বুধ গ্রহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Suvray (আলোচনা | অবদান)
পরিমার্জন
FerdousBot (আলোচনা | অবদান)
বানান, replaced: দৈর্ঘ → দৈর্ঘ্য (4)
১২০ নং লাইন:
}}
 
'''বুধ''' ({{lang-en|Mercury}}; {{IPA2|ˈmɜ(ɹ).kjə.ɹi}}) ''মার্কিউরী'') [[সৌরজগৎ|সৌরজগতের]] প্রথম এবং ক্ষুদ্রতম [[গ্রহ]]। এটি [[সূর্য|সূর্যের]] সর্বাপেক্ষা নিকটতম গ্রহ। এর কোনও উপগ্রহ নাই। এটি সূর্যকে প্রতি ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। এর উজ্জ্বলতার [[আপাত মান]]-২.০ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু একে পৃথিবী থেকে সহজে দেখা যায় না, কারণ সূর্যের সাথে এর বৃহত্তম কৌণিক পার্থক্য হচ্ছে মাত্র ২৮.৩ ডিগ্রী। কেবল সকাল ও সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় এটি দৃশ্যমান হয়। বুধ গ্রহ সম্বন্ধে সংগৃহীত তথ্যের পরিমাণ তুলনামূলক কম। বুধ অভিমুখী একমাত্র নভোযান হলো [[মেরিনার ১০]] যা [[১৯৭৪]] - [[১৯৭৫]] সালে অনুসন্ধানী অভিযান চালিয়েছিল।
 
ভৌত বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে বুধ অনেকটা [[চাঁদ|চাঁদের]] মতো কারণ চাঁদের মতো এই গ্রহেও রয়েছে প্রচুর খাদ। গ্রহটির কোনও স্থিতিশীল বায়ুমণ্ডল নেই, নেই কোনও [[প্রাকৃতিক উপগ্রহ]]। এর একটি সুবৃহৎ [[লৌহ]] কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্র কর্তৃক উৎপাদিত [[চৌম্বক ক্ষেত্র]] পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের তুলনায় ০.১% অধিক শক্তিশালী। বুধের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ৯০ থেকে ৭০০ কেলভিনের মধ্যে থাকে। সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান হচ্ছে [[অর্ধসৌর বিন্দু]] এবং শীতলতম স্থান হল এর মেরুর নিকটে অবস্থিত খাদসমূহের নিম্ন বিন্দু।
১৮৩ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|বুধের অনুসূরের অগ্রগমন}}
 
বুধের আবর্তনকাল ৮৮ দিন। কিন্তু পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা যায় এর কক্ষপথের ধীর পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তনটির ব্যাখ্যা দেযয়া হয়েছে বুধের [[অনুসূর]] বিন্দুর পরিবর্তনের মাধ্যমে। এই ঘটনাটি বুধের ''অনুসূরের অগ্রগমন নামে'' চিহ্নিত। এর পরিমাণ প্রতি ১০০ বছরে ১°৩৩'২০''। এই অগ্রগমনের একটি কারণ হচ্ছে ভূ-কক্ষের বিষুবন বিন্দুর অগ্রগমন। এই কারণটিই মুখ্য। এছাড়া শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ অগ্রগমনের কারণ হচ্ছে অন্যান্য গ্রহের আকর্ষণ। প্রতি একশ বছরে বুধের অনুসূর বিন্দু ৪৩'' পরিমাণ অগ্রসর হয়। নিউটনীয় বলবিজ্ঞানের সাহায্যে এর কোন ব্যাখ্যা প্রদান সম্ভব হয় নি। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করতেন বুধ ও সূর্যের মাঝখানে অন্য কোন গ্রহ আছে। যেমন, ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী [[ল্য ভেরিয়ে]] ১৮৫৯ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর [[ফ্রেঞ্চ একাডেমি|ফ্রেঞ্চ একাডেমিতে]] যে গবেষণাপত্র জমা দেন তাতে অগ্রগমনের দুইটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখিত ছিল: [[শুক্র গ্রহ|শুক্র গ্রহের]] যে [[ভর]] বিজ্ঞানীদের পরিজ্ঞাত প্রকৃত ভর তা থেকে সামান্য বেশি অথবা বুধ ও শুক্রের মাঝখানে অন্য একটি গ্রহ বিদ্যমান। প্রথম সম্ভাবনা দিয়ে অগ্রগমন ব্যাখ্যা করা গেলেও সেক্ষেত্রে পৃথিবীর গতি নিয়ে নতুন সমস্যা দেখা দেয়।
 
দ্বিতীয় সম্ভবনায় বলা হয়েছে মধ্যখানের এই গ্রহটির আকর্ষণের কারণে অগ্রগমন ঘটে। কিন্তু অতি সূক্ষ্ণ অনেক গবেষণা সত্ত্বেও এ ধরণের কোন গ্রহের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয় নি। এ থেকে বিজ্ঞানীরা মেনে নেন, এই গতির ব্যাখ্যা নিউটনের চিরায়ত বলবিজ্ঞানের সাহায্যে সমাধান করা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে [[আলবার্ট আইনস্টাইন]] তার [[আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব|আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে]] বলেন, সূর্যের অবস্থিতির জন্য স্থান-কাল মহাশূন্যে একটি বক্রতার সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ নিউটনীয় নীতি এই বক্রতারই ফল। সূর্যের চারদিকে উক্ত বক্রপথে যেতে বুধের কক্ষের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে এর অনুসূর বিন্দুর অগ্রগমন ঘটে। এই তত্ত্ব অনুসারে অগ্রগমনের পরিমাণ প্রতি ১০০ বছরে ৪৩.০৩'' যা মূল পরিমাণের সাথে সুন্দরভাবে মিলে যায়। তাই বুধের অনুসূরের অগ্রগমন বর্তমানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের একটি প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।<ref>'''বিশ্ব ও সৌরজগৎ''': [[মোহাম্মদ আবদুল জব্বার]]। [[বুয়েট]] থেকে প্রকাশিত সংস্করণ। পৃ. ১৬৬ - ১৬৭</ref>
১৮৯ নং লাইন:
=== স্পিন-কক্ষপথ অনুরণন ===
[[চিত্র:Mercury's orbital resonance.png|thumb|right|200px|After one orbit, Mercury has rotated 1.5 times, so after two complete orbits the same hemisphere is again illuminated]]
অনেক বছর যাবৎ মানুষ ধারণা করত, বুধ গ্রহ সূর্যের সাথে একই পর্যায় এবং দশায় tidally locked হয়ে আছে। এ থেকে ধারণা জন্মায়, এটি নিজ কক্ষপথে একবার ঘুরে আসার সময় মাত্র একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করে, যার ফলে এর একটি দিকই সবসময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, ঠিক যেমন চাঁদের একটি দিকই সবসময় পৃথিবীর দিকে মুখ করা থাকে। কিন্তু ১৯৬৫ সালে [[রাডার]] পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে এর স্পিন-কক্ষপথ রেজোন্যান্স ৩:২। অর্থাৎ বুধ গ্রহ যে সময়ে সূর্যের চারদিকে দুইটি আবর্তন সম্পন্ন করে সে সময়েই এটি নিজ অক্ষের চারদিকে তিনবার ঘূর্ণন সম্পন্ন করে। এর কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতা এই অনুরণন সীমাটিকে অনুসূর বিন্দুতে বেঁধে রাখে। সূর্যের জোয়ার-ভাটার প্রভাব যখন সবচেয়ে শক্তিশালী হয় তখন একে বুধের আকাশে প্রায় স্থির দেখায়। একই পর্যায় ও দশায় বুধ গ্রহের এই আবদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বুধ গ্রহ যখন পর্যবেক্ষণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থানে থাকে তখন ৩:২ রেজোন্যান্সে এটি যে বিন্দুতে থাকত সেই বিন্দুতেই একে দেখা যায়। ফলে এর একটি দিকই পর্যবেক্ষণ করা যায়। বুধের স্পিন-কক্ষপথ অনুরণন ৩:২ হওয়ার কারণে এর একটি [[সৌর দিন]] ১৭৬ পার্থিব দিনের সমান হয়। সৌর দিন বলতে সূর্যের দুইটি [[মধ্যরেখা (জ্যোতির্বিজ্ঞান)|মধ্যরেখা]] [[অতিক্রম|অতিক্রমের]] (meridian transit) মধ্যবর্তী দৈর্ঘকেদৈর্ঘ্যকে বোঝায়। অপরদিকে সেখানে এক [[নাক্ষত্রিক দিন|নাক্ষত্রিক দিনের]] (ঘূর্ণনের পর্যায়কাল) দৈর্ঘদৈর্ঘ্য হচ্ছে ৫৮.৭ দিন। কক্ষপথের বিভিন্ন সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখা গেছে মিলিয়ন বছরের মধ্যে বুধের কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতা ০ থেকে ০.৪৭ -এর মধ্যে অনিয়মিতভাবে উঠানামা করে। এই ঘটনাটি দ্বারা বুধের ৩:২ স্পিন-কক্ষপথ অনুরণনের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়। কারণ পর্যায়কালের এত উচ্চ উৎকেন্দ্রিকতার কারণে এ ধরণের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।<ref name="Correia" />
 
== পর্যবেক্ষণ ==
২৪৩ নং লাইন:
[[জাপান]] [[ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি|ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির]] সাথে যৌথভাবে একটি অভিযানের পরিকল্পনা করছে যা [[বেপিকলম্বো]] নামে পরিচিত। এই অভিযানে দুই সন্ধানী যান ব্যবহৃত হবে যারা বুধের কক্ষপথ পরিভ্রমণ করবে। দুটি সন্ধানী যানের একটি বুধের মানচিত্র প্রণয়নের কাজ করবে এবং অপরটি এর [[ম্যাগনেটোস্ফিয়ার]] নিয়ে গবেষণায় ব্যবহৃত হবে। একটি ল্যান্ডার সহ মূল পরিকল্পনাটি করা হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে [[রাশিয়া|রাশিয়ার]] [[সয়ুজ লাউঞ্চ ভেহিক্‌ল|সয়ুজ]] রকেটসমূহ এই সন্ধানী যানটি বহনের কাজ করবে। মেসেঞ্জারের সাথেই বেপিকলম্বো বেশ কয়েকবার বুধের অতি সন্নিকটে যাবে। একইভাবে এটি চাঁদ এবং শুক্র গ্রহের নিকট দিয়ে উড়ে গিয়ে বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করার পূর্ব বেশ কয়েকবার এর নিকটবর্তী হবে। আনুমানিক ২০১৯ সালের দিকে এটি বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করবে এবং প্রায় এক বছর ধরে একে অধ্যয়ন করবে।
 
সন্ধানী যান দুটি মেসেঞ্জারের মতই একটি বর্ণালীবীক্ষণ অ্যারে বহন করবে এবং গ্রহটিকে অনেকগুলো তরঙ্গদৈর্ঘ্যেতরঙ্গদৈর্ঘ্য্যে পর্যবেক্ষণ করবে। ধর্তব্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যেরতরঙ্গদৈর্ঘ্য্যের মধ্যে রয়েছে [[অবলোহিত]], [[অতিবেগুনী রশ্মি|অতিবেগুণী]], [[রঞ্জন রশ্মি]] এবং [[গামা রশ্মি]]। কার্যকরভাবে বুধ গ্রহ অধ্যয়নের পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা বেপিকলম্বোর মাধ্যমে আরেকটি কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদী। এটি হচ্ছে সূর্যের সাথে সন্ধানী যানটির নৈকট্যকে ব্যবহার করে [[সাধারণ আপেক্ষিকতা]] তত্ত্বের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরীক্ষা করা। বেশ নিখুঁতভাবে এটি করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এই অভিযানটির নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী [[গিউসেপ কলম্বো|গিউসেপ (বেপি) কলম্বোর]] (Giuseppe Colombo) নামানুসারে। তিনিই প্রথম সূর্যের সাথে বুধের কক্ষীয় [[রেজোন্যান্স]] নির্ণয় করেছিলেন। এছাড়াও তিনি [[১৯৭৪]] সালে মেরিনার ১০ মহাকাশযানের অভিকর্ষ-প্রভাবিত প্রাস নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।<ref name="ESA pages">{{cite web|title=''ESA Science & Technology: BepiColombo''|accessdate=27 April|accessyear=2006|url=http://sci.esa.int/science-e/www/area/index.cfm?fareaid=30}}</ref>
 
== তথ্যসূত্র ==