জঁ-জাক রুসো: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Rashid.naim (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
Bellayet (আলোচনা | অবদান)
কিছু উইকিফাই
১ নং লাইন:
[[Image:Jean-Jacques Rousseau (painted portrait).jpg|right|thumb|220px|প্যাস্টেলে আঁকা রুসোর চিত্র]]
'''জঁ-জাক রুসো'''<ref>এই ফরাসি ব্যক্তিনামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে [[উইকিপেডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ]]-এ ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।</ref> ([[ফরাসি ভাষা|ফরাসি ভাষায়]]: Jean-Jacques Rousseau ''জ-জাক্‌ রুসো'')([[২৮শে জুন]], [[১৭১২]][[২রা জুলাই]], [[১৭৭৮]]) দার্শনিক, সমাজবিদ, এনলাইটেনমেন্ট এর অন্যতম প্রবক্তা, যার রাজনৈতিক চিন্তাধারা যেমন ফরাসি বিপ্লবকে প্রভাবিত করেছে তেমনি পরবর্তিকালে জাতিয়তাবাদের বিকাশেও ভুমিকা রেখেছে। আত্মজৈবনিক রচনাশৈলীতে আধুনিক ধারার সুত্রপাত করেন, লিখনীতে মন্ময়ী (Subjective)চেতনার বিকাশে যার প্রভাব হেগেল বা ফ্রয়েড সহ অনুবর্তী অনেক চিন্তাবিদের মাঝেই সুস্পষ্ট। রচিত উপন্যাস ছিল একদিকে অষ্টাদশ শতকের জনপ্রিয় বেস্টসেলার এবং একই সাথে সাহিত্যে রোমান্টিসিজম এর অন্যতম উৎস। তাত্বিক ও সুরকার হিসাবে পাশ্চাত্য সংগীতেও রয়েছে তার অসামান্য অবদান।
 
==জীবনপঞ্জি==
জন্ম জেনেভাপ্রবাসী এক [[ফ্রান্স|ফরাসী]] পরিবারে ১৭১২ সালে। জন্মকালেই মাতৃহারা এবং দশবছর বয়সে পিতা পরিত্যাক্ত রুসো প্রতিপালিত হন আত্মীয় স্বজনের কাছে। আত্মীয়রা পারিবারিক ঘড়ির ব্যাবসায় কাজে লাগাতে চাইলে ১৬ বছর বয়সে বাড়ী থেকে পলায়ন করেন এবং ভবঘুরের মতো বিভিন্ন স্থানে বিচিত্র পেশায় জীবিকা উপার্জন করেন। [[১৭১৮]] সালের দিকে মাদাম দ্য ওয়ারেন এর সংস্পর্শে আসেন, পরবর্তীকালে যার সাথে রুসোর প্রণয় সম্পর্কও গড়ে ওঠে, এবং ভদ্রমহিলার অনুপ্রেরনায় ক্যাথলিক ধর্মে দিক্ষিত হন। ন-দশ তার কাছেই ছিলেন রুসো। তাদের মধ্য একপর্যায়ে মনমালিন্য হলে লিও নগরীতে চলে যান, ও গৃহ শিক্ষক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন। [[১৭৪২]] এ প্যারিসে নিবাস গড়েন। প্রথম দিকে স্বরলিপি নকল করে উপার্জনের চেষ্টা করেন। এরপর ‘মাদাম দুপ্যাঁ’ নাম্মী জনৈক অভিজাত মহিলার ব্যক্তিগত সহকারীর চাকুরী লাভ করলে আর্থিকভাবে খানিকটা সচ্ছল হন। প্রতিভাবান রুসো অল্পদিনের মধ্যেই মারিভো (Marivaux), দিদেরো (Diderot), ফঁতনেল (Fontenelle) প্রমুখ নামককরা চিন্তাবিদগনের ঘনিষ্টতা অর্জনে সক্ষম হন। দিদেরো তার বিশ্বকোষে লেখার সুযোগ করে দিলে লেখালেখির প্রথম স্বীকৃতি পান।১৭৪৯ সালে দিজঁ একাডেমী ‘মানুষের নৈতিকতার উপর বিজ্ঞান ও শিল্পকলার প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিযোগীতা মূলক রচনা আহবান করে। রুসো নেতিবাচক দৃষ্টিকোন থেকে নিবন্ধটি উপস্থাপন করেন। ১৭৫০ এ রচনাটিই প্রথম পুরস্কার জিতে নেয়, এবং ভিন্ন মতাবলম্বী চিন্তাধারার লেখক হিসাবে রুসোর খ্যাতি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে।যদিও পাঁরীর মার্জিত শহুরে অভিজ্ঞতা তার সুখকর ছিল না। সারল্য-আভিজাত্যের দ্বন্দ্ব, বঞ্চনা, ভাগ্যবিড়ম্বনা তাকে আরো স্পর্শকাতর, রঢ়স্বভাবের এক খ্যাপাটে মানুষে পরিনত করে, যা তাকে সকল প্রচলিত রীতিনীতি ও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী এবং শাসক ও সভ্যতার সমালোচক করে তোলে। ১৭৫৫ সালে রচনা করেন ‘মানব জাতির অসমতার উৎস’ শীর্ষক আরেকটি নিবন্ধ, এ জন্য পুরস্কৃত না হলেও মুখবন্ধে দিঁজ একাডেমীর নাম উদ্যোক্তা হিসাবে উল্লেখ আছে। লেখাটি রুসো তার জন্মস্থান জেনেভা প্রজাতন্ত্রকে উৎসর্গ করেন। প্যারীর কৃত্রিমতায় অচিরেই তার অনাসক্তি ধরে যায়, ফলশ্রুতিতে শহর ছেড়ে অপেক্ষাকৃত গ্রামাঞ্চলের দিকে বসবাস শুরু করেন। এখানে থাকা অবস্থায়ই তিনি রোমান্টিক ধারার বিখ্যাত উপন্যাস Julie, ou la nouvelle Héloïse (১৭৬০)প্রকাশিত হলে নাগরিক জীবিনে বীতশ্রদ্ধ এ গ্রন্থাগেরের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে য়ুরোপ জুড়ে। আমস্টার্ডাম থেকে প্রকাশিত হয় কালজয়ী রাষ্ট্রদর্শন ‘সামাজিক চুক্তি’ Du Contrat Social, Principes du droit politique (১৭৬২), এবং শিক্ষাদর্শন এমিল Émile (১৭৬২) । গ্রন্থদ্বয় প্রকাশিত হলে একই সাথে চার্চ ও রাজতন্ত্রের রোষানলে পড়েন, ফরাসী পার্লামেন্ট এমিল পোড়ানোর ও রুসোকে গ্রেফপ্তারের আদেশে দেয়। হল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডেও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় গ্রন্থটি। ১৭৬৬ সালের দিকে রুসো ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেন। দার্শনিক ডেভিড হিউম বন্ধুত্ত্বের সুবাদে সর্বাত্বোক সহযোগীতা করলেও বিতাড়িত পলাতক জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা রুসোকে সন্দেহবাতিক মানুষে পরিনত করে। তার ধারনা জন্মে যে ইংরেজ সরকার তাকে হত্যার ষড়জন্ত্র করছে এবং হিউমের সাথে তার মতান্তর ঘটে। ১৭৭০ সালে প্যারিসে ফেরত আসেন এবং আবার স্বরলিপি রচনায় আত্মনিবেশ করেন। তার স্বরলিপিও প্রণালী ছিল স্বউদ্ভাবিত ব্যাতিক্রমী ধরনের। লেখাশুরু করেন বিখ্যাত আত্মজীবনি । জীবনের শেষদিকে সন্দেহপ্রবনতা মানসিক বিকারের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। সকলেই তাকে অপমানিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এ ধারনা ক্রমেই রুসোর মাঝে বদ্ধমূল হতে থাকে এবং বন্ধুপ্রতিম দিদেরো, হিউম, গ্রিম প্রমূখ সকলকেই শত্রু ভাবতে শুরু করেন। ১৭৭৮ সালের ২রা জুলাই ভাগ্যবিড়ম্বিত এ চিন্তানায়কের জীবনাসান ঘটে।
 
==চিন্তা ও দর্শন==
 
===মানুষ ও সভ্যতা===
রুসোর মতে, প্রকৃতি মানুষকে যেভাবে ও যে উদ্দেশ্যে গড়ে , সমাজের দোষে তা ব্যার্থ হয়ে যায়। ললিতকলা ও বিজ্ঞানের বেদীমূলে সৃষ্ট সভ্যতার উপর তার কোন আস্থা ছিল না। মানব উৎকর্ষতার সাথে শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের বিকাশ সম্পর্কিত রেনেসা ও এনলাইটেনমেন্ট মতবাদের সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষন করে রুসো বলেন
‘সমাজ ও সমাজের বিলাশিতা থেকেই জন্ম নেয় মানববিদ্যা, প্রযুক্তি, ব্যবসাবানিজ্য, পান্ডিত্য এবং ঐ সকল বাহুল্য যা শিল্পের বিকাশ ঘটায় কিন্তু একই সাথে সমাজকে সমৃদ্ধ ও ধংস করে। ...। বিখ্যাত জাতিসমুহের প্রাচুর্য, তাদেরকে যে ক্লেদাক্ত দুঃখদুর্দশার দিকে ঠেলে দেয় এই হচ্ছে তার কারন। একদিকে শিল্প ও মানববিদ্যা যতই উন্নতি লাভ করে, অন্যদিকে করের বোঝায় জর্জরিত শ্রমে ক্ষুধায় কাতর অনাদৃত কৃষক ততই রুজির সন্ধানে শহরমূখী হয়। আমাদের নগরগুলি যতই দৃষ্টিনন্দন হয় ততই গ্রামাঞ্চল বিরান হতে থাকে। অনাবাদি জমির পরিমান বাড়ে। নাগরিক হয় ভিখারি বা ডাকাত, আর ওদের জীবনের ইতি হয় ফাসির মঞ্চে বা আবর্জনাস্তুপে। এভাবে রাষ্ট্র একদিকে ফুলেফেপে ধনী হয়, অন্যদিকে হয় জনশূন্য বিরান। প্রবল প্রতাপ, সম্রাজ্য এভাবে অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তোলে সমৃদ্ধির সৌধ আর ডেকে আনে জনজীবনে অবলুপ্তি’।
রুসো ‘আদি-পাপ’ বা ‘অরিজিনাল সিন’ এ বিশ্বাস করতেন না। তার মতে মানুষের দুর্দশা ও দুর্বলতার কারন আদি পাপ নয়, বরং এটা হয়েছে তার আপন প্রকৃতির সাথে পরিবেশের দ্বন্দ্ব এবং অসংগতির ফলে। মানুষ জন্মসুত্রে যে সম্ভাবনা নিয়ে আসে, তা অর্জনের প্রয়াস থেকেই তার মাঝে দেখা দেয় চাহিদা ও উচ্চাকাঙ্খা। অন্তহীন সে চাহিদা পূরনে অন্যের সাথে সে নিরিন্তর সংগ্রামে লিপ্ত হয়। সমকালীন সমাজ কাঠামো ব্যাক্তির বিকাশের পথে অন্তরায়, যা মানুষকে মানুষের মুখোমুখী করে দেয়, তাকে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে বাধ্য করে।আদিম মানূষ ছিল সাচ্ছন্দ, সূখী ও আত্মসমাহিত। সঞ্চিত রাখার মতো সম্পদ ছিলনা বলেই আদিম মানুষের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।
 
===সমাজ ও রাষ্ট্র===
রুসোর মতবাদ প্রাকৃতিক সাম্য ধারনার উপর নির্ভরশীল, যেখানে মানুষ মাত্রই সমান , স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং তৃপ্ত। প্রাকৃতির সেই সুখী ও সৎ মানুষকে সমাজ ব্যাবস্থা দূর্নীতিপ্রায়ন ও দূর্দশাগ্রস্থ করেছে। রুসো সেই সমাজ ব্যাবস্থার একাধারে সমালোচক এবং সমাধানে প্রয়াসী। সমাধান হবে ব্যক্তি ও সমাজের যৌথ পরিবর্তনের দ্বারা। বাক্তির উদ্ধার হবে শিক্ষায়, যার বিবরণী আছে ‘এমিলে’। আর সমাজের উদ্ধার সাধন সম্ভব যদি মানুষ সমাজবন্ধনের গোড়ার কথা মনে রাখে। যার আলোচনা আছে ‘সমাজ চুক্তি’ গ্রন্থে।
ব্যাক্তি তার নিজস্ব স্বাধীনতা খানিকটা বিসর্জন দেয় রাষ্ট্র-সমাজ গঠনে, কিন্তু সে কারো গোলাম নয়। রুসোর মতে, মানবিক জ্ঞানের উন্নতি এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের ফলে শ্রমের শ্রেণীবিভক্তি সুচিত হয় এবং মানব জাতির প্রাকৃতিক সুখকর অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে ধনী-দরিদ্র বিভাজন সৃষ্টিকরে, পরিনতিতে রাষ্ট্রিয় সমাজ অত্যাবশ্যক হয়ে যায়। এ সমাজ সংগঠন তথা রাষ্ট্র মানুষের কৃত্রিম জীবনের ফল।
১৮ নং লাইন:
এভাবে একক ব্যক্তির ইচ্ছা সামষ্টিকভাবে একটি ‘সাধারন ইচ্ছায়’ (General will) পরিনত হয়। এ সাধারন ইচ্ছাই রাষ্ট্রীয় জীবনে মানুষের নিয়ামক। রাষ্ট্র হচ্ছে পূর্ণ রাজনৈতিক সংস্থা, সর্বোচ্চ এবং সার্বভৌম সাধারন ইচ্চার প্রকাশ, আর সরকার হচ্ছে সাধারন ইচ্ছাকে কার্যকরি করার জন্য সম্প্রদায়ের দ্বারা নির্বাচিত জনগনের সমষ্টি।
 
===শিক্ষা===
রুসোর তার শিক্ষাদর্শন গল্পের ডঙ’এ এমিল বইতে বিবৃত করেছেন। এটা একটি বালকের বেড়ে ওঠার ঘটনা, বই এর নামে যার নাম। রুসো তাকে শহরের বাইরে গ্রামেঞ্চলে নিয়ে যান, যে শহরে মানুষ শুধু কায়-মনে খারাপ অভ্যাসগুলিই আয়ত্বে আনে। কেননা তার মতে শিক্ষার উদ্দেশ্যই হল নিষ্ঠাবানরূপে বাচতে শেখা।
শিশুর বিকাশ রুসো তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। বার বছর পর্যন্ত ১ম ভাগ, যে সময়ে তার মাঝে বিশ্লেষনাত্মক জটিল চিন্তাকাঠামো গড়ে ওঠেনি, শিশু তখন অনেকটা পশুতূল্য। বার থেকে ষোল পর্যন্ত ২য় ভাগ যখন তার মাঝে যৌক্তিকতার বিকাশ হয়। ষোল পরবর্তী সামনের দিকে শেষ ভাগ যখন সে সাবালকত্ব লাভ করে।
 
==রচনাবলী ==
রুসো বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন। যার মধ্যে আছে উপন্যাস, নাটক, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, সংগীত, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতি।
 
==বাংলায় অনুবাদ==
সামাজিক চুক্তি – অনুবাদঃ ননীমাধব চৌধুরী
রুশোর সোসাল কন্ট্রাক্ট – অনুবাদঃ সরদার ফজলুল করিম
৩৪ নং লাইন:
<references/>
 
{{অসম্পূর্ণ}}
[[category:১৭১২-এ জন্ম]]
[[category:১৭৭৮-এ মৃত্যু]]