আলবার্ট আইনস্টাইন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Ashiq Shawon (আলোচনা | অবদান)
Wakim32-এর করা 3077056 নং সংস্করণে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে। (টুইং)
ট্যাগ: পূর্বাবস্থায় ফেরত
২৯ নং লাইন:
 
== জীবনী ==
প্রখর বুদ্ধি এবং মেধাসম্পন্ন কাউকে বোঝাতে "আইন্সটাইন" শব্দটি ব্যাবহার করা হয়। যেমন:- মিলন দেবনাথ (আলবার্ট আইন্সটাইন)[বাংলা দেশে বসবাসকারী ক্ষুদে বিজ্ঞানী,তার ইচ্ছা বড় হয়ে আলবার্ট আইন্সটাইনের মত মেধাবী বিজ্ঞানী হওয়া।]
=== বাল্যকাল ও প্রাথমিক শিক্ষা ===
তিনি বলেছেন"ধর্ম ছাড়া যে বিজ্ঞান সেটা হল পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া যে ধর্ম সেটা হল অন্ধ"। আইনস্টাইন [[১৮৭৯]] সালের (ঊনবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী [[জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল]]-এর মৃত্যুর বছর) [[মার্চ ১৪|১৪ মার্চ]] [[উল্‌ম]] শহরে জন্মগ্রহণ করেন।তারকরেন।<ref name="Bio">{{cite web|url=http://nobelprize.org/nobel_prizes/physics/laureates/1921/einstein-bio.html|title=Albert Einstein&nbsp;– Biography|accessdate=7 March 2007|publisher=[[Nobel Foundation]]|archiveurl=https://web.archive.org/web/20070306133522/http://nobelprize.org/nobel_prizes/physics/laureates/1921/einstein-bio.html|archivedate=6 March 2007 <!--DASHBot-->|deadurl=no|date=|website=|last=|first=|language=ইংরেজি}}</ref> তার শৈশব কাটে [[মিউনিখ|মিউনিখে]]। আইনস্টাইনের বাবা-মা ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ মধ্যবিত্ত [[ইহুদি]]। বাবা হেরমান আইনস্টাইন মূলত পাখির পালকের বেড তৈরি ও বাজারজাত করতেন। পরবর্তীতে তিনি মিউনিখে একটি তড়িৎ যন্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থাপন করে মোটামুটি সফলতা পান। এই কোম্পানির নাম ছিল ''Elektrotechnische Fabrik J. Einstein & Cie'' যা মিউনিখের Oktoberfest-কে প্রথম বিদ্যুতায়িত করে এবং Schwabing-কে প্রথম বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে সংযুক্ত করে। তার মা পলিন কখ পরিবারের অভ্যন্তরীণ সব দায়িত্ব পালন করতেন। তার এক বোন ছিল যার নাম মাজা। আইনস্টাইনের জন্মের দুই বছর পর তার জন্ম হয়। ছোটবেলায় দুইটি জিনিস তার মনে অপার বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। প্রথমত পাঁচ বছর বয়সে একটি [[কম্পাস]] হাতে পান এবং তার ব্যবহার দেখে বিস্মিত হন। অদৃশ্য শক্তির কারণে কিভাবে কম্পাসের কাঁটা দিক পরিবর্তন করছে ? তখন থেকে আজীবন অদৃশ্য শক্তির প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ ছিল।<ref>{{বই উদ্ধৃতি | first =P. A. | last = Schilpp (Ed.) | title = Albert Einstein - Autobiographical Notes| pages = 8–9 | publisher = Open Court | year = 1979}}</ref> এরপর ১২ বছর বয়সে তিনি জ্যামিতির একটি বইয়ের সাথে পরিচিত হন। এই বইটি অধ্যয়ন করে এত মজা পেয়েছিলেন যে একে আজীবন "পবিত্র ছোট্ট জ্যামিতির বই" বলে সম্বোধন করেছেন।<ref name=HarvChemAE/> আসলে বইটি ছিল [[ইউক্লিড|ইউক্লিডের]] [[এলিমেন্ট্‌স]]। তার প্রথম স্কুল ছিল ক্যাথলিক এলিমেন্টারি স্কুল। বাকপটুতা না থাকলেও তিনি এলিমেন্টারি স্কুলের সেরা মেধাবী ছাত্র ছিলেন।<ref>{{Citation | last = Rosenkranz | first = Ze'ev | year = 2005 | title = Albert Einstein — Derrière l'image | page = 29 | publisher = Editions NZZ, Zürich | id = {{আইএসবিএন|3-03823-182-7}} }}</ref>
 
[[চিত্র:Albert Einstein as a child.jpg|thumb|left|200px|১৮৯৩ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন (১৪ বছর বয়স)। পরিবার ইতালিতে চলে যাবার আগে তোলা।]]
১২ বছর বয়সে আইনস্টাইন হঠাৎ বেশ ধার্মিক হয়ে উঠেছিলেন। স্রষ্টারগুণকীর্তণ করে বিভিন্ন গান ও পঙক্তি আয়ত্ত করেছিলেন স্কুলে। তার কথা বলার ক্ষমতা খুব একটা ছিল না, তথাপি স্কুলে বেশ ভালো ফলাফল করেছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়ার পর থেকে তার ধর্মীয় চেতনা কমে যেতে থাকে। কারণ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাথে তার ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরোধ লেগে যাচ্ছিলো। আর বিজ্ঞানের তত্ত্বগুলো ছিল নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত। এহেন অবস্থায় তৎকালীন ইহুদি নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায়তনের কর্তৃপক্ষ তার উপর বিশেষ সন্তুষ্ট ছিল না। মা'র আগ্রহে মাত্র ৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন বেহালা হাতে নেন। বেহালা বাজানো খুব একটা পছন্দ করতে পারেন নি, তাই তখন তা ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি [[মোৎসার্ট|মোৎসার্টের]] বেহালার সুরের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি এ সময় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিজে নিজে তৈরি করে অন্যদের দেখাতেন। এ সময় থেকেই গণিতের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ও মেধার পরিচয় পাওয়া যায়।
 
[[লুইটপোল্ড জিমনেসিয়াম|লুইটপোল্ড জিমনেসিয়ামে]] প্রুশীয় ধরনের শিক্ষা ও আচারের প্রতি তিনি উদাসীন হয়ে যান, তাল মেলাতেও পেরে উঠেন নি। সেই শিক্ষা সৃজনশীলতা ও মৌলিকত্ব নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এক শিক্ষক অবশ্য আইনস্টাইনকে বলেই বসেছিলেন যে তাকে দিয়ে মহৎ কিছু হবে না। সেই সময়ে তার উপর ''মাক্স টালমুড'' নামক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক ছাত্রের বিশেষ প্রভাব পড়েছিল। তাদের বাসায় মাঝে মাঝেই সে নিমন্ত্রণ খেতে যেতো। এভাবে এক সময় আইনস্টাইনের অঘোষিত প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।<ref name=HarvChemAE>Dudley Herschbach, "Einstein as a Student," Department of Chemistry and Chemical Biology, Harvard University, Cambridge, MA, USA, page 3, web: [http://www.chem.harvard.edu/herschbach/Einstein_Student.pdf HarvardChem-Einstein-PDF]: about Max Talmud visited on Thursdays for 6 years.</ref> টালমুড তাকে উচ্চতর গণিত ও দর্শন বিষয়ে দীক্ষা দিত। ১৬ বছর বয়সে তিনি এক বিশেষ বিষয়ে মনোযোগী হয়ে উঠেন। এর আগে টালমুড তাকে ''অ্যারন বার্নস্টাইন'' লিখিত শিশু বিজ্ঞান সিরিজের (Naturwissenschaftliche Volksbucher, [[১৮৬৭]]-[[১৮৬৮|৬৮]]) সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। এই বইয়ে লেখক বিদ্যুতের সাথে ভ্রমণ তথা একটি টেলিগ্রাফ তারের ভিতর দিয়ে চলাচলের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। আইনস্টাইন তখন নিজেকে প্রশ্ন করেন, এভাবে যদি আলোর সাথে ভ্রমণ করা যেত তাহলে কি ঘটত? এই প্রশ্নটি পরবর্তী ১০ বছর তার মনে ঘুরপাক খেতে থাকে। তিনি ভেবে দেখেন, আলোর সাথে একই গতিতে ভ্রমণ করলে আলোকে স্থির দেখা যাবে, ঠিক যেন জমাটবদ্ধ [[তরঙ্গ]]। আলো যেহেতু তরঙ্গ দিয়ে গঠিত সেহেতু তখন স্থির আলোক তরঙ্গের দেখা দিবে। কিন্তু স্থির আলোক তরঙ্গ কখনও দেখা যায়নি বা দেখা সম্ভব নয়। এখানেই একটি হেয়ালির জন্ম হয় যা তাকে ভাবিয়ে তোলে। টালমুডই তাকে ইউক্লিডের এলিমেন্টস এবং [[ইমানুয়েল কান্ট|ইমানুয়েল কান্টের]] ক্রিটিক অফ পিউর রিজন বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। এলিমেন্ট্‌স পড়ে আইনস্টাইন অবরোহী কারণ অনুসন্ধান প্রক্রিয়া জানতে পারেন। স্কুল পর্যায়ে ইউক্লিডীয় [[জ্যামিতি]] আয়ত্ত করার পর তিনি [[ক্যালকুলাস|ক্যালকুলাসের]] প্রতি মনোযোগী হন। আইনস্টাইনের বাবা চেয়েছিলেন ছেলে তড়িৎ প্রকৌশলী হবে, কিন্তু তিনি বিশুদ্ধ জ্ঞানের প্রতিই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
তিনি একজন মহান বিজ্ঞানী।
 
=== দেশত্যাগ ===
আইনস্টাইনের বয়স যখন ১৫ তখন তার বাবা প্রতিনিয়ত ব্যবসায় ক্ষতির শিকার হতে থাকেন। এ সময় তার কোম্পানি মিউনিখ শহরের বিরাট অংশকে বিদ্যুতায়িত করার মত একটি লাভজনক চুক্তি স্থাপনে ব্যর্থ হয়। অগত্যা হেরমান সপরিবারে [[ইতালি|ইতালির]] [[মিলান|মিলানে]] পাড়ি জমান। সেখানে এক আত্মীয়ের সাথে কাজ শুরু করেন। মিলানের পর কয়েক মাস তারা [[পাভিয়া]]-তে থাকেন। সে সময়েই আইনস্টাইন জীবনের প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র লিখেন যার নাম "চৌম্বক ক্ষেত্রে ইথারের অবস্থা সংক্রান্ত অনুসন্ধান" (The Investigation of the State of Aether in Magnetic Fields)।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি
| last =Mehra
| first =Jagdish
| authorlink =
| coauthors =
| title =Albert Einstein's first paper
| work =
| publisher =
| date =
| url =http://www.worldscibooks.com/phy_etextbook/4454/4454_chap1.pdf
| accessdate = 2007-03-04}}
</ref> বাবা তাকে মিউনিখের একটি বোর্ডিং হাউজে রেখে গিয়েছিলেন পড়াশোনা শেষ করার জন্য। একা একা তার জীবন দুঃসহ হয়ে উঠে। একে [[শিক্ষা প্রতিষ্ঠান|স্কুলের]] একঘেয়ে পড়াশোনা তার উপর ১৬ বছর বয়স হয়ে যাওয়ায় সামরিক দায়িত্ব পালনের চাপ তাকে হাপিয়ে তোলে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মাত্র ৬ মাস পরেই তাই মিউনিখ ছেড়ে পাভিয়াতে তার বাবা-মার কাছে চলে যান। হঠাৎ একদিন দরজায় আলবার্ট উপস্থিত দেখে তারা বেশ বিস্মিত হয়েছিলেন। তার উপর স্কুলের চাপের বিষয়টি বাবা-মা বুঝতে পারেন। ইতালিতে তাকে কোন স্কুলে ভর্তি করাননি তারা। তাই মুক্ত জীবন কাটাতে থাকেন আইনস্টাইন। তার যোগ্যতা খুব একটা আশাব্যঞ্জক বলে কারও মনে হয়নি। ডাক্তারের চিকিৎসাপত্রের অজুহাত দেখিয়ে তিনি স্কুল থেকে চলে এসেছিলেন।
[[চিত্র:Home Albert Einstein 1895.jpg|thumb|right|200px|আরাউতে উইন্টেলারদের বাড়ি। যেখানে থেকে আইনস্টাইন স্কুল শিক্ষা শেষ করেন।]]
 
=== জুরিখের দিনগুলি ===
এসময় আইনস্টাইনের একটি সুযোগ আসে। তিনি [[সুইজারল্যান্ড|সুইজারল্যান্ডের]] [[জুরিখ|জুরিখে]] অবস্থিত Eidgenössische Polytechnische Schule (সুইজ ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুল, [[১৯০৯|১৯০৯ সালে]] একে বিবর্ধিত করে পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল এবং [[১৯১১|১৯১১ সালে]] নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল Eidgenössische Technische Hochschule তথা সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা [[ইটিএইচ জুরিখ]]) নামক প্রতিষ্ঠানে ভর্তির একটি সুযোগ পান। সেখানে কেবল ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেই তাকে নিয়ে নেয়ার কথা জানানো হয়। যদিও তার হাই স্কুল বা সমমানের কোন ডিগ্রি ছিলনা। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ফলাফল দিলে দেখা যায়, তিনি [[পদার্থবিজ্ঞান]] ও গণিতে ভাল করেছেন, কিন্তু অকৃতকার্য হয়েছেন [[ফরাসি ভাষা]], [[রসায়ন]] এবং [[জীববিজ্ঞান|জীববিজ্ঞানে]]। গণিতে অনেক ভাল করার জন্য তাকে পলিটেকনিকে ভর্তি করে নেয়া হয় এক শর্তে, তাকে সাধারণ স্কুলের পর্যায়গুলো অতিক্রম করে আসতে হবে। যেই কথা সেই কাজ। তিনি সুইজারল্যান্ডের আরাইতে জস্ট উইন্টেলার কর্তৃক পরিচালিত একটি বিশেষ ধরনের স্কুলে ভর্তি হন এবং [[১৮৯৬|১৮৯৬ সালে]] সেখান থেকে স্নাতক হন। সেখানে তিনি মূলত [[ম্যাক্সওয়েলের তাড়িতচৌম্বক তত্ত্ব]] নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। একই সময়ে সামরিক দায়িত্ব পালন এড়ানোর জন্য তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন, এ ব্যাপারে তার বাবার স্মতি ছিল। এরপর প্রায় ৫ বছর তিনি কোন দেশেরই নাগরিক ছিলেননা। [[১৯০১]] সালের [[ফেব্রুয়ারি ২১|২১ ফেব্রুয়ারি]] [[সুইজার‌ল্যান্ড|সুইজার‌ল্যান্ডের]] নাগরিকত্ব লাভ করেন যা তিনি কখনই ত্যাগ করেননি।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | title= Einstein's nationalities at einstein-website.de | url=http://www.einstein-website.de/z_information/variousthings.html#national | accessmonthday=4 October | accessyear=2006 }}</ref>
 
উইন্টেলার পরিবারের সাথে আইনস্টাইন ও তার পরিবারের বিশেষ সক্ষ্যতা গড়ে উঠেছিল। উইন্টেলারের মেয়ে Sofia Marie-Jeanne Amanda Winteler (ডাকনাম মেরি) ছিল তার প্রথম প্রেম। কিন্তু, ইটিএইচ জুরিখে গণিত অধ্যয়নের সময় মেরি শিক্ষকতার জন্য ওল্‌সবার্গে চলে যায়। তার ছোট বোন মাজা উইন্টেলারের ছেলে পলকে বিয়ে করেছিল<ref>Ibid.</ref> এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিশেল বেসো তাদের বড় মেয়ে আনাকে বিয়ে করেছিল। জুরিখের দিনগুলি তার খুব সুখে কেটেছিল। সেখানে অনেক বন্ধুর দেখা পান যাদের সাথে তার ভাল সময়ে কেটেছে। যেমন গণিতজ্ঞ মার্সেল গ্রসম্যান এবং বেসো যার সাথে তিনি স্থান-কাল নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করতেন। সেখানেই তার সাথে [[মিলেভা মেরিক|মিলেভা মেরিকের]] দেখা হয়। মিলেভা [[সার্বিয়া]] থেকে আগত পদার্থবিজ্ঞানের ফেলো ছাত্রী ছিল। প্রকৃতপক্ষে মিলেভা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একমাত্র ছাত্রী। তাদের বন্ধুত্ব প্রেমে গড়ায় এবং এই মিলেভাকেই পরবর্তীকালে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন সন্তানের জন্ম হয়। আইনস্টাইনের মা অবশ্য চেহারা বেশী ভাল না থাকা, অ-[[ইহুদি]] এবং বয়স্ক হওয়ার কারণে মিলেভাকে প্রথমে পছন্দ করেননি।<ref>{{Citation | author = Oregon Public Broadcasting | year = 2003 | url = http://www.pbs.org/opb/einsteinswife/ | title = Einstein's Wife: The Life of Mileva Maric Einstein | publisher =Public Broadcasting Service | access-date = 2006-11-8}} This web site, companion to the controversial Geraldine Hilton documentary of the same name, is currently under review for historical accuracy. (See {{Citation | last=Getler | first=Michael | date=December 15, 2006 | journal=PBS Ombudsman | title=Einstein’s Wife: The Relative Motion of ‘Facts’ | url=http://www.pbs.org/ombudsman/2006/12/einsteins_wife_the_relative_motion_of_facts.html | access-date=2007-03-25}}.)</ref> তাদের কন্যা Lieserl Einstein-এর জন্ম হয় [[১৯০২]] সালে তাদের বিয়ের আগে।<ref>This conclusion is from Einstein's correspondence with Marić. Lieserl is first mentioned in a letter from Einstein to Marić (who was abroad at the time of Lieserl's birth) dated February 4, 1902 (''Collected papers'' Vol. 1, document 134).</ref> অল্প বয়সেই সে মারা যায়। কারণ সম্বন্ধে সঠিক জানা যায়নি। আইনস্টাইন [[১৯০০|১৯০০ সালে]] ইটিএইচ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বের হন। এ সময় [[মিশেল বেসো]] তাকে [[আর্নস্ট মাখ]]-এর লেখার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এর পর পরই তার গবেষণাপত্র ''Annalen der Physik'' প্রকাশিত হয় যার বিষয় ছিল নলের মধ্য দিয়ে [[কৈশিক বল]]।
 
=== পেটেন্ট অফিস ===
 
স্নাতক হবার পর আইনস্টাইন শিক্ষকতার কোন চাকরি খুঁজে পাননি। প্রায় ২ বছর চাকরির জন্য ঘোরাঘুরি করেন। ২ বছর পর তার প্রাক্তন এক সহপাঠীর বাবা তাকে [[বার্ন|বার্নের]] এক দপ্তরে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। সেটি ছিল ফেডারেল অফিস ফর ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি নামক একটি পেটেন্ট অফিস। তার চাকরি ছিল সহকারী পরীক্ষকের।<ref>Now the {{ওয়েব উদ্ধৃতি | title=Swiss Federal Institute of Intellectual Property | url=http://www.ipi.ch/E/institut/i1.shtm|accessmonthday=16 October |accessyear= 2006 }}. See also their {{ওয়েব উদ্ধৃতি | title=FAQ about Einstein and the Institute|url=http://www.ipi.ch/E/institut/i1094.shtm}}</ref> তার দায়িত্ব ছিল, আগত পেটেন্টগুলোকে তাড়িতচৌম্বক যন্ত্রের জন্য পরীক্ষা করা। [[১৯০৩|১৯০৩ সালে]] সুইস পেটেন্ট অফিসে তার এই চাকরি স্থায়ী হয়ে যায়। অবশ্য যন্ত্রের কলা-কৌশল বিষয় পূর্ণ দক্ষতা অর্জন না করা পর্যন্ত তার পদোন্নতি হবেনা বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।<ref name="GalisonClocks">[[Peter Galison]], "Einstein's Clocks: The Question of Time" ''Critical Inquiry'' 26, no. 2 (Winter 2000): 355–389.</ref>
 
আইনস্টাইনের কলেজ সহপাঠী মিশেল বেসোও এই পেটেন্ট অফিসে কাজ করতো। তারা দুজন অন্য বন্ধুদের সাথে বার্নের এক জায়াগায় নিয়মিত মিলিত হতেন। তাদের মিলিত হবার উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞান এবং দর্শন বিষয়ে আলোচনা করা, এভাবে একটি ক্লাবের জন্ম হয়। কৌতুকভরে তারা এই ক্লাবের নাম দিয়েছিলেন "[[অলিম্পিয়া একাডেমি|দ্য অলিম্পিয়া একাডেমি]]"। সেখানে তারা সবচেয়ে বেশী যাদের লেখা পড়তেন তারা হলেন, [[অঁরি পয়েনকেয়ার]], [[আর্নস্ট মাখ]] এবং [[ডেভিড হিউম]]। এরাই মূলত আইনস্টাইনের বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক চিন্তাধারায় সবচেয়ে বেশী প্রভাব ফেলেছিল।<ref name="GalisonClocksMaps">{{বই উদ্ধৃতি
| last = Galison
| first = Peter
| authorlink = Peter Galison
| title = Einstein's Clocks, Poincaré's Maps: Empires of Time
| publisher = W.W. Norton
| location = New York
| year = 2003
| isbn = 0393020010 }}</ref>
 
সাধারণ বিশেষজ্ঞ এবং ইতিহাসবিদরা মনে করেন পেটেন্ট অফিসের দিনগুলিতে আইনস্টাইনের মেধার অপচয় হয়েছে। কারণ পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে তার আগ্রহের সাথে এই চাকরির কোন সংযোগ ছিলনা এবং ‌এ সময়ে তিনি অনেক এগিয়ে যেতে পারতেন।<ref>E.g. {{Citation | last = Pais | first = Abraham | author-link = Abraham Pais | year = 1982 | title = Subtle is the Lord. The Science and the Life of Albert Einstein | publisher = Oxford University Press | page = 17 | id = {{আইএসবিএন|0-19-520438-7}} }}</ref> কিন্তু বিজ্ঞান ইতিহাসবিদ [[পিটার গ্যালিসন]] এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তার মতে, সেখানে অবস্থানকালীন কাজকর্মের সাথে আইনস্টাইনের পরবর্তী জীবনের আগ্রহের বিষয়গুলোর যোগসূত্র রয়েছে। যেমন, পেটেন্ট অফিসে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তিনি বৈদ্যুতিক সংকেতের সঞ্চালন এবং সময়ের বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক সামঞ্জস্য বিধান বিষয়ে কিছু গবেষণা করেছিলেন। তখন সঙ্কালিক সময় বিষয়ক চিন্তাধারায় দুটি প্রধান কৌশলগত সমস্যা ছিল। এই সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা করতে গিয়েই সে সময়ে তিনি আলোর প্রকৃতি এবং স্থান ও কালের মধ্যে মৌলিক যোগসূত্র বুঝতে পেরেছিলেন।<ref name="GalisonClocks"/><ref name="GalisonClocksMaps"/>
 
আইনস্টাইন [[১৯০৩|১৯০৩ সালের]] [[৬ জানুয়ারি]] মিলেভা মেরিককে বিয়ে করেন। তাদের সম্পর্কটি শুধুমাত্র আবেগকেন্দ্রিক ছিলনা, তাতে যথেষ্ট পরিমাণ বুদ্ধিবৃত্তিক অংশীদারিত্বের উপাদান মিশে ছিল। তাই পরবর্তীকালে তিনি মিলেভা সম্বন্ধে বলেছলেন, "মিলেভা এমন এক সৃষ্টি যে আমার সমান এবং আমার মতই শক্তিশালী ও স্বাধীন"। এরিক তার গবেষণাকর্মে কি ভূমিকা রেখেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অবশ্য অধিকাংশ ইতিহাসবিদই মনে করেন আইনস্টাইনের গবেষণাকর্মে মেরিকের বড় কোন ভূমিকা ছিলনা।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | title= Arguing about Einstein's wife (April 2004) - Physics World - PhysicsWeb (See above) | url= http://physicsweb.org/articles/world/17/4/2 | accessmonthday=21 November | accessyear=2005 |author=Alberto A Martínez }}</ref> [[১৯০৪|১৯০৪ সালের]] [[১৪ মে]] আলবার্ট এবং মিলেভার প্রথম পুত্রসন্তান [[হ্যান্স আলবার্ট আইনস্টাইন|হ্যান্স আলবার্ট আইনস্টাইনের]] জন্ম হয়। তাদের দ্বিতীয় পুত্র [[এডওয়ার্ড আইনস্টাইন|এদুয়ার্দ আইনস্টাইনের]] জন্ম হয় [[১৯১০|১৯১০ সালের]] [[২৮ জুলাই]]।
 
=== অ্যানাস মিরাবিলিস গবেষণাপত্র ===
 
{{মূল|অ্যানাস মিরাবিলিস গবেষণাপত্রসমূহ}}
 
[[১৯০৫|১৯০৫ সালে]] পেটেন্ট অফিসে কর্মরত থাকাকলিন সময়ে আইনস্টাইন [[Annalen der Physik]] নামক জার্মান বিজ্ঞান সাময়িকীতে চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তখনও তিনি পেটেন্ট অফিসে কর্মরত ছিলেন। জার্মানির নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রগুলোকে ইতিহাসে [[অ্যানাস মিরাবিলিস গবেষণাপত্রসমূহ]] নামে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে। গবেষণাপত্র চারটির বিষয় ছিল:
* [[আলোক তড়িৎ ক্রিয়া]] - [[আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ সমীকরণ]] প্রতিপাদন।
* [[ব্রাউনীয় গতি]] - আণবিক তত্ত্বের সমর্থন।
* [[তড়িৎগতিবিজ্ঞান]] - [[আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব]] আবিষ্কার।
* [[ভর-শক্তি সমতুল্যতা]] - বিখ্যাত E=mc<sup>2</sup> সূত্র প্রতিপাদন।
 
চারটি গবেষণাপত্র বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিস্ময়কর ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত এবং এগুলোর কারণেই [[১৯০৫|১৯০৫ সালকে]] আইনস্টাইনের জীবনের "চমৎকার বছর" হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অবশ্য সে সময় তার গবেষণাপত্রের অনেকগুলো তত্ত্বই প্রমাণিত হয়নি এবং অনেক বিজ্ঞানীর কয়েকটি আবষ্কারকে ভ্রান্ত বলে উড়িয়ে দেন। যেমন আলোর [[কোয়ান্টা]] বিষয়ে তার মতবাদ অনেক বছর ধরে বিতর্কিত ছিল।<ref>On the reception of relativity theory around the world, and the different controversies it encountered, see the articles in Thomas F. Glick, ed., ''The Comparative Reception of Relativity'' (Kluwer Academic Publishers, 1987), {{আইএসবিএন|90-277-2498-9}}.</ref> ২৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন [[জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে [[পিএইচডি]] ডিগ্রি অর্জন করেন। তার উপদেষ্টা ছিলেন পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক [[আলফ্রেড ক্লাইনার]]। তার পিএইডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল, "আ নিউ ডিটারমিনেশন অফ মলিক্যুলার ডাইমেনশন্‌স" তথা আণবিক মাত্রা বিষয়ে একটি নতুন নিরুপণ।{{harv|Einstein|1905b}}
 
=== পদোন্নতি ও অধ্যাপনা শুরু ===
[[১৯০৬|১৯০৬ সালে]] পেটেন্ট অফিস আইনস্টাইনকে টেকনিক্যাল পরীক্ষকের পদে উন্নীত করে। কিন্তু তিনি তখনও পড়াশোনার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। [[১৯০৮|১৯০৮ সালে]] [[বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়|বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের]] privatdozent হিসেবে যোগ দেন।<ref>{{Citation | last = Pais | first = Abraham | author-link = Abraham Pais | year = 1982 | title = Subtle is the Lord. The Science and the Life of Albert Einstein | publisher = Oxford University Press | page = 522 | id = {{আইএসবিএন|0-19-520438-7}} }}</ref> [[১৯১০|১৯১০ সালে]] তিনি [[ক্রান্তীয় অনচ্ছতা]] বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেন। এতে পরিবেশে একক অণু কর্তৃক বিচ্ছুরিত আলোর ক্রমপুঞ্জিত প্রভাব বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এর মাধ্যমেই আকাশ কেন নীল দেখায় তার রহস্য উন্মোচিত হয়।<ref name="Levenson">Levenson, Thomas. "[http://www.pbs.org/wgbh/nova/einstein/genius/ Einstein's Big Idea]." ''[[Public Broadcasting Service]].'' 2005. Retrieved on [[February 25]], [[2006]].</ref> [[১৯০৯|১৯০৯ সালে]] আরও দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। প্রথমটিতে তিনি বলেন, [[ম্যাক্স প্লাংক|ম্যাক্স প্লাংকের]] শক্তি-কোয়ান্টার অবশ্যই সুনির্দিষ্ট ভরবেগ থাকতে হবে এবং তা একটি স্বাধীন বিন্দুবৎ কণার মত আচরণ করবে। এই গবেষণাপত্রেই [[ফোটন]] ধারণাটির জন্ম হয়। অবশ্য ফোটন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন [[গিলবার্ট এন লুইস]] [[১৯২৬|১৯২৬ সালে]]। তবে আইনস্টাইনের গবেষণায়ই ফোটনের প্রকৃত অর্থ বোঝা যায় এবং এর ফলে [[কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান|কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে]] [[তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা]] বিষয়ক ধারণার উৎপত্তি ঘটে। তার অন্য গবেষণাপত্রের নাম ছিল "Über die Entwicklung unserer Anschauungen über das Wesen und die Konstitution der Strahlung" (বিকিরণের গাঠনিক রূপ এবং আবশ্যকীয়তা সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন) যা আলোর [[কোয়ান্টায়ন]] বিষয়ে রচিত হয়।
 
[[১৯১১|১৯১১ সালে]] [[জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়|জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের]] সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন আইনস্টাইন। অবশ্য এর পরপরই [[চার্লস ইউনিভার্সিটি অফ প্রাগ|চার্লস ইউনিভার্সিটি অফ প্রাগে]] পূর্ণ অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন। [[প্রাগ|প্রাগে]] অবস্থানকালে আলোর উপর [[মহাকর্ষ|মহাকর্ষের]] প্রভাব বিশেষত [[মহাকর্ষীয় লাল সরণ]] এবং আলোর মহাকর্ষীয় ডিফ্লেকশন বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেন। এর মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা [[সূর্যগ্রহন|সূর্যগ্রহনের]] ([[:en:Solar eclipse|Solar eclipse]]) সময় আলোর ডিফ্লেকশনের কারণ খুঁজে পান।<ref>{{cite journal | last=Einstein | first=Albert | title=On the Influence of Gravity on the Propagation of Light | journal=Annalen der Physik | year=1911 | volume=35 | pages=898–908}} (also in ''Collected Papers'' Vol. 3, document 23)</ref> এ সময় [[জার্মানি|জার্মান]] [[জ্যোতির্বিজ্ঞানী]] Erwin Freundlich বিজ্ঞানীদের প্রতি আইনস্টাইনের চ্যালেঞ্জগুলো প্রচার করতে শুরু করেন।
 
== তথ্যসূত্র ও মন্তব্য ==