মসলিন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Salim Khandoker (আলোচনা | অবদান)
→‎শবনম: ব্যাকরণ ঠিক করা হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল অ্যাপ সম্পাদনা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সম্পাদনা
Manna mehedi (আলোচনা | অবদান)
২ নং লাইন:
[[চিত্র:Woman's muslin dress c. 1855.jpg|thumb|250px|লস এঞ্জেলেস কাউন্টি মিউজিয়াম অব আর্টে প্রদর্শিত আনুমানিক ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় রমণীর জন্যে মসলিনের তৈরী পোষাক]]
 
'''মসলিন''' বিশেষ এক প্রকার [[তুলা|তুলার]] আঁশ থেকে প্রস্তুতকৃত সূতা দিয়ে বয়ন করা এক প্রকারের অতি সূক্ষ্ম [[কাপড়|কাপড়বিশেষ]]। এটি '''ঢাকাই মসলিন''' নামেও সুবিদিত। [[ফুটি কার্পাস]] নামক তুলা থেকে প্রস্তুত অতি চিকণচিকন সুতা দিয়ে মসলিন তৈরীতৈরি করা হতো।হত। চড়কা দিয়ে কাটা, হাতে বোনা মসলিনের জন্য সর্বনিম্ন ৩০০ কাউন্টের সূতাসুতা ব্যবহার করা হতোহত যার ফলে মসলিন হতোহত কাচের মতোমত স্বচ্ছ। এই মসলিন রাজকীয় পোশাক নির্মাণে ব্যবহার করা হতো।হত। মসলিন প্রায় ২৮ রকম হয়ে থাকেহত যার মধ্যে [[জামদানি|জামদানী]] এখনও ব্যাপক আকারে প্রচলিত। নানা কারণে আঠারো শতকের শেষার্ধে বাংলায় মসলিন বয়ন বন্ধ হয়ে যায়।
 
== শব্দের উৎস ==
[[বাংলা]] মসলিন শব্দটি [[আরবি]], [[ফার্সি]] কিংবা [[সংস্কৃত|সংস্কৃতমূল]] শব্দ নয়। এস. সি. বার্নেল ও হেনরি ইউল নামের দুজন [[ইংরেজ]] কর্তৃক প্রকাশিত অভিধান "'হবসন জবসন"'-এ উল্লেখ করা হয়েছে মসলিন শব্দটি এসেছে 'মসূলমসুল' থেকে। [[ইরাক|ইরাকের]] এক বিখ্যাত ব্যবসাকেন্দ্র হলোহল [[মসূল|মসুল]]। এই মসূলেওমসুলেও অতি সূক্ষ্ম কাপড় প্রস্তুত হতো।হত। এই 'মসূলমসুল' এবং 'সূক্ষ্ম কাপড়' -এ দুয়ের যোগসূত্র মিলিয়ে ইংরেজরা ''অতিসূক্ষ্ম'' কাপড়ের নাম দেয় 'মসলিন'।<ref name="DM">{{বই উদ্ধৃতি
| author = মুনতাসীর মামুন
| coauthors =
৩৯ নং লাইন:
== বিবরণ ==
[[File:Muslin transparency 2015 Kolkata.jpg|thumb|অতি সূক্ষ্ন সূতায় তৈরী বলে মসলিন হতো খুবই স্বচ্ছ]]
মসলিন প্রস্তুত করা হতোহত পূর্ব [[বাংলা|বাংলার]] [[সোনারগাঁও উপজেলা|সোনারগাঁও]] অঞ্চলে। কথিত আছে যে মসলিনে তৈরি করা পোশাকসমূহ এতই সুক্ষ্ম ছিলোছিল যে ৫০ মিটার দীর্ঘ মসলিনের কাপড়কে একটি [[দিয়াশলাই]] [[বাক্স|বাক্সে]] ভরে রাখা যেতো।যেত।
 
== প্রকারভেদ ==
মসলিনের পার্থক্য করা হতোহত সূক্ষ্মতা, বুননশৈলী আর নকশার পার্থক্যে।<ref name="DM"/> এরই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রকার মসলিনের আলাদা আলাদা নাম হয়ে যায়।
=== মলবুস খাস ===
'মলবুস খাস' মানেই হলো ''খাস বস্ত্র'' বা আসল কাপড়। এজাতীয়এ জাতীয় মসলিন সবচেয়ে সেরা আর এগুলো তৈরি হতোহত [[সম্রাট|সম্রাটদের]] জন্য।<ref name="DM"/>
আঠারো শতকের শেষদিকে মলবুস খাসের মতো আরেক প্রকারের উঁচুমানের মসলিন তৈরি হতোহত, যার নাম 'মলমল খাস'। এগুলো লম্বায় ১০ [[গজ]], প্রস্থে ১ গজ, আর ওজন হতোহত ৬-৭ তোলা। ছোট্ট একটা [[আংটি|আংটির]] মধ্যে দিয়ে এ কাপড় নাড়াচাড়া করা যেতো।যেত। এগুলো সাধারণত [[রপ্তানি]] করা হতো।হত।<ref name="DM"/>
=== সরকার-ই-আলা ===
এ মসলিনও মলবুস খাসের মতোই উঁচুমানের ছিলো।ছিল। বাংলার নবাব বা সুবাদারদের জন্য তৈরি হতোহত এই মসলিন। সরকার-ই-আলা নামের জায়গা থেকে পাওয়া খাজনা দিয়ে এর দাম শোধ করা হতোহত বলে এর এরকম নামকরণ। লম্বায় হতোহত ১০ গজ, চওড়ায় ১ গজ আর ওজন হতোহত প্রায় ১০ তোলা।<ref name="DM"/>
=== ঝুনা ===
[[চিত্র:MA-Lebrun.jpg|thumb|250px|১৭৮৩ সালে [[মেরি এন্টোইনেতে]] তাঁর বিখ্যাত মসলিন পোশাক পরিহিতা অবস্থায় চিত্রকর্ম]]
'ঝুনা' শব্দটি, [[জেমস টেইলর|জেমস টেইলরের]] মতে, এসেছে [[হিন্দী|হিন্দি]] ''ঝিনা'' থেকে, যার অর্থ হলোহল ''সূক্ষ্ম''। ঝুনা মসলিনও সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে তৈরি হতোহ্ত, তবে [[সুতা|সুতার]] পরিমাণ থাকতোথাকত কম । তাই এজাতীয়এ জাতীয় মসলিন হাল্কাহালকা জালের মতো হতোহত দেখতে। একেক টুকরা ঝুনা মসলিন লম্বায় ২০ গজ, প্রস্থে ১ গজ হতো।হত। ওজন হতোহত মাত্র ২০ তোলা। এই মসলিন বিদেশে রপ্তানি করা হতোহত না, পাঠানো হতো [[মোঘল]] রাজ দরবারে। সেখানে দরবারের বা [[হারেম|হারেমের]] মহিলারা গরমকালে এ মসলিনের তৈরি জামা গায়ে দিতেন।<ref name="DM"/>
 
=== আব-ই-রওয়ান ===
আব-ই-রওয়ান [[ফার্সি]] শব্দ, অর্থ ''প্রবাহিত পানি''। এই মসলিনের সূক্ষ্মতা বোঝাতে প্রবাহিত পানির মতো টলটলে উপমা থেকে এর নামই 'আব-রওয়ান' হয়ে যায়। লম্বায় হতোহত ২০ গজ, চওড়ায় ১ গজ, আর ওজন হতোহত ২০ তোলা।<ref name="DM"/>
আব-ই-রওয়ান সম্পর্কে প্রচলিত গল্পগুলোর সত্যতা নিরূপননিরূপণ করা না গেলেও উদাহরণ হিসেবে বেশ চমৎকার। যেমন: একবার সম্রাট [[আওরঙ্গজেব|আওরঙ্গজেবের]] দরবারে তাঁর মেয়ে উপস্থিত হলে তিনি মেয়ের প্রতি রাগান্বিত হয়ে বললেন তোমার কি কাপড়ের অভাব নাকি? তখন মেয়ে আশ্চর্য হয়ে জানায় সে আব-ই-রওয়ানের তৈরিতৈরী সাতটি জামা গায়ে দিয়ে আছে। অন্য আরেকটি গল্পে জানা যায়, নবাব [[আলীবর্দী খান]] বাংলার সুবাদার থাকাকালীন তাঁর জন্য তৈরিতৈরী এক টুকরো আব-ই-রওয়ান ঘাসের উপর শুকোতে দিলে একটি গরু এতোটাএতটা পাতলা কাপড় ভেদ করে ঘাস আর কাপড়ের পার্থক্য করতে না পেরে কাপড়টা খেয়ে ফেলে। এর খেসারৎস্বরূপ আলীবর্দী খান ওই চাষীকে ঢাকা থেকে বের করে দেন।<ref name="DM"/>
=== খাসসা ===
[[File:Shawl made of Muslin 18th century.jpg|thumb|রাজকীয় ব্যক্তির জন্য মসলিনের তৈরী একখণ্ড শাল।]]
[[ফার্সি]] শব্দ ''খাসসা''। এই মসলিন ছিলোছিল মিহি আর সূক্ষ্ম, অবশ্য বুনন ছিলোছিল ঘন। ১৭ শতকে সোনারগাঁ বিখ্যাত ছিলোছিল খাসসার জন্য। ১৮-১৯ শতকে আবার [[জঙ্গলবাড়ি]] বিখ্যাত ছিলোছিল এ মসলিনের জন্য। তখন একে 'জঙ্গল খাসসা' বলা হতো।হত। অবশ্য ইংরেজরা একে ডাকতোডাকত 'কুষা' বলে।<ref name="DM"/>
 
=== শবনম ===
'শবনম' কথাটার অর্থ হলো ''ভোরের শিশির''। ভোরে শবনম মসলিন শিশির ভেজাশিশিরভেজা ঘাসে শুকোতে দেয়া হলে শবনম দেখাই যেতোনাযেত না, এতোটাইএতটাই মিহীমিহি আর সূক্ষ্ম ছিলোছিল এই মসলিন। ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ প্রস্থের শবনমের ওজন হতোহত ২০ থেকে ২২ তোলা।<ref name="DM"/>
 
=== নয়ন সুখ ===
মসলিনের একমাত্র এই নামটিই বাংলায়। সাধারণত গলাবন্ধ [[রুমাল]] হিসেবে এর ব্যবহার হতো।হত। এজাতীয়এ জাতীয় মসলিনও ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ চওড়া হতো।হত।<ref name="DM"/>
=== বদন খাস ===
এজাতীয়এ জাতীয় মসলিনের নাম থেকে ধারণা করা হয় সম্ভবত শুধু জামা তৈরিতে এ মসলিন ব্যবহৃত হতো, কারণ 'বদন' মানে ''শরীর''। এর বুনন ঘন হতোহত না। এগুলো ২৪ গজ লম্বা আর দেড় গজ চওড়া হতোহত, ওজন হতোহত ৩০ তোলা।<ref name="DM"/>
=== সর-বন্ধ ===
[[ফার্সি]] শব্দ সর-বন্ধ মানে হলোহল ''মাথা বাঁধা''। প্রাচীন বাংলা উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা মাথায় [[পাগড়ি]] বাঁধতেন, যাতে ব্যবহৃত হতোহত সার-বন্ধ। লম্বায় ২০-২৪ গজ আর চওড়ায় আধা থেকে এক গজ হতো; ওজন হতো ৩০ তোলা।<ref name="DM"/>
=== ডোরিয়া ===
ডোরা কাটা মসলিন 'ডোরিয়া' বলে পরিচিত ছিলো।ছিল। লম্বায় ১০-১২ গজ আর চওড়ায় ১ গজ হতো।হত। [[শিশু|শিশুদের]] জামা তৈরি করে দেয়া হতোহত ডোরিয়া দিয়ে।<ref name="DM"/>
=== জামদানী ===
জামদানি কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের পরিধেয় বস্ত্র। প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙ্গালীবাঙ্গালি নারীদের অতি পরিচিত। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণত‍ঃসাধারণত‍ শাড়িকেই বোঝান হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশীনকশি ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা প্রভৃতিও তৈরি করা হত। ১৭০০ শতাব্দীতে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল। এছাড়াএ ছাড়া, মুঘল নেপালের আঞ্চলিক পোশাক রাঙ্গার জন্যও জামদানি কাপড় ব্যবহৃত হত। তবে আগেকার যুগে 'জামদানী' বলতে বোঝানো হতো নকশা -করা মসলিনকে।<ref name="DM"/>
 
এছাড়াওএ ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকারের মসলিন ছিলোছিল: 'রঙ্গ', 'আলিবালি', 'তরাদ্দাম', 'তনজেব', 'সরবুটি', 'চারকোনা' ইত্যাদি।<ref name="DM"/>
 
== বিলুপ্তি ==
[[File:Lady in Muslin 1789.jpg|thumb|ফ্রান্সিস রেনাল্ডি অঙ্কিত বিখ্যাত চিত্রকর্ম 'লেডি ইন মসলিন' এর একটি ছবি, ঢাকা, ১৭৮৯। ]]
 
ভারতে ব্রিটিশ শাসনব্রিটিশশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা বস্ত্রের উপরে ৭০ হতে ৮০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যেখানে [[ব্রিটেন|ব্রিটেনে]] প্রস্তুত -করা [[আমদানী|আমদানীকৃত]] কাপড়ের উপরে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ কর ছিলো।ছিল। এর ফলে [[ভারতীয় উপমহাদেশ|ভারতীয় উপমহাদেশের]] [[তাঁত|তাঁতশিল্পে]] ধ্বসধস নামে।
 
কথিত আছে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা মসলিন উৎপাদন বন্ধ করার জন্য মসলিন বয়নকারী [[তাঁতি|তাঁতিদের]] হাতের বুড়ো আঙুল কেটে দেয়।<ref name="DM"/> তবে অধুনা অন্য আরেকটুআরেকটি দাবি বেশ যৌক্তিকভাবে সামনে উঠে এসেছে,এসেছে। তা হলোহল, তাঁতিদের হাত ব্রিটিশরা নয়, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের আঙ্গুল কেটে নিতোনিত, যাতে এই তাঁতের কাজ আর না করতে হয়।<ref name="RP">{{সংবাদ উদ্ধৃতি
| title = মসলিন অমলিন
| author = আসমার ওসমান