বিজ্ঞানের দর্শন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
বিষয়বস্তু যোগ
সংশোধন
৩ নং লাইন:
বিজ্ঞানের দার্শনিক আলোচনা বিষয়ে স্বয়ং বিজ্ঞানীদের অবস্থান বেশ দ্বিধাবিভক্ত। একদিকে অনেক বিজ্ঞানী যেমন বিজ্ঞানের দর্শনে অবদান রেখেছেন, অন্যদিকে অনেকে আবার এর সমালোচনা করেছেন এবং বিজ্ঞানের জন্য এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যেমন বিখ্যাত মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী [[রিচার্ড ফাইনম্যান]] বলেছিলেন, "পাখিদের জন্য [[পক্ষীবিদ্যা|পক্ষীবিদ্যার]] উপযোগীতা যতটুকু বিজ্ঞানের জন্য বিজ্ঞানের দর্শনের উপযোগীতা তার থেকে বেশি নয়"। কিছু দার্শনিক আবার তার এই উক্তির সমালোচনা করেছেন। যেমন অধিবিদ্যা ও জ্ঞানতত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় রত মার্কিন দার্শনিক ''জোনাথন শাফার'' ফাইনম্যানের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, পক্ষীবিদ্যা পাখিদের জন্য সত্যিই খুব উপকারী হতো যদি পাখিদের সেই বিদ্যা আয়ত্ত করার ক্ষমতা থাকতো।<ref>[http://www.philostv.com/craig-callender-and-jonathan-schaffer/ Craig Callender and Jonathan Schaffer], ফিলোসফি টিভি</ref>
 
বিজ্ঞানের দর্শনের মুখ্য প্রশ্নসমূহরপ্রশ্নসমূহের বিষয় 'কি বিজ্ঞান হয় এবং কি নয়', 'বৈজ্ঞানিক প্রণালীসমূহের নির্ভরশীলতা', 'বিজ্ঞানের শেষ লক্ষ্য' ইত্যাদি। বিজ্ঞানের দর্শনের বহু মুখ্য প্রশ্নরপ্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে দার্শনিকগণ একমত নন। 'বিজ্ঞান অনিরীক্ষণীয় বিষয়ের সত্য অনাবৃত করতে পারবে কি না?', 'বৈজ্ঞানিক যুক্তির ন্যায্যতা বা প্রতিপন্ন করতে পরা যায় কি যায় না?' ইত্যাদি প্রশ্ন তার অন্তর্গত। বিজ্ঞান বিষয়ক তেমন সাধারণ প্রশ্নসমূহ ছাড়াও দর্শনের এই ভাগে বিজ্ঞানের কোনো এক ধারায় (যেমন [[জীববিজ্ঞান]], [[ভৌত বিজ্ঞান]] ইত্যাদি) প্রযোজ্য প্রশ্নেরও উত্তর সন্ধান করে। কোনো কোনো দার্শনিক আধুনিক বিজ্ঞানের ফলাফলের সহায়তায় স্বয়ং দর্শনের বিষয়ই মীমাংসা করে থাকেন।
 
যদিও বিজ্ঞান বিষয়ক দার্শনিক চিন্তা অন্ততঃ অ্যারিস্টটলের[[অ্যারিস্টটল]]ের সময় থেকেই চলে আসছে, বিজ্ঞানের দর্শনের এক পৃথক শৃঙ্খলা রূপে বিকাশ বিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগ থেকেই আরম্ভ হয়েছে। এমনটা হয়েছিল যৌক্তিক দৃষ্টবাদের প্রাক্কালে। যৌক্তিক দৃষ্টিবাদের লক্ষ্য প্রতিটি দার্শনিক বিবৃতির অর্থপূর্ণতার মাপ-কাঠি নির্ণয় করা এবং বস্তুবাদী রূপে সেই বিবৃতিসমূহকে পরিমাপ করা। [[টমাস কুন]]ের ঐতিহাসিক গ্রন্থ ''<nowiki/>'দ্য ষ্ট্রাক্সার অব সায়েণ্টিফিক রেভোলিউসন্স' ''(১৯৬২) বৈজ্ঞানিক উন্নতি যে অবিচলিত, এবং জ্ঞানের সঞ্চয়িত অধিগ্রহণ নিশ্চিত প্রণালীর ওপর আধারিত, সেই ধারণাকে প্রত্যাহ্বান করে। তিনি তার পরবর্তী তর্ক করেন যে, যেকোনো উন্নতি এক বিশেষ ঐতিহাসিক সময়ের দৃষ্টান্তের (প্রশ্ন, ধারণা, চর্চার) সাথে আপেক্ষিক।
 
পরবর্তী সময়ে, [[ডাব্লিউ ভি কুয়াইন]] এবং অন্যান্যরঅন্যান্যদের জন্য বিজ্ঞানের সুসংগত অভিগমন, যে শাস্ত্র মান্য হয় যদি এই পর্যবেক্ষণকে এক সুসংগত সমগ্রেেরসমগ্রের অংশ হিসাবে দেখানো যায় — এই অভিগমন প্রধান হয়ে পড়ে। [[স্টিফেন জে গুড]]ের মতমতো কোনো কোনো চিন্তাবিদ বিজ্ঞানকে স্বয়ংসিদ্ধ ধারণার সমষ্টিতে স্থলিত করতে শুরু করেন, যেমন: [[প্রকৃতির সামঞ্জস্য]]। [[পল ফেয়েরাব্যান্ড]]কে ধরে দার্শনিকদের এক কণ্ঠ্য সঙ্খ্যালঘুসংখ্যালঘু দল তর্ক করে যে, 'বৈজ্ঞানিক প্রণালী'র মতো আসলে কোনো বস্তুই নেই, তারা বিজ্ঞানের সকল অভিগমনকে মান্যতা প্রদান করতে থাকেন, অলৌকিকতাসমূহকেও। বিজ্ঞানের বিষয়ে চিন্তা করার অন্য এক অভিগমন হল সমাজবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে জ্ঞান কিভাবে সৃষ্টি হয় তা অধ্যয়ন করা। এমন অভিগমনকে [[ডেভিড ব্লুর]], [[বেরী বার্নস]]ের মতো দার্শনিক সমর্থন করেন। শেষে, [[মহাদেশীয় দর্শন|১৯-২০ শতাব্দীর ইউরোপীয় দর্শন]] বিজ্ঞানকে মানব অভিজ্ঞতার কঠোর বিশ্লেষণ হিসাবে চায়।
 
বিজ্ঞানের বিশেষ ভাগ সম্বন্ধীয় দার্শনিক প্রশ্নসমূহ [[অ্যালবার্ট আইনস্টাইন|আইনস্টাইনের]] সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ থেকে উদিত [[সময়]]ের প্রকৃতি বিষয়ক, রাজনীতিতে [[অর্থনীতি]]র প্রভাব ইত্যাদি। একটি মুখ্য বিষয় হল, কোনো এক বৈজ্ঞানিক শৃঙ্খলাকে অন্য এক শৃঙ্খলয় অনুবাদ করতে পারা যায় কি যায় না। যেমন, [[রসায়ন বিজ্ঞানকেবিজ্ঞান]]কে [[ভৌত বিজ্ঞান]]ে অনুবাদ করতে পারি কি না? [[সমাজ বিজ্ঞানসমাজবিজ্ঞান]]কে ব্যক্তিগত [[মনোবিজ্ঞান]]র স্তরে অনুবাদ করতে পারি কি না? বিজ্ঞানের দর্শনের সাধারণ প্রশ্নসমূহেরও বিজ্ঞানের কোনো এক ধারায় বিশেষ গুরুত্ব থাকতে পারে। যেমন বৈজ্ঞানিক যুক্তির বৈধতার [[পরিসংখ্যানবিদ্যা]]র প্রতিষ্ঠাপনে বিশেষ গুরুত্ব আছে। কি বিজ্ঞান হয় এবং কি বিজ্ঞান নয়, সেকথা [[চিকিৎসা বিজ্ঞান]]ের দর্শনে জীবন-মরণের প্রশ্ন। তদুপরি, [[জীববিজ্ঞান]], [[মনোবিজ্ঞান]], [[সমাজবিজ্ঞান]] ইত্যাদির দর্শনসমূহ মানব প্রকৃতির বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নে বস্তুবাদী রূপ লাভ করতে পারবে, না মূল্যবোধ এবং সামাজিক সম্বন্ধ প্রভাবিত হয়ে থাকবে, তেমন বিষয়েও অধ্যয়ন করে।
 
== পরিচয় ==
১৫ নং লাইন:
=== বিজ্ঞানের সংজ্ঞা নির্ণয় ===
[[চিত্র:Karl_Popper.jpg|right|thumb|কার্ল পপার ১৯৮০র দশকে]]
বিজ্ঞান এবং অ-বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য করাকে সীমা সমস্যা বলা হয়। যেমন, [[মনোবিশ্লেষণ]] বিজ্ঞান হয় কি না? তথাকথিত [[সৃষ্টির বিজ্ঞান]], স্ফীতিজনিত মাল্টিভার্স পরিকল্পনা বা [[সামষ্টিক অর্থনীতি]]র বিষয়ে কি বলতে পারি? [[কার্ল পপার]]ের মতে, এই প্রশ্নই বিজ্ঞানের দর্শনের মূল প্রশ্ন।<ref name="Thornton2006">{{Cite web|url=http://plato.stanford.edu/entries/popper/|title=Karl Popper|accessdate=2007-12-01|last=Thornton|first=Stephen|year=2006|work=Stanford Encyclopedia of Philosophy}}</ref> পরে, এই প্রশ্নের কোনো সর্বজনবিদিত সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই অথবা এই প্রশ্ন রুচিহীন বলে গণ্য করেন।<ref>[http://plato.stanford.edu/entries/pseudo-science/#NonSciPosSci "Science and Pseudo-science"] (2008) in Stanford Encyclopedia of Philosophy</ref><ref name="Laudan1983">{{Cite book|last=Laudan|first=Larry|editor=Adolf Grünbaum, Robert Sonné Cohen, Larry Laudan|title=Physics, Philosophy, and Psychoanalysis: Essays in Honor of Adolf Grünbaum|year=1983|publisher=Springer|isbn=90-277-1533-5|chapter=The Demise of the Demarcation Problem}}</ref> [[মার্টিন গার্ডনার|মার্টিন গার্ডনার]] অপবিজ্ঞান সনাক্ত করতে পটার ষ্টীয়ার্টষ্টিয়ার্ট মানক ব্যবহার করতে পরামর্শ প্রদান করেন — "আমি এটি জানি কারণ আমি এটি দেখেছি"।
 
যৌক্তিক দৃষ্টবাদীগণ প্রথমে বিজ্ঞানকে পর্যবেক্ষণ স্থলিত করেছিলেন, তার বিপরীতে অ-বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণহীন এবং সেইজন্য অর্থহীন।<ref name="Uebel2006">{{Cite web|url=http://plato.stanford.edu/entries/vienna-circle/|title=Vienna Circle|accessdate=2007-12-01|last=Uebel|first=Thomas|year=2006|work=Stanford Encyclopedia of Philosophy}}</ref> পপার তর্ক করেছিলেন যে, বিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় গুণ হল [[মিথ্যায়ন]]। অর্থাৎ, প্রতি বাস্তবিক বৈজ্ঞানিক দাবীকে, অন্ততঃ সিদ্ধান্ত হ'লেও, অসত্য প্রমাণ করা যায়।
 
অধ্যয়ন বা ভাবনা-চিন্তার কোনো ক্ষেত্র, যে ক্ষেত্রই অন্যথা লাভ করতে না পারার বৈধতার দাবী করার প্রচেষ্টাতে বিজ্ঞানের ছদ্মবেশ ধারণ করে, সেই অধ্যয়ন বা ভাবনা চিন্তাকে [[অপবিজ্ঞান]], পার (ফ্রিঞ্জ — fringe)) বিজ্ঞান বা আবর্জনা বিজ্ঞান বলা হয়।<ref>"''Pseudoscientific&nbsp;– pretending to be scientific, falsely represented as being scientific''", from the ''Oxford American Dictionary'', published by the Oxford English Dictionary; Hansson, Sven Ove (1996)."</ref> ভৌতবিজ্ঞানী [[রিচার্ড ফাইনমেনফাইনম্যান|রিচার্ড ফেইনমেন]] এমন ঘটনাসমূহের জন্য, যে ঘটনাসমূহে গবেষণাকারীবৃন্দ তাঁদের কার্যকে বিজ্ঞান বলে ভাবেন, কিন্তু আসলে বাইরে থেকে বৈজ্ঞানিক আবরণ থাকলেও কার্যসমূহে কাঠিন্যের মূল্যায়ন করার যোগ্য "চরম সততা" থাকে না, সেগুলিকে ''মাল-পন্থ বিজ্ঞান'' (কার্গো-কাল্ট সায়েন্স (cargo-cult science)) সংজ্ঞা ব্যবহার করেছিলেন।
 
=== বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ===
২৯ নং লাইন:
[[চিত্র:Einstein_cross.jpg|left|thumb|225x225px|আইনস্টাইনের ক্রস নামে পরিচিত এক মহাজাগতিক বস্তু।]]
 
পর্যবেক্ষণ করতে, বিজ্ঞানীগণ টেলিস্কোপে দেখেন, বৈদ্যুতিক পর্দায় ছবি দেখেন, মিটার রিডিং রেকর্ড করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রারম্ভিক স্তরে, তাঁরা যা দেখেছেন তা মেনে নিতে হয়, যেমন: থার্মোমিটারে[[থার্মোমিটার]]ে ৩৭.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস দেখাচ্ছে। পরে, যদিও ভিন্ন ভিন্ন বিজ্ঞানীর সূত্রর বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা থাকে, যে সূত্রকে এই প্রারম্ভিক পর্যবেক্ষণসমূহ ব্যাখ্যা করতে তৈরি করা হয়েছে, তবুও তাঁরা কি পর্যবেক্ষণ করেছেন সেই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করতে পারেন। যেমন, [[অ্যালবার্ট আইনস্টাইন]]ের [[সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ]]ের সূত্রের পূর্বে , পর্যবেক্ষকগণ প্রদান করা ছবিটিতে ৫টা বস্তু দেখা যাচ্ছে বলে মত পোষণ করতেন। পরে, সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের সঙ্গে পরিচিত বিজ্ঞানীগণ বলেন যে, সেটি আসলে দুটি বস্তুর ছবি। একটা মধ্যে, এবং অন্য চারটি ছবি, চারটি আলাদা আলাদা স্থানে। তার বিপরীতে, কোনো কোনো বিজ্ঞানী [[টেলিস্কোপ]]টি ঠিকমতো কাজ করছে না বলে, কেবল একটা বস্তুর ছবিই দেখা গেছে বলেন। বিজ্ঞানীর এই দল অন্য এক পৃথক সূত্রকে সমর্থন জানিয়েছেন। যে পর্যবেক্ষণকে সূত্রের থেকে আলাদা করতে পারা যায় না, সেই পর্যবেক্ষণকে ''সূত্র-ভারাক্রান্ত'' বলা যায় (theory-laden)।
 
প্রতি পর্যবেক্ষণে ধারণা এবং অনুভূতি থাকে। অর্থাৎ, কোনো পর্যবেক্ষণ নিষ্ক্রিয় করে না, পরে কাছের গ্রহণশীল তথ্য থেকে ঘটনাকে পৃথক করা কার্যে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত। সেটি, পর্যবেক্ষণকে কোনো সিস্টেম কেমনভাবে কাজ করে, সেই বিষয়ে যেমনভাবে বোঝে, সেকথাই প্রভাবান্বিত করে — সেই বোঝাতে কি অনুভূত হয়েছে, মনে করা হয়েছে, বা বিবেচনার যোগ্য বলে গণ্য করা হয়েছে, সেই কথা প্রভাবান্বিত করে। এই অর্থে, এই কথার দাবিতে তর্ক করা যায় যে, সকল পর্যবেক্ষণই ''সূত্র-ভারাক্রান্ত।ভারাক্রান্ত''।
 
=== বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য ===