বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্প্রসারণ - বৌদ্ধ-ধর্মের প্রারম্ভিক সময় (১ম ও ২য় বৌদ্ধ পরিষদ)
জঙ্গলবাসী (আলোচনা | অবদান)
পৃষ্ঠাকে 'বাংলাদেশের সমাজে শান্তি নেই।' দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হল
১ নং লাইন:
বাংলাদেশের সমাজে শান্তি নেই।
[[File:Buddhist Expansion.svg|thumb|right|320px|খৃষ্ট-পূর্ব ৭ম শতাব্দির শুরু থেকে বৌদ্ধ ভূ-খন্ড হিসেবে পরিচিত উত্তর ভারত (গাঢ় কমলা রঙ দ্বারা চিহ্নিত) থেকে বৌদ্ধ ধর্মের সম্প্রসারণ, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহ (কমলা রঙ দ্বারা চিহ্নিত) এবং বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহাসিক প্রভাব সম্বলিত অংশসমূহ (হলুদ রঙ দ্বারা চিহ্নিত)। মহাযান (লাল তিরাকৃত চিহ্ন), থেরবাদ (সবুজ তিরাকৃত চিহ্ন) এবং তান্ত্রিক-বজ্রযান (নীল তিরাকৃত চিহ্ন)।.]]
 
{{বৌদ্ধধর্ম}}
 
'''বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস''' খৃষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিস্তৃত; যা পূর্বে প্রাচীন ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে গড়ে উঠে মগধ রাজ্যের (যা বর্তমানে ভারতের বিহার প্রদেশ) চারদিকে প্রচারিত হয়েছিলো। বৌদ্ধ ধর্ম অস্তিত্ব মূলত [[গৌতম বুদ্ধ|সিদ্ধার্থ গৌতমের]] শিক্ষার উপর ভিত্তি করে। বৌদ্ধ ধর্ম আজ পালনকৃত প্রাচীন ধর্মগুলোর মধ্যে একটি। বৌদ্ধ ধর্মের সূত্রপাত মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অব্দি ছড়িয়ে পরে। এক সময় এই ধর্ম পুরো এশিয়া মহাদেশের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস নানা ধরনের ভাববাদি আন্দোলনের উন্নয়ন যেমনঃ [[থেরবাদ]], [[মহাযান]] ও [[বজ্রযান|বজ্রযানের]] মতো বৌদ্ধ ধর্মের অন্যান্য শাখার উত্থান ও পতনের মধ্য দিয়ে চিহ্নিত।
 
==সিদ্ধার্থ গৌতম==
[[File:Ashoka Chakra.svg|right|thumb|অশোক চক্র, একটি প্রাচীন ভারতীয় ধর্মচক্রের চিহ্ন যা [[ভারতের জাতীয় পতাকা|ভারতের জাতীয় পতাকার]] অংশভুক্ত।]]
সিদ্ধার্থ গৌতম বৌদ্ধ ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি শাক্য রাজবংশের এক ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণ পরিবারে রাজপুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর সময়কাল নিয়ে এখনও অনেক ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।<ref>Cousins, L. S. (1996). "The dating of the historical Buddha: a review article", Journal of the Royal Asiatic Society (3)6(1): 57–63.</ref> কিন্তু অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তাগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ৪০০ খৃষ্টপূর্বের কিছু দশক আগে বুদ্ধ মারা গিয়েছিলেন।<ref>Prebish, Charles S. (2008). [https://web.archive.org/web/20120128200109/http://blogs.dickinson.edu/buddhistethics/files/2010/05/prebish-article.pdf Cooking the Buddhist Books: The Implications of the New Dating of the Buddha for the History of Early Indian Buddhism], Journal of Buddhist Ethics 15, p. 2</ref> তাঁর শাক্য-ক্ষত্রিয় বংশের পরিবারগণ ব্রাহ্মণ গোত্রের ছিল, যা তাঁর পরিবার কর্তৃক প্রদানকৃত নাম <nowiki>"গৌতম"</nowiki> দ্বারা নির্দেশিত। বিংশ শতাব্দির পন্ডিত এইতেল-এর মতে, সিদ্ধার্থ গৌতমের নাম গৌতম শব্দটি এক ব্রহ্মর্ষি গৌতম থেকে অনুপ্রাণীত।<ref>Fa-Hien (author), James Legge, transl. (1896): ''A Record of Buddhistic Kingdoms'', Clarendon, Oxford, P. 95 [[:iarchive:arecordbuddhist00legggoog|PDF]]</ref> অনেক বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলোতে বর্ণিত আছে যে, বৌদ্ধ ছিলেন ব্রহ্মর্ষি অঙ্গিরসের বংশধর।<ref>[[Edward Joseph Thomas]] (1927). ''The Life of Buddha as Legend and History'', London, K. Paul, Trench, Trubner & Co</ref> উদাহরণস্বরূপঃ পালি মহাভাগ্য অঙ্গিরস গ্রন্থে বুদ্ধকে অঙ্গিরস হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে যা মূলত গৌতম বুদ্ধ-কে অঙ্গিরস-সম্প্রদায়ভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে।<ref>Vidyabhusana, Satis Chandra (1971), ''A History of Indian Logic'', Delhi, Motilal Banarsidass, p. 19</ref> লেখক এবং ইতিহাসবেত্তা [[এডওয়ার্ড জে. থমাস|এডওয়ার্ড জে. থমাসও]] বুদ্ধকে ব্রহ্মর্ষি গৌতম এবং অঙ্গিরসের বংশধর হিসেবে উল্লেখ করেছেন।<ref>Thomas, Edward J. (1927), ''The Life of Buddha'', London: K. Paul, Trench, Trubner & Co.; p. 22</ref>
 
বৌদ্ধ পরম্পরাগত মতবাদানুযায়ী, সন্ন্যাসী জীবনযাপন ও ধ্যানের মধ্য দিয়ে সিদ্ধার্থ গৌতম ভোগপরায়ণতা এবং স্ব-রিপুদমনের একটি সংযমী পথ আবিষ্কার করেছিলেন।
 
সিদ্ধার্থ গৌতম সিদ্ধিলাভ করেছিলেন মূলত একটি অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচে যেটি বর্তমানে ভারতের বুদ্ধ গয়ায় বোধি বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত। সিদ্ধিলাভের পর থেকে গৌতম বুদ্ধ <nowiki>"সম্যকসমবুদ্ধ"</nowiki> বা <nowiki>"আলোকিত ব্যক্তিত্ব"</nowiki> হিসেবে পরিচয় লাভ করেছিল।
 
তৎকালীন [[মগধ]] রাজ্যের [[বিম্বিসার|সম্রাট বিম্বিসারের]] শাসনামলে বৌদ্ধ তাঁর ধর্ম প্রচারে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। সম্রাট বিম্বিসার তাঁর ব্যাক্তিগত ধর্মীয়-বিশ্বাস হিসেবে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর রাজ্যে অনেকগুলো বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের আদেশ প্রদান করেছিলেন। আর এই বিহারগুলোই বর্তমান ভারতের [[বিহার]] অঙ্গ-রাজ্যের নামকরণে ভূমিকা রেখেছিল।<ref name=Wolpert>[[Stanley Wolpert]] (1991), India, Berkeley: University of California Press, p. 32</ref>
 
উত্তর ভারতের [[বারাণসী|বারাণসীর]] বর্তমান হরিণ-পার্ক নামক জায়গাটিতে বৌদ্ধ তাঁর পাঁচ-সঙ্গীকে প্রথম ধর্মদেশনা প্রদান করেছিল। বুদ্ধ সহ তাঁর এই পাঁচ সন্ন্যাস সহচর মিলে প্রথম সংঘ (ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীদের দ্বারা গঠিত সম্প্রদায়) গঠন করেন। বিভিন্ন বৌদ্ধ-গ্রন্থ অনুযায়ী,<ref>''Book of the Discipline'', [[Pali Text Society]], volume V, Chapter X</ref> প্রাথমিক অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও গৌতম বুদ্ধ পরে সন্ন্যাসীনিদেরও সংঘের আওতাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীনিদের <nowiki>"ভিক্ষুণী"</nowiki> হিসেবে অভিহিত করা হয়।<ref>{{Cite book|url=https://books.google.com/?id=EvDUSt-msIEC&pg=PA67&lpg=PA67&dq=bhikkhuni+%22full+ordination+of+buddhist+nuns%22#v=onepage&q=bhikkhuni%20%22full%20ordination%20of%20buddhist%20nuns%22&f=false |title=Encyclopedia of feminist theories |publisher=Books.google.com |date= 2003-12-18|accessdate=2010-11-19|isbn=978-0-415-30885-4}}</ref><ref name="owbaw">{{cite web|url=http://www.owbaw.org/2006.asp |title=The Outstanding Women in Buddhism Awards |publisher=Owbaw.org |date= |accessdate=2010-11-19}}</ref> বুদ্ধের মাসী এবং তাঁর সৎ-মা [[মহাপ্রজাপতি গৌতমী|মহাপজাপতি গোতমী]] ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রথম ভিক্ষুণী। খৃষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দিতে তিনি ভিক্ষুণী হিসেবে সন্ন্যাস পদ গ্রহণ করেন।<ref name="buddhanet"/><ref name="buddhanet">{{cite web|url=http://www.buddhanet.net/e-learning/buddhism/lifebuddha/2_23lbud.htm |title=The Life of the Buddha: (Part Two) The Order of Nuns |publisher=Buddhanet.net |date= |accessdate=2010-11-19}}</ref><ref>{{cite web|url=http://www.congress-on-buddhist-women.org/index.php?id=30 |title=A New Possibility |publisher=Congress-on-buddhist-women.org |date= |accessdate=2010-11-19}}</ref>
 
জানা যায়, বুদ্ধ তাঁর অবশিষ্ট জীবনের বছরগুলোতে ভারতের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলগুলোতে পরিভ্রমণ করেন।
 
বুদ্ধ [[কুশীনগর|কুশীনগরের]] পরিত্যাক্ত এক জঙ্গলে দেহত্যাগ বা মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
 
জনশ্রুতিতে শোনা যায় যে, মারা যাওয়ার পূর্বে বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের বলে গিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রচার করা ধর্মীয়দেশনাই হবে তাদের নেতা যা তাদের দিক-নির্দেশনা প্রদানে সহায়তা করবে। পূর্ববর্তী অড়হৎরা গৌতমের মুখ-নিঃসৃত বাণীকেই ধর্ম এবং বিনয়ের (শৃঙ্খলা ও সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার নিয়ম) প্রাথমিক উৎস হিসেবে অভিহিত করেছিল। কিন্তু বাস্তবে বুদ্ধের কোন মুখ-নিঃসৃত বাণীরই হদিস মিলে নি। [[পালি ভাষা|পালি]], [[সংস্কৃত]], [[চৈনিক ভাষা]] ও [[তিব্বতি ভাষা|তিব্বতি]] ভাষায় যে ত্রিপিটক ও ধর্মীয়গ্রন্থগুলো পাওয়া যায় তা মূলত স্থানীয় মানুষদের মৌখিক বর্ণনা থেকে সংগৃহীত।<ref>Robinson, Richard and Johnson, Willard (1977). ''The Buddhist Religion''. Encino, California: Dickenson Publishing Complany, Inc.</ref>
 
==বৌদ্ধ-ধর্মের প্রারম্ভিক সময়==
বৌদ্ধ ধর্ম পূর্বে গাঙ্গেয় উপত্যকায় কেন্দ্রীভূত থাকলেও পরে এই প্রাচীন ভূ-খন্ড থেকে বৌদ্ধ ধর্ম অন্যত্র ছড়িয়ে পরে। বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় শাস্ত্রের উৎসগুলো দুইটি ধর্মীয় পরিষদ সংরক্ষণ করেন, যার একটি হলো বুদ্ধের পাঠগত শিক্ষা সংরক্ষণের জন্য সন্ন্যাসী সংঘ ও আরেকটি হলো সংঘের অভ্যন্তরীণ নিয়মানুবর্তিতামুলক সমস্যাগুলো সমাধানের উপায়সমূহ।
 
===১ম বৌদ্ধ পরিষদ (খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দি)===
প্রথম বৌদ্ধ পরিষদ গঠিত হয় বুদ্ধের [[পরিনির্বাণ]] লাভের পর অর্থাৎ বুদ্ধের দেহত্যাগের পর। খৃষ্ট-পূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দিতে [[মহাকাশ্যপ]] নামক বুদ্ধের একজন কাছের শিষ্যের তত্ত্বাবধানে এবং রাজা [[অজাতশত্রু|অজাতশত্রুর]] সমর্থনে এই প্রথম বৌদ্ধ পরিষদ গঠিত হয়। এই পরিষদ গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বুদ্ধের মুখ-নিঃসৃত বাণীগুলোকে মতবাদ-সংক্রান্ত শিক্ষায় (তথা সূত্রে) এবং [[অভিধর্ম|অভিধর্মে]] রূপান্ততরিত করা এবং বৌদ্ধের সন্ন্যাসগত নিয়ামাবলীকে লিপিবদ্ধ করা। এই পরিষদে বৌদ্ধের খুড়তুতো ভাই এবং তাঁর প্রধান শিষ্য [[আনন্দ (বৌদ্ধ ভিক্ষু)|আনন্দকে]] ডাকা হয় বুদ্ধের উপদেশ এবং অভিধর্ম আবৃত্তি করার জন্য এবং বুদ্ধের আরেক প্রধান শিষ্য উপালি কে বলা হয় বিনয়ের সূত্রসমূহ পাঠ করার জন্য। এগুলোই মূলত ত্রিপিটকের মূল ভিত্তি হিসেবে পরিচয় লাভ পায় যেগুলো পালি ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়।
 
তবে প্রথম বৌদ্ধ পরিষদে অভিধর্মের অস্তিত্বের জথা উল্লেখ নেই। এটি শুধুমাত্র দ্বিতীয় পরিষদের পরই অস্তিত্ব লাভ করে।
 
===২য় বৌদ্ধ পরিষদ (খৃষ্ট-পূর্ব ৫ম শতাব্দি)===
দ্বিতীয় বৌদ্ধ পরিষদের অনুষ্ঠিত হয় বৈশালিতে যেটি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নিয়ম-শৃংখলার বিভিন্ন বিষয়ের শিথিলকরণের বিতর্ক থেকে উত্থান হয়েছিল। প্রথম বৌদ্ধ পরিষদে আসল বিনয় গ্রন্থের সংরক্ষণের যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শিথিলকরণসমূহের কারণগুলো বুদ্ধের শিক্ষার পরিপন্থী হওয়ায় দ্বিতীয় বৌদ্ধ পরিষদের আবির্ভাবের কারণ হয়ে উঠে।
 
 
==তথ্যসূত্র==
 
[[বিষয়শ্রেণী:ধর্ম]]
[[বিষয়শ্রেণী:বৌদ্ধ ধর্ম]]