে সেসব শহরগুলো হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া এসকল উদ্বাস্তুরা এসে ঢাকা শহরে বস্তির বাসিন্দা হচ্ছেন। [[২০০৬]] খ্রিস্টাব্দের এক জরিপে দেখা যায় ঢাকায় ৩০,০০,০০০ মানুষ, অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজন মানুষ বস্তিতে বাস করে।<ref name="DWRefugee"/> এভাবেই বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা, ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য হয়ে উঠছে আরো স্পষ্ট।<ref name="DWDemography">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নারীরা। যেখানে, বিভিন্ন দুর্যোগমুহূর্তে প্রতি ১,০০০ জনে ১৫ জন পুরুষ মারা যান, সেখানে প্রতি ১,০০০ জনে ২০-২৪ বছর বয়সী নারী মারা যান ৭১ জন।<ref name="CHRDHS"/> এর ফলে দিনে দিনে সমাজে নারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে।<ref name="DWDemography"/> এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের পুরুষের অনুপাতে নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে এবং বিবাহের প্রয়োজনে পুরুষগণ নারীর অভাবে পড়বেন। বিবাহযোগ্য বয়সে বিবাহের অনিশ্চয়তায় বিপথে পা দিবেন অনেক যুবক, সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে আরো মারাত্মকভাবে। এছাড়াও দুর্যোগের মুহূর্তেও আশ্রয়ে থাকাকালীন নানারকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হোন অনেক অক্ষম নারী।<ref name="CHRDHS"/>
৩৭৯ নং লাইন:
ব্যক্তিগত পর্যায়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার দুর্যোগে মানুষদের সহায়সম্বল হারাতে হয়। গৃহস্থ পরিবারের [[গরু]], [[ছাগল]], [[মহিষ]], [[হাঁস]], [[মুরগি]], [[গাছ|বৃক্ষাদি]], শস্য, মৎস্য সম্পদ, শস্যবীজ, গবাদি পশুর শুকনো খাদ্য, এমনকি মাছ ধরার জাল, ঝুড়ি, কিংবা জমি চাষের লাঙ্গল-জোয়াল হারিয়ে যায় বড়সড় ঝড় কিংবা জলোচ্ছাসে। বড় ধরণের জলোচ্ছাসের পর গবাদি পশুর শুকনো খাদ্যের আকালে পড়ে অনেক পরিবার। এছাড়া সামুদ্রিক জলোচ্ছাসের পর লবণপানির প্রভাবে লবণাক্ত জমি হয়ে পড়ে অনুর্বর। ফলে কখনও সাময়িক, কখনও দীর্ঘ সময়ের জন্য এক বিরাট আর্থিক অনটন কিংবা দুর্যোগের মুখোমুখি হোন দুর্যোগ-আক্রান্ত মানুষেরা।<ref name="CHRDHS"/>
জাতীয় পর্যায়ে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রয়োজনে বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে ও চলমান দুর্যোগ মোকাবিলা করতে বিদ্যমান অবকাঠামোগত স্থাপনায় আনতে হয় নকশাগত ও আবকাঠামোগত পরিবর্তন। যেমন: লোনা পানি ঠেকাতে দেশের উপকূলীয় পোল্ডারগুলোর নকশা পাল্টে মেরামত ও নতুন পোল্ডার তৈরি করা এবং নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি ও আচরণগত পরিবর্তনে সেচ প্রকল্পের সংস্কার সাধন।<ref name="PADev">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
অথচ যেভাবে চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে, মৎস্য সম্পদ, বনজ সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে তাতে বাংলাদেশ সরকারের মূল আয়ের উৎসগুলো বন্ধ হতে চলেছে। কৃষিভিত্তিক উৎপাদন কমে গেলে সরকার রাজস্ব এবং রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ হারিয়ে ফেলবে। এমতাবস্থায় [[বাংলাদেশের অর্থনীতি]] আয়ের তুলনায় ব্যয়ের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়বে।
৪৪৬ নং লাইন:
* সিলেট শহরে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা শীর্ষক [http://saarc-sdmc.nic.in/pdf/publications/journal/chapter-10.pdf গবেষণা নিবন্ধ] : Journal of South Asia Disaster Studies, Vol. 1 No. 1: ''Seismic Microzonation of Sylhet City'', by Mehedi Ahmed Ansary and Md. Rezaul Islam, November 2008.
* ময়মনসিংহে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা শীর্ষক গবেষণা নিবন্ধ:
:{{বই উদ্ধৃতি |
* ঢাকা শহরে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা শীর্ষক [http://www.thedailystar.net/2006/06/16/d606161902162.htm গবেষণা নিবন্ধ] :: ''Seismic Microzonation of Dhaka City'', Dr. Mehedi Ahmed Ansary; The Daily Star, জুন ১৬, ২০০৬।
* রাজশাহীতে ভূমিকম্পের আদ্যোপান্ত নিয়ে মো: জোবায়ের-এর [http://www.gisdevelopment.net/thesis/thesis5/toc.htm গবেষণা নিবন্ধ]
* বাংলাদেশের উপকূলে সমুদ্রস্তরের উচ্চতার ব্যাপক মাত্রার পার্থক্য বিষয়ে ও. পি. সিং-এর গবেষণা নিবন্ধ:
:{{বই উদ্ধৃতি |
== সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি ==
৪৭৫ নং লাইন:
== পাদটীকা ==
{{Cnote2 Begin|liststyle=upper-alpha|colwidth=40em}}
{{Cnote2|ক|১৯ নভেম্বর ২০১০ তারিখে হঠাৎ আসা ২০ মিনিট স্থায়ী ঝড়ে [[মাদারীপুর|মাদারীপুরের]] [[শিবচর উপজেলা|শিবচরের]] কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের [[পদ্মা]] নদীর চরাঞ্চলে ১০টি গ্রামে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয় এবং গবাদি পশু ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। তীব্র সেই ঝড় টিউবওয়েল পর্যন্ত উপড়ে নিয়ে যায়।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি |
{{Cnote2 End}}
|