বিমল রায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
হটক্যাট
ট্যাগ: দৃশ্যমান সম্পাদনা মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
Thexahin (আলোচনা | অবদান)
তথ্যের বিস্তৃতি
১ নং লাইন:
{{ Infobox person
|name= বিমল রায়
| image =পুরুষ
৮ নং লাইন:
| succeeding =
| successor =
| birth_date = [[১২ই জুলাই ১৯০৯]]
| birth_place = [[ঢাকা]], [[পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ]], [[ব্রিটিশ ভারত]], (বর্তমান [[বাংলাদেশ]])
|death_date= [[জানুয়ারি|৮ জানুয়ারি]] [[১৯৬৬]]
|death_place= [[বোম্বে]], [[মহারাষ্ট্র]], [[ভারত]]
| known = চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক
১৯ নং লাইন:
| children =
| residence =
| citizenship = {{flagicon|India}} [[কলকাতা]], [[ভারত]]
| nationality =
| ethnicity = [[বাঙালি জাতি|বাঙালি]]
৩০ নং লাইন:
}}
 
'''বিমল রায়''' (জন্ম: ১২ই জুলাই [[১৯০৯]] - মৃত্যু: [[জানুয়ারি|৮ জানুয়ারি]] [[১৯৬৬]]) একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চিত্র পরিচালক এবং প্রযোজক।
 
== জন্ম ও শিক্ষাজীবন ==
১৯০৯ সালের ১২ জুলাই বাংলাদেশের অধুনা ঢাকার সুত্রাপুরের এক জমিদার বাড়িতে জন্ম হয় বিমল রায়ের। তারা ছিলেন সাত ভাই। ঢাকার জগন্নাথ কলেজে পড়াকালীন বাবা মারা যান। এরপর মা ও ভাইদের নিয়ে বিমল চলে আসেন কলকাতায়।
 
== কর্মজীবন ==
ক্যামেরার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। তাই শুরুটা হয়েছিল নিতিন বোসের হাত ধরে তার ক্যামেরার সহকারী হিসেবে নিউ থিয়েটার্সে। সেই সুবাদে প্রমথেশ বড়ুয়ার ছায়াছবির প্রচারের জন্য ছবি তোলার কাজ পান। তারপর মেধা ও চেষ্টায় সুযোগ হয়ে যায় প্রথম বড় মাপের সাফল্যের। ১৯৩৫ সালে প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’-এর সিনেমাটোগ্রাফার ও সহকারী পরিচালক হিসেবে। অবশ্য পরের দশকে ছবিটি তিনি রিমেক করেছিলেন নিজের পরিচালনায়। ত্রিশের দশকের শুরুতে ব্রিটিশ সরকারের হয়ে দুটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন- How Kerosene Tins Are Made, I Grand Trunk Road| কিন্তু ছবি দুটি নিয়ে আজ আর বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। প্রমথেশ বড়ুয়ার ওই সময়ের ছবি ‘মুক্তি’, ‘মায়া’, ‘বড়ি দিদি’তেও সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন বিমল রায়।
প্রথম জীবনে তিনি [[নিউ থিয়েটার্স]] চিত্র প্রতিষ্ঠানে ক্যামেরাম্যানের কাজ করেন। এখানে [[প্রমথেশ বড়ুয়া|প্রমথেশ বড়ুয়ার]] পরিচালনায় দেবদাস চলচ্চিত্রের (বাংলা) চিত্রগ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তী কালে তিনি হিন্দিতে এই ছবি পরিচালনা করেছিলেন।
 
== চলচ্চিত্র জীবন ==
১৯৪৪ সালে নিউ থিয়েটার্সের বাংলা ছবি ‘উদয়ের পথে’ মুক্তি পায় বিমল রায়ের পরিচালনায়। শ্রেণী সংগ্রামভিত্তিক বলিষ্ঠ ছবি উদয়ের পথে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিল ওই সময়ের চলচ্চিত্র সমালোচকদের কাছ থেকে। পরের বছর ছবিটির হিন্দি ‘হামরাহী’ নির্মাণ করেন তিনি।
 
চল্লিশের দশকের শেষে দেশভাগের পর নিউ থিয়েটার্সের প্রতিপত্তি কমতে থাকে। এক সময় নিউ থিয়েটার্স বন্ধ হয়ে গেলে অশোক কুমারের উদ্যোগে মুম্বাইয়ে হিমাংশু রাই-দেবিকা রানী প্রতিষ্ঠিত ‘বম্বে টকিজ’-এ যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ পান বিমল রায়। ওই বম্বে টকিজ থেকে ছবি করেন ‘মা’। এটি মুক্তি পায় ১৯৫২ সালে। এছাড়া ১৯৫৩ সালে শরৎচন্দ্রের ‘পরিণীতা’ উপন্যাস অবলম্বনে দুই প্রতিবেশীর মিষ্টি প্রেমের এ ছবির পরিচালক বিমল রায়। এরপর নিজেই একটি ছবির কোম্পানি খোলেন। বিমল রায় প্রডাকশনের প্রথম ছবি ছিল ‘দো বিঘা জমিন’।
 
বিমল রায় এক সঙ্গে দুটি ছবির কাজ শুরু করেন- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরিণীতা’ ও সলিল চৌধুরীর লেখা গল্প ‘রিকশাওয়ালা’ অবলম্বনে ‘দো বিঘা জমিন’। পরিণীতা ছিল বড় বাজেটের ছবি। এর পাশে দো বিঘা জমিন কম পয়সায় কাজ চালিয়ে নেয়া। অথচ পরিণীতা সেভাবে চললো না। অথচ দো বিঘা জমিন ভারতীয় সিনেমায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। ইটালির নিওরিয়ালিস্টিক ছাদে তোলা এই ছবি বক্স অফিসে খুব একটা সাফল্য লাভ না করলেও দেশি ও বিদেশি চিত্র সমালোচকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা পায়। লীলা চিটনিস, ভারত ভূষণ ও শ্যামা অভিনীত এ ছবির গল্প ছিল একেবারেই গতে বাঁধা মেলোড্রামা। কিন্তু ছবিটি উতরে গিয়েছিল বিমল রায়ের হাতের ছোঁয়ায়।
 
বাণিজ্যিক ও সমান্তরাল সিনেমার এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন সূচনা করলো ভারতীয় সিনেমা New Wave-এর দো বিঘা জমিন-এ বিমল রায়ের নব্য বাস্তববাদী সত্তার প্রথম সার্থক প্রতিফলন ঘটেছিল।
 
[With his very first film Udayer Pathe (Hamrahi in Hindi), Bimal Roy was able to sweep aside the cobwebs of the old tradition and introduce a realism and subtlety that was wholly suited to the cinema. He was undoubtedly a pioneer. He reached his peak with a film that still reverberates in the minds of those who saw it when it was first made. I refer to Do Bigha Zamin, which remains one of the landmarks of Indian Cinema. – Satyajit Ray.]
 
১৯৫৪ সালে Cannes Film Festival-এ পুরস্কৃত হয় দো বিঘা জমিন। আন্তর্জাতিক খ্যাতি আসে চীন, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, ইটালি থেকেও।
 
এরপর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প নিয়ে বিমল রায় আরও দুটি ছবি করেন হিন্দিতে- ‘বিরাজ বউ’ (১৯৫৪) ও ‘দেবদাস’ (১৯৫৫)। এর মাঝে ১৯৫৪ সালে আরও দুটি ছবি পরিচালনা করেন- ‘বাপ-বেটি’ ও ‘নৌকরি’। এ ছবিগুলোতেই বিমল রায়ের শিল্পী সত্তার পূর্ণ পরিচয় থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে খুব একটা সফল হয়নি।
 
বিমল রায়ের মধ্যে সব সময়ই ছিল একটা সমাজ সচেতনতা। তিনি সমাজতান্ত্রিক ভাবনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তৈরি করলেন দুটি ছবি- ‘মধুমতী’ ও ‘ইয়েহুদি’। বাণিজ্যিকভাবে দুটি ছবিই সুপারহিট। নিঃসন্দেহে মধুমতী সবচেয়ে জনপ্রিয় ছবি।
 
শোনা যায়, মুম্বাইয়ে তার সাফল্যে কিছুটা ঈর্ষান্বিত হয়ে পূর্বজন্ম নিয়ে একটি অতি সাধারণ গল্প তাকে দেন ঋত্বিক ঘটক। কিন্তু ওই সাধারণ গল্পই অসাধারণ হয়ে ওঠে বিমল রায়ের কুশলী হাতে মধুমতী ছবিতে। এর সুরকার ছিলেন সলিল চৌধুরী। নিছক বিনোদনের জন্য এই ছবি ক্যামেরার কাজ ও সুরের জন্য হিন্দি সিনেমা জগতে চিরস্থায়ী আসন পেল।
 
আজ ৫০ বছর পরও মধুমতী একই রকম চর্চিত। এটি ৯টি   ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। তখন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড দেয়া হতো ছবির গুণগত মান বিচার করে।
 
মস্কোয় ১৯৫৯ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিমল রায় অন্যতম জুরি ছিলেন। তিনি কিছুকাল ফিল্ম গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার সহকারী সভাপতি এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি হয়েছিলেন।
 
বাণিজ্যিক সাফল্যের চূড়া থেকে নেমে এসে ১৯৫৯ সালে বিমল রায় আরেকবার তার নব্য বাস্তববাদী সত্তার পরিচয় রাখলেন ‘সুজাতা’য়। এই সিনেমার মাধ্যমে প্রকাশ পায় আমাদের সমাজে প্রচলিত ‘জাতের নামে বজ্জাতি’র কুরূপ উন্মোচন করা এক সহানুভূতিশীল প্রতিবেদন। সংবেদনশীল মন নিয়ে বিমল রায়ের সুসংযত পরিচালনা ও নায়িকা নূতনের অপূর্ব অভিনয় সুজাতা ছবির মস্ত সম্পদ।
 
এরপর বিমলের শিল্পী সত্তার এক নতুন দিকের পরিচয় পাওয়া যায় ‘পরখ’ (১৯৬০)-এ। অর্থলোভ নিয়ে এক অসাধারণ স্যাটায়ার তৈরি করেছিলেন তিনি। আজও তা ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। ‘সুজাতা’ ও ‘পরখ’ দিয়ে ফিল্মফেয়ারের সেরা পরিচালকের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেন। প্রথমটির শুরু ছিল ১৯৫৩ সালে ‘দো বিঘা জমিন’, ১৯৫২ সালে ‘পরিণীতা’ ও ১৯৫৫ সালে ‘বিরাজ বউ’। ১৯৬২ সালে অগ্রগামীর ছবি ‘সাগরিকা’ অবলম্বনে বিমলদা তৈরি করেন ‘প্রেমপত্র’। বাংলায় ‘সাগরিকা’ সুপারহিট হলেও ‘প্রেমপত্র’ খুব একটা চলেনি।
 
বিমল রায় পরিচালিত শেষ কাহিনীচিত্র ‘বন্দিনী’ (১৯৬৩)। নূতনের অভিনয় প্রতিভা তিনি আবার কাজে লাগালেন জরাসন্ধ-এর লৌহ কপাট থেকে নেয়া গল্প ‘বন্দিনী’ ছবিতে। জরাসন্ধের গল্প, নবেন্দু ঘোষের চিত্রনাট্য, নূতনের অসামান্য অভিনয় ও শচিন কত্তা-র সংগীত- সব মিলিয়ে বন্দিনী-কে যে অনেক চিত্র সমালোচকই বিমল রায়ের শ্রেষ্ঠ ছবি বলে থাকেন তা খুব একটা অসঙ্গত নয়। বন্দিনীতেই তার মধ্যে সব থেকে বেশি করে আবিষ্কার করা যায় কুইন্টেসেনশিয়াল নব্য বাস্তববাদী পরিচালক ভিত্তোরিও দে সিকা-র ছায়া।
 
বিমল রায় প্রডাকশনের পরের ছবি ‘বেনজীর’ (১৯৬৪)। এর পরিচালক ছিলেন এস খলিল। এর আগে ও পরে বিমল রায় তিনটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন- Immortal Stupa (1961), Life and Message of Swami Vivekananda (1964) I Gautama The Buddha (1967) তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসমাপ্ত থেকে গেছে- Amrit Kumbh I The Mahabharata|
 
বিমল রায় প্রায় আধা ডজন তথ্যচিত্র বানাতে চেয়েছিলেন পলাশির যুদ্ধ, শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের জীবনী, নেহরুর ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ ও রামায়ণ-কে নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে জয়েন্টভেঞ্চার কালকূটের ‘অমৃতকুম্ভের সন্ধানে’ ও তারাশংকরের ‘মহাশ্বেতা’ কাহিনী নিয়েও ছবি বানানোর ইচ্ছা ছিল। পারেননি তা করতে তবু যা পেরেছেন এর মধ্যে ‘অঞ্জনগড়’, ‘দো বিঘা জমিন’, ‘দেবদাস’, ‘সুজাতা’, ‘বন্দিনী’, ‘কাবুলিওয়ালা’ এখনো বলিউডের ক্ল্যাসিক পর্যায়ে পড়ে কিছুদিন আগে বিমল রায়ের ছেলে জয় একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ছবি Images of Kumbh Mela নির্মাণ করেন। এতে তার বাবার ১৯৬০ সালে তোলা অনেক ফুটেজ ব্যবহার করেছেন তিনি। হারিয়ে যাওয়া ওই ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায় কতোটা কুশলী শিল্পী ছিলেন বিমল রায়।
 
With his very first film Udayer Pathe (Hamrahi in Hindi), Bimal Roy was able to sweep aside the cobwebs of the old tradition and introduce a realism and subtlety that was wholly suited to the cinema. He was undoubtedly a pioneer. He reached his peak with a film that still reverberates in the minds of those who saw it when it was first made. I refer to Do Bigha Zamin, which remains one of the landmarks of Indian Cinema. – Satyajit Ray.
 
বিমল রায় কতোটা উঁচু দরের পরিচালক ছিলেন এর স্বীকৃতি পাওয়া যায় ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম পুরুষ সত্যজিৎ রায়ের এই উক্তি থেকে। বিমলদার চলচ্চিত্র জীবন শুরু কলকাতায় ক্যামেরাম্যান হিসেবে। পরবর্তী ৩০ বছর তিনি সঁপে দিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমায়। একটি অতি সাধারণ গল্পটিকেই তিনি রূপ দিয়েছেন ফিল্মি আঙ্গিক ও বাঙালির আবেগে। সবচেয়ে কম সময় মুম্বাই ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে একের পর এক বিখ্যাত বিখ্যাত সিনেমার জন্ম দিয়েছেন তিনি। একেই বলে বাঙালি।
 
বাংলা চলচ্চিত্রের দুর্ভাগ্য, বিমল রায় বাংলা ছবি বেশি করলেন না। তবে বাংলা গল্প ও উপন্যাসের স্বাদ তিনি বহু অবাঙালির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন হিন্দি ছবির মাধ্যমে।
 
বেশ কিছুদিন ফুসফুসের ক্যানসারে ভোগার পর ১৯৬৬ সালের ৮ জানুয়ারি মাত্র ৫৬ বছর বয়সে বিমল রায়ের মৃত্যু হয়।
 
তাঁর পরিচালিত সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রের ভিতরে ''উদয়ের পথে'', ''অঞ্জনগড়'', ''মা'', ''[[দো বিঘা জমীন]]'' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর নিজস্ব সংস্থায় তোলা প্রথম ছবি দো বিঘা জমীন (১৯৫৩) [[কান চলচ্চিত্র উৎসব]], কার্লোভিভেরি এবং ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কার লাভ করেছিল। তাঁর প্রযোজনায় এবং [[হেমেন গুপ্ত|হেমেন গুপ্তের]] পরিচালনায় কাবুলিওয়ালা ছবিটি জনপ্রিয় হয়েছিল। [[মস্কো|মস্কোয়]] [[১৯৫৯]] খ্রিস্টাব্দে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের তিনি অন্যতম জুরি ছিলেন । তিনি কিছুকাল ফিল্ম গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার সহকারী সভাপতি এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি হয়েছিলেন।