কামরূপ রাজ্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Mkmansur (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
{{otherusesof|Kamarupa}}
কামরূপ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা এবং তৎপার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত ছিল। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল প্রাগজ্যোতিষ। বর্তমান সময়ের ভারতের [[আসাম রাজ্য]],এবং মাঝেমধ্যে [[সিলেট]] বিভাগও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদিও ঐতিহাসিক এই রাজ্যের সময়কাল ছিল ৪র্থ থেকে ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত, তবে এই নামে এর প্রসার ছিল বেশ পরবর্তী সময় পর্যন্ত। কামরূপ রাজ্যের সমাপ্তির বহুপরেও মুসলিম লিখনীসমূহে এই অঞ্চলকে কামরূ বা কামরূদ নামে অবহিত করা হত। চৈনিক সাধু সুয়ানচাং এবং কলিক পুরাণ এর মতে এর পশ্চিম সীমা ছিল করতোয়া নদী। কলিক পুরাণ এবং অন্যান্য উৎস মতে পূর্বের সীমা ছিল সাদিয়ার নিকট দিক্কারবাসিনী মন্দির। বর্মন বংশ,ম্লেচ্ছা বংশ এবং পাল বংশ এই রাজ্য ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত শাসন করেছিল, যার পর খেন বংশ রাজধানী আরো পশ্চিমে সরিয়ে নিয়ে যায় আর তাদের রাজ্যের নামাঙ্করণ করে কামাতা রাজ্য। ফলস্বরূপ ১২শ শতাব্দীতে পাল বংশের পতনের সাথে সাথে কামরূপ রাজ্যেরও পতন হয়।
 
'''কামরূপ''' রাজত্ব ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা এবং তৎসংলগ্ন এলাকার সমন্বয়ে গঠিত ছিল। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল প্রাগজ্যোতিষ। বর্তমানে [[ভারত‍‌|ভারতের]] [[আসাম]] রাজ্য এবং [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[সিলেট]] বিভাগ এর অংশ ছিল।
এই রাজ্যের নাম এখনো আসামের একটি জেলার নামের মধ্যে বেঁচে আছে - কামরূপ জেলা।
 
যদিও এই ঐতিহাসিক রাজ্যের সময়কাল চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে ছিল কিন্তু বহুপর পর্যন্ত এর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন এবং মধ্যযুগে ঐতিহাসিকগণ কামরূপ নামেই এর উল্লেখ করেছেন। কামরূপ রাজ্যের সময়সীমা শেষ হবার পর মুসলিম গ্রন্থসমূহে ''কামরূ'' বা ''কামরূদ'' নামে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। কলিকা পুরাণ এবং সুয়ানচাং এর মতে এই রাজ্যের পশ্চিম সীমানায় করোতয়া নদী এবং পূর্বে সাদিয়ার নিকটবর্তী ''দিক্কারবাসিনী'' মন্দির ছিল<ref name="sircar90">ডি. সি. সরকার, (১৯৯০) ''The Comprehensive History of Assam'' ১ম ভলিউমের ৪র্থ অধ্যায়: Prāgjyotisha-Kāmarūpa, Publication Board Assam, পৃঃ ৬৩-৬৪</ref>। বর্মণ বংশ, ম্লেচ্ছা বংশ এবং পাল বংশ রাজ্যটি দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত শাসন করে যার পর কিনা খেন বংশ রাজধানী আরো পশ্চিমে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং রাজ্যের নামকরণ করে কামাতা রাজ্য। সুতরাং কামরূপ রাজ্যের অস্তিত্ব পাল রাজাদের পতনের সাথেসাথে দ্বাদশ শতাব্দীতেই শেষ হয়ে যায়।
[[Category:প্রাচীন রাজ্য]]
 
এই রাজ্যের নাম এখনোআজো আসামের একটিকামরূপ জেলার নামেরমধ্য মধ্যেদিয়ে বেঁচে আছে - কামরূপআছে। জেলা।
 
==কামরূপের উৎসসমূহ==
[[Image:PtomelyAsiaDetail.jpg|thumb|right|280px|[[টলেমি]]র বিশ্বমানচিত্রে এশিয়া যেখানে কামরূপকে ''Cirrhadia'' হিসেবে দেখানো হয়েছে।]]
মহাভারত এবং রামায়ণে এই অঞ্চলকে ''প্রাগজ্যোতিষ'' হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। ইরিত্রিয় সাগরের পেরিপ্লাস (প্রথম শতাব্দী) এবং [[টলেমি]]র জিওগ্রাফিয়াতে (দ্বিতীয় শতাব্দী) এই অঞ্চলকে ''কিরহাদিয়া'' নামে আখ্যায়িত করেছে যা কিরাতা জনগণের নামে নামাঙ্করণ করা হয়েছে<ref name="sircar90_d">ডি. সি. সরকার, (১৯৯০), অধ্যায় ৫: মহাকাব্যীয়-পৌরাণিক কল্পকথা এবং উপাখ্যানসমূহs, পৃ ৮১</ref>। কামরূপের প্রথম মহাকাব্যিক উল্লেখ পাওয়া যায় ৪র্থ শতাব্দীর সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদের অভিলিখন হতে, যা এক ঐতিহাসিক সময়কালের সুচনাপাতের নির্দেশক। চৈনিক পর্যটক সুয়ানচাং ৭ম শতাব্দীর দিকে ভাস্করবর্মণের শাসনকালে এই রাজ্য ভ্রমণ করেন। কামরূপের রাজাদের বিশেষ করে ভাস্করবর্মণের বিভিন্ন অভিলিখন হতে অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়।
==ভৌগলিক সীমানা==
কলিক পুরাণ এবং চৈনিক পর্যচক সুয়ানচাং-এর মতে কামরূপের পশ্চিম সীমানায় ঐতিহাসিক করোতয়া নদী<ref name="karatoya">[http://banglapedia.search.com.bd/HT/K_0086.htm Historical Karatoya River] from [http://banglapedia.search.com.bd Banglapedia]</ref> এবং পূর্ব সীমায় তামেশ্বরী দেবীর মন্দির (কলিক পুরাণে উল্লিখিত ''पूर्वाते कामरूपस्य देवी दिक्करवासिनी-পূর্বতে কামরূপস্য দেবী দিক্কারবাসিনী'') যা ছিল আসাম রাজ্যের সর্বপূর্বে অবস্থিত বর্তমান সাদিয়ার নিকট। দক্ষিণ সীমানা ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা এবং ময়মনসিংহ জেলার মধ্যবর্তী এলাকায়। ফলে এটি সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা নিয়ে গঠিত ছিল এবং সময়ে সময়ে বর্তমান সময়ের ভুটান এবং বাংলাদেশের কিছু অংশও এর অধীন ছিল। এর প্রমাণ এই অঞ্চলে প্রাপ্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলাদি হতে পাওয়া যায়। রাজ্যটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে সম্পুর্নরূপে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে পরিণত হয় এবং এগুলোর মধ্য হতেই এই রাজ্যের উত্তরসুরী হিসেবে পশ্চিমে কামাতা রাজ্য এবং পূর্বে অহোম রাজ্যের উথ্থান ঘটে। ১৫৮১ সালে কামাতা রাজ্যের তদানীন্তন শাসক কোচ রাজা নারায়ণ তাঁর রাজ্যকে দুই ভাগ করেন এবং শঙ্কোশ নদীর পশ্চিম অংশ নিজে রেখে পূর্ব অংশ তার ভাইয়ের ছেলে চিলারায়কে উপঢৌকন দেন<ref name="bhuyan49">এস, কে, ভূইঞা (১৯৪৯) ''Anglo-Assamese Relations 1771-1826'', আসামের ইতিহাস এবং প্রাচীনতা শাস্ত্র বিভাগ, গোহাটি, পৃ ২৬০ এবং মানচিত্র</ref>। বর্তমান আসাম-পশ্চিম বঙ্গ সীমানার মধ্যে এই বিভাজনের গভীর ছাপ লক্ষ করা যায়। নারায়ণের শাসনামলের পর ১৬০২ হতে পরবর্তীতে পূর্বকোচ রাজ্য বারংবার মুঘলদের আক্রমণের স্বীকার হয় এবং ১৬১৫ সালে এটি মুঘল এবং অহমদের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় যা কিনা সপ্তাদশ শতাব্দী পর্যন্ত চলতে থাকে যখন অহোমগণ মুঘলদের শেষবারের মতো পিছু হটতে বাধ্য করে। রাজ্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অহোমদের হাতে ‌১৮২৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত অক্ষুন্ন থাকে।
 
==কামরূপ রাষ্ট্র==
কামরূপ রাষ্ট্রের গঠন কামরূপ রাজাগণের ফেলে যাওয়া বিভিন্ন তাম্র শিলালিপি সুয়ানচাং-এর মতো বিভিন্ন পর্যটকের বর্ণনা হতে পাওয়া যায়।<ref name="chudhury1959">পি, সি, চৌধুরী (১৯৫৯) ''The History of Civilization of the People of Assam'', গোহাটি</ref>
 
'''রাজা রাজরা এবং রাজদরবার''': রাজাকে ঐশী উৎস হতে উপলব্ধ বলে মনে করা হতো। বংশ পরম্পরায় রাজা হবার প্রচলন ছিল, তবে দুটি প্রধান ঘটনার কারণে পৃথক পৃথক শাসক বংশের উৎপত্তি হয়। দ্বিতীয় ঘটনায় রাজ্যের মন্ত্রীগণ ব্রহ্মপাল নামীয় রাজাকে নির্বাচিত করেন যেহেতু পূর্ববর্তী রাজাগণ কোনো উত্তরাধিকারী ছাড়াই মৃত্যুবরণ করেন। রাজদরবার ''রাজগুরু'', কবি, শিক্ষিত লোকজন এবং চিকিৎসকদের দ্বারা ভর্তি থাকত। বিভিন্ন মহাকাব্যীয় উৎস হতে রাজদরবারের বিভিন্ন রাজকর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া যায়: ''মহাবরধিপতি'', ''মহাপ্রতিহরা'', ''মহাল্লকাপ্রৌধিকা'', ইত্যাদি।
 
'''মন্ত্রীপরিষদ''': রাজাগণের উপদেশদাতা হিসেবে ছিল মন্ত্রীপরিষদ এবং সুয়ানচাং হতে ভাষ্করবর্মণ ও তার মন্ত্রীগণের একটি সভার উল্লেখ পাওয়া যায়। কামৌলি লিপি হতে প্রতিয়মান হয় যে এই পদগুলি ব্রাহ্মণদের অধীনে ছিল এবং উত্তরাধিকার সূত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত হতো। রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড বিশেষায়িত ছিল এবং বিভিন্ন শাখার কর্মচারীগণ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকাণ্ড দেখভার করতো।
 
'''রাজস্ব''': বিশেষ কর সংগ্রাহকগণ চাষীদের নিকট হতে ভূমি কর সংগ্রহ করতেন। ভূমির অধিকারী নয় এমন চাষীগণকে ''উপরিকর'' দিতে হতো। টোল সংগ্রাহকগণ (কৈবর্ত) বণিক নৌকা হতে শুল্ক সংগ্রহ করত। তাম্রখনির উপর রাষ্ট্রের একচ্ছত্র অধিকার ছিল (কমলকর)। রাষ্ট্র তার কর্মচারীগণের মাধ্যমে এর ভাণ্ডাগার এবং কোশাগারের রক্ষণাবেক্ষণ করত যাদের বলা হতো ''ভাণ্ডাগারাধিকৃত'' এবং ''কোশ্ঠাগারিকা''।
 
'''অনুদান''': রাজাগণ প্রায়ই ব্রাহ্মণগণকে দান (ব্রহ্মদেয়) করতেন, যা সাধারণত গ্রাম, জলজ উৎস, পতিত জমি ইত্যাদির (''অগ্রহরা'') সমন্বয় থাকত। এই দানের মাধ্যমে দানপ্রাপ্তগণ রাজস্ব আদায়ের, নিয়মিত কর হতে মুক্ত থাকার এবং যে কোনো হয়রানি হতে বাঁচার অধিকার অর্জন করত। কখনো কখনো উত্তর ভারত হতে ব্রাহ্মণগণ ''বর্ণশ্রমধর্ম'' প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে আশ্রয় পেত। যাই হোক না কেন, দানপ্রাপ্তের অস্তিত্বের মাধ্যমে সামন্ততান্ত্রিক শ্রেণীর অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। মন্দির এবং ধর্মশালায় প্রদত্ত দানকে পৃথক পৃথকভাবে ''ধর্মত্তরা'' এবং ''দেবত্তরা'' নামে আখ্যা দেয়া হতো।
 
'''ভূমি জরিপ''': ভূমির জরিপ হতো এবং শ্রেণীবিন্যাস ছিল। উর্বর জমি (''ক্ষেত্র'') ব্যক্তিগত বা পারিবারিক মালিকানায় থাকত, অন্যদিকে পতিত জমি (''খিলা'') এবং বনজঙ্গল সামষ্টিক মালিকানায় ছিল। এছাড়াও কিছু জমি রাষ্ট্র কর্তৃক জরিপ ছাড়াই থাকত যা ''ভূচ্ছিদ্রন্যয়া'' নামে আখ্যায়িত হতো এবং এর উপর কোনো কর সংগ্রহ করা হতো না।
 
'''প্রশাসন''': পুরো রাজ্য আধিপত্যপরম্পরাভিত্তিক প্রশাসনিক অংশে বিভক্ত ছিল যা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ''ভুক্তি'', ''মণ্ডল'', ''বিষয়'', ''পুর'' (শহর) এবং ''অগ্রহরা'' (গ্রামেসমূহের সমষ্টি) নামে আখ্যায়িত ছিল।
 
এই সমস্ত অংশের প্রশাসনিক কার্যে ''ন্যায়করণিক'', ''ব্যবহারিক'', কায়স্থ'' সমুখ কর্মকর্তাগণ একজন ''অধিকর”''-এর অধীনে নিয়োজিত থাকত। তারা আইনি কার্যেও নিয়োজিত থাকত, যদিও চুরান্ত ক্ষমতার অধিকারী থাকত রাজা। আইনের প্রয়োগ এবং শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা ''দণ্ডিক'' (ম্যাজিস্ট্রেট) এবং ''দণ্ডপশিক'' (যারা ''দণ্ডিক''গণের আদেশ নির্বাহ করত) নামীয় কর্মকর্তাদের ওপর ন্যস্ত থাকত।
 
==শাসকগণ==
পুরাণ অনুযায়ী কামরূপের সর্বপ্রথমদিককার শাসক ছিলেন দানব বংশের মহিরঙ্গ। নরকসুর তার উত্তরসুরীদের একজনকে পরাজিত করে রাজ্যে তার বংশের রাজশাসন প্রতিষ্ঠা করে।
 
==ভৌম বংশ==
ঐতিহাসিক রাজাদের শাসন শুরু হয় গুপ্ত রাজা সমুদ্রগুপ্তের সমসাময়িক বর্মণ (ভৌম) বংশের পুশ্যবর্মণের (৩৫০-৩৭৪ খ্রীঃ) মাধ্যমে। কামরূপের ভৌম রাজাদের মধ্যে সবচাইতে ঘটনাবহুল ছিলেন ভাস্করবর্মণ (৬০০-৬৫০ খ্রীঃ), যার শাসনকালে সুয়ানচাং রাজ্য ভ্রমণে আসেন। প্রকৃত রাজধানী ছিল প্রাগজ্যোতিষপুরে যা বর্তমান গোহাটির আশেপাশের জাতীয় এবং দিসপুর এলাকার অধীন<ref name="sircar90_c">Sircar (1990), pp 72</ref>, যেখান হতে স্থিতবর্মণ রাজধানী ব্রহ্মপুত্র নদীর নিকটবর্তী এলাকায় নিয়ে আসে।
 
ভাস্করবর্মণ অবিভক্ত বঙ্গের প্রথমদিককার শাসক শশাঙ্কের ওপর হামলা চালানোর জন্য হর্ষবর্ধনের সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়। যদিও শশাঙ্ক ছিলেন অজেয়, তবে তার মৃত্যুর পর তার রাজ্যকে হর্ষবর্ধন এবং ভাস্করবর্মণ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। নিধিনপুরে (সিলেট জেলা, বাংলাদেশ) প্রাপ্ত ভাস্করবর্মণের শিলালিপি হতে রাজ্যের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে ৬ষ্ঠ থেকে ৭মশতকে। এই তাম্রলিপি ভুটিবর্মণের ধ্বংশপ্রাপ্ত লিপিকে স্থলাভিষিক্ত করে। ইহা মনে করা হয় যে ভাস্করবর্মণ চীনের সহিত সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। তিনি সুয়ানচাংকে একটি চীনা গান শুনিয়েছিলেন যা তার রাজ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। একটি চীনা ভাষ্যমতে হর্ষের মৃত্যুর পর তিনি চীন হতে আগত ওয়াং হিউয়েন সু -এর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি লক্ষ অর্জনে সাহায্য করেছিলেন। তার সময়কালে রাজ্যে বহু মেধাসম্পন্ন লোকজন অধ্যয়নের জন্য ভ্রমণ করতে আসত।
 
==ম্লেচ্ছা বংশ==
ভাস্করবর্মণের কোনো উত্তরাধিকারী ছাড়াই মৃত্যুর পর রাজ্যের শাসন দীর্ঘসময়ের আভ্যন্তরীণ কলহ এবং রাজনৈতিক বিবাদের পর আদিবাসী গোষ্ঠীর ম্লেচ্ছার (অথবা ম্লেছ) সলস্থম্ভের (৬৫৫-৬৭০ খ্রীঃ) অধীনে চলে যায়। এই বংশের রাজধানী ছিল হডপেশ্বর-এ, যা বর্তমান তেজপুরের নিকটবর্তী দহ্ পর্বতিয় হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়।<ref name="sircar90_c" /> এই বংশ সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়না। এই ধারার সর্বশেষ শাসক ছিলেন ত্যাগ সিংহ (৮৯০-৯০০)।
 
==পাল বংশ==
ত্যাগসিংহের কোনো উত্তরাধিকারী ছাড়াই মৃত্যুবরণের পর বঙ্গের পাল বংশের গোপালের মতো ভৌম পরিবারেরই এক সদস্য ব্রহ্মপাল (৯০০-৯২০ খ্রীঃ) শাসনকারী দলপতিদের মাধ্যমে কামরূপের রাজা হিসেবে মনোনীত হয়। রাজ্যের প্রকৃত রাজধানী হডপেশ্বর হতে সরিয়ে বর্তমান গোহাটির নিকটবর্তী রতনপাল নির্মিত দুর্জয়ে নিয়ে যায়। মহান পালরাজা ধর্মপালের রাজধানী ছিল কামরূপনগরে যা বর্তমান উত্তর গোহাটি হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়। সর্বশেষ পালরাজা ছিলেন জয়পাল (১০৭৫-১১০০ খ্রীঃ)। এইসময় কামরূপ রাজ্য আক্রান্ত হয় এবং এর পশ্চিম অংশ গৌরের পালরাজা রামপালের অধিকৃত হয়।
 
তবে গৌররাজা খুব বেশি সময় কামরূপ রাজ্য ধরে রাখতে পারেননি, এবং তিঙ্গ্যাদেব (১১১০-১১২৬) স্বাধীনভাবে কামরূপ শাসন করেন। এইসময় কামরূপ ধীরপতনের সম্মুখীন হয়। ১২০৫ সালে তুর্কী মুহাম্মদ-ই-বখতিয়ার কামরূপ পার হয়ে তিব্বত আক্রমণ করেন যা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। ১২৫৭ সালে ইয়ুযবক কামরূপের এক অজানা শাসককে পরাজিত করে কামরূপ দখল করে, তবে বর্ষার তীব্র বর্ষণে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় জনগণের নিকট পরাজয়ের স্বীকার হয়।
 
এই সময় পশ্চিমা কামরূপ বোডো, কোচ এবং মেছ গোত্রের প্রধানদের দ্বারা শাসিত হচ্ছিল। আর মধ্য আসামে কাছারী রাজ্য এবং আরো পূর্বে চুটিয়া রাজ্য প্রসারিত হচ্ছিল। অহোমেরা যারা আরো পরবর্তীতে তাদের নিজস্ব স্বাধীন ও শক্তিশালী রাজ্য গড়ে তোলে, তারাও এই সময়টাতে কাছারী এবং চুটিয়া রাজ্যের মাঝামাঝি অঞ্চলে নিজেদের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো গড়ে তুলছিল।
 
==আরো দেখুন==
* [[আসামের ইতিহাস]]
 
==References==
<div class="references-small"><references /></div>
 
[[Category:ভারতবর্ষের ইতিহাস|আসামের ইতিহাস]]