কাজী আরেফ আহমেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৬২ নং লাইন:
==জাতীয় পতাকায় অবদান==
স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের মূল লক্ষ্য ছিল এই দেশকে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে নিউক্লিয়াস। শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিবকে ৭ জুন ১৯৭০<ref>{{বই উদ্ধৃতি|title=কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস|last=|first=|publisher=রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব|year=|isbn=|location=|pages=}}</ref> তারিখে অভিবাদন জানানোর এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ছাত্রলীগও একটি বাহিনী গঠন করে ঐ দিন বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানানোর কর্মসুচিতে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। নিউক্লিয়াস এ বাহিনী গঠনের দায়িত্ব প্রদান করে কাজী আরেফ আহমেদকে। এ বাহিনীর নাম দেওয়া হয় জয়বাংলা বাহিনী। এ বাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় আ স ম আব্দুর রবকে। নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে বাহিনীর জন্য একটি পতাকা বানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অভিবাদনকালে বঙ্গবন্ধু এ পতাকা [[জয়বাংলা বাহিনী]]<nowiki/>কে প্রদান করবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় কাজী আরেফ আহমেদের উপর।
৭৬ নং লাইন:
পরদিন, অর্থাৎ ৭ জুন, সকাল থেকেই মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। কর্দমাক্ত মাঠে জয়বাংলা বাহিনী কুচকাওয়াজের সাথে এগিয়ে আসছিলো। বাহিনীর সবার পড়নে ছিল সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট, মাথায় লাল-সবুজ টুপি এবং হাতে লাল-সবুজ ব্যান্ডে লেখা ‘[[জয়বাংলা বাহিনী’|জয়বাংলা বাহিনী]]<ref name=":1" />[[জয়বাংলা বাহিনী’|’]]। মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদ। বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পলিথিনে পেঁচিয়ে কাজী আরেফ পতাকা নিয়ে অবস্থান নিলেন । [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব]] কুচকাওয়াজের তালে মঞ্চের কাছে এসে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পতাকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু কাজী আরেফ আহমেদের হাত থেকে পতাকাটি নিয়ে উপস্থিত জনতাকে দেখান। এরপর আ স ম আব্দুর রবের কাছে পতাকাটি হস্তান্তর করেন। আ স ম আব্দুর রব কুচকাওয়াজের তালে মঞ্চের সামনে দিয়ে চলে যান। এই পতাকাটিই [[২ মার্চ ১৯৭১]], ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের বটতলায় লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব]] উত্তোলন করেন। ২৩ মার্চ ছিল [[পাকিস্তানের পতাকা দিবস]]। এদিন সেনানিবাস ব্যতীত, ঘরে ঘরে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা উড়ানো হয়।
==মুক্তিযুদ্ধে ভুমিকা==
নিউক্লিয়াসের মুল লক্ষ্যই ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে এ দেশকে স্বাধীন করা। ষাটের দশকের শেষ থেকেই নিউক্লিয়াস মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। বিশেষ করে ১৯৭০ এর নির্বাচনের পর পুরোদমে প্রস্তুতি চলতে থাকে। জাতীয় পতাকা তৈরি, জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন, [[শেখ মুজিবুর রহমান|বঙ্গবন্ধু]]<nowiki/>কে সশস্ত্র অভিবাদন জানানোর জন্য জয়বাংলা বাহিনী গঠন, ২ মার্চ [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে]] পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ [[বাধীনতার ইশতেহার|স্বাধীনতার ইশতেহার]] পাঠ ইত্যাদি সবই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও মহড়া। ১৯৬৯ -এর গণঅভ্যুত্থানের পর নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে স্লোগান তোলা হয়, [[তুমি কে আমি কে - বাঙালি বাঙালি]]; [[পদ্মা মেঘনা যমুনা - তোমার আমার ঠিকানা।]] আবার ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর স্বাধীনতার পথ অনেকটাই খুলে যায়। এ সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাঙালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমশি করছিলো। ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য এনে বাঙালিদের নিধন করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। নিউক্লিয়াসের সদস্যগণ এ সময়ে পুরোদমে যুদ্ধের জন্য জাতিকে প্রস্তুত করতে থাকে। যদিও অস্ত্রশস্ত্রের দিক থেকে এ প্রস্তুতি মোটেও কার্যকর নয়, কিন্তু মানসিকভাবে জাতিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার কারণে [[২৫ মার্চ]] রাতে এবং পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এ সময়ে নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে স্লোগান তোলা হয়, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর - বাংলাদেশ স্বাধীন কর। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ‘[[বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’|স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’]]
৮৫ ⟶ ৮৭ নং লাইন:
পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগের মধ্যে দু’টি ধারা বিদ্যমান ছিল। এক অংশের নেতৃত্ব দিতেন নিউক্লিয়াসের সদস্যগণ। এরা সবসময় কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ নিজেদের পছন্দের ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রণের রাখার চেষ্টা করতেন। শুরু থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত এ প্রচেষ্টয় তাঁরা সফল হয়েছিলেন। এ অংশের নেতারা অনেক আগে থেকেই স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্লোগান বা বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় তৎকালিন প্রচার সম্পাদক স্বাপন কুমার চৌধুরী প্রস্তাব উত্থাপন করেন যে, যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগেকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদান করেছে, তাই আওয়ামী লীগের উচিত এখন স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের ঘোষণা করা। এদিন এ প্রশ্নে বর্ধিত সভা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।
স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল দলের সম্বন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধু [[শেখ মুজিবুর রহমান|শেখ মুজিব
জাসদের মুল লক্ষ্য ছিল, শ্রেণীবৈষম্যহীন স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। যে স্বপ্ন বুকে ধারণ করে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন; সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে গঠন করা হয় জাসদ। কাজী আরেফ আহমেদ ছিলেন সেই স্বপ্নদ্রষ্টাদের মধ্যে প্রথম সারির একজন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাহসিকতার সাথে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে বিপ্লবী গণআন্দোলন সংগঠিত ও পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন কাজী আরেফ আহমেদ। দলের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়, ‘আমরা লড়ছি শ্রেণিসংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’। দলটির রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ গ্রহণ করা হয়। ১৯৭২ সালে আত্মপ্রকাশের পর সারাদেশে জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় জাসদ। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা এবং যুবসমাজের মধ্যে সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটে ব্যাপকভাবে। একারণে শুরু থেকেই জাসদকে ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়তে হয়।
৯৫ ⟶ ৯৭ নং লাইন:
==জোটবদ্ধ আন্দোলন==
[[১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট]] বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিকভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন কাজী আরেফ আহমেদ ও তার দল। তিনি ৭৫ এর পটপরিবর্তনের রাজনৈতিক মূল্যায়ন করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিকে মোকাবেলায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের রাজনৈতিক নীতি-কৌশল প্রণয়ন করেন। এ কৌশলেরভিত্তিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে মেরুকরণের উদ্যোগ নেন। তার এ নীতি-কৌশলের ভিত্তিতেই ১৯৭২ থেকে [[১৯৭৫]] পর্যন্ত বৈরী রাজনৈতিক অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ ও জাসদ ১৯৮০ সালে ১০ দলীয় ঐক্য মোর্চায় শামিল হয়। তার এ নীতি-কৌশলের ভিত্তিতেই ১৯৮০ দশকে সামরিক শাসন বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য মোর্চা গড়ে ওঠে। স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আট বছরের লড়াইয়ে রাজপথে যে জোটটি পরিণত হয়ে উঠেছিল আন্দোলন-সংগ্রামের প্রধান চালিকা শক্তি; সেই "[[পাঁচ দল]]"র শীর্ষ নেতৃত্ব ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ৩১শে জুলাই তারিখে কাজী আরেফ কারাবরণ করেন এবং ৩১শে মার্চ [[১৯৮৮]] তারিখে মুক্তি পান। এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে সংঘটিত [[১৯৯০]] এর ঐতিহাসিক ছাত্রগণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান সাহসী রূপকার ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ।
==জাতীয় সমন্বয় কমিটি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা==
[[জিয়াউর রহমান|জেনারেল জিয়াউর
|