সফর (মাস): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Ferdous (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
'''সফর''' (صفر) হচ্ছে দিত্বীয় মাস, [[ইসলামিক বর্ষপঞ্জি|ইসলামিক বর্ষপঞ্জির]]। মুসলিম মতে, "এই মাসে [[হযরত আদম (আঃ)]] [[জান্নাত|বেহেশ্ত]] হতে বহিস্কৃত হয়েছিলেন। সফর মাসের ২৬ তারিখ। নবুয়তের চতুর্দশ বছর।
 
বৃহস্পতিবার। সূর্য তখনো ঢলে পড়েনি। মক্কার কুরাইশ নেতাদের পরামর্শসভা চলছিল। সিদ্ধান্ত হলো, মুহাম্মদ (সা.)-কে হত্যার কোনো বিকল্প নেই। এই রক্তপাতে সমান প্রতিনিধিত্ব থাকার জন্য প্রত্যেক গোত্র থেকে একেকজন প্রতিনিধি নিয়ে একটি কিলার দল তৈরি করা হলো।
 
এদিকে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার প্রতীক রাসুল (সা.) মুসলিম উম্মাহর মুক্তি ও নিরাপত্তার চিন্তায় বিভোর। এমনি এক পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হজরত জিবরাইল (আ.) হিজরতের নির্দেশ নিয়ে তাঁর কাছে আগমন করেন। এ কথাও বলেন যে আজ রাতে নিজের বিছানায় ঘুমাবেন না।
 
২৭ সফরের রাত।
 
কুরাইশরা হত্যার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। রাত নামতেই অবরুদ্ধ করা হলো রাসুল (সা.)-এর ঘর ও আশপাশের এলাকা। সামান্য অপেক্ষা। নিদ্রাচ্ছন্ন হলেই রাসুল (সা.)-কে হত্যা করবে তারা।
 
এদিকে রাসুল (সা.) নিজ বিছানায় হজরত আলী (রা.)-কে শুইয়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হলেন। ঘরের চতুর্দিকে কুরাইশ কাফিরদের নিশ্ছিদ্র বেষ্টনী। এক মুঠো মাটি তাদের দিকে নিক্ষেপ করে রাসুল (সা.) সবার সামনে দিয়েই বের হয়ে তাশরিফ নিলেন হজরত আবু বকর (রা.)-এর ঘরে। সেখান থেকে আরম্ভ হয় হিজরতের ঐতিহাসিক সফর।
 
আবওয়া যুদ্ধ
 
একে ওদ্দানও বলা হয়। যেসব যুদ্ধে রাসুল (সা.) নিজে অংশ নিয়েছেন, তার মধ্যে এটি প্রথম যুদ্ধ। যা সংঘটিত হয় ২ হিজরির সফর মাসে। এ যুদ্ধের ঝাণ্ডা ছিল শুভ্র। ঝাণ্ডাবাহী ছিলেন হজরত হামজা বিন আবদুল মুত্তালিব (রা.)। মদিনা শরিফে রাসুল (সা.)-এর প্রতিনিধি হিসেবে হজরত সাআদ ইবনে উবাদা (রা.)-কে নিযুক্ত করা হয়। কুরাইশের কাফেলাকে প্রতিরোধ করার জন্যই মূলত রাসুল (সা.) এই অভিযানে বের হন। কিন্তু পথে কোনো কাফেলার সঙ্গে দেখা হয়নি। এই অভিযানে জুমরা গোত্রের সরদার মুখশি ইবনে আমর আজজমরির সঙ্গে একটি সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় রাসুল (সা.) পনেরো রাত মদিনার বাইরে অবস্থান করেন। (জাদুল মাআদ ৩/১৬৪, ১৬৫)
 
কাফিরদের প্রতারণা ও 'রজি'র ঘটনা
 
তৃতীয় হিজরির সফর মাসে আদাল ও কারা গোত্রের কিছু লোক রাসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করে, আমরা ইসলাম চর্চায় আগ্রহী। এমন কিছু লোক আমাদের মধ্যে নিযুক্ত করুন, যারা আমাদের ইসলাম শিক্ষা দেবেন। তাদের আগ্রহ ও অনুরোধের ভিত্তিতে রাসুল (সা.) ১০ জন সাহাবিকে তাদের জন্য মনোনীত করেন। আসেম ইবনে ওমর ইবনে খাত্তাবের নানা হজরত আসেম ইবনে সাবেতকে এই দলের আমির মনোনীত করা হয়। তাঁরা যাওয়ার পথে রাবেগ ও জেদ্দার মধ্যবর্তী স্থানে হুজাইল গোত্রের রাজি নামক একটি কূপের কাছে পৌঁছলে আদল ও কারা গোত্রের লোকজন হুজাইল গোত্রের একটি শাখা বনু লাহইয়ানকে এ ১০ জন সাহাবির ওপর আক্রমণ করার জন্য লেলিয়ে দেয়। বনু লাহইয়ানের ১০০ তিরন্দাজ তাদের ওপর চড়াও হয় এবং তাদের অবরোধ করে ফেলে। হজরত আসেম (রা.) তাঁর সাথিদের নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন এবং শেষ পর্যন্ত সাতজন সাহাবি ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। বাকি তিনজন সাহাবির সামনে বনু লাহইয়ান তাদের চুক্তির কথা বলে তাদের কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু তারা সামান্য শক্তি পেতেই ওই তিন সাহাবির ওপর হামলা করে বসে। তাতে আরো একজন সাহাবি শহীদ হন। বাকি দুজন সাহাবি হজরত খুবাইব ও জায়দ (রা.)-কে তারা মক্কায় এনে বিক্রি করে দেয়। এই দুজন সাহাবি বদরের যুদ্ধে মক্কার নেতাদের হত্যা করে। (জাদুল মাআদ ৩/২৪৪)
 
খায়বর বিজয় : রাসুল (সা.) সপ্তম হিজরির মুহররম মাসের শেষের দিকে খায়বরের দিকে রওনা হন এবং সফর মাসে খায়বর বিজয় করেন।
 
খায়বর বিজয়ের পর এই মাসে সংঘটিত কিছু ঘটনা
 
<nowiki>*</nowiki> সপ্তম হিজরির সফর মাসে হজরত জাফর এবং আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর হাবশা থেকে খায়বর গমন।
 
<nowiki>*</nowiki> সপ্তম হিজরির সফর মাসে হজরত সফিয়্যার সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর বিয়ে হয়। এই বিয়েতে তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর তাঁকে আজাদ করা মোহর হিসেবে ধার্য হয়।
 
<nowiki>*</nowiki> সপ্তম হিজরির সফর মাসে সালাম ইবনে মাশকামের স্ত্রী জায়নাব বিনতে হারেসা রাসুল (সা.)-এর জন্য ভুনা বকরি প্রেরণ করে। এতে বিষ মেশানো ছিল। রাসুল (সা.) এক টুকরা চিবানোর পর তাতে থু দেন। তখন ইরশাদ করেন, এই হাড্ডি আমাকে বলছে, এতে বিষ মেশানো আছে।
 
<nowiki>*</nowiki> সপ্তম হিজরির সফর মাসে ফদকবাসীর সঙ্গে উৎপাদিত দ্রব্যের অর্ধেক প্রদানের ওপর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
 
<nowiki>*</nowiki> সপ্তম হিজরির সফর মাসে রাসুল (সা.) ইসলামী সেনাদল নিয়ে কুরা নামক স্থানে তাশরিফ আনেন। যা ছিল ইহুদিদের একটি এলাকা। যাতে অনেক আরবও বসতবাড়ি করেছিল। রাসুল (সা.)-এর নেতৃত্বে ইসলামী সেনাদল সেখানে পৌঁছলে সেখানকার অধিবাসীরা রাসুল (সা.)-কে স্বাগত জানায় তীর দিয়ে। মুসলমানরা আগে থেকে কাতারবন্দি ছিলেন। রাসুল (সা.)-এর একজন গোলাম তাতে মারা যায়। যে খায়বরের গনিমতের মাল থেকে না জানিয়ে একটি চাদর নিয়েছিল। রাসুল (সা.) বললেন, সে চাদর তার জন্য এখন অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছে। এরপর রাসুল (সা.) ওই এলাকার লোকজনকে ইসলামের দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা অস্বীকৃতি জানায়। এরপর উভয় পক্ষে যুদ্ধ শুরু হয়। তাদের ১১ জন লোক এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে। সন্ধ্যা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ইহুদিরা আত্মসমর্পণ করে তাদের যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র রাসুল (সা.)-এর সামনে সমর্পণ করে।
 
এ বছর সফর মাসেই রাসুল (সা.) খায়বর থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন।
 
<nowiki>*</nowiki> অষ্টম হিজরির সফর মাসে সরিয়্যায়ে গালেব ইবনে আবদুল্লাহ লাইছি সংঘটিত হয়।
 
<nowiki>*</nowiki> নবম হিজরির সফর মাসে সরিয়্যায়ে কুতবা ইবনে আমের সংঘটিত হয়।
 
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যাঁরা সফর মাসে ইসলাম গ্রহণ করেছেন
 
হজরত আমর ইবনুল আস (রা.), হজরত খালেদ ইবনে মুগিরা (রা.), হজরত জামরা ইবনে নুমান (রা.), হজরত ছুমামা ইবনে আছাল (রা.) প্রমুখ সফর মাসে ইসলাম গ্রহণ করেন।
 
সফর মাসে ইন্তিকালকারী কয়েকজন সাহাবি ও মাশায়েখ
 
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) (৩২ হি.), হজরত আবু তালহা আনসারি (রা.) (৩০ হি.), ইমাম নাসায়ি (রহ.) (৩০৩), আল্লামা নববি (রহ.) (২৭৬ হি.), হজরত মুজাদ্দিদে আলফেছানি (রহ.) (১০৩৪ হি.), শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান (রহ.) (১৩৩৯ হি.), আল্লামা শিব্বির আহমদ উসমানি (রহ.) (১৩৬৯ হি.) প্রমুখ ইন্তিকাল করেন এ মাসে।
 
== আরও দেখুন ==
৭ ⟶ ৫৩ নং লাইন:
{{সূত্র তালিকা}}
 
== বহিঃhttp://www.kalerkantho.com/print-edition/dhormo/2014/12/05/158941<nowiki/>সংযোগ ==
== বহিঃসংযোগ ==
* [http://www.staff.science.uu.nl/~gent0113/islam/islam_tabcal.htm ইসলামী-পশ্চিমী পঞ্জিকা রূপান্তরকারী (গণনাসংক্রান্ত বা ট্যাবুলার পঞ্জিকার উপর ভিত্তি করে)।] {{en}}
* [http://www.makkahcalendar.org মক্কার জন্য ইসলামী পঞ্জিকা / হিজরি পঞ্জিকা।] {{en}}