আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সংশোধন, পরিষ্কারকরণ
৪ নং লাইন:
| alt =
| caption = আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এর আবক্ষ মূর্তি
| birth_date =[[জুন ২৬]], [[১৯২৬]]
| birth_place = [[নাটোর জেলা|নাটোর]]
| death_date = [[নভেম্বর ৩]],[[১৯৭৫]]
| death_place =
| nationality = বাংলাদেশী [[চিত্র:Flag of Bangladesh.svg|20px]]
১৬ নং লাইন:
}}
 
'''আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান''' ([[২৬ জুন]], [[১৯২৬]] - [[নভেম্বর ৩]], [[১৯৭৫]]) [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি [[১৯৭১]] সালে [[বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ]] চলাকালীন সময়ে গঠিত [[১৯৭১ সালের অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার|অস্থায়ী সরকারের]] স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। একজন নির্লোভ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
 
== জন্ম ==
বর্তমান [[নাটোর জেলা|নাটোর জেলার]] অন্তর্গত বাগাতিপাড়ার মালঞ্চী রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মামার বাড়িতে [[১৯২৬]] সালের [[২৬ জুন]] তারিখে এ এইচ এম কামারুজ্জামান জন্মগ্রহণ করেনকরেন।<ref name=govt>{{বই উদ্ধৃতি |last= এইচ টি ইমাম |title= বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ |publisher= আগামী প্রকাশন |isbn= 984-401-783-1 }}</ref> তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল [[রাজশাহী]] জেলার কাদিরগঞ্জ মহল্লায়। তিনি বনেদি জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পিতা আবদুল হামিদ ও মাতা বেগম জেবুন্নিসা। তার ১২ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম। তাঁর ডাকণাম ছিল হেনা।
 
== পরিবার জীবন ==
১৯৫১ সালে কামারুজ্জামান জাহানারা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রী [[বগুড়া]] জেলার [[দুপচাঁচিয়া উপজেলা]]র চামরুল গ্রামের আশরাফ্উদ্দিন তালুকদারের মেয়ে জাহানারা আশরাফ উদ্দিন তালুকদার ঐ অঞ্চলের জোতদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
 
পারিবারিক জীবনে তিনি ৬ সন্তানের পিতাপিতা।<ref name=gunijon/> তার বড় ছেলে এ এইচ এম খাইরুজ্জামান লিটন [[রাজশাহী সিটি কপোরেসনেরকর্পোরেশন|রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের]] সাবেক মেয়র ছিলেন। <ref>http://www.samoik.com/print_article/print_page/6268</ref> মেজো ছেলে এ.এইচ.এম. এহসানুজ্জামান স্বপন (জন্ম ১৯৬১)। বর্তমানে তিনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পনীতে চাকুরীরত রয়েছেন। মেয়েদের নাম ফেরদৌস মমতাজ পলি (জন্ম ১৯৫৩), দিলারা জুম্মা রিয়া (জন্ম ১৯৫৫), রওশন আক্তার রুমী (জন্ম ১৯৫৭) ও কবিতা সুলতানা চুমকি (জন্ম ১৯৬৪)।
 
== শিক্ষাজীবন ==
[[চিত্র:আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান.jpg|thumb|left|আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন]]
লেখাপড়ার শুরু [[রাজশাহী]] কলেজিয়েট স্কুলে৷স্কুলে। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের এক শিক্ষক ছিলেন তাঁর ফুপা৷ফুপা। তিনি রাজশাহী থেকে [[চট্টগ্রাম|চট্টগ্রামে]] বদলী হয়ে যাবার সময় কামারুজ্জামানকেও সাথে করে নিয়ে যান এবং [[চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল|চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে]] ভর্তি করে দেন৷দেন। সেখান থেকেই [[১৯৪২]] সালে তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন৷করেন। এরপর [[রাজশাহী কলেজ]] থেকে [[১৯৪৪]] সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন৷করেন। তিনি এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য [[কলকাতা]] যান এবং বিখ্যাত [[প্রেসিডেন্সী কলেজ, কলকাতা|প্রেসিডেন্সী কলেজ]] থেকে [[১৯৪৬]] সালে [[অর্থনীতি|অর্থনীতিতে]] অনার্স পাশ করেন৷করেন।<ref name=gunijon>[http://www.gunijan.org.bd/GjProfDetails_action.php?GjProfId=187 www.gunijan.org.bd]</ref> এরপর তিনি রাজশাহী আইন কলেজ হতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ১৯৫৬ সাল থেকে রাজশাহী জর্জকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেনকরেন।<ref name=en>{{বই উদ্ধৃতি |last= মুনতাসির মামুন |title= কিশোর মুক্তিযুদ্ধ কোষ |publisher= সময় প্রকাশন |isbn= 984-458-70114-0070-9 }}</ref>
 
== রাজনৈতিক জীবন ==
[[চিত্র:Kamaruzzaman Chattar, Rajshahi.jpg|thumb|জাতীয় চার নেতার একজন এএইচ এম কামারুজ্জামান হেনার নামে স্মৃতিস্তম্ভ]]
কামারুজ্জামান ছিলেন পারিবারিক ভাবে [[রাজনীতি]] সচেতন। তাঁর দাদা হাজি লাল মোহাম্মদ সরদার কংগ্রেস রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তবে ওহাবী আন্দোলনের সাথেও তাঁর সম্পৃক্ততা ছিলো বলে জানা যায়। এ কারণে কংগ্রেস ও প্রথম সারীর মুসলিম লীগ নেতাদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো। হাজী লাল মোহাম্মদ দু'বার অবিভক্ত বাংলার লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য (এম.এল.সি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি রাজশাহী এসোসিয়েশন ও বরেন্দ্র একাডেমীর একমাত্র মুসলিম সদস্য ছিলেন। তাঁর পিতা মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন রাজশাহী অঞ্চলের মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি [[১৯৪৬]] সাল থেকে [[১৯৫৪]] সাল পর্যন্ত অবিভক্ত বাংলাদেশ ও পরে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন৷ ছিলেন। তাই তাঁর [[রাজনীতি]] সম্পর্কে আগ্রহী হওয়া স্বাভাবিক ছিল।<ref name=gunijon/>
 
=== রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ===
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্র লীগের [[রাজশাহী]] জেলা শাখার সম্পাদক হন [[১৯৪২]] সালে৷তিনিসালে।তিনি [[১৯৪৩]]-[[১৯৪৫]] সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় মুসলীম ছাত্র লীগের নির্বাচিত সহ সভাপতি ছিলেনছিলেন।<ref name= gunijon/>
 
=== পাকিস্তান আমল ===
[[১৯৫৬]] সালে কামারুজ্জামান [[আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগে]] যোগ দেন। [[১৯৫৭]] সালে [[রাজশাহী]] জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।[[১৯৬২]]হন।১৯৬২[[১৯৬৫]] সালে তিনি দুবার মৌলিক গণতন্র ব্যবস্থায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।[[১৯৬৬]]হন।১৯৬৬ সালে তিনি ঐতিহাসিক [[৬ দফা আন্দোলন|৬ দফা আন্দোলনে]] আত্মনিয়োগ করেন৷করেন। [[১৯৬৭]] তিনি সালে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিরোধী দলীয় উপনেতা নির্বাচিত হন৷ হন।<ref name=govt/> [[আইয়ুব খান]] সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং [[সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ|ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের]] [[১১ দফা কর্মসূচী|১১ দফা]] দাবির সমর্থনে [[১৯৬৯]] সালে তিনি [[পাকিস্তান]] জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন৷করেন। [[১৯৭০]] সালের নির্বাচনে পুনরায় তিনি রাজশাহী থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন৷হন। [[১৯৭০]] সালে সারা দেশে অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করতে থাকে৷থাকে। এমন সময় [[শেখ মুজিবুর রহমান|শেখ মুজিব]] ৫জন সদস্য বিশিষ্ট দলীয় হাই কমান্ড গঠন করেন৷করেন। এই হাই কমান্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন কামারুজ্জামান৷কামারুজ্জামান।<ref name=gunijon/>
 
=== মুক্তিযুদ্ধকালীণমুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা ===
[[১৯৭০]] সালের নভেম্বরের [[১৯৭০-এর ভোলা ঘূর্ণিঝড়|১৯৭০ এর নভেম্বরের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের]] পর ত্রাণকার্যে সরকারের অনীহা এবং ডিসেম্বরের [[১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন (পাকিস্তান)|নির্বাচনে]] জয়লাভের পরও [[আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগের]] হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা ইত্যাদি কারণে বাঙালিদের মনে অসহিষ্ণুতা দেখা দেয়। বাঙালিরা তখন [[শেখ মুজিবুর রহমান|শেখ মুজিবের]] ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে [[১৯৭১]] সালের [[২৫ মার্চ]] রাতে পাকিস্তান সরকার নিরীহ-নীরস্ত্র বাঙালি নিধনের উদ্দশ্যে সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়, যা ইতিহাসে [[অপারেশন সার্চলাইট]] নাম পরিচিত। এই কুখ্যাত গণহত্যার সময় পাকিস্তানী বাহিনী শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। কিন্তু তিনি এর পূর্বেই তার দলের নেতা কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেছিলেন। তাই তিনি শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ ও আরও কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বগুড়া হয়ে কলকাতা চলে যান<ref name=gunijon/> সেখানে তার সাথে [[তাজউদ্দিন আহমদ]] সহ অন্যান্য নেতাকর্মীর দেখা হয়। ওখানে তারা সকলে মিলে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। আর সবার সিদ্ধান্তে [[১৯৭১]] এর [[১০ এপ্রিল]] গঠিত হয় প্রথম [[১৯৭১ সালের অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার|অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার]], এবং [[১৭ এপ্রিল]] [[কুষ্টিয়া]] জেলার [[মেহেরপুর জেলা|মেহেরপুরের]] সীমান্তবর্তী এলাকা বৈদ্যনাথ তলায়(পরবর্তীতে [[মুজিবনগর]] ) শপথ গ্রহণ অণুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করেকরে।<ref name=wall>Wall street journal, 21 April 1971</ref>
 
নবগঠিত মুজিবনগর সরকারে তাকে স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়হয়।<ref name= war>{{বই উদ্ধৃতি |last=শামসুল হুদা চৌধুরী |title= একাত্তরের রনাঙ্গণ |publisher= আহমদ পাবলিশিং হাউস |year= ২০০১ |isbn= 984-11-0505-0 | }}</ref> কামারুজ্জামান ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে তিনি মুক্তাঞ্চল, শরণার্থী শিবির ও সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করতেন।
=== যুদ্ধপরবর্তীকালীনযুদ্ধ পরবর্তীকালীন ভূমিকা ===
যুদ্ধ শেষ হবার পর ১৯৭১ সালের [[২২ ডিসেম্বর]] তিনি অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রীবর্গসহ স্বাধীন দেশের ফেরত আসেন। শেখ মুজিব [[১৯৭২]] সালের [[১০ জানুয়ারি]] ফিরে এলে সরকার পুনর্গঠিত হয়। সেই পুনর্গঠিত সরকারে তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হনহন।<ref name= govt/> [[১৯৭২]] থেকে [[১৯৭৪]] সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কামারুজ্জামান৷কামারুজ্জামান ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি [[রাজশাহী]]ররাজশাহীর দু'টি সদর গোদাগাড়ি ও তানর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷হন। [[১৯৭৪]] সালের [[১৮ জানুয়ারি]] তিনি মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন৷করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন৷হন। [[১৯৭৫]] সালে নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন৷হন। এ সময় [[শেখ মুজিবুর রহমান]] বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ ([[বাকশাল]]) গঠন করলে তিনি বাকশালের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন৷হন।
 
== মৃত্যু ==
 
[[১৯৭৫]] সালের [[১৫ আগস্ট]] কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে [[শেখ মুজিবুর রহমান]] নিহত হলে ঐ সময় কামারুজ্জামান সহ আরো তিন নেতাকে গ্রেফতার ও কারাবন্দী করা হয়। ঐ বছরেরই [[৩ নভেম্বর]] ভোর সাড়ে চারটায় ঊক্তউক্ত কারাগারের অভ্যন্তরে তাকে সহ আরো তিন নেতাকে কিছু সেনা সদস্য নির্মমভাবে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। তার মৃতদেহের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম পাওয়া যায় এবং বিশেষ করে ডান দিকের পাঁজরে এবং ডান হাতের কনুইতে বড় রকমের ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায়যায়।<ref name=auto>{{বই উদ্ধৃতি |last= সিমিন হোসেন রিমি|title= আমার ছেলেবেলা,১৯৭১ এবং বাবা তাজউদ্দীন আহমদ |publisher= প্রতিভাস |year= ২০০৫ |month= এপ্রিল |isbn= 984-765-008-5| page= পৃ ২০৪ }}</ref>
 
== তথ্যসূত্র ==