উইকিপিডিয়া আলোচনা:আপনার প্রথম নিবন্ধ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
ড. সেখ রমজান আলি-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Ashiq Shawon-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত
ট্যাগ: প্রতিস্থাপিত পুনর্বহাল মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১ নং লাইন:
{{আলাপ পাতা}}
 
== বিদ‍্যাসাগর ও বর্ধমান ==
 
বিদ্যাসাগর বর্ধমানে
-- ড. রমজান আলি
 
বর্ধমানে বিদ্যাসাগর যে পুকুরে স্নান করতেন সেটির নাম কেউ বলে 'পুট্টি পুকুর' কেউ বলে 'কুট্টি পুকুর' নামটি 'কুট্টি পুকুর' হওয়াই স্বাভাবিক কারণ এক সময় জি. টি. রোড সংলগ্ন এই পুকুরটি ছিল নীলকুঠি সাহেবদের এলাকাভুক্ত। বর্তমানে এটি পরিতক্ত মুখার্জি (চন্দ্রচূড় মুখার্জি) পেট্রোল পাম্প-এর উত্তর দিকে। কিংবা জি.টি. রোডের উপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন করণ) বর্ধমান সদর, পূর্ব বর্ধমানের যে অফিস তার দক্ষিণ দিকের গলিটা , আপনজনের গলি বলে যেটাকে সবাই চেনে , সেই গলি দিয়েও ঢোকা যায়। সেই পুকুর এখন ভরাট করে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়ে গেছে। ঝোপঝাড় সবুজ ঘাসও জন্মেছে। তার উপর ছাগল গরু চড়ছে । হয়তো অচিরেই কোন মাল্টিপারপাস বিল্ডিং শুরু হবে কিম্বা অন্য কিছু । অথচ এক সময় এখানেই পুকুর ছিল। পুকুরে জল ছিল এবং সেই জলে বিদ্যাসাগর স্নান করতেন। বিদ্যাসাগর তখন থাকতেন পি.সি. মিত্র লেনের প্যারীচাঁদ মিত্রের বাড়িতে । সে বাড়ির মালিকানা বদল ঘটেছে প্যারীচাঁদ এর কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন পরমানন্দ মন্ডলদের দাদু। যিনি প‍্যারীচাঁদের সঙ্গে আদালতেই কাজ করতেন। এই বাড়িটি এখন তার পৌত্র পরমানন্দদের বাড়ি । খোঁজ করলে এই নামই বলতে হবে। এখনো সেই বাড়ি, বিদ্যাসাগরের থাকার সেই ঘর, সেই দেওয়াল কেটে তাক তথা আলমারি । সেই হাতপাখা টানার কপিকল। টালি ছাওয়া সেই রান্নাঘর। ভিতরের লম্বা কড়িডোরকে শুধু দেওয়াল দিয়ে ভাগ করা হয়েছে।
আগে নাম ছিল পার্কার'স রোড । সাহেব পারকার এর নামে রাস্তা । এই পার্কার কে ছিলেন ? সেই প্রামাণিক তথ্য এখনো চোখে পড়েনি। তবে শব্দটি যে মধ্যব্যঞ্জন লোপের ফলে সৃষ্ট হয়েছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। পার্কার'স ( parkar's ) রোড > পার্কাস রোড । বর্ধমান রাজ কলেজের বাংলা বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যাপক কালীপদ সিংহ সর্বদাই উচ্চারণ করতেন, পার্কার'স রোড। জি. টি. রোডমুখী এই পার্কাস রোডের কালীপদ সিংহ বাবুর বাড়ি থেকে যেখানটা দিয়ে রাস্তাটা গুরুদুয়ার এর দিকে চলে গেছে, সেই রাস্তায় ডান দিকে দুটো প্লট এগিয়ে গিয়েই আবার ডানদিকে একটা নতুন রাস্তা হয়েছে। যেটি জি. টি. রোডে মিশেছে সেই রাস্তাটা উত্তর মুখে যাওয়ার শুরুতে ডানদিকে তিন-চারটে প্লট পেরিয়ে অনেকটা আয়তন জুড়ে মন্ডল বাড়ি। ওই নতুন রাস্তার বামদিকে প্রথম দেবাশীষদের বাড়ি। পরে ডান দিকে জি. টি. রোড মুখে ঘুরে রাস্তার ধারে বাড়িটা হল পরমানন্দদের বাড়ি। এখানেই বিদ্যাসাগর মশাই ভাড়া থাকতেন। তখন তিনি স্কুল ইনস্পেক্টর হয়ে বর্ধমানে এসেছেন। এখন সব সময় বাড়ির লোকজন থাকেন না। একতলা বাড়িটির এখন ভগ্ন দশা। রাস্তার বাঁ দিকে জি টি রোড মুখে যেতেই চোখে পড়বে দরজার ভিতরেই একটি বড় বাতাবি লেবুর গাছ। মূল দরজাতে আছে বর্ধমান মিউনিসিপ্যালিটির নির্দেশিকা। হোল্ডিং নম্বর-০২ , মহল্লা ওয়ার্ড -৭, পি. সি, মিত্র লেন । পি.সি. মিত্র লেন প্যারীচাঁদ মিত্রের নামে। তবে এই প্যারীচাঁদ সেই বিখ্যাত 'আলালের ঘরের দুলাল' উপন্যাসের টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামের লেখক, প্যারীচাঁদ মিত্র নন। ইনি বিদ্যাসাগরের 'হৃদয় বন্ধু' শ্যামাচরণ দে -এর ভগ্নিপতি ছিলেন। এই প্যারীচাঁদ মিত্র বর্ধমান জর্জ আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন । এই বাড়িটির দক্ষিণ-পূর্বে দেড়শ ফুট দূরে কুট্টি (কুঠি ? ) পুকুর, যেখানে বিদ্যাসাগর মহাশয় স্নান করতেন।
বর্ধমানে বিদ্যাসাগর এসেছিলেন ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেলওয়ে তখনও প্রতিষ্ঠা পায়নি। শ্রীচণ্ডীচরণ বন্দোপাধ্যায় তাঁর 'বিদ্যাসাগর' গ্রন্থে জানাচ্ছেন যে, ১২৫৪ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর মহাশয় এর সঙ্গে বর্ধমানের রাজা মহাতাব চাঁদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিদ্যাসাগর মশাই , রামগোপাল ঘোষ ও ভূকৈলাসের রাজা সত্যশরণ ঘোষালের সঙ্গে বর্ধমানে এসেছিলেন। এই তথ‍্য অপেক্ষা বেশি প্রমাণযোগ‍্য তথ‍্য বিহারীলাল সরকার তাঁর ' বিদ‍্যাসাগর' গ্রন্থে সময়কাল হিসাবে বলেছেন ১৮৫৪ খ্রিশ্টাব্দ। এটাই স্বাভাবিক। তিনি প্রথম বিদ‍্যালয় পরিদর্শক হিসাবেই এসেছিলেন। তবে তিনি জলপথ না স্থলপথ ? কোন পথে বর্ধমানে প্রথম এসেছিলেন সে নিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে দ্বারকানাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর , মধুসূদন , বঙ্কিমচন্দ্র প্রমূখ মনীষীদের বর্ধমানে আগমন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জলপথে। বিদ্যাসাগর তাঁর যাতায়াতের পথে পালকি ব্যবহার করতেন। পালকি করে কলকাতা থেকে জি. টি. রোড ধরে বর্ধমানে এসেছিলেন কি না তার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আর জলপথে এলে অনুমান হয়-- গঙ্গার জল পথে প্রথম কালনায় এসে, সেখান থেকে পালকিতে বর্ধমান এসেছিলেন। তবে এই প্রামাণ্য তথ্যের অভাব আছে । বিদ্যাসাগর বর্ধমানে আসার প্রায় ৪০-৫০ বছর আগে বর্ধমানে নীল চাষ শুরু হয় । যদিও নীল চাষ প্রথম শুরু হয়েছিল চন্দননগরের গোঁদাল পাড়ায় । চন্দননগরের বাগবাজারে এখনো কুঠি মাঠ আছে। যদিও প্রথম নীলকুঠি তৈরি হয়েছিল চুঁচুড়ায়। নীলকুটি থেকেই কুঠির মাঠ। যদিও প্রথম কুঠি স্থাপিত হয়েছিল চুঁচুড়ায়। তেমনি বর্ধমানেও কুঠিপুকুর নীলকুটির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। ভাঙ্গা কুঠি বলে জি. টি. রোডের উপর একটা জায়গাও বর্ধমানে আছে। একসময় ঠগীরা এই পরিত্যক্ত কুঠিগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলো, পরে উইলিয়াম বেন্টিক ঠগি দমনের সময়ে এগুলি ভেঙে দেওয়া হয়। সেই সূত্রেই ভাঙ্গা কুঠি।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীলকর সাহেবরা বর্ধমান রাজার কাছে খাজনার বিনিময়ে জমি লিজ নেয়। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নীলকুঠি তৈরি করে। তখন বর্ধমান শহরের মূলকেন্দ্র ছিল কাঞ্চননগর কেন্দ্রিক। শের আফগানের প্রাসাদ নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্ধমান শহরের পূর্ব দিকটা এত রমরমা ছিল না। কার্জন গেট এর পুরনো যে ছবি পাওয়া যায়, সেখানেও দেখা যায় , যে কার্জন গেটের দক্ষিণ-সংলগ্ন বা রানিগঞ্জ-রাজবাড়ি যাওয়ার পথে বাঁদিকের সব খড়ের ঘর। তখন দামোদর বা দামুদর (< দামুড়হুদা ) নদ এবং বাঁকা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে মূল বর্ধমান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল । পরে বর্তমান রাজবাড়ী বানানো হয়। রাজবাড়ী থেকে অনেক দূরে আজকের কার্জন গেট বা বিজয়তোরণ। বিজয় ধরনের আশেপাশেই নীলকর সাহেবদের ব‍্যবসায়ীদের কুঠিবাড়ি ছিল । আফতাব ক্লাব, পুরনো ট্রিজারি, মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুল, টাউন হল, টাউন স্কুল, মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুল, পোস্ট অফিস, আজকের মিউনিসিপ্যাল অফিস, স্টেশন চত্বর-- এইসব এলাকা এক সময় নীল উৎপাদনের জায়গা ছিল।
১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যক্তিগতভাবে এসব শ্বেতাঙ্গকে এই নীল চাষের অধিকার দেয় । এরপর থেকেই ইন্ডিয়ায় 'ইন্ডিগো' চাষ শুরু হয় । শ্বেতাঙ্গ বণিকরা ব্যক্তিগত মুনাফা লাভের জন্য ব্যাপকভাবে নীল চাষ এবং নীল ব্যবসা শুরু করে । বর্ধমানের নীলকরেরা দাদন পদ্ধতি বদলে নিজের চাষ পদ্ধতি বেশি পছন্দ করত। কিন্তু কিন্তু কৃষির কাজে নিজেরা তো আর কালঘাম ছোটাতে পারবে না । এজন্য তারা 'বুনা কুলি' বা ফসল বোনা কুলি নিয়োগ করে। অর্থাৎ কৃষি মজুর দিয়ে নীল গাছের চাষ করতো। বাঁধানো চৌবাচ্চায় গাছ পচিয়ে তখন নীল তৈরির একটা রীতি ছিল।
কৃষি মজুর আর চাষিদের ওপর অত্যাচার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে উনিশ শতকের মাঝামাঝি ১৮৫৭ সালে নীল বিদ্রোহের সূচনা হয় । তবে তার অনেক আগেই বর্ধমানে 'বর্ধমান জ্বর' দেখা যায়। যা ছিল ম্যালেরিয়া কালাজ্বর ইত্যাদির সমাহার । এই জ্বর মহামারীর আকার ধারণ করে। মশা থেকেই এই জ্বর ছড়িয়েছিল। রেললাইনে মশার বাড় বৃদ্ধি ঘটিয়েছে এরকম একটা ধারণা প্রচলিত। বর্ধমান এ রেললাইন প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই মশার উৎপাত। নীল উৎপাদনের জন্য বাঁধানো চৌবাচ্চায় যেখানে গাছ পচিয়ে নীল তৈরি করা হতো সেই চৌবাচ্চাগুলো থেকেই মশার লার্ভা জন্ম নিত এবং যা একসময় মহামারী আকার ধারণ করে। যা বর্ধমান জ্বর নামে পরিচিত। জ্বরের এই মহামারী থেকে ভয় পেয়ে নীলকর সাহেবেরাও বর্ধমান থেকে তাদের পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলে । আর সেই বুনা কুলি শ্রমিকেরা আশ্রয় নেয় বাদামতলা , কালনা রোড ইত্যাদি জায়গায়। বর্ধমানের অন্যতম ব্যক্তিত্ব অজিত হালদার, যিনি বিশ্বভ্রমণে অগ্রগণ্য ,তিনি তাঁর 'বর্ধমানে বস্তিবাসী ব্রাত্যজন' প্রবন্ধে এর তথ‍্যসূত্র দিয়েছেন।
বিদ্যাসাগর যখন স্কুল ইনস্পেক্টর হিসাবে এসেছিলেন তখনও বর্ধমানে এই জ্বরের প্রকোপ কমে নি । শিক্ষার প্রশাসক রূপে এসেও তিনি বস্তিবাসী সাধারণ মানুষের এই অবস্থা দেখে বর্ধমানে স্বাস্থ্য সেবায় মনোনিবেশ করেন। । আর্ত মানুষের সেবায় তাঁর কাছে হিন্দু মুসলমান কোন পার্থক্য ছিলনা। জ্বরের এই সেবার জন্য তিনি বর্ধমানে কমলসায়রে রাজার বাগান বাড়িতেও থেকে ছিলেন। বাড়িটির খোঁজ খবর নিয়ে যতটুকু জানা যায় যে, কমলসায়বের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে যেটি বিশু বাগ্দির বাড়ি ছিল। বিশু বাগ্দী রাজাদের বিভিন্ন মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর রেড়ির তেলের জোগান দিতেন। ১৯৫৫ সালে জমিদারী স্বত্ত আইনের আগেই রাজা উদয়চাঁদ বাড়িটি বিশু নাকি দিয়েছিলেন। তার বাড়িটি এক সময় সাহেব বাড়ি ছিল। তার প্রায় একশো বছর আগে এখানেই বিদ‍্যাসাগর আসতেন। কমলসায়রের দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা ৯২ বছর বয়সী আব্দুল খালেক যিনি রাজমিস্ত্রি ছিলেন, যার ঠাকুরদাদা সেখ সবদু বর্ধমান-রাজাদের শিল্পী-রাজমিস্ত্রী ছিলেন। তার মা অর্থাৎ খালেক মিস্ত্রীর দাদি গরিমনবিবির কাছে একটি মাটির হাঁড়ি ছিল , যেটিতে বিদ‍্যাসাগর মিষ্টি এনেছিলেন। বিদ্যাসাগর এখানে আসতেন কেবলমাত্র কমলসায়রের মুসলিম বস্তিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা দানের জন্য।
কোন প্রকার বিপদের মুখোমুখি হয়ে বিদ্যাসাগর কখনোই পিছিয়ে পরতেন না। তিনি সেই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করতেন । কারণ তিনি ছিলেন অত্যন্ত বাস্তববাদী এবং মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের কাজ করাই ছিল বিদ‍্যাসাগরের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। সেই সময় স্বচ্ছতোয়া কমলসায়রের জলে দু-একদিন অবগাহন করে, তিনি হয়তো সেই লক্ষ্যে আরোও সজীবতা সঞ্চয় করেছিলেন।
 
শিক্ষক ও গবেষক
বর্ধমান
ফোন-- ৮৭৭৭৩৯৬৬৩২ [[ব্যবহারকারী:ড. সেখ রমজান আলি|ড. সেখ রমজান আলি]] ([[ব্যবহারকারী আলাপ:ড. সেখ রমজান আলি|আলাপ]]) ১৪:৫৭, ৬ নভেম্বর ২০১৮ (ইউটিসি)
"আপনার প্রথম নিবন্ধ" প্রকল্প পাতায় ফিরুন।