ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
EditBangla (আলোচনা | অবদান)
পরিষ্কারকরণ, কাঠামো
ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত
১ নং লাইন:
'''ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ''' (ফার্সি/উর্দু:فخر الدين مبارك شاه) (শাসনকাল : ১৩৩৮-১৩৪৯) চৌদ্দ শতকে বাংলার স্বাধীনসার্বভৌম শাসক ছিলেন। তার শাসনাধীন এলাকা বর্তমান [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] পূর্ব ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল।<ref name="BangFMS">Muazzam Hussain Khan, [http://www.banglapedia.org/httpdocs/HT/F_0006.HTM Fakhruddin Mubarak Shah], [[Banglapedia]]: The National Encyclopedia of Bangladesh, [[Asiatic Society]] of Bangladesh, [[Dhaka]], ''Retrieved: 2011-04-23''</ref>
 
ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ ছিলেন বাংলার সুলতান। বাংলায় প্রথম স্বাধীন মুসলিম সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা। তিনিই বাংলার সার্বভৌম ‘সুলতান’। তাঁর রাজধানী ছিল ঢাকার অদূরস্থ ঐতিহাসিক নগর সোনারগাঁয়ে।[[সোনারগাঁও|সোনারগাঁয়ে]]। বাংলার প্রশাসনে এমন এক সময়ে এই যুগসৃষ্টিকারী পরিবর্তন সূচিত হয় যখন নব্য [[মামলুক শাসন|মামলুক শাসনের]] অবসানের পর সমগ্র বাংলা দিল্লির তুগলক সুলতানের করায়ত্ত ছিল।
 
== পরিচয়==
ফখরুদ্দীন ছিলেন জাতিতে [[তুর্কি]] এবং খুব সম্ভবত তুর্কিদের কারাউনা গোত্রীয়।গোত্রীয় ছিলেন। তিনি ছিলেন [[দিল্লি|দিল্লির]] তুগলক সুলতানের অধীনে সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা (ওয়ালি) [[বাহরাম খান|বাহরাম খানের]] সিলাহদার ( বা অস্ত্রাগারের তত্ত্বাবধায়ক)। হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৩৩৭ খ্রিস্টাব্দে বাহরাম খানের মৃত্যুর পর ফখরুদ্দীন সোনারগাঁয়ে শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত করেন এবং স্বীয় অবস্থান সুদৃঢ় করেকরতঃ ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে স্বাধীন সুলতান ঘোষণা করেন। স্বীয় মুদ্রায় ফখরুদ্দীন আল-সুলতানুল আযম ফখরুদ্দুনিয়া ওয়াদ-দ্বীন আবুল মুজাফফর মুবারক শাহ আল-সুলতান উপাধি গ্রহণ করেন।{{সত্যতা}} [[মরোক্কো|মরোক্কোর]] বিখ্যাত ভূপরিব্রাজক [[ইবনে বতুতা]] ১৩৪৬ সালে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের রাজধানী ভ্রমণ করেছিলেন। তার ভ্রমণবৃত্তান্তে তিনি উল্লেখ করেছেন, “ফখরুদ্দিন সন্দেহাতীতভাবে চমৎকার একজন শাসক, বিশেষ করে আগন্তুক এবং দরবেশ ও সুফিদের পছন্দ করেন তিনি”।<ref name=BangFMS/><ref>ট্রাভেলস অব ইবনে বতুতা, আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ - এইচ. এ. আর. গিব, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ - ইফতেখার আমিন, ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রকাশকাল - ফেব্রুয়ারি ২০০৪</ref>
 
== কর্মকাণ্ড ==
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের রাজধানী ছিল [[সোনারগাঁও]]।<ref name=BangFMS/> তিনি [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লা]] ও [[নোয়াখালী জেলা|নোয়াখালী]] জয় করেন। এরপর তিনি উত্তরে [[সিলেট জেলা|সিলেট]] ও দক্ষিণে [[চট্টগ্রাম জেলা|চট্টগ্রাম]] জয় করেন।<ref name=BangFMS/> [[গৌড়|গৌড়ের]] সুলতান [[আলাউদ্দিন আলি শাহ|আলাউদ্দিন আলি শাহের]] বিরুদ্ধে তিনি সফল নৌযুদ্ধ পরিচালনা করেন। <ref name=BangFMS/> তিনি বেশ কিছু বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্পে হাত দেন যার মধ্যে মহাসড়ক, বাধ, [[মসজিদ]] ও সমাধি ছিল।<ref name=BangFMS/>
 
== অস্তিত্বের সংগ্রাম ও সাফল্য ==
ফখরুদ্দীন ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে স্বাধীন সুলতান ঘোষণার অব্যবহিত পরে দিল্লি সুলতান মুহম্মদ তুগলকের নির্দেশে লখনৌতিএর শাসনকর্তা কদর খান, সাতগাঁয়ের শাসনকর্তা (মুকতি) আইজ্জুদ্দিন ইয়াহিয়া তাদের সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে বিদ্রোহী ফখরুদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযান করেন। কারার (কোহ্-ই-জুদ) আমীর ফিরুয খান তাদের সৈন্য সাহায্য পাঠান। কদর খানের নেতৃত্বে এই সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ফখরুদ্দীন পরাজিত হন এবং স্বীয় রাজধানী ত্যাগ করে সম্ভবত মেঘনার অপর তীরে অবস্থান নেন। কদর খান সোনারগাঁও অধিকার করেন। পূর্বাঞ্চলীয় এ রাজধানীর বিপুল ধনসম্পদ এবং বহুসংখ্যক হাতি তাঁর হস্তগত হয় (১৩৩৯)।
 
বর্ষার শুরুতে মিত্র বাহিনীর সৈন্যরা স্ব স্ব অঞ্চলে ফিরে যায়। কদর খান তাঁর বাহিনীর বেশিরভাগ সৈন্যদের রাজস্ব আদায়ের কাজে মফস্বল এলাকায় পাঠিয়ে দেন। দিল্লি সুলতানের জন্য ধনসম্পদ আহরণ ও সঞ্চয়ের অজুহাতে লোভী ও অর্থ লিপ্সু কদর খান রাজধানী সোনারগাঁয়ে প্রাপ্ত সমুদয় ধনসম্পদ স্বয়ং আত্মসাৎ করেন। এমনকি তিনি যুদ্ধলব্ধ সম্পদে সৈন্যদের বিধানমাফিক প্রাপ্য থেকেও তাদের বঞ্চিত করেন। অচিরেই কদর খান সোনারগাঁয়ে স্বীয় অবস্থানকে বিপদসঙ্কুল করে তোলেন। একদিকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়ে তাঁর সৈন্যরা ছিল ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত এবং অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজধানী লখনৌতির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের ব্যবস্থাও তিনি রক্ষা করতে পারেন নি। এদিকে সোনারগাঁও অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকেবহাল ফখরুদ্দীন তখন অপেক্ষা করছিলেন তাঁর প্রাকৃতিক রণকৌশল হিসেবে বর্ষার আগমনের জন্য। বর্ষা শুরু হতেই তিনি তাঁর নৌবহর নিয়ে অগ্রসর হন এবং জলপথে কদর খানকে সোনারগাঁয়ে অবরুদ্ধ করেন। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে কর্দমাক্ত ভূমি ও ভ্যাপসা গরমে অনভ্যস্ত কদর খানের বহুসংখ্যক সৈন্য ও যুদ্ধেরঅশ্ববাহিনীর ঘোড়া অসুস্থ হয়ে মারা যায়।
 
ফখরুদ্দীনের নৌবাহিনী কর্তৃক রাজধানী সোনারগাঁও অবরোধ স্বভাবতই কদর খানের পতন অনিবার্য করে তুলেছিল। কিন্তু ফখরুদ্দীন কোনো ঝুঁকি নিতে চান নি। তাই স্বীয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি কুট-কৌশলের আশ্রয় নেন। কদর খানের সৈন্যদের মধ্যে অসন্তোষের সংবাদ পেয়ে ফখরুদ্দীন তাদের নিকট প্রস্তাব পাঠান যে, যদি তারা কদর খানকে হত্যা করে তার সঙ্গে এসে যোগ দেয় তাহলে তিনি রাজধানীতে সঞ্চিত সমুদায় ধনসম্পদ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেবেন। ধনসম্পদের লোভে কদর খানের সৈন্যরা বিদ্রোহ করে কদর খানকে হত্যা করে (১৩৪০) এবং ফখরুদ্দীনের সঙ্গে যোগদানের জন্য অগ্রসর হয়। ফখরুদ্দীন সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে প্রবেশ করেন এবং সঞ্চিত ধনসম্পদ আয়ত্তে এনে তাঁরপূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো সৈন্যদের মধ্যে বণ্টন করে দেন।
 
সোনারগাঁয়ে স্বীয় অবস্থান সুদৃঢ় করে ফখরুদ্দীন  লখনৌতি ও সাতগাঁর শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত্ব করার উদ্যোগ নেন। লখনৌতির শাসনকর্তা কদর খানের মৃত্যু এবং ফখরুদ্দীনের সঙ্গে যুদ্ধে সাতগাঁয়ের শাসনকর্তা আইজ্জুদীন ইয়াহিয়া নিহত হওয়ার ফলে লখনৌতি ও সাতগাঁও উভয় প্রদেশই তখন ছিল শাসকশূণ্য। ফখরুদ্দীন তখন মুখলিস খানকে লখনৌতিতে তাঁর নায়েব নিযুক্ত করে লখনৌতি এবং এর অধীনস্থ অঞ্চল অধিকারের জন্য এক শক্তিশালী বাহিনীসহ প্রেরণ করেন। কিন্তু কদর খানের বাহিনীর আরিয-ই-লস্কর মালিক আলী মুবারক সৈন্য সংগ্রহ করে মুখলিস খানের অভিযান প্রতিহত করেন। যুদ্ধে মুখলিস খান পরাজিত ও নিহত হন। তাঁর গোটা বাহিনী বিধ্বস্ত হয়। আলী মোবারক লখনৌতির শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সাতগাঁও দখলের জন্য ফখরুদ্দীনের প্রচেষ্টা সম্ভবত সফল হয় নি। তাঁর বাহিনী সাতগাঁ আক্রমণ করে সেখানে বেপরোয়া লুণ্ঠন চালায়। কিন্তু সাতগাঁয়ে তাঁর পক্ষে অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় নি।
১৯ ⟶ ২৪ নং লাইন:
বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায় ফখরুদ্দীনের আধিপত্যের ফলে ত্রিপুরার রাজা সম্পূর্ণ কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ফখরুদ্দীনের দক্ষিণপূর্ব-মুখী অভিযানের ফলে আরাকানের রাজাও তাঁর রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং সম্ভবত সোনারগাঁয়ের সুলতানের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন।
 
== ইতিহাস ==
ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের রাজত্বকালে মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলায় সফর করেন (১৩৪৬)। তিনি বাংলায় তাঁর ভ্রমণের এক মূল্যবান বিবরণ লিপিবদ্ধ করে যান। এ বিবরণে বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য, অধিবাসীদের জীবনের বিভিন্ন দিক এবং দেশের সমৃদ্ধির প্রাণবন্ত বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি তাঁর বিবরণে ফখরুদ্দীনের চারিত্রিক গুণাবলির প্রশংসা করে তাঁকে একজন খ্যাতনামা নরপতি হিসেবে মূল্যায়ন করেন।
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের রাজধানী ছিল [[সোনারগাঁও]]।<ref name=BangFMS/> তিনি [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লা]] ও [[নোয়াখালী জেলা|নোয়াখালী]] জয় করেন। এরপর তিনি উত্তরে [[সিলেট জেলা|সিলেট]] ও দক্ষিণে [[চট্টগ্রাম জেলা|চট্টগ্রাম]] জয় করেন।<ref name=BangFMS/> [[গৌড়|গৌড়ের]] সুলতান [[আলাউদ্দিন আলি শাহ|আলাউদ্দিন আলি শাহের]] বিরুদ্ধে তিনি সফল নৌযুদ্ধ পরিচালনা করেন। <ref name=BangFMS/>
 
তিনি বেশ কিছু বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্পে হাত দেন যার মধ্যে মহাসড়ক, বাধ, [[মসজিদ]] ও সমাধি ছিল।<ref name=BangFMS/> [[মরোক্কো|মরোক্কোর]] বিখ্যাত পরিব্রাজক [[ইবনে বতুতা]] ১৩৪৬ সালে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের রাজধানী ভ্রমণ করেছিলেন। তার ভ্রমণবৃত্তান্তে তিনি উল্লেখ করেছেন, “ফখরুদ্দিন সন্দেহাতীতভাবে চমৎকার একজন শাসক, বিশেষ করে আগন্তুক এবং দরবেশ ও সুফিদের পছন্দ করেন তিনি”।<ref name=BangFMS/><ref>ট্রাভেলস অব ইবনে বতুতা, আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ - এইচ. এ. আর. গিব, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ - ইফতেখার আমিন, ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রকাশকাল - ফেব্রুয়ারি ২০০৪</ref>
ইবনে বতুতা ফখরুদ্দীন মুবারক শাহকে বাঙ্গালাহর সুলতান হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং বলেন যে, চট্টগ্রাম তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বাঙ্গালাহ রাজ্যের পরিধি নির্ধারণে ধরে নেয়া যায় যে, ফখরুদ্দীনের রাজ্য প্রায় সমগ্র পূর্ববাংলা এবং দক্ষিণ বঙ্গের পূর্বাংশব্যাপী বিস্তৃত ছিল। ফখরুদ্দীনের রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। প্রদেশের নাম পূর্ববঙ্গে ছিল ইকলিম এবং দক্ষিণবঙ্গে মুলক। প্রদেশের শাসনকর্তার অভিধা সম্পর্কে একমাত্র সূত্র পাওয়া যায় যে, মূলক চাটগাঁও বা চট্টগ্রাম প্রদেশের শাসনকর্তার অভিধা ছিল নায়েব। প্রদেশগুলো সম্ভবত পরগণায় বিভক্ত ছিল। মুবারক আজিয়াল ছিল ইকলিম মুবারকাবাদের একটি পরগণা। এই পরগণা ও প্রদেশ দুয়েরই নামকরণ হয় ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের নামে।
 
=== ইবনে বতুতার বিবরণ===
ফখরুদ্দীনের অধীনে বাঙ্গালাহ রাজ্যের সমৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায় ইবনে বতুতার বর্ণনায়। তিনি তাঁর বিবরণে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের প্রাচুর্য্য এবং রমরমা অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা বলেছেন, বলেছেন দ্রব্যসামগ্রী বিশেষত চালের উদ্বৃত্ত মজুদ এবং বিদেশে চাল রপ্তানির কথা, আর প্রতিবেশী দেশ চীন ও জাভার সঙ্গে সোনারগাঁয়ের বাণিজ্যিক যোগসূত্রের কথা।
ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের রাজত্বকালে মরক্কোর পর্যটক [[ইবনে বতুতা]] বাংলায় সফর করেন (১৩৪৬)। তিনি বাংলায় তাঁর ভ্রমণের এক মূল্যবান বিবরণ লিপিবদ্ধ করে যান। এ বিবরণে বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য, অধিবাসীদের জীবনের বিভিন্ন দিক এবং দেশের সমৃদ্ধির প্রাণবন্ত বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি তাঁর বিবরণে ফখরুদ্দীনের চারিত্রিক গুণাবলির প্রশংসা করে তাঁকে একজন খ্যাতনামা নরপতি হিসেবে মূল্যায়ন করেন।
 
ইবনে বতুতা ফখরুদ্দীন মুবারক শাহকে বাঙ্গালাহর সুলতান‘সুলতান’ হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং বলেন যে, [[চট্টগ্রাম]] তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বাঙ্গালাহ রাজ্যের পরিধি নির্ধারণে ধরে নেয়া যায় যে, ফখরুদ্দীনের রাজ্য প্রায় সমগ্র পূর্ববাংলা এবং দক্ষিণ বঙ্গের পূর্বাংশব্যাপী বিস্তৃত ছিল। ফখরুদ্দীনের রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। প্রদেশের নাম পূর্ববঙ্গে ছিল ইকলিম এবং দক্ষিণবঙ্গে মুলক। প্রদেশের শাসনকর্তার অভিধা সম্পর্কে একমাত্র সূত্র পাওয়া যায় যে, মূলক চাটগাঁও বা চট্টগ্রাম প্রদেশের শাসনকর্তার অভিধা ছিল নায়েব। প্রদেশগুলো সম্ভবত পরগণায় বিভক্ত ছিল। মুবারক আজিয়াল ছিল ইকলিম মুবারকাবাদের একটি পরগণা। এই পরগণা ও প্রদেশ দুয়েরই নামকরণ হয় ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের নামে।
সুলতান ফখরুদ্দীন ছিলেন ফকির ও সুফি দরবেশদের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। সুলতানের স্থায়ী নির্দেশ ছিল যে, তাঁর রাজ্যে ফকিরদের নদী পারাপারের জন্য কোনো মাশুল বা ভাড়া প্রদান করতে হবে না, যেকোন আগন্তক, ফকির ও সুফিদের বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে এবং কোনো ফকির কোনো শহরে পৌঁছলে তাঁকে ন্যূনতম অর্ধ দীনার ভাতা প্রদান করতে হবে।
 
ফখরুদ্দীনের অধীনে বাঙ্গালাহ রাজ্যের সমৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায় ইবনে বতুতার বর্ণনায়। তিনি তাঁর বিবরণে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের প্রাচুর্য্য এবং রমরমা অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা বলেছেন, বলেছেন দ্রব্যসামগ্রী বিশেষত চালের উদ্বৃত্ত মজুদ এবং বিদেশে চাল রপ্তানির কথা, আর প্রতিবেশী দেশ চীন ও জাভার সঙ্গে সোনারগাঁয়ের বাণিজ্যিক যোগসূত্রের কথা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের রাজত্বকালে মরক্কোর পর্যটক [[ইবন বতুতা|ইবনে বতুতা]] বর্ণিত এই খ্যাতনামা নরপতি, বিশিষ্ট সমর সংগঠক, বিজেতা ও কূটনীতিক স্পষ্টই ছিলেন দিল্লির অধীনতা পাশ থেকে বাংলার স্বাধীনতার সূচনার অগ্রনায়ক, আর তিনিই প্রসারিত করে দেন পরবর্তী দুই শতক ব্যাপী বাংলায় স্বাধীন শাসনের দিগন্তকে। বাংলায় সর্বাধিক সুদৃশ্য মুদ্রার রূপকার, চারুশিল্প ও হস্তশিল্পের পৃষ্ঠপোষক, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারক, বহিরাগত ও ফকির-দরবেশদের উদার পৃষ্ঠপোষক, মসজিদ সমাধিসৌধ ও সড়ক নির্মাতা, আরাকানি মগদের অত্যাচার ও লুণ্ঠন থেকে রাজ্যের জনগণের রক্ষক এই মহান নৃপতি বাংলার ইতিহাসে এক উজ্জল স্বাক্ষর রেখে গেছেন। বহুমুখী গুণে বিভূষিত বাংলার এই সুলতানের   প্রধান কৃতিত্ব হলো, জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রাচুর্য এবং পণ্যের সস্তাদর নিশ্চিত করে তিনি তাঁর রাজ্যের জনগণের জন্য সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন। ১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দে (৭৫০ হিজরি) সোনারগাঁয়ে ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের মৃত্যু হয়। 
 
সুলতান ফখরুদ্দীন ছিলেন ফকির ও সুফি দরবেশদের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। সুলতানের স্থায়ী নির্দেশ ছিল যে, তাঁর রাজ্যে ফকিরদের নদী পারাপারের জন্য কোনো মাশুল বা ভাড়া প্রদান করতে হবে না, যেকোনযে কোন আগন্তক, ফকির ও সুফিদের বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে এবং কোনো ফকির কোনো শহরে পৌঁছলে তাঁকে ন্যূনতম অর্ধ দীনার ভাতা প্রদান করতে হবে।
== ইতিহাস ==
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের রাজধানী ছিল [[সোনারগাঁও]]।<ref name=BangFMS/> তিনি [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লা]] ও [[নোয়াখালী জেলা|নোয়াখালী]] জয় করেন। এরপর তিনি উত্তরে [[সিলেট জেলা|সিলেট]] ও দক্ষিণে [[চট্টগ্রাম জেলা|চট্টগ্রাম]] জয় করেন।<ref name=BangFMS/> [[গৌড়|গৌড়ের]] সুলতান [[আলাউদ্দিন আলি শাহ|আলাউদ্দিন আলি শাহের]] বিরুদ্ধে তিনি সফল নৌযুদ্ধ পরিচালনা করেন। <ref name=BangFMS/>
 
== তাৎপর্য ==
তিনি বেশ কিছু বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্পে হাত দেন যার মধ্যে মহাসড়ক, বাধ, [[মসজিদ]] ও সমাধি ছিল।<ref name=BangFMS/> [[মরোক্কো|মরোক্কোর]] বিখ্যাত পরিব্রাজক [[ইবনে বতুতা]] ১৩৪৬ সালে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের রাজধানী ভ্রমণ করেছিলেন। তার ভ্রমণবৃত্তান্তে তিনি উল্লেখ করেছেন, “ফখরুদ্দিন সন্দেহাতীতভাবে চমৎকার একজন শাসক, বিশেষ করে আগন্তুক এবং দরবেশ ও সুফিদের পছন্দ করেন তিনি”।<ref name=BangFMS/><ref>ট্রাভেলস অব ইবনে বতুতা, আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ - এইচ. এ. আর. গিব, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ - ইফতেখার আমিন, ঐতিহ্য প্রকাশনী, প্রকাশকাল - ফেব্রুয়ারি ২০০৪</ref>
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের রাজত্বকালে মরক্কোর পর্যটক [[ইবন বতুতা|ইবনে বতুতা]] বর্ণিত এই খ্যাতনামা নরপতি, বিশিষ্ট সমর সংগঠক, বিজেতা ও কূটনীতিক স্পষ্টই ছিলেন দিল্লির অধীনতা পাশ থেকে বাংলার স্বাধীনতার সূচনার অগ্রনায়ক, আর তিনিই প্রসারিত করে দেন পরবর্তী দুই শতক ব্যাপী বাংলায় স্বাধীন শাসনের দিগন্তকে। বাংলায় সর্বাধিক সুদৃশ্য মুদ্রার রূপকার, চারুশিল্প ও হস্তশিল্পের পৃষ্ঠপোষক, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারক, বহিরাগত ও ফকির-দরবেশদের উদার পৃষ্ঠপোষক, মসজিদ সমাধিসৌধ ও সড়ক নির্মাতা, আরাকানি মগদের অত্যাচার ও লুণ্ঠন থেকে রাজ্যের জনগণের রক্ষক এই মহান নৃপতি বাংলার ইতিহাসে এক উজ্জল স্বাক্ষর রেখে গেছেন। বহুমুখী গুণে বিভূষিত বাংলার এই সুলতানের   প্রধান কৃতিত্ব হলো, জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রাচুর্য এবং পণ্যের সস্তাদর নিশ্চিত করে তিনি তাঁর রাজ্যের জনগণের জন্য সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন। ১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দে (৭৫০ হিজরি) সোনারগাঁয়ে ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের মৃত্যু হয়। 
 
== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা}}
 
৫০ ⟶ ৫৭ নং লাইন:
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি জাতি]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলার শাসক]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলার সুলতান]]
 
 
{{Bangladesh-bio-stub}}