সময় ভ্রমণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Korak Biswas (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Korak Biswas (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
 
'''সময় ভ্রমণ''' আক্ষরিক অর্থে 'সময় অক্ষ' বরাবর সঞ্চারণ। ন্যূনতম চতুর্মাত্রিক (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়) এই ব্রহ্মাণ্ডে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা বরাবর স্থান পরিবর্তনের অনুরূপ এক ধারণা হল এই সময় অক্ষ বরাবর সঞ্চরণ বা কালমাত্রিক সরণ (temporal displacement)। সময় ভ্রমণের ভাবনা বহুকাল থেকেই পৃথিবীর সাহিত্য, দর্শন এবং বিজ্ঞানকে প্রভাবিত করে চলেছে। ভাবনার প্রথম পর্যায়ে সময় ভ্রমণের ধারণাটি ছিল অনেকাংশে বিজ্ঞানবিবর্জিত এবং কল্পনাময়। পরবর্তী সময়ে কুড়ি শতকের প্রথমার্ধে [[আপেক্ষিকতা তত্ত্ব]] এবং [[কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান | কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের ]] আবিষ্কার এ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে ক্রমশ যুক্তিনির্ভর করে তুলেছে।
 
[[File:Irvington statue of Rip van Winkle.jpg|thumb|মার্কিন মুলুকের আরভিংটনে নির্মিত রিপ ভান উইঙ্কলের পূর্ণাবয়ব মূর্তি]]
 
== সময় ভ্রমণের ধারণার ইতিবৃত্ত ==
সময় ভ্রমণের আদিমতর কল্পনাপ্রসূত বিবরণগুলো আমরা পাই প্রাচীন মহাকাব্য কিংবা গল্প উপকথায়। যেমন খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রচিত [[মহাভারত | মহাভারতে]] রাজা কাকুদমির কাহিনীতে রাজা এবং তাঁর কন্যা রেবতীর সময়যাত্রার কাল্পনিক বিবরণ পেয়ে থাকি। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর জাপানের লোককথার এক চরিত্র উরাশিমাকো বা উরাশিমা তারোর সময় ভ্রমণের গল্পও যথেষ্ট জনপ্রিয়। তুলনামূলক আধুনিকতর অনেক গল্প উপন্যাসেরও কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে এই সময় যাত্রার ধারণা। ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে লেখা আইরিশ লেখক স্যামুয়েল ম্যাদেনের 'মেমরিজ অব টোয়েণ্টিয়েথ সেঞ্চুরি' তে সময় ভ্রমণের হাল্কা আভাস পাওয়া যায়। ফরাসী লেখক ল্যুই সেবাস্তিয়ান মারসিয়ারের ''L'An 2440, rêve s'il en fut jamais'' উপন্যাসে আমরা পাই প্যারিসের এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির সময় ভ্রমণের বৃত্তান্ত। ১৭৭০ সালে লেখা এই উপন্যাসটি তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে রচিত মার্কিন লেখক ওয়াশিংটন আরভিংয়ের ' রিপ ভান উইঙ্কল ' ছোটগল্পটিও সময় ভ্রমণের একটি সুন্দর কাল্পনিক আখ্যান। রুশ সাহিত্যিক আলেকজান্ডার ফরমিচ ভেল্টম্যান ১৮৩৬ এ রচনা করেন 'প্রেদকি কালিমেরোসাঃ আলেকজান্ডার ফিলিপোভিচ ম্যাকেডনস্কি '। গল্পে গল্পকথক পক্ষীরাজের ঘোড়ায় প্রাচীন গ্রীস ভ্রমণ এবং সম্রাট আলেকজান্ডারের সঙ্গে সমুদ্রযাত্রার অনুষঙ্গে রুশ সাহিত্যে সম্ভবত সর্বপ্রথম সময় ভ্রমণের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন। ১৮৬১ সালে লেখা ফরাসী উদ্ভিদবিদ এবং ভূতত্ত্ববিদ পিয়ের বইটার্ডের 'প্যারিস অ্যাভোঁ লেসোম্ব' রচনাটিতে কাহিনীর মূল চরিত্রের প্রাগৈতিহাসিক প্যারিস নগর ভ্রমণের এক সুন্দর বর্ণনা ফুটে উঠেছে। এ ছাড়া 'নিউ মান্থলি ম্যাগাজিন' এ প্রকাশিত স্বনামধন্য মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড হেলের 'হ্যান্ডস অফ' গল্পেও আমরা সময় ভ্রমণের উল্লেখ পাই।
 
 
১৭ নং লাইন:
===== আপেক্ষিকতা তত্ত্বে সময় ভ্রমণ =====
 
[[আলবার্ট আইন্সটাইন | অ্যালবার্ট আইন্সটাইনের]] '[[বিশেষ আপেক্ষিকতা']] এবং '[[সাধারণ আপেক্ষিকতা']] তত্ত্বের সাহায্য নিয়ে প্রমাণ করা করা যায় যে- সময় ভ্রমণ সম্ভব। যেমন অস্ট্রিয়ার প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ কুর্ট গডেল অঙ্ক কষে দেখিয়েছিলেন, সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে বিশেষ কিছু শর্তে এই ব্রহ্মাণ্ডে 'আবদ্ধ সময়সন্নিভ রেখার' (closed[[Closed timelike curvescurve]]) অস্তিত্ব থাকা সম্ভব যা সময় ভ্রমণের সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে। যদিও 'আবদ্ধ সময়সন্নিভ রেখার' বাস্তবিক অস্তিত্ব নিয়ে কখনোই নিঃসংশয় হওয়া যায় না।
 
'সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব' স্বীকৃত কীটগহ্বর (wormhole[[Wormhole]]) এর মাধ্যমেও সময় ভ্রমণ সম্ভব। কীটগহ্বর মূলত একটি তাত্ত্বিক ধারণা হলেও স্তিফেন[[স্টিভেন হকিং | স্টিফেন হকিং]], কিপ থর্ন প্রমুখদের মতে বাস্তবেও সুস্থিত কীটগহ্বরের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি কোন কীটগহ্বরের সন্ধান পাওয়া যায় নি।
 
১৯৭৪ সালে ফ্রাঙ্ক টিপলার (Tipler cylinder) তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করেন নিজের অক্ষের চারিদিকে দ্রুত ঘূর্ণায়মান এক অসীম দৈর্ঘ্যের চোঙ আদতে একটি সময় যন্ত্র এবং এর সাহায্যে সময় ভ্রমণ সম্ভব। টিপলারের অনুমান ছিল, যথেষ্ট বেগে ঘূর্ণায়মান সসীম দৈর্ঘ্যের চোঙের সাহায্যও সময় ভ্রমণের ধারণাটি বাস্তবায়িত করা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে হকিং অবশ্য প্রমাণ করেন- কখনোই কোন সসীম দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা বিশিষ্ট সময় যন্ত্র নির্মাণ করা সম্ভব নয়
 
[[File:Wormhole travel as envisioned by Les Bossinas for NASA.jpg|thumb| চিত্রশিল্পী লেস বসিনাস কল্পিত কীটগহ্বর ভ্রমণের চিত্র ]]
 
পদার্থবিজ্ঞানীদের অনেকেই বিশ্বাস করেন তত্ত্বগত ভাবে সময় ভ্রমণ সম্ভব হলেও তা বাস্তবসম্মত নয় কারণ এতে 'কার্যকারণ সম্পর্ক' ([[Causality (physics)|causality]]) বিঘ্নিত হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী সময় ভ্রমণের সম্ভাবনাশূন্যতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বহু কূটাভাসের (paradox) অবতারণা করেছেন। এ প্রসঙ্গে হকিংয়ের 'উন্মাদ বিজ্ঞানীর কূটাভাস'টি (mad scientist paradox) বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। ধরা যাক এক উন্মত্ত বিজ্ঞানী কোনভাবে তাঁর নিজস্ব অতীতে ফিরে গিয়ে নিজেকে হত্যা করলেন। এক্ষেত্রে যেহেতু সেই বিজ্ঞানীর অতীত প্রতিভূ নিহত হলেন, সেহেতু সেই হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময় থেকে এই ব্রহ্মাণ্ডে আর তাঁর কোন অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে যে, তাহলে সেই বিজ্ঞানীর হত্যাকারী কে? সময় ভ্রমণের সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে নিলে আমাদের এমন আরও বহু কূটাভাসের সম্মুখীন হতে হয়। যদিও রাশিয়ার পদার্থবিদ নভিকভের মতে, পদার্থবিদ্যায় যদি বহু বিশ্বের (many world[[Many-worlds interpretation]]) অস্তিত্ব স্বীকার করে নেওয়া হয়, তাহলে সময় ভ্রমণ সংক্রান্ত এই কূটাভাসগুলির উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে।
 
মহাকর্ষের আংশিক কোয়ান্টাম তত্ত্ব (semi classical theory of[[Semiclassical gravity]]) থেকে দেখানো যায় যে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী যে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সময় ভ্রমণ সম্ভব, সেই ক্ষেত্রগুলি পদার্থবিদ্যার কোয়ান্টাম তত্ত্ব দ্বারা স্বীকৃত নয়। এ থেকেই হকিং অনুমান করেছিলেন হয়তো প্রাকৃতিক নিয়মবিধিই আমাদের সময় ভ্রমণের আর্জি মঞ্জুর করে না। যদিও আংশিক কোয়ান্টাম তত্ত্বের এই ধারণা যে মহাকর্ষের সামগ্রিক কোয়ান্টাম তত্ত্বের (quantum[[Quantum gravity]]) ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য- এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। এবং যেহেতু মহাকর্ষের সামগ্রিক কোয়ান্টাম তত্ত্ব আজো আমাদের অজানা, তাই সময় ভ্রমণের সম্ভাবনাহীনতার ব্যাখ্যা বা অনুমান, কোনটিই সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত নয়। তাই বহু বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন, সময় ভ্রমণ বাস্তবে সম্ভব। এ প্রসঙ্গে পদার্থবিদ রোনাল্ড ম্যালের (Ronald Mallett) নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি বলয় লেসারের[[লেজার (ring| laser)লেসারের]] সাহায্যে ঘূর্ণায়মান [[কৃষ্ণ বিবর | কৃষ্ণগহ্বরের]] অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে সময় ভ্রমণকে বাস্তবায়িত করার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
 
===== কোয়ান্টাম তত্ত্বে সময় ভ্রমণ =====
 
পদার্থবিদ্যার সনাতন তত্ত্ব অনুযায়ী যে কোনো সংকেত সর্বাধিক আলোর বেগে বিস্তারলাভ করতে সক্ষম। কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্বে সংকেত বিস্তারের গতিবেগ আলোর গতিবেগের চেয়েও বেশী হতে পারে। কোনো সংকেত আলোর সমান বা তার চেয়ে কম গতিবেগে বিস্তার লাভ করলে সমস্ত পর্যবেক্ষক এ বিষয়ে সহমত হবেন যে, সংকেত প্রেরণের ঘটনাটি সংকেতপ্রাপ্তির আগে ঘটেছে। কিন্তু সংকেত আলোর চেয়ে অধিকতর বেগে বিস্তার লাভ করলে সমস্ত পর্যবেক্ষক এর ঠিক বিপরীত ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করবেন। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে সংকেতপ্রাপ্তির ঘটনাটি সংকেত প্রেরণের আগে ঘটবে। পক্ষান্তরে বলা যেতে পারে যে প্রেরিত সংকেত সময়ের বিপরীত অভিমুখে সঞ্চারিত হয়েছে। এটি কোয়ান্টাম তত্ত্বে 'ট্যাকিওনের বিপ্রতীপ দূরভাষ' (tachyonic[[Tachyonic antitelephone]]) নামে জনপ্রিয়।
 
কোয়ান্টাম তত্ত্বের বহু বিশ্বের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা অনুসারে কোনরকম সমস্যা ছাড়াই সময় পরিভ্রমণ সম্ভব। তবে এই তত্ত্ব অনুযায়ী একজন সময় ভ্রমণকারী সময় অক্ষ বরাবর সঞ্চারণের সময় কেবলমাত্র নিজস্ব বিশ্বের অনুরূপ সেই সমস্ত বিশ্বেই উপনীত হতে সক্ষম যাতে এই প্রক্রিয়ায় কার্যকারণ সম্পর্কটি বিঘ্নিত না হয়। এই ধারণাটি কল্পবিজ্ঞানে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে।