চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Yaqub Ali BD (আলোচনা | অবদান)
Yaqub Ali BD (আলোচনা | অবদান)
৭৫ নং লাইন:
== কৃতী ব্যক্তিত্ব ==
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ১৯৭১ সালের ১৯ জুন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে স্বেছায় অব্যাহতি নেন । মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য ১৯৭১ সালের ৩ জুলাই তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে, পাকিস্তানের শিয়ালকোটের নিকটবর্তী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে আসেন। অত:পর কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীর সাথে সাক্ষাত করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তাঁকে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল কাজী নুর-উজ্জামানের অধীনে ৭নং সেক্টরের ‘মহদিপুর সাব-সেক্টরের কমান্ডার’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি এ সাব-সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ এলাকার অসংখ্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। বিজয়োর একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করার শেষ যুদ্ধে ১৪ ডিসেম্বর সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর কোল ঘেষে রেহাইচর নামক এলাকায় শত্রুবাহিনীর আচমকা গুলিতে তিনি শহীদ হন। ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর ছিলেন একজন দক্ষ, অসমসাহসী যোদ্ধা। মূলত তাঁর যোগ্য নেতৃত্বেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত হয় (১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১)। তাঁর শেষ ইচ্ছানুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জের পবিত্র সোনামসজিদ প্রাঙ্গনে ৭ নং সেক্টরের প্রথম সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হকের পাশে তাঁকে লাশ দাফন করা হয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলা মায়ের দামাল ছেলে ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে বাংলাদেশ সরকার ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাব উপাধিতে ভূষিত করে। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীরের সম্মান ও স্মৃতি রার্থে শাহাদৎ স্থান-চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাইচরে একটি স্মৃতিসৌধ, ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ২টি কলেজ ও কাব এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর উপর নির্মিত সেতুর (বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর সেতু) নামকরণ করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে না জন্মালেও যে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তির চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান-অর্জন ও কৃতিত্ব রয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর তাঁদের মধ্যে অন্যতম ।
 
 
প্রফেসর মনিমুল হক
 
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ বুদ্ধিজীবী- প্রফেসর মনিমুল হক জন্মেছিলেন ১৯২২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নামোশংকরবাটির মন্ডলপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। শহীদ বুদ্ধিজীবী- প্রফেসর মনিমুল হক ১৯৫৫ সালে নবাবগঞ্জ কলেজ (পরবর্তীতে সরকারি) প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং উক্ত কলেজের প্রথম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রফেসর মনিমুল হক সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন না। তবে বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনকে মনে-প্রাণে সমর্থন করতেন।
১৯৭১ এ চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য গঠিত ১০-সদস্য বিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য সেরাজুল হক শনি মিয়াদের বাড়িতেই (বর্তমান শহীদ মনিমুল সড়কের জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে) প্রতিদিন স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হত। শনি মিয়া-মনিমুল হক দু’ভাই একই বাড়িতে বাস করতেন। ছোট ভাইয়ের নিকট হতে প্রফেসর মনিমুল হক উৎসাহের সাথে যুদ্ধের গতি প্রকৃতি বিশেষত:মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতেন। ২১ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর পুণরায় পাকবাহিনীর করায়ত্ব হলে দু’ভাই-এর বাড়িটি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। জুলাইয়ের মাঝামাঝি তাঁর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারত গমনের দিনই বিকেলে তাঁর ভগ্নিপতি মোজাম্মেল হক মাষ্টারের বাড়ি, চৈতন্যপুরে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে তাঁকে নবাবগঞ্জ ও নাটোর হয়ে ঢাকায় নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে আটক রাখা হয়। সেখানে তাঁর উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়। ঢাকায় অবস্থানরত তাঁর অপর ভাই প্রফেসর ড.বজলুল হক মাঝে-মধ্যে তাঁর সাথে সাাতের সুযোগ পেতেন। অক্টোবরের ২০ তারিখে প্রফেসর মনিমুল হককে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৭১ এর ১৪ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় পাকবাহিনীরা তাঁকে আবারও বাড়ি থেকে ধরে রাজশাহীতে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে তাঁকে কর্ণেল রিজভীর সামনে হাজির করা হলে কর্ণেল রিজভী তাঁকে অভিযুক্ত করে বলেন, তিনি তাঁর দুই ছেলেকে মুক্তিবাহিনীতে পাঠিয়েছেন, তাঁর মেজো ভাই মুক্তির নেতা, তিনি আওয়ামী লীগ করেন, স্বরস্বতী পূজায় কলেজ ফান্ড থেকে হিন্দুদের চাঁদা দিয়েছেন ইত্যাদি। আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি কিছু বলতে চাইলে কর্ণেল রিজভী তাঁকে থামিয়ে দিয়ে রাগত স্বরে জানান যে, ইতোমধ্যেই তাঁর বোর্ড হয়ে গেছে। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। এরপর তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের নীচ তলার একটি কেক্ষ তাঁকে ২ দিন অভূক্ত অবস্থায় রাখা হয়। ২০ নভেম্বর অর্থাৎ ’চাঁদ রাতে (শাওয়াল মাসের প্রথম চাঁদ দেখা রাতে)’ ২ টার সময় পাক ফৌজের ঘাতক দল তাঁর চোখ কালো কাপড়ে এবং হাত দুটো বেঁধে অজানা গন্তব্যে নিয়ে যায়। যেখান থেকে তিনি আর কোন দিনই ফিরে আসেননি। পরবর্তীতে তাঁর ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোনরা শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পাশে ইটের ভাটা, কাটাখালী ছাড়াও রাজশাহী, নাটোরের সকল বধ্যভূমি, গণকবর এবং কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প খুঁজেও তাঁকে মৃত বা জীবিত উদ্ধার করতে পারেন নি।
সমাজসেবী মনিমুল হক ১৯৭০ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১টি নৈশ কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। চন্ডীমন্ডপ (পরবর্তীতে নবাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়) স্কুলে নৈশ কলেজের কিছুদিন কাসও হয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর উক্ত কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ আর এগোয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাঠাগার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কাব ইত্যাদি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘শহীদ মনিমুল হকের বাসভবন (বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে) হতে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ পর্যন্ত ৪৫০ মিটার দীর্ঘ সড়কটি’ তাঁর নামানুসারে নামকরণ করেন। শহীদ মনিমুল হকের স্মৃতির রক্ষার্থে, সম্প্রতি নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর সুলতানা রাজিয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলেজ কমপ্লেক্সের এগজামিনেশন ও একাডেমিক ভবনটি ‘শহীদ মনিমুল হকের’ নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে।
 
== দর্শনীয় স্থান ==