কম্পিউটার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
+ আরও দেখুন
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সংশোধন
১৫ নং লাইন:
উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ ও ব্যবহারের ধারণা (যা কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানে যেকোনও রকম বুদ্ধিমত্তা ব্যতিরেকে, গাণিতিক হিসাব করতে পারে) প্রথম সোচ্চার ভাবে প্রচার করেন [[চার্লস ব্যাবেজ]]। তিনি এটির নাম দেন [[ডিফারেন্স ইন্জিন]] (Difference Engine)। এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় ([[১৮৩৩]] সালে) তিনি [[অ্যানালিটিক্যাল ইন্জিন]] নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রে ধারনা লাভ করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই তিনি শেষ করতে পারেননি।
 
[[কম্পিউটার বিজ্ঞান|কম্পিউটার বিজ্ঞানের]] সত্যিকার সূচনা হয় [[অ্যালান টুরিং]] এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। [[১৯৭১ সাল|১৯৭১ সালে]] মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। বাজারে প্রচলিত হয় বিভিন্ন প্রকৃতি ও আকারের কম মূল্যের অনেক রকম [[ব্যক্তিগত কম্পিউটার|পার্সোনাল কম্পিউটার]] (Personal Computer) বা পিসি (PC)। সে সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক রকম [[অপারেটিং সিস্টেম]], [[প্রোগ্রামিং ভাষা|প্রোগ্রামের ভাষা]], অগণিত ব্যবহারিক [[প্যাকেজ প্রোগ্রাম]]। এরসাথে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও [[ইন্টারনেট|ইন্টারনেটের]] এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ও পরিসেবার। কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে অসংখ্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক কালে কম্পিউটার ও [[তথ্য প্রযুক্তি]] (Information Technology) বা আইটি (IT) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট অংশ দখল করেছে এবং কর্মসংস্থান হয়ে পড়েছে অনেকাংশেই কম্পিউটার নির্ভর।<ref name="Banglapedia">{{বই উদ্ধৃতি |last=মোঃ মাহবুব মোর্শেদ | first=মাসুদ হাসান চৌধুরী |year=২০১৪|chapter=কম্পিউটার |chapter-url=http://www.banglapedia.org/index.php?title=কম্পিউটার | title= [[বাংলাপিডিয়া]]:বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ | edition=দ্বিতীয় | publisher=[[বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি]]}}</ref>
 
[[যুক্তরাষ্ট্র|যুক্তরাষ্ট্রের]] [[ইন্টেল কর্পোরেশন]] ১৯৭১ সালে [[মাইক্রোপ্রসেসর]] উদ্ভাবন করার পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার। তখন থেকে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে [[আই.বি.এম]] কোম্পানির [[ব্যক্তিগত কম্পিউটার|পার্সোনাল কম্পিউটার]] বা পিসি। এর পর একের পর এক উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী [[ব্যক্তিগত কম্পিউটার|পিসি]]। আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই [[আই.বি.এম কমপ্যাটিবল কম্পিউটার]] (IBM compatible computer) তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপকহারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একই সময় আই.বি.এম কোম্পানির পাশাপাশি [[অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড|অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেট]] (Apple Computer Inc) তাদের উদ্ভাবিত অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ (Apple-Macintosh) কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে। কিন্তু অ্যাপল কোম্পানি তাদের কমপ্যাটিবল কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে কোনোরূপ উদারতা প্রদর্শন না করায় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য থেকে যায় অত্যধিক বেশি, যার ফলে [[অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড|অ্যাপল]] তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। তবে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যবহারিক সুবিধার কারণে মূলত মুদ্রণ শিল্পে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হতো।<ref name="Banglapedia"/>
 
====বাংলাদেশে কম্পিউটারে ইতিহাস====
[[বাংলাদেশ|বাংলাদেশে]] কম্পিউটার ব্যবহারের সূচনা হয় ষাটের দশকে এবং নববই-এর দশকে তা ব্যাপকতা লাভ করে। দশকের মধ্যভাগ থেকে এ দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। পাকিস্তান [[পরমাণু শক্তি]] কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, [[ঢাকা]]-তে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন [[পূর্ব পাকিস্তান]]) প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল [[আইবিএম]] (International Business Machines - IBM) কোম্পানির 1620 সিরিজের একটি [[মেইনফ্রেম কম্পিউটার]] (Mainframe Computer)। যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল [[গবেষণা]] কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ।<ref name="Banglapedia"/>
 
ষাটের দশকে দেশে ও বিদেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণাসহ ব্যাংক-বীমা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে দ্রুত প্রসার ঘটতে শুরু করে; এবং এজন্য রুটিন হিসাবের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি প্রয়োজন হয়ে পড়ে হিসাবে দ্রুততা আনয়নের। বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে হিসাব পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এসময় দেশের কয়েকটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ব্যয়বহুল [[মেইনফ্রেম কম্পিউটার]] স্থাপন করে। ষাটের দশকের শেষ দিকে তদানীন্তন [[হাবিব ব্যাংক লিমিটেড (পাকিস্তান)|হাবিব ব্যাংক]] IBM 1401 কম্পিউটার এবং [[ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইন্ডিয়া|ইউনাইটেড ব্যাংক]] IBM 1901 কম্পিউটার স্থাপন করে। প্রধানত ব্যাংকের যাবতীয় হিসাব-নিকাশের জন্য ব্যবহূত এসব কম্পিউটার ছিল তৃতীয় প্রজন্মের মেইনফ্রেম ধরনের।<ref name="Banglapedia"/>
 
স্বাধীনতার পূর্বে, ১৯৬৯ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোতে স্থাপিত হয় একটি IBM 360 কম্পিউটার। [[আদমজী জুট মিল্‌স|আদমজী জুট মিলেও]] এ সময় একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপিত হয়েছিল। সীমিত পরিসরে হলেও স্বাধীনতা পূর্বকালে দেশের [[বিশ্ববিদ্যালয়]] স্তরে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স কৌশল প্রভৃতি বিষয়ের পাঠ্যক্রমে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও [[সফটওয়্যার]]-এর অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়। ১৯৭২-এর পর থেকে পর্যায়ক্রমে [[বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো]] নামক প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হয় IBM 370, IBM 9100 এবং IBM 4341 প্রভৃতি বৃহৎ কম্পিউটার।<ref name="Banglapedia"/>
 
====বাংলা সফটওয়্যার উদ্ভাবনের ইতিহাস====
কম্পিউটারে প্রথম [[বাংলা]] লেখা সম্ভব হয় ১৯৮৭ সালে এবং এ সাফল্যের কৃতিত্ব মাইনুল ইসলাম নামক একজন [[প্রকৌশল|প্রকৌশলির]]। তিনি নিজের উদ্ভাবিত [[বাংলা ফন্ট]] ‘মাইনুলিপি’ ব্যবহার করে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করেন। এ ক্ষেত্রে বাংলার জন্য আলাদা কোনো [[কিবোর্ড|কি-বোর্ড]] (keyboard) ব্যবহার না করে ইংরেজি কি-বোর্ড দিয়েই কাজ চালানো হয়েছিল। ইংরেজি ও বাংলার আলাদা ধরনের বর্ণক্রম এবং বাংলার যুক্তাক্ষরজনিত সমস্যা সমাধান করা হয়েছিল ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের চার স্তর কি-বোর্ড (4 layer keyboard) ব্যবহারের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে। মাইনুলিপির পর পরই ‘শহীদলিপি’ ও ‘জববারলিপি’ নামে আরও দুটো [[বাংলা ফন্ট]] উদ্ভাবিত হয় এবং একই পদ্ধতিতে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহূত হয়। পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে আনন্দ কম্পিউটার্স নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তৈরি হয় অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস ‘বিজয়’। এ সময়েই প্রথম বাংলা [[কি-বোর্ড]] লে-আউট তৈরি হয়। প্রথম পর্যায়ের বাংলা কি-বোর্ডগুলির মধ্যে ‘বিজয়’ এবং ‘মুনীর’ উল্লেখযোগ্য। ইন্টারফেস পদ্ধতিতে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে কম্পিউটারের [[অপারেটিং সিস্টেম|অপারেটিং সিস্টেমের]] (Operating System or OS) সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় এবং এ কি-বোর্ডকে ক্রিয়াশীল করে ও ফন্ট নির্বাচন করে কম্পিউটারে বাংলা লেখা যায়। বিজয় ইন্টারফেসটি ছিল ম্যাকিনটোশ ভিত্তিক এবং অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য অত্যধিক হওয়ায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো সীমিত, মূলত প্রকাশনার কাজেই তা ব্যবহূত হতো।<ref name="Banglapedia"/>
 
আই.বি.এম কম্পিউটারের ব্যবহারকারী আগাগোড়াই বেশি এবং এ বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর কথা বিবেচনা করেই ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে ‘বর্ণ’ নামে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলা [[ওয়ার্ডপ্রসেসিং]] [[সফটওয়্যার]] উদ্ভাবন করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের দুজন ছাত্র রেজা-ই আল আমিন আব্দুল্লাহ (অঙ্ক) ও মোঃ শহীদুল ইসলাম (সোহেল)। প্রতিভাবান দু কিশোর প্রোগ্রামারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান সেইফওয়ার্কস-এর পক্ষ থেকে এ স্বয়ংসম্পূর্ণ
ওয়ার্ডপ্রসেসরটির উদ্ভাবন ছিল বাংলা সফটওয়্যারের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ওয়ার্ডপ্রসেসরটি ছিল ‘ডস’ (Disk Operating System - DOS) ভিত্তিক, কিন্তু [[প্রোগ্রাম|প্রোগ্রামটির]] নিজস্ব আঙ্গিক ছিল [[উইন্ডোজ|উইন্ডোস]] (Windows)-এর মতো। বর্ণ-তে তিন ধরণের কি-বোর্ড ব্যবহার করা যেতো
মুনীর, বিজয় এবং ইজি কি-বোর্ড (easy keyboard)। বর্ণ সফটওয়্যারটিতে কি-বোর্ড পুনর্গঠনের (customise) সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ, কেউ ইচ্ছা করলে নিজের পছন্দ বা সুবিধা অনুযায়ী নতুন কি-বোর্ড লে-আউট তৈরি করে নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল।পরবর্তীকালে [[মাইক্রোসফট কর্পোরেশন]] ক্রমাগত উন্নত থেকে উন্নততর সংস্করণের [[ওয়ার্ড প্রসেসর]] বাজারে ছাড়তে থাকলে ১৯৯৩ সালে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে আই.বি.এম কম্পিউটারের আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম ‘[[মাইক্রোসফট উইন্ডোজ]]’ (Microsoft Windows)-এর সঙ্গে ব্যবহারের জন্য ইন্টারফেস ‘বিজয়’ উদ্ভাবিত হয়। এর পর ১৯৯৪ সালে ‘লেখনী’ নামেও একটি ইন্টারফেস তৈরি হয়। যদিও ‘আবহ’ (১৯৯২-এর শেষে উদ্ভাবিত) আই.বি.এম কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস, কিন্তু কিছু ত্রুটির কারণে এটি তেমন একটা ব্যবহূত হয়নি।<ref name="Banglapedia"/>
 
==কম্পিউটার সিস্টেম==