ইসলামে বিজ্ঞান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
পাতা তৈরি
(কোনও পার্থক্য নেই)

১২:২৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

কুরআন ও ইসলামের অলৌকিত্ব তুলে ধরতে গিয়ে মুসলিমগণ বিজ্ঞান ও ইসলামের যেসব সাদৃশ্যের কথা বলেন তা নিম্নরূপ-

মহাকাশবিজ্ঞান

·    ” অবিশ্বাসীরা কি চিন্তা করে দেখে না যে,একসময় নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল,অতঃপর আমি তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম এবং জীবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম? তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?” (সূরা আল-আম্বিয়া;৩০)

·    " তিনি নভোমণ্ডল ও  ভূমণ্ডলকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী; তিনি যখন কিছু করতে চান তখন সেটিকে বলেন: ’হও’, অমনি তা হয়ে যায়। (আলে ইমরান:১১৭)

এই আয়াতদ্বয় দ্বারা মহাবিশ্ব সৃষ্টির সাধারণ তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে।Big Bang Theory অনুযায়ী একসময় মহাবিশ্বের সকল বস্তু আড়ষ্ট অবস্থায় ছিল, একটি বিন্দুতে।অতঃপর বিস্ফোরণের মাধ্যমে তা আলাদা হয়ে গেছে।তাছাড়া সমস্ত জীবদেহের ৮০-৮৫%-ই পানি দিয়ে গঠিত।

·      ”অতঃপর তিনি পৃথিবীর দিকে মনোনিবেশ করেন;যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ বিশেষ”(সূরা আল-ফুসসিলাত;৪১)

এখানে ধুম্রকুঞ্জ বলতে পৃথিবীর আদি অবস্থার কথা বলা হয়েছে।‘ধুম্র’ শব্দের অর্থ-ধোয়া বা গ্যাস।Big Bang Theory অনুযায়ী পৃথিবী একসময় অত্যন্ত উত্তপ্ত,জ্বলন্ত ও গ্যাসের পিণ্ড ছিল।

·      “তিনিই সূর্যকে তেযস্বী করেছেন এবং চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার তিথি নির্দিষ্ট করেছেন” (সূরা আল-ইউনূস)

·      “ কত মহান তিনি; যিনি সৃষ্টি করেছেন সৌরজগৎ এবং উহাতে স্থাপন করেছেন সূর্যকে প্রদীপরূপে এবং চন্দ্রকে করেছেন জ্যোতির্ময় ” (সূরা আল-ফুরকানঃ৬১)

কুরআনে সূর্যকে ‘সিরাজ’ (প্রদীপ) বলা হয়েছে;যা নিজেই আলো উৎপন্ন করতে সক্ষম।চাঁদের আলোকে কুরআনে ‘মুনীর’ বলা হয়েছে।আরবীতে ‘মুনীর‘ অর্থ-অন্য উৎস থেকে গৃহীত আলো’ বা ‘প্রতিফলিত আলো’।

·      ” চন্দ্র ও সূর্য হিসাবমত ঘোরে ”

                                 (সূরা আর-রহমান)

মহাকাশবিজ্ঞান অনুযায়ী চাঁদ ২৮ দিন ১২ ঘণ্টায় সমগ্র পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে এবং সূর্য নিজের অক্ষে নিজস্ব গতিতে ঘূর্ণায়মান।সূর্য প্রায় ২৫ দিনে একটি আবর্তন সম্পন্ন করে।তবে পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যের অবস্থান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে থাকায় আমরা এই আবর্তন বেগের মান পাই ২৮ পার্থিব দিন। দেখা যাচ্ছে, সূর্যের নিজ কক্ষের চারদিকে আবর্তন বেগ খুবই কম, এই ঘূর্ণন বেগ থেকে যে কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয় তা সূর্যের পৃষ্ঠ অভিকর্ষের তুলনায় ১৮০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ।

·       আমি আমার অসীম ক্ষমতাবলে নির্মাণ করেছি মহাসম্প্রসারণশীল মহাকাশ” (সূরা যারিয়াতঃ৬০)

বিংশ শতাব্দীর প্রাথমিক যুগে রুশ পদার্থবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যান ও বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী জর্জেস লেমেট্রে তাত্ত্বীকভাবে বিশ্লেষণ করে জানান যে মহাকাশ সম্প্রসারিত

পানিচক্র

·      “আমি বৃষ্টি গর্ভ বায়ু পরিচালিত করি,অতঃপর আকাশ হতে পানি বর্ষণ করি এবং তোমাদের পান করাই”  (সূরা আল-হিজরঃ২২)

কুরআনের অনেক আয়াতে পানিচক্রের সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে।কুরআনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আকাশে জলজ মেঘমালা একত্রিত হয়ে পানি বর্ষিত হয় এবং এই পানি মাটিতে অনুস্রাবিত হয়ে সুপেয় পানিতে পরিণত হয়।।

৩)জীববিজ্ঞানঃ

* “আপনার প্রতিপালক মৌমাছিকে আদেশ দিয়েছেন যে, মৌচাক বানাও পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষের গৃহে”(সূরা নাহলঃ৬৮)

·      “অতঃপর শোষণ করে নাও প্রত্যেক ফুল হতে এবং চলো তোমার প্রতিপালকের সরল পথে” সূরা নাহলঃ৬৯)

১৯৭৩ সালে বিজ্ঞানী কার্ল ভন Frisch Physiology of Medicine বিষয়ে গবেষণার জন্য নোবেল পান।তাঁর গবেষণার বিষয় “ মৌমাছির জীবনচক্র”। তিনি প্রমাণ করেছেন মৌমাছি তিন ধরণের পুরুষ মৌমাচি, স্ত্রী মৌমাছি ও ডিম না পাড়া স্ত্রী মৌমাছি।স্ত্রী মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে, মৌচাক বানায় ও ডিম পাড়ে।পুরুষ মৌমাছির বেশি কাজ নেই।বাকি কাজ অন্যান্য স্ত্রী মৌমাছি করে।ডিম পাড়া মৌমাছি হলো কুইন বি, অন্য স্ত্রীরা হলো ওয়ার্কার বি।কোনো মৌমাছি মধুর সন্ধান পেলে তার সঙ্গীদের এসে খবর দেয় ও রাস্তা চিনিয়ে দেয়।তারা এক সরল রেখায় চলে।রাস্তার বর্ণনা দিতে কোনো হেরফের হয় না।এর নাম দিয়েছেন তিনি ওয়াগল ড্যান্স।

আরবিতে ক্রিয়াবাচক শব্দ স্ত্রী ও পুরুষের জন্য সর্বদা আলাদা ব্যবহৃত হয়।যেমন, ইংরেজিতে সর্বনাম পদ ভিন্ন হয়।

৬৮ নাম্বার আয়াতে কাজগুলো বুঝাতে ‘ইত্তাখিযি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে; যা কেবল নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।পুরুষ হলে শব্দটা হতো ‘ইত্তাখিয’। কুরআন ৬৮ নাম্বার আয়াতে কাজগুলো নারী মৌমাছিদের করতে বলছে।

৬৯ নাম্বার আয়াতে মধু শোষণ করতে ‘কুলি’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে; যা নারীবাচক।পুরুষের ক্ষেত্রে তা ‘কুল’।সরল পথে চলার কথায় নারীবাচক ক্রিয়া ‘উসলুকি’ ব্যবহৃত হয়েছে, পুরুষবাচক ‘উসলুক’ নয়।

এ আয়াতে সরল পথের কথা বলা হয়েছে, এটা বস্তুগত সরল পথ।রূপক অর্থে ভালো কাজের পথ বুঝানো হয় নি, কারণ মৌমাছির জন্য পাপ-পূণ্য বলতে কিছু নেই।সুতরাং, এখানে এক সরলপথে চলার কথাই বলা আছে।

যে বিষয়টি ১৯৭৩ সালে একজন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করলেন।

আকাশ

"তিনিই সে সত্তা (আল্লাহ) যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্যে যা কিছু রয়েছে জমিনে, অতঃপর তিনি মনসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুত তিনি তৈরি করেছেন সাত আসমান। আর তিনি সর্ববিষয়ে অবহিত।" (বাকারা, ০২ : ২৯)

আর আমি তোমাদের ওপর সৃষ্টি করেছি সপ্তপথ। (মুমিনূন, ২৩ :১৭)

আর আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের ওপর মজবুত সপ্ত আকাশ। (নাবা, ৭৮ : ১২)

এই আয়াতগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রহস্য হয়েই থেকে গেছে।এমনকি এই বিজ্ঞানের যুগের মানুষদের কাছেও। সাম্প্রতিক সময়ে একজন তুর্কি মহাকাশ বিজ্ঞানী ডক্টর হালুক নূর বাকি মহাকাশ বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে এই আয়াতগুলির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন,

যে মহাশূন্য আমাদের পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে তা নিমড়বলিখিত সাতটি সমকেন্দ্রিক চৌম্বক স্তরে গঠিত।

১. মহাশূন্যের যে ক্ষেত্র সৌরজগত দ্বারা গঠিত তা প্রথম আসমানের

প্রতিনিধিত্ব করে।

২. সম্প্রতি ‘মিল্কিওয়ে’ বা আকাশগঙ্গার চারপাশে একটি চৌম্বক

ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আমাদের ছায়াপথের এই বিস্তৃত ক্ষেত্রটি

দ্বিতীয় আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

৩. ছায়াপথসমূহের ‘Local Cluster’ মহাকাশীয় ক্ষেত্র তৃতীয়

আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

৪. ছায়াপথসমূহের সমন্বয়ে গঠিত মহাবিশ্বের কেন্দ্রীয় চৌম্বক ক্ষেত্র

চতুর্থ আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

৫. অতি দূর থেকে আগত আলোকতরঙ্গের উৎসসমূহের

প্রতিনিধিত্বকারী মহাজাগতিক বলয় পঞ্চম আসমানের প্রতিনিধিত্ব

করে।

৬. মহাবিশ্বের প্রসারমান ক্ষেত্র ষষ্ঠ আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

৭. মহাবিশ্বের প্রান্তহীন অসীমত্বের নির্দেশক সর্ববহিরস্থ ক্ষেত্র সপ্তম

আসমানের প্রতিনিধিত্ব করে।

আসমানের এই স্তরসমূহ অকল্পনীয় স্থান জুড়ে আছে। প্রথম আসমান স্তরের পুরুত্ব আনুমানিক ৬.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। দ্বিতীয় স্তর তথা আমাদের ছায়াপথের ব্যাস হল ১৩০ হাজার আলোকবর্ষ। তৃতীয় স্তরের বিস্তার ২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। চতুর্থ স্তরের ব্যাস ১০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। পঞ্চম

স্তরটি ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে। ষষ্ঠ স্তরটি অবস্থিত ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে। একথা বলা বাহুল্য যে, সপ্তম স্তরটি বিস্তৃত হয়ে আছে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত।

পৃথিবীর ক্রমবিকাশের চারটি ধাপ

বর্তমান বিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর ইতিহাসকে নিম্নবর্ণিত প্রধান চারটি ভাগে

বিভক্ত করেন

১. Pre-Cambrian যুগ : ৬০০ থেকে ৩৩০০ মিলিয়ন বছর। এই যুগে পৃথিবী তার আদি পিণ্ড থেকে বিকশিত হয় এবং একটি স্বতন্ত্র গ্রহের রূপ ধারন করে। জীবনের প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্যের মাধ্যমে এযুগের সমাপ্তি ঘটে।

২. Palezoic যুগ : ২৩০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন বছর। এই যুগে সর্বপ্রথম ভূমিজ লতা-পাতা, উভচর প্রাণী ও সরীসৃপ দৃষ্টিগোচর হয়। এটি হল প্রাচীন প্রাণ যুগ।

৩. Mesozoic যুগ : ৬৩ থেকে ২৩০ মিলিয়ন বছর। এটিকে মধ্যপ্রাণ যুগ বলে বিবেচনা করা হয়। মৌসুমী পরিবর্তনের সঙ্গে বৃক্ষ-লতা ভালভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছিল। মেরুদণ্ডী প্রাণী, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিও এ যুগে গোচরীভূত হয়। আর ডাইনোসর ছিল প্রচুর।

৪. Conozoic যুগ : বর্তমান সময় থেকে ৬৩ মিলিয়ন বছর। এই যুগ জীবনের বর্তমান ধাপকে অন্তর্ভুক্ত করে। পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসকে এই চার ভাগে বিভাজন অবিন্যস্ত কিংবা বিশৃঙ্খল নয়, বরং তা করা হয়েছে দৈহিক গঠন প্রক্রিয়ার ক্রমবিকাশের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে। এই যুগগুলি বিশ্ব বিস্তৃত পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে সার্বজনীনভাবে গৃহীত হয়েছে। এগুলি প্রাণীজগৎ ওউদ্ভিদজগতের ক্রমোন্নতি এবং মহাদেশগুলির গতিপ্রবাহ, মহাসাগর ও পর্বতমালার রূপ পরিবর্তনের রেকর্ডেরও প্রতিনিধিত্ব করে। এটিই সম্ভবত

সেই চার যুগ যা কুরআন মাজিদ বর্ণনা করে।এখানে লক্ষণীয় যে, পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের এই চারটি সময়কাল আকাশ, পৃথিবী ও পুরো মহাবিশ্ব সৃষ্টির ছয় সময়কাল থেকে ভিন্ন। সেগুলি অতীত হয়ে গেছে পাঁচ বিলিয়ন বছরেরও অধিককাল পূর্বে যেখানে মহাবিশ্বের বয়স বর্তমানে ১০ বিলিয়ন ।বছরেরও অর্ধেক।

মহাপ্রলয়,নক্ষত্র ও বিপরীত বস্তু

আর আমি (আল্লাহ) নিকটবর্তী আসমানকে সুসজ্জিত করেছি 'মাসাবিহ’ (প্রদীপমালা) দিয়ে। (ফুসসিলাত, ৪১ : ১২, মূলক,৬৭ : ০৫)

উল্লিখিত আয়াতসমূহ নক্ষত্ররাজিকে একটি বিশেষ পারিভাষিক শব্দ ‘মাসাবিহ’-এর মাধ্যমে নির্দেশ করছে। যার অর্থ ‘প্রদীপসমূহ’। এ ক্ষেত্রে চিন্তা করে দেখা উচিত, এটা কি নক্ষত্ররাজির কেবল এক বাহ্যিক বর্ণনা নাকি কুরআন মাজিদ আমাদেরকে নক্ষত্রসমূহের আনবিক ও রাসায়নিক প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে? মহাকাশ বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক উনড়বয়ন, বিশেষত বিগত দুই দশকের অগ্রগতি দেখিয়েছে যে, নক্ষত্রগুলিতে এক ধরনের জ্বালানি জ্বলে আলো ও তাপ বিকিরণ করে, যেমনটি হয়ে থাকে একটি প্রদীপে। এটা এখন জ্ঞাত বিষয় যে, নক্ষত্রগুলো অসংখ্য অণুর সমন্বয়ে গঠিত। এই অণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেক্ট্রনগুলো আবর্তিত হয়। ফলে নক্ষত্রগুলির রয়েছে একটি নির্দিষ্ট Volume। আরও আছে বিচ্ছুরিত আলো ও শক্তি। একটি নক্ষত্রের মৃত্যু মানে তার সেই আলোর শক্তি নিঃশেষিত হওয়া, যা তার Volume নিয়ন্ত্রণ করে। মহাকাশে দুই ধরনের মহাকাশীয় অবস্থান রয়েছে। যাদের নাম ‘শুভ্র গহ্বর’ বা কাউসার এবং কৃষ্ণ গহ্বর। প্রথমটি অভাবনীয় পরিমাণ শক্তির উৎস। পরবর্তী অবস্থানটি হল সেই শূন্যস্থান যা নক্ষত্রের মৃত্যুর ফলে সৃষ্টি হয়। যখন কোনো নক্ষত্রের মৃত্যু হয় তখন তা তার মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সংকুচিত হয়ে যায়। মৃত নক্ষত্রটি আয়তনে যত বড় হয়, তার মধ্যাকর্ষীয় সংকোচন ততই নিবিড় হয়, এমনকী তা তার নিউক্লিয় স্তরে গিয়েই ক্ষান্ত হয় না; বরং আরো সংকুচিত হয়ে এমন এক অবস্থায় উপনীত হয়, যাকে বলা হয় Singularity. এটি একটি কৃষ্ণ গহ্বর তৈরি করে যা কোনোভাবেই দেখা যায় না। নক্ষত্রের আলো বিচ্ছুরণ এবং পতনের সমগ্র প্রক্রিয়া নির্ভর করে তার শক্তির মাত্রা বা Energy Level-এর ওপর। এটিকে সেই কারণ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে,যার ফলে কুরআন এগুলিকে ‘প্রদীপসমূহ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

বিপরীত বস্তুর উপস্থিতিঃ

"পবিত্র ও মহান সে সত্তা যিনি সবকিছু জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন,পৃথিবী যা উৎপন্ন করে তা থেকে, তাদের (মানুষের) নিজেদেরমধ্য থেকে এবং সেসব কিছু থেকেও যা তারা জানে না।"(ইয়াসিন,৩৬ : ৩৬)

বলার অপেক্ষা রাখে না, পৃথিবী বিভিন্ন খনিজ পদার্থ উৎপাদন করে। বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, প্রত্যেক খনিজ পদার্থই হয়ত ধনাত্মক কিংবা ঋনাত্মক আধান (Charge) বিশিষ্ট অতি পারমাণবিক কণিকা দ্বারা গঠিত। কুরআন মাজিদে এই সত্যটি অবতীর্ণ হয়েছে এই বলে, পৃথিবী থেকে উৎপাদিত সকল বস্তুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। খনিজ পদার্থের পাশাপাশি এমনকি পানিও যা পৃথিবী উৎপাদন করে, তাও বিপরীতধর্মী যৌগমূল দ্বারা গঠিত। পানি গঠিত হয় দুটি বিপরীতধর্মী উপাদনা দ্বারা। একটি ধনাত্মক উপাদানবিশিষ্ট হাইড্রোজেন অনু এবং অপরটি ঋনাত্মক উপাদানবিশিষ্ট অক্সিজেন অনু। অধিকন্তু পৃথিবী থেকে উৎপন্ন জোড়া জোড়া বস্তুসমূহ আরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে সেসব সমজাতীয় জোড়া, যা তাদের দৈহিক ও রাসায়নিক ধর্মের ক্ষেত্রে ভিনড়ব ভিনড়ব। যেমন- ধাতু ও অধাতু। অনুরূপ বিপরীতধর্মী উপাদানবিশিষ্ট জোড়া যেমন, ধনাত্মক ও ঋনাত্মক উপাদানবিশিষ্ট আয়ন থেকে ধনাত্মক ও ঋনাত্মক বৈদ্যুতিক উপাদানসমূহ চৌম্বকীয় বিপরীতধর্মী জোড়া, যেমন- চুম্বকের উত্তরপ্রান্ত ও দক্ষিণপ্রান্ত, আকর্ষণ ও বিকর্ষণ শক্তি, তেমনিভাবে কেন্দ্রনির্গত শক্তির মাধ্যমে মধ্যাকর্ষণ ভারসাম্য ইত্যাদি। মানবিক জোড়ার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে- পুরুষ ও মহিলার লিঙ্গভেদ, পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব প্রকাশক গুণ, যেমন- নিষ্ঠুরতা ও পরদুঃখ কাতরতা, সাহস ও ভয়, উদারতা ও কৃপণতা ইত্যাদি। অতঃপর যে কেউ সহজে উপসংহারে আসতে পারে যে, জোড়ার রহস্য পুরুষ ও মহিলা কিংবা বিপরীত বৈদ্যুতিক উপাদান ও বিপরীতধর্মী গুণ মানব জাতিসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক বিষয় ও শক্তিসমূহের মধ্যে বিদ্যমান।

মহাপ্রলয়ঃ

আর (যখন) শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। আসমানসমূহে (মহাশূন্যে) যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলে বেহুঁশ হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ তাআলা যাদেরকে ইচ্ছে করেন। অতঃপর আবার যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। (যুমার, ৩৯ : ৬৮)

ভ্রূণতত্ত্ব

"আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরুপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে একটি নতুনরুপে দাড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টি কর্তা কতই না কল্যাণময়।" (সূরা মু’মিনুন: ১২-১৪)

আরবী ” الْعَلَقَةَ ” (আলাকা) শব্দের তিনটি অর্থ রয়েছে।

১. জোক

২. সংযুক্ত জিনিস

৩. রক্তপিন্ড

আমরা যদি জোককে গর্ভস্থ সন্তানের সাথে মেলাতে যাই তাহলে,আমরা দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পাই। নিচের ১ নং ছবিতে সেটা স্পষ্ট। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮) এ অবস্থায় জোক যেমন অন্যের রক্ত খায় তেমনি উক্ত ভ্রুন তার মায়ের রক্ত খেয়ে বেচে থাকে। (কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য পৃষ্ঠা-৩৬)

দ্বিতীয় অর্থের আলোকে আমরা যদি তাকে “সংযুক্ত জিনিস” অর্থে নিই তাহলে দেখতে পাই যে,গর্ভস্থ ভ্রুন মায়ের গর্ভের সাথে লেপ্টে আছে। (২নং ও ৩ নং চিত্র দ্রষ্টব্য)

তৃতীয় অর্থের আলোকে আমরা উক্ত শব্দের “রক্তপিন্ড” অর্থ গ্রহণ করলে দেখতে পাব যে, তার বাহ্যিক অবস্থা ও তার সংরক্ষিত খাচা (আবরণ) রক্ত পিন্ডের মতই দেখায়। উক্ত অবস্থায় এখানে প্রচুর পরিমাণ রক্ত বর্তমান থাকে।(কুরআন-হাদীসের আলোকে মানব দেহের প্রবৃদ্ধি –মুর ও অন্যান্য পৃষ্ঠা-৩৭ ও ৩৮) (৪র্থ চিত্র দ্রষ্টব্য)

এতদসত্বেও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এই রক্ত সঞ্চালিত হয় না। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ,পৃষ্ঠা-৬৫) সুতরাং, বলা যায়- এ অবস্থা রক্তপিন্ডের মতই।

উক্ত “আলাকা” শব্দের তিনটি অর্থের সাথেই ভ্রুনের বিভিন্ন স্তরের গুণাবলী হুবহু মিলে যাচ্ছে।

কুরআন শরীফের আয়াতে উল্লেখিত ভ্রুনের ২য় স্তর হল-” مُضْغَةً” (মুদগাহ)। مُضْغَةً হল চর্বিত দ্রব্য। যদি কেউ ১ টুকরা লোবান নিয়ে দাতে চর্বন করার পর তাকে ভ্রুনের সাথে তুলনা করতে যায় তাহলে, দেখতে পাবে দাতে চর্বন করার পর উক্ত দ্রব্য যেমন দেখায় সেটার সাথে ভ্রুনের হুবহু মিল রয়েছে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮)

৬৭৭ খৃষ্টাব্দে হাম ও লিউয়েনহোক নামক দুই বিজ্ঞানী মাইক্রোস্কোপ দিয়ে মানুষের বীর্যের মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব (Spermatozoma) খুজে পান রাসুল(সাঃ) এর যুগের এক সহস্রাধিক বছর পর। এ দুইজন বিজ্ঞানীই আগে ভূলক্রমে বিশ্বাস করেছিলেন যে, মানুষের বীর্যের মধ্যে উক্ত কোষের রয়েছে অতি সামান্য প্রক্রিয়া। নারীর ডিম্বানুতে আসার পর তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৯)

আর প্রফেসর কেইথ এল. মুর বিশ্বের একজন প্রসিদ্ধ ভ্রুন বিজ্ঞানী এবং “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি” গ্রন্থের লেখক;যা বিশ্বের আটটি ভাষায় ছাপা হয়েছে।এটা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই।এ বইটি আমেরিকার বিশিষ্ট্য একটি গবেষণা বোর্ড কর্তৃক কোন একক লেখকের শ্রেষ্ঠ বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

কেইথ এল.মুর হচ্ছেন কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিদ্যা ও কোষ বিভাগের প্রফসর।তিনি ওখানে মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টের অধীনে মৌলিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী ডীন হিসেবে এবং আট বছর শরীরবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি কানাডায় শরীরবিদ্যা বিভাগের উপর কৃতিত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রাখার জন্য কানাডার শরীরবিদ্যা বোর্ডের পক্ষ থেকে J.C.B পুরস্কার পেয়েছিলেন।এছাড়া তিনি “কানাডিয়ান এন্ড এমেরিকান এসোসিয়শন এবং দি কাউন্সিল অফ দি ইউনিয়ন অফ বাইয়োলজিকাল সাইন্স” সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৮১ সালে সউদীর দাম্মামে অনুষ্ঠিত এক মেডিক্যাল সেমিনারে তিনি বলেন:আমার জন্য এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল যে, আমি মানব শরীরের প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে ভালোভাবে জানতে কুরআন শরীফের সহায়তা নিতাম।আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে,এ বিষয়গুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ (সাঃ)এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।কেননা,এ সকল বিষয়ের প্রায় সব কিছুই তার ইন্তেকালের কয়েকশত বছর পর আবিষ্কৃত হয়েছে।এ ব্যাপারটি প্রমাণ করে যে, মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহ তায়ালার সত্য নবী।(“হাজিহী হিয়াল হাকিকাহ তথা এটাই সত্য” নামক ভিডিও ডকুমেন্টারী থেকে সংগৃহীত)

এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হল- তাহলে কি এর অর্থ দাঁড়ায়-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী? তিনি জবাব দিলেন:”আমি এ কথা মেনে নিতে কুন্ঠাবোধ করি না।”

প্রফেসর মুর একটি কনফারেন্সে বলেছিলেন:”কুরআন ও হাদীসে মানবভ্রুনের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সময়কার বিভিন্ন স্তরকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিভিন্ন নামে ভাগ করেছে।”এর পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত চমৎকার ও বিস্তৃত অর্থ নির্দেশ করে থাকে।যা আধুনিক শরীর বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের সাথে সংগতিপূর্ণ।বিগত চার বছরে সপ্তম শতাব্দীতে নাযিলকৃত কুরআন ও হাদীসের আলোকে মানবভ্রুন নিয়ে গবেষণা করে বিস্ময়কর ফলাফল পাওয়া গেছে।

এরিস্টোটল ভ্রুন বিদ্যার জনক হওয়া সত্বেও খৃষ্টপুর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মুরগীর ডিমের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে,মুরগীর বাচ্চার সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় কয়েকটি স্তরে।তবে, তিনি স্তরগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেন নি।ধরে নেয়া যায় যে,কুরআন নাযিলের সময় খুব কমই জানা ছিল ভ্রুনের স্তরগুলো সম্বন্ধে;যা সপ্তম শতাব্দীতে বিজ্ঞানের কোন কিছুর উপর নির্ভর করে তা জানার সুযোগ ছিল না।