বঙ্গাব্দ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
[অপরীক্ষিত সংশোধন] | [অপরীক্ষিত সংশোধন] |
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
iw |
নিবন্ধ সমপূর্ণকরণ |
||
১ নং লাইন:
বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ সৌরপঞ্জিকা ভিত্তিক বর্ষপঞ্জি। বাংলাদেশ এবং পূর্ব ভারতের [[পশ্চিমবঙ্গ]], [[আসাম]] ও [[ত্রিপুরা]] অঞ্চলে এই বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয় । বাংলা সন শুরু হয় পহেলা বৈশাখ বা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে যে দিনটি ইংরেজী বর্ষপঞ্জির ১৫ এপ্রিল (ভারতে) অথবা ১৪ এপ্রিল এ (বাংলাদেশে) ।
বর্তমানে বাংলা সন হলো ১৪১৫ । বাংলা সন সব সময়ই গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির চেয়ে ৫৯৩ বছর কম ।
==ইতিহাস==
মধ্যযুগে বাংলা সনের প্রচলনের আগে কৃষি ও ভুমি কর বা খাজনা আদায় হতো ইসলামিক হিজরী বর্ষপঞ্জি অনুসারে । হিজরী বর্ষপঞ্জি চান্দ্রমাস নির্ভর বলে সব সময় কৃষি কর্মকান্ড অর্থ বর্ষের সাথে মিলতো না । তাতে কৃষিজীবিদের ফসলহীন ঋতুতে কর বা খাজনা দেবার জন্য বাধ্য করা হতো । এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মহান মুগল সম্রাট আকবর (শাসনকাল [[১৫৫৬]] খৃষ্টাব্দ হতে [[১৬০৫]] খৃষ্টাব্দ) বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেন । প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবি ও রাজকীয় জ্যের্তিবিদ আমীর ফতেউল্লাহ সিরাজী চান্দ্রমাস নির্ভর হিজরী বর্ষপঞ্জি এবং সৌরমাস নির্ভর হিন্দু বর্ষপঞ্জি গবেষণা করে একটি নতুন বর্ষপঞ্জি প্রস্তাব করেন । এর ফলেই সূচনা হলো বাংলা বর্ষপঞ্জির বা বাংলা সনের । বাংলা সনের সূচনা হয় ফসল তোলার সময়ে যখন কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে বছরের অন্য সময়ের চাইতে সচ্ছল থাকে । নতুন বর্ষপঞ্জি প্রথম দিকে ফসলী সন হিসেবে পরিচিত ছিল ।
ফসলী সনের প্রবর্তন হয়েছিল [[১০ মার্চ]] / [[১১ মার্চ]] [[১৫৮৪]] খৃষ্টাব্দে । কিন্তু তারিখ গণনা গুরু করা হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহনের তারিখ হতে । নতুন চালুকৃত এই বর্ষপঞ্জি পরবর্তীতে বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন হিসেবে পরিচিত হয় ।
==মাস==
বাংলা সনের বারো মাসের নামকরণ করা হযেছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । ধারণা করা হয য়ে এ নাম সমূহ এসেছে [[শকাব্দ]] হতে । শকাব্দ হচ্ছে এ অঞ্চলের ব্যবহৃত অন্য একটি সন গণনা পদ্ধতি যা শক সাম্রাজ্যের সময় হতে শুরু হযেছিল । বাংলা সনে আত্মীকৃত এ নামগুলো হচ্ছে -
• বৈশাখ - বিশাখা তারার নাম অনুসারে
• জ্যৈষ্ঠ - জ্যেষ্ঠ তারার নাম অনুসারে
• আষাঢ় - অষাঢ়া তারার নাম অনুসারে
• শ্রাবণ - শ্রাবণ তারার নাম অনুসারে
• ভাদ্র - ভাদ্রপদা তারার নাম অনুসারে
• আশ্বিন - অশ্বিনী তারার নাম অনুসারে
• কার্তিক - কৃত্তিকা তারার নাম অনুসারে
• অগ্রহায়ন - অগ্রাইহন তারার নাম অনুসারে
• পৌষ - পুশ্য তারার নাম অনুসারে
• মাঘ - মঘা তারার নাম অনুসারে
• ফাল্গুন - ফাল্গুনী তারার নাম অনুসারে
• চৈত্র - চিত্রা তারার নাম অনুসারে
বর্তমানে ব্যবহৃত বাংলা মাসের এ নামগুলো শুরুতে এরকম ছিল না । নাসগুলো পরিচিত ছিল পারস্যের সন অনুসারে, যেমন: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।
==দিন==
বাংলা সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহন করেছে এবং এ দিনের নামগুলো অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।
• [[সোমবার]] হচ্ছে [[সোম]] বা চন্দ্র দেবতার নাম অনুসারে
• [[মঙ্গলবার]] হচ্ছে [[মঙ্গল]] দেবতার নাম অনুসারে
• [[বুধবার]] হচ্ছে [[বুধ]] দেবতার নাম অনুসারে
• [[বৃহস্পতিবার]] হচ্ছে [[বৃহস্পতি]] দেবতার নাম অনুসারে
• [[শুক্রবার]] হচ্ছে [[শুক্র দেবতার নাম অনুসারে
• [[শনিবার]] হচ্ছে [[শনি]] দেবতার নাম অনুসারে
• [[রবিবার]] হচ্ছে [[রবি]] বা [[সূর্য]] দেবতার নাম অনুসারে
বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজী বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে ।
==সংশোধিত বাংলা সন==
[[বাংলা একাডেমী]] কর্তৃক বাংলা সন সংশোধন উদ্যোগ নেয়া হয় [[১৭ ফেব্রুয়ারী]] [[১৯৬৬]] সালে । [[ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ]]’র নেতৃত্বে এ কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও [[ঋতু]]তে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করে সেগুলো হতে উত্তরণের প্রস্তাববালী প্রদান করেন ।
বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির মতোই ৩৬৫ দিনের । যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেয়া হয়েছে । এ প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড । এই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরের [[ফেব্রুয়ারী]] মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয় । ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দীতে যে শতাব্দীকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না বা বিভাজ্য ।
জ্যোর্তিবিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে আত্মীকরণ করা হয়নি । বাংলা মাস অন্যান্য সনের মাসের মতোই বিভিন্ন পরিসরের । এই সমস্যাগুলোকে দূর করবার জন্য ডঃ মুহম্মদ শহীদূল্লাহ কমিটি বাংলা একাডেমীর কাছে কতকগুলো প্রস্তাব করে । এগুলো হচ্ছে ঃ-
• বছরের প্রথম পাঁচ মাস বৈশাখ হতে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের
• বাকী মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাস
• প্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১ দিনের
বাংলা একাডেমী সরকারীভাবে এই সংশোধিত বাংলা মাসের হিসাব গ্রহণ করে । যদিও ভারতের পশ্চিম বাংলায় পুরোনো বাংলা সনের প্রচলনই থেকে গেছে ।
== বাংলা সনের সংস্কারকৃত ও পূর্বতন সংস্করণ ==
[[পহেলা বৈশাখ]], বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন । বাংলাদেশে বাংলা একাডেমী কর্তৃক সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে এদিন উদযাপন করা হয় প্রতি বছরের [[এপ্রিল ১৪]] তারিখে । যদিও পশ্চিম বঙ্গে তা উদযাপন করা হয় পূর্বতন বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে । এটা পাশ্চ্যাতের বর্ষপঞ্জির মতো নির্দিষ্ট নয় । ভারতের বাঙালীরা নতুন বছর উদযাপন করে এপ্রিল ১৫ তারিখে ।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গে বাঙালীরা [[সিডেরিয়েল]] ( পৃথিবীর কক্ষপথ ভ্রমণের সময়ের পরিমাপ; জ্যোর্তিমন্ডলে তারার অবস্থান অর্থাৎ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর যে সময় লাগে সেটাই সিডেরিয়েল সৌরপঞ্জি । এক্ষেত্রে সিডেরিয়েল অর্থ হচ্ছে ৩৬৫.২৫৬৩৬০২ সৌর দিবস যা [[ক্রান্তীয়]] বর্ষপঞ্জি হতে ২০ মিনিট ২৪ সেকেন্ড দীর্ঘ । ) সৌরপঞ্জি নির্ভর বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করে থাকে । এই বর্ষপঞ্জি ক্রান্তীয় সৌরবঞ্জি যেমন সংস্কারকৃত বাংলা সন এবং গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি হতে আলাদা । এই উভয় ধরণের বর্ষপঞ্জির মধ্যে সময়ের যে গাণিতিক পার্থক্য রয়েছে তার কারণেই বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের নতুন বর্ষ শুরুতে দিনের পার্থক্য হয় । এই সময়ের পার্থক্যের কারণে সেডেরিয়াল সৌর বর্ষপঞ্জিতে মাসের দৈর্ঘে পার্থক্য রয়েছে ।
==অধিবর্ষ (লীপ ইয়ার) ==
সংস্কারকৃত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে ফাল্গুন (যা ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি শুরু হয়) মাস প্রতি চতুর্থ বর্ষে ৩১ দিনের হয় । মিল রাখবার উদ্দেশ্যে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সাথে সাথেই বাংলা লীপ ইয়ার হয় । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ফাল্গুন ১৪১০ ছিল বাংলা অধিবর্ষের (লীপ ইয়ার) মাস যা পড়েছে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষ ২০০৪ এর ফেব্রুয়ারী মাসে ।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গ সৌরপঞ্জি নির্ভর সিডেরিয়েল বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করে থাকে । এই বর্ষপঞ্জির মাসগুলো নির্ধারিত হয় সূর্যের প্রকৃত আবর্তনকে ভিত্তি করে । এই বর্ষপঞ্জিতে বর্ষ সংখ্যা হতে সাত বিয়োজন করে তা ৩৯ দিয়ে ভাগ করতে হয় । যদি ভাগশেষ শূন্য হয় বা ৪ দিয়ে বিভাজ্য হয় তাহলে সে বর্ষটিকে অধিবর্ষ হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ৩৬৬ দিনের এই বর্ষের চৈত্র মাস ৩১ দিনের হয় । প্রতি ৩৭ বছরে ১০ টি অধিবর্ষ হয় ।
==ব্যবহার==
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ঋতু বৈচিত্রকে ধারন করবার কারণে বাংলা সনের জনপ্রিয়তা এসেছে । দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পূর্বাঞ্চলের জলবায়ুকে ষঢ়ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে । এগুলো হচ্ছে [[বসন্ত]], [[গ্রীষ্ম]], [[হেমন্ত]] এবং [[শীত]] ঋতুর সাথে [[বর্ষা ও [[শরৎ]] ঋতু । বাংলা সনের মাসগুলোর উপর ভিত্তি করেই এই ঋতু বিভাজন করা হয়েছে ।
বাঙালী সংস্কুতিতে বাংলা সনের ব্যবহার এখন আর পূর্বের পর্যায়ে নেই । নাগরিক জীবন যাপনের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় এর ব্যবহার এখন কেবল কৃষিজীবীদের মধ্যেই সীমাবব্ধ হয়ে পড়েছে । কৃষিজীবীরা এখনো বীজতলা তৈরী, বীজ বপন, ফসলের যত্ন, ফসল তোলা ইত্যাদি যাবতীয় কাজে বাংলা মাসের ব্যাপক ব্যবহার করেন ।
ব্যবসায় ব্যবস্থায় পূর্বের সেই বাংলা সন ভিত্তিক হিসাব ব্যবস্থা এখন গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি নির্ভর হয়ে পড়েছে । যার ফলে ব্যবসায়ের হিসাবের খাতা এখন রাষ্ট্রের আইনে যাকে সহজভাবে গ্রহণ করে সে পদ্ধতিতে রাখা হয় । ষাট বা সত্তুর দশকেও যে হালখাতা দেখা যেতো উৎসবের মতো করে, তা দিনে দিনে ফিকে হতে হতে প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে ।
ধর্মীয় ক্ষেত্রে বাংলায় (বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গ) [[পূজা]] এখনো বাংলা বর্ষপঞ্জি নির্ভর ।
সামজিক ব্যবস্থায় মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো, যেমন [[বিয়ে, [[গৃহপ্রবেশ]], [[অন্নপ্রাশন]], [[সাধভক্ষণ]], [[জামাই ষষ্ঠী]], [[ভাই ফোঁটা]] ইত্যাদি অনুষ্ঠানের দিন নির্বাচনে বাংলা মাসের দিনকেই গুরুত্ব দেয় ।
উৎসব পার্বন যেমন [[পৌষ সংক্রান্তি]], [[চৈত্র সংক্রান্তি]] এগুলোও বাংলা মাস নির্ভর ।
শহুরে মানুষরা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সাম্প্রতিক কালে পহেলা বৈশাখকে একটি সার্বজনীন ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবের রূপ দিতে সচেষ্ট এবং অনেকখানি সফলও বলা যায় । পারস্যের [[নওরোজ| নওরোজের]] মতো বাংলা নববর্ষও সার্বজনীন উৎসবের মর্যাদায় এগিয়ে যাচ্ছে ।
==সহযোগী বর্ষপঞ্জী==
বাংলা সন ওতপ্রোতভাবে হিন্দু সৌর পঞ্জিকার সাথে সম্পর্কিত যেটা আবার সূর্য সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল । হিন্দু সৌর পঞ্জিও শুরু হয় মধ্য এপ্রিলে । বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গের বাইরে [[আসাম, [[কেরালা]],[[ মনিপুর]], [[নেপাল]], [[উড়িষ্যা]], [[পাঞ্জাব]], [[তামিলনাড়ু]] এবং [[ত্রিপুরায়]] এই বর্ষপঞ্জির প্রথম দিনকেই নতুন বর্ষের শুরু হিসেবে উদযাপন করা হয় । নববর্ষ আবার “[[মেসা সংক্রান্তি]]” হিসেবেও পরিচিত ।
¬
==তথ্য সূত্র==
[http://en.wikipedia.org/wiki/Bengali_calendar ইংরেজী উইকিপিডিয়া ]
[[Category: বাংলা মাস]]
|