দেব (হিন্দুধর্ম): সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ টেমপ্লেটে সংশোধন |
অ আইএসবিএন টেমপ্লেট যোগ |
||
২ নং লাইন:
'''দেব'''([[সংস্কৃত]]: {{lang|sa|देव}}, {{IAST|Devá}}) অর্থ ‘স্বর্গীয়, ঐশ্বরিক, এমন কিছু যা অসামান্য বা অসাধারণ’ এবং [[হিন্দু]] ধর্মে পবিত্র সত্তা বা শ্বর বোঝায়।<ref name=monier>Monier Monier-Williams, A Sanskrit-English Dictionary” Etymologically and Philologically Arranged to cognate Indo-European Languages, Motilal Banarsidass, page 492</ref> '''দেব''' শব্দটি পুরুষবাচক যার স্ত্রীবাচক রূপ '''[[দেবী]]'''।
বৈদিক সাহিত্যে সমুদয় অলৌকিক সত্তাকে [[অসুর]] শব্দ দ্বারা নির্দেশ করা হয়। <ref>Wash Edward Hale (1999), Ásura in Early Vedic Religion, Motilal Barnarsidass,
কতিপয় মধ্যযুগীয় ভারতীয় সাহিত্যে দেবগণ ‘সুর’ নামে পরিচিত হন এবং একই পিতার ঔরসে জন্মলাভ করা (মাতা ভিন্ন) সমক্ষমতাপন্ন ভ্রাতৃগণ ‘অসুর’ নামে পরিচিত হন। <ref name=ang>[http://www.britannica.com/EBchecked/topic/40167/asura/40167rellinks/Related-Links Encyclopaedia Britannica]</ref>
দেব ও অসুর ছাড়াও [[যক্ষ]] এবং [[রাক্ষস]]ও হিন্দু পুরাণের অংশ, তবে হিন্দুধর্মে বিশ্বতত্ত্বে দেবগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।<ref>Don Handelman (2013), One God, Two Goddesses, Three Studies of South Indian Cosmology, Brill Academic,
==শব্দতত্ত্ব==
দেব একটি [[সংস্কৃত]] শব্দ, যা খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের সময় বৈদিক সাহিত্যে পাওয়া যায়। মনিয়ের উইলিয়াম শব্দটির অর্থ এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন- “স্বর্গীয়, দিব্য, অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ পার্থিব বস্তু, মহিমাময় এবং উজ্জ্বল”। <ref name=monier/><ref name=klausklos>Klaus Klostermaier (2010), A Survey of Hinduism, 3rd Edition, State University of New York Press,
সংস্কৃত দেব শব্দটি ইন্দো ইরানিয়ান দেব্ হতে এসেছে যা [[প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা]]য় দেইয়োস, মূলত একটি [[বিশেষণ]] পদ যার অর্থ স্বর্গীয় বা উজ্জ্বল। দিব্ ধাতুর আদিস্বর প্রত্যয়ের নিয়মে বৃদ্ধি পেয়ে দেব শব্দটি গঠন করেছে। দিব্ ধাতুর অর্থ দীপ্তি বা জ্যোতির প্রকাশ। দেইয়োস এর স্ত্রীবাচক রূপ দেইয়িহ, যা থেকে ভারতীয় ভাষার দেব এর স্ত্রীবাচক রূপ [[দেবী]] শব্দের উদ্ভব। দেব শব্দের সমার্থক ও দেইয়োস উদ্ভূত আরও কিছু শব্দ হল লিথুয়ানিয়ান দেইভাস, ল্যাটিভান দেইভস, পারসিয়ান দেইয়াস, জার্মানিক তিওয়াজ, ল্যাটিন দেউস(স্রষ্টা) ও দিভুস(স্বর্গীয়), ইংরেজি devine ও deity, ফ্রেঞ্চ দিয়েউ, পর্তুগিজ দেউস, স্প্যানিশ দিয়োস, ইতালিয়ান দিও এবং গ্রিক দেবরাজার নাম জেউস।
২১ নং লাইন:
==বৈদিক সাহিত্য==
[[File:A havan ceremony on the banks of Ganges, Muni ki Reti, Rishikesh.jpg|thumb|শিব/রুদ্র, বৈদিক যুগ থেকে হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রধান দেব<ref>Hermann Oldenberg (1988), The Religion of the Veda, Motilal Banarsidass,
===সংহিতা ও ব্রাহ্মণ===
[[File:Tani Bunchō - Jyūroku Zenshin no Zu.jpg|thumb|The concept of Hindu Devas migrated to East Asia in the 1st millennium, and was adopted by Japanese Buddhist schools as ''[[:ja:十二天|Jūni-ten]]''. These included Indra (Taishaku-ten), Agni (Ka-ten), Yama (Emma-ten), Vayu (Fu-ten), Brahma (Bon-ten) and others.<ref>[http://www.emuseum.jp/detail/100031/000/000?mode=detail&d_lang=en Twelve Heavenly Deities (Devas)] Nara National Museum, Japan</ref> Above is a painting of the 12 Devas protecting Buddha by Tani Bunchō.]]
[[বেদ]] এর প্রাচীনতম অংশ [[সংহিতা]]য় হিসাব অনুযায়ী ৩৩ জন দেব (ত্রিভুবনের প্রতি ভুবনের জন্য ১১ জন) অথবা [[ব্রাহ্মণ]] অংশে দ্বাদশ আদিত্য, একাদশ রুদ্র, অষ্টবসু ও দুইজন অশ্বিন রয়েছেন। <ref>Hermann Oldenberg (1988), The Religion of the Veda, Motilal Banarsidass,
{{Quote|
<poem>
৩৮ নং লাইন:
– অনুবাদ: এইচ. এইচ. উইলসন<ref>[[Wikisource:The Rig Veda/Mandala 1/Hymn 139|The Rig Veda Samhita]] Verse 11, HH Wilson (Translator), Royal Asiatic Society, WH Allen & Co, London</ref>
</poem>
কিছু দেবতা প্রাকৃতিক শক্তি প্রকাশ করেন ([[বায়ু]], [[অগ্নি]] প্রভৃতি) আবার কিছু দেবতা নৈতিক জ্ঞান প্রকাশ করেন যেমন [[আদিত্য]], [[বরুণ]], [[মিত্র]]। প্রত্যেক দেবতাই বিশেষ জ্ঞান, সৃজনশক্তি, মাহাত্ম্যপূর্ণ অলৌকিক শক্তি(সিদ্ধি) প্রভৃতির ধারণকারী।<ref>George Williams (2008), A Handbook of Hindu Mythology, Oxford University Press,
===একত্ববাদ===
বৈদিক সাহিত্যে দেব একেশ্বর নয়, ‘অতিপ্রাকৃত ও স্বর্গীয়’ যা বিভিন্ন ধারণা ও জ্ঞানকে প্রতিফলিত করে, সকল উৎকর্ষ কেন্দ্রীভূত করে, দুর্বলতার সাথে সংগ্রাম করে, প্রশ্ন রাখে,যাদের নায়কোচিত বেশ ও চালচলন রয়েছে এবং তারা আবেগ ও আকাঙ্ক্ষায় আবদ্ধ।<ref name=binagupta/><ref>John Bowker (2014), God: A Very Short Introduction, Oxford University Press,
[[মাক্স মুলার]] বলেন, বৈদিক মন্ত্রে দেখা যায় প্রত্যেক দেবই ‘একমাত্র, সর্বোচ্চ ও শ্রেষ্ঠ’।<ref name=klausklos/> মুলার মনে করেন বৈদিক ধারণাকে [[বহু-ঈশ্বরবাদ]] অথবা [[একেশ্বরবাদ]] দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না; এটি বরং একত্ববাদ যেখানে দেববৃন্দ পরস্পরের তুল্য, বিভিন্ন দেব বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ, বিবিধ উপাসনাপদ্ধতি ও বিবিধ আধ্যাত্মিকতার প্রকাশ, এবং [[ঋত]] ও [[নিরঞ্জন (ধর্ম)]] এর নীতি দ্বারা একত্রীভূত।<ref name=klausklos/><ref>Ivan Strenski (2015), Understanding Theories of Religion: An Introduction, 2nd Edition, Wiley,
===বৈদিক সাহিত্যে দেববৃন্দের চরিত্র===
[[আনন্দ কুমারস্বামী]] মনে করেন বৈদিক দেব ও অসুর, যথাক্রমে [[গ্রিক]] পুরাণের [[দ্বাদশ অলিম্পিয়ান]] ও [[তিতান]] এর অনুরূপ; উভয়েই শক্তিশালী কিন্তু তাদের স্বভাব ও প্রবৃত্তি ভিন্ন, হিন্দুপুরাণে দেবগণ আলোকের এবং অসুরগণ অন্ধকারের শক্তি।<ref>Wash Edward Hale (1999), Ásura in Early Vedic Religion, Motilal Barnarsidass,
{{Quote|
৫৩ নং লাইন:
-আনন্দ কুমারস্বামী, জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান ওরিয়েন্টাল সোসাইটি
প্রাচীর বৈদিক লেখায়, ভাল বা মন্দ সকল শক্তিধর সত্তাকে অসুর বলা হত। ঋগবেদের একটি বহুল পঠিত মন্ত্র হল দেবব অসুরঃ (যে অসুর দেব হয়েছে)যা অসুর অদেবাঃ(যে অসুর দেব নয়) অংশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। <ref name=kuiper>FBJ Kuiper (1975), The Basic Concept of Vedic Religion, History of Religion, volume 15, pages 108-112</ref><ref>Wash Edward Hale (1999), Ásura in Early Vedic Religion, Motilal Barnarsidass,
==উপনিষদ==
[[File:Vishnu seated on Ananda. Cave3Badami.jpg|thumb|[[বিষ্ণু]] বৈদিক দেব।<ref>Hermann Oldenberg (1988), The Religion of the Veda, Motilal Banarsidass,
প্রাচীন উপনিষদে দেব ও দেবাসুর সংগ্রামের উল্লেখ দেখা যায়। [[কৌষীতকী উপনিষদ]] এর চতুর্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে “[[ইন্দ্র]] অসুরদের তুলনায় দুর্বল ছিলেন কারণ তিনি নিজের আত্মা সম্পর্কে জানতেন না। <ref name=deussenku/>আত্মজ্ঞান লাভের পর ইন্দ্র স্বাধীন, সার্বভৌম ও অসুরবিজেতা হয়ে উঠলেন।” অনুরূপভাবে, কৌষীতকী উপনিষদের মতে যে ব্যক্তি নিজের অন্তর্নিহিত জ্ঞান জানতে পারে সে স্বাধীন সার্বভৌম হয় ও শত্রুস্পর্শমুক্ত থাকতে পারে। <ref name=deussenku>[[Paul Deussen]], Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass,
[[ছান্দোগ্যোপনিষদ্]] এর ১.২ পরিচ্ছদে বিবিধ ইন্দ্রিয় শক্তির ক্ষমতা নিয়ে দেব ও অসুরদের যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। <ref name=deussencu/>দেব ও অসুরের যুদ্ধে কোন পক্ষই বিজয়ী হতে পারেনি এবং তা অনুভবময় মহাজগতে প্রকাশিত হয়, যেমন মানুষ ভাল ও মন্দ দেখে, যেমন ভাল ও মন্দ কথা বলা হয়, যেমন প্রকৃতিতে সুগন্ধ ও দুর্গন্ধ থাকে, যেমন ভাল ও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়, যেমন সব মানুষের মাঝে ভাল ও খারাপ চিন্তা থাকে। ছান্দোগ্য উপনিষদের মতে অবশেষে দেবাসুর সংগ্রাম আত্মাকে লক্ষ্য করে, তবে অসুররা ব্যর্থ হয় ও দেবগণ সফল হয়, কারণ আত্মশক্তি নির্মল ও সহজাতভাবেই ভাল।<ref name=deussencu>[[Paul Deussen]], Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass,
[[বৃহদারণ্যকোপনিষদ্]] এর ৩.৫.২ অধ্যায় অনুযায়ী নর, দেব ও অসুর সকলে আদিপিতা প্রজাপতির সন্তান।<ref name=deussenbu/> সকলেই প্রজাপতির নিকট উপদেশ প্রার্থনা করলেন। প্রজাপতি দেবগণকে ইন্দ্রিয়দমন (দম) করতে, নরগণকে সাহায্য(দান) করতে এবং অসুরগণকে সমবেদনাশীল (দয়া) হতে উপদেশ দেন। অধ্যায়ের শেষে উপনিষদে বলা হয়েছে দেব নর ও অসুর দের এই তিনটি প্রধান গুণ সর্বদা লালন করা উচিত। <ref name=deussenbu>[[Paul Deussen]], Sixty Upanishads of the Veda, Volume 1, Motilal Banarsidass,
মধ্যযুগের পণ্ডিতগণ উপনিষদের ভাষ্যে মত দিয়েছেন যে উপনিষদে দেব ও অসুরের আলোচনা মূলত প্রতীকী; যা প্রতি মানুষের অভ্যন্তরে ভাল ও মন্দের দ্বন্দ্বকে বোঝায়। বৃহদারণ্যক উপনিষদের আলোচনায় [[আদি শঙ্কর]] বলেন দেব হল সেই নর যে পবিত্র ও পারমার্থিক; অন্যদিকে অসুর হল সেই নর যে জাগতিক আকাঙ্ক্ষায় আসক্ত।<ref>[[Max Muller]], [https://archive.org/stream/upanishads02ml#page/78/mode/2up Brihadaranyaka Upanishad 1.3.1] Oxford University Press, page 78 with footnote 2</ref> এডেলম্যান ও অন্যান্য আধুনিক পণ্ডিতগণও উপনিষদের দেবাসুর সংগ্রামকে প্রতীকী হিসেবেই বিবেচনা করেন।<ref>Jonathan Edelmann (2013), Hindu Theology as Churning the Latent, Journal of the American Academy of Religion, Volume 81, Issue 2, pages 427-466</ref><ref>Doris Srinivasan (1997), Many Heads, Arms and Eyes: Origin, Meaning, and Form of Multiplicity in Indian Art, Brill Academic,
পরবর্তীকালের প্রাথমিক [[উপনিষদ]] লেখায় দেখা যায় যে দেব ও অসুর আলোচনা করে এবং বিভিন্ন প্রকারের জ্ঞান লাভ করতে চান। উদাহরণস্বরূপ, একদা তারা তাদের পিতা প্রজাপতির কাছে আত্মজ্ঞান (আত্মা) সম্পর্কে জানতে চান এবং কীভাবে তা অনুভব করা যায় তা জানতে চান। প্রজাপতি প্রথমে সরল উত্তর দেন, অসুররা তা শুনে চলে যায়। কিন্তু ইন্দ্রের নেতৃত্বে আগত দেববৃন্দ এই সংক্ষিপ্ত উত্তরে তৃপ্ত হলেন না কেননা [[ইন্দ্র]] উত্তরের সম্পূর্ণ অর্থ বুঝতে পারেননি এবং উত্তর অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হয়েছে।<ref name=edelmann14/> এডেলম্যান মনে করেন এখানে প্রতীকীভাবে বলা হয়েছে যে মানুষের উচিত হবে বিদ্যমান ধারণাসমূহ নিয়ে নিরন্তর চিন্তা করা, পুরো প্রক্রিয়া শিক্ষালাভ করা এবং প্রচেষ্টার মধ্যেই দেবপ্রকৃতি নিহিত থাকে।<ref name=edelmann14/>
==পুরাণ ও ইতিহাস==
পুরাণে, ইতিহাসে ও ভাগবত গীতায় দেবগণ ভাল আর অসুরগণ মন্দ বিষয়ের প্রতিভূ।<ref name=nickgier>Nicholas Gier (2000), Spiritual Titanism: Indian, Chinese, and Western Perspectives, State University of New York Press,
একই পিতার ঔরসে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকেই প্রথমে অসুর নামে অভিহিত হয়। ‘অসুর হয়ে থাকা অসুর’ বলতে বোঝায় যেসকল শক্তিশালী সত্তা আরও ক্ষমতা, সম্পদ এর জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে, যারা অভিমানী, ক্রোধযুক্ত, নীতিবিহীন, পেশীশক্তিসর্বস্ব ও সহিংস।<ref name=gierasurach/><ref name=stellaray/> পক্ষান্তরে ‘দেব হওয়া অসুর’ হল তারা যারা সত্যবাদী, যারা অথপূর্ণভাবে সব বুঝতে চায় এবং সংযম, নীতি, আদর্শ, জ্ঞান ও শৃঙ্খলা পছন্দ করে।<ref name=gierasurach>Nicholas Gier (1995), [http://www.jstor.org/stable/1399510 Hindu Titanism], Philosophy East and West, Volume 45, Number 1, pages 76-80</ref><ref name=stellaray>Stella Kramrisch and Raymond Burnier (1986), The Hindu Temple, Volume 1, Motilal Banarsidass,
===ভাগবত পুরাণ===
|