ভারতে নারী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
→‎top: বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্য থাকল এর পরিচালককে জানান।
Ritadip (আলোচনা | অবদান)
সম্প্রসারণ
৪৮ নং লাইন:
ভারতে নারীবাদী কর্মকান্ডের সক্রিয়তা ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে গতি লাভ করে। জাতীয় স্তরের যে বিষয়গুলি প্রথম নারীবাদী সংগঠণগুলিকে সংঘবদ্ধ করে মথুরা ধর্ষণ মামলা তাদের মধ্যে একটি। ১৯৭৯-১৯৮০ সালে থানায় ভিতর মথুরা নামের একটি অল্পবয়সী মেয়েকে ধর্ষণে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীরা বেকসুর খালাস পাওয়ায় দেশব্যাপী বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়। জাতীয় প্রচার মাধ্যমগুলি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রচারিত এইসমস্ত বিক্ষোভ সরকারকে প্রমাণ সংক্রান্ত আইন(Evidence Act), ফৌজদারী কার্যবিধি(Criminal Procedure Code) এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির(Indian Penal Code) সংশোধন করতে বাধ্য করে; এবং হেফাজতে থাকাকালীন ধর্ষণ(custodial rape) নামে একটি নতুন অপরাধ নথিবদ্ধ হয়। শিশুকন্যা হত্যা, লিঙ্গ বৈষম্য, নারী স্বাস্থ্য, নারী নিরাপত্তা এবং নারী শিক্ষার মতো বিষয়গুলি নিয়েও নারী আন্দোলনের কর্মীরা একতাবদ্ধ হন।
 
যেহেতু ভারতবর্ষে মদ্যাশক্তি অধিকাংশ সময়েই নারীদের বিরুদ্ধে হিংসার সঙ্গে জড়িত, তাই বেশ কয়েকটি মহিলা সংগঠণ অন্ধ্র প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, ওড়িশা, মধ্য প্রদেশ এবং অন্যান্য রাজ্যে মদ বিরোধী প্রচার শুরু করে। অনেক ভারতীয় মুসলিম নারী শরীয়তের আইন অনুসারে নারীর অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন এবং তিন তালাক ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন(২০১৭ এর ঘটনাবলী জানতে নিচে দেখুন)।
 
১৯৯০ এর দশকে বেশ কিছু বিদেশী সংস্থার অনুদানে কিছু নতুন নারী-কেন্দ্রিক বেসরকারি সংগঠন গড়ে ওঠে। এইসব স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং “স্ব-নিযুক্ত নারী সমিতি” (Self Employed Women's Association বা সেবা)-র মতো বেসরকারি সংগঠন ভারতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্থানীয় আন্দোলনের নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন মেধা পাটকারের(নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন) মতো বহু প্রভাবশালী নারী।
 
ভারত সরকার ২০০১ সালকে নারীর ক্ষমতায়ন বা স্বশক্তি বর্ষ হিসাবে ঘোষণা করেন। নারী ক্ষমতায়নের জন্য জাতীয় নীতিটি পাস ২০০১ সালেই হয়।
 
২০০৬ সালে, ইমরানা নাম্নী এক মুসলিম মহিলাকে ধর্ষণের মামলটি গণমাধ্যম কর্তৃক প্রচারিত হয়। ইমরানাকে তার শ্বশুর ধর্ষণ করে। কিছু মুসলিম নেতাদের ধর্মীয় করা ইমরানর সঙ্গে তার শ্বশুরের বিবাহের সুপারিশ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় এবং
 
অবশেষে ইমরানার শ্বশুরের ১০ বছরের কারাদন্ড হয়। এই রায়কে বহু মহিলা সমিতি এবং সর্বভারতীয় মুসলিম ব্যক্তিগত আইন বোর্ড(All India Muslim Personal Law Board) স্বাগত জানায়।
 
থমসন রয়টার্সের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত মহিলাদের জন্য বিশ্বের চতুর্থ বিপজ্জনক দেশ। রিপোর্টটিতে ভারত জি-২০ দেশগুলির মধ্যে নারীদের জন্য সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর দেশ হিসেবেও উল্লিখিত হয়, তবে এই রিপোর্টটি ভ্রান্তিযুক্ত হওয়ার জন্য সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। ৯ মার্চ ২০১০ তারিখে, আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের একদিনের পর, রাজ্যসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস হয়, যা ভারতের সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষিত করে। ২০১৭ সালে থমসন রয়টার্স কর্তৃক প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় অনুযায়ী,দিল্লী মহিলাদের জন্য চতুর্থ বিপজ্জনকতম মহানগর(বিশ্বের ৪০ টি মহানগরের মধ্যে) এবং মহিলাদের উপর যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হয়রানির ঝুঁকিতে এটি বিপজ্জনকতম মহানগর।
 
২০১৪ সালে, মুম্বাইয়ের একটি ভারতীয় পরিবার-আদালতের রায় অনুযায়ী, একজন স্বামী তার স্ত্রীকে কুর্তা ও জিন্স পরিধানে বাধা দিলে এবং শাড়ি পরিধানে বাধ্য করলে তা স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতার প্রদর্শন হিসেবে গণ্য হবে এবং তা বিবাহবিচ্ছেদের দাবির বৈধ কারণ হতে পারে। এভাবে ১৯৫৪ সালের বিশেষ বিবাহ আইনের ২৭(১)ডি) ধারা অনুসারে নিষ্ঠুরতার ভিত্তিতে ওই মহিলার বিবাহবিচ্ছেদের দাবি মঞ্জুর করা হয়।
 
২২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাত্ক্ষণিক তিন তালাক (তালাক-ই-বিদ্বাত) অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেন।
 
নারীর অবস্থার ধারাবাহিক পরিবর্তন কীভাবে হয়েছে, নারীদের অর্জিত এই সাফল্যগুলি তা তুলে ধরতে পারে:
 
বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি নারী রাজনীতিবিদ আছেন, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার, বিরোধী দলনেতা সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে মহিলারা বিভিন্ন সময় দায়িত্ব সামলেছেন। ভারতের অঙ্গরাজ্য মধ্যপ্রদেশ, বিহার, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, কেরালা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, রাজস্থান ও ত্রিপুরায় নারীদের জন্য পি.আর.আই গুলিতে ৫০% সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই পঞ্চায়েতগুলির বেশিরভাগ প্রার্থীই নারী। বর্তমানে(২০১৫ সালে) কেরালার কোদাসেরী পঞ্চায়েতের সকল নির্বাচিত সদস্যই মহিলা। বর্তমানে ভারতের একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা।
 
২০১৬ সাল পর্যন্ত হিসাবে, ২৯ টি রাজ্যের মধ্যে ১২ টিতে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লিতে স্বাধীনতার পর থেকে কমপক্ষে এজন করে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী কার্যভার গ্রহণ করেছেন।
 
ভারতে মহিলাদের অবস্থা ভীষণভাবে পারিবারিক গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ভারতে, পরিবার এবং পারিবারিক সম্পর্কে ভীষণরকম গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারগুলি পিতৃগোত্রজ। পরিবারগুলি সাধারণত বহু-প্রজন্মের, এবং বিবাহিত মহিলারা শ্বশুরালয়ে বাস করেন। অধিকাংশ পরিবারে নবীন সদস্যরা প্রবীনদের এবং মহিলারা পুরুষদের অভিভাবকত্বে থাকেন। অধিকাংশ বিবাহই একগামী (এক স্বামী এবং এক স্ত্রীর), তবে ভারতে কিছু জনকোষ্ঠীর মধ্যে পুরুষ ও নারী উভয়েরই বহুবিবাহ করার ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতে বিবাহানুষ্ঠান বেশ ব্যয়বহুল একটি অনুষ্ঠান। ভারতে অধিকাংশ বিবাহই সম্বন্ধের মাধ্যমে স্থির হয়।
 
শাড়ি (লম্বা একখন্ড কাপড় যা শরীরের চারপাশে বিভিন্ন কায়দায় জড়িয়ে বা পেঁচিয়ে পড়া হয়) এবং সালোয়ার কামিজ ভারতীয় মহিলাদের প্রধান পোশাক। টিপ  এদেশের মহিলাদের প্রসাধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। কপালের টিপ বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকার নির্দেশক নয়; তবে, সিঁথির সিঁদুর বহন করে বিবাহিতা সধবা হিন্দু মহিলার পরিচয়চিহ্ণ
 
রঙ্গোলি (বা কোলাম) ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি প্রথাগত শিল্প।
 
ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী, পরিবারগুলি সাধারণত দিনের শুরুতে ঈশ্বরের পূজা-উপাসনা করেন ("আরতি" -ভারতীয় পূজাপদ্ধতির অঙ্গ)।
 
"ভারতীয় জীবনধারা স্বাভাবিক, বাস্তব জীবনধারার দৃষ্টিকেভঙ্গিকে নির্দেশ করে। আমরা কৃত্রিমতার মুখোশ দিয়ে নিজেদেরকে ঢেকে রেখেছি। ভারতের মুখভঙ্গির কোমল ভাব সৃষ্টিকর্তার হাতের চিহ্ন বহন করে।"......জর্জ বার্নার্ড শ
 
১৯৯২ সাল থেকে ভারতীয় সেনা বাহিনী চিকিৎসা বা শুশ্রুষা সংক্রান্ত নয় এমন পদেও মহিলাদের নিয়োগ করা শুরু করে। ১৯৯২ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী নারী অধিকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ২০১৩ সালের ২৫ মার্চ নারী অধিকর্তা নিয়োগ শুরু করে। ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ, তনুশ্রি পারেখ বিএসএফ এর প্রথম মহিলা কমব্যাট অফিসার নিযুক্ত হন।
 
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে, ভারত সরকার ঘোষণা করেন যে, ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ)-এ মহিলারা যোদ্ধা বিমানচালক(fighter pilot) হিসেবে কাজ করতে পারবেন, যার আগে মহিলাদেরা কেবলমাত্র পণ্যবাহী বিমান ও হেলিকপ্টার চালনার অনুমতি ছিল। সিদ্ধান্তটির ফলে মহিলারা বিমান বাহিনীর যেকোনও পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা লাভ করেন। ২০১৬ সালে, ভারত সরকার তার একটি ঘোষণায় সেনা এবং নৌবাহিনীর সব বিভাগে নারীদের যুদ্ধক্ষেত্র অবতীর্ণ হওয়ার অনুমতি দেয়।
 
২০১৪ সালের হিসাবে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর  ৩%, নৌবাহিনীর ২.৮% এবং বিমান বাহিনীর ৮.৫% সদস্য মহিলা। ২০১৬ সালের হিসাবে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সকল সক্রিয় এবং সংরক্ষিত বাহিনীর ৫% নারী।
 
১৯৯২-৯৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে মাত্র ৯.২% পরিবার নারীদের দ্বারা চালিত হয়। তবে, দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলির প্রায় ৩৫%  নারীদের পরিচালনাধীন।
 
যদিও ভারতে মহিলা সাক্ষরতার হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবু তা এখনো পুরুষ সাক্ষরতার হারের তুলনায় কম। ছেলেদের তুলনায় কম সংখ্যক মেয়ে স্কুলে ভর্তি হয় এবং অনেক মেয়েই স্কুলছুট। দেশের শহরাঞ্চলে মেয়েরা শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে ছেলেদের প্রায় সমান। তবে, গ্রামাঞ্চলে এখনো মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় কম শিক্ষিত হয়। ১৯৯৭ সালের জাতীয় নমুনা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, কেবলমাত্র কেরালা ও মিজোরামের সার্বজনীন মহিলা সাক্ষরতা অর্জন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেরালায় নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের উন্নতির প্রধান কারণ হচ্ছে সাক্ষরতা।