বাংলাদেশের ইতিহাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Gauhar2806 (আলোচনা | অবদান)
→‎বাংলার নবাব: কিছু শব্দসূত্র দেওয়া হল।
Gauhar2806 (আলোচনা | অবদান)
কিছু সংশোধন করা হল।
৩২ নং লাইন:
মহাপদ্ম নন্দের পর ক্ষমতায় অাসীন হন তার পুত্র [[ধননন্দ|উগ্রসেন নন্দ]]। উগ্রসেনের সময় রাজ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখা দেয়। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ৯৯০ মিলিয়ন স্বর্ণখণ্ডের অধিকারী ছিলেন। উগ্রসেনের সময়ে পাটালিপুত্রে পাচটি ধর্মস্তূপ নির্মিত হয়েছিল। প্রাচীণ ভারতের বিভিন্ন ইতিহাসে উগ্রসেনকে অর্থপিপাসু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকে ধননন্দ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে উগ্রসেন এবং তার পিতা মহাপদ্ম বিপুল পরিমাণ রাজ্য দখল করেছিলেন এবং তারা উক্ত রাজ্যের পরাজিত রাজন্যবর্গের ওপর কর অারোপ করেছিলেন। কাজেই এইসব অভিযোগ উক্ত পরাজিত রাজন্যবর্গের বিষোদ্গার হতে পারে।<ref>{{citation |last=Shahnawaz |first=A.K.M |title=History of South Asia |date=2003 |publisher=Abasar prokashona |isbn=984-446-074-3 |p=130 |url=http://www.porua.com.bd/books/দক্ষিণ-এশিয়ার-ইতিহাস-১৫২৬-খ্রিস্টাব্দ-পর্যন্ত }}</ref>
 
উগ্রসেনের সময় গ্রীক সম্রাট [[মহান আলেকজান্ডার|অালেকজাণ্ডার]] ভারতবর্ষ অাক্রমণ করেন। কিন্তু উগ্রসেন একটি বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে অালেকজাণ্ডারের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হন। [[প্লুটার্ক]] বলেছেন, [[রাজা পুরুষোত্তম|পোরাসের]] সাথে যুদ্ধের পর [[মেসিডেনীয় সভ্যতা|মেসিডোনিয়ার]] সৈন্যরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, এবং ভারতবর্ষের অভ্যন্তরে অারও প্রবেশের জন্য অনিচ্ছুক হয়ে পড়ে। তারা জানতে পারে গঙ্গা নদী যা ২৩০ স্টেডিয়া বিস্তৃত ছিল এবং ১০০০ ফুট গভীর ছিল, তার পাশের সমস্ত তীর সমস্ত তীর সশস্ত্র যোদ্ধা, ঘোড়া এবং হাতি দ্বারা সম্পূর্ণভাবে আবৃত ছিল। গঙ্গারিডাই ও প্রাসি এর রাজা তার (আলেকজান্ডার) জন্য ২,০০,০০০ পদাতিক, ৮০,০০০ অশ্বারোহী বাহিনী, ৮,০০০ যুদ্ধরথ ও ৬,০০০ হস্তিবাহিনী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।<ref>{{citation |last=Majumdar |first=R.C. |title=The Classical Accounts of India |date=1960 |publisher=FIRMA K.L.M |p=198 |url=http://www.worldcat.org/title/classical-accounts-of-india/oclc/467176 }}</ref>
 
==প্রাথমিক মধ্যযুগ==
৪৬ নং লাইন:
[[পাল সাম্রাজ্য|পাল সাম্রাজ্যের]] যুগ ছিল বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল যুগ। এ সময় বাংলার ইতিহাসে আবার দিগ্বিজয়ের সূচনা হয়। পাল রাজাগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন উত্তরবঙ্গের [[বরেন্দ্র]] অঞ্চলে। একারণে পাল শিলালিপিতে বরেন্দ্রকে জনকভূ বা রাজ্যাম পিত্রাম বলা হয়েছে। পাল সাম্রাজ্যের রাজাগণ ছিলেন [[বৌদ্ধ ধর্ম|বৌদ্ধ ধর্মের]] অনুসারী। পাল রাজাগণ ছিলেন প্রথমত বৌদ্ধধর্মের [[মহাযান]] ও পরবর্তীতে [[তন্ত্র|তান্ত্রিক শাখার]] অনুসারী। পাল বংশীয় রাজাগণ উত্তর ভারতের রাজনৈতিক কেন্দ্রভূমি [[কনৌজ]] দখলের জন্য রাজপুতানার [[গুর্জর]] এবং দক্ষিণ ভারতের [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূটদের]] সাথে এক প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই ভয়ঙ্কর ও [[ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ]] পরবর্তী দুই শত বৎসর অব্যাহত থাকে।
 
পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা [[প্রথম গোপাল|গোপাল]]। তিনি ৭৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা দেশ শাসন করেন।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni |url=https://www.rokomari.com/book/48237/বাংলার-ইতিহাস?ref=null|pages=65}}</ref> গোপালের অাগমনের পূর্বে বাংলাদেশ পাচটি খণ্ডে বিভক্ত ছিল যথা- [[অঙ্গ]], [[বঙ্গ (প্রাচীন রাজ্য)|বঙ্গ]], [[গৌড়]], [[সুহ্ম]] ও [[সমতট]]। গোপাল এই সমস্ত খণ্ডকে ঐক্যবদ্ধ করেন ও বাংলাদেশে শান্তি শৃঙ্খলা অানয়ন করেন।<ref name="Nitish2011">{{cite book |last=Sengupta |first=Nitish K. |date=2011 | title=Land of Two Rivers: A History of Bengal from the Mahabharata to Mujib | url=https://books.google.com/books?id=kVSh_TyJ0YoC&pg=PA40 | publisher=Penguin Books India | page=40 | isbn=978-0-14-341678-4}}</ref> গোপাল বিহার, উড়িষ্যা ও কামরূপও দখল করেন। এরপর গোপাল উত্তর ভারতের রাজধানী [[কনৌজ]] অক্রমণ করেন। তিনি কনৌজের অায়ুধ বংশীয় রাজা বজ্রায়ুধকে পরাজিত করে কনৌজ দখল করেন।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni |url=https://www.rokomari.com/book/48237/বাংলার-ইতিহাস?ref=null|pages=66}}</ref>
কিন্তু গুর্জর রাজা বৎসরাজের নিকট তিনি পরাজিত হন। বৎসরাজ পরবর্তীতে [[রাষ্ট্রকূট রাজবংশ|রাষ্ট্রকূট]] রাজা ধ্রুব ধারাবর্ষের নিকট পরাজিত হন। ফলে গোপাল তার সাম্রাজ্য রক্ষা করতে সক্ষম হন।
 
৫৪ নং লাইন:
 
পাল সম্রাটগণ বহু বৌদ্ধবিহার ও ধর্মীয় পীঠস্থান নির্মাণ করেছিলেন। বিক্রমশীল, ওদন্তপুরী ও জগদ্দল প্রভৃতি বৃহদায়তন মহাবিহার পাল স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। পাল সম্রাটগণ প্রথমত "[[মহাযান]]" বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। পরবর্তীতে পালগণ হিন্দুদের বৌদ্ধধর্মে অাকৃষ্ট করার জন্য [[তন্ত্র|তান্ত্রিক]] বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন করেন। বহু হিন্দু দেবদেবীকে এই ধর্মে স্থান দেওয়া হয়। পাল সম্রাটগণ [[সংস্কৃত]] বা [[পালি]] ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। পাল রাজাদের সময়ই বাংলা সাহিত্যের প্রাচীণতম নিদর্শন [[চর্যাপদ|চর্যাপদসমূহ]] রচিত হয়। তাই পাল রাজবংশকে অনেক সময় বাংলা সাহিত্যের জনক মনে করা হয়।
 
 
===সেন রাজবংশ===
৬৩ ⟶ ৬২ নং লাইন:
[[বল্লাল সেন]] বিজয়সেনের পর বাংলার সিংহাসনে অাসীন হন। বল্লাল সেন তার রাজ্যের প্রায় ১,০০০ [[ব্রাহ্মণ|ব্রাহ্মণকে]] চিহ্নিত করেন। এদেরকে রাজ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সংবদ্ধ করা হয় এবং এদের উচ্চ পদ মর্যাদা প্রদান করা হয়। এই মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ রাজ্যে কুলীন নামে পরিচিত হয়। বল্লাল সেন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি দানসাগর ও অদ্ভূতসাগর নামে দুইটি গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থ দুটো থেকে তার অভূতপূর্ব প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal| url=https://www.rokomari.com/book/48237/বাংলার-ইতিহাস?ref=null |publisher=Ononna prokashoni | pages=112}}</ref> বল্লাল সেনের সময় বঙ্গদেশে [[শৈব]], [[বৈষ্ণব]], [[তন্ত্র|তান্ত্রিক]] প্রভৃতি বিভিন্ন মতবাদ দেখা দেয়। বল্লালসেন ব্যক্তিগতভাবে তান্ত্রিক মতের পৃষ্ঠপোষকতা করেন, যদিও তার পিতা বিজয়সেন শৈব মতের অনুসারী ছিলেন।
 
বল্লাল সেনের পর তার পুত্র [[লক্ষণসেনলক্ষ্মণসেন|লক্ষণ সেন]] সিংহাসনে অাসীন হন। পিতার মত লক্ষণ সেনও সাহিত্য ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। তার সময়ে রাজ্যে বহু প্রতিভাবান কবির অাবির্ভাব হয়। যেমন শরণ, হলায়ুধ, উমাপতিধর প্রমুখ। ধর্মীয় মতের দিক থেকে লক্ষণ সেন ছিলেন বৈষ্ণব। অানুলিয়ায় প্রাপ্ত তাম্র শাসনে লক্ষণ সেনকে পরমবৈষ্ণব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। লক্ষণ সেনের সময় [[ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী|বখতিয়ার খিলজী]] বাংলা অাক্রমণ করেন। এসময় লক্ষণ সেন [[নদীয়া|নদীয়ার]] একটি তীর্থকেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। বখতিয়ার খিলজী অতর্কিতে নদীয়া অাক্রমণ করেন যার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। লক্ষণ সেন [[পূর্ব বঙ্গ|পূর্ব বঙ্গে]] অাশ্রয় গ্রহণ করেন, মুসলমানরা পূর্ববঙ্গ জয় করতে ব্যর্থ হয়।
 
===দেব রাজত্ব===
৮৩ ⟶ ৮২ নং লাইন:
[[ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী|বখতিয়ার খিলজী]] ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে বিহার অাক্রমণ করেন। তিনি বিহারের [[পাল সাম্রাজ্য|পাল রাজবংশের]] অবশিষ্টাংশের পতন ঘটিয়ে বিহার দখল করেন। বখতিয়ার খিলজী এরপর বাংলা অাক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি ১৭ সৈন্যের এক দুর্ধর্ষ অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তীর্থকেন্দ্র [[নদীয়া|নদীয়ায়]] অাক্রমণ করেন। লক্ষণ সেন পলায়ন করেন এবং তিনি [[পূর্ব বঙ্গ|পূর্ব বঙ্গে]] অাশ্রয় গ্রহণ করেন। মুসলমানদের কোন নৌবাহিনী না থাকায় তারা পূর্ববঙ্গ দখল করতে পারেনি। উচ্চাভিলাষী বখতিয়ার এরপর [[তিব্বত]] অাক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১২০৬ সালে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি তিব্বতে অাক্রমণ করেন। এবং তিব্বতের কারামাত্তান নগর পর্যন্ত অগ্রসর হন। কিন্তু প্রচণ্ড শীত ও রসদপত্রের অভাবে বখতিয়ার খিলজীর এ অভিযান শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।<ref name="cie">{{cite web |url=http://projects.cie.org.uk/banglao/textbook/historyandculture/premughal/muslimrule |title=Bangladesh Studies O Level (7094) Pilot Textbook |publisher=University of Cambridge Local Examinations Syndicate |archive-url=https://archive.is/2013.01.25-053321/http://projects.cie.org.uk/banglao/textbook/historyandculture/premughal/muslimrule |archive-date=25 January 2013 |access-date=25 January 2014}}</ref>
 
বখতিয়ার খিলজীর মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হয়। বখতিয়ারের অন্যতম সহকারী [[মুহাম্মদ শিরান খিলজি|শিরণ খিলজী]] নিজেকে বাংলার সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু সিংহাসনের অপর দাবীদার [[আলি মর্দান খিলজি|মর্দান খিলজী]] শিরণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। শিরণ মর্দানকে পরাজিত ও বন্দী করেন। মর্দান খিলজী দিল্লীর সম্রাট [[কুতুবুদ্দিন আইবেক|কুতুবুউদ্দিন অাইবেককে]] বাংলা অাক্রমণের জন্য অাহ্বান জানান। অাইবেকের সেনাপতি কায়েমাজ রূমী শিরণকে পরাজিত করে বাংলা দখল করেন, এবং মর্দান খিলজীকে বাংলার গভর্নর নিয়োগ করা হয়।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni | pages=162|isbn=984-477-034-3}}</ref> মর্দান প্রথমত দিল্লীর অধীনস্ত থাকেন, কিন্তু কুতুবউদ্দীন অাইবেকের মৃত্যুর পর তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মর্দান ক্রমশ অত্যাচারী হয়ে উঠলে খিলজী অমাত্যগণ তাকে হত্যা করেন এবং ইওয়াজ খিলজীকে বাংলার সুলতান মনোনীত করেন।
 
[[গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ শাহ|ইওয়াজ খিলজী]] একজন সুদক্ষ ও রণকুশলী সম্রাট ছিলেন। তিনি একটি নৌবাহিনী গঠন করেন এবং এই নৌবাহিনীর সাহায্যে তিনি বঙ্গ দখল করেন। তিনি বিহার, উড়িষ্যা ও কামরূপও (পশ্চিম অাসাম) দখল করেন। কিন্তু ইওয়াজ এইসমস্ত রাজ্য সরাসরি রাজ্যভুক্ত করেননি, তিনি এই রাজ্যগুলোকে সামন্ত রাজ্যের মর্যাদা প্রদান করেন।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni | pages=162|isbn=984-477-034-3}}</ref> ইওয়াজের এই রাজ্য বিস্তারের ফলে ১২২৫ সালে দিল্লীর সুলতান [[শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ|শামসউদ্দীন ইলতুতমিশ]] তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। যুদ্ধে ইওয়াজ পরাজিত হন। কিন্তু ইলতুতমিশ দিল্লী প্রত্যাবর্তন করলে ইওয়াজ পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এবার যুদ্ধে ইলতুতমিশের পুত্র মাহমুদ নেতৃত্ব দেন, এবং যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ইওয়াজের পরাজয় ও মৃত্যু ঘটে।
 
===মামলুক শাসন===
৯৯ ⟶ ৯৮ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|মাহমুদ শাহী রাজবংশ}}
 
সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবনের মৃত্যুর পর তার পুত্র বুঘরা খান বাংলা দেশে একটি স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন। তিনি মাহমুদ শাহ উপাধী গ্রহণ করেন, এজন্য তার বংশ মাহমুদ শাহী বংশ নামে পরিচিত হয়ে থাকে। দিল্লীর সম্রাট ছিলেন [[মাহমুদ শাহ|মাহমুদ শাহের]] পুত্র কায়কোবাদ। কিন্তু তিনি দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী নিজামউদ্দীনের হাতের ক্রীড়ানক হয়ে পড়েন। মাহমুদ শাহ তার পুত্রকে উদ্ধারের জন্য এক বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। [[দিল্লীদিল্লি সালতানাত|দিল্লীর]] উজির নিজামউদ্দীন এক বিরাট বাহিনী নিয়ে সরযু নদীর তীরে তার গতিরোধ করেন।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni | pages=175|isbn=984-477-034-3}}</ref> যাই হোক বাংলা ও দিল্লীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ না হয়ে উভয়পক্ষের মধ্য সমঝোতা হয়। মাহমুদ শাহ তার বাহিনী নিয়ে [[লখনৌতিশাহী বাংলা|লখনৌতিতে]] ফিরে অাসেন ও সগৌরবে রাজত্ব করতে থাকেন। অপরদিকে দিল্লীতে তার নির্দেশে সুলতান কায়কোবাদ মন্ত্রী নিজামউদ্দীনকে পদচ্যুত করে রাষ্ট্রকে নিষ্কণ্টক করেন।
 
মাহমুদ শাহের পর তার পুত্র রুকুনউদ্দীন কায়কাউস বাংলার সিংহাসনে অাসীন হন। রুকুনউদ্দীন কায়কাউসের সময় দিল্লীর সুলতান ছিলেন [[আলাউদ্দিন খিলজি|অালাউদ্দীন খিলজী]]। ১৩০১ সালে অালাউদ্দীন খিলজী বাংলা অাক্রমণ করেন। যুদ্ধে কায়কাউস পরাজিত ও নিহত হন। খিলজী কায়কাউসের ভাই ফিরোজ শাহকে তার গভর্নর হিসেবে বাংলার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন। [[ফিরোজ শাহ]] একজান খ্যাতিমান বিজেতা ছিলেন। তিনি খিলজীর নির্দেশে [[পূর্ব বঙ্গ|পূর্ববঙ্গ]] অাক্রমণ করেন এবং [[দেব রাজবংশ|দেব বংশকে]] সমূলে উৎখাত করেন। এর ফলে পূর্ববঙ্গ চিরস্থায়ী ভাবে মুসলিন শাসনাধীনে চলে অাসে।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni | pages=179|isbn=984-477-034-3}}</ref> তার সময়েই বিখ্যাত অাউলিয়া [[শাহ জালাল]] বঙ্গদেশে অাগমন করেছিলেন এবং সিলেট জয় করেছিলেন। অালাউদ্দীন খিলজীর মৃত্যুর পরে তিনি স্বাধীনতা অর্জন করেন এবং কিছুদিন স্বাধীনভাবে রাজকার্য করার পর মৃত্যুবরণ করেন।
 
ফিরোজ শাহের পর তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী [[গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ|বাহাদুর শাহ]] সমগ্র বাংলার অধিপতি হন। কিন্তু এ সময় দিল্লীর তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা [[গিয়াসউদ্দিন তুগলক|গিয়াসউদ্দীন তুঘলক]] বাংলাদেশে সমরাভিযান করেন। ষড়যন্ত্রকারী ভ্রাতা নাসিরউদ্দীন ইব্রাহীমের সহায়তায় রাজধানী লখনৌতি অাক্রমণ করেন এবং বাহাদুর শাহ পরাজিত হন। গিয়াসউদ্দীন তুঘলক বাংলাকে সাতগাও, লখনৌতি ও [[সোনারগাঁও]] এই তিন ভাগে ভাগ করেন এবং এই তিন ভাগকে তিনজন পৃথক শাসকের হাতে নিযুক্ত করেন। কিন্তু গিয়াসউদ্দীন তুঘলক প্রত্যাবর্তন করলে বাহাদুর শাহ পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সাতগাওয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খান তার বিরুদ্ধে সমরাভিযান করেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন।
 
==ইলিয়াস শাহী রাজবংশ==
১২১ ⟶ ১২০ নং লাইন:
রাজা গণেশ নিজ পুত্র জিতেন্দ্রদেবের পরিবর্তে মহেন্দ্রদেবকে পরবর্তী রাজা হিসেবে নিয়োগ করেন। এতে জিতেন্দ্রদেব অত্যন্ত বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মুসলিম অামীরদের সহায়তায়, [[জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ|জালালউদ্দীন মুহাম্মাদ শাহ]] নাম নিয়ে সিংহাসনে আরোহন করেন। মুহাম্মাদ শাহ একজন বিখ্যাত বিজেতা ছিলেন। তিনি পার্শ্ববর্তী [[জাউনপুর]] রাজ্য অাক্রমণ করেন। এবং তাদের কাছ থেকে বিহার প্রদেশটি ছিনিয়ে নেন। মুহাম্মাদ শাহের সময় [[অারাকান]] রাজ মেং তি মুন [[বার্মা|বার্মার]] হাত থেকে রক্ষার জন্য মুহাম্মাদ শাহের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং মুহাম্মাদ শাহ তাকে উদ্ধার করেন। এরপর থেকে অরাকান বাংলার একটি সামন্ত রাজ্যে পরিণত হয়।<ref>{{cite book | author=Mahmudul Hasan |date=2003 | title=History of Bengal |publisher=Ononna prokashoni | pages=209|isbn=984-477-034-3}}</ref>
 
মুহাম্মাদ শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী [[শামসউদ্দিন আহমাদ শাহ|আহমাদ শাহ]] বাংলার সিংহাসনে বসেন। তার ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মতামত বিভ্রান্তিকর। ফেরেশতার মতে, তিনি তার মহান পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন এবং ন্যায়পরায়ণতার অাদর্শ প্রাণপনে রক্ষা করেন। অপরপক্ষে [[গোলাম হোসেন সেলিম|গোলাম হোসেন]] বলেন, তিনি অত্যাচারী ও রক্তপিপাসু ছিলেন। তিনি বিনা কারণে রক্তপাত করতেন এবং অসহায় নারী-পুরুষদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতেন। যাই হোক তিনি জাউনপুরের কাছে পরাজিত হন। এবং বিহার প্রদেশটি হারিয়ে ফেলেন। সাদী খান ও নাসির খান নামক দুইজন ক্রীতদাস, যারা তার অমাত্য পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন তাকে হত্যা করেন এবং বাংলার সিংহাসন দখল করেন।
 
==পরবর্তী ইলিয়াস শাহী রাজবংশ==