তাজমহল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Wakorinda (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Manna mehedi (আলোচনা | অবদান)
৩৯ নং লাইন:
| visitation_year = [[২০০৩]]
}}
'''তাজমহল''' ([[হিন্দি ভাষা|হিন্দি]]: ताज महल, [[উর্দু ভাষা|উর্দু]]: تاج محل) [[ভারত|ভারতের]] আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। [[মুঘল]] সম্রাট [[শাহজাহান]] তাঁর স্ত্রী [[আরজুমান্দ বানু বেগম]] যিনি [[মুমতাজ মহল]] নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশ্যেউদ্দেশে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল [[১৬৩২|১৬৩২ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে]] যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় [[১৬৫৩|১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে]]। সৌধটির নকশা কে করেছিলেন এ প্রশ্নে অনেক বিতর্ক থাকলেও, এটি পরিষ্কার যে শিল্প-নৈপুণ্যসম্পন্নশিল্পনৈপুণ্যসম্পন্ন একদল নকশাকারক ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন যারা উস্তাদ আহমেদ লাহুরীরলাহুরির সাথে ছিলেন, যিনি তাজমহলের মূল নকশাকারক হওয়ার প্রার্থীতায় এগিয়ে আছেন।<ref name="unesco">[http://whc.unesco.org/archive/advisory_body_evaluation/252.pdf UNESCO advisory body evaluation]</ref>
 
তাজমহলকে (কখনও শুধু ''তাজ'' নামে ডাকা হয়) মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে [[পারস্য]], [[তুরস্ক]], ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধীটিই বেশি সমাদৃত, তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। এটি [[১৯৮৩]] সালে [[ইউনেস্কো]] [[বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান|বিশ্বঐতিহ্যবাহী স্থান]] হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।হয়। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|url=https://www.priyo.com/articles/india-tourism-book-does-not-have-taj-mahal-20171004|title=ভারতের পর্যটন পুস্তিকায় নেই ‘তাজমহল’|newspaper=প্রিয়.কম|access-date=2017-10-04}}</ref> তখন একে বলা হয়েছিল "'universally admired masterpiece of the world's heritage।"'<ref name="unesco"/>
 
== সূচনা ও প্রেরণা ==
[[চিত্র:Shahjahan.jpg|thumb|right|140px|শাহজাহান, যিনি তাজমহল নির্মাণ করিয়েছিলেন]]
[[১৬৩১|১৬৩১ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে]] [[শাহ জাহান|শাহজাহান]], যিনি [[মুঘল আমল|মুঘল আমলের]] সমৃদ্ধশালী সম্রাট ছিলেন।ছিলেন, তারতাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী [[মুমতাজ মহল]]-এর মৃত্যুতে প্রচণ্ডভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন। মুমতাজ মহল তখন তাদের চতুর্দশ কন্যা সন্তান [[গৌহর বেগম|গৌহর বেগমের]] জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন<ref>[http://www.pbs.org/treasuresoftheworld/a_nav/taj_nav/main_tajfrm.html www.pbs.org]</ref>।
 
তাজমহলের নির্মাণ কাজ মুমতাজের মৃত্যুর পর শুরু হয়। মূল সমাধিটি সম্পূর্ণ হয় [[১৬৪৮|১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে]] এবং এর চারদিকের ইমারত এবং বাগান আরও পাঁচ বছর পরে তৈরি হয়। [[১৬৬৩|১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে]] আগ্রা ভ্রমণ করে [[ফ্রান্স|ফরাসি]] পর্যটক [[ফ্রান্সিস বেরনিয়ার]] ([[:en:François Bernier|François Bernier]]) লিখছিলেন: {{cquote|I shall finish this letter with a description of the two wonderful mausoleums which constitute the chief superiority of ''Agra'' over ''[[Delhi]]''. One was erected by ''Jehan-guyre'' [sic] in honor of his father ''Ekbar''; and ''Chah-Jehan'' raised the other to the memory of his wife ''Tage Mehale'', that extraordinary and celebrated beauty, of whom her husband was so enamoured it is said that he was constant to her during life, and at her death was so affected as nearly to follow her to the grave<ref name="François">François Bernier "Letter to Monsieur de la Mothe le Vayer. Written at Dehli [sic] the first of July 1663" ''Travels in the Moghul Empire A.D. 1657-1668'' (Westminster: Archibald Constable & Co.) 1891 p293</ref>''.}} বাংলা অনুবাদঃ {{cquote|দু’টো বিস্ময়কর সমাধির বিবরণ দিয়ে আমি চিঠিটি শেষ করবো যারা আগ্রাকে [[দিল্লী|দিল্লীর]] চেয়ে শ্রেষ্ঠ করেছে। একটি নির্মাণ করেছেন সম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁর পিতা আকবরের সম্মানে এবং অন্যটি সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রীর স্মরণে তৈরি করেছেন "তাজমহল", যা অসাধারণ সৌন্দর্য্যের অধিকারী, স্বামী তাঁর স্ত্রীর শোকে এতই শোকার্ত যে স্ত্রী জীবনে যেমন তার সাথেই ছিলেন, মরণেও তিনি তার কবরের কাছেই থাকবেন।}}
৫৪ নং লাইন:
== বাগান ==
[[চিত্র:TajMahalbyAmalMongia.jpg|thumb|200px|right|তাজমহল]]
তাজমহলের সামনের চত্বরে একটি বড় ''চারবাগ'' (মুঘল বাগান পূর্বে চার অংশে বিভক্ত থাকতোথাকত) করা হয়েছিল। ৩০০ মিটার X ৩০০ মিটার জায়গার বাগানের প্রতি চতুর্থাংশ উচুউঁচু পথ ব্যবহার করে ভাগগুলোকে ১৬টি ফুলের বাগানে ভাগ করা হয়। মাজার অংশ এবং দরজার মাঝামাঝি আংশেঅংশে এবং বাগানের মধ্যখানে একটি উঁচু মার্বেল পাথরের পানির চৌবাচ্চা বসানো আছে এবং উত্তর-দক্ষিণে একটি সরল রৈখিকসরলরৈখিক চৌবাচ্চা আছে যাতে তাজমহলের প্রতিফলন দেখা যায়। এছাড়া বাগানে আরও বেশ কিছু বৃক্ষশোভিত রাস্তা এবং ঝরনা আছে।<ref>[http://www.taj-mahal-travel-tours.com/garden-of-taj-mahal.html তাজমহলের বাগান]</ref>.
 
চারবাগ বাগান [[ভারত|ভারতে]] প্রথম করেছিলেন প্রথম মুঘল সম্রাট [[বাবর]], যা পারস্যের বাগানের মতনমতো করে নকশা করা হয়েছিল। চারবাগ মানেই যাতে স্বর্গের বাগানের প্রতিফলন ঘটবে। মুঘল আমলের লেখায় এক ফার্সি মরমিবাদী স্বর্গের বাগানের বর্ণনা দিয়েছিলেন আদর্শ বাগান হিসেবে, যাতেযা পূর্ণ থাকবে প্রাচুর্যে। পানি বা জল এই বর্ণনায় একটি বড় ভূমিকা রেখেছেঃরেখেছে। ওই লেখায় আছে, স্বর্গের বাগানের মাধ্যখানে একটি পাহাড় থেকে তৈরি হয়েছে চারটি নদী, আর তা আলাদা হয়ে বয়ে গেছে বাগানের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে।
[[চিত্র:TajGardenWide.jpg|thumb|200px|right|রৈখিক চৌবাচ্চার পাশ দিয়ে হাটার রাস্তা]]
প্রায় সব মুঘল চারবাগসমূহ চতুর্ভুজাকৃতির, যার বাগানের মধ্যখানে মাজার বা শিবির থাকে। কিন্তু তাজমহল এ ব্যাপারটিতে অন্যগুলোর থেকে আলাদা কারণ এর মাজার অংশটি বাগানের মধ্যখানে হওয়ার বদলে বাগানের একপ্রান্তে অবস্থিত। [[যমুনা নদী|যমুনা নদীর]] অপর প্রান্তে নতুন আবিষ্কৃত ''মাহতাব বাগ'' অন্যরকম তথ্যের আভাস দেয়, যমুনা নদীটি বাগানের নকশায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যাতে তা স্বর্গের নদী হিসেবে অর্থবহ হয়।
 
বাগানের বিন্যাস এবং এর স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য যেমন এর ঝরনা, ইট অথবা মার্বেলের রাস্তা এবং জ্যামিতিক ইটের রেখার ফুলের বিছানা এগুলো হুবহু সালিমারের মতনমতো এবং এই ক্রম নকশা করেছেন একই প্রকৌশলী আলি মারদান।
 
পরবর্তীকালে বাগানের গোলাপ, ডেফোডিলড্যাফোডিল, বিভিন্ন ফলের গাছসহ অন্যান্য গাছ-গাছালিরগাছগাছালির অতিপ্রাচুর্যের কথা জানা যায়। মুঘল সম্রাটদের উত্তরোত্তর অবক্ষয়ের সাথে সাথে বাগানেরও অবক্ষয় ঘটে। ইংরেজ শাসনামলে তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণ এররক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ইংরেজরা নেয়,নেয়। তারা এ প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্যকে পরিবর্তন করে নতুন করে [[লন্ডন|লন্ডনের]] আনুষ্ঠানিক বাগানের চেহারা দেয়।
 
== অন্যান্য ইমারতসমূহইমারত ==
[[চিত্র:Entrance fort.jpg|thumb|200px|left|তাজমহলের প্রধান ফটক]]
 
তাজমহল এরতাজমহলের চত্বরটি বেলে পাথরের দুর্গের মতমতো দেয়াল দিয়ে তিন দিক থেকে বেষ্টিত। নদীর দিকের পাশটিতে কোনকোনো দেয়াল নাই।নেই। এই দেয়াল বেষ্টনিরদেয়ালবেষ্টনির বাইরে আরও সমাধি রয়েছে যার মধ্যে শাহজাহানের অন্য স্ত্রীদের সমাধি এবং মুমতাজের প্রিয় পরিচারিকাদের একটি বড়বড়ো সমাধি রয়েছে। এ স্থাপত্যসমূহ প্রধানত লাল বেলে পাথর দ্বারা তৈরি, দেখতে সেসময়কারসে সময়কার ছোটছোটো আকারের মুঘল সাধারণ সমাধির মতন।মতো।
 
ভিতরের দিকে (বাগান) দেয়ালগুলো স্তম্ভ এবং ছাদ -সম্বলিত। যা সাধারণত হিন্দু [[মন্দির|মন্দিরে]] দেখা যেত এবং পরে মুঘলদের [[মসজিদ|মসজিদের]] নকশায় আনা হয়েছিল। দেয়ালগুলোয়দেয়ালগুলো বিচিত্র গম্বুজাকৃতির ইমারত দিয়ে সংযুক্ত যা থেকে বেশ কিছকিছু জায়গা নজরে আসে, যা পর্যবেক্ষণ চৌকি হিসেবে ব্যবহার করা হত। যা বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাজমহলে ঢোকার প্রধান ফটক বা দরজাও তৈরি হয়েছে মার্বেল পাথরে। দরজাটির নকশা ও ধরন মুঘল সম্রাটদের স্থাপত্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এর খিলানসমূহের আকৃতি হুবহু সমাধির খিলানসমূহের অনুরূপ এবং এর ''পিস্তাক'' খিলান সমাধির ক্যালিগ্রাফি বা চারুলিপির নকশার সাথে মিলিয়ে করা হয়েছে। এর ছাদে অন্যান্য বেলে পাথরের ইমারতের মতোই নকশা করা আছে, সেসব সুন্দর সুন্দর জ্যামিতিক আকৃতির।
তাজমহলে ঢোকার প্রধান ফটক বা দরজাও তৈরি হয়েছে মার্বেল পাথরে। দরজাটির নকশা ও ধরন মুঘল সম্রাটদের স্থাপত্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এর খিলানসমূহের আকৃতি হুবহু সমাধির খিলানসমূহের অনুরূপ এবং এর ''পিস্তাক'' খিলান সমাধির ক্যালিগ্রাফি বা চারুলিপির নকশার সাথে মিলিয়ে করা হয়েছে। এর ছাদে অন্যান্য বেলে পাথরের ইমারতের মতই নকশা করা আছে সুন্দর সুন্দর জ্যামিতিক আকৃতি।
[[চিত্র:TajInteriorJawab.jpg|thumb|100px|left|জাওয়াবের ভিতরের নকশা]]
চত্বরের একেবারে শেষে বেলেপাথরের দু’টো বিশাল ইমারত রয়েছে যার সমাধির দিকের অংশ খোলা। এদের পিছন ভাগ পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দেয়ালের সমান্তরাল।
[[চিত্র:TajMosque.jpg|thumb|180px|right| তাজ মহল মসজিদ]]
দু’টো ইমারত দেখতে একেবারে হুবহু যেন একটা আরেকটির প্রতিচ্ছবি। পূর্ব দিকের ইমারতটি মসজিদ, অন্যটি হল ''জাওয়াব'' (উত্তর), যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারসাম্য রক্ষা করা (যা মুঘল আমলে মেহমানদের থাকার জন্য ব্যবহৃত হত)। ''জাওয়াব'' আলাদা শুধু এর ''মেহরাম'' নেই আর এর মেঝে নকশা করা যেখানে ''মসজিদের'' মেঝে ৫৬৯ জন্যজন মুসল্লিমুসল্লির নামাজ পড়ার জন্য কালো পাথর দিয়ে দাগ কাটা।
 
মসজিদটির প্রাথমিক নকশা শাহজাহানের তৈরি অন্যান্য ইমারতের মতই।বিশেষমতোই। বিশেষ করে তার [[মসজিদ-ই-জাহান্নুমা]] অথবা দিল্লী জামে মসজিদ- একটিমসজিদ—একটি বড় ঘর যার উপর তিনটি গম্বুজ। মুঘল আমলের মসজিদগুলোর নামাজ পড়ার জায়গা তিন ভাগে ভাগ করা থাকতো।বড়থাকত। বড়ো নামাজ পড়ার জায়গা এরজায়গার দু'পাশে সামান্য ছোটছোটো নামাজ পড়ার জায়গা। তাজমহলের প্রত্যেকটি নামাজ পড়ার জায়গায়জায়গার উপরে বিশাল গম্বুজ আছে কিন্তু জায়গাটি খোলা।
 
ইমারতটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছিল ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে।