চা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Jubair1985 (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Shahidkhan1962 (আলোচনা | অবদান)
কিছু কাজ
১৩ নং লাইন:
'''চা''' ({{lang-en|Tea}}) বলতে সচরাচর সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরণের উষ্ণ পানীয়কে বোঝায় যা '''চা পাতা''' পানিতে ফুটিয়ে বা গরম পানিতে ভিজিয়ে তৈরী করা হয়। [[চা গাছ]] থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। চা গাছের [[বৈজ্ঞানিক নাম]] ''[[ক্যামেলিয়া সিনেনসিস]]''। 'চা পাতা' কার্যত চা গাছের পাতা, [[পর্ব (জীববিজ্ঞান)|পর্ব]] ও মুকুলের একটি কৃষিজাত পণ্য যা বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা হয়।
 
ইংরজিতে চা-এর প্রতিশব্দ হলো টি।টি (tea)। গ্রীকদেবী ''থিয়ার'' নামানুসারে এরএরূপ নামনামকরণ হয়করা টি।হয়েছিল। চীনে ‘টি’-এর উচ্চারণ ছিল ‘চি’। পরে হয়ে যায় ‘চা’।<ref name="PA">[http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2011-08-26/news/181101 প্রথম আলো]</ref>
 
[[পানি|পানির]] পরেই চা বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃতউপভোগ্য পানীয়। এর একধরণের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ রয়েছে এবং অনেকেই এটি উপভোগ করে। প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা-কে পাঁচটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন - [[কালো চা]], [[সবুজ চা]], [[ইষ্টক চা]], উলং বা [[ওলোং চা]] এবং প্যারাগুয়ে চা।<ref>মানবীয় পরিবেশ, মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ বুক করপোরেশন লিঃ, ঢাকা, ২য় সংস্করণ, ২০১১ইং, পৃষ্ঠাঃ ১৩৯</ref> এছাড়াও, সাদা চা, হলুদ চা, পুয়ের চা-সহ আরো বিভিন্ন ধরণের চা রয়েছে। তবে সর্বাধিক পরিচিত ও ব্যবহৃত চা হল সাদা, সবুজ, উলং এবং কাল চা। প্রায় সবরকম চা-ই ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থেকে তৈরি হলেও বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুতের কারণে এক এক ধরণের চা এক এক রকম স্বাদযুক্ত। পুয়ের চা একধরণের [[গাঁজনোত্তর চা]] যা অনেক ক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
 
কিছু কিছু চায়ে ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থাকে না। [[ভেষজ চা]] হল একধরণের নিষিক্ত [[পাতা]], [[ফুল]], [[লতা]] ও [[উদ্ভিদ|উদ্ভিদের]] অন্যান্য অংশ যাতে কোন ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নেই। লাল চা সাধারণত কাল চা (কোরিয়া, চীন ও জাপানে ব্যবহৃত হয়) অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার [[রুইবস গাছ]] থেকে তৈরি হয় এবং এতেও কোন ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নেই।
২৫ নং লাইন:
 
== চাষ পদ্ধতি ==
চা প্রধান কান্তীয় মৌসুমী [[জলবায়ু]] অঞ্চলের ফসল হলেও উপ-ক্রান্তীয় [[জলবায়ু]] অঞ্চলেও এটি কিছু কিছু চাষ করা যায়। প্রথম অবস্থায় [[পাহাড়|পাহাড়ের]] ঢালু জমি পরিষ্কার করা হয়। এর চারা আলাদাপৃথক বীজতলায় তৈরী করা হয়।
 
চারাগুলো যখন ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়, তখন সেগুলোকে চা-বাগানে সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হয়। সাধারণতঃ দেড় মিটার পরপর চারাগুলোকে রোপণ করা হয়ে থাকে। এরপর গাছগুলোকে বৃদ্ধির জন্য যথামাত্রায় [[সার]] প্রয়োগ ও পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। এভাবে দুই থেকে তিন বছর পরিচর্যার পর পাতা সংগ্রহের উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু গাছগুলো পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত যথাযথভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। একটি চা গাছ গড়পড়তা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদনের উপযোগী থাকে। তারপর পুণরায়পুনরায় নতুন গাছ রোপণ করতে হয়।
 
== প্রাকৃতিক উপাদান ==
৩৩ নং লাইন:
 
== প্রকারভেদ ==
পৃথিবীতে [[আসাম]] এবং চীনজাতীয় - এ দুই প্রকারের চা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে আসামজাতীয় চা গাছ [[ভারত]] ও [[শ্রীলঙ্কা|শ্রীলঙ্কায়]] অধিক চাষ করা হয়। এ ধরণের গাছ বেশ বড় এবং বহু পাতাযুক্ত হয়। বিধায়, এটি বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করার জন্যে বিশেষ উপযোগী। এ গাছ প্রায় ৬ [[মিটার]] বা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতার নাগাল পাওয়া এবং পাতা সংগ্রহের জন্য গাছগুলোকে ১.২ মিটার বা ৪ [[ফুট|ফুটের]] অধিক বড় হতে দেয়া হয় না। ছেঁটে দেয়ার ফলে চা গাছগুলো ঘণঝোঁপে পরিণত হয়।
পৃথিবীতে [[আসাম]] এবং চীনজাতীয় - এ দুই প্রকারের চা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে -
 
আসামজাতীয় চা গাছ [[ভারত]] ও [[শ্রীলঙ্কা|শ্রীলঙ্কায়]] অধিক চাষ করা হয়। এ ধরণের গাছ বেশ বড় এবং বহু পাতাযুক্ত হয়। বিধায়, এটি বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করার জন্যে বিশেষ উপযোগী। এ গাছ প্রায় ৬ [[মিটার]] বা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতার নাগাল পাওয়া এবং পাতা সংগ্রহের জন্য গাছগুলোকে ১.২ মিটার বা ৪ [[ফুট|ফুটের]] অধিক বড় হতে দেয়া হয় না। ছেঁটে দেয়ার ফলে চা গাছগুলো ঘণঝোঁপে পরিণত হয়।
 
অন্যদিকে চীনজাতীয় গাছ আকারে বেশ ছোট হয়। এতে পাতার সংখ্যাও অনেক কম থাকে। এ গাছ না ছাঁটলেও পাতা তোলার মতো উচ্চতাসম্পন্ন হয়ে থাকে।
 
== ব্যবস্থাপনা ==
চা গাছ রোপণ, আগাছা পরিস্কারকরণপরিষ্কারকরণ, সার প্রয়োগ করা, গাছ ছাঁটা, কচি পাতা চয়ন করা, চা-পাতা শুকানো, সেঁকা, চা-প্যাকিং ইত্যাদি বহুবিধ ধরণের কর্মকাণ্ডে দক্ষ-অদক্ষ প্রচুর [[শ্রমিক|শ্রমিকের]] প্রয়োজন পড়ে। পাতা চয়নের কাজে দক্ষ মহিলা শ্রমিক নিয়োজিত থাকে।<ref>উচ্চ মাধ্যমিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল, অধ্যাপক মোঃ বশির উদ্দিন সরদার, রতন পাবলিশার্স, ১ম সংস্করণ, ১৯৯৮ইং, পৃঃ ৬১-৬২</ref> বিষয়টি বেশ ধৈর্য্যের বিধায়, বাগান কর্তৃপক্ষ মহিলা সাধারণত: নারী শ্রমিকদেরকেই পাতা চয়নের জন্য নিয়োগ দিয়ে থাকে। এছাড়াও, চাউচ্চ চাষাবাদেরফলনের জন্যস্বার্থে চা বাগানে প্রচুর জৈব ও রাসায়নিক সারসহ প্রয়োজনীয় [[কীটনাশক]] সরবরাহপ্রয়োগ করাকরতে হয়।
 
চা গাছ হতে পাতা সংগ্রহ করতে ব্যক্তিকে যথেষ্ট নৈপুণ্যতানৈপুণ্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। কারণ দু'টি পাতা ও একটি কুঁড়ি একসঙ্গে তুলতে না পারলে চায়ের উৎকর্ষ ও আমেজ অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়। চীন ও জাপানে বছরে গড়পড়তা তিনবার চা-পাতা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় খুব ঘন ঘন পাতা সংগ্রহ করা যায়। এদেশগুলোতে বছরে গড়ে ষোল থেকে বিশ বার পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
 
== গুণাগুন ==
চীনজাতীয় গাছের পাতা [[স্বাদ]] ও [[গন্ধ|গন্ধের]] জন্য সুখ্যাত। কিন্তু আসামজাতীয় গাছের পাতা রঙের জন্য বিখ্যাত। এই দুই ধরণের চা-পাতার উন্নত সংমিশ্রণের উপরই এর গুণাগুন নির্ভর করে। স্বভাবতঃই চা মিশ্রণ একটি নিপুণতা ও অত্যন্ত কঠিন কাজ। তাই এটি অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা সম্পাদনা করতে হয়। এরূপভাবে চা মিশ্রণে নৈপুণ্যতানৈপুণ্যের লাভের প্রেক্ষাপটে [[লিপটন]], [[ব্রুকবণ্ড]] প্রভৃতি চা প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলোকোম্পানী বিশ্ববাজার দখল ও খ্যাতি লাভ করেছে।
 
চা গাছ হতে পাতা সংগ্রহ করতে ব্যক্তিকে যথেষ্ট নৈপুণ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। কারণ দু'টি পাতা ও একটি কুঁড়ি একসঙ্গে তুলতে না পারলে চায়ের উৎকর্ষ ও আমেজ অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়। চীন ও জাপানে বছরে গড়পড়তা তিনবার চা-পাতা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় খুব ঘন ঘন পাতা সংগ্রহ করা যায়। এদেশগুলোতে বছরে গড়ে ষোল থেকে বিশ বার পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
 
[[File:Red Tea.jpg|thumb|লাল চা]]
৮৮ ⟶ ৮৭ নং লাইন:
চা গাছের জন্য অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত ও তাপের প্রয়োজন হয় বলে বাংলাদেশের বৃষ্টিবহুল পাহাড়িয়া অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চায়ের চাষ করা হয়। চা শিল্প [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] অন্যতম বৃহৎ শিল্প। জাতীয় [[অর্থনীতি|অর্থনীতিতে]] এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের চা উৎপাদনের পরিমাণ বছরে প্রায় সাড়ে ৬০০ মিলিয়ন কেজি এবং এখান থেকে চা রফতানি করা হয় ২৫টি দেশে। চা উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে আছে [[চীন]], [[ভারত]], [[কেনিয়া]], [[শ্রীলঙ্কা]]।<ref name="P.Alo"/> এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টমে। বাংলাদেশে চা পানকারীর সংখ্যা প্রতিবছর ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে। চা পানে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৬তম ৷<ref name="PA"/> সে তুলনায় চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি না-পাওয়ায় ১৯৮৪ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে রপ্তানীর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
 
বর্তমানে ৪৭,৭৮১ হেক্টর জমিতে ১৬২টি [[চা বাগান|চা বাগানের]] মধ্যে সিলেট বিভাগেই রয়েছে ১৪৮টিu চা বাগান।<ref name=sam>দৈনিক সমকাল, মুদ্রিত সংস্করণ, লোকালয়, পৃষ্ঠা-৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ইং</ref> তন্মধ্যে ৯০% চা [[সিলেট]] বিভাগে এবং অবশিষ্ট ১০% চট্টগ্রাম বিভাগে উৎপন্ন হয়। প্রায় সকল চা বাগান ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত। তবে সাম্প্রতিককালে [[পঞ্চগড়]] জেলায় কিছু নতুন চা বাগান স্থাপিত হয়েছে।

চা বাগানগুলোতে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। অস্থায়ীভাবে কাজ করছে প্রায় ৩০ হাজার [[শ্রমিক]]। [[গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ|বাংলাদেশ সরকারের]] সাথে ২০০৯ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে বাগানের শ্রেণীভেদে শ্রমিকেরা যথাক্রমে দৈনিক ৪৮.৪৬ টাকা ও ৪৫ টাকা হারে মজুরি পায়। স্থায়ী শ্রমিকদেরকে [[রেশন]] হিসেবে প্রতিদিন আধা-কেজি [[চাউল]] অথবা [[আটা]] দেওয়া হয়।<ref name="sam"/>
 
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, [[ইতালি]], রাশিয়া, চেক ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্র, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী, [[জাপান]], মিশর, সুদান, জর্ডান, গ্রীস, সাইপ্রাস, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে চা রপ্তানী করা হয়। বাংলাদেশের চা পৃথিবীব্যাপী '''সিলেট টি''' নামে খ্যাত।
'https://bn.wikipedia.org/wiki/চা' থেকে আনীত