কাজী আরেফ আহমেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৬২ নং লাইন:
==জাতীয় পতাকায় অবদান==
 
স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের মূল লক্ষ্য ছিল এই দেশকে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে নিউক্লিয়াস। শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিবকে ৭ জুন ১৯৭০<ref>{{বই উদ্ধৃতি|title=কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস|last=|first=|publisher=রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব|year=|isbn=|location=|pages=}}</ref> তারিখে অভিবাদন জানানোর এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ছাত্রলীগও একটি বাহিনী গঠন করে ঐ দিন বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানানোর কর্মসুচিতে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। নিউক্লিয়াস এ বাহিনী গঠনের দায়িত্ব প্রদান করে কাজী আরেফ আহমেদকে। এ বাহিনীর নাম দেওয়া হয় জয়বাংলা বাহিনী। এ বাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় আ স ম আব্দুর রবকে। নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে বাহিনীর জন্য একটি পতাকা বানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অভিবাদনকালে বঙ্গবন্ধু এ পতাকা [[জয়বাংলা বাহিনী]]<nowiki/>কে প্রদান করবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় কাজী আরেফ আহমেদের উপর।
 
 
৭৬ নং লাইন:
পরদিন, অর্থাৎ ৭ জুন, সকাল থেকেই মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। কর্দমাক্ত মাঠে জয়বাংলা বাহিনী কুচকাওয়াজের সাথে এগিয়ে আসছিলো। বাহিনীর সবার পড়নে ছিল সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট, মাথায় লাল-সবুজ টুপি এবং হাতে লাল-সবুজ ব্যান্ডে লেখা ‘[[জয়বাংলা বাহিনী’|জয়বাংলা বাহিনী]]<ref name=":1" />[[জয়বাংলা বাহিনী’|’]]। মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদ। বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পলিথিনে পেঁচিয়ে কাজী আরেফ পতাকা নিয়ে অবস্থান নিলেন । [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব]] কুচকাওয়াজের তালে মঞ্চের কাছে এসে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পতাকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু কাজী আরেফ আহমেদের হাত থেকে পতাকাটি নিয়ে উপস্থিত জনতাকে দেখান। এরপর আ স ম আব্দুর রবের কাছে পতাকাটি হস্তান্তর করেন। আ স ম আব্দুর রব কুচকাওয়াজের তালে মঞ্চের সামনে দিয়ে চলে যান। এই পতাকাটিই [[২ মার্চ ১৯৭১]], ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের বটতলায় লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব]] উত্তোলন করেন। ২৩ মার্চ ছিল [[পাকিস্তানের পতাকা দিবস]]। এদিন সেনানিবাস ব্যতীত, ঘরে ঘরে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা উড়ানো হয়।
==মুক্তিযুদ্ধে ভুমিকা==
নিউক্লিয়াসের মুল লক্ষ্যই ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে এ দেশকে স্বাধীন করা। ষাটের দশকের শেষ থেকেই নিউক্লিয়াস মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। বিশেষ করে ১৯৭০ এর নির্বাচনের পর পুরোদমে প্রস্তুতি চলতে থাকে। জাতীয় পতাকা তৈরি, জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন, [[শেখ মুজিবুর রহমান|বঙ্গবন্ধু]]<nowiki/>কে সশস্ত্র অভিবাদন জানানোর জন্য জয়বাংলা বাহিনী গঠন, ২ মার্চ [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ [[বাধীনতার ইশতেহার|স্বাধীনতার ইশতেহার]] পাঠ ইত্যাদি সবই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও মহড়া। ১৯৬৯ -এর গণঅভ্যুত্থানের পর নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে স্লোগান তোলা হয়, [[তুমি কে আমি কে - বাঙালি বাঙালি]]; [[পদ্মা মেঘনা যমুনা - তোমার আমার ঠিকানা।]] আবার ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর স্বাধীনতার পথ অনেকটাই খুলে যায়। এ সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাঙালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমশি করছিলো। ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য এনে বাঙালিদের নিধন করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। নিউক্লিয়াসের সদস্যগণ এ সময়ে পুরোদমে যুদ্ধের জন্য জাতিকে প্রস্তুত করতে থাকে। যদিও অস্ত্রশস্ত্রের দিক থেকে এ প্রস্তুতি মোটেও কার্যকর নয়, কিন্তু মানসিকভাবে জাতিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার কারণে [[২৫ মার্চ]] রাতে এবং পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এ সময়ে নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে স্লোগান তোলা হয়, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর - বাংলাদেশ স্বাধীন কর। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ‘[[বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’|স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’]] কে বিএলএফ বা Bangladesh liberation front করা হয়। এই বিএলএফ [[বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সেস|মুজিব বাহিনী]] হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ। ভারতের কালসিতে "এইটটি লিডার্স"এর নেতৃত্ব পর্যায়ে ট্রেনিং গ্রহন করেন তিনি। পরবর্তীতে [[পশ্চিমাঞ্চলীয় সেক্টরে]] মুজিব বাহিনীর উপপ্রধান হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে গোটা বাংলাদেশকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করেছিল বিএলএফ। চারটি অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রধান ছিলেন, [[শেখ ফজলুল হক মনি]], [[সিরাজুল আলম খান|সিরাজূল আলম খান]], [[আব্দুর রাজ্জাক (রাজনীতিবিদ)|আব্দুর রাজ্জাক]] ও [[তোফায়েল আহমেদ|তোফায়েল আহমেদ।]] কাজী আরেফ আহমেদ এই চার আঞ্চলিক প্রধানের মধ্যে সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব পালন করতেন। এ ছাড়াও তিনি বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং ছাত্রলীগের সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করতেন। বিএলএফ দেশের অভ্যন্তরে ২০ হাজার ছাত্র-যুবককে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে কাজী আরেফ আহমেদসহ নিউক্লিয়াসের সদস্যগণ ষাটের দশক থেকেই ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন এবং বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনকে কৌশলে মুক্তিযুদ্ধের দিকে ঠেলে নিয়ে গেছেন। যার চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। তাই দেশে স্বাধীনের জন্য পর্দার অন্তরালের কুশিলব প্রকৃতপক্ষে নিউক্লিয়াসের সদস্যগণ।
 
 
 
 
৮৫ ⟶ ৮৭ নং লাইন:
পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগের মধ্যে দু’টি ধারা বিদ্যমান ছিল। এক অংশের নেতৃত্ব দিতেন নিউক্লিয়াসের সদস্যগণ। এরা সবসময় কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ নিজেদের পছন্দের ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রণের রাখার চেষ্টা করতেন। শুরু থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত এ প্রচেষ্টয় তাঁরা সফল হয়েছিলেন। এ অংশের নেতারা অনেক আগে থেকেই স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্লোগান বা বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় তৎকালিন প্রচার সম্পাদক স্বাপন কুমার চৌধুরী প্রস্তাব উত্থাপন করেন যে, যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগেকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদান করেছে, তাই আওয়ামী লীগের উচিত এখন স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের ঘোষণা করা। এদিন এ প্রশ্নে বর্ধিত সভা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।
 
স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল দলের সম্বন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধু [[শেখ মুজিবুর রহমান|শেখ মুজিব রহমানেররহমানে]]<nowiki/>র কাছে দাবি তোলে ছাত্রলীগের এ অংশের নেতারা। এ বিষয়ে [[সিরাজুল আলম খান|সিরাজুল আলম খানেরখানে]]<nowiki/>র সাথে বঙ্গবন্ধুর কয়েকবার কথাবার্তাও হয়। কিন্তু তেমন সারা পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীন দেশে ছাত্রলীগ প্রথম সম্মেলন আহ্বান করা হয়। সে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিভক্তি ঘটে। ২১, ২২ ও ২৩ জুলাই ১৯৭২ এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান সিরাজের নেতৃত্বের অংশ পল্টন ময়দানে এবং সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বাংশ সম্মেলন আহবান করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। উভয় অংশই প্রধান অতিথি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনে যোগ দেন। এ থেকেই ছাত্রলীগ পৃথক হয়ে পড়ে। অবিভক্ত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আটজন সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকীর পক্ষে এবং অবশিষ্টরা শাহজাহান সিরাজের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ পরিস্থিতিতে শাহজাহান সিরাজের অংশের সাবেক ছাত্রনেতা অনুধাবণ করেন যে, বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে না। এদিকে সে সময়ের বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে অনেকের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে সমাজতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ৩১ অক্টোবর গঠন করা হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ। স্বাধীন বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ ঘটা প্রথম রাজনৈতিক দল জাসদ। বিজয়ীর বেশে মুক্তিযুদ্ধ ফেরত এক ঝাঁক উদীয়মান ও তরুণ স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে গঠন করেন জাসদ। আত্মপ্রকাশকালে ৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যগণ ছিলেন, যুগ্মআহ্বায়ক: মেজর (অব.) এম এ জলিল ও আ স ম আব্দুর রব, সদস্য: শাহজাহান সিরাজ, বিধান কৃষ্ণ সেন, রহমত আলী, সুলতান উদ্দিন আহমেদ ও [[নুরে আলম জিকু]]। এই প্রক্রিয়ার পেছনে ছিলেন নিউক্লিয়াস সদস্য [[সিরাজুল আলম খান]] ও কাজী আরেফ আহমেদ। নিউক্লিয়াসের অপর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জাসদ গঠনের সকল প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত থাকলেও তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি যে, বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করা সম্ভব। আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য জনাব রহমত আলী (পরবর্তীতে শ্রীপুরের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন) পরদিন বিবৃতি দেন যে, জাসদ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এদিন দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় লেখা হয়, ‘রজনী না পোহাতেই সপ্তর্ষীমণ্ডল থেকে একটি নখত্র খসে পড়লো।’ পরে জানা যায় যে, আওয়ামী লীগের তৎকালিন নেতৃবৃন্দ তাকে হুমকী দিয়ে জাসদ থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
 
জাসদের মুল লক্ষ্য ছিল, শ্রেণীবৈষম্যহীন স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। যে স্বপ্ন বুকে ধারণ করে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন; সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে গঠন করা হয় জাসদ। কাজী আরেফ আহমেদ ছিলেন সেই স্বপ্নদ্রষ্টাদের মধ্যে প্রথম সারির একজন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাহসিকতার সাথে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণআন্দোলন সংগঠিত ও পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন কাজী আরেফ আহমেদ। দলের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়, ‘আমরা লড়ছি শ্রেণিসংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’। দলটির রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ গ্রহণ করা হয়। ১৯৭২ সালে আত্মপ্রকাশের পর সারাদেশে জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় জাসদ। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা এবং যুবসমাজের মধ্যে সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটে ব্যাপকভাবে। একারণে শুরু থেকেই জাসদকে ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়তে হয়।
৯৫ ⟶ ৯৭ নং লাইন:
==জোটবদ্ধ আন্দোলন==
 
[[১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট]] বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিকভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন কাজী আরেফ আহমেদ ও তার দল। তিনি ৭৫ এর পটপরিবর্তনের রাজনৈতিক মূল্যায়ন করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে মোকাবেলায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের রাজনৈতিক নীতি-কৌশল প্রণয়ন করেন। এ কৌশলেরভিত্তিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে মেরুকরণের উদ্যোগ নেন। তার এ নীতি-কৌশলের ভিত্তিতেই ১৯৭২ থেকে [[১৯৭৫]] পর্যন্ত বৈরী রাজনৈতিক অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ ও জাসদ ১৯৮০ সালে ১০ দলীয় ঐক্য মোর্চায় শামিল হয়। তার এ নীতি-কৌশলের ভিত্তিতেই ১৯৮০ দশকে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য মোর্চা গড়ে ওঠে। স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আট বছরের লড়াইয়ে রাজপথে যে জোটটি পরিণত হয়ে উঠেছিল আন্দোলন-সংগ্রামের প্রধান চালিকা শক্তি; সেই "[[পাঁচ দল]]"র শীর্ষ নেতৃত্ব ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ৩১শে জুলাই তারিখে কাজী আরেফ কারাবরণ করেন এবং ৩১শে মার্চ [[১৯৮৮]] তারিখে মুক্তি পান। এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে সংঘটিত [[১৯৯০]] এর ঐতিহাসিক ছাত্রগণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান সাহসী রূপকার ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ।
 
==জাতীয় সমন্বয় কমিটি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা==
 
[[জিয়াউর রহমান|জেনারেল জিয়াউর রহমানেররহমানে]]<nowiki/>র সময়ে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম বাংলাদেশে আসে।১৯৯১ সালের ২৯শে ডিসেম্বর [[গোলাম আযমকেআযম]]<nowiki/>কে জামায়াতে ইসলামের আমির ঘোষণা করলে, ফুসে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠন ও সুধীজন। গড়ে ওঠে বেশকয়েকটি অরাজনৈতিক সংগঠন। তারমধ্যে [[একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি|‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন’ ও ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’]] অন্যতম। এরা পৃথক ব্যানারে রাজাকার-আলবদর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ শুরু করে। কাজী আরেফ আহমেদ বিশ্বাস করতেন যে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর ঐক্য ব্যতীত ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রক্ষা করা সম্ভব নয়, সম্ভব নয় মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো ধরে রাখা। তাই তিনি [[জাহানারা ইমাম|শহীদ জননী জাহানারা ইমাম]]<nowiki/>কে সাথে নিয়ে গড়ে তোলন ‘[[মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’।]] সে সময় ঘাতক-দালাল বিরোধী লড়াইয়ে ব্যাপক সাড়া জাগানো সংগঠন "[[মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ড"]] গঠনে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি গোলাম আজমসহ একাত্তরের ঘাতক-দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় [[২৬শে মার্চ ১৯৯২ তারিখে]] ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে [[গণআদালত’|‘গণআদালত’]] বসে। এ আদালত গোলাম আজমকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং প্রতিকী ফাঁসি দেয়। এই গণআদালত সংঘটন ও এ আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন আদায়ে কাজী আরেফ মুখ্যভূমিকা পালন করেন। ঘাতক-দালাল ও রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সে আন্দোলন ও জনমতের কারণেই ২০০৯ সালে আওয়ামী ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সংঘটিত অপরাধের বিচারকার্য পরিচালনা করতে পেরেছে।