কাজী আরেফ আহমেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সংশোধন, তথ্যসূত্র, হালনাগাদ, টেমপ্লেট
সংশোধন, তথ্যসূত্র
৩৭ নং লাইন:
 
==জাতীয় পতাকায় অবদান==
স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের মূল লক্ষ্য ছিল এই দেশকে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে নিউক্লিয়াস। শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিবকে [[৭ জুন ১৯৭০]]<ref>{{বই উদ্ধৃতি|title=কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস|last=|first=|publisher=রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব|year=|isbn=|location=|pages=}}</ref> তারিখে অভিবাদন জানানোর এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ছাত্রলীগও একটি বাহিনী গঠন করে ঐ দিন বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানানোর কর্মসুচিতে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। নিউক্লিয়াস এ বাহিনী গঠনের দায়িত্ব প্রদান করে কাজী আরেফ আহমেদকে। এ বাহিনীর নাম দেওয়া হয় জয়বাংলা বাহিনী। এ বাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় আ স ম আব্দুর রবকে। নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে বাহিনীর জন্য একটি পতাকা বানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অভিবাদনকালে বঙ্গবন্ধু এ পতাকা [[জয়বাংলা বাহিনী]]<nowiki/>কে প্রদান করবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় কাজী আরেফ আহমেদের উপর।[[৬ জুন ১৯৭০]], কাজী আরেফ আহমেদ তৎকালিন ইকবাল হলের (বর্তমানে [[সার্জেন্ট জহুরূল হক হল|সার্জেন্ট জহুরুল হক হল]]) ১১৬ নম্বর কক্ষে তৎকালিন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের সহসভাপতি [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব,]] ছাত্রনেতা মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি) ডেকে নিয়ে পতাকা তৈরির কথা বলেন। [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব]] এ কক্ষেই থাকতেন। কাজী আরেফ জানান যে, এখন এটি জয় বাংলা বাহিনীর [[বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা|পতাকা]] হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পরবর্তীতে এটিকে জাতীয় পতাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। এসময়ে মনিরুল ইসলাম ও [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আবদুর রব]] একমত হন যে পতাকার জমিন অবশ্যই গাঢ় সবুজ (বটলগ্রিন) হতে হবে। শাহজাহান সিরাজ বলেন যে, লাল রঙের একটা কিছু পতাকায় থাকতে হবে। এরপর কাজী আরেফ আহমেদ পতাকার নকশা তৈরি করেন। গাঢ় সবুজ জমিনের উপর প্রভাতের লাল সূর্যের অবস্থান। পতাকার নকশা দেখে সবাই একমত হন। এসময়ে কাজী আরেফ আহমেদ প্রস্তাব করেন যে, লাল সূর্যের মাঝে সোনালী রঙে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র দিতে হবে। না হলে পাকিস্তানীরা যেমন আমাদের আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার করে, পতাকা নিয়েও তাই করবে। সে সময়ে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে ‘ভারতের হাত আছে’, ‘ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের কাজ’, ‘ভারতীয় এজেন্টদের কাজ’ ইত্যাদি অপপ্রচার চালাতো। এ ছাড়া পাকিস্তানিরা বাঙালিদের আন্দোলনকে নস্যাত করতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, পূর্ব পাকিস্তান এবং মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য নিয়ে একটি কাল্পনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপপ্রচার করতো। এ অপপ্রচারের কাজে তারা প্রশাসনযন্ত্রকেও ব্যবহার করতো। কাল্পনিক এ রাষ্ট্রের তারা নাম দিয়েছিল ‘[[ইউনাইটেড স্টেটস অফ বেঙ্গল’]] বা ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র’। এ ধরণের অপপ্রচার থেকে রক্ষা পেতে পতাকার লাল সূর্যের মাঝে সোনালী আঁশ ও পাকা ধানের রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র রাখার কথা বলেন কাজী আরেফ আহমেদ। এ বিষয়ে তাঁরা সবাই একমত হন এবং তারপর পতাকা নিয়ে আলাপ করতে সিরাজুল আলম খানের কাছে যান। স্বভাবতই স্বাধীনতা কার্যক্রমের একজন ঊর্ধতন নেতা হিসেবে তাঁর অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। পতাকা তৈরিসহ সকল কার্যক্রমের বিষয়ে [[সিরাজুল আলম খান]]<nowiki/>কে জানানো হলো। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, যে নামেই পতাকা প্রদর্শন করো না কেন, সে পতাকাকে জনগণের ভবিষ্যৎ স্বাধীন [[বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা|বাংলাদেশের পতাকা]] হিসেবে ভেবে নিতে কোন বাঁধা থাকবে না। ইতোমধ্যে সেখানে আসেন ছাত্রনেতা [[কামরুল আলম খান খসরু,]] [[স্বপন কুমার চৌধুরী,]] [[হাসানুল হক ইনু]], ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নজরুল ইসলাম। এরা সবাই [[স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদে]]<ref name=":1" /> র সদস্য ছিলেন।কামরুল আলম খান খসরু, স্বপন কুমার চৌধুরী, [[হাসানুল হক ইনু]], ও নজরুল ইসলামকে পাঠানো হলো পতাকা সেলাই করে আনতে। ছাত্রলীগ অফিস তখন বলাকা ভবনে ছিল। এ ভবনে অনেক দর্জির দোকান ছিল। তাই তারা গেলেন [[নিউমার্কেটে]]। রাত অনেক, দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে নিউমার্কেটের অ্যাপেলো নামক দোকানে থেকে গাঢ় সবুজ ও লাল রঙের লেডিহ্যামিল্টন কাপড় কিনে অপর এক রঙের দোকানিকে জাগিয়ে তুলে সেনালী রং ও তুলি কিনে নিয়ে গেলেন বলাকা ভবনে। সেখানে পাক টেইলার্সকে ডেকে তুলে পতাকা সেলাই করা হয়। যে দর্জি এ পতাকাটি সেলাই করলেন তিনি ছিলেন একজন অবাঙালী। তিনি জনতেনও না, যে [[পতাকা]] তিনি সেলাই করছেন, সেটিই হবে তাদের সাথে পৃথক হওয়ার বড় শক্তি। দেশ স্বাধীনের পর ওই দর্জি পাকিস্তান চলে যান। পতাকা সেলাইয়ের পর সমস্যা দেখা দেয় লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা নিয়ে। প্রয়োজন দেখা দেয় একজন শিল্পীর। এ সমস্যার সমাধানের জন্য ডেকে আনা হয় শিবনারায়ন দাসকে। শিবনারায়ন দাস তখন [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লা]]<nowiki/>য় ছাত্ররাজনীতি করতেন। তিনিও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ভাল পোস্টার লিখতে এবং রঙ-তুলির কাজ জানতেন। ছাত্রলীগ সলিমুল্লাহ হল শাখার সম্মেলনের ব্যানার ফেস্টুন লেখার জন্য তাঁকে কুমিল্লা থেকে ঢাকা আনা হয়েছে। তাঁকে সলিমুল্লাহ হল থেকে ডেকে আনা হয়। তিনি জানালেন মানচিত্রের ওপর শুধু রং করতে পারবেন, মানচিত্র আঁকতে পারবেন না তিনি। এ সমস্যার সমাধানের জন্য [[হাসানুল হক ইনু]] ও [[ইউসুফ সালাউদ্দীন]] আহমদ চলে গেলেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এনামুল হকের (হাসানুল হক ইনু’র কাজিন) ৪০৮ নম্বর কক্ষে। তাঁর কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র বের করে তার ওপর ট্রেসিং পেপার রেখে আঁকা হয় মানচিত্র। সেই মানচিত্র নিয়ে তাঁরা ফিরে এলেন ইকবাল হলে। শিবনারায়ন দাস তাঁর হাতে পতাকার লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের [[বাংলাদেশের মানচিত্র|মানচিত্র]] আঁকলেন। রাতেই এ পতাকা অনুমোদনের জন্য নিউক্লিয়াসের বৈঠক হয় ইকবাল হলে। বৈঠকে পতাকাটি অনুমোদিত হয়। এরপর [[শেখ মুজিবুর রহমান|বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের]] অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন হয়। এ কাজে যথারীতি দায়িত্ব দেওয়া হয় [[আব্দুর রাজ্জাক (রাজনীতিবিদ)|আব্দুর রাজ্জাক]]<nowiki/>কে। তিনি ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়ে পতাকা দেখান এবং তাঁর সম্মতি নেন।