আলাপ:করিম উদ্দিন আহমেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Khurshiduzzaman Ahmed (আলোচনা | অবদান)
স্বীয়কর্ম
(কোনও পার্থক্য নেই)

০৫:২৯, ১৭ জুন ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ


স্বীয়কর্ম দ্বারা যে কজন মানুষ নিজেকে কালোত্তীর্ন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন, আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমদ তাদের অন্যতম।

১৯২৩সালের ১৯মার্চ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাশীরাম গ্রামে জন্মগ্রহনকারী আলোকিত এই মানুষটির বাবা মৌলভী আজিম উদ্দিন আহমদ এবং মা নেছাবি বেওয়া। ১৯৫৪ সালে ইউনিয়ন বোর্ডে নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জনসেবায় আত্মনিয়োগের প্রথম সুযোগ ঘটার পর বাকী জীবন এ কাজেই ব্যয় করেন তিনি। একনাগাড়ে ১৬বছর ইউনিয়ন বোর্ডে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পাকিস্তান আমলে গঠিত কালীগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদের সেক্রেটারী মনোনীত হন এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিশেষ অবদানের জন্য ‘গভর্ণর’ পুরষ্কারে ভূষিত হন। করিম উদ্দিন আহমদ তরুণ বয়েসেই বৃটিশ বিরোধী ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে মুকুন্দ দাশের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। এ আন্দোলনের ভলান্টিয়ার হিসেবে তুষভান্ডার বাজারে খাজনা বন্ধ করতে গেলে তিনি গ্রেফতার হন। তাঁর এই ত্যাগ ও জনসেবার পুরষ্কার মেলে ১৯৭০ সালে। ১৯৭০সালের পকিস্তান প্রাদেশিক সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

শিক্ষার প্রতি মহান অনুরাগী এই মানুষটি জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠ করেন বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৯সালে প্রতিষ্ঠা করেন উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করিমউদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৭২ সালে করিম উদ্দিন পাবলিক ডিগ্রী কলেজ, ১৯৭৩সালে করিম উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই বছরে করিমপুর নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠাসহ উপজেলার অসংখ্য স্কুল ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা হিসেবে বরেণ্য হয়ে আছেন।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে করিম উদ্দিন আহমদ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। কালীগঞ্জ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে সাবেক ইপিআর, আনসার ও পুলিশ কতর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন তিনি। নিজের বাড়ীতেই মুক্তিবাহিনীর প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ চার মাস কালীগঞ্জ ‘মুক্ত এলাকা’ হিসেবে থাকায় স্থানীয় যুবকদের এখানেই প্রশিক্ষণ দেয়া হত। এই সময়েই কালীগঞ্জ মাঠে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে পাক বাহিনীর কালীগঞ্জ দখলের কারনে তিনি কুচবিহার জেলার সিতাই থানায় আশ্রয় গ্রহন করেন। সেখানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে তিনি দুটি ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করেন এবং বাংলাদেশী যুবকদেরকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করেন। এসময় তিনি উত্তরাঞ্চলীয় মুক্তিবাহিনীর সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশেও বিধ্বস্ত কালীগঞ্জ পূণ:র্গঠনে তিনি একক ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।


১৯৭৩ সালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কালীগঞ্জের উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। শুধু রাজনীতিই নয়, সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতিও তার ছিল গভীর অনুরাগ। লোকসাহিত্য ও আঞ্চলিক ভাষার গবেষক ধর্মনারায়ন সরকার ভক্তিশাস্ত্রীকে তাঁর রচিত গবেষণা গ্রন্থ ‘উত্তরবাংলার লোকসাহিত্য ও ভাষা’ গ্রন্থ প্রকাশে মূদ্রণ ব্যয় বহন করে তাকেঁ উতসাহিত ও অনুপ্রানিত করেন। তাঁরই অনুপ্রেরণায় উপজেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অন্বেষা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

১৯৯১ সালের ২৮আগষ্ট কালীগঞ্জের এই কীর্তিমান পুরুষ ৬৮ বছর বয়সে রংপুর মেডিকেল কলেজে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

"করিম উদ্দিন আহমেদ" পাতায় ফেরত যান।